যে ইসলামী অনুশাসনের সুফলে বাংলাদেশ এইডসমুক্ত বলে গৌরব করতো; আজ তা হারানো বিষয়। বিবস্ত্র আকাশ সংস্কৃতি আজ এদেশে সমকামিতার বীজও বপন করেছে। অনিবার্যভাবে এইডস মৃত্যুর সংখ্যাও বাড়িয়েছে। রাষ্ট্রযন্ত্র কী এইডসের দিকে ঠেলতেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবে, না-কী বাঁচার জন্য ইসলামী অনুশাসনকেই অনিবার্যভাবে মূল্যায়ন করবে?
সব প্রশংসা মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি অফুরন্ত দুরূদ ও সালাম।
অবশেষে বাংলাদেশও কী চরম বিপন্নতায় বিপর্যস্ত হবে। যে দেশে একসময় ছেলে মেয়ে নিজ থেকে পছন্দ করে বিয়ে করাও ছিলো চরম সামাজিক সমালোচনার বিষয়। কারো মেয়ে কোনো ছেলের হাত ধরে চলে গেলে বাবা-মায়ের মুখ দেখানো ছিলো চরম আত্মশ্লাঘার বিষয়। যে বেদনা সইতে না পেরে অনেক বাবা-মা আত্মহত্যাও করতো।
কিন্তু প্রথমবার জামাত-জোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর ম্যাডাম খালেদা জিয়া ডিসঅ্যান্টেনা চালু করার পর বিজাতীয় তথা নগ্ন আকাশ সংস্কৃতি আবহমান বাংলার সে ঐতিহ্য ভেঙে দেয়।
এখন হরহামেশাই ছেলে মেয়ে নিজ পছন্দের বিয়ে হচ্ছে। সে বিয়ে থাকাতেই নতুন করে পরকীয়া হচ্ছে। আবার বিয়ে ছাড়াও লিভ টুগেদার চলছে। এমনকি ৯৭ ভাগ মুসলমানের দেশ আবহমান বাংলার ঐতিহ্যের বিপরীতে চরম অপাঙক্তেয় হলেও সত্য যে, এই সমাজে এখন সমকামী পুরুষ তথা ‘গে’র প্রাদুর্ভাব হচ্ছে। তার কুফলও অবশ্য হাতে-নাতে ধরা পড়ছে।
গত পহেলা ডিসেম্বর/২০১০ বিশ্ব এইডস দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, ‘১৯৮৯ সালে দেশে প্রথম এইচআইভি ধরা পড়ার পর গত ২১ বছরে এইচআইভি আক্রান্ত ব্যক্তির সংখ্যা ২ হাজার ৮৮ জন। এর মধ্যে এইডস হয় ৮৫০ জনের এবং মারা গেছে ২৪১ জন। চলতি বছর ৩৪৩ জন এইচআইভি আক্রান্ত হয়। এর মধ্যে এইডস ধরা পড়ে ২৩১ জন এবং মৃত্যু হয়েছে ৩৭ জনের। অন্যদিকে, ২০০৯ সালে ২৫০ জন এইচআইভিতে আক্রান্ত হয়। তাদের মধ্যে ১৪৩ জনের এইডস সনাক্ত হয় এবং মারা যায় ৩৯ জন।’
এইডস। ঘাতক ব্যাধি। ১৯৮১ সালে সর্বপ্রথম এর ভাইরাস- এইচআইভি সনাক্ত হয় যুক্তরাষ্ট্রে এবং ১৯৮৩ সালে এইচআইভি ভাইরাস এইডসের মূল কারণ উল্লেখ করা হয়। আশির দশকের মাঝামাঝি সময়ে বিশ্বের অনেক দেশেই এ রোগের বিস্তার পরিলক্ষিত হয়।
বিশ্বব্যাপী এইডসের সাম্প্রতিক বিস্তারচিত্র আশঙ্কাজনক। প্রতিদিন প্রায় ১৫ হাজারেরও বেশি মানুষ এইডসে আক্রান্ত হচ্ছে। ২০০৫ সালেই বিশ্বে প্রায় ৩১ লাখ লোক এই ব্যাধিতে মৃত্যুবরণ করে।
আফ্রিকায় এইডস পরিস্থিতি সবচেয়ে নাজুক। প্রতিবেশী দেশ ভারত, মায়ানমার এবং থাইল্যান্ডে এইডস দ্রুত বিস্তার লাভ করছে। ভারতে প্রতি হাজারে সাত জন এইচআইভিতে আক্রান্ত হচ্ছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, সারাবিশ্বে প্রায় ৪ কোটির বেশি মানুষ এইচআইভি জীবাণু বহন করছে। ২০০৭ সালের জরিপ অনুযায়ী এইডসে আক্রান্ত হয়ে সারাবিশ্বে আনুমানিক ৩৩ দশমিক ২ মিলিয়ন মানুষ মৃত্যুবরণ করেছেন, যার মধ্যে ৩ লাখ ৩০ হাজার শিশু রয়েছে।
বিশ্বব্যাপী নতুনভাবে এইচআইভিতে আক্রান্তদের পঞ্চাশ শতাংশই হচ্ছে যুবসমাজ। এইডস বিস্তারের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য কারণ হচ্ছে সমকামিতা। এ সমস্যা অনেক দেশের মতো আমাদের দেশেও ঢুকে গেছে। (নাঊযুবিল্লাহ)। এক হিসাব মতে, এখানে পেশাদার পতিতার সাপ্তাহিক গড় যৌনসঙ্গী গ্রহণ সংখ্যা প্রায় ৪৪ জন। উল্লেখ্য, অনৈতিক যৌন মিলনের এইডস রোগের বিস্তার ঘটে।
গবেষণায় প্রাপ্ত তথ্যমতে, ভারতে এইডস আক্রান্ত নারীদের উল্লেখযোগ্য অংশই আক্রান্ত হয়েছে তাদের স্বামীদের মাধ্যমে। আশির দশকের শুরুর দিকে সে দেশে এইচআইভি পজিটিভ নারীর চেয়ে পুরুষের সংখ্যা ছিলো অনেক বেশি। কিন্তু এরপর থেকেই পজিটিভ নারীর সংখ্যা আনুপাতিক হারে বাড়তে থাকে। বর্তমানে সেখানে এইচআইভি পজিটিভের অর্ধেকই নারী। বাংলাদেশের চিত্রও প্রায় কাছাকাছি।
দক্ষিণ এশিয়ার যেসব দেশে পাচারপ্রবণতা বেশি তার মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর মধ্যে পাচারের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান তৃতীয়। পাচার হয়ে হওয়া এসব নারীর অধিকাংশই যৌন ব্যবসায় নিয়োজিত হতে বাধ্য হয়। বাংলাদেশে ১৪টি নিবন্ধিত পতিতালয়সহ ভাসমান পতিতারা এইডস বিস্তারের একটি বড় কারণ। তাছাড়া পুরুষ-পুরুষ মিলন বা সমকামিতার কারণেও এর বিস্তার হচ্ছে। (নাঊযুবিল্লাহ)
এফপিএবি’র চতুর্থ সেরো অ্যান্ড বিহেভিয়ারাল সার্ভিলেন্সের একটি জরিপ থেকে দেখা যায়, বাংলাদেশের শতকরা ৬৯ ভাগ ট্রাক ড্রাইভার এবং রিকশাচালক পতিতাদের সঙ্গে যৌনকর্মে মিলিত হয়। এর মধ্যে ট্রাক শ্রমিকের শতকরা ৫২ ভাগ এবং রিকশাচালকদের শতকরা ৭৫ ভাগ বিবাহিত। ফলে এদের স্ত্রীদের এইডসে আক্রান্ত হওয়ার হার শতকরা প্রায় ৬ ভাগ।
এখন পর্যন্ত এইডস রোগ নিরাময়ের কোনো ওষুধ আবিষ্কৃত হয়নি। অবশ্য কোনো কোনো ওষুধ এই রোগকে কিছুটা নিয়ন্ত্রণে রাখে। এসব ওষুধের দাম অত্যন্ত বেশি হওয়ায় বেশির ভাগ এইডস রোগী সেগুলো কেনার ক্ষমতা রাখে না। তাই এইডস রোগ বিষয়ক ১৮তম আন্তর্জাতিক সম্মেলনে এসব ওষুধের দাম কমানোর ব্যাপারেও আলোচনা হয়েছে।
এইডস রোগের আক্রমণ প্রথমবারের মত ধরা পড়ে ১৯৮১ সালে। এরপর এই রোগ বিশ্বে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ায় তা পৃথিবীর সবচেয়ে জটিল স্বাস্থ্য সমস্যায় পরিণত হয়। এ পর্যন্ত বিশ্বে আড়াই কোটি মানুষ এইডস রোগে মারা গেছে। এইডস বিশ্বে মানুষের করুণ মৃত্যুর চতুর্থ বৃহৎ কারণে পরিণত হয়েছে। তবে এ রোগই আফ্রিকা মহাদেশে মানুষের সবচেয়ে বড় ঘাতক। এইডসে আক্রান্তদের বেশির ভাগই যুব বয়সী। বিশ্বের ৫০ লক্ষ এইডস রোগীর বয়স ১৫ বছরেরও কম। বর্তমানে বিশ্বে এইডস রোগীর সংখ্যা চার কোটি। এইডস রোগীদের শতকরা ৯৫ ভাগই উন্নয়নশীল দেশে বসবাস করেন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা পৃথিবীর জনবসতিকে দশটি অঞ্চলে ভাগ করেছে। এসব অঞ্চলের মধ্যে সবচেয়ে কম এইডস রোগী রয়েছেন মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকায়। এ অঞ্চলের শতকরা ৯৮ ভাগ মানুষ মুসলমান। মুসলমানরা নৈতিক বিধি-বিধানের প্রতি বেশ গুরুত্ব দেয় বলেই তাদের মধ্যে এইডস রোগীর সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম।
বলাবাহুল্য, এইডস নিয়ে ইতঃপূর্বেও বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক পর্যায়ের সভা-সেমিনার হয়েছে। কিন্তু প্রথমত এইডস আক্রান্ত কাউকেই পাওয়াই যায়নি। এরপরও দু’একটি হাতে গোনা পাওয়া গেছে। তখনকার স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছিলেন যে, ‘বাংলাদেশে ইসলামী অনুশাসন শক্তিশালী থাকার কারণেই এইডসের অভিশাপ নেই’। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশে ক্রমশ সে রহমত থেকে সরে এইডসের গযবে পতিত হচ্ছে। মূলত এর পিছনে কারণ হলো যে, বাংলাদেশে এখন বিজাতীয় নগ্ন সংস্কৃতিতে সয়লাব হয়েছে। এখন পাশ্চাত্য সমকামিতা তথা ‘গে’ ধারণার চর্চা হচ্ছে। (নাঊযুবিল্লাহ)। আর তার পরিণতি স্বরূপ বাড়ছে এইডসের সংখ্যা, মৃত্যুর সংখ্যা।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘আমার উম্মতের মধ্যে লুত আলাইহিস সালাম উনার উম্মতের কুকর্ম (সমকামিতার) ব্যাপারে আমি বিশেষ শঙ্কাগ্রস্ত।’
বলাবাহুল্য, সবকিছু তার শেষ পরিণতিতে প্রবাহিত হয়। বর্তমান যে বেপর্দা, বেহায়া, বল্গাহারা সংস্কৃতি- এর শেষ পরিণতি হলো চরম উচ্ছৃঙ্খলতা তথা সমকামিতা। আর তারও শেষ পরিণতি হলো, এইডস তথা ধুঁকে ধুঁকে ভয়ঙ্কর করুণ মৃত্যু।
এখন ধর্মনিরপেক্ষতার দাবিদার রাষ্ট্রযন্ত্রকে ঠিক করতে হবে, তার সব নাগরিককে যে এইডসের দিকে ঠেলে দিবে, না-কী এইডস থেকে রক্ষা পেতে ইসলামী অনুশাসনের নির্দেশনা দিবে, পৃষ্ঠপোষকতা করবে।
মূলত এসব দায়িত্ববোধ আসে ইসলামী অনুভূতি ও প্রজ্ঞা থেকে। আর তার জন্য চাই নেক ছোহবত তথা ফয়েজ তাওয়াজ্জুহ। যামানার ইমাম ও মুজতাহিদ, যামানার মুজাদ্দিদ, মুজাদ্দিদে আ’যম উনার নেক ছোহবতেই সে মহান ও অমূল্য নিয়ামত হাছিল সম্ভব। মহান আল্লাহ পাক আমাদের তা নছীব করুন। (আমীন)
-মুহম্মদ ওয়ালীউর রহমান
প্রসঙ্গঃ আমেরিকায় ইহুদী প্রভাব ও নিয়ন্ত্রণ- ২
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা-৩৪
চাঁদ দেখা এবং নতুন চন্দ্রতারিখ শুরু নিয়ে প্রাসঙ্গিক আলোচনা- ১