لَقَدْ جَآءَكُمْ رَسُوْلٌ مِّنْ أَنْفُسِكُمْ عَزِيْزٌ عَلَيْهِ مَا عَنِتُّمْ حَرِيْصٌ عَلَيْكُمْ بِالْمُؤْمِنِيْنَ رَءُوْفٌ رَّحِيْمٌ
অর্থ: মহাসম্মানিত রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তোমাদের মাঝে তাশরীফ মুবারক গ্রহণ করেছেন। তোমাদের জন্য কষ্টকর বিষয়গুলো উনার নিকট অসহনীয়। তিনি তোমাদের ভালাই চান। বিশেষ করে মু’মিনদের প্রতি তিনি ¯েœহশীল এবং দয়াময়। (পবিত্র সূরা তওবা শরীফ, আয়াত শরীফ ১০৮)
অর্থাৎ, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, যিনি হায়াতুন্ নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, যিনি শাহিদুন্ নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, যিনি হাযির, যিনি নাযির, যিনি রঊফুর রহীম তিনি কায়িনাতবাসীর জন্য সীমাহীন দয়াময়। আর এ পবিত্র আয়াত শরীফ উনার ব্যাখ্যায় পবিত্র হাদীছ শরীফে বর্ণিত রয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ أَبِيْ جُرَيٍّ جَابِرِ بْنِ سُلَيْمٍ رَضِيَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ رَأَيْتُ رَجُلًا يَصْدُرُ النَّاسُ عَنْ رَأْيِهٖ لَا يَقُوْلُ شَيْئًا إِلَّا صَدَرُوْا عَنْهُ قُلْتُ مَنْ هٰذَا قَالُوْا هٰذَا رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قُلْتُ عَلَيْكَ السَّلَامُ يَا رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَرَّتَيْنِ قَالَ لَا تَقُلْ عَلَيْكَ السَّلَامُ فَإِنَّ عَلَيْكَ السَّلَامُ تَحِيَّةُ الْمَيِّتِ قُلْ اَلسَّلَامُ عَلَيْكَ قَالَ قُلْتُ أَنْتَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ أَنَا رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَلَّذِىْ إِذَا أَصَابَكَ ضُرٌّ فَدَعَوْتَهٗ كَشَفَهٗ عَنْكَ وَإِنْ أَصَابَكَ عَامُ سَنَةٍ فَدَعَوْتَهٗ أَنْبَتَهَا لَكَ وَإِذَا كُنْتَ بِأَرْضٍ قَفْرٍ أَوْ فَلَاةٍ فَضَلَّتْ رَاحِلَتُكَ فَدَعَوْتَهٗ رَدَّهَا عَلَيْكَ
অর্থ: হযরত আবূ জুরাই জাবির ইবনু সুলাইম রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি একবার সম্মানিত মদীনা শরীফে এলাম। দেখলাম লোকেরা একজন মহাসম্মানিত ব্যক্তিত্ব উনার মতামত ও মুবারক নির্দেশনার উপর নির্ভরশীল। তিনি যা বলছেন, মানুষ সে অনুযায়ী কাজ করছে। আমি জিজ্ঞেস করলাম, ইনি কে? লোকেরা বলল, ইনি মহান আল্লাহ পাক উনার মহাসম্মানিত রসূল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। বর্ণনাকারী বলেন, আমি উনার খিদমত মুবারকে হাযির হয়ে দু‘বার বললাম, ‘আলাইকাস সালাম’। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, ‘আলাইকাস সালাম’ বলো না। কারণ ‘আলাইকাস সালাম’ হলো মৃত ব্যক্তির জন্য দু‘আ। বরং বলো, ‘আসসালামু আলাইকা। এরপর আমি বললাম, আপনি কি মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম? তিনি বললেন, হ্যাঁ, আমি মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। আমি মহান আল্লাহ পাক উনার সেই মহাসম্মানিত রসূল, যাঁকে কোন বিপদণ্ডআপদে ডাকলে তিনি তা দূর করে দেন। তুমি যদি দুর্ভিক্ষে পতিত হয়ে উনাকে ডাকো, তাহলে তিনি যমীনে তোমার জন্য সবুজ ফসল ফলিয়ে দেবেন। তৃণ ও প্রাণহীন কোন মরু প্রান্তরে অথবা ময়দানে যখন তুমি থাকো এবং সেখানে তোমার বাহন হারিয়ে গেলে তুমি যদি উনাকে ডাকো, তিনি তা তোমাকে ফিরিয়ে দিবেন। সুবহানাল্লাহ! (তিরমিযী শরীফ, মিশকাতুল মাছাবীহ শরীফ: কিতাবুয যাকাত-বাবু ফাদ্বলিছ ছদক্বাহ)
এখানে কয়েকটি বিষয় সুস্পষ্ট। প্রথমত, নূরে মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট আরজী করলে, তিনি সব আরজী পূরণ করে দেন। দ্বিতীয়ত, নূরে মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট আরজী করলে, তিনি দূর্ভিক্ষ দূর করে দেন। তৃতীয়ত: নূরে মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট আরজী করলে, তিনি হারানো বস্তু ফিরে পাবার ব্যবস্থা করে দেন। সুবহানাল্লাহ!
অন্য পবিত্র হাদীছ শরীফে বর্ণিত আছে-
عَنْ حَضْرَتْ أَنَسٍ رَضِيَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى الله عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا نَسِيْتُمْ شْيئًا فَصَلُّوْا عَلَيَّ تُذَكَّرُوْهُ إِنْ شَاءَ اللهُ تَعالٰى
অর্থ: হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, তোমরা যখন কোন কিছু ভুলে যাও, তখন আমার প্রতি দরূদ শরীফ পাঠ করো। ইনশাআল্লাহ তোমাদেরকে তা স্মরণ করিয়ে দেয়া হবে। সুবহানাল্লাহ! (জালাউল আফহাম)
অপর পবিত্র হাদীছ শরীফে বর্ণিত আছে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
مَنْ عَسَرَتْ عَلَيْهِ حَاجَةٌ فَلْيُكْثِرْ بِالصَّلَاةِ عَلَيَّ فَإِنَّهَا تَكْشِفُ الْـهُمُوْمَ وَالْغُمُوْمَ وَتَكْثُرُ الَأَرْزَاقَ وَتَقْضِى الْـحَوَائِجَ
অর্থ: কারো জন্য কোন বিষয় যখন কঠিন হয়ে যায়, তখন সে যেন আমার প্রতি বেশি বেশি পবিত্র দরূদ শরীফ পাঠ করে। কেননা, পবিত্র দরূদ শরীফ পাঠের মাধ্যমে উদ্বেগ ও দুশ্চিন্তা বিদূরিত হয়। রিযিক বৃদ্ধি পায় এবং প্রয়োজনসমূহ পূরণ হয়। সুবহানাল্লাহ! (আল ক্বওলুল বাদী’)
অন্য পবিত্র হাদীছ শরীফে বর্ণিত আছে-
عَنْ حَضْرَتْ أَنَسٍ رَضِيَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ صَلُّوْا عَلَيَّ فَإِنَّ الصَّلاةَ عَلَيَّ كَفَّارَةٌ لَّكُمْ
অর্থ: হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, তোমরা আমার প্রতি বেশি বেশি দরূদ শরীফ পাঠ করো। নিশ্চয়ই আমার প্রতি দরূদ শরীফ পাঠ করা তোমাদের গুণাহসমূহের কাফফারা স্বরূপ। সুবহানাল্লাহ! (ইবনে আবী আসিম)
অন্য পবিত্র হাদীছ শরীফে আরো বর্ণিত আছে-
عَنْ حَضْرَتْ عُمَرَ بْنِ الْـخَطَّابِ عَلَيْهِ السَّلَامُ قَالَ اَلدُّعَاءُ وَالصَّلَاةُ مُعَلَّقٌ بَيْنَ السَّمَاءِ وَالْأَرْضِ فَلَا يَصْعَدُ إِلَى اللهِ مِنْهُ شَيْءٌ حَتّٰـى يُصَلِّىَ عَلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
অর্থ: হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, দুআ এবং নামাজ আসমান ও যমীনের মাঝে ঝুলে থাকে। তা মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট পৌছেনা, যতক্ষণ পর্যন্ত নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি পবিত্র দরূদ শরীফ পাঠ করা না হয়। (তিরমিযী শরীফ)
অন্য পবিত্র হাদীছ শরীফে আরো বর্ণিত আছে-
عَنْ حَضْرَتْ عَلِيٍّ عَلَيْهِ السَّلَامُ قَالَ كُلُّ دُعَاءٍ مَـحْجُوْبٌ حَتّٰـى يُصَلِّيَ عَلٰى سَيِّدِنَا مُـحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ واٰلِ سَيِّدِنَا مُـحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
অর্থ: হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, সমস্ত দুআ আবৃত অবস্থায় থাকে অর্থাৎ কোনো দুআই মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট পৌঁছেনা, যতক্ষণ পর্যন্ত নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি পবিত্র দরূদ শরীফ পাঠ করা না হয়। এবং উনার মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের প্রতি দরূদ শরীফ পাঠ না করা হয়। (মু’জামুল আওসাত্ব লিত্ব-ত্ববারনী)
বর্ণিত পবিত্র আয়াত শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের দ্বারা দিবালোকের চেয়েও সুস্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয় যে, মহাসম্মানিত রসূল, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার উম্মতদের প্রতি অতিশয় দয়ালু। উম্মতের কোন কষ্ট তিনি কখনোই বরদাস্ত করেননা। এখন উম্মত যদি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক দয়া, দান, ইহসান লাভ করতে চায়, তাহলে উম্মতকে বেশি বেশি আরজী করতে হবে। মনে রাখতে হবে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র দরূদ শরীফ সমস্ত খাইর-বরকতের চাবিকাঠি।
পবিত্র দরূদ শরীফ ব্যতিত কোন দুআ কবুল হয়না, কোন আরজী পূরণ হয়না। কোন মক্বছূদ বাস্তবায়িত হয়না। আর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি পবিত্র দরূদ শরীফ পাঠের সাথে সাথে মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের প্রতিও পবিত্র দরূদ শরীফ পাঠ করতে হবে। মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের প্রতি পবিত্র দরূদ শরীফ পাঠ করা না হলে সে দরূদ শরীফ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনিও কবুল করেননা।
মূলকথা হলো, রঊফুর রহীম, হারীসুন আলাল মু’মিনীন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কায়িনাতবাসীর সমস্ত আরজী পূরণ করেন। উনাকে স্মরণ করা ও উনার পবিত্র দরূদ শরীফ পাঠের মাধ্যমে সর্বপ্রকার ভালাই লাভ হয় এবং সমস্ত বালা-মুছীবত বিদূরিত হয়। সুবহানাল্লাহ!
মহান আল্লাহ পাক তিনি ছহিবে ছমাদ, ছহিবে সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ, সাইয়্যিদুনা মামদূহ হযরত মুরশিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার মুবারক উছীলায় রঊফুর রহীম, হারীসুন আলাল মু’মিনীন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি হাক্বীক্বীভাবে পবিত্র দরূদ শরীফ পাঠ করার এবং খাছ দয়া, দান, ইহসান লাভ করার তাওফীক্ব দান করুন। আমীন।
-আহমদ নুছাইর