সম্মানিত হানাফী মাযহাবের আক্বাইদের ইমাম, ৪র্থ হিজরী শতকের মুজাদ্দিদ, ইমামু আহলিস সুন্নাহ ওয়াল জামায়াহ্, মুজাদ্দিদে যামান, হযরত ইমাম আবূ মানছূর মাতুরীদী রহমতুল্লাহি আলাইহি (বিছাল শরীফ: ৩৩৩ হিজরী শরীফ) তিনি উনার সর্বজনমান্য ও গ্রহণযোগ্য বিশ্বখ্যাত তাফসীরগ্রন্থ ‘তা’ওইলাতু আহ্লিস্ সুন্নাহ্ তথা তাফসীরে মাতুরীদী শরীফ উনার ৭ম খন্ডের ২২৮ পৃষ্ঠায়’ বলেন-
وَقَوْلُهٗ عَزَّ وَجَلَّ وَرَحْمَةً مِّنَّا اَىْ رَحْمَةً مِّنَّا لِلْخَلْقِ لِاَنَّ مَنِ اهْتَدٰى وَاتَّبَعَهٗ كَانَ لَهٗ بِهٖ نَـجَاةٌ وَهُوَ مَا قَالَ اللهُ تَعَالـٰى لِرَسُوْلِهٖ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَمَاۤ اَرْسَلْنٰكَ اِلَّا رَحْمَةً لِّلْعٰلَمِيْنَ وَعَلـٰى ذٰلِكَ جَمِيْعُ الْاَنْبِيَاءِ وَالرُّسُلِ الذِّيْنَ بَعَثَهُمُ اللهُ اِلـٰى خَلْقِهٖ كَانَ ذٰلِكَ رَحْمَةً مِّنْهُ اِلـٰى خَلْقِهٖ.
অর্থ: “মহান আল্লাহ পাক উনার সম্মানিত কালাম মুবারক, আর (জলীলুল ক্বদর নবী ও রসূল হযরত ঈসা রূহুল্লাহ আলাইহিস সালাম) তিনি আমার পক্ষ থেকে রহমত স্বরূপ।’ অর্থাৎ হযরত ঈসা রূহুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি আমার পক্ষ থেকে সমস্ত সৃষ্টি জগতের জন্য রহমত স্বরূপ তথা ‘রহমতুল্লিল আলামীন’। কেননা যে ব্যক্তি হেদায়াত লাভ করেছে বা করবে এবং (হযরত রূহুল্লাহ আলাইহিস সালাম) উনাকে অনুসরণ করেছে বা করবে, সে ব্যক্তি উনার কারণে নাজাত লাভ করবে। আর সেটা হচ্ছে যা মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার মহাসম্মানিত হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত শান মুবারক-এ ইরশাদ মুবারক করেছেন-
وَمَاۤ اَرْسَلْنٰكَ اِلَّا رَحْمَةً لِّلْعٰلَمِيْنَ
‘আর আমি আপনাকে সমস্ত সৃষ্টি জগতের জন্য রহমত স্বরূপ প্রেরণ করেছি।’ এর উপর ভিত্তি করে সমস্ত হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম যাঁদেরকে মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার সৃষ্টি জগতের জন্য পাঠিয়েছেন উনারাও নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ন্যায় অর্থাৎ উনার কায়িম মাক্বাম হিসেবে মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে উনার সৃষ্টি জগতের জন্য রহমত স্বরূপ তথা ‘রহমতুল্লিল আলামীন’।” সুবহানাল্লাহ!
সেটাই হযরত ইমাম আবূ মানছূর মাতুরীদী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার সর্বজনমান্য ও গ্রহণযোগ্য বিশ্বখ্যাত তাফসীরগ্রন্থ ‘তাফসীরে মাতুরীদী শরীফ উনার ৭ম খন্ডের ৩৮৩ পৃষ্ঠায়’ অত্যন্ত সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন-
جَائِزٌ اَنْ يَّكُوْنَ كُلُّ رُسُلِ اللهِ رَحْمَةً مِّنَ اللهِ لِلْعَالَـمِيْنَ
অর্থ: “সমস্ত হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে ‘রহমতুল্লিল আলামীন’ বলা জায়িয রয়েছে।” সুবহানাল্লাহ!
হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনারা সমস্ত সৃষ্টি জগতের জন্য রহমত স্বরূপ তথা ‘রহমতুল্লিল আলামীন’ কি কারণে- সে সম্পর্কে হযরত ইমাম আবূ মানছূর মাতুরীদী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেছেন-
رَحْمَةً مِّنَّا لِلْخَلْقِ لِاَنَّ مَنِ اهْتَدٰى وَاتَّبَعَهٗ كَانَ لَهٗ بِهٖ نَـجَاةٌ
অর্থ: “জলীলুল ক্বদর নবী ও রসূল হযরত রূহুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি আমার পক্ষ থেকে সমস্ত সৃষ্টি জগতের জন্য রহমত স্বরূপ তথা ‘রহমতুল্লিল আলামীন’। কেননা যে ব্যক্তি হেদায়াত লাভ করেছে বা করবে এবং (হযরত রূহুল্লাহ আলাইহিস সালাম) উনাকে অনুসরণ করেছে বা করবে, সে ব্যক্তি উনার কারনে নাজাত লাভ করবে।” সুবহানাল্লাহ! (তাফসীরে মাতুরীদী শরীফ ৭ম খন্ড ২২৮ পৃষ্ঠা)
তাহলে বুঝা গেলো যে, হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে অনুসরণ-অনুকরণ করার কারণে যেহেতু উম্মত নাজাত লাভ করে থাকে, সে জন্য উনারা সমস্ত সৃষ্টি জগতের জন্য রহমত স্বরূপ তথা ‘রহমতুল্লিল আলামীন’। সুবহানাল্লাহ! আর হযরত আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা যেহেতু হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের ক্বায়িম-মাক্বাম, হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের অবর্তমানে হযরত আউলিয়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের মাধ্যমে, উনাদের ইতায়াত তথা অনুসরণ-অনুকরণের মাধ্যমে জিন-ইনসান হিদায়াত লাভ করতে থাকে, নাজাত লাভ করে থাকে, সেজন্য উনারাও নি:সন্দেহে সমস্ত সৃষ্টি জগতের জন্য রহমত স্বরূপ তথা ‘রহমতুল্লিল আলামীন’। সুবহানাল্লাহ!
এ জন্যই যিনি খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
اِنَّ رَحْـمَتَ اللهِ قَرِيْبٌ مِّنَ الْمُحْسِنِيْنَ
অর্থ: “নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক উনার রহমত মুহসিন বান্দা তথা ওলীআল্লাহ উনাদের নিকট রয়েছে।” সুবহানাল্লাহ! (সম্মানিত ও পবিত্র সূরা আ’রাফ শরীফ : সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ ৫৬)
সুতরাং নি:সন্দেহে অবশ্যই অবশ্যই হযরত আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম, হযরত মুজাদ্দিদ রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা ‘রহমতুল্লিল আলামীন’। সুবহানাল্লাহ!
কাজেই সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ¦তামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তো অবশ্যই ‘রহমতুল্লিল আলামীন’। সুবহানাল্লাহ! শুধু তাই নয়, উনার সম্মানার্থে উনার ক্বায়িম মাক্বাম হিসেবে সমস্ত হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনারা এবং হযরত আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম, হযরত মুজাদ্দিদ রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারাও ‘রহমতুল্লিল আলামীন’। সুবহানাল্লাহ!
অতএব চরম জাহিল, গণ্ড মূর্খ, রাজাকার জামাতীদের কিনা গোলাম ও দালাল, ভন্ড, প্রতারক এনায়েতুল্লাহ ওরফে লা’নাতুল্লাহ যে বলেছে, ‘পূর্বের কোনো নবীও রহমতুল্লিল আলামীন ছিলো না’। তার এই বক্তব্য মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরআন শরীফ, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ, সম্মানিত ও পবিত্র ইজমা এবং সম্মানিত ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনাদের খিলাফ হওয়ার কারণে কাট্টা কুফরী হয়েছে। না‘ঊযুবিল্লাহ!
আর ‘রহমতুল্লিল আলামীন’ লক্বব মুবারক সম্পর্কে কুফরীর অপবাদ দিতে গিয়ে এই চরম জাহিল, গ- মূর্খ, রাজাকার জামাতীদের কিনা গোলাম ও দালাল, প্রতারক লা’নাতুল্লাহ নিজেকেই কাফির হিসেবে সাব্যস্ত করেছে। সম্মানিত ইসলামী শরীয়ত উনার ফতওয়া অনুযায়ী কেউ যদি কাউকে কাফির ফতওয়া দেয়, আর সে যদি কাফির না হয়, তাহলে যে কাফির ফতওয়া দিয়েছে, তার উপরই কুফরীর ফতওয়া বর্তাবে অর্থাৎ সে নিজেই কাফির হিসেবে সাব্যস্ত হবে।
কাজেই, সম্মানিত ইসলামী শরীয়ত উনার ফতওয়া অনুযায়ী- কুফর, শিরক ও মুরতাদের অপবাদ দিতে গিয়ে চরম জাহিল, গ- মূর্খ, মুরতাদ, ভন্ড, প্রতারক লা’নাতুল্লাহ নিজেকেই ‘কাফির, মুশরিক ও মুরতাদ’ হিসেবে সাব্যস্ত করেছে, তাতে বিন্দুমাত্র সন্দেহের অবকাশ নেই। এ বিষয়ে যারা সন্দেহ পোষণ করবে এবং যারা তাকে ‘কাফির, মুশরিক ও মুরতাদ’ বলবে না, তারাও কাফির, মুশরিক ও মুরতাদ হবে। সম্মানিত ইসলামী শরীয়ত উনার ফতওয়া অনুযায়ী- তার স্ত্রী তালাক হয়ে গেছে। সে যদি প্রকাশ্যে তওবা না করে, তাহলে তার স্ত্রীর সাথে মিলামেশা করাটা তার জন্য ব্যভিচারের শামিল হবে এবং কোনো সন্তান হলে সেটা অবৈধ সন্তান হিসেবে সাব্যস্ত হবে। তার ওয়ারিসসত্ত্ব বাতিল হয়ে গেছে। সে যদি ৩ দিনের মধ্যে প্রকাশ্যে তওবা না করে, তাহলে তার একমাত্র শাস্তি মৃত্যুদন্ড। তার গোসল, কাফন-দাফন করা, জানাযার নামায পড়া জায়েয নেই এবং তাকে সম্মানিত মুসলমান উনাদের কবরস্থানে দাফন করাও জায়িয নেই। বরং তাকে কুকুর-শৃগালের মত গর্তে পুতে রাখতে হবে। যারা তার গোসল, কাফন-দাফন করবে, জানাযার নামায পড়বে, তাদের উপরও একই হুকুম বর্তাবে। না‘ঊযুবিল্লাহ!
-মুফতী মুহাদ্দিস মুহম্মদ আল আমীন
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি ও ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা-৫০