সব প্রশংসা খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি অফুরন্ত দুরূদ ও সালাম মুবারক।
মানবতাবিরোধী অপরাধীদের ফাঁসি অথবা যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির বিষয়ে যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল যতটা কার্যকর পবিত্র দ্বীন ইসলাম তার চেয়ে অনেক বেশি আন্তরিক এবং সক্রিয় ও শক্তিশালী। যুদ্ধাপরাধী ট্রাইব্যুনালের পরিবর্তে পবিত্র দ্বীন ইসলামী আদালতের বিচার হলে অনেক আগেই অনেক যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি হতো এবং শুধু যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নয় প্রতিটা রাজাকারেরই বিচার হতো। পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার দোহাই দানকারী কিন্তু পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার বিরোধী মওদুদী জামাতী রাজনীতি নিষিদ্ধ হতো। মূলত এসব কথা প্রতিটি ধর্মপ্রাণ মুসলমানের অন্তরের। কারণ, এ কথা রাষ্ট্রধর্ম পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার। এদেশের ৯৭ ভাগ মুসলমান উনাদের। বলাবাহুল্য, এ কথার প্রতিধ্বনি কথিত শাহবাগ প্রজন্ম স্কয়ারে উচ্চারিত হয়েছিল বলেই সেখানে জনতার ঢল নেমেছে এবং রয়েছে।
তবে শাহবাগ তথা কথিত প্রজন্ম চত্বরের এই জনতা সম্পর্কে শুরু থেকেই বিবিধ সমালোচনা হয়ে আসছে। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে- এটাকে আওয়ামীকরণ করা হয়েছে। আবার খোদ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, বর্ষীয়ান নেতা তোফায়েল আহমেদ, সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীদেরকে অপদস্থ করা হয়েছে। প্রজন্ম চত্বরে তাদের মূল্যায়ন করা হয়নি। অপরদিকে ছাত্র ইউনিয়ন থেকে বামপন্থী তথা নাস্তিকরাই যে এর নিয়ন্ত্রক তা খোলাখুলিভাবে প্রথম থেকেই প্রতিভাত হয়ে আসছে।
তবে একটা জিনিস স্পষ্ট হয়েছে যে, শুধু ধর্মব্যবসায়ীরাই ধর্মপ্রাণদের ব্যবহার করেনা নাস্তিকরাও ধর্মপ্রাণদের বিভ্রান্ত ও ব্যবহার করে। ‘ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি চায় এই ধর্মাবেগকেই নাস্তিকরা পুঞ্জীভূত করে ব্যবহার করছে। নাস্তিকদের দোসর মিডিয়াগুলো এটাকেই হাইলাইট করেছে। কিন্তু ধর্মপ্রাণদের ধর্র্র্মীয় অনুভূতিকে তারা প্রতিফলিত করেনি। মিডিয়া এখানে বিরাট কারচুপি করেছে। মিডিয়া অলসতা করেছে। মিডিয়া ব্যবসা করেছে। মিডিয়া আইটেম সর্বস্ব নিউজ করেছে। মিডিয়া প্রজন্ম চত্বরের সমাবেশটাই দেখেছে ও প্রচার করেছে। কিন্তু এই সমাবেশের ভিত্তিটা যে পবিত্র দ্বীন ইসলাম সে পর্যালোচনায় মিডিয়া যায়নি। এর প্রমাণ মিডিয়াই দিয়েছে।
মিডিয়া হেডিং করেছে-
“শাহবাগে ব্লগার রাজীবের জানাযা অনুষ্ঠিত।” “প্রধানমন্ত্রীর পুত্র জয়সহ মন্ত্রীদের যোগদান।” “রাজীবের জানাজায় লাখো মানুষের ঢল।” “রাজীবের তৃতীয় জানাযা অনুষ্ঠিত।”
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, কুখ্যাত ব্লগার রাজীবের মৃত্যুর কথাটিই প্রায় সব দৈনিক ছেপেছে। কিন্তু সে যে দ্বীন ইসলাম বিরোধিতায় আবু জেহেল, আবু লাহাবকেও হার মানিয়েছে সে বিষয়টি পত্রিকাগুলোতে আসেনি। আর এ শূন্যতার সুযোগটি নিয়েছে পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার অপব্যাখ্যাকারী একটি চিহ্নিত দৈনিক। দেখা যাচ্ছে অন্যান্য দৈনিকগুলোই পবিত্র দ্বীন ইসলাম ও ধর্মপ্রাণদের থেকে বিচ্ছিন্ন থেকে নিজেরাই ওই চিহ্নিত দৈনিকটিকে পবিত্র দ্বীন ইসলাম নিয়ে ব্যবসার সুযোগ করে দেয়।
মিডিয়া এদেশের মানুষকে চিনতে পারেনি। মিডিয়া কর্পোরেট চশমা পরে জনতাকে দেখে। কিন্তু জনতার অন্তরের খোঁজ-খবর রাখেনা। প্রসঙ্গত ’৭১-এ পাকিস্তানে ওআইসি সম্মেলনে যেতে বঙ্গবন্ধুকে যেতে নিষেধ করেছিল ক্যাবিনেটের প্রায় সবাই। সেখানে গেলে, পাকিস্তান এদেশের ত্রিশ লাখ লোককে শহীদ করেছে, চার লাখ মা-বোনের সম্ভ্রম লুণ্ঠন করেছে তার সাথে সংহতি প্রকাশ করা হবে, বন্ধু রাষ্ট্র ভারত বৈরী হবে- এ অনুযোগ তুলে ধরেছিল সবাই। জবাবে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, “যে দেশে মানুষ জমি বিক্রি করে হজ্জ করতে যায়, সেদেশে পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনাকে বাদ দিয়ে কিছু করা যায়না।” মিডিয়াকে এই চিরন্তন সত্য গুরুতরভাবে উপলব্ধি করতে হবে। পূর্বেই বলা হয়েছে একথা মিডিয়া হৃদয়ঙ্গম করতে না পারলেও মিডিয়া নিজেই তা প্রমাণ করেছে। মিডিয়া নিজেই উল্লেখ করেছে ‘রাজীবের জানাযায় লাখো জনতার ঢল।’ অর্থাৎ প্রতিভাত হয় প্রজন্ম চত্বরে যারা ছিল, তারা যে সমাবেশই করুক আর যাই করুক তাদের প্রায় ৯৯ ভাগই পবিত্র দ্বীন ইসলাম ধর্মে বিশ্বাসী। পবিত্র দ্বীন ইসলামী আচার- জানাযায় বিশ্বাসী ও আমলদার। নাস্তিকের সংখ্যা এখানে শুধু নগণ্য নয় অতি ক্ষুদ্র তথা বিপন্ন প্রজাতির মতো।
তাই কোন নাস্তিক একথা বলতে পারেনি যে, রাজীবের জানাযা হবেনা। কারণ রাজীব নাস্তিক ছিল নাস্তিক্যবাদের জয় হোক। (নাঊযুবিল্লাহ) উল্টো নাস্তিক রাজীবকে তিনবার জানাযার সম্মুখীন হতে হয়েছে। অর্থাৎ পবিত্র দ্বীন ইসলামই যে এদেশে নিরঙ্কুশ প্রাধান্যবিস্তারকারী সে কথাই প্রমাণিত হয়েছে। শুধু তাই নয় তাকে পবিত্র দ্বীন ইসলামী কায়দায় কফিনে ঢুকানো হয়েছে, দাফন করা হয়েছে। অর্থাৎ ৯৭ ভাগ মুসলমানের এদেশে মরেও মুসলমান নামধারী নাস্তিকের রক্ষা নেই। একথা আরো স্পষ্ট করে প্রতিভাত হয়- তাকে দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধের প্রথম শহীদ উল্লেখ করার মাধ্যমে। কারণ, শহীদ একটি পবিত্র দ্বীন ইসলামী স্পর্শকাতর শব্দ। পবিত্র দ্বীন ইসলাম রক্ষার জন্য যারা জিহাদে মৃত্যুবরণ করেন তাদের বলা হয় ‘শহীদ’। পবিত্র ‘শহীদ’ শব্দ উচ্চারণের দ্বারা পবিত্র দ্বীন ইসলাম রক্ষার গুরুত্বই সর্বোতভাবে প্রতিফলিত হয়। কাজেই সে ইসলাম রক্ষার আঙ্গিকে কুখ্যাত ব্লগার রাজীবের মৃত্যু যতটা না আলোচিত হবার কথা তার চেয়ে বেশি পবিত্র দ্বীন ইসলাম বিদ্বেষী চরম-পরম লেখার জন্য এদেশের প্রতিটি মুসলমানের-
আলোড়িত হবার কথা, আন্দোলিত হবার কথা
মুষ্টিবদ্ধ হবার কথা
জিহাদী প্রত্যয় লাভের কথা।
এদিকে নারীঘটিত বিষয়ে শত্রুতা থেকে রাজীবের মৃত্যু হয়েছে বলে খবর বেরিয়েছে। তার ঘাতকদের খুঁজে বের করে শাস্তি দেয়া হোক। কিন্তু সবার আগে সে যে এদেশের ৯৭ ভাগ মুসলমানের ধর্মীয় অনুভূতিতে চরম-পরম আঘাত দিয়ে গেছে, রাষ্ট্রধর্ম পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার বিরোধিতা করেছে তার মরণোত্তর বিচার করতে হবে। প্রসঙ্গত প্রধানমন্ত্রী ১৯ জন ব্লগারের নিরাপত্তার বিশেষ নির্দেশ দিয়েছে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীকে এটাও ভেবে দেখতে হবে কেন তারা অনিরাপত্তায় ভুগছে? তারা ৯৭ ভাগ অধিবাসী মুসলমানের ধর্মীয় অনুভূতিতে সর্বোচ্চ আঘাত দিবে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্পর্কে চরম-পরম কুরুচি, কুৎসা রটনা করে যাবে আর তারা প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তার চাদরে আবৃত থাকবে এটা তো রাষ্ট্রধর্ম পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার দেশের সাংবিধানিক কথা হতে পারেনা। তাদেরকে অবশ্যই ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতদানের জন্য গ্রেফতার করে আদালতে পাঠাতে হবে। পাশাপাশি অবিলম্বে পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার বিরোধী সব ব্লগ বন্ধ করতে হবে এবং পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার বিদ্বেষী ব্লগারদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।
মূলত এসব অনুভূতি ও দায়িত্ববোধ আসে পবিত্র ঈমান ও পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনাদের অনুভূতি ও প্রজ্ঞা থেকে। আর তার জন্য চাই নেক ছোহবত মুবারক তথা ফয়েজ-তাওয়াজ্জুহ মুবারক। যামানার ইমাম ও মুজতাহিদ, যামানার মুজাদ্দিদ, মুজাদ্দিদে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার নেক ছোহবত মুবারক-এ সে মহান ও অমূল্য নিয়ামত হাছিল সম্ভব। খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদের তা নছীব করুন। (আমীন)
-মুহম্মদ মাহবুবুল্লাহ
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি ও ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা-৫০