পিইডিপি-২ গত ৩০ জুন শেষ হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় নতুন কর্মসূচি হাতে নেয়া হয়েছে।
প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়নে তৃতীয় প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচি (পিইডিপি-৩) নামে বিশাল কর্মসূচি হাতে নিতে যাচ্ছে সরকার। পাঁচ বছর মেয়াদি ওই কর্মসূচিতে শুধু উন্নয়ন খাতে ব্যয় ধরা হয়েছে ২২ হাজার ১৯৬ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। শিক্ষা খাতে এ পর্যন্ত এটিই সবচেয়ে বড় কর্মসূচি। তবে শিক্ষকদের বেতন-ভাতাসহ অনুন্নয়ন ও উন্নয়ন খাত মিলিয়ে এই কর্মসূচির মোট ব্যয় দেখানো হচ্ছে ৫৮ হাজার ৩৫৯ কোটি টাকা। এই টাকার ৮৭ শতাংশই সরকার বহন করবে। বাকি ১৩ শতাংশ দেবে নয়টি উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা (দাতা)।
নতুন কর্মসূচিতে শ্রেণীকক্ষের শিক্ষার (পাঠদান) মানোন্নয়নে নতুন কর্মসূচিতে জোর দেয়া হবে। কর্মসূচির মূল কার্যক্রমের মধ্যে থাকবে ৪৭ হাজার ৬৭২ জন সহকারী শিক্ষক নিয়োগ (এর মধ্যে প্রাক-প্রাথমিকের জন্য প্রতি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একজন করে শিক্ষক থাকবে), চাহিদাভিত্তিক ৩১ হাজার ৬৮৫টি অতিরিক্ত শ্রেণীকক্ষ তৈরি, দুই হাজার ৭০৯টি বিদ্যালয় স্থাপন, এক লাখ ২৮ হাজার ৯৫৫টি টয়লেট নির্মাণ, ৩৯ হাজার ৩০০ নলকূপ স্থাপন, মাঠপর্যায়ের ৬৬৮টি কার্যালয় মেরামত, অধিদপ্তরের নতুন ভবন, সাতটি বিভাগীয় কার্যালয়ে বিশ্রামাগার (রেস্ট হাউস) স্থাপন, ৬০টি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয় সম্প্রসারণ এবং সবগুলো বিদ্যালয়ে ল্যাপটপ দেয়া। এ ছাড়া ১৫ হাজার বিদ্যালয়ে আসবাব দেয়া, পাঁচ বছরে বিনা মূল্যের বইয়ের খরচ, প্রাক-প্রাথমিকের জন্য ২১ লাখ বই মুদ্রণ, শিশুদের মধ্যে খাবার বিতরণ, শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ, শিক্ষা উপকরণ ও সামগ্রী সরবরাহ, জনবলের বেতন-ভাতা, ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের উপানুষ্ঠানিক শিক্ষাসহ প্রাথমিক শিক্ষার বিভিন্ন ধরনের কাজ করা হবে।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নতুন কর্মসূচিটি হবে পিইডিপি-২-এর তুলনায় বেশ বড়। পিইডিপি-২ প্রকল্পে উন্নয়ন খাতে ব্যয় হয় সাত হাজার ৪৯২ কোটি টাকা, নতুন কর্মসূচিতে উন্নয়ন খাতেই ব্যয় ধরা হয়েছে ২২ হাজার ১৯৬ কোটি ৬৪ লাখ টাকা।
উপরোক্ত বর্ণনা সাপেক্ষে সরকার শিক্ষাকেও বিশেষত প্রাথমিক শিক্ষা পর্যায়ে অত্যন্ত আন্তরিক ও দরদী এবং সক্রিয় বলে প্রতিভাত হয়।
প্রমাণিত হয় প্রাথমিক শিক্ষাই যে একটা জাতির চেতনার ভিত্তি তৈরি করে এটা সরকার একান্তভাবে অনুধাবন করেছে।
কিন্তু কার্যত সরকার কী তার ফল পেয়েছে?
সরকার কি মনে করতে পারে যে বর্তমানে তার যেসব তথাকথিত উচ্চ শিক্ষিত মন্ত্রী, আমলা ইত্যাদি রয়েছে-
তারা প্রাথমিক শিক্ষার শিক্ষাটা ধারণ করতে পারছে?
বহন করতে পারছে?
ধরে রাখতে পেরেছে?
প্রকাশ করতে পেরেছে?
প্রতিফলন ঘটাতে পেরেছে?
তা যে আদৌ হয়নি তার প্রমাণ সরকার নিজে। সরকারের দুর্নীতি দমন বিভাগ আজ প্রকাশ্যে রাস্তায় রাস্তায় অজ¯্র বিলবোর্ড তৈরি করে,
পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেয়,
ভাষণে ব্যক্ত করে- দুর্নীতিকে না বলুন।
ঘুষকে না বলুন।
মজার ব্যাপার হলো বিগত সময়ের দুর্নীতি দমন বিভাগের চেয়ারম্যানকেও দেখা গেছে বিশাল দুর্নীতি করতে।
এ দুর্নীতির অভিযোগ পিয়ন থেকে প্রধানমন্ত্রী অথবা প্রেসিডেন্ট পর্যন্ত।
পুলিশ কনস্টেবল থেকে আইজিপি পর্যন্ত।
ক্লার্ক থেকে সচিব পর্যন্ত।
ড্রাইভার থেকে চেয়ারম্যান পর্যন্ত।
বলাবাহুল্য, এরা সবাই কিন্তু শুধু প্রাথমিক শিক্ষায়ই শিক্ষিত নয়; এমনকি অনেকে পোস্ট ডক্টরাল ফেলোশিপ পর্যন্ত অর্জন করেছে!
কিন্তু প্রকৃত বিচারে তারা কি প্রাথমিক শিক্ষার শিক্ষা অর্জন করতে পেরেছে?
প্রাথমিক শিক্ষার প্রথম পাঠ লিপিতে কী বলা হয়নি-
দুর্নীতি করা মহাপাপ।
চুরি করা মহাপাপ।
মিথ্যা বলা মহাপাপ।
তারপরেও ওইসব মন্ত্রী আমলা দুর্নীতি করে কিভাবে?
তাহলে এই প্রশ্নই সঙ্গত হয়না যে প্রাথমিক শিক্ষারও শিক্ষা কী তাদের আছে? (ইনশাআল্লাহ চলবে)
-মুহম্মদ ওয়ালীউর রহমান
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি ও ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা-৫০