সমস্ত প্রশংসা মুবারক খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য; যিনি সকল সার্বভৌম ক্ষমতার মালিক। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নবী আলাইহিমুস সালাম উনাদের নবী, রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি অফুরন্ত দুরূদ শরীফ ও সালাম মুবারক।
চলতি ২০১৪-১৫ অর্থবছরের জন্য জাতীয় অর্থনীতিতে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বগতিকে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসা। অর্থমন্ত্রী নিজেও মূল্যস্ফীতির চ্যালেঞ্জের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। অর্থমন্ত্রী বলেছে, ‘মূল্যস্ফীতি নিয়ে কিছুটা চাপ আছে। এই চাপ কাটিয়ে উঠার চেষ্টা করা হবে।’ মূল্যস্ফীতি সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছে অর্থমন্ত্রী। কিন্তু অর্থমন্ত্রী চাইলেই কি মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনা যাবে? মূলত এটা কোনোভাবেই সম্ভব নয়।
উল্লেখ্য, ১৪৩৫ হিজরী সনের পবিত্র রমযান মাস শুরু হওয়ার আগে একটি উচ্চ পর্যায়ের ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদল প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করলে প্রধানমন্ত্রী ব্যবসায়ীদেরকে পবিত্র রমযান মাসে দ্রব্যমূল্য সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখার জন্য তাদের পরামর্শ দেয়। ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ প্রধানমন্ত্রীকে আশ্বাস দেয় যে, পবিত্র রমযান মাসে দ্রব্য মূল্য বৃদ্ধি পাবে না। কিন্তু এটা বলার সঙ্গে সঙ্গেই দ্রব্যমূল্য আরো এক দফা বৃদ্ধি পায়। এদিকে অনেকেই ভেবেছিলো, হয়তো পবিত্র রমযান মাসে ব্যবসায়ীরা দ্রব্য মূল্য বাড়াবে না বলেই পবিত্র রমযান মাস শুরুর আগেই পণ্য মূল্য বৃদ্ধি করেছে। কিন্তু দেখা গেল পবিত্র রমযান শুরু হওয়ার পর আরো একদফা দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি করা হয়েছে। সম্প্রতি বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির এক বৈঠকে পণ্য মূল্য নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে দায়ী করা হয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় পণ্যমূল্য বৃদ্ধির জন্য দায়ী কিনা- তা নিয়ে প্রশ্ন থাকতে পারে। কিন্তু একটা বিষয়ে কারো কোনো সন্দেহ নেই যে, সরকার মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কোনোভাবেই সক্ষম হচ্ছে না। দরিদ্র মানুষ তাদের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে পণ্য মূল্যকে দেখতে চায়। বর্তমানে খাদ্য পণ্যের মূল্যস্ফীতি ১৪ শতাংশ অতিক্রম করে গেছে। সাধারণ মানুষ এখন বড়ই অসহায় হয়ে পড়েছে। তারা দু’বেলা আহারের সংস্থান করতে গিয়ে হিমসিম খাচ্ছে।
চাল, ডাল, আটা, শাক-সবজি, ফলমুল, মসলা, তেল, দুধ, মাছ, গোশত ইত্যাদি দ্রব্যাদির মূল্য বৃদ্ধিকেই খাদ্যে মূল্যস্ফীতির জন্য দায়ী করা হয়ে থাকে। সাধারণভাবে মূল্যস্ফীতি জনগণের উপর আর্থিক চাপ সৃষ্টি করে। খাদ্য মূল্যস্ফীতি সাধারণ মানুষের জন্য ভীতিকর হয়ে দাঁড়ায়।
একটি পরিবারে মাসিক যে ব্যয় হয় তার সিংহভাগ চলে যায় খাদ্য সংগ্রহে। বিবিএসের হাউসহোল্ড ইনকাম অ্যান্ড এক্সপেন্ডিচার সার্ভে (এইচআইইএস) ২০১০ মোতাবেক জাতীয় পর্যায়ে একটি পরিবারের মাসিক মোট ব্যয়ের ৫৪ দশমিক ৮১ শতাংশ খরচ হয় খাদ্যে। ওই সময় গ্রামাঞ্চলে খাদ্যে ব্যয় হয় ৫৮ দশমিক ৭৪ শতাংশ। অন্যদিকে শহরাঞ্চলে খাদ্যে ব্যয়ের পরিমাণ দাঁড়ায় ৪৮ দশমিক ১৯ শতাংশ। এর অর্থ দাঁড়ায়, গ্রামে বসবাসকারীরা খাদ্যে বেশি ব্যয় করে। উপরের তথ্য মুতাবিক ২০১০ সালের পরবর্তী তিন বছর খাদ্যে মূল্যস্ফীতি প্রতি বছর গড়ে ১০ শতাংশ হিসাবে ধরলে পরিবারের খাদ্য ব্যয় যে আরো বেড়েছে, তা নির্দ্বিধায় বলা যায়। ফলে খাদ্যবহির্ভূত খাতে যথা পরিধেয় বস্ত্রাদি, বাড়িভাড়া, আসবাবপত্র ও গৃহস্থালি, চিকিৎসাসেবা, পরিবহন, শিক্ষা উপকরণ ইত্যাদির ব্যয় মেটানো সাধারণ জনগণের পক্ষে ভীষণ কষ্টকর হয়ে পড়েছে।
বিবিএসের উপর্যুক্ত সার্ভে রিপোর্ট অনুযায়ী, পরিবারের মাসিক মোট খাদ্য বাবদ খরচের সিংহভাগ ব্যয় হয় খাদ্যশস্য (চাল, গম) সংগ্রহে। অর্থাৎ মোট খাদ্য ব্যয়ের (৫৪ দশমিক ৮১ শতাংশ) ৩৫ দশমিক ৯৫ শতাংশ ব্যয় হয় খাদ্যশস্য ক্রয়ে। বাংলাদেশে ৯০ শতাংশের বেশি মানুষের প্রধান খাদ্যশস্য চাল থেকে পাওয়া ভাত। তাই চালের দামে উঠানামার সঙ্গে জনগণের দুর্ভোগের হ্রাস-বৃদ্ধি ঘটে। গত পাঁচ বছরে মোটা চালের দাম প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। আর মাঝারি চালের দাম বেড়েছে ৫৬ শতাংশ। এছাড়া বেড়েই চলেছে গমসহ শাক-সবজি, মাছ, গোশত, ডিম, দুধ, ফলমুলের দাম। এতে পরিবারে খাদ্য ব্যয় ক্রমান্বয়ে বাড়ছে, যা সাধারণ মানুষের উপর আর্থিক চাপ সৃষ্টি করছে।
৫ জুন ২০১৪ ঈসায়ী তারিখে ২০১৪-১৫ অর্থবছরের বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত দাবি করেছে, দারিদ্র্যের হার ২৬ দশমিক ৪ শতাংশে নেমে এসেছে। সে হিসাবেও দেশের মোট ১৬ কোটি মানুষের মধ্যে ৪ কোটি ২০ লাখের বেশি বর্তমানে দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করছে। এরা ভাতের সঙ্গে লবণ, কাঁচামরিচ ও সামান্য শাক-সবজি খেয়ে বেঁচে থাকে। দাম বাড়লে এরা প্রয়োজনীয় চাল সংগ্রহ করতে পারে না। তখন এদের আধপেটা খেয়ে থাকতে হয়।
এইচআইইএস ২০১০ সালের রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০১০ সালে জাতীয় পর্যায়ে খানাপ্রতি (হাউসহোল্ড) মাসে আয় ছিল ১১ হাজার ৪৮০ টাকা, যা ২০০৫ সালে ছিল ৭ হাজার ২০৩ টাকা। ২০০৫ সালের তুলনায় ২০১০ সালে জাতীয় পর্যায়ে আয় বাড়ে ৫৯ দশমিক ৩৮ শতাংশ। অন্যদিকে ২০১০ সালে জাতীয় পর্যায়ে খানাপ্রতি মাসে গড় ব্যয় দাঁড়ায় ১১ হাজার ২০০ টাকা। ২০০৫ সালে তা ছিল ৬ হাজার ১৩৪ টাকা। অর্থাৎ ২০০৫ সালের তুলনায় ২০১০ সালে ব্যয় বাড়ে ৮২ দশমিক ৫৯ শতাংশ। ২০১০ সালের পরবর্তী ৩ বছরে এ গতিধারার পরিবর্তন হয়েছে মনে করার কোনো কারণ নেই। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির সঙ্গে আয়ও বাড়ায় মানুষের কষ্ট হচ্ছে না বলে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের নেতারা যে দাবি করছে, তা তথ্য-প্রমাণে ধোপে টেকে না। আয়ের চেয়ে ব্যয় বাড়ায় এবং নিত্যপণ্যের, বিশেষ করে খাদ্যদ্রব্যের মূল্যস্ফীতিতে সাধারণ মানুষের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে।
সরকার মূলত এখন গণমানুষের নয়; বরং গণশোষণের। সরকারের উচিত পবিত্র রমযান মাসে মাগফিরাতের সময় তওবা করে পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার অনুযায়ী চলা এবং গণমানুষের গণকল্যাণ সাধন করা।
মূলত, এসব অনুভূতি ও দায়িত্ববোধ আসে পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার অনুভূতি ও প্রজ্ঞা থেকে। আর তার জন্য চাই নেক ছোহবত মুবারক তথা ফয়েজ-তাওয়াজ্জুহ মুবারক।
যামানার ইমাম ও মুজতাহিদ, যামানার মুজাদ্দিদ, মুজাদ্দিদে আ’যম মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার নেক ছোহবত মুবারক-এ সে মহান ও অমূল্য নিয়ামত হাছিল সম্ভব। খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদেরকে তা নছীব করুন। (আমীন)
-মুহম্মদ ওয়ালীউর রহমান, ঢাকা
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি ও ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা-৫০