تقلبك فى السجدين
অর্থ: হে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আপনার মুবারক স্থানান্তর তথা মুবারক আগমনের সূত্রধারা ছিলো উত্তম সিজদাকারী উনাদের মাঝে।” (সূরা শুয়ারা : আয়াত শরীফ ২১৯)
আর এ প্রসঙ্গে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, আমি যাঁদের মাধ্যমে কুদরতীভাবে স্থানান্তরিত হয়েছি উনারা সবাই সর্বকালেই সর্বযুগেই উত্তম হতে উত্তমতম এবং পবিত্র থেকে পবিত্রতম ছিলেন।” সুবহানাল্লাহ! (মাওয়াহিবুল লাদুন নিয়্যাহ)
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আরো ইরশাদ করেন, আমি সবসময় পবিত্রতম পৃষ্ঠ মুবারক হতে অতিপবিত্রা রেহেম শরীফ-এ কুদরতীভাবে স্থানান্তরিত হয়েছি। আমার পূর্ববর্তী যতো মহান পুরুষ এবং মহান মহিলা এমনকি হযরত আদম আলাইহিস সালাম ও হযরত হাওয়া আলাইহাস সালাম হতে হযরত আব্দুল্লাহ ও হযরত আমিনা আলাইহিমাস সালাম পর্যন্ত উনাদের মধ্যে কেউই সামান্যতম দোষে দোষী কিংবা না-শোকর গোযারী বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন না। বরং মহান আল্লাহ পাক উনার খাছ লক্ষ্যস্থল ও সর্বকালের সর্বযুগের খাছ বান্দা-বান্দীদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন।” সুবহানাল্লাহ! (শারহুয যারক্বানী, মাওয়াহিবুল লাদুন নিয়্যাহ, তাফসীরে মাযহারী, মাদারিক)
উক্ত হাদীছ শরীফ-এর আলোকে সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো যে, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক পরশের কারণেই সৃষ্টির আদি থেকেই উনার মহান পূর্বপুরুষ ও মহান মহিলা উনাদেরকে সার্বিক দিক থেকে হিফাযত ও পবিত্রতম করেছেন। উনাদেরকে নুবুওওয়াত, রিসালাত, হিকমত, খিলাফত, নিছবত ও মুহব্বত ও মা’রিফাত দিয়ে ধন্য করেছেন। এবং যাঁরা নূরে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে ধারণ করেছেন উনারা সবাই স্ব স্ব যামানায় আল্লাহ পাক উনার খাছ লক্ষ্যস্থল ছিলেন। এতে কোনো বিন্দু থেকে বিন্দুতম সন্দেহ করলে কস্মিনকালেও সে মুসলমান থাকতে পারবে না। যারা এ ব্যাপারে সামান্যতম সন্দেহ পোষণ করবে কিংবা চু-চেরা কিল-কাল করবে সে কাট্টা কাফিরের অন্তর্ভুক্ত হবে। শুধু বর্তমানে নয়। শুরু থেকে মুনাফিকদের একটি গোষ্ঠী মুসলমানদের মধ্যে অনুপ্রবেশ করে মুসলিম ছদ্মাবরণে মুসলমানদের মুসলমানিত্ব, মু’মিনের মু’মিনত্ব নস্যাৎ করার লক্ষ্যে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এবং উনার পূর্বপুরুষ উনাদের সম্পর্কে এলোমেলো কুফরীমূলক কথাবার্তা বলে থাকে এবং আরো বলে থাকে যে, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত পিতা ও সম্মানিতা মাতা উনারা নাকি ঈমানদার ছিলেন না। (নাঊযুবিল্লাহ মিন যালিক)
মূলত তারা আল্লাহ পাক উনার এবং উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের দুশমন। অথচ হাদীছ শরীফ-এ উল্লেখ আছে যে, বনী ইসরাইলের দুইশ বছরের পাপী ব্যক্তি হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শুধুমাত্র নাম মুবারক-এ চুমু খাওয়ার কারণে সর্বোত্তম বান্দার অন্তর্ভুক্ত হলেন এবং জান্নাতী হলেন। শুধু তাই নয় জলীলুল ক্বদর নবী এবং রসূল হযরত মুসা আলাইহিস সালাম উনাকে ওহী করে উনার গোসল-কাফন-দাফন-এর জন্য মুবারক নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সুবহানাল্লাহ!
শুধু তাই নয় হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পেশাব মুবারক ও রক্ত মুবারক এবং গোসলের ব্যবহৃত পানি মুবারক পান করার কারণে যথাক্রমে হযরত উম্মে আয়মন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা, হযরত মালিক বিন সিনান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ও অপর এক মহিলা ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা জান্নাতের সনদপ্রাপ্ত হন। সুবহানাল্লাহ! (মাওয়াহিবুল লাদুন নিয়াহ, দালায়িলুন নুবুওওয়াত)
তাছাড়াও সব ইমামগণের ইজমা হয়েছে যে, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শরীর মুবারক-এ যে মাটি মুবারক স্পর্শ করেছে তার মর্যাদা এবং হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার না’লাইন শরীফ-এ স্পর্শ করা ধুলাবালি মুবারক-এর মর্যাদা আরশে আযীমের মর্যাদার চেয়ে লক্ষ কোটি গুণে বেশি মর্যাদাবান। সুবহানল্লাহ! (ফতওয়া শামী)
এ প্রসঙ্গে মুজাদ্দিদে আ’যম, হাবীবে আ’যম, গাউছুল আ’যম, খলীফায়ে আ’যম, ছাহিবু সুলতানিন নাছীর, আওলাদে রসূল সাইয়্যিদুনা ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা তিনি বলেন, শুধু তাই নয়, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে সংশ্লিষ্ট এবং উনার সংস্পর্শে যা কিছু রয়েছে এবং ছোহবত পেয়েছে ওইগুলোর মর্যাদা আরশ, কুরসী, লওহো, ক্বলম, কা’বা শরীফ ইত্যাদির চেয়েও লক্ষ কোটি গুণ বেশি মর্যাদায় মর্যাদাবান সুবহানাল্লাহ! এটার মর্যাদা যদি এ রকম হয়, তাহলে যেই নূরে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে যিনি দীর্ঘদিন ধারণ করে রাখলেন, হযরত আব্দুল্লাহ আলাইহিস ও হযরত আমিনা আলাইহাস সালাম উনাদের মর্যাদা আরশে আযীমের চেয়ে কত কোটি গুণ বেশি হবে তার বর্ণনা দিয়ে শেষ করা, কোনো মুফতী, মুহাদ্দিছ, মুফাছছির-এর পক্ষে সম্ভব হবে না। তাহলে কি করে বলতে পারে যে, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আম্মাজান ও আব্বাজান উনারা ঈমানদার ও জান্নাতী নন। নাঊযুবিল্লাহ!
শুধু এরূপ চরম বেয়াদবীমূলক কথা তাদের মুখেই শোভা পায় ও বলতে পারে যারা কাফির, মুশরিক, ইহুদী, নাছাদের চর এবং মুনাফিকের দল তথা ওহাবী, খারিজী, লা-মাযহাবী, জামাতী ইত্যাদি বাতিল ফিরক্বার লোক।।
এটা বুঝার জন্য দলীলের কোনো প্রয়োজনেই হয় না। মূলত এটা সাধারণ আক্বলেই বুঝা উচিত যে, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত পিতা-মাতা আলাইহিমাস সালাম উনারা যদি জান্নাতে প্রবেশ করতে না পারেন তাহলে কার পিতা-মাতা এমন আছে যে, তারা জান্নাতে প্রবেশ করার অধিকার পাবে?
তাহলে কস্মিনকালেও কেউই জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। কাজেই এটাই স্বতঃসিদ্ধ ও প্রণিধানযোগ্য কথা যে, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পিতা-মাতা আলাইহিমাস সালাম উনারাই সর্বপ্রথম ও সর্বোত্তম জান্নাতী এবং উনাদের সময়ে উনারাই আল্লাহ পাক উনার যমীনে খাছ লক্ষ্যস্থল তো বটেই। তাছাড়াও সমস্ত কায়িনাতের মধ্যে সর্বোত্তম পিতা-মাতা হিসেবে পরিগণিত।
উনাদের নাম মুবারকই প্রমাণ করে যে, আল্লাহ পাক উনার সাথে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত পিতা-মাতা আলাইহিমাস সালাম উনাদের কতো গভীরতম ঘনিষ্ঠতা ছিলো। সুবহানাল্লাহ!
যেমন (عبد الله) হযরত আব্দুল্লাহ আলাইহিস সালাম এই নাম মুবারক-এর অর্থ হচ্ছে- আল্লাহ পাক উনার খাছ মনোনীত ও পছন্দনীয় বান্দা যিনি আল্লাহ পাক উনার জন্য বিলীন এবং আল্লাহ পাক উনার প্রতি সর্বদা খুশি থাকেন। আর (امنة) হযরত আমিনা আলাইহাস সালাম এই নাম মুবারক-এর অর্থ হচ্ছে- চরম বিশ্বাসিনী, বা সর্বোত্তম মু’মিনা। হযরত আমিনা আলাইহাস সালাম আল্লাহ পাক উনার খাছ বান্দীদের মধ্যে মহান একক- অদ্বিতীয়া ছিলেন। উনার প্রতি সদা-সর্বদা স্বয়ং আল্লাহ পাক তিনি ইলহাম ইলকা করতেন।
হযরত হাওয়া আলাইহাস সালাম থেকে শুরু করে, হযরত মারইয়াম আলাইহাস সালাম ও হযরত আছিয়া আলাইহাস সালাম, হযরত হাজেরা আলাইহাস সালাম, হযরত সারা আলাইহাস সালাম উনারা সকলেই হযরত মা আমিনা আলাইহাস সালাম উনার সাথে সাক্ষাৎ করে দোয়া নিয়েছেন এবং নিজেদেরকে ধন্য করেছেন।
তাছাড়াও তিনি ছিলেন সবচেয়ে প্রজ্ঞাসম্পন্না মা এবং বেমেছাল ইলমে গাইব-এর অধিকারিণী। বিশ্বখ্যাত ইমাম হযরত জালালুদ্দীন সুয়ূতী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বিশ্ববিখ্যাত কিতাব কিতাবুল আযীম ওয়া সুন্নাহ এবং খাছায়িছুল কুবরা কিতাবের মধ্যে হযরত মা আমিনা আলাইহাস সালাম উনার একখানা অবিস্মরণীয়, অদ্বিতীয় স্বরচিত ক্বাছীদা শরীফ যার জ্বলন্ত প্রমাণ। তিনি ওই ক্বাছীদা শরীফ-এ হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আদি থেকে অন্ত পর্যন্ত সমস্ত ছানা-ছীফত ও মুবারক কার্যক্রম তুলে ধরেন।
ক্বাছীদা শরীফখানার মর্মার্থ: হে আমার নয়নমণি সুযোগ্য আওলাদ! আমি বিদায় বেলায় বলে যাচ্ছি, আল্লাহ পাক তিনি আপনার মুবারক জীবনকে ধন্য ও বরকতময় করেছেন। মহীয়ান-গরীয়ান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ হতে বিশ্ব জগতের তথা কায়িনাতের জন্য নবী-রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামরূপে প্রেরিত হয়েছেন। আপনি মক্কা শরীফ, মদ্বীনা শরীফ এমনকি সারা বিশ্বে তথা কুল-কায়িনাতে ইসলামী ঝাণ্ডা উড়াবেন। আপনি হযরত ইবরাহীম খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার সঠিক দ্বীনকে পুনরুজ্জীবিত করবেন। আল্লাহ পাক আপনাকে মূর্তি পূজা ধ্বংস করার জন্যই প্রেরণ করেছেন এবং পবিত্র এবং সম্মানিত বংশেই প্রেরিত হয়েছেন।
সবকিছুই ধ্বংস হবে। আমিও আল্লাহ পাক উনার সাক্ষাতে চলে যাবো। কিন্তু আমার আলোচনা চিরস্থায়ী হয়ে থাকবে। কারণ আমি অতি উত্তম ও পবিত্রতম রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ ঘটিয়েছি এবং সেই পবিত্রতম রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকেই রেখে যাচ্ছি। ”
কাজেই উল্লিখিত ক্বাছীদা শরীফ থেকে প্রমাণিত হলো যে, হযরত মা আমিনা আলাইহাস সালাম তিনি বেমেছাল ইলহাম ইলকা ও ইলমে গাইব-এর অধিকারিণী। আর পরিশেষে অশেষ শুকরিয়া আদায় করছি পনের শতকের মহান মুজাদ্দিদ, মুজাদ্দিদে আ’যম, হাবীবে আ’যম, গাউছুল আ’যম, আওলাদে রসূল সাইয়্যিদুনা ইমাম আমাদের প্রাণের আাক্বা রাজারবাগ শরীফ-এর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার মুবারক ক্বদমে যিনি আমাদেরকে উক্ত হারানো ইলম, আমল ও আক্বীদা বিশ্ব বিখ্যাত কিতাব থেকে দলীল দিয়ে দ্বীনি ইলমের সুমহান তাজদীদ করলেন। যা মুসলিম উম্মাহর ঈমান আক্বীদা হিফাযতের জন্য এক বিরাট নিয়ামত।
আল্লাহ পাক তিনি আমাদের সকলকে উক্ত আক্বীদায় আক্বীদা পোষণ করার তাওফিক দান করুন। আমীন।
-মাওলানা মুফতী মুহম্মদ আলমগীর হুসাইন