عقيدة (আক্বীদা) অর্থ: দৃঢ় বিশ্বাস, ধর্মমত, দ্বীনিমত। হাক্বীক্বী মু’মিন, হাক্বীক্বী মুসলমান হওয়ার জন্য সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক শানে আক্বীদা বিশুদ্ধ হওয়া আবশ্যক। কেননা উনার মুবারক শানে বিশুদ্ধ আক্বীদাই ঈমানের মূল। উনার মুবারক শানে আক্বীদা বিশুদ্ধ না হলে কোন ব্যক্তিই কখনই ঈমানদার বা মুসলমান বলে গণ্য হবে না।
পূর্ববর্তী দুই জাতি আসমানী কিতাব পেয়েছিল। যারা ইহুদী ও নাছারা নামে পরিচিত। তারা মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার জলীলুল কদর নবী-রসূল হযরত মুসা আলাইহিস সালাম উনার এবং হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম উনাদের প্রতি বিশ্বাসী ছিল। কিন্তু নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি তারা ঈমান আনেনি। উনার মুবারক শানে তাদের আক্বীদা-বিশ্বাস বিশুদ্ধ ছিল না। ফলে তারা ঈমানদার বলে সাবস্ত হয়নি। বরং তারা হয়েছে অভিশপ্ত, বিভ্রান্ত ও কাফির হিসেবেই স্বীকৃত, পরিগনিত।
ইহুদী-নাছারা, মুজুসি, মুশরিকরা লানত গ্রস্থ, বিভ্রান্ত ঘোষিত হওয়া সত্ত্বেও তারা তাদের অবস্থান বা ধর্মীয় মতাদর্শ থেকে ফিরে আসেনি। তাদের লানতি কাজ থেকে বিরত হয়নি। বরং তারা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি আরো বিদ্বেষ ও বিরোধীতা শুরু করে। তাদের হিংসার আগুন আরো অধিক মাত্রায় বৃদ্ধি পায়। তারা ইসলাম ও মুসলমানগণের ক্ষতি সাধনের জন্য খৃণ্য ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তার করতে থাকে। বাতিল ৭২ ফিরকা তাদের সেই বিদ্বেষের ফসল। ইহুদী-নাছারা, মুজুসী-মুশরিকরা কখনো নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহান শান-মান, মর্যাদা-মর্তবা সহ্য করতে পারে না। নাউযুবিল্লাহ!
কাজেই, যারা উনার মুবারক শানের খিলাফ কিছু বলে বা লিখে তারা তাদের কাছে হয় আদরণীয়, বিশেষ ব্যক্তি। পৃথিবীর সর্ব শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিত্ব বলে বিভিন্নভাবে সমাজে পরিচিত করে তোলে। মিডিয়াগুলো তার প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়ে তার প্রচারে মরিয়া হয়ে উঠে। নাউযুবিল্লাহ!
পক্ষান্তরে যারা সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহান শান-মান, মর্যাদা-মর্তবা উম্মাহর মাঝে তুলে ধরেন তারাই হয় ইহুদী-নাছারা, মজুসী-মুশরিকদের শত্রু। উনাদেরকে দমিয়ে রাখার জন্য যত ব্যবস্থাপনা সবই তারা কঠোর হাতে সম্পন্ন করতে সদা প্রস্তুত হয়ে যায়। নাউযুবিল্লাহ!
ইহুদী-নাছারাদের মদদপুষ্ট-বাতিল ৭২ ফেরকার প্রধান পৃষ্ঠপোষক উলামায়ে “সূ”। তারাই ইহুদী-নাছারাদের প্রতিনিধিত্বকারী। তারা তাদের উদ্দেশ্যকে সফল করার কাজে সদা তৎপর। তারাই বিভিন্ন সময়ে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহান শানের খিলাফ কথা বলে, লিখে ও আলোচনা করে থাকে। নাউযুবিল্লাহ!
ইহুদী-নাছারাদের গোলাম উলামায়ে ছূ-দের একটি কুট কৌশল হলো- নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সুমহান শান-মান মুবারক সম্পর্কে আলোচনা করাকে শিরক বলে আখ্যায়িত করা। উনার সুউচ্চ শান মুবারক বুঝায় এমন আলোচনা বা বিশ্বাসকে তারা মহান আল্লাহ পাক উনার সাথে শিরক বা অংশিদারিত্ব আখ্যায়িত করে সুকৌশলে উনার আলোচনা মুবারককে স্তমিত বা বন্ধ করে দিতে চায়।
তাদের আর একটি কুট-কৌশল হচ্ছে উনার সুমহান শান সম্পর্কীয় হাদীছগুলোকে জাল বা মওজু বলে আখ্যায়িত করা। উনার মহান শানে অসংখ্য-অগনিত হাদীছ শরীফ উল্লেখ করলে তারা তার কোন সদুত্তর দিতে না পারলে সহসাই বলে উঠে “এগুলো মওজু বা জাল হাদীছ।” (নাউযুবিল্লাহ) অর্থাৎ তারা যেকোনভাবেই হউক উনার শান-মান মর্যাদা-মর্তবাকে প্রকাশ করতে দিবে না। সবসময়ই উনার সুমহান শান-মান, মর্যাদা-মর্তবাকে খাট করবেই। নাউযুবিল্লাহ! কাজেই, এদেরকে যারা মুসলমান বলে ও সম্মান করে, সহযোগিতা করে তাদেরকে কিভাবে মুসলমান বলা যাবে?
আর ইহুদী-নাছারা মুজসী-মুশরিকরা তাদের বিদ্বেষভাব প্রকাশ করতে পারেনা বলে তারা উলামায়ে সূ’দের দ্বারা এই প্রচারনায় কৌশল উদ্ভব করেছে। আর অর্থের লোভে উলামায়ে ছূরা অবলিলাক্রমে সেকাজ করে যাচ্ছে। আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন বক্তা, শাইখুল হাদীছ, শায়খুত তাফসীর, আল্লামা, মুফতী, মুহাদ্দিছ, মুফাসসির নামীয় ব্যক্তিদেরকে কাছ থেকে প্রচারিত ফতওয়া শুনে সাধারণ মুসলমানরা বিভ্রান্ত হয়ে থাকে। তাদের ফতওয়া শুনে সরল মনা মুসলমানরা যাচাই-বাচাই করার প্রয়োজন বোধ করে না। বিনা বিচারেই সেটা গলধকরন করে। ফলে এই আক্বীদা পোষণ করত: কুফরী অবস্থায় মৃত্যু বরণ করে। আর ইহুদী-নাছারারা তাদের হীন স্বার্থ চরিতার্থ হচ্ছে জেনে খুশি হয়। নাউযুবিল্লাহ!
মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার প্রিয়তম হাবীব নূরে মুজাসসাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রিয় বান্দা ও উম্মতগণের সেই অবস্থা হতে উত্তরণের জন্য আমরা উনার মুবারক শানে কতিপয় বিশুদ্ধ আক্বীদা বা বিশ্বাস উল্লেখ করবো। যদিও এখানে অত্যন্ত সংক্ষেপে আলোচনা করা হবে। তবে পরবর্তীতে আমরা এই বিভাগে প্রতিটি বিষয়ের উপর অকাট্য ও নির্ভরযোগ্য দলিল-আদিল্লাহ দ্বারা বিস্তারিত আলোচনা করবো ইনশাআল্লাহ।
(১)
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যদিও সর্বশেষ রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হিসেবে দুনিয়াতে তাশরীফ মুবারক এনেছেন। তবে সৃষ্টি হয়েছেন সর্ব প্রথম। মহান আল্লাহ পাক সর্বপ্রথম উনার পবিত্র নূর মুবারক সৃষ্টি করেছেন। তিনি ইরশাদ মুবারক করেছেন-
اول ماخلق الله نورى وكل شىء من نورى.
অর্থ: মহান আল্লাহ পাক তিনি সর্বপ্রথম যা সৃষ্টি করেছেন- তা হচ্ছে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নূর মুবারক। আর উনার নূর মুবারক থেকে সবকিছুই সৃষ্টি করেছেন।
(২)
তিনি নূর মুবারক উনার সৃষ্টি। অর্থাৎ তিনি নূরে মুজাসসাম তথা আপাদমস্তক নূর মুবারক। উনাকে মাটির তৈরী বলে ইহানত (তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য) করা, উনার শান-মানকে খাট বা ছোট করা কাট্টা কুফরী। মহান আল্লাহ পাক তিনিই উনাকে নূর মুবারক বলে উল্লেখ করেছেন।
قد جاءكم من الله نور وكتاب مبين.
অর্থ: অবশ্যই মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ হতে তোমাদের কাছে এসেছেন- নূর মুবারক (নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এবং সুস্পষ্ট কিতাব (পবিত্র সূরা মায়িদা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১৫)
কাজেই, তিনি আমাদের মত সাধারন মানুষ- বলা কাট্টা কুফুরী, চির জাহান্নামী হওয়ার কারণ।
(৩)
তিনি হাযির ও নাযির। তিনি সম্মানিত উম্মাত উনাদের সকল আমল ও বিষয়ই দেখতে পান। আর মহান আল্লাহ পাক উনাকে সর্বত্র হাযির বা উপস্থিত হওয়ার ইখতিয়ার দিয়েছেন। তিনি ইচ্ছা করলে আসমান-যমীনের যে কোন স্থানে হাযির হতে পারেন। হযরত আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম অনেকেই উনাকে জাগ্রত অবস্থায় দেখতে পেয়েছেন।
উল্লেখ্য যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার “হাযির-নাযির” বিষয়টি বুঝতে হলে সর্বপ্রথম মহান আল্লাহ পাক উনার ‘হাযির-নাযির’ বিষয়টি জানা জরুরী। কেননা উনার হাযির-নাযির হওয়ার বিষয়টি জানা থাকলে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিষয়টি বুঝা সহজ হয়। যারা উনার মহান শানে হাযির নাযির হওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে তারা মূলত মহান আল্লাহ পাক উনারই হাযির নাযির হওয়ার বিষয়টি বুঝে না।
মাওলানা মুফতী মুহম্মদ আল কাওছার