মহান আল্লাহ পাক তিনি কালামুল্লাহ শরীফ-এ ইরশাদ করেন-
انا اعطيناك الكوثر
অর্থ: “নিশ্চয়ই আমি আপনাকে (কাউছার) বা সমস্ত ভালাই হাদিয়া করেছি।” (পবিত্র সূরা কাওছার শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১)
হযরত মুফাসসিরীনে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনারা বলেন, কাউছার শব্দের লক্ষ কোটি অর্থ রয়েছে। তন্মধ্যে দু’টি অর্থ প্রধান। এক. ‘কাউছার’ শব্দের অর্থ হাউজে কাওছার। হাশরের দিনে যে ব্যক্তি এই হাউজে কাওছারের পানি পান করবে ওই ব্যক্তির আর কোন পিপাসা লাগবে না। দুই. কাওছারের প্রধানতম অর্থটি হচ্ছে ‘খইরে কাছীর’ অর্থাৎ নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মাথার তালু মুবারক হতে ক্বদম মুবারক উনার তলা পর্যন্ত সমস্ত কিছুই ছিলো পুতঃপবিত্র তথা পবিত্র থেকে পবিত্রতম। দ্বিতীয়তঃ উনার সংস্পর্শে যে সমস্ত বিষয় বা বস্তুগুলো এসেছে বা উনার সঙ্গে নিসবত প্রাপ্ত হয়েছে বা যুক্ত হয়েছে ওই সমস্ত বিষয় বা বস্তুগুলো কায়িনাতের মধ্যে সবচেয়ে উত্তম সম্মাণিত বেমেছাল ফযীলতপ্রাপ্ত। সুবহানাল্লাহ!
উল্লেখ্য যে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যে দিন ও রাত্রি মুবারক যমীনে তাশরীফ মুবারক নিয়েছেন যে তারিখে বা যে বার শরীফ বিলাদত শরীফ লাভ করেছেন সেই সময়, দিন, বার, তারিখ ও মাস উনাদের ফযীলত বাকি সমস্ত সময়, দিন, বার, তারিখ ও মাসের থেকে অনেক অনেক বেশী এবং বেমেছাল সম্মাণিত ও ফযীলতপ্রাপ্ত। সুবহানাল্লাহ!
বিশেষভাবে স্মরণীয় যে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ উনার তারিখ নিয়ে অনেক বদ মাযহাব, বদ আক্বীদা ও কাফির মুশরিকরা মতানৈক্য করে থাকে। অথচ তা বিশুদ্ধ হাদীছ শরীফ ও ছহীহ বর্ণনা দ্বারা প্রামাণিত যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সম্মানিত ১২ই রবীউল আউওয়াল শরীফ ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীমি বা পবিত্র সোমবার শরীফ যমীনে তাশরীফ মুবারক নিয়েছেন।
যেমন, এ প্রসঙ্গে হাফিয আবূ বকর ইবনে আবী শায়বাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ছহীহ সনদ সহকারে বর্ণনা করেছেন “হযরত আফফান রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণিত। তিনি হযরত সাঈদ ইবনে মীনা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণনা করেছেন যে, হযরত জাবির ও হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা উনারা বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ ‘হস্তি বাহিনী বর্ষের ১২ই রবীউল আউওয়াল শরীফ যা বার হিসেবে ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীমি বা সোমবার শরীফ হয়েছিল।” (বুলুগুল আমানী শরহিল ফাতহির রব্বানী, আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, সীরাত-ই-হালবিয়াহ, যুরক্বানী আলাল মাওয়াহিব, মাছাবাতা বিস সুন্নাহ ইত্যাদি)
উপরোক্ত বিশুদ্ধ পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার বর্ণনা অনুযায়ী ১২ই রবীউল আউওয়াল শরীফই হচ্ছেন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিলাদত শরীফ উনার মুবারক দিবস। এটাই ছহীহ ও মশহূর মত। এর বিপরীতে যেসব মত ঐতিহাসিকদের থেকে বর্ণিত রয়েছে তা অনুমান ভিত্তিক ও দুর্বল। যা আদৌ গ্রহণযোগ্য নয়।
এছাড়া এই সম্মানিত ১২ই রবীউল আউওয়াল শরীফ ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীমি বা সোমবার শরীফ পবিত্র দিনে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আনুষ্ঠানিক নুবুওওয়াত মুবারক প্রকাশ করা হয়েছে। এবং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পবিত্র ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীমি বা সোমবার শরীফ পবিত্র মক্কা শরীফ থেকে রওয়ানা দিয়ে তিনি পবিত্র ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীমি বা সোমবার শরীফ সম্মানিত মদীনা শরীফ পৌঁছেন। উক্ত স্থানের নাম মুবারক হলো কুবা। অতঃপর সেখানে পবিত্র মসজিদ নির্মাণ করেন এবং সেখানে অবস্থান করে পবিত্র জুমুয়া শরীফ উনার নামায আদায় করেন। অতঃপর উক্ত সম্মানিত দিন অর্থাৎ জুমুয়া শরীফ হযরত আবু আইউব আনসারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার বাড়ী মুবারকে তাশরীফ গ্রহণ করেন। আর সেদিন ছিল সম্মানিত ১২ই রবীউল আউওয়াল শরীফ।
বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহাসম্মানিত ১২ই রবিউল আউওয়াল শরীফ, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীমি অর্থাৎ সোমবার শরীফ পবিত্র বিছাল শরীফও গ্রহণ করেন।
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- উনার বিলাদত শরীফ উনার সঠিক তারিখ সম্মানিত ১২ই রবীউল আউওয়াল শরীফ সম্পর্কে যারা চু-চেরা করে থাকে তারা দু’ দিক থেকে কুফরী করে থাকে।
প্রথমতঃ তারা পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার বর্ণনা অস্বীকার করার কারণে কুফরী করেছে।
দ্বিতীয়তঃ পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত ‘নাসী’কে স্বীকার করে নেয়ার কারণে তারা কুফরী করেছে। যেমন এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন “নিশ্চয়ই নাসী তথা মাসকে আগে-পিছে করা কুফরীকে বৃদ্ধি করে থাকে। এর দ্বারা কাফিরেরা গুমরাহীতে নিপতিত হয়। তারা (ছফর মাসকে) এক বছর হালাল করে নেয় এবং আরেক বছর হারাম করে নেয়, যাতে মহান আল্লাহ পাক উনার হারামকৃত মাসগুলোর গণনা পূর্ণ করতে পারে।” (পবিত্র সূরা তওবা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৩৭)
অর্র্থাৎ, জাহিলিয়াতের যুগে কাফির, মুশরিকরা ছফর মাসকে অশুভ ও কুলক্ষণে মনে করতো। তাই তারা নিজেদের খেয়াল-খুশি মুতাবিক এ মাসটিকে আগে-পিছে করতো। আরেকটি কারণ হলো, যখন তারা যুদ্ধ-বিগ্রহ করার প্রয়োজন মনে করতো বা যুদ্ধে লিপ্ত থাকতো, তখন তারা ছফর মাসকে আগে পিছে করে হারাম মাসের সংখ্যা নিরূপণ করতো, যা সম্পূর্ণরূপে হারাম ও কুফরী। (তাফসীরে দুররে মানছূর)
এছাড়াও কাফির, মুশরিকরা তাদের নিজেদের স্বার্থে দুনিয়াবী ফায়দা লাভের জন্য বছরকে বারো মাসে গণনা না করে কোন কোন বছর দশ মাস থেকে সতের মাস পর্যন্ত গণনা করতো, যা নাসী হিসেবে মশহুর। এর কারণে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- উনার বিলাদত শরীফ উনার তারিখ ও দিন কস্মিনকালেও মিলানো সম্ভব নয়। কারণ বিলাদত শরীফ থেকে বিদায় হজ্জ পর্যন্ত প্রায় ৬৩ বছর। বরং কাফির, মুশরিকরা বহু পূর্ব থেকেই নাসী করে আসছে। আর এ জন্যই বিদায় হজ্জের সময় খুতবায় সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মাস, তারিখ, দিন, স্থান সমস্ত কিছু নতুন করে ফায়সালা করেছেন, যা বিদায় হজ্জের খুতবায় বর্ণিত রয়েছে।
যেমন এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে “হযরত আবূ বাকরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কুরবানীর দিনে (দশই যিলহজ্জ) আমাদের উদ্দেশ্যে খুতবা দান করলেন এবং বললেন, বছর ঘুরে এসেছে তার গঠন অনুযায়ী, যেদিন মহান আল্লাহ তায়ালা তিনি আসমান ও যমীনকে সৃষ্টি করেছেন। বছর বার মাসে। তার মধ্যে চারটি মাস হারাম বা সম্মানিত। তিনটি পর পর এক সাথে- যিলক্বদ শরীফ, যিলহজ্জ শরীফ ও মুহররম শরীফ এবং চতুর্থ মাস মুদ্বার গোত্রের রজব মাস, যা জুমাদাল উখরা ও শা’বানের মধ্যখানে অবস্থিত। অতঃপর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, এটি কোন মাস? আমরা বললাম, “মহান আল্লাহ পাক তিনি ও উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারাই অধিক অবগত।” অতঃপর তিনি কিছুক্ষণ চুপ রইলেন, যাতে আমরা ভাবলাম যে, সম্ভবতঃ তিনি এর অন্য নাম করবেন। তৎপর বললেন, “এটি কি যিলহজ্জ নয়?” আমরা বললাম, “হ্যাঁ, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!” অতঃপর তিনি বললেন, “এটি কোন শহর?” আমরা বললাম, “মহান আল্লাহ পাক তিনি ও উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারাই অধিক অবগত।” অতঃপর তিনি কিছুক্ষণ চুপ রইলেন যাতে আমরা ভাবলাম যে, সম্ভবতঃ তিনি এর অন্য নাম করবেন। তৎপর বললেন, “এটি কি পবিত্র মক্কা শহর নয়?” আমরা বললাম, “হ্যাঁ, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!” অতঃপর তিনি বললেন, “এটি কোন দিন?” আমরা বললাম, “মহান আল্লাহ পাক তিনি ও উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারাই অধিক অবগত।” অতঃপর তিনি কিছুক্ষণ চুপ রইলেন, যাতে আমরা ভাবলাম যে, সম্ভবতঃ তিনি এর অন্য নাম করবেন। তৎপর বললেন, “এটি কি কুরবানীর দিন নয়?” আমরা বললাম, “হ্যাঁ, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।” তখন তিনি বললেন, “আপনাদের জীবন, সম্পদ ও সম্মান আপনাদের জন্য পবিত্র, যেমন আপনাদের এই মাস, এই শহর ও এই দিন পবিত্র। আপনারা শীঘ্রই মহান আল্লাহ তায়ালা উনার নিকট পৌঁছবেন আর তিনি আপনাদের কার্যকলাপ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করবেন। সাবধান! আমার পর আপনারা পথভ্রষ্টতাকে গ্রহণ করবেন না এবং একে অন্যের জীবননাশ করবেন না। আমি কি আপনাদের নিকট (মহান আল্লাহ তায়ালা উনার বিধান) পৌঁছাইনি? হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা বললেন, হ্যাঁ, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। তখন তিনি বললেন, হে মহান আল্লাহ পাক! আপনি সাক্ষী থাকুন। অতঃপর তিনি বললেন, আপনারা প্রত্যেক উপস্থিত ব্যক্তি যেনো অনুপস্থিত ব্যক্তিকে এটা পৌঁছিয়ে দেন। কেননা, অনেক এমন ব্যক্তি যাকে পরে পৌঁছানো হয়, সে আসল শ্রোতা অপেক্ষা অধিক উপলব্ধিকারী ও হিফাযতকারী হয়। (বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ)
অতএব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- উনার বিলাদত শরীফ উনার সঠিক তারিখ সম্মানিত ১২ রবীউল আউওয়াল শরীফ ব্যতীত অন্য যেসব তারিখ ঐতিহাসিকদের থেকে বর্ণিত রয়েছে, তা কাফিরদের নাসী তথা মাস, দিন, তারিখ পরিবর্তনের প্রেক্ষিতে বর্ণিত রয়েছে। ফলে তা মানা বা গ্রহণ করা বা স্বীকার করা কখনই সম্মানিত শরীয়তসম্মত হবে না।
বিশিষ্ট তাফসীরকারক হযরত ইবনে কাছির রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনিও বলেছেন, সম্মানিত ১২ই রবীউল আউওয়াল শরীফ ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীমি বা সোমবার শরীফ এটাই প্রসিদ্ধ ও মাশহুর ও গ্রহণযোগ্যমত। (বেদায়া-নেহায়া ২য় খন্ড, ২৬০ পৃষ্ঠা)
আরো হাদীছ শরীফ-এ এসেছে, “নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম তথা পবিত্র সোমবার শরীফ সুবহে ছাদিক-উনার সময় বিলাদত শরীফ গ্রহণ করেন।” (খছায়িছুল কুবরা)
অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ উনার সময়টি ছিলো রাত্রিও না দিনও না উভয়ের মাঝামাঝি। কারণ রাত্রি চেয়েছিলো যাতে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক আগমন রাত্রির মধ্যে হোক অনুরূপ দিনও চেয়েছিলো যেনো নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক আগমন দিনের মধ্যে হোক। মহান আল্লাহ পাক তিনি উভয়ের আর্জি পুরণ করলেন এবং রাত্রি ও দিনের মাঝ সময় অর্থাৎ সুবহে ছাদিকের সময় মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ উনার অনুষ্ঠান হয়। উনার মুবারক তাশরীফে সারা আলম আলোকিত হয়।
সুপ্রসিদ্ধ কিতাব ‘নূরে মুহম্মদী’ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মধ্যে উল্লেখ রয়েছে, “স্মরণ রাখতে হবে যে, সমস্ত ইমাম মুজতাহিদ, আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম সীরাতগ্রন্থাকার ও ঐতিহাসিকগণ উনারা এই কথার উপর একমত যে, হাতিওয়ালা বা আবরাহ ও তার দলবল ধ্বংস হওয়ার পঞ্চাশ দিন পর নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যমীনে মুবারক তাশরীফ আনেন। এটাই সর্বাধিক বিশুদ্ধ মত। আর সেই রাত্রি মুবারক ছিলো সম্মানিত ১২ই রবীউল আউওয়াল শরীফ ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম বা সোমবার শরীফ সুবহে সাদিক উনার সময়। আর এই মতটিই সুপ্রসিদ্ধ। উপরোন্ত এই মুবারক তারিখ মক্কাবাসী উনাদের নিকট বিশেষ প্রচলিত। উনারা উক্ত সম্মানিত ১২ই রবীউল আউওয়াল শরীফ উনাকে অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিলাদত শরীফ উনার স্থান মুবারক যিয়ারত করতেন এবং সেই রাত্রি মুবারক-এ মীলাদ শরীফ ও ক্বিয়াম শরীফ পাঠ করা ও যথাযথ আদব রক্ষা করা উনাদের নিকট একটি সর্বোত্তম প্রিয় ও অত্যাধিক সুপ্রচলিত আমল ছিলো।” সুবহানাল্লাহ!
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ হচ্ছে ১২ই রবীউল আউওয়াল ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম বা পবিত্র সোমবার শরীফ ছুবহে সাদিক উনার সময়। সে দিনটি হচ্ছেন সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ, সাইয়্যিদে ঈদে আ’যম, সাইয়্যিদে ঈদে আকবর পবিত্র ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। এই মহাসম্মানিত ১২ই রবীউল আউওয়াল শরীফ খুশি প্রকাশ করা সারা কায়িনাতবাসীর জন্য ফরয ওয়াজিব।
-হযরত মাওলানা সাইয়্যিদ শাবীব আহমদ