নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নাম মুবারক উনার সাথে বেয়াদবী করার কারণে অর্থাৎ নাম মুবারক কেটে কাফিল পাদ্রি গুই সাপ হয়। প্রসিদ্ধ আসমানী কিতাব মুবারক চারটির মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ ও শেষ আসমানী কিতাব পবিত্র কুরআন শরীফ যা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি নাযিল হয়েছে। পবিত্র তাওরাত শরীফ হযরত মূসা কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার প্রতি নাযিল হয়েছে। পবিত্র তাওরাত শরীফ উনার মুছান্নিফ (লেখক) ছিল কাফিল পাদ্রি।
একদিন সে লক্ষ্য করলো, গোটা তাওরাত শরীফ উনার মধ্যে হযরত মূসা কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার নাম মুবারক থেকে আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নাম মুবারক বেশি আলোচিত হয়েছে। তার মনে হিংসা জাগলো এবং সে মনে মনে ভাবলো, আমাদের নবী হলেন হযরত মূসা কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম, যিনি মহান আল্লাহ পাক উনার সাথে কথা বলেন। উনার চেয়ে শ্রেষ্ঠ নবী আর কে হতে পারেন? এ চিন্তা মাথায় আসতেই সে গোটা পবিত্র তাওরাত শরীফ উনার মধ্য থেকে লাল কালি দিয়ে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নাম মুবারক কেটে দিলো। এমন বেয়াদবী করে সে রাতে ঘুমিয়ে রইল। ভোরে ঘুম থেকে উঠে দেখতে পেলো সে আর মানুষ নেই। সে একটি গুঁই সাপে পরিণত হয়েছে। সে ভাবতে শুরু করলো এই অবস্থায় যদি কেউ দেখে ফেলে সত্যি গুঁই সাপ ভেবে হয়তো তাকে মেরে ফেলবে। তাই সে তাড়াতাড়ি পাহাড়ের গুহায় যেয়ে আশ্রয় নিল। ঐ গুহার পাদদেশ দিয়েই হযরত মূসা কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি তুর পহাড়ে মহান আল্লাহ পাক উনার সাথে কথা মুবারক বলতে যেতেন। এদিকে কাফিল পাদ্রিকে না পেয়ে খোঁজাখুঁজি শুরু হয়ে গেছে। এমনি সময় হযরত মূসা কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার সাথে সাক্ষাত করার জন্য তুর পাহাড়ে রওয়ানা হলেন। পথিমধ্যে এক গুহা থেকে শুনতে পেলেন, কে যেন উনাকে ডাকছে। তিনি চতুর্দিকে তাকিয়ে কাউকে দেখতে পেলেন না। অতঃপর কাফিল পাদ্রি উনার সামনে এসে বললো, হে হযরত মূসা কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম! আপনি কি আমাকে চিনতে পেরেছেন? আমি কাফিল পাদ্রি। অতঃপর সে তার পিছনের বেয়াদবীর ঘটনা খুলে বলে মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট ক্ষমা চাইতে হযরত মূসা কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনাকে সুপারিশ করলো। এরপর হযরত মূসা কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি মহান আল্লাহ পাক উনাকে কাফিল পাদ্রির কথা বলে তার পক্ষ থেকে ক্ষমা চাইলেন। মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত মূসা কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার দোয়া কবুল করলেন এবং বললেন, আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কাছে মাফ চাইতে। তখন হযরত মূসা কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, হে মহান আল্লাহ পাক! আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তো অনেক বছর পর দুনিয়াতে আসবেন, তাই আপনি সেই পর্যন্ত কাফিল পাদ্রির হায়াত বাড়িয়ে দিন। তখন মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার দোয়া কবুল করে কাফিল পাদ্রির হায়াত বাড়িয়ে দিলেন। অতঃপর গুঁই সাপটি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সন্ধানে মিশরের সেই তুর পর্বতের পাদদেশ থেকে কয়েক যুগ ধরে হেঁটে হেঁটে এক সময় কা’বা শরীফ উনার পূর্ব পাশে অবস্থিত আবু কোবায়েছ পাহাড়ে আশ্রয় নিয়ে আগমনের অপেক্ষা করছিল। যথাসময় নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি দুনিয়াতে তাশরীফ আনলেন। একদা দুপুরে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বাইতুল্লাহ শরীফ তাওয়াফ করছিলেন। এ সুযোগে কাফিল গুঁই সাপ গুহা থেকে আস্তে নেমে ক্ষমা লাভের আশায় আবু জাহিলের বাড়ির সামনে দিয়ে রওয়ানা দিল। পথিমধ্যে হঠাৎ আবু জাহিলের সামনে এসে গেলো কাফিল গুঁই সাপ। আবু জাহিল এটিকে সত্যি গুঁই সাপ মনে করে লাঠি দিয়ে এক বারি দিয়ে মেরে ফেললো। অতঃপর এটিকে আগুনে পুড়িয়ে ছাই বানিয়ে ঐ ছাই একটি রুমালে নিয়ে পবিত্র কা’বা শরীফ উনার মধ্যে গিয়ে বলল, হে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! বলুন তো এর মধ্যে কি রয়েছে? যদি বলতে পারেন তাহলে আমি মুসলমান হব। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আমি না বলে যদি ওই রুমালে যা আছে সেই বলে দেয় এবং আমার নুবুওওয়াতের সাক্ষ্য দেয় তাতে কি আপনি মুসলমান হবেন? আবু জাহিল অকপটে বললো, হ্যাঁ তাহলে তো মুসলমান হবোই। তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি রুমালে বাঁধা ছাইকে লক্ষ্য করে ইরশাদ মুবারক করলেন, কুম বিইযনিল্লাহি ইয়া কাফিল! সাথে সাথে কাফিল জিন্দা হয়ে রুমাল থেকে লাফ দিয়ে যমীনে পড়ে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কদম মুবারক-এ ক্ষমা চাইতে লাগলো এবং কালীমা শরীফ পাঠ করলো “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম”। আবু জাহিল ভয়ে দৌড়ে দূরে গিয়ে বলতে লাগলো, আপনার মত যাদুকর আমাদের দেশে আর একজনও নেই। নাউযুবিল্লাহ!
উল্লেখ্য, উক্ত কাফিল পাদ্রী নিজ অপরাধ স্বীকার করে ক্ষমা প্রার্থনা করার কারণে নাজাত পেয়েছে। কিন্তু আজকে যারা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শান-মান সম্পর্কে চু-চেরা করে বলে যে, তিনি নূরের সৃষ্টি নন, তিনি হাযির-নাযির নন, তিনি হায়াতুন নবী নন, তিনি ইলমে গইবের অধিকারী নন, উনার পিতা-মাতা ঈমানদার ছিলেন না, উনার পবিত্র বিলাদত শরীফ উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করা যাবে না, উনার সম্মানার্থে ক্বিয়াম করা যাবেনা, মীলাদ শরীফ পড়া যাবেনা, উনাকে ওসীলা দিয়ে দুআ করা যাবেনা ইত্যাদি তাদের অবস্থা ঐরূপ হবে যেরূপ হয়েছে আবু জাহিল ও আবু লাহাবের। আবু লাহাবের শরীর যেমনিভাবে পচন ধরে দুর্গন্ধ সৃষ্টি হয়েছিল তদ্রূপ তার উত্তরসূরী উলামায়ে ‘সূ’দের মরণকালে আজ তাদের চেহারা বিকৃত হচ্ছে, পচন ধরে বিকট দুর্গন্ধ সৃষ্টি হচ্ছে অর্থাৎ তারা ঈমানহারা হয়ে মৃত্যুবরণ করছে এবং পরকালের সীমাহীন আযাব-গযবে গ্রেফতার হচ্ছে। এই ভয়াবহ পরিণতি থেকে সকলেরই ইবরত-নছীহত হাছিল করা একান্ত আবশ্যক।
-মাওলানা মুহম্মদ রিদ্বওয়ানুল্লাহ পাটওয়ারী