انك لـمن الـمرسلين. على صراط مستقيم.
অর্থ : (হে হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিশ্চয়ই আপনার পূর্বপূরুষগণ উনারা রসূলগণ উনাদের অন্তর্ভূক্ত। (আর যারা রসূলগণ উনাদের অন্তর্ভূক্ত নন, উনারা) সিরাতুল মুস্তাকীম উনার উপর পুরোপুরি দায়িম এবং অবিচল। (পবিত্র সূরা ইয়াসীন শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৩-৪)
অর্থাৎ নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পূর্ব পূরুষ উনারা সকলেই মহান আল্লাহ পাক উনার খাছ মনোনীত ব্যক্তিত্ব। আর সাইয়্যিদাতুনা উম্মু রসূলিনা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক শান তো বলার অপেক্ষাই রাখে না। তিনি তো মহান আল্লাহ পাক উনার কর্তৃক আখাছছুল খাছভাবে মনোনীত। সঙ্গত কারণেই উনার পবিত্র সীরাত মুবারক সম্পর্কে জানা সকলের জন্য অতীব জরুরী। নিম্নে সংক্ষিপ্তাকারে উনার সাওয়ানেহ উমরী মুবারক আলোচনা করা হলো।
পবিত্র নসব মুবারক:
সর্বাধিক প্রসিদ্ধ ও প্রণিধান প্রাপ্ত মতে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত পিতাজান উনার নছবনামা মুবারক যাবীহুল্লাহিল মুকাররম, সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুল্লাহ আলাইহিস্ সালাম ইবনে সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস্ সালাম ইবনে সাইয়্যিদুনা হযরত হাশিম আলাইহিস্ সালাম ইবনে সাইয়্যিদুনা হযরত আবদে মানাফ আলাইহিস্ সালাম ইবনে সাইয়্যিদুনা হযরত কুসাই আলাইহিস্ সালাম ইবনে সাইয়্যিদুনা হযরত কিলাব আলাইহিস্ সালাম।
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিতা আম্মাজান উনার নছবনামা মুবারক- সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিনতে হযরত ওয়াহাব আলাইহিস সালাম ইবনে আবদে মানাফ আলাইহিস সালাম ইবনে যুহরা আলাইহিস সালাম ইবনে হযরত কিলাব আলাইহিস সালাম। (দালায়িলুন নবুওওয়াত লিল বাইহাক্বী)
অর্থাৎ আবূ রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং উম্মু রসূলিনা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের নছবনামা মুবারক হযরত কিলাব আলাইহিস সালাম উনাতে গিয়ে একত্রিত হয়েছে।
সম্মানিত ওয়ালিদাইনিশ শরীফাইন আলাইহিমাস সালাম:
সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুহতারাম পিতা হযরত ওয়াহাব আলাইহিস সালাম উনার মুবারক শানে পবিত্র হাদীছ শরীফে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
هو يومئذ سيد بنى زهرة نسبا وشرفا
অর্থ : সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিনা আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত পিতা হযরত ওয়াহাব আলাইহিস সালাম তিনি উনার গোত্র বনী যুহরার সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যক্তিত্ব ছিলেন। (মাওয়াহিবুর লাদুন্নিয়া)
সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিনা আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিতা মাতা ছিলেন হযরত বাররাহ বনিতে আব্দিল উযযা আলাইহাস সালাম।
সম্মানিত পিতা উনার মানত:
কিতাবে উল্লেখ করা হয়, সাইয়্যিদুনা হযরত ওয়াহাব আলাইহিস সালাম উনার কোনো সন্তান ছিলেন না। এহেন পরিস্থিতিতে তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট আরয করলেন, “আয় বারে ইলাহী! আমাদেরকে একজন সন্তান হাদিয়া করুন। সম্মানিত সন্তান প্রাপ্তির শুকরিয়াস্বরূপ আমি পবিত্র বাইতুল্লাহ শরীফ উনার তাওয়াফ মুবারক করবো।” উনার পবিত্র দোয়া মহান আল্লাহ পাক তৎক্ষণাত কবুল করে নেন। হযরত বাররাহ আলাইহাস সালাম উনার পবিত্র রেহেম শরীফে একজন সম্মানিত সন্তান বিলাদত শরীফ গ্রহণ করেন। তিনিই হচ্ছেন সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিনা আলাইহাস সালাম।
একখানা সুসংবাদ:
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عن حضرة ابن عباس رضى الله تعالى عنه عن ابيه ان حضرة عبد الـمطلب عليه السلام لما سافر الى اليمن فى رحلة الشتاء نزل على حبر من اليهود يقرا الزبور فقال يا عبد الـمطلب بن هاشم عليه السلام ائذن لى انظر الى بعضك قال انظر ما لم تكن عورة قال ففتح احدى منخريه فنظر فيه ثم نظر فى الاخر فقال اشهد ان فى احدى يديك ملكا وفى الاخرى نبوة وانا نجد ذلك فى بنى زهرة قال الك زوجة قلت اما اليوم فلا فقال فاذا رجعت فتزوج منهم
অর্থ: হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি উনার পিতা হতে বর্ণনা করেন, নিশ্চয়ই হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম তিনি যখন শীতের মৌসুমে ইয়ামান ছফর করেন, তখন তাওরাত শরীফে অভিজ্ঞ ইহুদী এক পাদ্রীর নিকট অবস্থান করেন। পাদ্রী উনাকে বলেন, হে হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম! আপনি যদি অনুমতি মুবারক প্রদান করেন, তাহলে আমি আপনার জিসম মুবারকে কিছু আলামত তালাশ করবো। তিনি বললেন, সতর ব্যতিত সারা জিসম মুবারকই আপনি দেখতে পারেন। তখন সেই পাদ্রী উনার দু’হাত মুবারক পরীক্ষা করে বললেন, আমি আপনার একহাত মুবারকে মুলকিয়াত তথা শাসন ক্ষমতা এবং অপর হাত মুবারকে নবুওয়াত দেখতে পাচ্ছি। আর সেটা পাওয়া যাবে বনী যুহরা গোত্রে। পাদ্রী উনাকে জিজ্ঞাসা করলেন, আপনার সাথে কি আপনার আহলিয়া রয়েছেন? তিনি বললেন, আমার সাথে আমার আহলিয়া নেই। তখন পাদ্রী বললেন, আপনি আপনার ছফর হতে ফিরে গিয়ে সেই যুহরা গোত্রে শাদী মুবারক করবেন। (মুসতাদরেকে হাকীম)
কিতাবে উল্লেখ করা হয়, সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম তিনি সেই সফর হতে ফিরে এসে সাইয়্যিদুনা আবূ রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুহতারামা আম্মা হযরত ফাতিমা বিনতে আমর আলাইহাস সালাম উনাকে শাদী মুবারক করেন। এই ঘটনার অল্প কয়েকদিনের মধ্যে সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম তিনিও কুরাঈশদের একক সাইয়্যিদ হিসেবে ঘোষিত ও স্বীকৃত হন। যা দ্বারা পাদ্রীর বর্ণিত মুলকিয়াত প্রকাশ পায়। আর পরবর্তীতে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক জাহিরের মাধ্যমে নবুওয়াত উনার বিষয়টিও সুস্পষ্ট হয়। সামগ্রিকভাবে এ ঘটনাবলী দ্বারা যুহরা গোত্র পূর্ব বর্ণিত হওয়ার বিষয়টিই প্রমাণিত হয়।
পবিত্র বিলাদত শরীফী শান মুবারক জাহির:
অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় হলো, বাজারে প্রচলিত কিতাবাদিসমূহে সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিনা আলাইহাস সালাম উনার পবিত্র বিলাদত শরীফ সম্পর্কে কোনো আলোচনা-পর্যালোচনা পাওয়া যায় না। তবে একটি সূত্র ধরে অনেকগুলো বিষয় বের করা যায়। সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিনা আলাইহাস সালাম উনার দুনিয়ার যমীনে অবস্থান মুবারকের মোট সময় দ্বারা উনার বিভিন্ন বিষয়ের সন বের করা যায়। আর উনার দুনিয়ার যমীনের অবস্থান মুবারকের মোট সময় সম্পর্কে হযরত জালালুদ্দীন সুয়ূতী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন-
انها ماتت فى حدود العشرين.
অর্থ : সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিনা আলাইহাস সালাম তিনি বিশের দশকে বিছালী শান মুবারক জাহির করেন।
আর বিষয়টাকে আরো সুস্পষ্ট করেছেন মুজাদ্দিদে আ’যম সাইয়্যিদুনা মামদূহ হযরত মুরশিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম। তিনি বলেন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিনা আলাইহাস সালাম তিনি দুনিয়ার যমীনে ২৪ বা ২৫ বছর অবস্থান মুবারক করেন।
তবে এ সময়টাকে আরো পরিষ্কার করা যায় এভাবে যে, সৌর বৎসর অনুযায়ী ২৪ বছর আর চন্দ্র বৎসর অনুযায়ী প্রায় ২৫ বছর।
এ হিসাব অনুযায়ী, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিনা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ঈসায়ী ৫৫২ সন মুতাবিক শামসী পূর্ব ৮১ সনে পবিত্র মদীনা শরীফ উনার নাযযার গোত্রের বনী যুহরায় পবিত্র বিলাদত শরীফী শান মুবারক জাহির করেন।
পবিত্র নাম মুবারক:
একথা অত্যধিক প্রসিদ্ধ যে, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিনা ছল্লাল্লাহু আলাইহ ওয়া সাল্লাম উনার নাম মুবারক হলো হযরত আমিনা আলাইহাস সালাম। কিন্তু এ পূত-পবিত্র নাম মুবারক কোথা হতে আসলো। উনার পূর্বে আরবে এ নাম মুবারকে অন্য কাউকে নামকরণ করা হয়নি।
আভিধানিক দৃষ্টিকোণ থেকে امنة শব্দের অর্থ হলো ঈমান আনয়নকারিণী বা নিরাপদ। অর্থাৎ সাইয়্যিদাতুনা উম্মু রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে মহান আল্লাহ পাক সার্বিকভাবে নিরাপদ করে সমস্ত খ¦ইর বরকত হাদিয়া মুবারক করেই দুনিয়ার যমীনে প্রেরণ করেন।
কিতাবে উল্লেখ করা হয়, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিনা আলাইহাস সালাম তিনি উনার মুহতারামা আম্মাজান উনার পবিত্র রেহেম শরীফে অবস্থান মুবারক কালে উনার মুহতারাম পিতা হযরত ওয়াহাব আলাইহিস সালাম তিনি একখানা বিশেষ স্বপ্ন মুবারক দেখেন। মুবারক স্বপ্নে গায়েব হতে উনাকে বলা হচ্ছে, হে হযরত ওয়াহাব আলাইহিস সালাম! কায়িনাত মাঝে আপনি কতই না সৌভাগ্যবান। যিনি আখেরী রসূল, সাইয়্যিদুল আম্বিয়া ওয়াল মুরসালীন, রহমতুল্লিল আলামীন ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুহতারামা আম্মাজান আলাইহাস সালাম হিসেবে আপনার মুহতারামা দুহিতা উনাকে মনোনীত করা হয়েছে। আপনি উনার নাম মুবারক রাখবেন হযরত আমিনা আলাইহাস সালাম। মুবারক স্বপ্ন অনুযায়ী উনার এ নাম মুবারক ঘোষণা করা হলো।
দুনিয়ার যমীনে মুবারক অবস্থান:
এ কথা বলার অপেক্ষা রাখেনা যে, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিনা আলাইহাস সালাম উনার প্রতিটি বিষয় সরাসরি মহান আল্লাহ পাক উনার মুবারক তত্ত্বাবধানে সুসম্পন্ন হয়। বিধায় উনার শিশু বয়স মুবারক হতে শুরু করে অনন্তকাল ব্যাপী মহান কুদরতেই উনার অবস্থান মুবারক।
কিতাবে উল্লেখ করা হয়, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিনা আলাইহাস সালাম তিনি একদা উনার মুহতারাম আব্বাজান উনাকে বলেন, আমি যখন নিরিবিলি বা নির্জনে অবস্থান মুবারক করি,তখন গায়েব হতে আমাকে বলা হয়-
السلام عليكم يا ام رسول الله صلى الله عليه و سلم
السلام عليكم يا ام سيد الـمرسلين صلى الله عليه وسلم.
মুবারক বিবাহের প্রস্তাবনা:
সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিনা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক শানে ‘মাওয়াহিবুল লাদুন্নিয়া’ কিতাবে উল্লেখ আছে-
وهى يومئذ افضل امراة فى قريش نسبا وموضعا.
অর্থ : সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ছিলেন কুরাইশ তথা কায়িনাতের সমস্ত মহিলা হতে মুবারক বংশ ও সামগ্রিকভাবে সর্বশ্রেষ্ঠ।
সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার হুলিয়া মুবারক, হুসনিয়াত মুবারক, ইলম মুবারক, খুলক্ব মুবারকসহ সামগ্রিকভাবে সারা কায়িনাতে তিনি ছিলেন অনন্যা। তাছাড়া পূর্ববর্তি আসমানী কিতাবসমূহেও রয়েছে উনার ছিফত মুবারকের বর্ণনা। সঙ্গতকারণেই আরবের বিত্তশালী অনেক পরিবার হতেই উনার ব্যাপারে প্রস্তাবনা এসেছে। এমনকি তৎকালীন তথাকথিত পরাশক্তি রোম ও পারস্য সম্রাটদের পক্ষ হতেও অনেকবার প্রস্তাবনা এসেছে। যা বলার অপেক্ষা রাখেনা।
খোদায়ী মুবারক ফায়ছালা:
সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিনা আলাইহাস সালাম উনার ব্যাপারে বিভিন্ন জনের পক্ষ হতে বারবার প্রস্তাবনা আসায়, উনার মুহতারাম পিতা হযরত ওয়াহাব আলাইহিস সালাম তিনি কিছুটা চিন্তিত হয়ে পড়েন। আর এহেন পরিস্থিতিতে আসে খোদায়ী মুবারক ফায়সালা।
কিতাবে উল্লেখ করা হয়, হযরত ওয়াহাব আলাইহিস সালাম তিনি একদা স্বপ্ন মুবারক দেখেন। কেউ একজন উনাকে লক্ষ্য করে বলেন, আপনি আপনার লখতে জিগার উনাকে নিয়ে চিন্তিত হবেন না। স্বয়ং মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার সম্মানিত তত্ত্বাবধায়ক। আপনি এমন সৎ ও উত্তম পাত্রে উনাকে পাত্রস্থ করুন, যিনি হচ্ছেন যবীহুল্লাহিল মুকাররাম আলাইহিস সালাম।
এই মুবারক স্বপ্ন দ্বারা অন্যান্য সমস্ত প্রস্তাবনাই বাতিল করা হয়।
পবিত্র শাদী মুবারক:
মহান আল্লাহ পাক তিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পিতা আলাইহিস সালাম উনাকে যেরূপ পূর্বেই মনোনীত করে রেখেছেন, তদ্রূ সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিনা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকেও মনোনীত করেই দুনিয়াতে প্রেরণ করেছেন। সঙ্গতকারণেই উনাদের শাদী মুবারক ছিলো মহান বারী তায়ালা কর্তৃক পূর্ব নির্ধারিত। তাই তো অন্যান্য মহিলাদের প্রস্তাবনা বাতিল করে উনাদের শাদী মুবারক সম্পন্ন হয়। বিশ্ব বিখ্যাত ‘আন নিয়ামাতুল কুবরা আলাল আ’লাম’ কিতাবে উল্লেখ আছে-
قال حسن بن احـمد البكرى رحمة الله عليه لـما اراد الجليل جل جلاله ان ينقل نور سيدنا محمد صلى الله عليه وسلم حرك فى قلب عبد الله بن عبد الـمطلب عليه السلام ان يتزوج فقال عبد الله عليه السلام لامه عليها السلام اريد منك ان تـخطبى لى امراة ذات حسن وجمال وقد اعتدال وبـهاء وكمال وحسب ونسب عال، قالت حبا وكرامة يا ولدى ثـم انـها دارت احياء قريش وبنات العرب، فلم يعجبها الا امنة بنت وهب عليها السلام، فقال يا اماه انظريها مرة ثانية، فمضب ونظرتـها فاذا هى تضىء كانـها كوكب درى،
অর্থ; হযরত হাসান বিন আহমদ বাকরী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, যখন মহান আল্লাহ জাল্লা জালালুহু তিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নূর মুবারককে উনার মহাসম্মানিতা আম্মাজান আলাইহাস সালাম উনার খিদমতে স্থানান্তরিত করার ইচ্ছা মুবারক করলেন, তখন সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার মুবারক অন্তরে পবিত্র নিকাহ করার আগ্রহ সৃষ্টি করে দিলেন। সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুল্লাহ আলাইহিস্ সালাম তিনি নিজ মাতা উনাকে বললেন, আমি চাচ্ছি আপনি আমার সাথে একজন আহলিয়াকে নিকাহের মাধ্যমে সম্পর্ক করে দেন; যিনি হবেন উত্তম চরিত্রের অধিকারিনী, সুদশর্না, ন্যায় নিষ্ঠাবান, জ্যোতির্ময়, পূর্ণতাপ্রাপ্তা ও সুউচ্চ বংশ ও গোত্রের ব্যক্তিত্বা। উনার মাতা তিনি উত্তরে বললেন, হে আমার স্নেহের আওলাদ! আপনার জন্যই সমস্ত মুহব্বত ও সম্মান-ইজ্জত। অতপর তিনি (উনার মাতা) কুরাইশ বংশের ও আরবের সকল কুমারী মেয়েগণের ব্যাপারে প্রতিটি বাড়ি থেকে সংবাদ নিলেন। উনার কাছে সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন হযরত আমিনা বিনতে ওয়াহাব আলাইহাস সালাম তিনি ব্যতীত অন্য কাউকে উপযুক্ত মনে হলো না। বলা হলো, হে সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার মাতা! আপনি দ্বিতীয়বারের মতো আবারো উনাকে দেখুন। অতএব, তিনি আবারো দেখলেন এমতাবস্থায় যে, সাইয়্যিদাতুনা হযরত আমিনা আলাইহাস সালাম তিনি নূরানী আলোকময়, যেন মুক্তা সাদৃশ্য তারকা। সুবহানাল্লাহ!
মোহর মুবারক:
বিশ্ব বিখ্যাত ‘আন নিয়ামাতুল কুবরা আলাল আ’লাম’ কিতাবে আরো উল্লেখ আছে,
فانقدوها اوقية من فضة واوقية من ذهب، ومائة من الابل ومثلها من البقر والغنم وذبح واصلح طعام كثير،
অর্থ: এই মুবারক বিবাহে উনাকে নগদ এক আউকিয়া স্বর্ণ ও এক আউকিয়া রৌপ্য মুবারক মোহর হিসেবে প্রদান করা হয়েছিলো। সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার নিকাহ মুবারক উনার ওলীমায় একশতটি উট, একশত গরু, একশত বকরী (খাশি, মেষ, ভেড়া, দুম্বা, ছাগল) জবাই করা হয়েছিলো এবং প্রচুর খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছিলো।
নূরে হাবীবী মুবারক গ্রহণ:
বিশ্ব বিখ্যাত ‘আন নিয়ামাতুল কুবরা আলাল আ’লাম’ কিতাবে আরো উল্লেখ আছে,
لاجل عرس عبد الله بن عبد الـمطلب عليه السلام و زفت له ثـم اختلا بـها عبد الله عليه السلام فى خلوة الـطاعة عشبة، وكانت ليلة الـجمعة روى انه لـما اراد الله ان يـخلق مـحمدا صلى الله عليه وسلم فى بطن امه امنة عليها السلام ليلة الـجمعة من شهر رجب الاصم،
অর্থ: সাইয়্যিদাতুনা হযরত আমিনা আলাইহাস সালাম উনাকে সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার ফুল সজ্জিত ঘর মুবারকে পাঠানো হলো। অতঃপর সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি উনার আহলিয়া উনার সঙ্গে বিশেষ সাক্ষাৎ মুবারক লাভ করলেন। সেই মুবারক রাতখানা ছিলো লাইলাতুল জুমুয়াতি বা জুমুয়া উনার রাত। বর্ণিত রয়েছে যে, “যখন মহান আল্লাহ পাক তিনি ইচ্ছা মুবারক করলেন যে, নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার মহাসম্মানিতা আম্মাজান হযরত আমিনা আলাইহাস সালাম উনার বরকতময় খিদমত মুবারকে তাশরীফ মুবারক নেন, সে সময়টি ছিলো রজবুল আছাম মাস উনার ১লা লাইলাতুল জুমুয়াতি বা জুমুয়াবার রাত (লক্ষণীয় যে, সেই বছর রজব মাসের ১লা জুমুয়াবার ছিলো ১লা তারিখেই)। সুবহানাল্লাহ!
অর্থাৎ, হযরত ওয়ালিদাইনিশ শরীফাইনে রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের পবিত্র শাদী মুবারক পবিত্র জুমাদাল উখরা শরীফ উনার শেষ তারিখে মতান্তরে পবিত্র রজবুল হারাম শরীফ উনার পহেলা তারিখে সংঘটিত হয়। উনাদের পবিত্র উরুস মুবারক পবিত্র রজবুল আছম শরীফ উনার পহেলা তারিখ জুমুয়া রাত সংঘটিত হয়। এই সম্মানিত রাত্রি মুবারক পবিত্র লাইলাতুর রগায়িব শরীফ নামে অত্যধিক মশহুর। হাম্বলী মাজহাবের সম্মানিত ইমাম হযরত ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি এ পবিত্র রাতকে পবিত্র শবে ক্বদর ও পবিত্র শবে বরাত উনাদের উপর প্রাধাণ্য দিয়েছেন। তাছাড়া পবিত্র হাদীছ শরীফে ঘোষিত দোয়া কবুলের বিশেষ পাঁচ রাত্রি উনাদের মধ্যে রজব মাসের প্রথম রাত অন্যতম। বিশিষ্ট বুযুর্গ হযরত কারামত আলী জৌনপুরী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, পবিত্র ১২ই রবীউল আউওয়াল শরীফে যেরুপ অসংখ্য মু’জিযা শরীফ জাহির হয়েছিল, ঠিক তদ্রুপ পবিত্র লাইলাতুর রগায়িব শরীফেও অসংখ্য কুদরত ও মুজিযা শরীফ জাহির হয়েছিল।
মুবারক খিদমতে হযরত আম্বিয়া আলাইহিমুস সালাম
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার আম্মাজান উনার মুবারক খিদমতে প্রায় নয় মাস অবস্থান মুবারক করেন। এ সময়ে মহান আল্লাহ পাক সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক খিদমতে হযরত আম্বিয়া আলাইহাস সালাম উনাদেরকে প্রতি মাসে প্রেরণ করেছেন।
হাদীছ শরীফে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, প্রথম মাস পবিত্র রজবুল আসাম শরীফে মানব জাতির আদি পিতা হযরত আদম আলাইহিস সালাম, দ্বিতীয় মাস শা’বান শরীফে হযরত শীছ আলাইহিস সালাম, তৃতীয় মাস পবিত্র রমাদ্বানুল মুবারকে হযরত ইদ্রীস আলাইহিস সালাম, চতুর্থ মাস শাওয়াল শরীফে হযরত নূহ আলাইহিস সালাম, পঞ্চম মাস পবিত্র যিলক্বদ শরীফে হযরত হুদ আলাইহিস সালাম, ষষ্ঠ মাস পবিত্র যিলহজ্জ শরীফে হযরত ইবরাহীম খলীল আলাইহিস সালাম, সপ্তম মাস পবিত্র মুহররম শরীফে হযরত ইসমাইল যবীহুল্লাহ্ আলাইহিস সালাম, অষ্টম মাস ছফর শরীফে হযরত মূসা ইবনে ইমরান আলাইহিমাস সালাম, নবম মাস মহাসম্মানিত মহাপবিত্র রবীউল আউওয়াল শরীফে হযরত ঈসা ইবনে মারইয়াম আলাইহিমাস সালাম উনারা সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক খিদমতে বিভিন্ন সুসংবাদ নিয়ে তাশরীফ মুবারক রাখেন। সুবহানাল্লাহ!
নূরে হাবীবী উনার মুবারক প্রকাশ
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যখন উনার মুহতারামা আম্মাজান উনার মুবারক খিদমত হতে জাহির মুবারক হন অর্থাৎ তিনি যখন পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন, সেই মুবারক সময় বা প্রেক্ষাপটে অসংখ্য অগণিত কুদরত মুবারক ও মু’জিযা শরীফ প্রকাশিত। সীরাত গ্রন্থ সমূহে এ বিষয়ে ব্যাপক আলোচনা রয়েছে। যা একত্রিত করলে অনেকগুলো বৃহত কিতাব হয়ে যাবে। তবে হযরত আল্লামা জাফর ইবনে হুসাইন বারযানজী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার রচিত ‘আল ইক্বদুল জাওহার ফি মাওলিদিন নাবিয়্যিল আযহার’ নামক কিতাব উনার বর্ণনা অনুযায়ী পবিত্র মীলাদ শরীফ উনার পবিত্র তাওয়াল্লুদ শরীফে সংক্ষিপ্তাকারে আমরা পাঠ করি-
لَـمَّا تَمَّ مِنْ حَمْلِهٖ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَى الرَّاجِحِ تِسْعَةُ اَشْهُرٍ قَمَرِيَّةٍ، وَاٰنَ لِلزَّمَانِ اَنْ يَّنْجَلِىَ عَنْهُ صَدَاهُ، حَضَرَتْ سَيِّدَةَ نِسَاءِ الْعَالَمِيْنَ اُمَّهٗ صَلى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَيْلَةَ مَوْلِدِهٖ حَضَرَتْ حَوَّاءُ عَلَيْهَا السَّلَامُ حَضَرَتْ سَارَةُ عَلَيْهَا السَّلَامُ حَضَرَتْ اٰسِيَةُ عَلَيْهَا السَّلَامُ حَضَرَتْ مَرْيَمُ عَلَيْهَا السَّلَامُ فِىْ نِسْوَةٍ مِّنَ الْحَظِيْرَةِ الْقُدْسِيَّةِ،
অর্থ: তারজিহ্ তথা প্রাধান্যপ্রাপ্ত মতে, যখন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুহতারামা আম্মা আলাইহাস্ সালাম উনার খিদমত মুবারকে অবস্থানকাল মুবারক চন্দ্র মাস সমূহের প্রায় নয় মাস পূর্ণ হলো, অর্থাৎ নয় মাস চলছিল তখনই উনার আনন্দের ফোয়ারা নিয়ে দুনিয়াতে তাশরীফ নেয়ার সময় নিকটবর্তী হলো আর উনার বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশের রাত্রী মুবারকে উনার মুহতারামা আম্মা আলাইহাস্ সালাম উনার মুবারক খিদমতে পবিত্র জান্নাত হতে উম্মুল বাশার হযরত হাওয়া আলাইহাস্ সালাম, উম্মু যাবীহুল্লাহিল ঊলা হযরত সারাহ আলাইহাস্ সালাম, উম্মু যাবীহুল্লাহিছ ছানিয়া হযরত হাযিরা আলাইহাস সালাম, রব্বাতু কালীমিল্লাহ হযরত আছিয়া আলাইহাস্ সালাম ও উম্মু রুহিল্লাহ হযরত মারইয়াম আলাইহাস্ সালাম উনারা জান্নাতী হুরগণসহ (নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে ইস্তিকবাল জানাতে) আগমন করেন। (এবং খিদমত মুবারকের আঞ্জাম দেন।) সুবহানাল্লাহ!
উল্লেখ্য যে, উম্মু রসূলিনা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক খিদমতে পূর্ববর্তী আম্বিয়া আলাইহিমুস সালাম উনাদের সম্মানিতা মাতা, আহলিয়া, অভিভাবক উনাদের প্রেরণ করে মহান আল্লাহ পাক হযরত উম্মু রসূলিনা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বেমেছাল বুযুর্গী মুবারকই প্রকাশ করেছেন। একথা দিবালোকের ন্যায় সুস্পষ্ট যে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যেরুপ সাইয়্যিদুল মুরসালীন, তদ্রুপ উনার মহা সম্মানিতা আম্মাজান তিনি সাইয়্যিদাতুল উম্মাহাত। সুবহানাল্লাহ!
মুবারক কোলে সাইয়্যিদুল আম্বিয়া
উম্মু রসূলিনা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বেমেছাল খিদমত মুবারকের আঞ্জাম দিয়েছেন। যা বলার অপেক্ষাই রাখেনা। তবে চিন্তা ও ফিকিরের বিষয় হলো, ‘হিলইয়াতুল আউলিয়া’ নামক কিতাবে বর্ণিত বণী ইসরাইলের সেই ব্যক্তির ঘটনা। মাত্র একবার নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওযা সাল্লাম উনার নাম মুবারকে চুম্বন করার কারণে দুইশত বছর যিন্দেগীর সমস্ত গুণাহখাতা ক্ষমা করে হযরত কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনাকে সেই ব্যক্তির কাফন-দাফনের ব্যবস্থা করতে স্বয়ং মহান আল্লাহ পাক নির্দেশ মুবারক করেছেন। তাহলে, উম্মু রসূলিনা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আযীমী শান মুবারক কতটুকু বিস্তৃত, তা ফিকিরের বিষয়। কারণ, একজন মা উনার সন্তানকে কতটুক মুহব্বত করেন, কতবার বুছা মুবারক দেন, কতবার বুকে জড়িয়ে ধরেন, কতক্ষণ খিদমত করেন, তা বলাই বাহুল্য।
পবিত্র মদীনা শরীফে সফর
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عن ابن عباس رضى الله تعالى عنه قال لما بلغ رسول الله صلى الله عليه وسلم ست سنين خرجت به امه الى اخواله بين عدى بن النجار بالمد ينة تزورهم ومعه ام ايمن رضى الله تعالى عنها فنزلت به دار التابعة فاقامت به عندهم شهرا
অর্থ: হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দুনিয়াবী হায়াত মুবারক যখন ছয় বছর, তখন উনার মুহতারামা আম্মাজান উনাকে নিয়ে পবিত্র মদীনা শরীফ উনার বনী নাযযার গোত্রে উনার মামা উনাদের সাথে মুবারক সাক্ষাত করার জন্য যান। তখন উনাদের সাথে হযরত উম্মু আইমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা ছিলেন। উনারা সেখানে এক মাস অবস্থান মুবারক করেন। (ইবনু সা’দ)
অর্থাৎ উম্মু রসূলিনা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে নিয়ে পবিত্র মদীনা শরীফে এক মাস অবস্থান মুবারক করেন। সেখানেও অনেক মু’জিযা শরীফ প্রকাশিত হয়। যা বিভিন্ন হাদীছ শরীফে বর্ণিত রয়েছে।
পবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশ
উম্মু রসূলিনা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিছালী শান মুবারক গ্রহণ করার স্থান এবং উনার রওজা শরীফ নিয়ে ইকতিলাফ রয়েছে। তবে মশহুর মতে-
رجعت به امه الى مكة فلما كانت بالابواء توفيت.
অর্থ: (পবিত্র মদীনা শরীফে এক মাস অবস্থান মুবারক করার পর) উম্মু রসূলিনা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে নিয়ে পবিত্র মক্কা শরীফ অভিমুখে রওয়ানা হলেন। (পবিত্র মদীনা শরীফ উনার পার্শ্ববর্তী এলাকা) আবওয়া নামক স্থানে (পবিত্র মারিদ্বী শান মুবারক গ্রহণ করত) উম্মু রসূলিনা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র বিছালী শান মুবারক গ্রহণ করেন। (মাওয়াহিবুল লাদুন্নিয়া)
প্রণিধানপ্রাপ্ত ও মশহুর মতে, উম্মু রসূলিনা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র রওজা শরীফ আবওয়া নামক স্থানেই স্থাপিত রয়েছে। তবে কতিপয় ঐতিহাসিক ‘হুযুন’ নামক স্থানের কথা বর্ণনা করেছেন।
উম্মু রসূলিনা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশের তারিখ নিয়ে কোন আলোচনা প্রচলিত কিতাবাদিতে পাওয়া যায়না। তবে মুজাদ্দিদে আ’যম ইমার রাজারবাগ শরীফ উনার মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি সরাসরি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কাছ থেকে জেনে উম্মাহকে জানিয়েছেন যে, উম্মু রসূলিনা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সাইয়্যিদুশ শুহুর পবিত্র রবীউল আউওয়াল শরীফ উনার ১০ তারিখ পবিত্র বিছালী শান মুবারক গ্রহণ করেন। এ মুবারক দিনকে কেন্দ্র করে রাজারবাগ শরীফে মাহফিল হতে শুরু করে বহুমুখী কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়।
উল্লেখ্য যে, উচু শ্রেণীর আউলিয়ায়ে কিরামগণ উনারা অনেক বিষয় সরাসরি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কাছ জিজ্ঞাসা করে বর্ণনা করেন। যা শরীয়তে হুজ্জত হিসেবে স্বীকৃত হয়। যেমন, হুজ্জাতুল ইসলাম হযরত ইমাম গাজ্জালী রহমতুল্লাহি আলাইহি, গাউছুল আ’যম হযরত বড় পীর ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনারা উনাদের কিতাব সমূহে অনেক হাদীছ শরীফ কোন সনদ ব্যতিতই বর্ণনা করেন। যা অন্য কোন সনদেও পাওয়া যায়না। ফলশ্রুতিতে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কাছ থেকে সরাসরি বর্ণনা করার বিষয়টিই সুস্পষ্ট হয়।
কাজেই, উম্মু রসূলিনা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিছালী শান মুবারক গ্রহণের তারিখ নিয়ে সন্দেহ সংশয়ের কোন অবকাশ নেই।
মূলত, উম্মু রসূলিনা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক শানে সর্বোচ্চ হুসনে যন পোষণ করা ঈমানদার হওয়ার পূর্বশর্ত। কিছু লোক উনার জান্নাতী হওয়ার ব্যাপারে প্রশ্ন তোলে। নাউযুবিল্লাহ! আসলে তাদের এ বিরূপ প্রশ্ন তাদের নেফাকীরই প্রকাশ ঘটায়। আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত উনার আক্বীদা হলো, উম্মু রসূলিনা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কেবল জান্নাতীই নন। বরং উনার মুবারক উছিলায় জান্নাত সম্মানিত হয়েছে। কারণ, জান্নাতসহ সারা কায়িনাতের সৃষ্টি নূরে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে। আর সেই নূরে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অজস্র শান মুবারক উম্মু রসূলিনা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মাধ্যমে জাহির হয়েছে। সুবহানাল্লাহ!
কাজেই, বর্তমান সময়ে মুজাদ্দিদে আ’যম রাজারবাগ শরীফ উনার মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার মুবারক ছোহবত ইখতিয়ারের কোন বিকল্প নেই। তিনি একক ব্যক্তিত্ব, যিনি হযরত ওয়ালিদাইনিশ শরীফাইন আলাইহিমাস সালাম উনাদের মুবারক শানে সর্বোচ্চ হুসনে যন উম্মাহকে শিক্ষা দিয়ে থাকেন। সুবহানাল্লাহ!
মহান আল্লাহ পাক তিনি মুসলিম মিল্লাতকে উম্মু রসূলিনা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক শান উপলব্ধি করে উনার ব্যাপারে হুসনে যন পোষণ করত: উনার হক্ব হাক্বীক্বীভাবে আদায় করার তাওফীক দান করুন। (আমীন)
-ইমাদুদ্দীন আহমদ।