ما كان محمد ابا احد من رجالكم ولكن رسول الله
অর্থ: সাইয়্যিদুল মুরসালীন ইমামুল মুরসালীন, খতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তোমাদের কোন পুরুষের (প্রাপ্ত বয়ষ্ক ব্যক্তির) পিতা নন, বরং তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। (পবিত্র সুরা আহযাব শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৪০)
অর্থাৎ, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার হযরত আবনাউ আলাইহিমুস সালাম উনারা দুনিয়ার যমীনে অল্প সময় অবস্থান মুবারক করেছেন। এই জন্যই সাইয়্যিদাতুল কওনাইন হযরত বানাতু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের মাধ্যমেই উনার পূত পবিত্র নসব মুবারক জারী রয়েছে। অনন্তকালব্যাপী কায়িনাতবাসী সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন হযরত বানাতু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের মুবারক উসিলায় যাবতীয় খায়ের বরকত এবং সাকীনা লাভ করবে। কারণ, উনাদের মুবারক উসিলায় কিয়ামত পর্যন্ত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম তথা হযরত আওলাদে রসূল আলাইহিমুস সালাম উনারা দুনিয়াতে তাশরীফ মুবারক গ্রহণ করবেন। সঙ্গত কারণেই সাইয়্যিদাতুন নিসা হযরত বানাতু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের তা’রীফ মুবারক জানা সকলের জন্যই অত্যাবশকীয়।
এ বিষয়ে সকলেই একমত যে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বানাত বা কন্যা সন্তান আলাইহিন্নাস সালাম উনারা সকলেই উম্মুল মু’মিনীন হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম উনার পবিত্র রেহেম শরীফ হতে তাশরীফ মুবারক গ্রহণ করেন। পবিত্র মক্কা শরীফে উনারা সকলেই বিলাদত শরীফ গ্রহণ করেন এবং পবিত্র মদীনা শরীফে উনারা সকলেই বিছাল শরীফ গ্রহণ করেন। উনারা মোট চারজন। দুনিয়ার যমীনে তাশরীফ মুবারকের ধারাবাহিকতা অনুযায়ী নিম্নে উনাদের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি মুবারক আলোচনা করা হলো।
সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন হযরত যাইনাব আলাইহাস সালাম তিনি যখন বিলাদত শরীফ গ্রহণ করেন, তখন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দুনিয়াবী হায়াত মুবারক প্রায় সোয়া উনত্রিশ বছর। অর্থাৎ আনুষ্ঠানিক নবুওয়াত মুবারক প্রকাশের প্রায় পৌনে এগারো বছর পূর্বে তিনি বিলাদত শরীফ গ্রহণ করেন। আওলাদু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের মধ্যে তিনি দ্বিতীয় এবং বানাতু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের মধ্যে তিনি উলা বা প্রথম।
আল উলা মিন বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার হুলিয়া মুবারক সম্পর্কে কিতাবে উল্লেখ করা হয় যে, তিনি উম্মুল মু’মিনীন হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম উনার পরিপূর্ণ নকশা বা মিছাল মুবারক ছিলেন। সুবহানাল্লাহ!
উম্মুল মু’মিনীন হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম উনার বোন হযরত হালাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা উনার ছেলে সাইয়্যিদুনা হযরত আবুল আস ইবনে রবী আলাইহিস সালাম উনার সাথে দশ বছর বয়স মুবারকে আল উলা মিন বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শাদী মুবারক অনুষ্ঠিত হয়। (সিরাতুল হালাবিয়া)
পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার প্রাথমিক যুগে পবিত্র মক্কা শরীফে কাফিরদের জুলুম নির্যাতনের সেই কঠিন সময়ে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক খিদমতে তিনি ছিলেন সদা নিবেদিত প্রাণ। সীমাহীন ত্যাগ তিতিক্ষার মাঝে সর্ব প্রকার হুমকি-ধমকিকে উপেক্ষা করে একনিষ্টভাবে তিনি মুবারক খিদমতে আনজাম দেন। যা সত্যিই বেমেছাল। (আল মুজামুল কাবীর)
সাইয়্যিদাতুন নিসা হযরত আল উলা আলাইহাস সালাম উনার হিজরত মুবারক উনার ঘটনা ইতিহাসের অত্যধিক করুণ ঘটনাবলীর অন্যতম। বদর জিহাদের কিছুদিন পর তিনি হিজরত করার জন্য হামেলা শান মুবারক এ রওনা দেন। কাফিররা সেই সময় অত্যাধিক মর্মান্তিকভাবে উনাকে জুলুম করে। সেই জুলুমের কারণে বিছাল শরীফ গ্রহণ করার পূর্ব পর্যন্ত তিনি কষ্ট অনুভব করেন। (আল ইস্তিরাব)
আল উলা মিন বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার একজন ছেলে সন্তান এবং একজন মেয়ে সন্তান বিলাদত শরীফ গ্রহণ করেন। যিনি ছেলে সন্তান, তিনি অল্প বয়সে বিছাল শরীফ গ্রহণ করেন। আর মেয়ে সন্তান যিনি সাইয়্যিদাতুন নিসা হযরত উমামা আলাইহাস সালাম। তিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত প্রিয় পাত্র উনাদের মধ্যে তিনি অন্যতম। সাইয়্যিদাতুন নিসা হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম তিনি উনার পবিত্র বিছাল শরীফ গ্রহন করার সময় অছিয়ত মুবারক করেন যান উনার পর হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম তিনি যেন হযরত উমামা আলাইহাস সালাম উনাকে শাদী মুবারক করেন। সেই অছিয়ত মুবারক হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি রক্ষা করেন অর্থাৎ পালন করেন।
৮ম হিজরীর ৮ই মুহররমুল হারাম শরীফ পবিত্র মদীনা শরীফে সাইয়্যিদাতুন নিসা আল উলা আলাইহাস সালাম তিনি দীর্ঘদিন মারিদ্বী শান মুবারক জাহির করে পবিত্র বিছাল শরীফ গ্রহণ করেন। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার তত্ত্বাবধান মুবারকে হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনারা উনার গোসল মুবারক সম্পন্ন করেন। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ব্যবহৃত চাদর মুবারক উনার কাফন মুবারক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। পবিত্র জান্নাতুল বাক্বীতে উনার পবিত্র রওজা শরীফ স্থাপিত হয়। (বুখারী শরীফ, দুররুল মানছূর , উসদুল গবাহ)
উনার মুবারক শানে পবিত্র হাদীছ শরীফে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عن ام الـمؤمنين حَضْرَتْ عَائِشَةَ الصديقة عَلَيْهَا السَّلَامُ ان رسول الله صلى الله عليه و سلم قال حَضْرَتْ زينب عَلَيْهَا السَّلَامُ خَيْرُ بناتِي أُصِيبَتْ فِيَّ.
অর্থ: উম্মুল মু’মিনীন হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, সাইয়্যিদাতুন নিসা হযরত যাইনাব আলাইহাস সালাম তিনি আমার শ্রেষ্ঠ আওলাদ। পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার জন্য উনাকে সীমাহীন কষ্ট স্বীকার করতে হয়েছে। (মা’রিফাতুছ ছাহাবা)
হযরত বানাতু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের মধ্যে সাইয়্যিদাতুন নিসা হযরত রুকাইয়া আলাইহাস সালাম তিনি দ্বিতীয়। তবে আওলাদু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের মাঝে তিনি পঞ্চম। সাইয়্যিদুনা হযরত কাসিম আলাইহিস সালাম, সাইয়্যিদাতুনা হযরত যাইনাব আলাইহাস সালাম, সাইয়্যিদুনা হযরত ত্বইয়্যিব আলাইহিস সালাম এবং সাইয়্যিদুনা হযরত ত্বাহির আলাইহিস সালাম উনাদের পরে হযরত সাইয়্যিদাতুন নিসা আছ ছানিয়া আলাইহাস সালাম তিনি তাশরীফ মুবারক গ্রহণ করেন। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দুনিয়াবী হায়াত মুবারক যখন তেত্রিশ বছর অর্থাৎ, আনুষ্ঠানিক নুবুওওয়াত প্রকাশের প্রায় সাত বছর পূর্বে তিনি পবিত্র বিলাদত শরীফ গ্রহণ করেন।
সাইয়্যিদাতুন নিসা আছ ছানিয়া আলাইহাস সালাম উনার জামালিয়ত ও হুসনিয়ত পুরো আরব জুড়ে প্রসিদ্ধি লাভ করে। উনার দুনিয়াবী হায়াত মুবারক যখন ছয় বছর, তখন আবু লাহাবের বারবার আরজীর প্রেক্ষিতে তার বড় ছেলে উতবার সাথে উনার আক্বদ মুবারক সম্পন্ন হয়। কিন্তু উনার সাথে তার উরুস হয়নি। তার পূর্বেই আনুষ্ঠানিক নুবুওয়ত প্রকাশের তৃতীয় বছর সূরা লাহাব নাযিল হলে আবু লাহাব গোস্বায় এই বিবাহে বিচ্ছেদ ঘটায়।
পরবর্তীতে স্বয়ং খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার মুবারক নির্দেশে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমীরুল মু’মিনীন, খলীফাতুল মুসলিমীন, সাইয়্যিদুনা হযরত উছমান যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার নিকট সাইয়্যিদাতুন নিসা আছ ছানিয়া আলাইহাস সালাম উনাকে শাদী মুবারক দেন।
আনুষ্ঠানিক নুবুওওয়াত প্রকাশের পঞ্চম বছরে বার বছর বয়স মুবারকে সাইয়্যিদাতুন নিসা আছ ছানিয়া আলাইহাস সালাম তিনি খলীফাতুল মুসলিমীন হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার সাথে আবিসিনায় হিজরত মুবারক করেন। সেখানে উনারা প্রায় সাত বছর অবস্থান মুবারক করেন। অতপর পূনরায় মক্কা শরীফ ফিরে আসেন। পরবর্তীতে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের সাথে তিনি পবিত্র মদীনা শরীফে হিজরত মুবারক করেন। দু’দুইবার হিজরত মুবারক করায় উনাকে যাতুল হিজরতাইন লক্বব মুবারকে অভিহিত করা হয়। (মুসতাদরাকে হাকিম, উসদুল গবাহ)
দ্বিতীয় হিজরীর রমাদ্বান শরীফ। যখন বদর জিহাদের জোড় প্রস্তুতি চলছিল, তখন সাইয়্যিদাতুন নিসা আছ ছানিয়া আলাইহাস সালাম তিনি মারিদ্বী শান মুবারক গ্রহণ করেন। উনার মুবারক খিদমতের আনযাম দেওয়ার জন্য নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি জামিউল কুরআন হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনাকে মনোনীত করে বদর জিহাদে চলে যান।
বদর জিহাদের পরের দিন ১৮ই রমাদ্বান শরীফ যখন বিজয়ের সংবাদ পবিত্র মদীনা শরীফ উনার দ্বারপান্তে, তখন ২২ বছর বয়স মুবারকে হযরত সাইয়্যিদাতুন নিসা আছ ছানিয়া আলাইহাস সালাম তিনি বিছাল শরীফ গ্রহণ করেন। খলীফাতুল মুসলিমীন হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি জান্নাতুল বাকী শরীফে উনার রওজা শরীফ স্থাপন করেন।
হাবশা বা আবিসিনায় অবস্থান মুবারক কালে সাইয়্যিদাতুন নিসা আছ ছানিয়া আলাইহাস সালাম উনার রেহেম শরীফে কামিলুল হায়া হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার একজন পুত্র সন্তান বিলাদত শরীফ গ্রহণ করেন। হাদীছ শরীফে উনার নাম মুবারক হযরত আব্দুল্লাহ আলাইহিস সালাম হিসেবে উল্লেখ করা হয়। তিনি ছয় বছর বয়স মুবারকে পবিত্র মদীনা শরীফে বিছাল গ্রহণ করেন। (মুস্তাদরাকে হাকিম)
বানাতু রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের মধ্যে সাইয়্যিদাতুন নিসা হযরত উম্মু কুলসুম আলাইহাস সালাম তিনি তৃতীয়। আর আওলাদু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের মধ্যে তিনি ষষ্ঠতম। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দুনিয়াবী হায়াত মুবারক যখন পঁয়ত্রিশ, তখন তিনি পবিত্র বিলাদত শরীফ গ্রহণ করেন। অর্থাৎ আনুষ্ঠানিকভাবে নবুওওয়াত প্রকাশের পাঁচ বছর পূর্বে দুনিয়ার যমীনে উনার মুবারক তাশরীফ।
সাইয়্যিদাতুন নিসা আছ ছালিছা আলাইহাস সালাম অন্যান্য বানাতু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের ন্যায় তিনিও অকল্পনীয় জামালিয়ত ও হুসনিয়ত উনার অধিকারীনী ছিলেন। সঙ্গত কারণেই খুব অল্প বয়স মুবারকেই উনার জন্য বিভিন্ন প্রস্তাব আসতে থাকে। আবু লাহাবের বারবার অনুরোধের প্রেক্ষিতে তার ছেলে উতাইবার সাথে উনার আক্বদ মুবারক সম্পন্ন হয়। কিন্তু সাইয়্যিদাতুন নিসা আছ ছানিয়া আলাইহাস সালাম উনার ন্যায় উনাকেও শ্বশুরালয়ে যেতে হয়নি। তার পূর্বেই পবিত্র সূরা লাহাব শরীফ নাযিল হলে আবু লাহাব উনার আক্বদ ভেঙ্গে দেয়।
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক খিদমতে সাইয়্যিদাতুন নিসা আছ ছালিছা আলাইহাস সালাম তিনি ছিলেন সদা তৎপর। আনুষ্ঠানিক নুবুওওয়াত ঘোষণার পর হতে শিয়াবে আবু তালিবে অবস্থান করা সহ হিজরত মুবারক উনার পূর্ব পর্যন্ত তিনি মুবারক খিদমতে ছায়ার ন্যায় লেগে থাকতেন। কাফিরদের হুমকি-ধমকি, জুলুম নির্যাতন কোন কিছুই উনাকে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমত মুবারক হতে বিচ্ছিন্ন করতে পারেনি। পরবর্তীতে হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের সাথে তিনিও পবিত্র মদীনা শরীফে হিজরত মুবারক করেন।
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عن حضرت ابى هريرة رضى الله تعالى عنه ان النبى صلى الله عليه وسلم لقى عثمان عليه السلام عند باب المسجد فقال هذا جبرائيل عليه السلام اخبرنى ان الله قد زوجك ام كلثوم عليها السلام بـمثل صداق رقية عليها السلام.
অর্থ :- হযরত আবু হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। নিশ্চয়ই নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে খলীফাতুল মুসলিমীন হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার সাক্ষাত মুবারক হয় মসজিদে নববী শরীফ উনার দরজা মুবারকে। তখন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনাকে লক্ষ্য করে বললেন, হযরত জিবরাইল আলাইহিস সালাম তিনি আমাকে সংবাদ দিয়েছেন যে, মহান আল্লাহ পাক তিনি সাইয়্যিদাতুনা হযরত রুকাইয়া আলাইহাস সালাম উনার মোহর মুবারক অনুযায়ী সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু কুলছূম আলাইহাস সালাম উনাকে আপনার নিকট শাদী মুবারক দিয়েছেন। (ইবনু মাজাহ শরীফ)
কিতাবে উল্লেখ করা হয় যে, সাইয়্যিদাতুন নিসা আছ ছানিয়া হযরত রকাইয়া আলাইহাস সালাম তিনি ২য় হিজরীর ১৮ই রমাদ্বান শরীফ পবিত্র পবিত্র বিছাল শরীফ গ্রহণ করলে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি খলীফাতুল মুসলিমীন হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার নিকট সাইয়্যিদাতুন নিসা আছ ছালিছা হযরত উম্মু কুলছূম আলাইহাস সালাম উনাকে তৃতীয় হিজরীতে শাদী মুবারক প্রদান করেন। উনারা অপরিসীম সুখ-শান্তিতে দিনাতিপাত করেন। সুখী পরিবার হিসেবে পুরো আরব জুড়ে সুখ্যাতি অর্জন করেন। শাদী মুবারক উনার পর তিনি দুনিয়াতে সাড়ে ছয় বছর থেকেও কিছু বেশী সময় অবস্থান মুবারক করেন।
নবম হিজরীতে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তাবুক জিহাদ হতে ফিরে আসার পর পবিত্র রমাদ্বান শরীফ উনার ৬ তারিখ সাইয়্যিদাতুন নিসা আছ ছালিছা আলাইহাস সালাম তিনি পবিত্র বিছাল শরীফ গ্রহণ করেন। হযরত ছাফিয়্যা বিনতে আব্দিল মুত্তালিব আলাইহাস সালাম তিনি উনাকে গোসল মুবারক করান। স্বয়ং নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র জান্নাতুল বাকী শরীফে উনার রওজা শরীফ স্থাপন করেন।
সাইয়্যিদাতুন নিসা হযরত বানাতু রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের মধ্যে হযরত ফাতিমাতুয যাহরা আলাইহাস সালাম তিনি চতুর্থতম এবং কতিপয় আখাছছুল খাছ খুছুছিয়ত মুবারকে বৈশিষ্ট্য মন্ডিত। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দুনিয়াবী হায়াত মুবারক যখন সাতত্রিশ বছর, সেই বছর পবিত্র ২০শে জুমাদাল উখরা শরীফে তিনি পবিত্র বিলাদত শরীফ গ্রহণ করেন। পবিত্র বিলাদত শরীফ গ্রহণকালে উনার মুবারক খিদমতের আঞ্জাম দিতে জান্নাত হতে উম্মুল বাশার হযরত হাওয়া আলাইহাস সালাম, রব্বাতু কালীমিল্লাহ হযরত আসিয়া আলাইহাস সালাম, উখতু কালীমিল্লাহ হযরত উম্মু কুলছুম আলাইহাস সালাম এবং উম্মু রুহিল্লাহ হযরত মারইয়াম আলাইহাস সালাম উনারা তাশরীফ মুবারক গ্রহণ করেন।
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عن ام الـمؤمنين حضرت صديقة عليها السلام قالت ما رايت احدا اشبه سمتا ودالا وهديا برسول الله صلى الله عليه و سلم فى قيامها وقعودها من فاطمة بنت رسول الله صلى الله عليه وسلم.
অর্থ : উম্মু মু’মিনীন হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম হতে বর্ণিত। তিনি দবলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার চাল-চলন মুবারক, স্বভাব মুবারক, কার্যক্রম মুবারক এবং মুবারক চলা-ফেরাতে সাইয়্যিদাতুন নিসা হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম তিনি ব্যতিত অন্য কাউকে সাদৃশ্য পূর্ণ দেখিনি। (আবূ দাউদ শরীফ)
অর্থাৎ সাইয়্যিদাতুন নিসা হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম তিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলইহি ওয়া সাল্লাম উনার পরিপূর্ণ নকশা মুবারক। মুবারক খিদমতে উনার অবদান বেমেছাল।
দ্বিতীয় হিজরীর শেষাংশে সাইয়্যিদাতুন নিসা হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম উনাকে যীনাতুল আরিফীন হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম উনার নিকট শাদী মুবারক দেওয়া হয়। পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عن حضرت عبد الله ابن مسعود رضى الله تعالى عنه عن رسول الله صلى الله عليه و سلم قال ان الله امرنى ان ازوج حضرت فاطمة عليها السلام من حضرت على عليه السلام
অর্থ : হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি আদেশ মুবারক করেছেন যে, সাইয়্যিদাতুন নিসা হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম উনাকে আমি যেন হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম উনার নিকট শাদী মুবারক দেই। (তাবরানী শরীফ)
সাইয়্যিদাতুন নিসা হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম উনার ছয় জন আওলাদ যমীনে তাশরীফ মুবারক গ্রহণ করেন। উনার আওলাদগণ বাদ আছর পবিত্র বিলাদত শরীফ গ্রহণ করেন। তিনি যথা নিয়মে মাগরীব নামায আদায় করেন। কোন প্রকার মাজুরতার সম্মূখীন উনাকে হতে হয়নি। যা উনার পবিত্রতার ব্যাপারে সুস্পষ্ট প্রমাণ।
সাইয়্যিদাতুন নিসা হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম উনার আওলাদ হযরত ইমাম হাসান আলাইহিস সালাম এবং হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম উনাদের মধ্যমে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্রতম নসব মুবারক জারী থাকবে। পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عن حضرت جابر رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم لكل بنى ام عصبة ينتمون اليهم الا ابنى حضرت فاطمة عليها السلام فانا وليهما وعصبتهما.
অর্থ : হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, প্রত্যেক সন্তান পিতার দিকে সম্পৃক্ত। তবে হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম তিনি ব্যতিত। আমি উনার আওলাদগণ উনাদের অভিভাবক এবং পিতৃ পুরুষ। (আল মুসতাদরাক)
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র বিছাল শরীফ গ্রহণ করার পর সাইয়্যিদাতুন নিসা হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম তিনি দুনিয়ার যমীনে প্রায় ছয় মাস অবস্থান মুবারক করেন। ১১ হিজরীর ৩রা রমাদ্বান শরীফ তিনি পবিত্র বিছাল শরীফ গ্রহণ করেন। জান্নাতুল বাকীতে উনার পবিত্র রওজা শরীফ স্থাপিত হয়েছে। দুনিয়ার যমীনে তিনি প্রায় সাতাশ বছর অবস্থান মুবারক করেন।
বলা বাহুল্য যে, বর্তমান সময়ে মুসলিম উম্মাহ হযরত বানাতু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের ব্যাপারে পুরোপুরি গাফিল। উনাদের ব্যাপারে ব্যাপক আলোচনা-পর্যালোচনা করার ব্যবস্থা করেছেন সর্ব প্রথম মুজাদ্দিদে আ’যম ঢাকা রাজারবাগ শরীফ উনার মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম। তিনিই সর্বপ্রথম উনাদের শান মুবারকে মাহফিলের আয়োজন করেছেন। রাজারবাগ দরবার শরীফে সাইয়্যিদাতুন নিসা আল উলা আলাইহাস সালাম উনার পবিত্র বিছাল শরীফ দিবস ৮ই মুহররমুল হারাম শরীফ, সাইয়্যিদাতুন নিসা হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম উনার পবিত্র বিলাদত শরীফ দিবস ২০ শে জুমাদাল উখরা শরীফ এবং পবিত্র বিছাল শরীফ দিবস পবিত্র ৩রা রমাদ্বান শরীফ, সাইয়্যিদাতুন নিসা হযরত উম্মু কুলসুম আলাইহাস সালাম উনার পবিত্র বিছাল শরীফ দিবস পবিত্র ৬ই রমাদ্বান শরীফ এবং সাইয়্যিদাতুন নিসা হযরত রুকাইয়া আলাইহাস সালাম উনার পবিত্র বিছাল শরীফ দিবস পবিত্র ১৮ই রমাদ্বান শরীফ উপলক্ষে আযীমুশ্বান বিশেষ মাহফিল মুবারক অনুষ্ঠিত হয়। যা উনাদের আখাছছুল খাছ নৈকট্য নিসবত মুবারক হাছিলের বিশেষ সুযোগ।
উম্মাহর দায়িত্ব কর্তব্য হচ্ছে, সাইয়্যিদাতুন নিসা হযরত বানাতু রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের সওয়ানেহ উমরী মুবারক বিশেষভাবে আলোচনা করা। উনাদেরকে অনুসরণ অনুকরণের কোশেশ করা। উনাদের মুবারক খিদমতের আঞ্জাম দিয়ে উনাদের তাওয়াল্লুক ও রেযামন্দি হাছিল করা। বলার অপেক্ষা রাখেনা যে, বর্তমান সময়ে উনাদের মুবারক শান উপলব্ধি করতে হলে সুমহান রাজারবাগ শরীফে সাইয়্যিদাতুন নিসা হযরত উম্মুল উমাম আলাইহাস সালাম, হযরত নাকিবাতুল উমাম আলাইহাস সালাম এবং হযরত নিবরাসাতুল উমাম আলাইহাস সালাম উনাদের ছোহবত মুবারক ইখতিয়ার করার কোন বিকল্প নেই। কেননা, উনারা হচ্ছেন হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম এবং হযরত বানাতু রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের পরিপূর্ণ কায়িম মাক্বাম।
মহান আল্লাহ পাক সাইয়্যিদাতুন নিসা হযরত বানাতু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের সাওয়ানেহ উমরী মুবারক হতে নছীহত গ্রহণ করত উনাদের রেযামন্দি মুবারক হাছিল করার তাওফীক সকলকে দান করুন। (আমীন)
-আল্লামা মুহম্মদ আখী সিরাজুদ্দীন ।