সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাইবিয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত মুবারক নিয়ে লিখিত কবিতাই মূলত পবিত্র না’ত-এ রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। পবিত্র না’ত শরীফ লিখেছেন হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ উনারা, হযরত আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ উনারা এবং অনেক পরহেযগার মু’মিন-মু’মিনাগণ উনারা। সুবহানাল্লাহ!
বিশেষ না’ত শরীফ মূলত লিখিত হয়েছে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাইবিয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শান-মান মুবারক প্রকাশের উদ্দেশ্যে। তবে তা রচনা করেছেন যিনি খাইরুল উম্মাহাত, ত্বাহিরা, ত্বইয়িবা, মুনাওওয়ারা, সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন হযরত আমিনা আলাইহাস সালাম; যিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিতা আম্মাজান আলাইহাস সালাম। তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার মনোনীতা লক্ষ্যস্থল হাবীবাতুল্লাহ এবং ইলমে গাইব তথা অদৃশ্য ইলম উনার অধিকারিণী ছিলেন। মহান আল্লাহ পাক উনার প্রদত্ত ইলমে গাইব উনার মাধ্যমে রচনা করেন বিশেষ মর্যাদাসম্পন্ন বিশেষ না’ত শরীফ।
সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন হযরত আমিনা আলাইহাস সালাম তিনি ইলমে গাইব তথা ইলহাম-ইলকা মুবারক উনার মাধ্যমে স্বীয় আওলাদ পাক, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সুমহান শান সম্পর্কে উনার সুমহান জীবনী মুবারক প্রসঙ্গে বাণীগুলো আগাম কবিতার ভাষায় ব্যক্ত করেছিলেন। যার বাস্তবতা পরবর্তীতে পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ এবং উনার সমগ্র জিন্দেগী মুবারকে আমরা লক্ষ্য করি। তিনি উনার পবিত্র বিছাল শরীফ গ্রহণ করার সময় (আবৃত্তি) করেছিলেন; যা আল্লামা হযরত জালালুদ্দীন সুয়ূতি শাফিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার কিতাবুল আ’যীম ওয়াস সুন্নাহ কিতাবে সঙ্কলন করেছেন।” এই না’ত শরীফ মূলত ইলমে গইব উনার সুস্পষ্ট দলীল।
এই বিশেষ না’ত শরীফ যখন পাঠ করা হয় তখন নিসবত হয় খাইরাতুল উম্মাহাত, ত্বাহিরা, ত্বইয়িবা, হযরত উম্মু রসূলিনা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সঙ্গে এবং খাছ করে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সঙ্গে।
আসুন, এই পবিত্র না’ত শরীফ প্রচলন বিষয়ে আলোচনা করি। এই সুমহান না’ত শরীফ লিখিত হয়েছে প্রায় ১৫০০ শত বছর আগে। কিতাবে সঙ্কলনের দিক থেকে আমরা দেখতে পাই হযরত জালালুদ্দীন সুয়ূতী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার “কিতাবুল আ’যীম ওয়াস সুন্নাহ” কিতাবে সঙ্কলনে করেছেন; তাও সঙ্কলন হয়েছে ৮৪৯-৯১১ হিজরী সনে। তখন থেকে কিতাবে রয়েছে কিন্তু এই বিশেষ না’ত শরীফ পাঠ করে, পাঠের মাধ্যমে রহমত, বরকত হাছিল করার বিষয়টি, নিসবত হাছিলের বিষয়টি যিনি যামানার লক্ষ্যস্থল ওলীআল্লাহ, যামানার মুজাদ্দিদ, মুজাদ্দিদে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি ছাড়া কেউ তা উপলব্ধি করতে পারেনি এবং এই পবিত্র না’ত শরীফ পাঠের কেনো আয়োজন হয়নি। তিনিই প্রথম ব্যাপকভাবে এই বিশেষ না’ত শরীফ পাঠের এবং শোনার সুযোগ করে দিয়েছেন। সুবহানাল্লাহ! শুধু তাই নয়; আরবীতে লিখা বিশেষ না’ত শরীফ হয়তো সকলের উপলব্ধির গভীরে পৌঁছে না, তাই তিনি এই বিশেষ না’ত শরীফ উনার কাব্যানুবাদ বাংলা এবং ইংরেজি উভয় ভাষায় রচিত হবার সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছেন। অর্থাৎ পৃথিবীর যে কোনো ভাষা-ভাষীর মানুষ যেন তা অনুবাদ করে নিয়ে পাঠ করতে পারে- সেই দিগন্ত উন্মোচন করেছেন।
মহান রাজারবাগ দরবার শরীফ-এ অনেক লেখক সবোর্চ্চ ৪ রকম করে এই বিশেষ না’ত শরীফ কাব্যানুবাদ করেছেন। সুবহানাল্লাহ!
এই বিশেষ না’ত শরীফ ব্যাপক
প্রচারের নেপথ্যে লক্ষ-কোটি হিকমত:
এই বিশেষ না’ত শরীফ ব্যাপক প্রচারের নেপথ্যে লক্ষ-কোটি হিকমত রয়েছে। এবার আসুন আমরা শুধু একটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করি, তাহলে এই বিশেষ না’ত শরীফ প্রচলনের গভীরতা কিছুটা উপলব্ধি করতে সক্ষম হবো।
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে জাতীয় সঙ্গীত গাওয়ার প্রচলন রয়েছে। ইতিহাসে পাওয়া যায় নেদারল্যান্ডে (ডাচ) সঙ্গীত হিসেবে জাতীয় সঙ্গীত চালু হয়েছে ১৫৬৮ থেকে ১৫৭২ ঈসায়ী সনে। পরে ১৯ শতকে ইউরোপে ব্যাপকভাবে ছড়ায়।
জাপান ৭৯৪-১১৪৫ ঈসায়ী সনে হিয়ান পিরিয়ডের সময়কালীন রচিত একটি কবিতাকে জাতীয় সঙ্গীতে রূপ দিয়েছে আর ১৮৮০ সাল থেকে সুর করে গাইছে।
এখন দেখুন, পৃথিবীর কোনো ইতিহাসে এই জাতীয় সঙ্গীত প্রচলনের নেপথ্যে তেমন কোনো নৈতিক ও দার্শনিক ব্যাখ্যা উল্লেখ করা হয়নি। অথচ বর্তমানে মুসলিম-অমুসলিম দেশ নির্বিশেষে জাতীয় সঙ্গীত রয়েছে, এমনকি অনেক দেশের স্কুলগুলোতে স্কুল শুরুর পূর্বে সবাইকে নিয়ে জাতীয় সঙ্গীত গাওয়ার প্রচলন রয়েছে। এমনকি মুসলিম দেশ বাংলাদেশেও রয়েছে। নাউযুবিল্লাহ!
এরা তথাকথিত যে যুক্তি দাঁড় করায় তা হচ্ছে-
১। জাতীয় সঙ্গীত গাওয়ার মাধ্যমে নিজ দেশের স্মরণ হয়।
২। নিজ দেশের প্রতি মুহব্বত বৃদ্ধি পায়।
৩। জাতীয় সঙ্গীতের মাধ্যমে একটি স্বাধীন দেশের আলাদা পরিচয় ফুটে উঠে ইত্যাদি।
শুনে আপনারা আরো অবাক হবেন, মানুষ অশ্লীল-অশালীন বেপর্দা ছবি দেখতে সিনেমা হলে প্রবেশ করে সেখানে ছায়াছবির শুরুর পূর্বে জাতীয় সঙ্গীত বাজানোর নিয়ম রয়েছে এবং তখন সবাইকে দাঁড়িয়ে জাতীয় সঙ্গীতের পাশাপাশি জাতীয় পতাকাকে সম্মান করতে হয়। নাউযুবিল্লাহ!
স্কুলগুলোতে বা কোথাও যখনই জাতীয় সঙ্গীত গাওয়া হবে তখন সবাইকে দাঁড়িয়ে যেতে হবে।
এখন আসুন আমরা সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার আলোকে এ বিষয়টি পর্যালোচনা করি-
১। সকল সঙ্গীত সম্মানিত শরীয়ত অনুযায়ী হারাম। তা জাতীয় আর বিজাতীয় সঙ্গীত যাই হোক না কেন।
২। সম্মানিত হাদীছ শরীফ অনুযায়ী সঙ্গীত দেশপ্রেম উদ্বুদ্ধ না করে মুনাফিকী জাগ্রত করে।
৩। জাতীয় সঙ্গীতের ইতিহাস দেখলেই দেখা যায়- কখনোই তা মুসলমানগণের ইতিহাস নয়। কাফির-মুশরিকদের প্রবর্তিত। তাহলে আমরা কার অনুসরণ করছি জাতীয় সঙ্গীত গাওয়ার মধ্য দিয়ে? অথচ মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন: “তোমরা কাফির-মুশরিকদের অনুসরণ করো না”।
কিন্তু সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যেই পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান। কেউ বলতে পারবে না- জাতীয় সঙ্গীত গাওয়ার মাধ্যমে মহান আল্লাহ পাক উনার তরফ থেকে কেউ রহমত হাছিল করে, বরং বিপরীতটা ঘটে; যেহেতু তা সঙ্গীত এবং গাওয়া হয় বাদ্যযন্ত্রের মাধ্যমে। ফলে মহান আল্লাহ পাক উনার কাছ থেকে রহমত আশা করলে প্রয়োজন গান-বাজনার বিপরীত কিছু অর্থাৎ হামদ শরীফ, না’ত শরীফ, সামা-ক্বাছীদা শরীফ।
এখন যদি বিশেষ না’ত শরীফ সর্বত্র প্রচলিত হয়, তবে তা হবে মানুষের জন্য সর্বোচ্চ কল্যাণকর।
কারণ বিশেষ না’ত শরীফ পাঠের মাধ্যমে-
১। মহান আল্লাহ পাক উনার রহমত বর্ষিত হয়।
২। মহান আল্লাহ পাক উনার স্মরণ হয়।
৩। ইলমে গইবের বিষয়ে মানুষের মধ্যে ফিকির তৈরি হয়।
৪। সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন হযরত উম্মু রসূলিনা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শ্রেষ্ঠত্বের কথা স্মরণ হয়।
৫। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাইবিয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সঙ্গে নিসবত তৈরি হয়।
৬। আমাদের অস্তিত্বের কথা স্মরণ হয়।
৭। (فليفرحوا) ফাল-ইয়াফরাহু অর্থাৎ খুশি প্রকাশ করা হয়। আর আমাদের স্মরণ হয়- প্রথম খুশি প্রকাশ করেছেন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিতা মাতা আলাইহাস সালাম।
পবিত্র রাজারবাগ শরীফ-এ যে অনন্তকালের জন্য সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ পালন করা হচ্ছে; সে মাহফিল এই পবিত্র বিশেষ না’ত শরীফ উনার মাধ্যমেই শুরু করা হয়।
এখন এই সূক্ষ্ম বিষয়ের প্রচলনকারী যিনি, তিনি হচ্ছেন যামানার ইমাম ও মুজতাহিদ মুজাদ্দিদে আ’যম মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম। আমরা বলেছি- এই না’ত শরীফ আগেও ছিল কিন্তু প্রচলিত ছিলো না। একটি বিষয় সত্য, কেউ চাইলেই তা প্রচলন করতে পারবে না। যিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সঙ্গে গভীরভাবে নিসবতযুক্ত উনি ছাড়া এই বিষয়ের ফিকির কারো পক্ষে করা সম্ভব নয়। সবার দ্বারা সব কাজ হয়নি, হয় না আর হবেও না। কোনো কিছু জারি করার জন্য বা জারি রাখার জন্য মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের কাছে কবুলকৃত হতে হয়। ক্বিয়ামত পর্যন্ত বিশেষ না’ত শরীফ পাঠের এই প্রচলন জারি থাকবে। ইনশাআল্লাহ!
যদি দাঁড়িয়ে জাতীয় সঙ্গীত পাঠ করতে হয় দেশের সম্মানের জন্য, তাহলে বিশেষ না’ত শরীফ শুনতে হবে, পাঠ করতে হবে কতটা আদবের সঙ্গে তা বলার আর অপেক্ষা রাখে না। এই বিশেষ না’ত শরীফ উনার সার্বিক প্রচলন মূলত মুজাদ্দিদে আ’যম মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার অত্যন্ত গভীর, হিকমতপূর্ণ, সূক্ষ্ম তাজদীদ মুবারক উনার অন্তর্ভুক্ত।
খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি যেন আমাদেরকে মুজাদ্দিদে আ’যম মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার তাজদীদী কাজ উনার মধ্যে শরীক করে নেন। আদবের সঙ্গে আমল করার তাওফীক দান করেন এবং যিনি আমাদের ঈমান বাঁচানোর উদ্দেশ্যে তা জারি করছেন উনার গোলামীতে আজীবন থাকার তাওফীক দান করেন। আমীন!
-আল্লামা মুহম্মদ রুহুল হাসান।