(جَارِيَةٌ) ‘জারিয়াহ’ শব্দটি আরবী এবং একবচন। এর বহুবচন (جَوَارِي) জাওয়ারী ও (جَارِيَات) জারিয়াত। শব্দটি একাধিক অর্থে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। যথা কন্যাশিশু, কন্যা, মেয়ে, তনয়া, দুহিতা, বালিকা, তরুণী, বাঁদী, চাকরানী, নৌকা, জাহাজ, নৌযান ইত্যাদি।
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে দুজন হযরত উম্মুল মু’মিনীন আলাইহিমাস সালাম উনাদের শান মুবারকে ‘জারিয়াহ’ শব্দটির ব্যবহার উল্লেখ রয়েছে। একজন হচ্ছেন হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ ছিদ্দীক্বাহ আলাইহাস সালাম তিনি। আর অপরজন হচ্ছেন হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছানিয়াহ আশার ক্বিবতিয়্যাহ আলাইহাস সালাম তিনি। উনারা দু’জনই ছিলেন অত্যধিক সম্ভ্রান্ত, কুলীন বংশদ্ভুত। সুবহানাল্লাহ!
যেমন প্রথমজন হচ্ছেন খলীফাতু রসূলিল্লাহ, আফদ্বালুন নাস বা’দাল আন্বিয়া হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিতা বানাত বা মেয়ে আলাইহাস সালাম। সুবহানাল্লাহ! আর দ্বিতীয়জন হচ্ছেন মিশরের বাদশাহ হযরত মুক্বাওক্বিস রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার সম্মানিতা বানাতুল আখ বা ভাতিজী আলাইহাস সালাম।
স্মরণীয় যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে যখন হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ ছিদ্দীক্বাহ আলাইহাস সালাম উনার নিসবতে আযীমাহ মুবারক উনার আক্বদ্ মুবারক সংঘটিত হয় তখন তিনি ছিলেন জারিয়াহ তথা ছবিয়্যাহ বা অপ্রাপ্তা বয়সী একজন বালিকা।
আর সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে যখন হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছানিয়াহ আশার ক্বিবতিয়্যাহ আলাইহাস সালাম উনার নিসবতে আযীমাহ মুবারক সংঘটিত হয় তখন তিনি ছিলেন জারিয়াহ তথা ফাতিয়্যাহ বা অবিবাহিতা একজন তরুণী। সুবহানাল্লাহ!
জানা আবশ্যক যে, হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনারা সংখ্যায় সর্বমোট ১৩ জন। উনাদের মধ্যে কেবল উপরোল্লেখিত দুজনই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে নিসবতে আযীমাহ মুবারক সংঘটিত হওয়াকালীন ছিলেন কুমারী বা অবিবাহিতা। সুবহানাল্লাহ! আর বাকী এগারো জন ছিলেন অকুমারী বা বিবাহিতা। সুবহানাল্লাহ! উনারা প্রত্যেকেই ছিলেন স্বাধীন। কেউই বাঁদী বা দাসী ছিলেন না। এই আক্বীদা পোষণ করাই প্রত্যেকের জন্য ফরয। এর বিপরীত আক্বীদা পোষণ করা গোমরাহী ও কাট্টা কুফরী। নাউযুবিল্লাহ!
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, কেউ কেউ জারিয়াহ শব্দ দ্বারা ১০ বা ততোর্ধ্ব বয়সের বালিকা উদ্দেশ্য নিয়ে থাকে। এর জওয়াবে বলতে হয় যে, জারিয়াহ শব্দটি শুধু ১০ কিংবা ততোর্ধ্ব বয়সের বালিকার জন্যেই ব্যবহৃত হয় না। বরং ১০ বছরের কম বয়সের বালিকার জন্যেও ব্যবহৃত হয়ে থাকে। আলোচ্য প্রবন্ধের শুরুতেই জারিয়াহ শব্দের অর্থের মধ্যে তা উল্লেখ করা হয়েছে।
মোটকথা, জারিয়াহ শব্দটি কুমারী বা অবিবাহিতা বালিকা ও তরুণীর জন্য ব্যবহৃত হয়। তা ১০ বছরের কম হোক কিংবা ১০ বছরের বেশি হোক না কেন। তাছাড়া উক্ত জারিয়াহ শব্দটি নাবালিগা ও বালিগা উভয়ের জন্য ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় উদাহরণ হচ্ছেন হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ ছিদ্দীক্বাহ আলাইহাস সালাম তিনি এবং হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছানিয়াহ আশার ক্বিবতিয়্যাহ আলাইহাস সালাম তিনি। সুবহানাল্লাহ!
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে যখন হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ ছিদ্দীক্বাহ আলাইহাস সালাম উনার নিসবতে আযীমাহ মুবারক উনার আক্বদ্ মুবারক সংঘটিত হয় তখন তিনি ৬ বছর বয়সী অপ্রাপ্তা বালিকা ছিলেন। সুবহানাল্লাহ! আর সাইয়্যিদুল মুরসালীন ইমামুল মুরসালীন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে যখন হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছানিয়াহ আশার ক্বিবতিয়্যাহ আলাইহাস সালাম উনার নিসবতে আযীমাহ মুবারক সংঘটিত হয় তখন তিনি ২০ বছর বয়সী একজন তরুণী ছিলেন। সুবহানাল্লাহ!
সম্মানিত শরীয়ত তথা পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত হয়েছে- মেয়েদের বালেগা বা প্রাপ্তবয়স্কা হওয়ার জন্য নূন্যতম বয়স হচ্ছে ৯ বছর। এবং ছেলেদের বালেগ বা প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার জন্য নূন্যতম বয়স হচ্ছে ১২ বছর। আর ছেলে-মেয়ে উভয়ের জন্য বালেগ ও বালেগা হওয়ার জন্য উর্ধ্বতম বয়স হচ্ছে ১৫ বছর। এটাই হচ্ছে সম্মানিত হানাফী মাযহাব উনার মত।
– মুফতী সাইয়্যিদ আবূ সাফওয়ান আহমদ।