সমস্ত প্রশংসা মুবারক খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য; যিনি সকল সার্বভৌম ক্ষমতার মালিক। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নবী আলাইহিমুস সালাম উনাদের নবী, রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি অফুরন্ত দুরূদ শরীফ ও সালাম মুবারক।
রাষ্ট্র পরিচালনায় যোগ্য লোক বাছাই এবং সেই যোগ্য লোকদের উপযুক্ত স্থানে যাওয়ার সুযোগ করে দেয়াই হলো পিএসসি’র দায়িত্ব। রাষ্ট্র পরিচালনা করেন আমলারা। একজন ব্যক্তি আমলা হয়ে উঠে তুমুল প্রতিযোগিতামূলক বিসিএস পরীক্ষার মাধ্যমে নিয়োগ পাওয়ার মাধ্যমে। মেধাবী ও যোগ্য আমলা নিয়োগের সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান পিএসসি। অথচ মেধার মাধ্যমে মাত্র ৪৫ ভাগ রাষ্ট্রযন্ত্র পরিচালনা এবং নাগরিক সেবার সুযোগ পায়। বাকি ৫৫ ভাগ নেয়া হয় অনগ্রসর কোটা (মুক্তিযোদ্ধা ৩০%, নারী ১০%, জেলা ১০% ও উপজাতি ৫%) থেকে।
স্বাধীনতা যুদ্ধের আগে ছিল সিভিল সার্ভিস অব পাকিস্তান (সিএসপি)। যুদ্ধের পর ১৯৭২ সালে সিএসপি থেকে গঠন করা হয় পাবলিক সার্ভিস কমিশন (পিএসসি)। এটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। সংবিধানের দ্বিতীয় পরিচ্ছেদে কর্ম কমিশনের কথা বলা হয়েছে। ১৩৭ থেকে ১৪১ অনুচ্ছেদে পিএসসি’র গঠন, চেয়ারম্যান ও সদস্য নিয়োগ, পদের মেয়াদ এবং কমিশনের দায়িত্ব বর্ণিত আছে। ১৪৮ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী তারা শপথ গ্রহণের মাধ্যমে দায়িত্বে অধিষ্ঠিত হয়। একই সঙ্গে সরকারি চাকরিতে সাংবিধানিকভাবে সকল নাগরিকের সমান সুযোগের কথা বলা হয়েছে। এতে কোটার মাধ্যমে বৈষম্য তৈরির কোনো সুযোগ নেই। তাতে রাষ্ট্রযন্ত্র মেধাহীন হয়ে পড়ে, স্থবির হয়ে পড়ে জনপ্রশাসন। এ কারণেই কোটা পদ্ধতির সংস্কারের কথা বলা হচ্ছে বারবার। সংবিধানে ২৯(১)-এ বলা আছে, ‘প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োগ বা পদ লাভের ক্ষেত্রে সব নাগরিকের জন্য সমান সুযোগের সমতা থাকবে।’
বর্তমান প্রচলিত কোটা পদ্ধতি মূলত মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিরুদ্ধে। বাঙালিরা পাকিস্তানীদের বিরুদ্ধে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলেছিল তার অন্যতম একটি কারণ ছিল- সরকারি চাকরিতে নানা ছল-চাতুরিতে বাঙালিদের সুযোগ সীমিত করে রাখার বিষয়টি। কেবল সিভিল সার্ভিসেই নয়, ফরেন সার্ভিস, বিভিন্ন স্বায়ত্তশাসিত ও আধাস্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের চাকরিতেও পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে বৈষম্য বিরাজমান ছিল। এই বৈষ্যমের বিরুদ্ধেই বাঙালিরা মুক্তিসংগ্রামে অবতীর্ণ হয়েছিল। প্রকৃতপক্ষে, যোগ্যতা- মেধার ভিত্তিতে সকলের জন্যই সরকারি চাকরির দ্বার উন্মুক্ত করাও মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল। কিন্তু স্বাধীনতার ৪৩ বছর পরও কোটা পদ্ধতির নাগপাশে সেই স্বপ্ন অধরাই থেকে গেছে।
সরকারি চাকরি লাভের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে মুক্তিযোদ্ধা কোটা। স্বাধীনতা পরবর্তী দীর্ঘ ৪৩ বছর শুধু মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানরা কোটা পদ্ধতির সুযোগ পেলেও দুই বছর পূর্বে নবম জাতীয় সংসদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা করেছিলো- শুধু মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা নয়, বরং তাদের নাতি-নাতনিরাও কোটা পদ্ধতির আওতায় পড়বে। প্রধানমন্ত্রীর সে ঘোষণানুযায়ী মুক্তিযোদ্ধাদের উত্তরাধিকারীরা চাকরির ক্ষেত্রে সুযোগ পাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা রাষ্ট্রের আইন। দেশের একজন নাগরিক হিসেবে তার সিদ্ধান্তের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো এবং তা মেনে নেয়া কর্তব্য। কিন্তু দেশের প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা কত?
রাজনীতিবিদ, সচিবসহ সরকারের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তারাও রয়েছে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার তালিকায়। ইতোমধ্যে উপসচিবসহ ১৯১ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার সনদ বাতিল করেছে মন্ত্রণালয়। অন্যদিকে মিথ্যা তথ্য দিয়ে মুক্তিযোদ্ধার সনদ নেয়ার অভিযোগে ছয় (৬) সচিবের মুক্তিযোদ্ধা সনদ-সংক্রান্ত নথিপত্র জব্দ করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তাদের সনদ শীঘ্রই বাতিল হচ্ছে বলে জানা গেছে। সব মিলিয়ে আরো প্রায় তিন হাজার ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার সনদ বাতিলের প্রক্রিয়া শুরু করেছে মন্ত্রণালয়।
যে সকল ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার জন্ম হয়েছে তারা রাষ্ট্রের আর্থিক ক্ষতির চেয়েও বেশি ক্ষতি করছে দেশের শিক্ষিত সমাজের। তাদের অনৈতিকতার খেসারত দিতে হচ্ছে যোগ্য চাকরি প্রার্থীদের।
তাছাড়া চাকরির ক্ষেত্রে নারীদের কোটা পদ্ধতি নারীবাদীদের নীতি অনুযায়ী অবান্তর। কোটা পদ্ধতির মধ্যে সবচেয়ে হাস্যকর হলো জেলাভিত্তিক কোটা ব্যবস্থা বহাল রাখা। বাংলাদেশে বর্তমানে জেলার সংখ্যা ৬৪টি কিন্তু স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে জেলার সংখ্যা ছিল মাত্র ২১টি। সে সময় এ জেলাগুলোর জন্য কোটা সংরিক্ষত ছিল। কিন্তু বর্তমানে কোন্ যুক্তিতে সে জেলাগুলোর জন্য কোটা বরাদ্দ রাখা হয়েছে- তার হিসেব মিলানো অসাধ্য। উপজাতিদের জন্য ৫% কোটা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষের সাথে উপজাতিদের আনুপাতিক হার করলে এ কোটা পদ্ধতির হিসাব দশমিক ৫% নেমে আসবে।
উল্লেখ্য, রাষ্ট্র দেশের মেধাবীদের মেধা ধরে রাখতে কার্যকরী ভূমিকা গ্রহণ করুক সেটাই কাম্য। কোনো বিশেষ শ্রেণীর স্বার্থ রক্ষা করতে গিয়ে যেন অন্য মানুষকে হুমকির দিকে ঠেলে দেয়া না হয়। বিভিন্ন সময়ে কোটা পদ্ধতি নিয়ে ছাত্রদের পক্ষ থেকে দাবি উত্থাপিত হয়েছে এবং তাদের সমাধানের আশ্বাস দিয়ে শান্ত করা হয়েছে। তবে সমাধান কখনোই হয়নি।
মূলত, সবকিছুর জন্যই প্রয়োজন সততা আর সদিচ্ছা। মূলত সম্মানিত ইসলামী অনুভূতি উনার উদয় হলেই তার বিকাশ ও চর্চা সম্ভব। তবে সেজন্য প্রয়োজন নেক ছোহবত, রূহানী সংস্পর্শ তথা ফয়েজ-তাওয়াজ্জুহ মুবারক।
যামানার ইমাম ও মুজতাহিদ, যামানার মুজাদ্দিদ, মুজাদ্দিদে আ’যম ঢাকা রাজারবাগ শরীফ উনার মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার নেক ছোহবতেই কেবলমাত্র তা পাওয়া সম্ভব। মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদেরকে তা নছীব করুন। (আমীন)
-মুহম্মদ ওয়ালীউর রহমান।
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি ও ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা-৫০