يايها النبى انا ارسلنك شاهدا و مبشرا و نذيرا.
অর্থঃ “হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! অবশ্যই আমি আপনাকে সাক্ষীদাতা, সুসংবাদদাতা এবং ভীতি প্রদর্শনকারীরূপে প্রেরণ করেছি।” (সূরা আহযাব-৪৫)
আলোচ্য আয়াত শরীফ-এর তাফীসরে نذيرا শব্দের লক্ষ কোটি ব্যাখ্যা রয়েছে। তবে এখানে আমরা ভীতি প্রদর্শনকারী বলতে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার রো’ব, মু’জিযা তথা বিরত্ব ও সাহসিকতার যৎসামান্যই আলোচনা করার প্রয়াস পাব।
হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে-
عن على رضى الله تعالى عنه قال لقد رأيتنى يوم بدر ونحن نلوذ بالنبى صلى الله عليه وسلم هو اقربنا الى العدو وكان من اشد الناس يومئذ بأسا.
অর্থঃ হযরত আলী র্কারামাল্লাহু ওয়াজহাহু রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, বদর যুদ্ধের দিন আমি নিজ চোখে দেখেছি যে, আমরা নূরে মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর আশে পাশে আশ্রয় খুঁজছিলাম আর তিনি আমাদের সকলের তুলনায় শত্রুদের বেশি কাছাকাছি পৌঁছে মোকাবিলা করে যাচ্ছেন। বদরের সেদিন উনারই বীরত্ব ও সাহসিকতা ছিল সর্বাধিক।
নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাহসিকতা ও বীরত্বের ক্ষেত্রে ছিলেন সমস্ত কায়িনাতের উর্ধ্বে। জিহাদ ও রণক্ষেত্রে প্রদর্শিত তাঁর বীরত্বের অসংখ্যা ঘটনা থেকে স্পষ্ট বুঝা যায় যে, কখনো কোন কঠিন পরিস্থিতিরি সম্মুখে তিনি বিন্দুতম বিচলিত হননি।
হাদীছ শরীফে এসেছে-
عن سعد بن عياض الثمالى رضى الله تعالى عنه قال كان رسول الله صلى الله عليه وسلم قليل الكلام قليل الحديث فلما امر بالقتال تشمر وكان من اشد الناس بأسا.
অর্থঃ হযরত সা’দ বিন ইয়ায ছামালী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছিলেন বাকসংযমী ও মিতভাষী । কিন্তু যখন তিনি যুদ্ধের জন্য আদিষ্ট হতেন তখন এমনভাবে দাঁড়িয়ে যেতেন যে তাঁকে সর্বাধিক বলিষ্ঠ যোদ্ধা ও সাহসী বলে দেখা যেত। সুবহানাল্লাহ!
হুনাইন যুদ্ধে হাওয়াযিন গোত্রের লোকেরা মুসলিম বাহিনীর উপর বৃষ্টির ন্যায় তীর বর্ষণ শুরু করে। তীরন্দাজদের প্রবল আক্রমণে ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের একমাত্র মনোবল ছিলেন আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। আল্লাহ পাক-এর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সীমাহীন সাহসিকতা ও বীরত্ব নিয়ে সঙ্গীদের মনোবল ও হিম্মত বৃদ্ধি করে কাফিরদের সঙ্গে মোকাবিলা করে যান।
এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফে বর্ণিত রয়েছে-
عن البراء رضى الله تعالى عنه قال لما غشية المشركون نزل فجعل يقول انا النبى لاكذب انا ابن عبد المطلب فما رئى فى الناس يومئذ احد كان اشد من النبى صلى الله عليه وسلم
অর্থঃ মুশরিকদের সৈন্য বাহিনী যখন হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ঘিরে ফেলল, তখন তিনি নিজের বাহন মুবারক থেকে নেমে বলতে লাগলেন, “কোন সন্দেহ নেই আমি সত্য নবী, আমি হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস্ সালাম-এর সন্তান।” বর্ণনাকারী বলেন, হাওয়াযিন গোত্রের তীরন্দাজ দলের বিরুদ্ধে খোলা তরবারী হাতে নিয়ে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এমন রো’ব প্রদর্শন করেছিলেন যে উনার মত এত সাহসিকতার অধিকারী পৃথিবীতে দ্বিতীয়জন নেই।
হাদীছ শরীফ-এ এসেছে-
عن عمران بن الحسين رضى الله تعالى عنه قال ما لقى النبى صلى الله عليه وسلم الا كان اول من يضرب.
অর্থঃ হযরত ইমরান বিন হুসাইন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, কোন শত্রু বাহিনীর সঙ্গে যখন মোকাবিলা হত তখন যুদ্ধে আল্লাহ পাক-এর হাবীব নূরে মুজাস্সাম, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামই অগ্রণী ভূমিকা রাখতেন।
অনুরূপভাবে একবার তিনি একটি বৃক্ষের ছায়ায় বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। তখন অতর্কিতভাবে জনৈক কাফির যোদ্ধা সম্মুখে এসে তরবারী তাক করে বললো, হে মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমার হাত থেকে এখন আপনাকে কে বাঁচাবে? হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অত্যন্ত শান্ত কণ্ঠে বললেন, আল্লাহ পাক আমাকে হিফাযত করবেন। আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর এই নির্ভীকতা ও বীরত্বপূর্ণ জাওয়াব শুনে লোকটির হৃদ কম্পন শুরু হয়ে হাত থেকে তরবারী মাটিতে পড়ে গেল। (সুবহানাল্লাহ) (ছহীহ বুখারী শরীফ ২য় খণ্ড ৫৯২ পৃঃ)
হাদীছ শরীফ-এর ইরশাদ হয়েছে-
عن ابى جعفر رضى الله تعالى عنه قال كان رسول الله صلى الله عليه وسلم شديد البطش.
অর্থঃ হযরত আবু জা’ফর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছিলেন (শত্রুদেরকে) কঠোরভাবে পাকড়াওকারী (সুবহানাল্লাহ)
অন্য হাদীছ শরীফ-এ এসেছে, বেহেশ্তী চল্লিশ জন পালোয়ানের শক্তি হচ্ছে একজন নবী- রসূলের। আর চল্লিশ জন রসূলের কুওওয়াত মুবারক আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর। অর্থাৎ কমপক্ষে সাধারণ ১৬০০ বীর বা পালোয়ানের শক্তি আল্লাহ পাক তাঁর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে দান করেছেন।
অন্য বর্ননায় এসেছে ৬৪,০০০ জন বীর পালোয়ানের শক্তি হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে দেয়া হয়েছে।
বর্ণিত আছে আরবের সর্বশ্রেষ্ট কুস্তি ও মল্লযুদ্ধের বীর পালোয়ান ছিল রোকনা পালোয়ান। সে চামড়ার উপর বসে থাকলে তাকে কেউ সরাতে পারতনা। চামড়া ছিড়ে টুকরো টুকরো হয়ে যেত। সে আল্লাহ পাক-এর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে একবার হুমকি দিয়েছিল। মুহুর্তের মধ্যে আল্লাহ পাক-এর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে এমনভাবে ধরাশায়ী করলেন যে আর নড়া-চড়া করতে পারছিলনা। সে বলেছিল, নিশ্চয়ই আপনি খোদায়ী শক্তি দিয়ে রোকনা পালোয়ানের অস্তিত্ব বিলীন করে দিলেন। আমি মুসলমান হয়ে গেলাম। (সুবহানাল্লাহ)
বলার অপেক্ষা রাখেনা বর্তমানে পৃথিবীতে বীরত্বও সাহসিকতার দিক দিয়ে আল্লাহ পাক-এর হাবীব, নূরে মুজাস্সাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পরিপূর্ণ মিছদাক্ব হচ্ছেন রাজারবাগ শরীফ-এর আমাদের প্রাণপ্রিয় শায়খ, আকা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লহুল আলী। যিনি বর্তমানে বিশ্বজুড়ে কাফির মুশরিক বাতিলদের বিরুদ্ধে একাই লড়ছেন। আজকে উনার রোবেই আমেরিকা, ইসরাইলের অস্তিত্ব বিলীন হতে চলছে। আল্লাহ পাক যেন আমাদের সকলকে এই মহান মুজাদ্দিদে আ’যম-এর বিপ্লবী ঝান্ডার ছায়া মুবারক-এর তলে আবাদুল আবাদ ইস্তিক্বামাত রাখেন। (আমীন)।
মাওলানা মুহম্মদ রুহুল আমীন।