গত ১০ জুন ২০১৮ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানা গেছে, বাংলাদেশ এখন ভারতের চতুর্থ রেমিটেন্স আহরণকারী দেশ। এর আগে ২০১২ সালের হিসাব মতে এই অবস্থায় পঞ্চম অবস্থায় ছিলো। ভারত ২০১৭ সালের বাংলাদেশ থেকে বৈদেশিক মুদ্রা হিসেবে আয় করে প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলার। হিসাব মতে ভারতের রেমিট্যান্স আহরণকারি দেশ হিসেবে বাংলাদেশের অবস্থা চতুর্থ। প্রাপ্ত তথ্যমতে, বাংলাদেশে অবৈধভাবে ১২ লাখ অবৈধ ভারতীয় রয়েছে। এর বাহিরেও অবৈধ পথে বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর কয়েক বিলিয়ন ডলার ভারতে যায়। ভারত সরকার নিজেদের অবৈধ এসব জনশক্তিকে টিকিয়ে রাখতে প্রায় বলে থাকে ভারতে প্রায় ২০ লাখ অবৈধ বাংলাদেশী রয়েছে। মাঝে মধ্যে এদের বের করে দেয়া হুমকিও দেয়া হয়। প্রশ্ন হলো এত বাংলাদেশী ভারতে অবস্থান করে তাহলে বাংলাদেশে তাদের রেমিট্যান্স কোথায়।
অপরদিকে, এক হিসেবে বাংলাদেশে অবস্থানরত অবৈধ ১২ লাখ ভারতীয় নাগরিকদের ৫ লাখ নাগরিকই বছরে ৩০ হাজার কোটি টাকা পাচার করছে। আর সে হিসেবে ১২ লাখ নাগরিক বছরে প্রায় ৮৫ হাজার কোটি টাকা বাংলাদেশ থেকে লোপাট করে ভারতে পাচার করছে। বাংলাদেশে অবস্থিত বিভিন্ন দূতাবাসের মধ্যে ভারতীয় দূতাবাসের লোকবলও বেশি। ভারতীয় নাগকিরদের মধ্যে বেশিরভাগই গার্মেন্টস, ক্লিনিক্যাল, সিমেন্ট এবং ইপিজেড ব্যবসায় জড়িত। প্রায় শতাধিক গার্মেন্টসের মালিক ভারতীয় নাগরিক। আর তাদের মালিকানায় রয়েছে প্রায় সহস্রাধিক ফ্ল্যাটবাড়ী। এছাড়া ইপিজেডের সংশ্লিষ্ট কিছু প্রতিষ্ঠান, নার্সিং এবং এনজিওতে কেউ কেউ কর্মরত রয়েছে। এসব নাগরিক চোরাপথে অর্থাৎ অবৈধভাবে নিজ নিজ দেশে যাতায়াতও করছে। বর্ডার গার্ড এবং পুলিশসহ আইন প্রয়োগকারী সংস্থার এক শ্রেণির সদস্যের সঙ্গে দুর্নীতি এবং সখ্যতার কারণে অবৈধভাবে থাকা এসব নাগরিকের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা সম্ভব হচ্ছে না।
উল্লেখ্য, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর বাংলাদেশের বিভিন্ন সেক্টরে ভারতীয় নাগরিকের সংখ্যা অস্বাভাবিকভাবে বাড়ছে। বাংলাদেশের কয়েকটি বড় মোবাইল কোম্পানির ছত্রছায়ায় তারা বাংলাদেশে আসছে। এরপর তারা কৌশলে দেশের বিভিন্ন খাতে জায়গা করে নিচ্ছে। এরপর কৌশলে ভারত থেকে আরো অবৈধ নাগরিক নিয়ে এসে সেইসব সেক্টরে প্রবেশ করাচ্ছে। জানা গেছে উচ্চ পর্যায়ে অবস্থানরত এসব ভারতীয় নাগরিকরা বাংলাদেশে তৈরি পোষাক কারখানাগুলোতে নানান কৌশল অবলম্বন করে সংকট তৈরি করে। পরে তারা মালিক সেজে কারখানা ক্রয় করে থাকে। এভাবে তারা বাংলাদেশে বহু তৈরি পোষাক কারখানার মালিক হয়েছে।
প্রসঙ্গত, সংবিধানের দ্বিতীয়ভাগে রাষ্ট্র পরিচালনের জন্য খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষাকে মৌলিক নীতিমালা হিসেবে দেয়া হয়েছে। কিন্তু এরপর দেশের ৪ কোটি মানুষ দারিদ্রসীমার নিচে বসবাস করে। এছাড়া দেশে কর্মক্ষম মানুষের মধ্যে ৪ কোটি লোক বেকার। দেখা গেছে, বিভিন্ন শিল্প ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিকরা বেশি বেতন ভাতা দিয়ে বিদেশী নাগরিকদের প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন পদে চাকরি দেয়। এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, সেসব প্রতিষ্ঠানে একজন বিদেশীকে যে পরিমাণ বেতন ভাতা দেয়া হয় তা দিয়ে বাংলাদেশী ১০ জন দক্ষ লোককে স্বúদে নিয়োগ দেয়া সম্ভব। দেখা যাচ্ছে, দেশের একটি বৃহৎ জনগোষ্ঠী অনাহারে অসহায়ভাবে জীবনযাপন করছে আর অন্যদিকে দেশের বাইরে থেকে এসে একটি অবৈধ বৃহৎ বিদেশী জনগোষ্ঠী দেশ থেকে ৮৫ হাজার কোটি টাকা লোপাট করে নিয়ে যাচ্ছে। যা বর্তমান বাজেটের প্রায় ২২ শতাংশ এবং ৩টি পদ্মাসেতুর অর্থের পরিমাণ। এক্ষেত্রে দেশের সরকার এবং নীতিনির্ধারক মহল একেবারেই নীরব ভূমিকা পালন করছে। যা দেশের নাগরিকদের মনে প্রবল ক্ষোভের সঞ্চার করেছে।
সমালোচক মহল মনে করেন, যদি দেশের ভেতর ভারতীয় নাগরিকদের ঢল এখনই রুখে দেয়া না যায় তাহলে খুব শীঘ্রই বাংলাদেশের অর্থনীতি ভারতের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে পড়বে। দুর্বল হয়ে পড়বে স্বদেশীয় অর্থনীতিকে সক্ষমতা। যা দেশের জন্য হুমকিস্বরূপ। তাই সরকারের উচিত হবে- অবিলম্বে দেশের কর্মখাতে বিদেশীদের আধিপত্য রুখে স্বকর্মশক্তিকে কাজে লাগানো।
আমরা মনে করি, সরকারের উচিত- এমন কঠোর ব্যবস্থা নেয়া যাতে ভারতীয়দের পক্ষে অবৈধভাবে চাকরি ও বসবাস করা সম্ভব না হয়। এজন্য মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা নিশ্চিত ও জোরদার করতে হবে। কতজন বিদেশী আসছে, তারা ঘোষিত উদ্দেশ্যের বাইরে অন্য কোনো কাজ বিশেষ করে চাকরি করছে কিনা- এসব বিষয়ে মনিটরিং থাকতে হবে। বাড়ি ভাড়া দেয়ার ক্ষেত্রে মালিকদেরকে ভিসার কাগজপত্র দেখানো বাধ্যতামূলক করতে হবে। ট্যুরিস্ট ভিসা নিয়ে যারা বাংলাদেশে আসছে তাদের কাউকে কোনো চাকরিতে ঢুকতে দেয়া যাবে না; বরং ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার পর বহিষ্কার বা গ্রেফতার করতে হবে। বিনিয়োগের অনুমতি দেয়ার সময়ও শর্ত রাখা দরকার যাতে স্থাপিত শিল্প বা প্রতিষ্ঠানে চাকরি প্রধানত বাংলাদেশীরাই পেতে পারে। সেইসাথে যেসব প্রতিষ্ঠান এসব বিদেশীদের গণহারে নিয়োগ দিচ্ছে তাদের বিরদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
পাশাপাশি সরকারকে ডিজিটাল তথ্য ব্যবস্থাপনা ও গবেষনা অব্যাহত রাখতে হবে যে, সরকারী বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে কী পর্যায়ের কত লোক লাগে। সে তথ্য অনুযায়ী ট্রেনিং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তৈরী করতে হবে। দেশেই স্বয়ংসম্পূর্ণ মানবসম্পদ তৈরী করতে হবে। এবং দেশের সমৃদ্ধি ও সম্পদ দেশেই রাখতে হবে। নিতে হবে সমন্বিত প্রয়াস ও প্রচেষ্টা।
-মুহম্মদ ওয়ালীউর রহমান, ঢাকা।
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা-৩৪
চাঁদ দেখা এবং নতুন চন্দ্রতারিখ শুরু নিয়ে প্রাসঙ্গিক আলোচনা- ১
কোকাকোলা ও অন্যান্য কোমল পানীয় সম্পর্কে উন্মোচিত সত্য-১৮
কট্টর কমুনিস্ট মাওসেতুং এর নতুন ভাবশিষ্য ফুলতলীর লংমার্চ এবং তার শরয়ী পর্যালোচনা ও প্রসঙ্গ কথা