আকবরের আমলের উলামায়ে ‘ছূ’দের উত্তরাধিকারী মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে দ্বীন-ই-ইলাহীর আদলে দ্বীন-ই-জুমহুরী প্রচলনে তারা এক হয়েছে-৭

সংখ্যা: ১১৫তম সংখ্যা | বিভাগ:

আল্লাহ্ পাক কুরআন শরীফে বলেন, “হে ঈমানদারগণ তোমরা রঈনা বলোনা উনজুরনা বল এবং শ্রবণ কর (বা শুনতে থাক) আর কাফিরদের জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি।” (সূরা বাক্বারা/১০৪)

এ আয়াত শরীফের শানে নুযুলে বলা হয়, ইহুদীরা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে কষ্ট দেয়ার জন্য রঈনা শব্দ ব্যবহার করতো, যার একাধিক অর্থ। একটি অর্থ হলো- আমাদের দিকে লক্ষ্য করুন, যা ভাল অর্থে ব্যবহৃত হয়। আর খারাপ অর্থে- হে মূর্খ, হে মেষ শাবক এবং হিব্রু ভাষায় একটি বদ্ দোয়া। ইহুদীরা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে রঈনা বলে সম্বোধন করতো। যাতে প্রকৃতপক্ষে তাদের উদ্দেশ্য ছিল খারাপ অর্থের প্রতি ইঙ্গিত করা। অন্যান্য ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ রঈনা শব্দের ভাল অর্থের প্রতি ইঙ্গিত করে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সম্বোধন করলে তখন ইহুদীরা খারাপ অর্থ চিন্তা করে হাসা হাসি করতো। এতে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কষ্ট পেতেন, তবুও কিছু বলতেন না। কেননা, আল্লাহ্ পাক-এর রসূল, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ওহী ছাড়া কোন কথা বলতেন না। যেমন কুরআন শরীফে বলা হয়েছে, “তিনি (হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ওহী ব্যতীত নিজের থেকে মনগড়া কোন কথা বলেন না।” (সূরা নজম/৩,৪)

এর ফলশ্রুতিতে আল্লাহ্ পাক কুরআন শরীফের আয়াত নাযিল করে রঈনা শব্দের বদলে উনজুরনা শব্দ ব্যবহার করতে বললেন। কারণ রঈনা শব্দ ভাল খারাপ উভয় অর্থে ব্যবহৃত হলেও উনজুরনা শব্দ শুধুমাত্র ভাল অর্থেই ব্যবহৃত হতো। তাই যে সকল শব্দ ভাল মন্দ উভয় অর্থেই ব্যবহৃত হয়, সে সকল শব্দের পরিবর্তে উপরোক্ত আয়াত শরীফ মুতাবিক ওটার সমার্থক অর্থবোধক শব্দ ব্যবহার করতে হবে, যা শুধুমাত্র ভাল অর্থেই ব্যবহৃত হয়।

প্রসঙ্গত আলোচ্য আয়াত শরীফ ও তার শানে নুযুলের প্রেক্ষিতে বিবেচ্যঃ বর্তমান চারদলীয় জোট সরকারের সমর্থনে যেসব ইসলামী নামধারী দল চারদলীয় ঐক্যজোট করেছিল তারা তাদের চারদলীয় জোটের যৌথ ঘোষণায় কি সব শব্দ অনুমোদন করেছিলেন, সম্মতি দিয়েছিলেন, স্বাক্ষর করেছিলেন?

আশ্চর্য্য হলেও সত্য যে শাইখুল হাদীস পরিচয়ে চললেও উক্ত শাইখুল হাদীস সাহেব যে চারদলীয় যৌথ ঘোষণায় স্বাক্ষর করলেন তা প্রায় দেড়শ লাইনের হলেও, তা ইসলাম রক্ষার নামে সমর্থনযোগ্য বলে প্রচার করা হলেও, তাতে একটি মাত্র হাদীস শরীফেরও উদ্ধৃতি ছিলনা।

সর্বোপরি ইসলামী ঐক্যজোটের নামে করা হলেও তাতে ইসলামের নাম-গন্ধ ছিলনা।   পাশাপাশি অপর একটি দল যারা ইসলামী জামায়াত দাবী করলেও আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন মুফাসসিরে কুরআন, মাওলানা, মুফতী সমাহারে উক্ত দলটির আমীর, সেই চার দলীয় ঘোষণা-পত্রে যথারীতি স্বাক্ষর করলেও, মুখে মুখে সব জায়গায় কুরআনের আদর্শের কথা প্রচার করলেও; তাদের স্বাক্ষরকৃত সে ঘোষণাপত্রে পবিত্র কুরআন শরীফের একটি মাত্র আয়াত শরীফও ছিলনা। বরং যেসব শব্দ ছিল তা ছিল মূলতঃ ধর্মনিরপেক্ষ জাতীয়তাবাদী সাধারণ দুনিয়াবী রাজনীতির প্রসূত শব্দ ভান্ডার। চারদলীয় জোটের ঘোষণায় যে শব্দ সমূহের পক্ষে ওকালতি করা হয়েছে তার একটি সংক্ষিপ্ত বিবরণ নিম্নে দেয়া হলো- “ল সাংবিধানিক ও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ল মানবাধিকার লংঘন চরম (প্রচলিত অর্থে) ল রাজনৈতিক কর্মী হত্যা (প্রচলিত অর্থে) ল গণতান্ত্রিক নীতিবোধ ল সংসদ সদস্য ল নির্বাচন কমিশনার ল নির্বাচন পক্রিয়ার ল জাতীয় সংসদের উপনির্বাচন ল ভোটাধিকার ল জাতীয় রেডিও এবং টেলিভিশনকে সরকার দলীয় প্রচার ল সংস্কৃতিসেবী ল সাংবিধানিক নিয়ম মুতাবিক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে ক্ষমতা ল সময়ের মধ্যে সর্বাগ্রে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান ল বিশ্বায়ন প্রক্রিয়ায় শামিল  (অর্থাৎ ইহুদী-নাছারাদের মত জাগতিক জীবন-যাপনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা) ল সংবিধানের প্রতি শ্রদ্ধাশীলতা ল একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মুকাবিলা করা ল সংবিধানের এই মূলনীতি সংরক্ষণ ও বাস্তবায়ন ল আইনের শাসন পুনরুদ্ধার ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা রক্ষা ল শিক্ষার মান ও পরিবেশ পুনরুদ্ধার; প্রকৃত অর্থে সাম্প্রদায়িক শান্তি ও সহনশীলতা প্রতিষ্ঠা ল রেডিও টেলিভিশনের স্বাধীনতা প্রদান ল সংবিধান সার্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণা ও বহুদলীয় গণতন্ত্রের মূলনীতিগুলোর বাস্তবায়ন ও সুরক্ষা ল নারীসমাজের অধিকার, মর্যাদা ও ক্ষমতায়ন প্রক্রিয়া ল জাতীয় সংস্কৃতি সংরক্ষণ ল সর্বসম্প্রদায়ের নাগরিকের জন্য আর্থ-সামাজিক নিরাপত্তা ল জাতীয় স্বার্থের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ গতিশীল  পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করা ল গণআন্দোলনে শামিল হওয়া ল সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদ।”   পাঠক! চার দলীয় জোট যেহেতু ইসলামের নামে করা হয়েছে এবং মুসলমানদের ঈমানী তথা ইসলামী সেন্টিমেন্টকে পূঁজি করা হয়েছে, সেহেতু স্বভাবতঃই এটা কাঙ্খিত ছিল যে, তাতে অন্ততঃপক্ষে মহান আল্লাহ্ পাক ও তাঁর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর তাওহীদ, তাঁর হুকুম-আহকাম তথা আইন পালনের কথা, ফরয আমল, তথা নামায, রোযা, হজ্ব ইত্যাদি বিষয়, ইসলামী অর্থনীতি তথা সূদ বিরোধী অনুচ্ছেদ, পর্দা, হালাল, মসজিদ-মাদ্রাসা, ইত্যাদির সম্পর্কে যথাযথ ইসলামী ব্যবস্থার সুস্পষ্ট নির্দেশনা থাকবে। নচেৎ তার পক্ষে অন্ততঃ ওকালতি তো থাকবে।     কিন্তু না, সুস্পষ্ট নির্দেশনা তো নয়ই; তার পক্ষে সুপারিশ বা ওকালতিও নয় বরং সেসব শব্দেরই কোন উল্লেখ নেই। ইসলামের নামেই চারদলীয় জোট করে, মুসলমানদের ইসলামের নামেই জোটের দিকে আহবান করে তারা কি করে ইসলামের ভাবধারা তথা অস্তিত্বসূচক শব্দগুলোই এভাবে বেমালুম বাদ দিয়ে দিতে পারলেন তা সত্যিই বোঝা দায়! কেবলমাত্র তাদেরকে উলামায়ে ‘ছূ’বলে সাব্যস্ত করলেই তার বুঝ পাওয়া যায়।  কারণ এই উলামায়ে ‘ছূ’দের পূর্বসূরীরাই তো বাদশাহ আকবরের আমলে দ্বীন ইসলামকে বিকৃত করে, করেছিল দ্বীন-ই-ইলাহী। সমস্ত হারামকে হালাল আর হালালকে হারাম ঘোষণাই ছিল দ্বীন-ই-ইলাহীর বৈশিষ্ট্য। তদ্রুপ আজকের উলামায়ে ‘ছূ’রাও ইসলামের নামে জোট করলেও, ইসলাম রক্ষার নামে চার দলীয় জোটের যৌথ ঘোষণায় স্বাক্ষর করলেও তারা যেসব শব্দের জন্য ওকালতি করেছে তা সম্পূর্ণরূপেই ধর্মনিরপেক্ষতা, গণতান্ত্রিক জাতীয়তাবাদ, ভোট, নির্বাচন তথা গণতন্ত্র বা জুমহুরী সম্পৃক্ত।

অর্থাৎ ইসলামের নামে করলেও তারা মূলতঃ দ্বীনে জুমহুরী প্রবর্তন ও প্রচলনেই মত্ত। ইসলামের নামে দুনিয়াবী রাজনীতির ক্ষমতার স্বাদ আস্বাদনে তথা এম.পি, মন্ত্রী হওয়া বা তা টিকিয়ে রাখার কোশেশেই তারা প্রবৃত্ত। এজন্য এতদিনের প্রচারিত আদর্শকে বিসর্জন দিতেও তারা যথারীতি উদ্যত। শহীদ মিনারে ফুল দেয়া, পূঁজা মন্ডপে যাওয়া, সুদী অর্থনীতি সচল রাখা, বেপর্দা হওয়া, ছবি তোলা, নারী নেতৃত্ব সমর্থন করা, গণতন্ত্র বা জুমহুরীর বুলি কপচানো এগুলোতে তারা এখন সিদ্ধহস্ত। অর্থাৎ দ্বীন ইসলাম বলে রব তুললেও তারা এখন করছে দ্বীনে গণতন্ত্র তথা দ্বীনে জুমহুরী। যেমনটি বাদশাহ্ আকবরের আমলে উলামায়ে ‘ছূ’রা দ্বীন ইসলামকে বিকৃত করে, করেছিল দ্বীনে ইলাহী।

-মুহম্মদ কাওছার জামান, ঢাকা।

আকবরের আমলের উলামায়ে ‘ছূ’দের উত্তরাধিকারী মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে দ্বীন-ই-ইলাহীর আদলে দ্বীন-ই-জুমহুরী প্রচলনে তারা এক হয়েছে-৪

প্রসঙ্গঃ গণতন্ত্র; এখনই চরম সময়, বিষয়টি ভাবিবার- ১০

একটি অভূতপূর্ব ওয়াজ শরীফ এবং কম্পিউটারে কুরআন শরীফ, মাজার শরীফের উপরে ভাসমান দৃশ্য ও তাঞ্জানিয়ার সেই ছেলের কথা

প্রসঙ্গঃ দরসে বুখারীর পঞ্চদশ বছর পূর্তি নামধারী জাহিরী আলিমদের ডামাডোলের বিপরীতে মুজাদ্দিদুয্ যামানের পরিচয়

আকবরের আমলের উলামায়ে ‘ছূ’দের উত্তরাধিকারী মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে দ্বীন-ই-ইলাহীর আদলে দ্বীন-ই-জুমহুরী প্রচলনে তারা এক হয়েছে-৫