আকবরের আমলের উলামায়ে ‘ছূ’দের উত্তরাধিকারী মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে দ্বীন-ই-ইলাহীর আদলে দ্বীন-ই-জুমহুরী প্রচলনে তারা এক হয়েছে-৪

সংখ্যা: ১১২তম সংখ্যা | বিভাগ:

(ক)

          উপমা বর্ণনা করা, উপমার আঙ্গিকে নছীহত করা, সমসাময়িক বিষয়ের প্রতি অঙ্গুলি নির্দেশ করা, আল্লাহ্ পাক-এর সুন্নত, আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সুন্নত। কুরআন শরীফের জায়গায় জায়গায় আল্লাহ্ পাক একই কাহিনী বিভিন্নভাবে বর্ণনা করে বিভিন্ন বিষয়ে নছীহত করেছেন।

          চলমান এই কলামটিও সঙ্গত কারণে কাহিনী তথা উপমা নির্ভর। ইতোমধ্যে এ কলামে তিন বিষয়ের কাহিনী তথা ইতিহাস এতে আলোচিত হয়েছে।

          ১. বাদশাহ আকবরের খোদা দাবী তথা ইসলাম বিকৃতি ও বিরোধীতার চরম ঔদ্ধত্যের কাহিনী যে প্রেক্ষিতে মন্তব্য করা হয়েছিল।

          “উপরোক্ত আলোচনা থেকে প্রতিভাত হয় যে হিন্দু এবং খ্রীষ্টান ঐতিহাসিকগণ যদিও আকবরকে মহামতি আকবর বলে অভিহিত করে থাকে কিন্তু ইসলামের দৃষ্টিতে সে কোন মতেই ফিরআউনের চেয়ে কম নয়। সে কেবল খোদা তায়ালা বা তাঁর পেয়ারা রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বিরুদ্ধে বলেই ক্ষ্যান্ত হয়নি, এমনকি নিজে মুজাদ্দিদ, রসূল দাবী করেও ক্ষ্যান্ত হয়নি, ফিরআউনের মত খোদ খোদা দাবী করতেও ছাড়েনি। কিন্তু কথা হল, শুধু সে যুগেরই সাধারণ মানুষ নয় আজকেও অনেকে উপলব্ধি করতে পারছেনা যে আকবর আর ফিরআউনের মাঝে তফাৎ নেই আদৌ।”

          ২. তৎকালীন উলামায়ে ‘ছূ’দের নেতা, শায়খ আবুল ফজল, ফৈজী, মোল্লা মোবারক নাগুরী, শায়খ আব্দুন্নবী, মখদুম-উল মূলক, আমান-উল্লাহ পানিপথী, ইত্যাদির কাহিনী। এরা কি অকল্পনীয়ভাবে বাদশাহ্ আকবরের দ্বীন ই-ইলাহীকে সমর্থন করেছিল, ইসলামের অনুশাসন ধ্বংস করেছিল, “বিস্মিল্লাহির রাহমানির রহীমের” পরিবর্তে “আল্লাহু আকবর” (অর্থাৎ আকবরই আল্লাহ্ এই অর্থে) সে কথা প্রবর্তন করেছিল। সিজদা প্রথা চালু, মদ বিক্রি, বাঘ-ভাল্লুক খাওয়া এবং পুরুষের জন্য স্বর্ণ ও রেশমী কাপড় ব্যবহার জায়িয করেছিল। মৃতদেহ পূর্বমুখী করে দাফন করা, গরুকে ‘মা’ বলা এবং অগ্নি পূজার প্রথা প্রবর্তন করেছিল। গো-মহিষ ভোজন নিষিদ্ধ করেছিল। নামায নিষিদ্ধ করেছিল। আর এতসব নাজায়িয কাজকে তারা দ্বীন-ই-ইলাহীর নামে জায়িয করেছিল।

          ৩. উলামায়ে ‘ছূ’দের সমর্থন ও গুণগান কাহিনী বর্ণিত সীমাহীন মুরতাদী কাজ সত্ত্বেও তৎকালীন উলামায়ে ‘ছূ’দের পৃষ্ঠপোষক আকবরী রাজশক্তি, বুদ্ধিজীবী এবং বিস্তর সাধারণ লোক যে তাদেরকেই সমর্থন করেছে, তাদেরই প্রশস্তি গেয়েছে এবং তাদের গুণগান করে হক্ব পন্থীদের সাথে ফ্যাসাদেও লিপ্ত হয়েছে। এমনকি তাবাকাত ই নাসিরীর মত অনেক ঐতিহাসিক কিতাবও রচনা করেছে আর হক্ব পন্থীদেরকেই না হক্ব বলেছে সে বিষয়ে বর্ণনা।

 প্রসঙ্গত এর একটি কারণ হল সাধারণ মানবীয় অনুভূতি। কারণ চলমান ধারা দ্বারা যদি সাধারণ মানুষ কাউকে একবার শ্রদ্ধার আসনে বসায় তবে সে লোকটি এরপরে ইসলামের খিলাফ কাজ করলেও সাধারণ মানুষ নতুন করে অনুধাবন করতে ব্যর্থ হয় যে সে পূর্ববৎ শ্রদ্ধাস্পদ থাকার যোগ্যতা হারিয়েছে। বরং উল্লিখিত ব্যক্তি যা করে তাকেই সে ইসলামী বলে মনে করে। মূলতঃ তখন উক্ত ধর্মব্যবসায়ী ধর্ম বিরোধী কাজটিও ধর্মের আলোকে প্রচার করে বলেই সাধারণ মানুষ তখন ধোকায় পড়ে গিয়ে তাদেরই সমর্থন করে।

          পাঠক! এই আলোকে মনে রাখা কর্তব্য যে, কেউ যদি কাউকে শাইখুল হাদীস বলে সম্মান করতে চায়, কাউকে জাতীয় খতীব বলে গ্রহণ করতে চায়, ইসলামী পত্রিকার সম্পাদক রূপে পরিচয় দিতে চায়, মুফতি বলে প্রচার করতে চায়, ইসলামী দলের মুখপাত্র বলে জানাতে চায়, সিলসিলার কায়িম মোকাম বলে ঘোষণা দিতে চায় তাহলে তার বৈধতা ততক্ষণই থাকবে, শরীয়তের দৃষ্টিতে তা সে সময় পর্যন্তই  গ্রহণযোগ্য হবে যতক্ষণ পর্যন্ত তিনি বা তারা বর্ণিত বিষয়ের হক্ব যথাযথভাবে আদায় করবেন।

          অর্থাৎ শাইখুল হাদীস সাহেব হাদীস শরীফে বর্ণিত সীমারেখার বাইরে যাবেননা। আর যদিও বা তারা যান তাহলে যে শরীয়ত এতদিন যাবৎ তাদের শাইখুল হাদীস লক্বব সমর্থন করেছিল সে শরীয়তই তখন অনিবার্যভাবে শাইখুল হদস ঘোষণা দিবে। এমনিভাবে বাকীদের ক্ষেত্রেও একই অবস্থা প্রযোজ্য হবে। যেমন, আবুল হাকাম আবু জেহেল হয়েছিলো। ইসলাম গ্রহণ না করে কুফরী মতে দায়িম-কায়িম থেকে ইসলামের বিরোধিতা করার কারণে।

(খ)

          তাকে তারা নিজেদের মহলে সবচেয়ে বয়োজেষ্ঠ, প্রবীন ও বিজ্ঞ বলে অধিকতর সম্মান দিয়ে থাকে। জাতীয় মসজিদের সম্মানিত খতীব পরিচয় দিয়ে আত্মতৃপ্তির ঢেকুর তুলে থাকে।

          অতএব অন্তত তিনি তাদের সাথে তাল মেলাবেন না এটাই কাঙ্খিত-বাঞ্ছিত ছিল। কিন্তু হাক্বীক্বত প্রকাশ পেল। তিনিও হুক্কা হুয়ার রবে সূর মিলালেন।

           জাতীয় মসজিদের খতীবগিরির মওকায়, জাতীয় মসজিদে তিনি জোট সরকারের বর্ষপূর্তির জন্য শুকরিয়ার দোয়া করলেন। বিগত বৎসর ভালভাবে পালিত হয়েছে বলে উল্লেখ করে শুকরিয়া করলেন। বললেন, বিগত এক বৎসর মানুষ শান্তিতে ছিল।

          পাঠক! আবুল ফজল যেমন বাদশাহ আকবরকে বলেছিল যে, “স্বাস্থের জন্য মদ পান করা জায়িয আছে” এ কথাটি যতটা আশ্চর্যজনক তেমনি জাতীয় খতীব কথিত ব্যক্তির “বিগত এক বৎসর মানুষ শান্তিতে ছিল।” এ কথাটি বোধ হয় তার চেয়েও বেশী আশ্চর্যজনক ও বিস্ময়কর।

          বিশেষ করে অর্থনীতির ভাষায় গত এক বছরে চাল, ডাল, পেয়াজ, লবন, তেল, দুধ, বিদ্যুৎ, পানি ইত্যাদির দাম প্রভৃতি বৃদ্ধির কথা, আদমজী মিল সহ অনেক মিল-কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়া, পুরাতন বাস চলাচল বন্ধ করে দেয়া, বেবী-ট্যাক্সি উঠিয়ে দেয়া ইত্যাদি সহ বিভিন্ন কারণে হাজার হাজার মানুষ বেকার হওয়া, দরিদ্র মানুষ আরো দরিদ্র হয়ে যাওয়া, সে তথ্য উল্লেখ বাদ দিয়েও প্রশ্ন করতে হয় যে, উক্ত শুকরিয়ার দোয়া দিবসে খোদ খতীব সাহেবই সূরা হজ্বের উদ্ধৃতি দিয়ে ইসলামী সরকারকে ৪টি কাজ করতে হয় বলে উল্লেখ করেছেন- নামায কায়িম করা, যাকাত ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা, সৎ কাজের আদেশ করা, অসৎ কাজের নিষেধ করা।

          প্রসঙ্গতঃ জনাব খতীব সাহেব জবাব দিবেন কি? আপনার শুকরিয়ার সরকার গত এক বছরে এই ৪টি কাজে আদৌ কোন সফলতা তো দূরের কথা বরং বিন্দুমাত্র তৎপরতা দেখিয়েছে কি?

           যদি তাই না হয়ে থাকে তাহেল কি করে মুসলমান শান্তিতে থাকতে পারে? কারণ মুসলমান তো ইসলামী সমাজ ব্যবস্থা ছাড়া শান্তিতে থাকতে পারেনা। আর শান্তিতে থাকতে পারে বলেই যদি মনে করেন তাহলে কিসের আবার আপনাদের এত ঢাক-ঢোল পেটানো ইসলামী আন্দোলন? কিসের আবার ইসলামের নামে এত দল? কিসের আবার ইসলামী আন্দোলনের নামে এতসব কর্মসূচী? আসলে সবই তো মেকী!

(গ)

 তাকে বলা হয় শাইখুল হাদীস। বুখারী শরীফের বাংলা অনুবাদ তিনি করেছেন। তার অনুদিত বুখারী শরীফ(পরিবেশনায় মীনা বুক হাউস ১৩ বায়তুল মোকররম) থেকে নিম্নে উল্লেখ করা হলো-

ফটো তোলার ব্যবসা নিষিদ্ধ

          হযরত সাঈদ ইবনে আবুল হাসান রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে বর্ণিত, “একদা আমি আবদুল্লাহ ইবন্ েআব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এর কাছে ছিলাম, এক ব্যক্তি তাঁর কাছে উপস্থিত হল এবং বললো,  হে আবুল আব্বাস ! আমি একজন দরিদ্র লোক, আমার জীবিকা নির্বাহের একমাত্র উপায় হল হস্তশিল্প, আমি ছবি এঁকে থাকি। হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বললেন, ‘আমি তোমাকে এমন একটি হাদীস শুনাব যা আমি নিজে কানে রসূলুল্লাহ ছল্লল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মুখে শুনেছি। আমি তাঁকে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি কোন ছবি তৈরী করবে, আল্লাহ তা’য়ালা কেয়ামতের দিন তাকে ঐ ছবির মধ্যে আত্মা দেয়ার আদেশ করবেন, কিন্তু সে আত্মা দিতে কখনও সক্ষম হবে না।

          এ হাদীস শুনে ঐ ব্যক্তি শিউরে উঠল, তার চেহারা হলদে হয়ে গেল। ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বললেন, যদি অগত্যা এ কাজ করতেই চাও তবে জীবের ছবি না এঁকে বৃক্ষাদির ছবি এঁকো।

যে ঘরে ফেরেশ্তা প্রবেশ করে না

          হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু  থেকে বর্ণিত, নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম  কাবা শরীফে প্রবেশ করে ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম ও মারইয়াম আলাইহাস সালাম এর ছবি দেখতে পেলেন। তখন তিরস্কারের স্বরে বললেন, “মক্কার লোকেরা একথা নিশ্চয়ই শুনে থাকবে যে, যে ঘরে ছবি থাকে সে ঘরে রহমতের ফেরেশতা থাকেনা।”

          পাঠক! বলার অপেক্ষা রাখেনা তথাকথিত শাইখুল হাদীস লিখিত, হাদীস শরীফের এ অর্থ মুসলমানদের ছবি তোলা সম্পর্কে কঠিনভাবে সর্তক করে দেয়া কিন্তু নিজে অনুবাদ করার পরও খোদ শাইখুল হাদীস সাহেব নিজে কতটুকু এ বিষয়ে আমলদার?

          এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করতে হয় যে, সরকারের বর্ষপূর্তিতে বর্তমান মহিলা প্রধানমন্ত্রী বলেন, “তাই আজ আমি অনুরোধ করবো, মৃত ব্যক্তিদের বিকৃত ও মর্মান্তিক ছবি না ছেপে তাদের জীবিত অবস্থায় সুন্দর ছবি যেন আপনারা ছাপেন। এতে মৃত ব্যক্তিদের প্রতি সম্মান দেখানো হবে।

          ইতোমধ্যে কিছু দৈনিক পত্রিকা তাই করছে। তাদের প্রতি আমি ধন্যবাদ জানাচ্ছি। মেয়েদের লেখাপড়ার সুযোগ বাড়ানো হয়েছে। চাকরির সুযোগও বাড়ানো হবে। দেশ সংস্কৃতির বিকাশে গত এক বছরে বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বাংলার প্রাচীন রাজধানী সোনারগাঁয়ে  মাসব্যাপী ‘লোক ও কারুশিল্প’ মেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে।”

          উল্লেখ্য, এর প্রেক্ষিতে তথাকথিত শাইখুল হাদীস সাহেব প্রধানমন্ত্রীর ভূয়সী প্রশংসা করে বলেন যে, প্রধানমন্ত্রীর প্রতিটি কথা বাস্তব ও সম্পূর্ণ সত্য। (সূত্র- ১৩/১০/০২ দৈনিক ইত্তেফাক, আজকের কাগজ) অর্থাৎ তিনি এর দ্বারা ছবি তোলা ও দেশজ সংস্কৃতির নামে নাচ-গান বিদয়াত-বেশরা তথা বেপর্দা হওয়ার মত হাজারো হারাম কাজকে অবাধে স্বীকৃতি দিলেন।

          অথচ তার নিজের লেখা “আল কুরআনের দৃষ্টিতে মহিলাদের পর্দা” বইয়ে তিনি লেখেন, (যার রচনায় নাম রয়েছেঃ শাইখুল হাদীস মাওলানা আজিজুল হক, এর প্রকাশকাল ১৯৯৯, প্রকাশনায় হাছানিয়া লাইব্রেরী, ৩৬ বাংলাবাজার, ঢাকা।)

চোখের পর্দা ও আধুনিক বিজ্ঞান

          আধুনিক ফিরিঙ্গি মস্তিষ্কের চিন্তা ধারা এই যে, দেখলে কি হবে? এটাতো শুধু দেখা, কোন ভুল বা অন্যায় কাজ তো নয়। আমরা কখনো চিন্তা করি কি? কেউ যদি তার সামনে হঠাৎ একটি বাঘ দেখতে পায়, তাহলে তার দেহ ও প্রাণের মাঝে কি অবস্থার সৃষ্টি হয়? সবুজ বস্তু ও ফুল তো শুধু দেখাই নয়, তবে উহা দেখায় অন্তর কেন আনন্দে আপ্লুত হয় এবং প্রশান্তি লাভ করে? বিপদ আপদ বা ভয়ানক কোন কিছু দেখা মাত্রই তো অন্তর অস্থির হয়ে যায়। কিন্তু কেন? কোন সুন্দরী রমনী দেখা মাত্রই হৃদয় কেন আন্দোলিত হয়? এতো শুধু দেখাই, একটু ভেবে দেখুন তো। সুতরাং একটু চোখ খুলুন, বারবার চিন্তা করুন। হয়তো সত্য গ্রহণ করা সহজ হয়ে যাবে। মোট কথা চোখ চুরি করে হাত অগ্রসর হয়। ফলে গুণাহ্ পাপাচার সংঘটিত হয় আর এজন্যই ইসলাম চেহারা আবৃত করা ও পর্দা করার বিধান দিয়েছে। সহঅবস্থান ও সহশিক্ষা হারাম ঘোষণা করেছে।

ওলী ও পীরগণের সাথে পর্দার বিধান

 (এই হেডিং দিয়ে শাইখুল হাদীস সাহেব লিখেছেন, ছেপেছেন সুতরাং অনিবার্যভাবে তা তার উপরও বর্তায়)

          ওলী ও পীরগণের সাথেও অন্যান্য সকল লোকদের ন্যায় মহিলাদের পর্দা করা জরুরী। এ সম্পর্কে হাদীসের প্রমাণ এই- হযরত আয়িশা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা বর্ণনা করেন যে, একদা জনৈক মহিলা ছাহাবী পর্দার আড়াল হতে রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর হাতে একটি চিঠি দিতে চাইলেন, রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার মুবারক হাত ফিরিয়ে নিলেন। (তার হাত থেকে চিঠি নিলেন না। আর যেহেতু হাতের দিকে দৃষ্টি পড়ে গিয়ে ছিল তাই) আলোচ্য হাদীস থেকে দুটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বুঝা গেলো-

          প্রথমতঃ মহিলা ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহাগণ রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সামনে আসতেন না। উপরোক্ত মহিলা ছাহাবী রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সল্লাম-এর পবিত্র হাতে চিঠি দিতে গিয়ে পর্দার আড়ালে থেকেই হাতের সামান্য অংশ আগে বাড়িয়ে ছিলেন মাত্র, যার ফলে বুঝা সম্ভব হয়নি যে, হাতটি পুরুষের না নারীর। এখান থেকে সে সব স্ত্রীলোকের শিক্ষা গ্রহণ করা উচিত যারা দুনিয়াদার পীর ফকীরের সামনে বিনা দ্বিধায় আসা যাওয়া করেন। পীরদের দালালেরা তাদেরকে এ ভ্রান্তিতে ফেলে থাকেন যে, উনি তো পীর সাহেব, আল্লাহওয়ালা ও বুযুর্গ মানুষ, (বা খোদ শাইখুল হাদীস সাহেব) ধর্মীয় বাপ। তাদের তো দুনিয়ার ব্যাপারে কোনই অনুভূতি নেই। কাজেই তার সামনে আসতে দ্বিধা কি? লক্ষ্য করুন, রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হলেন সকল মুসলিম নর-নারীর ধর্মীয় পিতা। আদম আলাইহিস্ সালাম থেকে আজ পর্যন্ত তাঁর চেয়ে নেককার কেউ হয়নি হতে পারবেও না। নবী, ওলী, ফেরেশতা, পীর, আউলিয়া, গাউস, কুতুব কেউই তাঁর চেয়ে বড় তো দূরের কথা তাঁর সমপর্যায়েরও বুযুর্গ হতে পারেন না এমনকি পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ বুযুর্গও তাঁর পায়ের ধুলি কণার সমান হতে পারেন না। তাছাড়া আল্লাহ্ পাক তাঁকে মাসুম ও নিস্পাপ বানিয়েছেন, তা সত্ত্বেও মহিলা ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা পত্র হস্তান্তর করতে গিয়ে তাঁর সামনে যেতে এমনকি সম্পূর্ণ হাতটিও আগে বাড়িয়ে দিতে সাহস করেননি এবং রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পক্ষ থেকে তার অনুমতি ছিলনা। সারকথা, যেসব স্ত্রীলোকরা ভ-, নামধারী পীর-ফকীরদের (তথা শাইখুল হাদীস সাহেবের) সামনে আসেন তারা কঠিন গুণাহে লিপ্ত। আর এ জাতীয় পীর ফকীর (তথা শাইখুল হাদীস আজিজুল হক) কস্মিনকালেও দ্বীনদার হতে পারেন না। বরং এরা স্পষ্ট ভ- ও ফাসিক। কাজেই কোন অবস্থাতেই এদের মুরীদ হওয়া জায়িয হবেনা। দুর্ভাগ্যবশতঃ যদি কেউ এদের খপ্পরে পড়ে মুরীদ হয়ে গিয়ে থাকে তাদের জন্য আবশ্যক হবে, এদের (বর্তমান শাইখুল হাদীসের) বাইয়াত ছেড়ে দিয়ে হক্কানী ও দ্বীনদার আলিম বা পীর-মুর্শীদের শরণাপন্ন হওয়া।

          যিনি সত্যিকারের পীর, মুর্শীদ ও পথ প্রদর্শক হবেন, তার জীবনে মুখ্য উদ্দেশ্য হবে নিজ শরীয়তের উপর চলা এবং অন্যকে চালানো। কুরআন-হাদীস অধ্যয়ন করে এবং হক্কানী আলিমদের কাছে জেনে রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সুন্নত ও আদর্শের উপর জীবন যাপন করা এবং এর জন্য শত জীবন উৎসর্গ করে দেয়াই চরম  ও পরম লক্ষ্য। যে সমস্ত পীর ফকীর (শাইখুল হাদীস আজিজুল হক) কুরআন ও হাদীসের উপর আমল করেনা তারা নিজেরাই সঠিক পথ থেকে বিচ্যূত। কাজেই তারা কিভাবে পীর হবার যোগ্য হতে পারে?

          পাঠক! বলার অপেক্ষা রাখেনা যে এই বক্তব্যনুযায়ী বেপর্দা ব্যক্তি ওলী বা পীর হিসেবে যেমন সম্মানিত ও গ্রহণযোগ্য হতে পারেনা তেমনি শাইখুল হাদীস, মুফতি, মাওলানা হিসেবেও একইরূপে বর্জনীয় তা বলার অপেক্ষা রাখেনা।

          আর সে ক্ষেত্রে আলোচ্য বইয়ের লেখক জনাব শাইখুল হাদীস সাহেব (এবং তার সমগোত্রীয় অন্যান্য মুফতী মাওলানারা) যিনি বা যারা এখন বেপর্দা নেত্রীর সাথে একসঙ্গে উঠা বসা করেন, তার সামনা-সামনি অহরহ বসেন, কথা বলেন, এক সাথে ইফতার করেন, গাড়ীতে বসেন, একই মঞ্চে বসেন, একই পোষ্টারে নেত্রীর বুকের মাঝে নিজেদের ঠাঁই নেন তারা যে এখন খোদ ইসলাম থেকে কতদূর বিচ্যূত! তা তথাকথিত শাইখুল হাদীস সাহেবের আলোচ্য লেখা থেকেই বুঝতে আদৌ অসুবিধা হয় কি?

          মূলতঃ তথাকথিত শাইখুল হাদীস গং ডবল ষ্ট্যান্ট বা দ্বিমুখী নীতি পালনে অভ্যস্ত। সাধারণ মুসলমানের কাছে তারা ইসলামের সনাতন দিকটি ঠিকই বয়ান করেন। এমনকি কিতাবও লিখে থাকেন। কিন্তু তাদের লেখা কিতাব থেকেই দলীল দিয়ে যে তাদেরই ধরা পড়তে হবে সে চিন্তা বোধ হয় তারা করে উঠতে পারেননি? এবং এটা যে এতই জঘণ্য মুনাফিকী তা কেবল কিয়ামতের আলামত বলেই গ্রহণ করতে হয়। কারণ মে ১৯৯৯ সালে তিনি আল কুরআনের দৃষ্টিতে মহিলাদের পর্দা রচনা করেন। সেই ১৯৯৯ সালের নভেম্বর মাসেই তিনি প্রকাশ্যে বেপর্দা হওয়া শুরু করেন, চারদলীয় জোট করেন, নারী নেতৃত্ব গ্রহণ করেন।

(ঘ)

          প্রসঙ্গতঃ নারী নেতৃত্ব গ্রহণ করার ক্ষেত্রে উল্লেখ করার মত ঘটনার অবতারণা করতে হয়। ঘটনার তারিখ ১৯৮৯ সালের এপ্রিল মাস। কিশোরগঞ্জ তারাইল বাজার থেকে মুহম্মদ আব্দুল হাই তাকে প্রশ্নটি করেছিলেন। প্রশ্নটি ছিলো, “কান মহিলাকে মুসলিম রাষ্ট্রের রাষ্ট্রপ্রধান বানানো শরীয়ত সম্মত কিনা জানালে কৃতজ্ঞ হব। উত্তরে সাইত্রিশ বছরের তথাকথিত ইসলামী পত্রিকার সম্পাদক তখন লিখেছিলেন-

          উত্তরঃ কোন মুসলিম শাসনকর্তা যদি ইসলামী অনুশাসন অনুসরণ করতে যান তবে তার সর্ব প্রথম কর্তব্য দাঁড়ায় স্বীয় ইমামতিতে নামায প্রতিষ্ঠা করা ও জিহাদে নেতৃত্ব দেয়া।  এ দুটি ক্ষেত্রেই কিন্তু নারীর নেতৃত্ব চলেনা। একজন মহিলা যত বড় বিদুষী ও পূণ্যবর্তীই হোননা কেন, তাঁর পক্ষে নামাযের ইমামতি করার প্রশ্ন আসে না। সেমতে কোন নারীর পক্ষে ইসলামী দেশের সর্বোচ্চ শাসন ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়া ইসলামী শরীয়ত সমর্থিত নয়।

          এক হাদীসে রয়েছে, আল্লাহ্ পাক-এর রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, তোমাদের  শাসকগণ যখন হবে কৃপন আর শাসন ক্ষমতা গিয়ে পড়বে নারীদের হাতে তখন দুনিয়ার পৃষ্ঠদেশ অপেক্ষা অভ্যন্তর ভাগই তোমাদের জন্য অধিক মঙ্গলজনক বলে বিবেচিত হবে।”

          হযরত রসূলে করিম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সময়কালে পারস্য সম্রাট কিসরার এক কন্যাকে সিংহাসনে বসানো হয়েছিল। এ সংবাদ শুনে আল্লাহ্ পাক-এর রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া  সাল্লাম মন্তব্য করেছিলেন, যে জাতি তাদের শাসনকর্তৃত্ব নারীদের হাতে তুলে দেয়, তাদের কখনও মঙ্গল হতে পারে না।”

          উপরোক্ত দুটি হাদীসই ছহীহ্ এবং হাদীসের প্রায় সব কয়টি বিখ্যাত কিতাবে রয়েছে।

          বলাবাহুল্যঃ তার এ বক্তব্যের সাথে তখন একমত ছিলেন আজকের ইসলামী ঐক্যজোট কথিত সবাই। তথাকথিত শাইখুল হাদীস মুফতী কেউই এর বিপরীত মত পোষণ করতেন না। সবাই উচ্চকিতভাবে নারী নেতৃত্বের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলতেন। এমনকি আজকে ইসলামের জামায়াতের নামে তথাকথিত যে ইসলামী দলটি দুটি মন্ত্রীত্ব বগলদাবা করেছে, সে মন্ত্রীদ্বয়ও অতি বুলন্দ স্বরে নারী নেতৃত্বের বিরুদ্ধে মুন্ডুপাত করতেন। এমনকি তাদের পোষ্য মাওলানা এমপি তাফসীরুল কুরআনের নামে রাজনৈতিক বয়ানে যেরূপ তর্জন গর্জন করে নারী নেতৃত্বের বিরুদ্ধে গলাবাজি করতেন, তাতে অনুমিত হত তাদের গলাবাজিতেই এই দেশ হতে নারী নেতৃত্ব তিরোহিত হবে। এবং এ ব্যাপারে তাদের বক্তৃতা বিবৃতির পত্রিকার কাটিংই কেবল নয় বরং তাদের লেখা পুস্তক পুস্তিকার সংখ্যা এত বেশী যে তা উল্লেখ করতে হলে এক সুবিশাল কলেবরের প্রয়োজন হবে তথা আলাদা এক পুস্তকই প্রকাশের অবকাশ হয়ে পড়বে।

(ঙ)

          প্রাণীজগতে গিরিগিটি নামক একটি প্রাণীর অস্তিত্ব রয়েছে। এরা ঘন ঘন রং পাল্টাতে পারঙ্গম। এখানে বর্ণিত তথাকথিত ইসলামী রাজনীতিকরা ইসলামী রাজনীতির নামে তাদের ভোল পাল্টাতে গিরিগিটির চেয়েও বেশী পারঙ্গমতা প্রদর্শন করেছে। দুনিয়াবী বিষয় হলে এতটুকু আপ্ত বাক্যেই শেষ করা যেত। কিন্তু এ যে ইসলামের বিষয়। এ যে ইসলাম নিয়ে ছিনিমিনি খেলা। এ যে ইসলাম বিক্রি করে, ঈমান বিক্রি করে এম পি, মন্ত্রী হওয়ার প্রবণতা। আল্লাহ্ পাক ইরশাদ ফরমান, “তোমরা সামান্য মূল্যে আল্লাহ্ পাক এর আয়াত শরীফ বিক্রি করোনা।”

          মূলতঃ এ আয়াত শরীফ থেকে প্রতিভাত হয় যে প্রতি শতাব্দীতেই সামান্য মূল্যে আয়াত শরীফ বিক্রয়কারী মহল থাকবে। আর এ মহলটি ঐ মহলই যারা আয়াত শরীফ সম্পর্কে ঠিকই অবগত। যারা সমাজে শাইখুল হাদীস, মুফতি, মাওলানা, মোফাস্সির, পীর সাহেব হিসেবে বহুল পরিচিত। এমনকি এদের অনেকেই প্রথম জীবনে হক্ব থাকলেও পরবর্তী জীবনে ক্ষমতা ও অর্থের লোভে গোমরাহ হয়ে যাওয়াই হয় এদের স্বাভাবিক পরিণতি।

          প্রসঙ্গতঃ বাদশাহ্ আকবরের আমলের মোল্লা মোবারক নাগুরী, মাখদুম উল মূলক, আবুল ফজল, ফৈজী, ইত্যাদির মত আজকের জাতীয় খতীব, শাইখুল হাদীস, মুফতি, মাওলানা, মুফাস্সিরে কুরআন ইত্যাদির একই অবস্থা।

          পাঠক! উপরে বর্ণিত সংক্ষিপ্ত উদাহরণ ও তথ্য পেশের পর আজকে আমরা গভীর দুঃখবোধের সাথে গ্রহণ করতে বাধ্য হচ্ছি যে, বাদশাহ্  আকবরের আমালের মোল্লা মোবারক নাগরী ও তার দু পুত্র আবুল ফজল ও ফৈজী যারা তাদের জীবদ্দশায় এক সময় তাদের ইলমের জন্য খুবই খ্যাত ছিল, ছূফী মনোবৃত্তিরও ছিল। যারা পীড়া-পীড়ি করা সত্ত্বেও সামান্য হাদিয়া গ্রহণ করত না, তারাই পরবর্তীতে এমনভাবে পদস্খলিত হয় যে বাদশাহ আকবরের মত খোদাদ্রোহীর কাছ থেকে অর্থ লাভের মোহে আকবরের দ্বীন-ই-ইলাহীর মত চরম ইসলাম বিরোধী ও বিদ্বেষী ধর্মমতকে তারা সমর্থন করে ও সক্রিয় তৎপরতা চালায়। শুধু মোল্লা মোবারক নাগুরী, তার দু’পুত্র আবুল ফজল ও ফৈজীই নয় সে যুগে প্রায় সব বিখ্যাত জাহিরী মাওলানারাই বাদশাহ আকবরের রাজত্বের ক্ষমতার ও অর্থের লোভে মোল্লা মোবারক নাগুরী, আবুল ফজল ও ফৈজীকেই অনুসরণ করেছিল বাদশাহ আকবরের জঘন্য মুরতাদীও কুফরী মতবাদ দ্বীন-ই-ইলাহীকে তারা জায়িয করেছিল।

(জ)

া সুতরাং সে ইতিহাসের ধারাবাহিকতায় একইভাবে আজকের তথাকথিত জাতীয় খতিব যখন জোট সরকারের বর্ষপূর্তির জন্য শুকরিয়া আদায় করেন; জোট সরকারের নেতৃত্বে গত এক বছর মানুষ শান্তিতে ছিল বলে উল্লেখ করেন, আর সে শুকরিয়ার দ্বারা যেহেতু হাদীস শরীফে স্পষ্টভাবে নিষেধ ঘোষিত নারী নেতৃত্বের সরকারকে জায়িয করা হয়, ইহুদী-নাছারার গণতন্ত্র দ্বারাই মানুষ শান্তিতে ছিল বলে বলা হয়, দেশে চলমান সব অনৈসলামী কাজকে জায়িয বলা হয়, তখন বলতে হয় যে, তার মত বয়োজ্যেষ্ঠ খতীব নামধারীর মাঝে আর আকবরের আমলের কথিত বয়োজ্যেষ্ঠ মোল্লা মোবারক নাগুরীর মধ্যে পার্থক্য কোথায়?

          া নিজের হাতে পর্দা সম্পর্কে কিতাব রচনা করে, ছবি তোলা, পদপ্রার্থী হওয়া তথা নির্বাচন করা হারাম সে সম্পর্কে হাদীস শরীফের বঙ্গানুবাদ করে রচনা করে নিজেই আবার একসাথে মহিলা নেত্রীর সাথে ইফতার করা, পাশাপাশি চেয়ারে বসে বৈঠকের পর বৈঠক করা, একই গাড়ীতে পাশাপাশি চলাফেরা করা, ব্যক্তি তথা কুরআন শরীফে ঘোষিত বেপর্দাকে জায়িযকারী ব্যক্তি। তথাকথিত শাইখুল হাদীস আর বাদশাহ আকবরের আমলে কুরআন শরীফে নিষিদ্ধ ঘোষিত মদকে জায়িযকারী আবুল ফজলের মধ্যে ফারাক কোথায়?

          া বাদশাহ আকবরের আমলের মোল্লা আব্দুল্লাহ সুলতানপুরী যাকে মখদুম-উল-মূলক উপাধি দেয়া হয়েছিল। যাকাত না দেয়ার জন্য স্ত্রীর কাছে সম্পদ দিয়ে এক বৎসর হবার আগেই যে তা ফিরিয়ে নিত এবং সরকারী কোষাগার হতে যে সে আমলে তিন কোটি স্বর্ণমুদ্রা চুরি করেছিল তার মাঝে আর আজকের জোট সরকারের বি-বাড়িয়ার তথাকথিত মুফতী এম.পি যে এক গাড়ী ক্রয়ে চল্লিশ লক্ষ টাকা চুরিতে ধরা পড়ে- এ দুয়ের মধ্যে বিভেদ কোথায়?

          মোল্লা শিরী নামে তৎকালীন তথাকথিত বিখ্যাত আলিম, সাহিত্যেও যার ভাল দখল ছিল, সংস্কৃত গ্রন্থ ফার্সীতে অনুবাদ তথা সম্পাদনা করার জন্য যে নিয়োজিত ছিল, যখন সে অবহিত হল আকবর প্রতিদিন সূর্যের দিকে তাকিয়ে এক হাজার নাম জপ করে তখন সে তাকে খুশি করার উদ্দেশ্যে সূর্যের প্রশস্তিসূচক এক হাজার লাইনের কবিতা রচনা করে দেয়; এই সম্পাদক আর আজকের তথাকথিত ইসলামী পত্রিকার সম্পাদক বর্তমানে খ-িত ও ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব তিনি যখন দেখলেন বর্তমান নারী নেতৃত্ব ক্ষমতায় আসীন তখন তার কৃপা লাভের আশায় এপ্রিল ১৯৮৯ এ স্বলিখিত ফতওয়া নারী নেতৃত্ব বিলকুল হারাম এর পরিবর্তে ২০০২ এ নিজেই আবার লিখলেন নারী নেতৃত্ব নাজায়িয নয়। এতদ্বপ্রেক্ষিতে আকবরের আমলের বিশিষ্ট উলামায়ে ‘ছূ’ সম্পাদক মোল্লা শিরী আর আজকের তথাকথিত ইসলামী পত্রিকার সম্পাদক মাহিউদ্দীন এর মধ্যে ফারাক কোথায়?

          া বাদশাহ আকবরের সময় অন্যতম নামধারী পীর ছিল শায়েখ আমানউল্লাহ পানিপথী। হযরত শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিস দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি তার সম্পর্কে বলেন, শায়খ আমানউল্লাহ পানিপথীর সম্পর্ক ছিল বাতিলপন্থী মালামাতিয়া সিলসিলার সাথে। পাশাপাশি আজকের তথাকথিত ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনের মুখপাত্রের সম্পর্ক হল খ্রীষ্টান প্রোটেষ্ট্যান্টদের সাথে। তাদের মতবাদ মৌলবাদের সাথে।

          সুতরাং সে আমলের গোমরাহ আমানউল্লাহর সাথে আর আজকের তথাকথিত ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনের মুখপাত্র মৌলবাদের প্রবক্তা চরমোনাইর পীর এর সাথে অমিল কোথায়?

          া কাজী আবদ-উস-সামী আকবরের সময়ের বিচারপতি ছিল। সে সুদ-ঘুষ ইত্যাদি জায়িয মনে করতো। কাজেই তার সাথে আর আজকের কৃষি ব্যাংকের সুদ জায়িযকারী মাওলানা কৃষিমন্ত্রীর সাথে পার্থক্য কোথায়?

          া তখন আব্দুর রহমান নামে তথাকথিত এক পীর ছিল যে পুনরুত্থান দিবসে বিশ্বাসী ছিলনা। পাশাপাশি বর্তমান জামানার একটি ঐতিহ্যবাহী সিলসিলার তথাকথিত এক কায়েমমোকাম দাবীদার রয়েছে যে মুখে তার বাবা-দাদার নামে মাহাত্ম বর্ণনা করতে ও তাদের নামে সম্মান-অর্থ ভিক্ষা করলেও তাদেরই প্রণীত মত-পথ বিশ্বাস করেনা। কাজেই এ দুয়ের মাঝে তফাৎ কোথায়?

          অতএব, পাঠক! একথা এখন দ্বিধাহীন চিত্তে বলতে হয় যে, কেবল বাদশাহ আকবরের যুগেই মোল্লা মোবারক নাগুরী, আবুল ফজল, মখদুম উল মূলক, মোল্লা শিরী, আমানউল্লাহ পানিপথী, কাজি আব্দুস সামী নয় আজকেও একইভাবে তাদের কায়েম মোকাম তথাকথিত জাতীয় খতীব, শাইখুল হাদীস, মুফতী, এমপি, মাওলানা, সম্পাদক, ইসলামী দলের মুখপাত্র, মাওলানা মন্ত্রী ইত্যাদির অস্তিত্ব অত্যন্ত সক্রিয়ভাবে বিরাজমান।

          পরিশেষে বলতে হয় যে, আকবরের উল্লিখিত আমলের উলামায়ে ‘ছূ’রা একেক জন একেক গোমরাহী, বিদয়াতী ও কেলেঙ্কারীতে দক্ষতা দেখালেও একটি বিষয়ে তারা একজোট হয়ে কাজ করেছে। সেটি হল তার দ্বীন ই-ইলাহী প্রবর্তনে ও প্রচলনে সক্রিয় সমর্থন ও সহযোগিতা করা।

          ঠিক একইভাবে বর্তমান উলামায়ে ‘ছূ’রাও একেকজন একেক কেলেঙ্কারীতে পটুত্ব জাহির করলেও একটি বিষয়ে তারা একজোট হয়েছে। সেটি হল বাদশাহ আকবরের উলামায়ে ‘ছূ’দের দ্বীন-ই-ইলাহীর আদলে দ্বীন-ই-জুমহুরী তথা দ্বীনে গণতন্ত্র প্রবর্তনে এক হওয়া।

          উল্লেখ্য, দ্বীন-ই-ইলাহীর রীতি ছিল, মদ খাওয়া, শুকর খাওয়া, তামিমী সিজদা করা ইত্যাদি ইত্যাদি।

          সে প্রেক্ষিতে একথা ভাবার অবকাশ নেই যে আজকের যুগের উলামায়ে ‘ছূ’রা বুঝি তাদের চেয়ে অপেক্ষাকৃত ভাল অথবা আজকের উলামায়ে ‘ছূ’দের দ্বীন-ই-জুমহুরীর রীতি বুঝিবা তাদের দ্বীন-ই-ইলাহীর চেয়ে অপেক্ষাকৃত কম খারাপ।

          মূলতঃ ব্যাপারটি মোটেও তা নয়। কারণ বর্তমানের শাইখুল হাদীস, মুফতী, মাওলানা, পীর সাহেব, জাতীয় খতীব নামধারীদের সমন্বয়ে প্রবর্তিত দ্বীনে গণতন্ত্র তথা দ্বীনে জুমহুরীর ফতওয়া হচ্ছে ছবি তোলা, সম্পূর্ণ জায়িয যদিও শতাধিক হাদীসে তা নিষিদ্ধ। বেপর্দা হওয়া জায়িয; যদিও কুরআন শরীফে তা নিষিদ্ধ। লংমার্চ, হরতাল, মৌলবাদ, ব্লাসফেমী আইন, নির্বাচন ইত্যাদি সবই জায়িয; যদিও কুরআন-সুন্নাহহে এগুলো সবই নিষিদ্ধ করা হয়েছে। যা ইতোমধ্যে মাসিক আল বাইয়্যিনাত-এ শত শত দলীল দিয়ে প্রমাণ করা হয়েছে।

          আরো উল্লেখ্য, বর্তমান যামানার উলামায়ে ‘ছূ’রাও বাদশাহ আকবরের আমলের উলামায়ে ‘ছূ’দের মতই যামানার পরিবর্তনের দোহাই দিয়ে দ্বীন ইসলামের পরিবর্তে দ্বীন-ই-ইলাহীর আদলে দ্বীনে গণতন্ত্র তথা দ্বীনে জুমহুরী প্রবর্তন করছে। অথচ আল্লাহ্ পাক বলেন, অতএব আপনি আল্লাহ্ পাক-এর বিধানে কোন পরিবর্তন পাবেন না এবং আল্লাহ্ পাক-এর রীতি নীতিতে কোন রকম বিচ্যূতিও পাবেন না। (সূরা ফাতির/৪৩)

          অতএব আমাদেরকে যদি সত্যি আল্লাহ্ পাককেই ভয় পেতে হয় তবে তার কালামের আলোকেই বলতে হয় যে এরা স্পষ্ট উলামায়ে ‘ছূ’। যাদের সম্পর্কে হুজ্জাতুল ইসলাম হযরত ইমাম গাজ্জালী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেছেন, “কিছুক্ষণ সময় উলামায়ে ‘ছূ’দের দোষত্রুটি তুলে ধরা ষাট বছর বেরিয়া নফল ইবাদতের চেয়ে শ্রেষ্ঠ।”

-মুহম্মদ কাওছার জামান, ঢাকা।

প্রসঙ্গঃ গণতন্ত্র; এখনই চরম সময়, বিষয়টি ভাবিবার- ১০

একটি অভূতপূর্ব ওয়াজ শরীফ এবং কম্পিউটারে কুরআন শরীফ, মাজার শরীফের উপরে ভাসমান দৃশ্য ও তাঞ্জানিয়ার সেই ছেলের কথা

প্রসঙ্গঃ দরসে বুখারীর পঞ্চদশ বছর পূর্তি নামধারী জাহিরী আলিমদের ডামাডোলের বিপরীতে মুজাদ্দিদুয্ যামানের পরিচয়

আকবরের আমলের উলামায়ে ‘ছূ’দের উত্তরাধিকারী মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে দ্বীন-ই-ইলাহীর আদলে দ্বীন-ই-জুমহুরী প্রচলনে তারা এক হয়েছে-৫

শুধু আজকের প্রেক্ষাপটে নয়, অতীত ইতিহাস হতেই ইহুদী-খ্রীষ্টানরা মুসলমানদের সবচেয়ে বড় শত্রু মুসলিম সন্ত্রাসবাদ নয়, মার্কিন হামলার পিছনে কি ইহুদী-খ্রীষ্টানরাই দায়ী নয়? -১৪