ইমামুল মুসলিমীন, মুজাদ্দিদে মিল্লাত ওয়াদ দ্বীন, হাকিমুল হাদীছ, ইমামুল আইম্মাহ, মুহ্ইস সুন্নাহ ইমামে আ’যম সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি-৩০

সংখ্যা: ২৪৩তম সংখ্যা |

ইমামুল মুসলিমীন, মুজাদ্দিদে মিল্লাত ওয়াদ দ্বীন, হাকিমুল হাদীছ, ইমামুল আইম্মাহ, মুহ্ইস সুন্নাহ ইমামে আ’যম সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি-৩০

(বিলাদাত শরীফ- ৮০ হিজরী, বিছাল শরীফ- ১৫০ হিজরী)

সমঝ ও বিচক্ষণতা (৭)


ইমামুল মুসলিমীন, মুজাদ্দিদে মিল্লাত ওয়াদ দ্বীন সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি হক্ব কথার খিলাফ করলে কোন আমীর-উমারাদের বিপক্ষে কথা বলতে পরওয়া করতেন না। কিন্তু যেহেতু ফতওয়া দান করা ফরযে কিফায়া এবং কুফা শহরে আরো মুফতী ছাহেবান মওজুদ ছিলেন। সেজন্য শহরের শাসনকর্তার আদেশ মেনে নিয়ে ফতওয়া দান করা হতে সাময়িকভাবে বিরত রইলেন।

উল্লেখ্য যে, ইমামুল মুসলিমীন, মুজাদ্দিদে মিল্লাত ওয়াদ দ্বীন, সাইয়্যিদুনা ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি প্রায়শঃ বলতেন, যদি সম্মানিত ইলিম মুবারক প্রচার-প্রসার করা থেকে বিরত থাকলে শাস্তির ভয় না থাকতো তাহলে আমি কখনো মুখ মুবারক খুলতাম না।

একদিন তিনি নিজ হুজরা শরীফে বসেছিলেন। উনার আদরের মেয়ে উনাকে ফতওয়া জিজ্ঞাসা করলেন। আমি রোযা রেখেছিলাম। হঠাৎ দাঁত মুবারক হতে রক্ত বের হলো। আর তা থুথুর সাথে আমার গলার নীচে চলে গেছে। এখন আমার রোযার কোন ক্ষতি হয়েছে কিনা?

তিনি বললেন, ‘মা’ আমাকে ফতওয়া দান করা হতে বিরত থাকতে বলা হয়েছে। কাজেই, আপনি আপনার ভাই হযরত হাম্মাদ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার কাছ থেকে ফতওয়া জেনে নিন।

যা হোক কয়েকদিনের মধ্যেই কুফা শহরের গভর্ণরের নিকট কোন একটি বিষয়ে জটিল- কঠিন মাসয়ালা উপস্থিত হলো। তখন তিনি ইমামুল মুহাদ্দিসীন, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার স্মরণাপন্ন হলেন। আর সেদিন হতে আবার উনার ফতওয়া দানের অনুমতি লাভ হলো। (সীরাতে নু’মান-৬০)

ª  যুহাক সে সময়ের একজন প্রভাব-প্রতিপত্তিশালী ব্যক্তি ছিল। এক সময় সে কুফা শহরের সকল অধিবাসীকে নির্বিচারে কতল (হত্যা) করার আদেশ জারী করল। ইমামুল মুহাদ্দিসীন, মুজাদ্দিদে মিল্লাত ওয়াদ দ্বীন, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি এ খবর শুনে দ্রুত তার নিকট গেলেন। জিজ্ঞাসা করলেন, “এ সকল লোক কি অপরাধ করেছে?”

যুহাক বললো, এরা মুরতাদ (ধর্মত্যাগী) হয়েছে। সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বললেন, এরা আগে অন্য কোন্ ধর্মে ছিল যা তারা এখন পরিত্যাগ করেছে? নাকি তারা সবসময় এ ধর্মেই আছে? যুহাক বললো, বিষয়টি আমাকে ভালোভাবে বুঝিয়ে দিন।

তখন ইমামুল মুসলিমীন, মুজাদ্দিদে মিল্লাত, ওয়াদ দ্বীন সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি মুরতাদ হওয়ার মাসয়ালা বিস্তারিত আলোচনা করে বুঝিয়ে দিলেন। আলোচনা শুনে যুহাক বললো, নিশ্চয়ই আমার ভুল হয়েছে। আর সাথে সাথে সঙ্গী-সাথীদেরকে তলোয়ার কোষাবদ্ধ করার হুকুম দিলেন। সবাই তলোয়ার কোষাবদ্ধ করলো। ফলে অনেক লোকের জান মালের হিফাজত হলো। উদ্ভুত ফিৎনা ফ্যাসাদ নিরসন হলো। (সীরাতে নু’মান-৫৭)

ª আল্লামা আব্দুল মজীদ আল খাওয়ারজামী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি হযরত মুহম্মদ ইবন মুক্বাতিল রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণনা করেন যে, একদা এক ব্যক্তি ইমামুল মুসলিমীন, মুজাদ্দিদে মিল্লাত ওয়াদ দ্বীন সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মুবারক খিদমতে হাজির হলো। জিজ্ঞাসা করলো, হে ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি, ঐ ব্যক্তি সম্পর্কে আপনার অভিমত কি, যে ব্যক্তি জান্নাতের আশা করেনা, জাহান্নামকে ভয় করেনা, মৃত জন্তু খায়, রুকু-সিজদা ব্যতীত নামায আদায় করে, যা দেখেনা সে সম্পর্কে সাক্ষ্য প্রদান করে, হক্বের প্রতি দুশমনী রাখে, আর ফিৎনা ফ্যাসাদকে মুহব্বত করে?

ইমামুল মুসলিমীন, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বললেন, ঐ ব্যক্তি মু’মিন। তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টি আশা করে, জান্নাতের আশা করে না। মহান আল্লাহ পাক উনাকে ভয় করে, জাহান্নামকে ভয় করে না। নিজের উপর মহান আল্লাহ পাক উনার তরফ থেকে জুলুমকে ভয় করেনা। কেননা মহান আল্লাহ পাক তিনি জুলুম করেন না। মাছ ও টিড্ডি খায় এবং মৃত ব্যক্তির জানাযার নামায আদায় করে। তাওহীদ বা একত্ববাদের সাক্ষ্য দেয় এবং মৃত্যুর প্রতি দুশমনি প্রদর্শন করে অথচ এটা সত্য। নিজ আওলাদ-ফরযন্দ এবং মাল-সম্পদকে পছন্দ করে, অথচ এ দুটো ফিৎনা-ফ্যাসাদ।

ইমামুল মুসলিমীন, মুজাদ্দিদে মিল্লাত ওয়াদ দ্বীন, হাকীমুল হাদীছ, ইমামুল আইম্মাহ, মুহইউস সুন্নাহ সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার যবান মুবারকে এরূপ জাওয়াব শুনে ঐ ব্যক্তি অত্যন্ত খুশি হলেন। উনার সম্মানার্থে দাঁড়ালেন এবং উনার মাথা মুবারকে বুছা দিলেন। বললেন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, অবশ্যই আপনি সম্মানিত ইলিম উনার সাগর। সুবহানাল্লাহ! (ইমাম আবু হানীফা উনার অবদান-৫৩)