ইসলাম

সংখ্যা: ০১ম সংখ্যা | বিভাগ:

ইসলাম

মুহম্মদ আবদুস সামাদ


ইসলাম শব্দের ধাতুগত অর্থ শান্তি ও নিরাপত্তা। ধর্মীয় পরিভাষায় ইসলামের অর্থ হচ্ছে সারা বিশ্বের সৃষ্টিকর্ত্তা করুনাময় মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট অবনত মস্তকে আত্ম সমর্পন করা ও উনার আদেশ বা বিধি নিষেধগুলিকে আন্তরিকতার সাথে পালন করা।

alihsan

সৃষ্টির জন্মলগ্ন থেকে এ ধরণীর বুকে প্রতিটি জাতি বা প্রতিটি গোত্রে, মহান প্রভু সত্য ধর্ম দিয়ে অসংখ্য নবী বা রসূল প্রেরণ করেছেন। ইসলাম ব্যতীত এমন কোন ধর্ম নেই যাতে পরিপূর্ণতা বিদ্যমান আছে। পবিত্র কুরআন শরীফ উনার ভাষায় “ইন্নাদ্দীনা ইনদাল্লাহিল ইসলাম” অর্থঃ “একমাত্র ইসলাম ধর্মই আমার মনোনীত।” এ প্রসঙ্গে আরও বলেন, “আল ইয়াওমা আকমালতু লাকুম দিনাকুম, ওয়া আত্মামতু আলাইকুম নি’মাতি রাদিতু লাকুমুল ইসলামাদীনা” অথঃ “আজকের দিনে পরিপূর্ণ করেছি তোমাদের জীবন বিধানকে এবং সম্পূর্ণ করেছি আমার নিয়ামতকে আর তোমাদের জীবন বিধানরূপে ইসলামকে পছন্দ করেছি।” এ পবিত্র আয়াত শরীফ প্রসঙ্গে একজন ইহুদী দ্বিতীয় খলিফা হযরত ওমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে বলেছিলেন, হে খলিফাতুল মুসলিমীন! আপনাদের ধর্মগ্রন্থে এমন একটি আয়াত শরীফ নাজিল হয়েছে যা পূর্ববর্ত্তী কোন আসমানী কিতাবে নাজিল হয়নি। আমাদের ধর্মে নাযীল হলে আমরা এ দিনটিকে আনন্দের সাথে পালন করতাম। উত্তরে হযরত উমর ইবনুল খত্তাব আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, “হে ইহুদী তুমি কি জান সে দিনটি কোন দিন? সে দিনটি হ’ল আরাফর দিন, যা মুসলিম মিল্লাতের নিকট খুবই পবিত্র এবং সে দিনটি ছিল শুক্রবার, আমাদের আনন্দের দিন।”

একজন ইহুদীর এ কথাই নয়; অনেক নবী- রসূল আলাইহিস সালামগণও এ ধর্মের উম্মতের মর্যাদা লাভের জন্য মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট ফরিয়াদ করেছিলেন। মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম উনার প্রার্থনা মঞ্জুর করেছেন। হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম উনাকে চতুর্থ আসমানে তুলে নিয়েছেন, যিনি দ্বিতীয়বার পৃথিবীতে আসবেন, নবী হিসেবে নয়, শেষ নবী নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উম্মত হিসেবে। মহান আল্লাহ পাক উনার অশেষ রহমত আমাদের প্রতি যে, আমরা জন্মগতভাবে ইসলামকে আমাদের ধর্মরূপে পেয়েছি। তার সম্পূর্ণ শুকরিয়া আদায় করা আমাদের কারও পক্ষে আদৌ সম্ভব নয়। তবে ইসলামের আদেশ। নিষেধগুলোকে যথাযথভাবে পালন করি তবে হয়তো ইসলাম আমাদের ধর্ম বলা সার্থক হবে।

ইসলাম শান্তির ধর্ম। যিনি এ ধর্মের প্রবর্তক উনার জীবন প্রতিটি কুলের প্রত্যেক মানব সন্তানের জন্য উৎকৃষ্ট আদর্শ। যেমন মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কুরআন মজীদে ইরশাদ করেন। “লাক্বাদ কানা লাকুম ফি রাসূলিল্লাহি উসওয়াতুন হাসানাহ” অর্থ : “তোমাদের অনুসরণের জন্য নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জীবন আদর্শই উত্তম।” যে ইসলামের আগমনে শতবর্ষের অন্ধকার দূর হয়েছে পৃথিবী থেকে, পথহারা পেয়েছে সুপথের সন্ধান, ধনী-দরিদ্র, বাদশা-আমীর, সেনাপতি, সিপাহ-সালার সবাই খুঁজে পেয়েছে পথের দিশারী। নারী দাসত্বের শৃঙ্খল থেকে হয়েছে চিরমুক্ত; নীঘোর তিমীর পাপময় জীবন থেকে মানুষ পেয়েছে নিস্পাপময় জীবন। একটি সংক্ষিপ্ত ঘটনা থেকেই আমরা বুঝতে পারি, কেমন পাপময় জীবনকে নিষ্পাপ ও মাসুম করে দেয় ইসলাম।

আরব অন্ধকার যুগে তথা আইয়ামে জাহিলিয়াহ বিরাজমান অবস্থায় মেয়ে সন্তানকে জীবন্ত কবর দেওয়া নিয়ম ছিল। সে জীবন্ত মেয়ে সন্তানের কবর দেওয়া দলের প্রধান ছিলেন হযরত দাহিয়াতুল কাল্বি রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু। ইসলামের সুশীতল ছায়ায় আশ্রয় গ্রহন করে আইয়ামে জাহেলিয়ার হাত থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য তিনি যখন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট আসলেন। ইসলামের দীক্ষায় দীক্ষিত হতে হাত দু’টি বাড়িয়ে দিলেন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দিকে। মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার হাত মুবারক ধরবেন এমন সময় তিনি আবার হাত মুবারক দু’টি গুটিয়ে নিলেন এবং বললেন। হুযূর আমি আরবের বুকে মেয়ে সন্তানকে জীবিত কবর দেওয়া দলের প্রধান। তাছাড়া আমার স্ত্রী আমার অজান্তে একটি মেয়ে সন্তানকে লালন পালন করছিল, ১০/১২ বৎসর বয়সে তা আমার চোখে ধরা পড়ে। মেয়েটির রূপ চেহারায় আমিও পিতৃস্নেহে অভিভূত হয়ে গেলাম। জাহেলিয়ার নীতি আমাকে বার বার তাড়া করতে লাগলো, তুমি আরবের বুকে মেয়ে সন্তান জীবন্ত কবর দেওয়া দলের সর্দার হয়ে পিতৃস্নেহের কাছে হেরে গেলে? পরিশেষে বাধ্য হয়ে মিথ্যে ছলনায় স্ত্রীকে বললাম, মেয়েকে সুন্দর ও পরিপাটি করে সাজিয়ে দাও। তাকে নিয়ে বেড়াতে যাব। মেয়েটিকে নিয়ে মরুময় পথ ধরে অনেক দূরে চলছি। মরুময়পথে আমি ও আমার সন্তানই যাত্রী। মেয়েটির রূপ, লাবণ্যময়ী চেহারা আমাকে উন্মাদ করে তুলছিল। কিন্তু কি করব? জাহিলিয়ার নীতির কাছে হেরে গেলাম। মেয়েটি বললো, আব্বা আমাকে একটু পানি দেন। বললাম, মা একটু অপেক্ষা কর, এ সুযোগেই আমার কবর দেওয়ার লুকাইত যন্ত্রপাতি বের করে মাটি খুঁড়তে শুরু করলাম। অনেক গভীর করে উপরে উঠে এলাম। মেয়েটি তৃষ্ণার্ত নয়নে আমার পানে তাকিয়ে দেখছিল। মেয়েকে বললাম, দেখতো মা, পানি উঠছে কিনা? মেয়েটি অধীর আগ্রহে তাকাতেই দু’চোখ বন্ধ করে মেয়েকে কুপের মধ্যে ফেলে দিয়ে মাটি দিতে শুরু করি। হুযূর! মেয়েটির সে কান্না আর আমাকে আব্বা আব্বা বলে ডাকার শব্দ আমার কানে আজও ভেসে উঠে। বলুন হুযূর, এমন পাপাত্মা পিতা, মেয়ে সন্তানদের জীবিত কবর দেওয়ার যে পাপ আমি করেছি, এমন পাপ নিয়ে ইসলাম কি আমাকে গ্রহন করবে?

হযরত দাহিয়াতুল কাল্বী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার কথা শুনে দয়াল নবী নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দু’চোখ অশ্রুসিক্ত হয়ে উঠলো। তাকিয়ে থাকলেন উনার মুখ পানে। ওহি না আসা পর্যন্ত মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কোন কথা বলেন না। তিনি চুপ করে থাকলেন, এমন সময় হযরত জিব্রাঈল আলাইহিস সালাম তিনি আগমন করেন এবং বলেন, হে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আপনি দীপ্ত কক্তে ঘোষণা করুন, “আল ইসলামু ইয়াহদিমু মাক্বানা ক্বাবলাহু” অর্থঃ “ইসলাম বিগত জীবনের সমস্ত পাপরাশিকে ক্ষমা করে দেয়। এ ঘোষণার পর হযরত দাহিয়াতুল কাল্বী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি ইসলামে দাখিল হলেন। তিনি এমন সুন্দর ও সুদর্শন ছিলেন যে, মানব সুরতের অধিকাংশ সময়ই জিব্রাঈল আলাইহিস সালাম তিনি উনার আকৃতিতে ওহী নিয়ে আসতেন। এমন সুমহান ধর্মে আছি বলে সত্যিই স্বার্থক আমাদের জীবন। তবে এ ইসলামের বিধিনিষেধ বা রোকনগুলি সম্বন্ধে মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যা বলেছেন, ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ উনাদের যে সত্য পথ অবলম্বনে আমাদের জন্য আদর্শ রেখে গেছেন, সে আদর্শেই শান্তি ও নিরাপত্তা বিরাজমান। আমরা আজ সে পথ ও মত হতে অনেক দূরে সরে এসেছি বলেই আমরা লাঞ্ছিত ও অপমানিত।

যে নীতির কাছে সবার হার মানতে হতো সে নীতিতেই আমাদের অনুসরণ এবং অনুকরণে বিশ্বাসী হওয়া উচিৎ ছিল। অত্যান্ত পরিতাপের বিষয়, আজ আমরা বিজাতীয়দের অনুকরণ ও অনুসরণে ব্যতিব্যস্ত। বিজাতীয়দের অনুসরণের ফলে আমরা আজ ইসলাম থেকে বঞ্ছিত। তাই শান্তি ও নিরাপত্তা পাওয়ার আশা করা বৃথা। সমগ্র পৃথিবীতে যে ধর্ম উত্তম, সে জাতিও উত্তম। কারণ কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ আদর্শ বাস্তবায়নের ফলেই মুসলমান বিশ্বজুড়ে খ্যাতি লাভ করেছিল এবং ইসলাম একমাত্র ধর্ম হিসেবে প্রতিষ্ঠিত ছিল। তাই কবি ইকবাল বলেন। কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ আঁকড়ে ধরেছিল বলে মুসলমান ছিল সন্মানীত, আর আজ কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফের বিপরীত চাল-চলনে মুসলমান অপমানীত ও অবহেলীত।

প্রত্যেক মুসলমানের একান্ত কর্তব্য বিজাতীয়দের চাল-চলন পরিহার করা এবং ইসলামের মূলমন্ত্র তথা কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও কিয়াস অনুসারে জীবন গঠন করা। ইসলামের আদেশ-নিষেধগুলোকে আন্তরিকতার সাথে পালন করা। মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদের সকলকে তথা উম্মতী মুহাম্মদীকে ইসলামের পরিপূর্ণ জ্ঞান দান করুন এবং সঠিক পথে চলার তওফীক দান করুন। (আমীন)

আলআছদাকু, আলআত্বহারু, আলআত্বইয়াবু, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নাম মুবারক শেষে সংক্ষেপে (সাঃ, দঃ) দুরূদ শরীফ লিখা প্রসঙ্গে

আওওয়ালু শাফিয়িন, আওওয়ালু মুশাফ্ফায়িন, আওওয়ালু মাঁইইয়ুর্হারিক হালক্বাল জান্নাতি হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে ‘বিশ্বনেতা’, ‘মহামানব’, ‘মহাপুরুষ’, ইত্যাদি শব্দ দ্বারা সম্বোধন করা প্রসঙ্গে

ইমামুল মুরসালীনা, ইমামুন্ নাবিইয়ীনা, ইমামুল উম্মাতি, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিতা আম্মা সাইয়্যিদাতুন্ নিসায়ি আলাল আলামীন হযরত আমিনা আলাইহাস্্ সালাম রচিত সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ না’ত শরীফ প্রমাণ করে যে, তিনি ইলমে গইব-এর অধিকারিণী ছিলেন

আলবাশীরু, আলবালীগু, আলবাদরুল মুনীরু, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আহলিয়াগণ অর্থাৎ উম্মুল মু’মিনীন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুন্না উনাদের ফাযায়িল-ফযীলত ও পবিত্রতা

জালীলুল ক্বদরি, জামীলুয যিকরি, জাওয়ামিউল কালিমি, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উর্ধ্বতন পূর্বপুরুষ উনারা ছিলেন পবিত্র থেকে পবিত্রতম