এক মসজিদের জনৈক খতীবের ভুল এবং আপত্তিকর বক্ত্যব্য

সংখ্যা: ২১৯তম সংখ্যা |

মুহম্মদ রুহুল আমীন

উত্তর শাহজাহানপুর, ঢাকা

 সুওয়াল : ঢাকা শহরের এক মসজিদের জনৈক খতীব বিভিন্ন সময় জুমুয়ার বয়ানে এমন কিছু বক্তব্য প্রদান করেন, যে বক্তব্যগুলি মুছল্লীদের দৃষ্টিতে ভুল এবং আপত্তিকর বলে মনে হয়েছে। বক্তব্যগুলি আসলেই ভুল ও আপত্তিকর হয়ে থাকলে উক্ত খতীবের পিছনে নামায পড়া ঠিক হবে কি-না? পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের আলোকে জাওয়াব দানে বাধিত করবেন।

খতীবের আপত্তিকর বক্তব্যসমূহ নিম্নরূপ :

১। ফেরেশতা আলাইহিমুস সালামগণ উনারা হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনাকে সিজদা করেননি, উনারা সিজদা করেছেন মহান আল্লাহ পাক উনাকে। হযরত আদম আলাইহিস সালাম তিনি ছিলেন ক্বিবলা।

২। বিভিন্ন সময় নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শানে ‘জনাবে মোস্তফা’ শব্দ ব্যবহার করছেন।

৩। হযরত আদম আলাইহিস সালাম হযরত হাওওয়া আলাইহাস সালাম উনার পিতা।

৪। জিনাকারী যার সাথে জেনা করেছে তার কাছে মাফ চাইলে মহান আল্লাহ পাক তিনি মাফ করে দিবেন।

৫। হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম তিনি উনার মায়ের পেটে এক ঘণ্টা ছিলেন।

৬। সকল নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে যেমন মহান আল্লাহ পাক তিনি পরীক্ষা করেছেন, তেমনি হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকেও মহান আল্লাহ পাক তিনি অনেক পরীক্ষা করেছেন।

৭। একদিন হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি একজন ছাহাবী উনাকে মেরেছেন। ওই ছাহাবী তিনি রাগ হয়ে গেলে হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন তুমি এখন কি করবে? ওই ছাহাবী তিনি বললেন, আমি এর প্রতিশোধ নিব। হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার হাতে লাঠি দিলেন। ওই ছাহাবী তিনি বললেন, আমার গায়ে জামা নেই। আপনার গায়ে জামা আছে। হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নিজ শরীর মুবারক-এর জামা মুবারক খুললেন। তখন ওই ছাহাবী হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পেটে চুমু দিয়ে দিলেন।

৮। হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম উনার পায়ে যখন তীর বিদ্ধ হলো, তীর খুলতে না পারায় তিনি নিজেই বললেন: আমি যখন নামাযে দাঁড়াব তখন তোমরা আমার তীর খুলে ফেলবে। কারণ আমার নামাযে খুব ধ্যান হয়।

৯। জুমুয়ার খুতবায় তিনি দীর্ঘদিন বাম হাতে লাঠি ব্যবহার করেছেন। কেউ প্রশ্ন করলে জবাব দেন, বাম হাতে লাঠি ব্যবহার করা সুন্নত। আর ডান হাতে খুতবার কিতাব থাকবে।

১০। তিনি বিভিন্ন সময় নবী ও রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের শানে “মায়ের পেট বা মায়ের পেটে ছিলেন”, এরকম বক্তব্য দিয়েছেন। কথাটা আদবের খিলাফ কিনা?

১১। কারবালার ময়দানে ইয়াযীদের সন্তান হুর ইবনে ইয়াযীদ সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম উনার পক্ষে জিহাদ করে শাহাদাত বরণ করেছেন। ঘটনাটি কি সত্য?

১২। গত ০১.০৮.২০১২ ঈসায়ী তারিখে একটি টিভি চ্যানেলে এক মহিলার প্রশ্নের উত্তরে উক্ত খতীব সাহেব বলেছেন, শুধু মহিলারা একজন মহিলার ইমামতিতে নামায আদায় করতে পারবে। এক্ষেত্রে পুরুষ ইমাম যেমন এক সিজদার সামনে দাঁড়ায় মহিলা ইমাম সেভাবে নয় বরং একই কাতারে মাঝখানে একটু সামনে মহিলা ইমাম দাঁড়াবে।

১৩। অন্য একদিন একই টিভি চ্যানেলে বিতরের নামায প্রসঙ্গে আলোচনা করতে গিয়ে উক্ত খতীব সাহেব বলেছেন যে, হযরত জিবরীল আলাইহিস উনার নূরানী পাখার সংখ্যা ছিল ৭০ হাজার।

জাওয়াব : সুওয়ালে উল্লেখিত খতীবের আপত্তিকর বক্তব্যসমূহের মধ্যে কিছু বক্তব্য সম্পূর্ণরূপে ভুল ও চরম আপত্তিকর; যা পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের বর্ণনার সুস্পষ্ট খিলাফ বা বিরোধী হওয়ার কারণে কুফরী হয়েছে। কিছু বক্তব্য ভুল হওয়ার পাশাপাশি চরম বিভ্রান্তিকর। কিছু বক্তব্য বর্ণনা ও ভাষাগত ভুল। কিছু বক্তব্য চরম অজ্ঞতার শামিল।

বক্তব্যগুলির সঠিক জাওয়াব ধারাবাহিকভাবে অত্র যামানার তাজদীদী মুখপত্র মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ-এ প্রদান করা হলো।

 ১ নম্বর সুওয়াল ও তার জাওয়াব

 ১। সুওয়াল : ফেরেশতা আলাইহিমুস সালামগণ উনারা হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনাকে সিজদা করেননি, উনারা সিজদা করেছেন মহান আল্লাহ পাক উনাকে। হযরত আদম আলাইহিস সালাম তিনি ছিলেন ক্বিবলা।

জাওয়াব : উক্ত বক্তব্য পবিত্র কুরআন শরীফ উনার প্রকাশ্য বিরোধী হওয়ার কারণে কুফরী হয়েছে। যেমন পবিত্র কুরআন শরীফ উনার একাধিক আয়াত শরীফ উনার মধ্যে হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনাকে সিজদা করার বিষয়টি উল্লেখিত হয়েছে। যেমন পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ উনার ৩৪ নম্বর আয়াত শরীফ উনার মধ্যে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

واذ قلنا للملئكة اسجدوا لادم فسجدوا الا ابليس.

অর্থ : “আর যখন আমি হযরত আদম আলাইহিস সলাম উনাকে সিজদা করার জন্য হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে নির্দেশ দিলাম তখনই ইবলীস ব্যতীত সকলেই সিজদা করলেন।”

বর্ণিত আয়াত শরীফ উনার মধ্যে মহান আল্লাহ পাক উনার তরফ থেকে হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদের প্রতি সিজদার হুকুম বা নির্দেশ মুবারক দেয়া হয় অতঃপর হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদের দ্বারা হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনাকে সিজদা করার কথা সুস্পষ্টভাবে বর্ণিত হয়েছে।

এ আয়াত শরীফ উনার তাফসীর বা ব্যাখ্যায় যদিও কোন কোন তাফসীরকারক হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনাকে ক্বিবলা হিসেবে মত প্রকাশ করেছেন। এতে সিজদার হুকুম রদ হয়ে যায় না। বরং যিনি ক্বিবলা বা কা’বা উনাকেই তো সম্মান করতে হবে।

উল্লেখ্য, পবিত্র কুরআন শরীফ উনার দ্বারাই প্রমাণিত যে, হযরত আদম আলাইহি সালাম উনাকে হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা সিজদা করেছিলেন। কেননা পূর্ববর্তী হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের শরীয়তে সম্মানিতজনের প্রতি সম্মানসূচক সিজদা করা বৈধ ছিল। যেমন পবিত্র সূরা ইউসুফ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত হয়েছে, হযরত ইউসুফ আলাইহিস সালাম উনার পিতা-মাতা ও ভাইগণ মিশর পৌঁছার পর হযরত ইউসুফ আলাইহিস সালাম উনাকে উনার ভাইগণ সিজদা করেছিলেন।

 ২ নম্বর সুওয়াল ও তার জাওয়াব

 ২। সুওয়াল : বিভিন্ন সময় নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শানে ‘জনাবে মোস্তফা’ শব্দ ব্যবহার করছেন।

জাওয়াব : সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শান মুবারক-এ শুধুমাত্র ‘জনাবে মোস্তফা’ ব্যবহার করাটা উনার পবিত্রতম শান বা মর্যাদার খিলাফ হওয়ার কারণে কুফরীর অন্তর্ভুক্ত। কারণ অনেকের নাম মোস্তফা রাখা হয়; যাকে লোকেরা জনাব মোস্তফা বা জনাব মোস্তফা ছাহেব বলে সম্বোধন করে থাকে আর ফার্সিতে বললে তো জনাবে মোস্তফা সম্বোধন করতে হবে।

কাজেই, যে নাম ও উপাধি সাধারণ লোকদের জন্যেও ব্যবহৃত হয় এবং সম্বোধন করা হয় সে একই নাম বা উপাধি দিয়ে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সম্বোধন করা কস্মিনকালেও ইসলামী শরীয়ত উনার আলোকে জায়িয হতে পারে না।

যেমন এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

لا تجعلوا دعاء الرسول بينكم كدعاء بعضكم بعضا

অর্থ: তোমরা পরষ্পর পরষ্পরকে যেভাবে সম্বোধন করে থাক সেভাবে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সম্বোধন করো না। (পবিত্র সূরা নূর শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৬৩)

প্রতিভাত হলো যে, উম্মত পরষ্পর পরষ্পরকে যেভাবে বা যে শব্দ দ্বারা সম্বোধন করে থাকে হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে সেভাবে সম্বোধন করা সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ ও কুফরী।

স্মরণীয়, শুধুমাত্র ‘জনাবে মোস্তফা’ এ বাক্য বা শব্দের দ্বারা সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সম্বোধন করলে পরিপূর্ণ আদব রক্ষা হয়না এবং এ বাক্যটি উনার মহানতম শান মুবারক প্রকাশের জন্যে যথেষ্টও নয়।

যদিও সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে লক্বব বা উপাধি মুবারক দিয়ে সম্বোধন করাটা আদবের অন্তর্ভুক্ত। তবে সম্বোধিত লক্বব মুবারক-এর সাথে অবশ্যই ‘ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’ বাক্যটি উচ্চারণ করতে হবে। কেননা পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে রয়েছে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

رغم انف رجل ذكرت عنده فلم يصل على

অর্থ : “ওই ব্যক্তি লাঞ্ছিত হোক; যার নিকট আমার নাম মুবারক নেয়া হয়েছে, অথচ সে আমার প্রতি দুরূদ শরীফ পাঠ করেনা।” (তিরমিযী শরীফ)

এ পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার আলোকে প্রতিভাত হয়েছে যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র নাম মুবারক কিংবা নাম মুবারক উনার পরিবর্তে লক্বব মুবারক যে বলবে এবং যে শুনবে উভয়কে দুরূদ শরীফ অর্থাৎ ‘ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’ পাঠ করতে হবে। এটা ওয়াজিবের অন্তর্ভুক্ত।

৩ নম্বর সুওয়াল ও তার জাওয়াব

 ৩। হযরত আদম আলাইহিস সালাম হযরত হাওওয়া আলাইহাস সালাম উনার পিতা।

জাওয়াব : এ বক্তব্যটি পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের খিলাফ তথা কুফরীর অন্তর্ভুক্ত। পবিত্র কুরআন শরীফ কিংবা পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের কোথাও এমন কোন বর্ণনা কেউ দেখাতে পারবে না যে, যেখানে হযরত হাওওয়া আলাইহাস সালাম উনাকে হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনার সন্তান হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

উপরন্তু হযরত হাওওয়া আলাইহাস সালাম উনার সম্পর্কে পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের মধ্যে যেসব বর্ণনা পাওয়া যায় তাতে স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে যে, হযরত হাওওয়া আলাইহাস সালাম তিনি হলেন হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনার আহলিয়া বা সহধর্মিণী।

কাজেই, আহলিয়া বা সহধর্মিনী উনাকে সন্তান হিসেবে উল্লেখ করা অনুরূপ, যেমন স্বামীকে পিতা হিসেবে উল্লেখ করা যা পবিত্র ইসলামী শরীয়ত উনার আলোকে সম্পূর্ণরূপে কুফরীর অন্তর্ভুক্ত।

হযরত হাওওয়া আলাইহাস সালাম তিনি হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনার আহলিয়া বা সহধর্মিনী ছিলেন। যেমন পবিত্র সূরা নিসা শরীফ উনার ১ নম্বর আয়াত শরীফ উনার মধ্যে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

يايها الناس اتقوا ربكم الذى خلقكم من نفس واحدة وخلق منها زوجها وبث منهما رجالا كثيرا ونساء.

অর্থ : “হে মানুষেরা! তোমরা তোমাদের মহান রব তায়ালা উনাকে ভয় কর যিনি তোমাদেরকে এক ব্যক্তি অর্থাৎ হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনার থেকে সৃষ্টি করেছেন এবং যিনি উনার থেকে উনার সঙ্গিনী উনাকে সৃষ্টি করেছেন। আর উনাদের দুজন থেকে বহু সন্তান-সন্ততি বা নর-নারী বিস্তার করেছেন।”

এ পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে যে-

وخلق منها زوجها

অর্থ : “মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনার থেকে উনার সঙ্গিনী হযরত হাওওয়া আলাইহাস সালাম উনাকে সৃষ্টি করেছেন।”

কাজেই, হযরত আদম আলাইহিস সালাম তিনি হযরত হাওওয়া আলাইহাস সালাম উনার পিতা ছিলেন- এ বক্তব্য পবিত্র কুরআন শরীফ উনার পবিত্র আয়াত শরীফ উনার প্রকাশ্য বিরোধী হওয়ার কারণে সুস্পষ্ট কুফরীর অন্তর্ভুক্ত।

 ৪ নম্বর সুওয়াল ও তার জাওয়াব

 ৪। জিনাকারী যার সাথে জেনা করেছে তার কাছে মাফ চাইলে আল্লাহ পাক তিনি মাফ করে দিবেন।

জাওয়াব : উক্ত বক্তব্য খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার পবিত্র শান মুবারক উনার খিলাফ হওয়ার কারণে চরম বেয়াদবি হয়েছে যা কাট্টা কুফরীর অন্তর্ভুক্ত। কারণ “ব্যভিচারী যার সাথে ব্যভিচার করেছে তার কাছে মাফ চাইলে ক্ষমা করে দিবেন” এমন কথা তিনি কেথাও বলেননি। আর মহান আল্লাহ পাক তিনি কাকে ক্ষমা করবেন এবং কাকে ক্ষমা করবেন না এটা পরিপূর্ণরূপে উনার ইচ্ছা মুবারক উনার উপর নির্ভরশীল।

যদিও যেসব বিষয় হক্কুল ইবাদ বা বান্দার হক্বের সাথে সম্পর্কযুক্ত সেসব বিষয় ক্ষমা করে দেয়ার জন্য মহান আল্লাহ পাক তিনি বান্দার ক্ষমা করে দেয়ার কথা বলেছেন তারপরও মহান আল্লাহ পাক তিনি চাইলে যাদের হক্ব নষ্ট করা হয়েছে বা যাদের প্রতি জুলুম করা হয়েছে তাদেরকে উত্তম প্রতিদান দিয়ে অপরাধী বান্দাদেরকে ক্ষমা করে দিতে পারেন, অর্থাৎ হক্কুল ইবাদের অপরাধও মহান আল্লাহ পাক তিনি যাকে ইচ্ছা তাকে ক্ষমা করে দিতে পারেন। যা বিদায় হজ্জের হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে।

আর ব্যভিচারের অপরাধটি শুধুমাত্র হক্কুল ইবাদের অন্তর্ভুক্ত নয়। সাথে সাথে পবিত্র ইসলামী শরীয়ত উনার আলোকে কঠিন কবীরা গুনাহের অন্তর্ভুক্ত। কারণ ব্যভিচারী ও ব্যভিচারিণী উভয়ে সমান অপরাধী। যার কারণে অবিবাহিত পুরুষ ও অবিবাহিত মহিলা ব্যভিচার কাজে লিপ্ত হলে তাদের উভয়ের শাস্তি একশত দোররা। আর বিবাহিত হলে রজম বা পাথর মেরে মৃত্যুদণ্ডের শাস্তি।

যেমন, এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার কালাম পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-

الزانى والزانية فاجلدوا كل واحد منهما مأة جلدة.

অর্থ : “ব্যভিচারী ও ব্যভিচারিণী উভয়ের (অবিবাহিত হলে) প্রত্যেককেই একশত দোররা শাস্তি প্রদান করবে।” (পবিত্র সূরা নূর শরীফ : আয়াত শরীফ ২)

আর ব্যভিচারী ও ব্যভিচারিণী বিবাহিত হলে তাদের উভয়কে পাথর মেরে মৃত্যুদ- কার্যকর করবে।

যেমন ছহীহ মুসলিম শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে। “মনে রেখো, প্রস্তরাঘাতে কতলের বিধান মহান আল্লাহ পাক উনার কিতাবে সত্য এবং তা বিবাহিত পুরুষ ও নারীর প্রতি প্রযোজ্য- যদি ব্যভিচারের শরীয়সম্মত সাক্ষ্য-প্রমাণ উপস্থিত হয় অথবা গর্ভ ও স্বীকারোক্তি পাওয়া যায়।” (মুসলিম শরীফ ২য় খ-, ৬৫ পৃষ্ঠা)

তবে এ শাস্তি অবশ্যই ইসলামী শরীয়ত উনার নির্ধারিত সাক্ষীর সাক্ষ্য অনুযায়ী কার্যকরী হবে।

স্মরণীয় যে, ব্যভিচারী ও ব্যভিচারিণীর পবিত্র ইসলামী শরীয়ত তথা পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের মধ্যে যে শাস্তির কথা বলা হয়েছে তা কার্যকরী করার জন্য চারজন পুরুষ সাক্ষী থাকতে হবে, যারা স্বচক্ষে উক্ত অবৈধ কার্যকলাপ দেখেছে। এছাড়া এ শাস্তি কার্যকর করার জন্য পবিত্র খিলাফত উনার আওতাভুক্ত কাজী ছাহিব উনার ফায়ছালার মাধ্যমে হতে হবে। অন্যথায় এ শাস্তি অন্যদের তরফ থেকে কার্যকর করা হলে পবিত্র ইসলামী শরীয়ত উনার আলোকে কখনো গ্রহনযোগ্য হবে না। এক্ষেত্রে ব্যভিচারী ও ব্যভিচারিণী এদের জন্য পবিত্র ইসলামী শরীয়ত আলাদাভাবে শাস্তির ব্যবস্থা করেছে, যাকে শরীয়তের পরিভাষায় তাযীর বলা হয়। তাযীরের সীমা হচ্ছে ৩৯টি কিংবা তার চেয়ে কম সংখ্যক বেত্রাঘাত করা। আর উভয়কেই খালিছ তওবা-ইস্তিগফার করানো।

 ৫ নম্বর সুওয়াল ও তার জাওয়াব

 

৫। হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম তিনি উনার মায়ের পেটে এক ঘণ্টা ছিলেন।

জাওয়াব : হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম তিনি উনার মায়ের রেহেম শরীফ উনার মধ্যে এক ঘণ্টা ছিলেন। এ বক্তব্য সম্পূর্ণরূপে দলীলবিহীন ও মনগড়া। দলীলসম্মত জাওয়াব হচ্ছে সন্তান মায়ের রেহেম শরীফ-এ ছয় মাস থেকে দুই বছর পর্যন্ত অবস্থান করে থাকে। এটা হানাফী মাযহাব মুতাবিক। যেমন বর্ণিত রয়েছে, হযরত ইয়াহইয়া আলাইহিস সালাম এবং হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম উনারা উনাদের আম্মা আলাইহাস সালাম উনাদের রেহেম শরীফ উনার মধ্যে ছয় মাস করে অবস্থান করেছিলেন। অনুরূপভাবে হযরত ইমাম হাসান আলাইহিস সালাম এবং হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম উনারা উনাদের আম্মা সাইয়্যিদাতু নিসায়ি আহলিল জান্নাহ হযরত ফাতিমাতুয যাহরা আলাইহাস সালাম উনার পবিত্র রেহেম শরীফ উনার মধ্যে ছয় মাস করে অবস্থান করেছিলেন।  আর যিনি শাফিয়ী মাযহাবের ইমাম হযরত ইমাম শাফিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার মায়ের রেহেম শরীফ উনার মধ্যে দুই বছর অবস্থান করেছিলেন।