তাহারা দাবী করিয়া থাকেন- দেশের আলিম-উলামা বলিতে যাহা কিছু বুঝায় সব তাহারাই। তাহাদের মাঝে চল্লিশ বৎসর যাবৎ বুখারী শরীফের দরস দেনেওয়ালা রহিয়াছেন। পরলোকগত আমিরুশ শরীয়তের (?) জামাতা তথা মুফতী ছাহেব রহিয়াছেন। ইহা ছাড়া আর এক দাবিকৃত ইসলামী মাসিকের সম্পাদকও রহিয়াছেন। সম্প্রতি অবশ্য তাহার পদমর্যাদার খানিকটা ঘাঁতি সাধিত হইয়াছে। আগে দাবীকৃত অপেক্ষাকৃত বৃহৎ ইসলামী ঐক্যজোটের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যানের পদ হইতে এখন তিনি একটি খন্ডিত ইসলামী ঐক্যজোটের সহ-সভাপতি পদে আসন পাইয়াছেন। তাহার এতদিনের শ্রদ্ধেয় চেয়ারম্যান এখন তাহার দৃষ্টিতে বিচ্যুত ব্যক্তিতে পরিণত হইয়াছেন।
প্রসঙ্গতঃ এইক্ষেত্রে একটি প্রশ্ন আসিয়া যায়। তাহা হইলো এতদিন যাবৎ যাহারা ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান, সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান ও মহাসচিব মহোদয়কে একত্রে মুহব্বত করিতেন, হক্ব বলিয়া প্রচার করিতেন এখন যখন উহাদের মাঝে দুই ভাগ হইয়া গেল সেহেতু এইবার তো আর তাহারা এই দুই দলকেই একসাথে হক্ব বলিয়া মনে করিতে পারিতেছেনা। অতএব, যাহারা এতদিন যাবৎ এইসব ব্যক্তিবর্গকে ইসলামী নেতা মানিতেন এখন তাহাদের বিপাকে পড়িতে হইবে। কারণ দুই দলকে যেহেতু এক সাথে গ্রহণ করিতে পারিতেছেন না সেহেতু একদলকে গ্রহণ করিলে অন্যদল স্বভাবতঃই নাহক্ব বলিয়া সাব্যস্ত হয়। মজার ব্যাপার হইলো, এখন দুই দলেই একে অপরকে নাহক্ব বলিতেছে। এবং দুই দলই নিজেদেরকে আকাশের চন্দ্র বলিয়া দাবী করিতেছেন। কিন্তু কথা হইলো আকাশে চন্দ্র একটাই উদিত হয়। সুতরাং একই সাথে দুই চন্দ্রের অস্তিত্ব স্বীকার করা যায় কিভাবে? তবে এতখানি করা যায়- যেহেতু দুই দলই নিজদিগকে চন্দ্র দাবী করিতেছেন সুতরাং তাহাদের এই দাবীকে সমান দুইভাগে ভাগ করিয়া দেওয়া যায়। তাহা ইহলে প্রত্যেককেই অর্ধচন্দ্র দিয়া বিদায় করিতে হয়। আর নিজেদের কৃতকর্মের প্রেক্ষিতে ইসলামের আকাশ হইতে ইহারা এইরূপ অর্ধচন্দ্র হইয়া বিদায় লইবারই যোগ্য বটে। কারণ দেশে ইসলামী আদর্শ বাস্তবায়ন করা ইহাদের আদৌ উদ্দেশ্য নহে। বরং ইসলামী দলের নেতার নাম দিয়া এম.পি বা মন্ত্রী হইয়া দুনিয়াবী সুযোগ-সুবিধা বাগানোই যে ইহাদের একমাত্র উদ্দেশ্য তাহা এখন সাধারণেও বুঝে। পত্রিকান্তরে মন্তব্য করা হইয়াছে, মুফতি আমিনী কিভাবে কোটিপতি হলেন? “সম্মিলিত ….. প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি বলেন, দেশবাসী জানতে চায়, “একজন মাদ্রাসা শিক্ষক হয়ে আমিনী ১০ মাসে কিভাবে কোটিপতি হলেন?” উল্লেখ্য গত ২৮শে আগস্ট দৈনিক সংবাদে এই খবর প্রকাশিত হয়। তাহার পর হইতে এতদিন অতীত হইবার পরও আমিনী ছাহেবের পক্ষ হইতে ইহার কোন প্রতিবাদ জানানো হয় নাই। তাহার মানে এম.পি হওয়ার সুবাদে যে আমিনী ১০ মাসেই কোটি টাকা কামাইয়া নিয়াছেন তাহা এখন সকলেরই নজর কাড়িয়াছে। আর মঞ্চে বক্তৃতায় তিনি চুরির জন্য হাত কাাঁর ইসলামী আইনের দাবী তুলিলেও ইসলামী হুকুমতের মন্ত্রী না হইয়া সাধারণ গণপ্রজাতন্ত্রী সরকারের এম.পি হওয়ার সুবাদে চৌর্যবৃত্তির অভিযোগে অভিযুক্ত হইয়া প্রমাণ করিয়াছেন যে, নয় ছয় করিবার কায়দায়ই তিনি ১০ মাসে কোটি টাকা বাগাইয়াছেন। উল্লেখ্য, কিছুদিন আগে একটি জাতীয় দৈনিকে খবর বাহির হইয়াছে, তিনি গাড়ী ক্রয়ে প্রায় ৪০ লক্ষ টাকার দুর্নীতি করিয়াছেন। (সূত্র ঃ ৩রা মার্চ/২০০২, দৈনিক যুগান্তর)
পত্রিকান্তরে আরো মন্তব্য করা হইয়াছে, সূত্র মতে মন্ত্রিত্ব নিয়ে ইসলামী ঐক্যজোঁ বিভক্ত হওয়ার পর মুফতি ফজলুল হক আমিনী সরকারের উপর শুরু থেকেই এ নিয়ে নাখোশ। এমনকি এ বিষয়ে অনেক সভা-সমাবেশে তিনি নিজের ক্ষোভও প্রকাশ করেন। অপরদিকে শাইখুল হাদিস অংশ আমিনীর মন্ত্রিত্ব ঠেকিয়ে নিজেদের এ যাত্রায় কিছুটা দূরে সরিয়ে রেখে সরকারের সঙ্গে সু-সম্পর্ক বজায় রাখেন। এ অংশটি বেশ আস্থাভাজন হয়ে উঠে সরকারের শীর্ষ মহলে। …. কিন্তু আমিনী অংশ বিষয়টিকে মোক্ষম ইস্যু করে সরকারের সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদের হুশিয়ারি দেয়। ….. তবে অনেকেই মুফতী আমিনীর হার্ডলাইনে অগ্রসর হওয়ার বিষয়টিকে মন্ত্রিত্ব বঞ্চিত হওয়ার মনোবেদনায় সরকারের উপর ঝাল মেটানোর প্রয়াস বলে মনে করেন। কারো কারো মতে, ইস্যুটি সরকারকে চাপে রেখে ভবিষ্যতে মন্ত্রিত্ব আদায়ের একটি কৌশলমাত্র। (সূত্রঃ দৈনিক আজকের কাগজ ১৩/৯/০২)
উল্লেখ্য, এ বিষয়টি এখন এউনা পরিস্কার ও প্রচারিত হইয়াছে যে, সকল রাখ-ঢাক ছাপাইয়া এখন তাহা পত্রিকার পাতায়ও ছাপানো হইয়াছে। আরো উল্লেখ্য, একই দিনে উক্ত পত্রিকায় আরো মন্তব্য করা হয়, “জোঁ থাকা না থাকার ব্যাপারে সাংসদ আমিনী অনেকটা হার্ডলাইনে থাকলেও আজিজুল হক তউনা নন। আমিনী অংশ … অবস্থার প্রেক্ষাপটে সরকারের উপর তাদের সমর্থন প্রত্যাহার করবেন বলে জানিয়ে দেন।” উল্লেখ্য, ইহার দ্বারা আমিনী নিজেই স্বীকার করিলেন যে, সরকারের উপর তাহার সমর্থন প্রত্যাহার অপ্রত্যাহারের একটা ব্যাপার আছে। এবং বলাবাহুল্য, ইহার জন্য তিনি রীতিমত দায়বদ্ধ। আর এই উদ্দেশ্যে আমিনী লালবাগ মাদ্রাসায় একটি বৈঠকও করেন। এই বৈঠকের সিদ্ধান্ত পরের দিন সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে জানায়। কিন্তু সেইখানে আমিনী অংশ সরকারের বিরুদ্ধে মোঁ ১২টি অভিযোগ করে এবং ৬ দফা দাবী জানায়।
উল্লেখ্য, এইসব দাবীর মধ্যে ছিলো, তাহাদের উপর দায়েরকৃত মামলা প্রত্যাহার করা, মাদ্রাসায় অনুদান চালু ইত্যাদি। কিন্তু দেশে যে সম্পূর্ণরূপে বৃটিশদের আইন তথা অনৈসলামী আইন চলছে, সুদ-ঘুষ, বে-পর্দা, বেহায়া, বেশরীয়তী কাজ চলছে এগুলোর বিরুদ্ধে বর্তমান ইসলামী ঐক্যজোটের কোন অংশই কোন টু’শব্দটি করিতেছেনা। তাহা হইলে এইসব শাইখুল হাদিস, মুফতী, মুহাদ্দিস, মুফাসসির ছাহেব কে যাহারা এতদিন যাবৎ অথবা এখনও আলিম মনে করেন তাহাদের তাহা হইলে ভাবিতে হইবে যে, দেশে কোন অনৈসলামিক কাজ চলিতেছে না অথবা চলিলে উহারা আর আলিম বলিয়া গণ্য হইতেছে না। কারণ সত্যিই যদি উহারা আলিম হইত তাহা ইহলে দেশে বিরাজমান হাজারো অনৈসলামিক কাজের বিরুদ্ধে উহারা সরকারের উপর চাপ প্রয়োগ করিত। কিন্তু তাহা না করিয়া উহারা চাপ প্রয়োগ করিতেছে এম.পি, মন্ত্রী হইবার জন্য।
-মুহম্মদ মাহবুবুর রহমান, ঢাকা।
প্রসঙ্গ: গণতন্ত্র; এখনই চরম সময়, বিষয়টি ভাবিবার-৮
প্রসঙ্গঃ ভারতীয় মুম্বাই হাইকোর্টের রায় এবং স্বদেশের নামধারী আলিম সমাজ