‘আকলমন্দকে লিয়ে ইশারাহি কাফি হ্যায়।’ আকলমন্দ হলে ইশারা যথেষ্ট। মাসিক আল বাইয়্যিনাতে ওসামা বিন লাদেন সম্পর্কে যে বিস্তর দলীল-প্রমাণ ও তথ্যভিত্তিক লিখা পত্রস্থ হয়েছে, ওসামার হাক্বীক্বত সম্পর্কে অনুধাবনের জন্য তাই যথেষ্ট ছিলো। সে যে মুসলিম বিদ্বেষী, সে যে মুসলমানদের বন্ধু নয় বরং শত্রু, সে যে মুসলমানের স্বার্থ রক্ষার বা উন্নয়নের মুখপাত্র নয় বরং সি.আই.এ-এর এজেন্ট, সে যে ইসলাম দরদী নয় বরং বুশ তথা ইহুদী গং দরদী, সে যে বর্তমান ফিৎনা-ফাসাদের যুগে হতাশাগ্রস্থ মুসলমানকে গাজী সালাহউদ্দীনের ভূমিকা উপহার দেয়ার মত নব্য মুসলিম সিপাহসালার নয়, বরং মুখোশের অন্তরালে ইহুদী-খ্রীষ্টানদের জঘন্য মুসলিম বিদ্বেষী নীল-নকশার এক মহা প্রতারক, ছলনাময়ী মুনাফিক সে সম্পর্কে আল বাইয়্যিনাতে যে অকাট্য লিখনী পত্রস্থ হয়েছে তা সমঝদারদের জন্য যথেষ্ট ছিলো। কিন্তু তারপরেও কম আক্বল, কম বুঝ তথা সংশয়বাদীরা দোদুল্যমানচিত্তে ঘুরপাক খাচ্ছে। তাদের এই দ্বিধাগ্রস্থতার মূলে কারণ দু’টি। প্রথমতঃ সাধারণ মানুষ স্বাভাবিকতার মাঝে অস্বাভাবিকতাকে খুঁজতে প্রচেষ্ট নয়। স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় ত্রাণকর্তার রূপ মূল্যায়ণ করতে প্রবৃত্ত নয়। নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামসহ হযরত আউলিয়া-ই-কিরামগণের সকলের ক্ষেত্রেই যার যার যামানা ভেদে মানুষের এই মনোবৃত্তি। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর রিসালতের ক্ষেত্রেও মানুষ এই আচরণ প্রকাশ করেছে। হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর রিসালত প্রকাশের স্বাভাবিক প্রক্রিয়াকে তারা গ্রহণ করতে না পেরে বিস্ময় প্রকাশ করেছে। এ প্রসঙ্গে কুরআন শরীফে ইরশাদ হয়েছে, “উনি কেমন রসূল, যিনি বাজারে যান, খাদ্য খান?” ঠিক হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কায়িম-মোকাম প্রত্যেক যামানার মুজাদ্দিদের ক্ষেত্রেও একই অবস্থা হয়েছে। মুজাদ্দিদুয্ যামান, হুজ্জাতুল ইসলাম হযরত ইমাম গাজ্জালী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর কিতাবকে বিরুদ্ধবাদীরা পুঁড়িয়ে পর্যন্ত দিয়েছিলো। পক্ষান্তরে ফিরআউনকে সাধারণ মানুষ খোদা মেনে নিয়েছিলো। গোপন দোয়ার দ্বারা পানি আনার কৌশলে ফিরআউন সাধারণ মানুষের মাঝে তার খোদায়ীত্বের প্রমাণ দিয়েছিলো। আর শুধু বণী ইস্রাঈলের সে কাহিনী কেন? উম্মতে মুহম্মদী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর জন্য কি কম নজির রয়েছে? সূর্য আটকিয়ে ফেলার, দৃশ্যতঃ সাক্ষাৎ বেহেশ্ত-দোযখ (?) দেখানোর এবং তাতে নিক্ষেপ করার ক্ষমতা থাকবে দাজ্জালের। সাধারণ মানুষ দাজ্জালের প্রদর্শিত সেই বেহেশ্ত-দোযখকেই সত্যিকারের বেহেশ্ত-দোযখ মনে করবে। সাধারণ মানুষ দৃশ্যমান জিনিসটিকেই বড় করে দেখে। তাতেই হুজুগে মেতে উঠে। ওসামা বিন লাদেনের ক্ষেত্রেও একই কথা। তার সম্পর্কে প্রচারিত তার শিক্ষাগত যোগ্যতা, ধন-রাশির কথা, যুদ্ধ বিদ্যার কথা, যুদ্ধাস্ত্র সংগ্রহ ও প্রয়োগের কথা বিশেষতঃ প্রচারিত মার্কিন দূতাবাস, স্থাপনা বা ঘাঁটিগুলোতে তার হামলার প্রচারণা খুব সহজেই সাধারণ মানুষকে অভিভূত করে ফেলে। হতাশাগ্রস্থ সাধারণ মানুষ নিজের অজান্তেই তার প্রতি আস্থা অর্জন করে ফেলে। বিশ্বাস করে ফেলে। তাদের বিশ্বাস যে, তাদের এ প্রিয় ব্যক্তি বর্তমান সঙ্কটে তাদের প্রতি আল্লাহ্ পাক-এর রহমত হিসেবে এসেছে। তাদের হারানো গৌরব ও ঐতিহ্য এবং সমৃদ্ধি ফিরিয়ে দেবার জন্য এসেছে। পূর্ব থেকেই এ ধরণের কাঙ্খিত ব্যক্তির স্থানে সাধারণ মানুষ তাকেই চরম বিশ্বাস করে পরমভাবে আলোড়িত ও আন্দোলিত হতে থাকে। আর তাদের সে চরম বিশ্বাসকে ব্যবহার করে ভিন্নখাতে বা নিজেদের জঘন্য প্রতিহিংসা চরিতার্থ করণে প্রয়োগ করে মুসলিম বিদ্বেষী খ্রীষ্টান-ইহুদী গং। এ বিষয়টি যে এ কালের তা নয়। এ সম্পর্কে সুদূর অতীত হতেই ইলমে লাদুন্নী সমৃদ্ধ হক্ব ওলী আল্লাহ্গণ উম্মাহকে সচেতন ও সতর্ক করে গেছেন।
এ প্রসঙ্গে মশহুর ওলী আল্লাহ্ হযরত জালালুদ্দীন রুমী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর মসনবী শরীফে এক তাৎপর্যপূর্ণ কাহিনীর অবতারণা করেছেন, “অনেক কাল আগে আরব দেশে এক জালিম ইহুদী রাজা রাজত্ব করত। সে ছিল ভীষণ হিংসুক আর খ্রীষ্টান বিদ্বেষী। ইহুদী রাজার প্রধান কাজ ছিলো খ্রীষ্টানদের উপর অকারণে জুলুম করা। হিংসুক রাজা দ্বীনদারদের উপর অত্যাচার চালিয়ে খুব মজা পেত। বদমায়েশ উজীর সে রাজাকে পরামর্শ দিলো, মহারাজ! খ্রীষ্টানদের ধ্বংস করার জন্য উৎপীড়নের পথই যথেষ্ট নয়। কারণ র্ধম জিনিসটা অন্তরের বিষয়। বাইরে আপনার ভয়ে খ্রীষ্টানরা প্রকাশ্যে ধর্ম পালন করবে না বটে, কিন্তু গোপনে হযরত ঈসা আলাইহিস্ সালামকে নবী বলে মানবে আর গীর্জায় প্রার্থনা করবে। আপনার ভয়ে বলবে যে, সে হযরত ঈসা আলাইহিস্ সালাম-এর অনুসারী নয়। আবার বাড়িতে ফিরে হযরত ঈসা আলাইহিস্ সালাম-এর নির্দেশ মত চলবে। কাজেই খ্রীষ্টানদের ধ্বংস করতে না পারলে আপনার উদ্দেশ্য সিদ্ধ হবেনা। আমার মাথায় এক মতলব এসেছে। আমার মতলব মত কাজ করলে হযরত ঈসা আলাইহিস্ সালাম-এর শিষ্যরা সমূলে ধ্বংস হবে।
ইহুদী রাজা খুব উৎসাহিত হয়ে বললো, “বলো, উজীর কি তোমার মতলব?” উজীর বললো, “কাজ উদ্ধার করতে হলে প্রতারণা ও কৌশলের আশ্রয় নিতে হবে। শিকারীরা যেমন পাখি ধরার জন্য জাল পাতে, আমাদেরও তেমনি খ্রীষ্টান সম্প্রদায়কে ধ্বংস করার জন্য জাল পাতা দরকার। তাদের অন্তরঙ্গ বন্ধু সাজতে হবে। তারপর তাদের সম্প্রদায়ের মধ্যকার দুর্বলতা জেনে নিয়ে কৌশলে তাদের ধ্বংস করতে হবে।” ইহুদী রাজা আনন্দে আত্মহারা হলে বললো, “বেশ, তাহলে বল, কি করতে হবে?” উজীর বললো, “আমি যা বলব তাই করবেন। প্রথমে আমার দুই কান কেটে আমার একটা চোখ কানা করে প্রকাশ্যে রাজ দরবারে হাজির করে ঘোষণা করে দিন, উজীর রাজার দরবারে থেকে গোপনে হযরত ঈসা আলাইহিস্ সালাম-এর ধর্ম পালন করেছে আর বাইরে রাজার কাছে পরিচয় দিয়েছে নিজেকে ইহুদী বলে, তাই এ বিশ্বাসঘাতক উজীরকে শুলে চড়িয়ে হত্যা করা হবে। রাজপথে শুলের কাছে আমাকে বেঁধে রেখে রাজ্যময় এ কথা প্রচার করতে হবে। তারপর আমাকে শুলে চড়ানোর সময় রাজ পরিবারের একজন উপস্থিত জনতার সামনে আপনার কাছে আমার প্রাণ ভিক্ষা চাইবে। আপনি তৎক্ষনাৎ আমার জীবন ভিক্ষা দিয়ে মুক্তি দিবেন। তারপর আমি ঈসায়ী সম্প্রদায়ের মধ্যে গিয়ে তাদের ধর্মগুরু সেজে বসব। তারপর দেখতে পাবেন আমি ঈসায়ীদের কিভাবে ধ্বংস করি।” উজীরের কথা মত ইহুদী রাজা কাজ করল। উজীরের কান কেটে চোখ উপড়িয়ে প্রকাশ্য রাজপথে শুলে চড়িয়ে মারবে বলে ঘোষণা করল। তার অপরাধ সে গোপনে হযরত ঈসা আলাইহিস্ সালাম-এর ধর্ম পালন করে। রাজার ঘোষণা শুনে রাজপথে জনতার খুব ভীড় জমলো। ঈসায়ীরা মনে মনে হায় হায় করতে লাগলো। তারপর আগের পরিকল্পনা মত রাজা উজীরের প্রাণ ভিক্ষা দিল।
মুক্তি পেয়ে উজীর টলতে টলতে খ্রীষ্টান সম্প্রদায়ের বসতির দিকে চলে গেল। অনেক লোক তাকে আশ্রয় দিতে চাইল। কারণ, উজীর খৃষ্ট ধর্ম পালন করতে গিয়ে ইহুদী রাজার কোপানলে পড়ে কোন মতে প্রাণ ভিক্ষা পেয়েছে। তাই খ্রীষ্টানদের মনে তার প্রতি এত ভক্তি ও শ্রদ্ধা থাকা স্বাভাবিক। উজীর কিন্তু কারো বাড়িতে গেল না, সে বসতির একটা জায়গায় কুঁড়ে ঘর বেধে ধর্মকর্মে মন দিল।
বেশ কিছুদিন ধরে উজীর তার কুঁড়ে ঘরের মধ্যে একা থাকল। কারো সাথে সে দেখা করতেও যেত না। খ্রীষ্টান পল্লী থেকে রোজই ধর্মভীরু লোকেরা আসতে লাগল। সকলেই তাকে মহাপুরুষ মনে করল। কারণ সে কারো বাড়িতে ভিক্ষা চাইতে যায় না, যে যা দিয়ে যায় তাই খায়। পার্শ্ববর্তী গ্রাম থেকে দলে দলে লোক আসতে লাগল। ভন্ড উজীর সবাইকে বলল, যীশু তাকে স্বপ্নে বলেছেন, কারো সঙ্গে কথা না বলতে আর কঠোর সাধনা করতে। অতএব, এখন থেকে সে কারো সঙ্গে আর কথা বলবে না।
এমন করে বেশ কিছুদিন যায়। উজীরের উপর খ্রীষ্টানদের খুবই বিশ্বাস জন্মাল। তারা উজীরকে তাদের পয়গম্বরের প্রতিনিধি বলে মনে করতে লাগল। ওদিকে ইহুদী রাজার লোক এসে একদিন গোপনে উজীরের সঙ্গে দেখা করল। সে বললো, রাজা খুবই উদ্বিগ্ন যে, এত দিন হয়ে গেল তবু উজীর খৃষ্টানদের ধ্বংস করতে পারল না কেন? সে যেন সত্বর খ্রীষ্টানদের খতম করে। উজীর রাজার লোককে বলে দিল, যথা সময়েই খ্রীষ্টান ধ্বংস করা হবে। রাজা শীঘ্রই দেখবেন, খ্রীষ্টান সর্দাররা নিজেদের মধ্যে মারামারি হানাহানি করে ধ্বংস হয়ে যাবে। রাজার লোক রাতের অন্ধকারে চলে গেল। এদিকে উজীর খ্রীষ্টান ভক্তদের বলে দিল যে, যীশু তাকে জানিয়েছেন, মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত অনশন করতে হবে। তা হলেই খ্রীষ্টানদের মুক্তির পথ পরিস্কার হবে। খ্রীষ্টান সর্দাররা খুবই মর্মাহত হল। একমাত্র উজীরই তাদের ধর্মীয় নেতা। আর তিনিই যদি অনশনে মৃত্যুবরণ করেন তবে তাদের আর শান্তির পথ দেখাবে কে? খ্রীষ্টানদের মধ্যে মোট ১২টা গোষ্ঠী বা গোত্রের লোক ছিল। প্রত্যেক গোত্রের এক একজন সর্দার ছিল। সর্দাররা তাদের ধর্মগুরু সেই উজীরের সঙ্গে আলাদা আলাদাভাবে দেখা করতে যেত। কারও সঙ্গে কারও সাক্ষাৎ হতো না।
ভন্ড খ্রীষ্টান ধর্মগুরু উজীর তার কূটবুদ্ধি এবার কাজে লাগাল। সরল খ্রীষ্টানদের ধ্বংসের পথ খোলাসা করার সব ব্যবস্থাই সে চুড়ান্ত করল। ভন্ডগুরু প্রত্যেক সর্দারকে জানাল যে, “মৃত্যর পর আমি মহান যীশুর কাছে স্বর্গে চলে যাব। আর তুমিই হবে খ্রীষ্টানদের একমাত্র ধর্মীয় নেতা।” ১২জন সর্দারকে একে একে সে একই কথা বলে দিল। এ ঐশীবাণী যেন সর্দার অন্য কোন লোকের কাছে না বলে। ১২জন সর্দারের প্রত্যেকেই স্ব স্ব গোত্রের লোকদের জানাল যে, ধর্মগুরু মৃত্যুর পর সেই হবে খ্রীষ্টানদের ধর্মীয় নেতা।
এমনি করেই আরো কিছুদিন যায়। ভন্ড শয়তান উজীর যখন বুঝলো যে, খ্রীষ্টান সর্দারগণ তার ঐশীবাণীর কথা দ্বিতীয় কোন লোকের কাছে প্রকাশ করেনি এবং প্রত্যেক সর্দার আলাদা আলাদা ভাবে এসে দেখা করছে আর তাদের ধর্মগুরুকে মৃত্যু শয্যায় দেখে চোখের পানি ফেলছে। তখন সে বুঝলো যে, এবার তার এতদিনের ষড়যন্ত্র সফল হতে চলেছে। উজীর একরাতে বিষ খেয়ে চিরদিনের মত ঘুমিয়ে পড়ল। পরের দিন সকালে খ্রীষ্টানরা জানল যে, তাদের ধর্মগুরুর মৃত্যু হয়েছে। সবাই হায় হায় করে কাঁদতে লাগলো। তারা ১২ গোষ্ঠীর লোক একত্র হয়ে ধর্মগুরুকে দাফন করল। পরদিন থেকেই প্রত্যেক গোষ্ঠীর সর্দার ঘোষণা করল, “আমি খ্রীষ্টানদের ধর্মগুরু। বেহেশতে যাওয়ার আগে মহাগুরু আমাকেই পরবর্তী ধর্মীয় নেতা মনোনীত করে গেছেন।” প্রত্যেক গোষ্ঠীর সর্দার এমনি করে একই কথা ঘোষণা করতে লাগল। ফলতঃ উক্ত ১২ গোষ্ঠীর মধ্যে তুমুল যুদ্ধ শুরু হয়ে গেল। দেখতে দেখতে খ্রীষ্টান সম্প্রদায়ের যত পুরুষ সবাই যুদ্ধে নিহত হল। এমনি করে গোটা খ্রীষ্টান সম্প্রদায় প্রায় ধ্বংস হল। নিজেরা মারামারি করতে করতে ধর্মগুরু হওয়ার মত আর কেউ বেঁচে রইল না। ইহুদী উজীর আর রাজার কুট বাসনা পূর্ণ হল। পাঠক! মশহুর ওলী আল্লাহ্ হযরত মাওলানা জালালুদ্দীন রুমী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর মসনবী শরীফে উল্লিখিত উপরোক্ত কাহিনীর মুখোশধারী উজীর আর আজকের ওসামা বিন লাদেনের মধ্যে কি কোন পার্থক্য আছে? বরং এতদুভয়ের মধ্যে পুরোই মিল খুঁজে পাওয়া কোন বালকের পক্ষেও অসাধ্য কি? কে না জানে যে এই লাদেন পরিবারের সাথে আমেরিকার তথা বুশ পরিবারের প্রায় অর্ধশতাব্দীকাল ধরেই একান্ত দহরম মহরম সম্পর্ক ছিল।
কে-না জানে এই ওসামা বিন লাদেনকে সি. আই. এ. একান্ত আগ্রহ ও যত্ম দিয়ে লালন-পালন করেছে। শিক্ষা-দীক্ষা ট্রেনিং দিয়েছে। বলার অপেক্ষা রাখেনা সে শিক্ষা আর ট্রেনিং এর মধ্যে মূল ছিল অভিনব কায়দায় মুসলমান ধ্বংস করা। আর ঠিক সে উদ্দেশ্যেই মসনবী শরীফের উজীরের কাহিনীর ন্যায় ওসামাকে দিয়ে মার্কিন দূতাবাসে হামলা করিয়েছে। আমেরিকা দৃশ্যতঃ দেখাল যে, ওসামা মার্কিন বিরোধী এক দুর্ধর্ষ অস্ত্রবাজ। ব্যাস! মার্কিনী তথা ইহুদী গং চাইল এ বিষয়টি সাধারণ মুসলমান লুফে নিক। ওসামা মুসলমানদের হিরোতে পরিণত হোক। আর এক শ্রেণীর কম আক্বল, কম বুঝ, হুজুগে মাতাল তথা উলামায়ে ‘ছূ’দের প্রচারণায় সাধারণ মানুষ তাই মেনে নিল। মার্কিনীদের প্রথম উদ্দেশ্য চরিতার্থ হল। এরপরে মার্কিনী তথা ইহুদী গোষ্ঠী নিজেরাই টুইন টাওয়ারের ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে ওসামার কাঁধে তার দায়িত্ব চাপিয়ে তামাম মুসলিম বিশ্বকে সন্ত্রাসী রাষ্ট্রে চিহ্নিত করল এবং ওসামাকে কেন্দ্র করে আফগানিস্তানে তাদের নতুন তাবেদার সরকার বসানোর অভিপ্রায়ে পৈশাচিক আক্রমণে পর্যূদস্ত করে দিল। এখানেও আমেরিকার দৃশ্যতঃ উছীলা হিসেবে কাজ করেছে ঐ ওসামা। এদিকে গত ১৮-৪-০২ তারিখে যুক্তরাষ্ট্রের সিনেট ইন্টেলিজেন্স কমিটির চেয়ারম্যান বব গ্রাহাম বলেছেন, “ … তারা পুরো নিশ্চিত, ওসামা বেঁচে আছে এবং আফগানিস্তানে কোন গোপন গুহায় আছে। মূলতঃ গোটা আফগানিস্থান তামা … হবার পরও শুধু ঐ ওসামারই বেঁচে যাওয়া- এটা যে আমেরিকারই কারসাজি তা একান্ত সহজ কথা। মসনবী শরীফের উজীরের মতই ওসামাকে বর্তমান ইহুদী গোষ্ঠী বাঁচিয়ে রেখেছে নতুন পরিকল্পনার লক্ষ্যে। আর তা করতে গিয়ে যদি ওসামা জীবনও বিসর্জন দিয়ে দেয় তাহলেও বুঝতে হবে মসনবী শরীফের উজীরের মতই সে জীবন দান মুসলমানদের চরম-পরম কোন ধ্বংস সাধনের লক্ষ্যেই।
বিশেষ করে এ ব্যাপারে এখনই লক্ষণের কোন কমতি নেই। অভিজ্ঞমহল মনে করেন সাম্প্রতিক কালে আলোচিত গ্যাস, তেল ও আনুষাঙ্গিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে আমেরিকা তার কাঙ্খিত সুবিধা না পেলে রুদ্র রোষে ফুঁসে উঠবে। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশে তার ঘাঁটি স্থাপন অথবা হামলা চালানোকে জায়িয করার জন্য ঐ একই কথা ছড়ানো হবে, ‘বাংলাদেশে তালেবান ঢুকে পড়েছে’, বাংলাদেশ এখন তালেবানদের ঘাঁটি, ইত্যাদি ইত্যাদি। আর তালেবান যে কি জিনিস, তালেবানের নেতা ওসামা যে কি জিনিস, সেটা সার্থকভাবে ইতোমধ্যে আমেরিকা দাঁড় করিয়েছে। আমেরিকার ইচ্ছানুযায়ী পুরোদস্তুর সফল অভিনয় করতেই নিপুণতা দেখিয়েছে ওসামা-বিন লাদেন। কাজেই সঙ্গত কারণেই আজকের ওসামাকে মূল্যায়ণ করতে হবে হযরত মাওলানা জালালুদ্দীন রুমী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর সেই ঘৃণ্য ইহুদী উজীরের ছদ্মবেশী, মুনাফিকী আদলের আঙ্গিকেই।
-মুহম্মদ ওয়ালীউর রহমান, ঢাকা।
মানব ক্লোনিং- পরিণতি ও প্রাসঙ্গিক ভাবনা