“দোলনা থেকে কবর পযন্ত ইলম হাছিল কর” হাদীছ শরীফ উনার এ আমোঘ মর্ম অনুপ্রাণিত করেছে গোটা মুসলিম সমাজকে। ইলম অন্বেষণের ফযীলত সম্পর্কে হাদীছ শরীফ-এ আরো অনেক অনেক কথা এসেছে। বলা হয়েছে, “যে ইসলামকে বুলন্দ করার জন্য ইলম তলব করতে করতে মারা যায় তার মধ্যে আর নবীদের মাঝে কেবলমাত্র একটা দরজার পার্থক্য। অর্থাৎ নুবুওওয়ত তিনি পাবেন না, বাকী সব নিয়ামতই উনার হাছিল হবে।” বড় বড় ইমাম মুজতাহিদগণও তাই এ হাদীছ শরীফ উনার উপর আমল করেছেন। হুজ্জাতুল ইসলাম হযরত ইমাম গাযযালী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার জীবনিতে দেখা যায় মৃত্যু শয্যায় শায়িত অবস্থায়ও তিনি বুখারী শরীফ পড়ছিলেন। এক নিকটতম ছাত্র এটা দেখে জিজ্ঞেস করলেন, “হুযূর! এখনও কি আপনার বুখারী শরীফ পড়া কিছু বাকী আছে?”
জবাবে তিনি বললেন, “দেখ বুখারী শরীফ পড়া কেন এর তাফসীরও কিছুই আমার জানার বাকী নেই। তবুও আমি এটা পড়ছি যেন ইলম তলবরত অবস্থায়ই আমার ইন্তিকাল করে হাদীছ শরীফ- বর্ণিত বিরাট ফায়দা আমি হাছিল করি।” আর সত্যিই উনার ক্ষেত্রে তাই হয়েছিল। ইলম তলবরত অবস্থায়ই কিছুক্ষণ পরে তিনি ইন্তিকাল করেছেন। সুবহানাল্লাহ!
ইমাম-মুজতাহিদ হওয়ার পরও উনার তালিবে ইলম হিসেবে থাকতে চেয়েছেন। তালিবে ইলমের মর্যাদা রূপায়ণ করেছেন।
আর উনাদের সেই মুবারক ভুমিকার প্রেক্ষিতেই গত কয়েক দশক আগেও এদেশে তালিবে ইলম শব্দটি বিশেষ মর্যাদার সাথে মূল্যায়িত হত। কিন্তু এরপরে অবক্ষয় শুরু হয়। তালিবে ইলমের মর্যাদার রেশ কিছুটা হলেও ধরে রেখেছিল। কিন্তু হালে মাদরাসা ছাত্রের সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ডে তাদের মর্যাদার প্রায় পুরোটাই হারিয়েছে।
এখন আর সাধারণ মানুষ, প্রশাসন, মাদরাসা চাত্রকে আলাদা চোখে দেখেনা। আগে সন্দেহভাজন অপরাধীদের তালিকা থেকে মাদরাসা-চাত্ররা বিনা দ্বিধায় হিফাজতে থাকত। কিন্তু এখন সে ধারা ব্যাহত হয়েছে। আগে বাসে, ট্রেনে, গাড়ীতে মাদরাসা ছাত্রকে সিট ছেড়ে দেয়া হত। এখন তার অনুশীলন বন্ধ হয়ে গেছে। আগে মাদরাসা ছাত্রদের চেহারায় মানুষ নূর দেখতে পেত। কিন্তু এখন ক্ষেত্রবিশেষে মাদ্রাসা ছাত্র আর সন্ত্রাসী আলাদা করা দুস্কর হয়ে পড়েছে। কিন্তু এর কারণ কি? কে বা কারা এর পেছনে দায়ী? মূলতঃ এর পেছনে রয়েছে ইহুদী-নাছারা গোষ্ঠীর সবিশেষ ষড়যন্ত্র।
উল্লেখ্য, ইংরেজরা তাদের সময়ে পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন কৌশলে এদেশের আশি হাজার মাদ্রাসা মক্তব বন্ধ করে দিয়েছিল। আজকে সরাসরি মাদ্রাসা-মক্তব বন্ধ হচ্ছেনা; কিন্তু খুব সূক্ষ্ম কৌশলে আন্দোলনের নামে, জজবার নামে, জিহাদের নামে মাদ্রাসা ছাত্রদের এমনভাবে বিভিন্ন আপত্তিকর কর্মকান্ডে সম্পৃক্ত করা হচ্ছে যে তাতে প্রকৃত অর্থে মাদ্রাসা ছাত্র-ওস্তাদ নয় টোটাল মাদ্রাসা শিক্ষার প্রতিই সাধারণ মানুষ বিরূপ হয়ে যাচ্ছে। অর্থাৎ ইহুদী-খ্রীষ্টান মোড়লরা সরাসরি না পারলেও তাদের সূক্ষ্ম চালবাজি দ্বারা মাদ্রাসা ছাত্রদের এমনভাবে চালিত করছে যে তার দ্বারা এদেশের মাটিতেই এদেশের মানুষদেরই মাদ্রাসা বিরোধী করে তুলছে। এদেশের মানুষরাই এখন মাদ্রাসা বিরোধী পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হচ্ছে। বলা অত্যাবশ্যক যে এক্ষেত্রে তালেবানী প্রক্রিয়া তথা ওসামা বিন লাদেন গং ইহুদী-খ্রীষ্টান মোড়লদের এক বিরাট চাল ও এজেন্ট। এদেশের বিভিন্ন মাদ্রাসায় অস্ত্র আর অর্থ দিয়ে তাদেরকে তালেবানী কায়দায় সন্ত্রাসী বানিয়ে তুলেছে ওসামা বিন লাদেন। বিশেষ করে এক্ষেত্রে এদেশের প্রতিটি খারিজী মাদ্রাসাই তালেবান তথা একান্ত লাদেন ভক্ত। লাদেনের উৎসাহেই তারা ব্যক্ত করেছে, “আমরা সবাই তালেবান, বাংলা হবে আফগান।” কিন্তু ইতোমধ্যে হিরোইন তৈরী ও বিক্রী, নারী-নির্যাতন আর শরীয়তের নামে বেশরীয়তী কাজ কেবল আফগান তালেবানদের তরফ থেকেই প্রকাশ পায়নি পাশাপাশি বাংলাদেশী তালেবানদের কর্মকান্ডের ফিরিস্তিও এখন পত্রিকার পাতা দখল করে তাদের আসল চেহারা প্রকাশ করছে। গত ১৪, ১৫ ও ১৬ ফেব্রুয়ারীতে বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকগুলোর খবরে প্রকাশ “জায়গা দখলের ঘটনাকে কেন্দ্র করে সম্প্রতি পটিয়াতে মাদ্রাসা ছাত্র, স্থানীয় জনতা ও পুলিশের ত্রিমুখী সংঘর্ষ এবং বন্দুকযুদ্ধে একজন নিহত ও কমপক্ষে অর্ধশতাধিক আহত হয়েছে। নিহত ফরিদ (১৯) স্থানীয় একটি কলেজের ছাত্র। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পটিয়া পৌর এলাকায়, ঘটনাস্থল ও সংলগ্ন এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। সংঘর্ষের সময় কমপক্ষে দেড় শতাধিক রাউন্ড গুলিবিনিময় হয়েছে। সংঘর্ষ ঠেকাতে পুলিশের সাহায্যের জন্য তিন প্লাটুন বিডিআর মোতায়েন করা হয়েছে পটিয়াতে। পুরো এলাকায় উত্তেজনাকর অবস্থা বিরাজ করছে। পটিয়ার জামিয়া মাদ্রাসার (ওয়াহাবি তথা লাদেন মাদ্রাসা নামে পরিচিত) পাশে একখন্ড জমি দখলের ঘটনাকে কেন্দ্র করে দীর্ঘদিন ধরে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় এলাকাবাসীর বিরোধ চলে আসছিল। গত ১১ ফেব্রুয়ারী মাদ্রাসার ছাত্র ও কর্মচারীরা এ জমিতে জোর করে কাটাতারের বেড়া দিতে যায়। এ নিয়ে স্থানীয় লোকজনের পক্ষে সংঘর্ষে পৌর ওয়ার্ড কমিশনার শফিকুর রহমানসহ কমপক্ষে ১০ জন আহত হয়।
উল্লেখ্য, পটিয়ার এই মাদ্রাসাটি অত্যন্ত সুরক্ষিত একটি দূর্গ বলে পরিচিত স্থানীয় জনসাধারণের কাছে। নানা ধরণের অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও কখনোই কোনো ধরণের তদন্ত হয়নি এর বিরুদ্ধে। স্থানীয় জনসাধারণের অভিযোগ মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ অবৈধভাবে জায়গা দখল করছিল। পাশাপাশি মাদ্রাসার অভ্যন্তরে অত্যন্ত গোপনে ছাত্রদের অস্ত্রসহ বিভিন্ন ধরণের তালেবানী ট্রেনিং দেওয়া হয় বলেও এলাকাবাসীর অভিযোগ দীর্ঘদিনের। গত ১১ ফেব্রুয়ারী ফযরের নামাযের পর এই পটিয়া মাদ্রাসার কিছু ছাত্র দা, কিরিচ নিয়ে বিরোধপূর্ণ জমিটি দখল করতে গেলে জমির মালিক পক্ষের ওয়ারিশরা বাঁধা দেয়। এ সময় মাদ্রাসা ছাত্ররা তাদের ওপর চড়াও হয়ে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে মারধর করেছে বলে স্থানীয় জনতার অভিযোগ। অনেক মহিলা মাদ্রাসার জঙ্গি ছাত্রদের আক্রমণ থেকে বাঁচার জন্য ছোট বাচ্ছাকে নিয়ে পুকুরের পানিতে পর্যন্ত নেমে গিয়েছিলেন। গত ১১ ফেব্রুয়ারীর হামলায় আহত হয়েছেন ৭৬ বছরের বৃদ্ধ আব্দুর রহমান, মেহেরুন্নেছা, শফি চেয়ারম্যান, লাভলী, আনোয়ারাসহ আরো অনেকে। স্থানীয় জনসাধারণের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাদের দীর্ঘদিনের পূঞ্জীভূত ক্ষোভের কথা। তাদের অভিযোগ সেদিন সকালে যখন মাদ্রাসার সশস্ত্র ছাত্ররা বিতর্কিত জমিটি দখল নিতে যায় তখন তারা কনক্রিটের পিলার ও কাঁটাতার দিয়ে ঘেরাও দিয়ে দেয় ঐ জমিটি। সেদিন শফিকুর রহমানকে মাদ্রাসার জঙ্গি ছাত্ররা লোহার রড দিয়ে মেরেছে এবং কিরিচ দিয়ে কুপিয়েছে বলে তিনি জানান। তিনি মাদ্রাসাটিকে তালেবানী সন্ত্রাসীদের ঘাঁটি বলে আখ্যায়িত করেছেন। তার দাবি ৪ দলীয় ঐক্যজোটের মধ্যে থেকে এরা পুরোপুরি রাজনৈতিক ফায়দা হাছিলের চেষ্টা করছে যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, সংঘর্ষের সময় কয়েকজন মন্ত্রী এবং ইসলামী ঐক্যজোট একাংশের নেতা শাইখুল হাদিস আজিজুল হকও বারবার ফোন করে খোঁজ-খবর নিয়েছেন এবং প্রশাসনের ওপর চাপ সৃষ্টি করেছেন। পটিয়া উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা জাকির হোসেন কামাল জানান, যে জমি নিয়ে আদালতে মামলা রয়েছে তা যদি মাদ্রাসার লোকজন দখল করতে না যেতো তাহলে সংঘর্ষ হতো না। পটিয়ার বিতর্কিত আল জামেয়াতুল ইসলামিয়া মাদ্রাসার সুরক্ষিত প্রাসাদোপম বিশাল কমপ্লেক্সের অভ্যন্তরে কোন ধরণের শিক্ষা দেয়া হয় তা কেউই জানে না। কোনো ধরণের সরকারি অনুদান ছাড়াই মাদ্রাসাটি স্বয়ংসম্পূর্ণ। যার ফলে সরকারি কোনো কর্তৃত্বও নেই এর ওপর। ১৯৩৮ সালে প্রতিষ্ঠিত এই মাদ্রাসাটি বর্তমানে পটিয়াসহ জেলার বেশ কয়েকটি জায়গায় ব্যবসা-বাণিজ্য এবং মাদ্রাসা কিন্ডার গার্টেন স্থাপন করে বেশ প্রভাব রাখছে সমাজে।
শুধুমাত্র পটিয়ার মূল কমপ্লেক্সটিই গড়ে উঠেছে ১৪ একর জায়গার ওপর। স্থানীয় জনসাধারণের অভিযোগ, এই মাদ্রাসার অভ্যন্তরে আগ্নেয়াস্ত্র, তলোয়ার চালনা ও কুংফু কারাতেরও প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। কমপ্লেক্সের অভ্যন্তরে কালো কমব্যাট পোশাকধারী বেশকিছু জঙ্গি সদস্য রয়েছে, যারা অত্যন্ত সুশৃঙ্খল ও যে কোনো ত্যাগ স্বীকার করতে প্রস্তুত। এর আগেও জায়গা জমি সংক্রান্ত বিরোধ নিয়ে স্থানীয় পাঁচজন খুন হয়েছিল বলে জানিয়েছেন বয়োবৃদ্ধ আব্দুর রহমান। তখন দুজন পুলিশও মারা গিয়েছিল বলে পুলিশ সূত্রের খবর। পটিয়ার পৌর এলাকার সাবেক কমিশনার শফিকুর রহমান অভিযোগ করেছেন, মাদ্রাসাটি তালেবানদের ঘাঁটিতে পরিণত হয়েছে। পটিয়া আদালতের পেছনে প্রায়দিন বিকালে মাদ্রাসার ছাত্রদের কুংফু-কারাতে প্রশিক্ষণ নিতে দেখা গেছে বলে তিনি জানিয়েছেন। তার প্রশ্ন মাদ্রাসার ছাত্র-কর্মচারীরা যদি সত্যিকার অর্থেই ধর্মপ্রাণ হতো তাহলে তারা একটি বিরোধপূর্ণ জায়গা দখল করতে গিয়ে নিরীহ মহিলা ও মা-বোনদের ওপর নির্যাতন চালাতো না।
স্থানীয় জনসাধারণের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, এই মাদ্রাসার যে ঈদগাহ রয়েছে, সেখানে আমির ভান্ডার মাজার শরীফ নামে একটি মাজার ছিল। কিন্তু মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ বিভিন্নভাবে তা দখল করে নিয়েছে। ফলে স্থানীয় মুসলিমদের সঙ্গে এই মাদ্রাসার মতবিরোধ চলে আসছে। স্থানীয় সাধারণ মহিলারাও পর্যন্ত এই মাদ্রাসাটিকে পছন্দ করেনা। পটিয়ার ৮ নম্বর ওয়ার্ড কমিশনার ও পটিয়ার আইনশৃঙ্খলা উন্নয়ন কমিটির সভাপতি আব্দুল মান্নানের অভিযোগ মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ এলাকার প্রচুর জমি অবৈধভাবে দখল করেছে।
বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা সূত্রে জানা গেছে, দেশের কিছু উগ্র সাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক সংগঠন এ ধরণের মাদ্রাসাগুলোকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে থাকে তবে যেহেতু বিষয়টি ধর্মীয় ছদ্মাবরণে হচ্ছে তাই কোনো রাজনৈতিক দল বা সরকার তা ঘাঁটাতে সাহস পায় না।
পাঠক! এ আমোঘ সুযোগটি গ্রহণ করছে; ইহুদী-নাছারাদের এজেন্ট ওসামা বিন লাদেন। ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ধর্মের নামে অস্ত্র আর অর্থ দিয়ে সে ছাত্রদেরকে সন্ত্রাসী তৎপরতায় তৎপর করে মাদ্রাসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষার প্রতি সাধারণ মানুষকে বিরূপ করে তুলছে। আর এটাই ওসামার নীল নকশা- সি. আই. এ.-এর এজেন্ট হিসেবে সে এই কাজটি করছে অত্যন্ত সুচারুরূপে। য -মুহম্মদ ওয়ালিউর রহমান, ঢাকা।
প্রসঙ্গ: গণতন্ত্র; এখনই চরম সময়, বিষয়টি ভাবিবার