বৃটেনের বর্তমান রাণী দ্বিতীয় এলিজাবেথের মাতা-কথিত রাণীমাতা অবশেষে মৃত্যুবরণ করিয়াছেন। শুধু ইংল্যান্ডেই নয় প্রায় গোটা বিশ্বেরই সংবাদ শিরোনাম হইয়াছেন। রাণী ভিক্টোরিয়ার শাসনামলের শেষদিকে ১৯০০ সালের ৪ঠা আগষ্ট জন্মগ্রহণ করিবার পর প্রায় ১০১ বছরের দীর্ঘ জীবন অতিক্রান্ত করিবার পর তাহার জীবনাবসান হয়।
রাণীমাতার এই মৃত্যুকে বৃটেনবাসী কেবল অকৃত্রিম শোকের বিষয় রূপে গ্রহণ করিয়াই ক্ষ্যান্ত হয় নাই বরং সেই শোকের গভীরতার প্রকাশ ঘটাইয়াছে তাহারা রাণীমাতার আড়ম্বর পূর্ণ শেষকৃত্য সম্পাদনে। পত্রিকান্তরে এই বিষয়ে ঢালাও করিয়া খবর ছাপা হইয়াছে। উহার মধ্যে উল্লেখযোগ্য বিষয়গুলি হইতেছে, ৩০ শে মার্চ/ ২০০২ মৃত্যুবরণ করলেও ৫/এপ্রিল/২০০২ সেইন্ট জেমস প্যালেস থেকে শবদেহ ওয়েস্ট মিনিষ্টার হলে নিয়ে আসা হয় জনগণের অর্ঘ্য দেয়ার জন্য। ৯ এপ্রিল তাকে সমাহিত করা হয়। বয়সের সাথে সঙ্গতি রেখে ১০১ বার গীর্জার ঘন্টাধ্বনি বাজানো হয়। ২ মিনিট শোকের নীরবতা পালন করা হয়। শেষ শ্রদ্ধা আর শেষ বিদায় জানাতে। এ সম্পর্কে পত্রিকায় মন্তব্য করা হয়, “এ সময় পুরো বৃটেন এক প্রকার থমকে যায়।” বিভিন্ন স্থানে তোপধ্বনি করা হয় ও শোক যাত্রা করা হয়। শোক যাত্রায় ছিল লাল জ্যাকেট ও পশমী টুপি পরা রাজ সেনাসদস্য, সাদা টুপি ও সাদা পোশাক পরা নৌ সদস্য, নীল পোশাক পরা বিমান সদস্য। রওয়ানার প্রতি মিনিট পর মোট ২৮টি তোপধ্বনি করে সম্মান জানানো হয়। বৃটেন ও ভূমধ্যসাগরীয় দ্বীপ জিব্রাল্টারের ১২টি স্থান থেকে ৪১ বার তোপধ্বনি করা হয়। এছাড়া বৃটেনের সবগুলো সামরিক স্থাপনায় ৪১বার তোপধ্বনির মাধ্যমে ৯দিনের শোক পালন করা হয়। জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত করা হয়। রাজ প্রাসাদে শোক বই খোলা হয়। শোক বইয়ে স্বাক্ষর করে অগণিত লোক। সেন্ট জেমস প্রাসাদ ও উইন্ড শোর প্রাসাদের বাইরে শ’ শ’ দর্শনার্থী ফুল ও মোমবাতি জ্বালিয়ে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে। বিশেষতঃ পুস্পস্তবক অর্পন সর্ম্পকে পত্রিকান্তরে আরো উল্লেখ করা হয়- “প্রত্যক্ষদর্শীর মতে- প্রায় তিন মাইল লম্বা লাইনে ফুল হাতে শোকার্ত মানুষেরা ওয়েষ্ট মিনিষ্টার হলে প্রবেশের জন্য অপেক্ষা করছিল। ওয়েষ্ট মিনিষ্টার হলে সাত ফুট উঁচু একটি বেদীতে রাণী মাতার কফিন রাজকীয় মর্যাদায় রাখা হয়েছে। পত্রিকায় সচিত্র মন্তব্য করা হয়- রাণীমাতার মৃত্যুতে শোকাহত ব্যক্তি তার স্মৃতির উদ্দেশ্যে উইন্ডসর প্যালেসের সামনে পুস্পস্তবক দিচ্ছে।”
“পুস্পস্তবক আর শ্রদ্ধাঞ্জলি দিয়ে লেখা হাজার হাজার কার্ড শোকবার্তা রাণীমাতার বাসভবনের সামনে স্তূপীকৃত হয়ে আছে। (বাংলাদেশের জাতীয় দৈনিক, ইন্টারনেট ও ইংল্যান্ডের পত্র-পত্রিকা থেকে প্রাপ্ত) পাঠক! বৃটেনের রাণীমাতার শেষকৃত্যাদি সম্পন্নের এতসব বিস্তৃত বর্ণনা মাসিক আল বাইয়্যিনাত-এর মত ইসলামী পত্রিকায় দেওয়ার কি এত প্রয়োজন আছে- বলিয়া যাহারা উষ্মা প্রকাশ করিয়াছেন, তাহাদের কাছে সবিনয়ে বলিতে চাহি যে, কথিত রাণী মাতাকে বৃটেনবাসীরা উহাদের মাথার মুকুটরূপে পর্যবসিত করিয়াছিল। আর তাহাতে উহার শেষকৃত্যাদি সম্পন্নকরণে উহাদের শত বৎসরের ঐতিহ্য, ধর্মীয় বিশ্বাস ও অনুভূতি তথা একান্ত নিজস্ব কৃষ্টি কালচারই প্রতিফলিত হইয়াছিল। এই বিষয়ে পত্রিকায় মন্তব্য ব্যক্ত করা হইয়াছিল “লন্ডনের ওয়েষ্ট মিনিষ্টার অ্যাবেতে শতাব্দী প্রাচীন আচার-অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে রাণী মাতাকে চির শয্যায় শায়িত করা হয়।” বলাবাহুল্য, এখানে যেই কথাটি বলিতে হয় শুধু বৃটেনবাসী বলিলেই আমাদের কাছে উহাদের পুরো পরিচয়টি প্রকাশ পায়না। বরং উহারা যে খ্রীষ্টান তাহা আমাদের মুসলমানদের একান্ত সতর্কতার সহিত খেয়াল রাখা বিশেষ কর্তব্যের মধ্যে পড়ে। যেহেতু ইহুদী-খ্রীষ্টানদের বন্ধু রূপে গ্রহণ না করিবার জন্য তাহাদের আদর্শ, আচার-আচরণ, কৃষ্টি-কালচার অনুসরণ না করিবার জন্য কুরআন-সুন্নায় বিশেষ তাকীদ করা হইয়াছে। এই মর্মে আল্লাহ্ পাক কুরআন শরীফে ইরশাদ করিয়াছেন, “নিশ্চয়ই আল্লাহ্ পাক-এর নিকট একমাত্র মনোনীত দ্বীন হলো ইসলাম।” (সুরা আলে ইমরান/১৯) আর এ প্রসঙ্গেই আল্লাহ্ পাক অন্য আয়াত শরীফে ইরশাদ করিয়াছেন, “যে ব্যক্তি ইসলাম ছাড়া অন্য কোন দ্বীন (নিয়ম-নীতি, অন্য ধর্ম) তালাশ করে, তা কখনই তার থেকে গ্রহণ করা হবেনা এবং সে পরকালে ক্ষতিগ্রস্থদের অন্তর্ভুক্ত হবে।”(সূরা আলে ইমরান/৮৫) আর এই আয়াত শরীফের পরিপ্রেক্ষিতে হাদীস শরীফে উল্লেখ রহিয়াছে, “হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন যে, একদিন হযরত উমর ফারুক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু যখন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিকট এসে বললেন, “আমরা ইহুদীদের অনেক ধর্মীয় কাহিনী, কথা-বার্তা, নিয়ম-কানুন ইত্যাদি শ্রবণ করে থাকি যা আমাদের নিকট ভাল লাগে। আমরা এর থেকে কিছু লিখে রাখতে পারবো কি?” তখন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, “তোমরাও কি তোমাদের দ্বীন সম্পর্কে দ্বিধাগ্রস্থ বা বিভ্রান্ত রয়েছ? যেভাবে ইহুদী-নাসারা বিভ্রান্ত রয়েছে? আল্লাহ্ পাক-এর কসম! আমি তোমাদের নিকট সম্পূর্ণ পরিস্কার ও পরিপূর্ণ দ্বীন এনেছি। হযরত মুসা আলাইহিস্ সালামও যদি এখন থাকতেন, তাহলে তাঁকেও আমার অনুসরণ করতে হতো।” (আহমদ, বায়হাক্বী, শোয়াবুল ঈমান, মিশকাত) তাই আমরা দেইখতে পাই ইহুদী-খ্রীষ্টান তথা বিধর্মীরা যে সকল আমল করিত হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সেই সকল জিনিস স্বয়ং নিজেও অনুসরণ করিতেন না এবং আমাদেরকেও অনুসরণ না করিবার জন্য কঠোরভাবে তাকিদ দিতেন। যেমন, ইহুদী-নাসারারা আশুরার একদিন রোযা রাখিত, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উম্মতে মুহম্মদীকে দুইদিন রোযা রাখতে বললেন। ইহুদী-নাসারারা দেরী করিয়া ইফতার করিত। ইহার পরিপ্রেক্ষিতে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণকে তাড়াতাড়ি ইফতার করিতে বলিয়াছেন। আবার ইহুদীরা শুধুমাত্র পাগড়ী ব্যবহার করিত। ইহার পরিপ্রেক্ষিতে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম টুপি ব্যতীত পাগড়ী পরিতে নিষেধ করিয়াছেন এবং টুপিসহ পাগড়ী ব্যবহার করিতে বলিয়াছেন। দাড়ী ও মোঁচের ব্যাপারে মজুসী (অগ্নি উপাসক) ও মুশরিকদের বিরোধীতা করিতে বলিয়াছেন। যেমন, তাহারা দাড়ী কাটিতো ও মোঁচ বড় করিত। তাই হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলিয়াছেন, “তোমরা দাড়ী বড় কর ও মোঁচ ছোট কর।” ইত্যাদি প্রত্যেক বিষয়ে আল্লাহ্ পাক-এর রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মুসলমানদিগকে আস্তিক, নাস্তিক, ইহুদী-নাসারা, মজুসি-মুশরিক তথা বিজাতীয় বিধর্মীদের অনুসরণ না করিয়া বরং খিলাফ করিতে বলেছেন। কেননা, আল্লাহ্ পাক বলিয়াছেন, তিনিই (আল্লাহ্ পাক) তাঁর রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে হিদায়েত ও সত্য দ্বীনসহ (পূর্বের) সমস্ত দ্বীনের উপর প্রাধান্য দিয়ে পাঠিয়েছেন। এক্ষেত্রে সাক্ষী হিসেবে আল্লাহ্ পাকই যথেষ্ট।” (সূরা ফাত্হ/ ২৮) আল্লাহ্ পাক আরও বলিয়াছেন, “বলে দিন, নিশ্চয়ই আল্লাহ্ পাক-এর হিদায়েতই প্রকৃত হিদায়েত। আপনার কাছে সত্য ইল্ম (অর্থাৎ ইসলাম ধর্ম) আসার পরও যদি আপনি তাদের নফসের বা মনগড়া নিয়ম-নীতির অনুসরণ করেন তবে আপনার জন্য আল্লাহ্ পাক-এর তরফ থেকে কোন অভিভাবক ও সাহায্যকারী নেই বা পাবেন না।” (সুরা বাক্বারা/১২০) উপরোক্ত আয়াত শরীফ অনুযায়ী আমাদের কোন আমল করিতে হইলে বিধর্মী, বিজাতীয় বা নফসের কোন অনুসরণ করা যাইবে না বা তাহাদের থেকে কোন নিয়ম-নীতি গ্রহণ করা যাইবে না। কারণ, তাহা আল্লাহ্ পাক বাতিল ঘোষণা করিয়াছেন। শুধুমাত্র কুরআন শরীফ, হাদীস শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস অনুযায়ী আমল করিতে হইবে, সেইটাই নির্দেশ দিয়েিছন। বেদ্বীন ও বদ্দ্বীনদের অনুসরণ ও অনুকরণ সম্পর্কে আল্লাহ্ পাক-এর রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলিয়াছেন, “ যে ব্যক্তি আমাদের ভিন্ন অন্য জাতির অনুসরণ করে সে আমাদের দলভুক্ত নয়।”(তিরমিযী, মিশকাত) তিনি আরও বলিয়াছেন, “যে ব্যক্তি যে সম্প্রদায়ের সাথে মিল রাখে, সে তাদের অন্তর্ভুক্ত এবং তার হাশর-নশর তাদের সাথে হবে।” (আবূ দাউদ, মুসনদে আহমদ) এই হাদীস শরীফ প্রসঙ্গে নিম্নলিখিত ঘটনা উল্লেখ করা যায়, “হিন্দুস্থানে একজন জবরদস্ত আল্লাহ্ পাক-এর ওলী ছিলেন। যিনি ইন্তিকালের পর অন্য একজন বুযুর্গ ব্যক্তি স্বপে¦ তাঁকে দেখে জিজ্ঞেস করেন, ‘হে আল্লাহ্ পাক-এর ওলী, আপনি কেমন আছেন?’ তখন সেই আল্লাহ্ পাক-এর ওলী জাওয়াবে বলেন, ‘আপাতত আমি ভালই আছি, কিন্তু আমার উপর দিয়ে এক কঠিন সময় অতিবাহিত হয়েছে। যা বলার অপেক্ষা রাখেনা। আমার ইন্তিকালের পর আমাকে ফেরেশ্তাগণ সরাসরি আল্লাহ্ পাক-এর সম্মুখে পেশ করেন। আল্লাহ্ পাক ফেরেশতাদের বলেন, “হে ফেরেশ্তাগণ! তোমরা কেন তাঁকে এখানে নিয়ে এসেছ”? ফেরেশ্তাগণ বলেন, ‘আয় আল্লাহ্ পাক! আমরা তাঁকে খাছ বান্দা হিসেবে আপনার সাথে সাক্ষাৎ করার জন্য নিয়ে এসেছি।’ এটা শ্রবণ করে আল্লাহ্ পাক বললেন, “তাঁকে এখান থেকে নিয়ে যাও, তার হাশর-নশর হিন্দুদের সাথে হবে। কেননা সে পূজা করেছে।’ এটা শুনে আমি ভয় পেয়ে গেলাম এবং আমার সমস্ত শরীর ভয়ে কাঁপতে লাগল। তখন আমি আল্লাহ্ পাক-এর নিকট আরজু পেশ করলাম, ‘আয় আল্লাহ্ পাক! আমার হাশর-নশর হিন্দুদের সাথে হবে কেন? আমি তো সব সময় আপনার এবং হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ফরমাবরদার ছিলাম। কখনও ইচ্ছাকৃত নাফরমানি করিনি এবং কখনো পূজা করিনি আর মন্দিরেও যাইনি।’ তখন আল্লাহ্ পাক বললেন, “তুমি সেদিনের কথা স্মরণ কর, যেদিন হিন্দুস্থানে হোলি পূজা হচ্ছিল। তোমার সামনে-পিছনে, ডানে-বামে, উপরে-নীচে সমস্ত গাছ-পালা, তরু-লতা, পশু-পাখী, কীট-পতঙ্গ সবকিছুকে রঙ দেয়া হয়েছিল। এমতাবস্থায় তোমার সামনে দিয়ে একটি গর্দভ যাচ্ছিল যাকে রঙ দেয়া হয়নি। তখন তুমি পান চিবাচ্ছিলে। তুমি সেই গর্দভের গায়ে এক চিপটি পানের রঙীন রস নিক্ষেপ করে বলেছিলে, ‘হে গর্দভ তোমাকে তো কেউ রঙ দেয়নি, এই হোলি পূজার দিনে আমি তোমাকে রঙ দিয়ে দিলাম।’ এটা কি তোমার পূজা করা হয়নি? তুমি কি জান না, “যে ব্যক্তি যে সম্প্রদায়ের সাথে মিল রাখে, সে তাদের অন্তর্ভুক্ত এবং তার হাশর-নশর তাদের সাথে হবে।” (মিশকাত) সুতরাং তোমার হাশর-নশর হিন্দুদের সাথে হবে।” যখন আল্লাহ্ পাক এই কথা বললেন, তখন আমি লা-জওয়াব হয়ে গেলাম এবং ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে বললাম, ‘আয় আল্লাহ্ পাক! আমি এটা বুঝতে পারিনি।’ কিছুক্ষণ পর আল্লাহ্ পাক বললেন, “হ্যাঁ তোমাকে অন্যান্য আমলের কারণে ক্ষমা করা হয়েছে।” বনী ইসরাঈল আমলের অনুরূপ আরও একটি ওয়াকেয়া তাফসীরে উল্লেখ করা হয়। আল্লাহ্ পাক হযরত ইউশা বিন নুন আলাইহিস্ সালাম-এর উপর ওহী নাযিল করলেন, “হে আমার নবী! আপনার উম্মতের মধ্যে ১ লক্ষ লোককে ধ্বংস করে দেয়া হবে, যার মধ্যে ৬০ হাজার লোক সরাসরি গুণাহে লিপ্ত (গোমরাহ)।” তখন হযরত ইউশা বিন নুন আলাইহিস্ সালাম বললেন, “আয় আল্লাহ্ পাক! ৬০ হাজার লোক সরাসরি গুণাহে লিপ্ত তাই তাদের ধ্বংস করে দেয়া হবে কিন্তু বাকী ৪০ হাজার লোককে ধ্বংস করা হবে কেন?” তখন আল্লাহ্ পাক বললেন, “যেহেতু তারা তাদের সাথে মিলা-মিশা ও ওঠা-বসা করে এবং সম্পর্ক রাখে আর গুণাহের কাজে বাধা দেয় না, তাই তাদেরকেসহ ধ্বংস করে দেয়া হবে।” উপরোক্ত আয়াত শরীফ, হাদীস শরীফ এবং তার ব্যাখ্যার দ্বারা ইহাই সাবেত হইল যে, বিজাতীয় বিধর্মীদের কোন নিয়ম-নীতি, আমল-আখলাক ও সীরত-সূরত কোনটাই অনুসরণ-অনুকরণ করা যাইবেনা। অথচ শতকরা ৮৫ ভাগ মুসলমানের এই দেশে, রাষ্ট্র ধর্ম ইসলামের এই দেশে, খ্রীষ্টান অধ্যুষিত বৃটেন বা ইংল্যান্ডের খ্রীষ্টানদের সেই খ্রীষ্টানী কালচারকে বা নিয়ম-নীতিকেই রাষ্ট্রীয় আচরণ বা ভদ্র আচরণ বলিয়া মূল্যায়ণ করা হয়! এই দেশে এখনও কথিত খ্রীষ্টান রাণীমাতার দেশের ন্যায় ২/১ মিনিট নীরবতা পালন করিয়া শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। শহীদ দিবস, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবসে কথিত খ্রীষ্টান রাণী মাতার দেশের ন্যায় পুস্পস্তবক অর্পন করা হয়। কথিত খৃষ্টান রাণীমাতার বেদীর মত এই দেশের কথিত বিশেষ জনের কবরেও কার্ড ও পুস্পস্তবক অর্পন করা হয়। অথচ এইগুলি যে সম্পূর্ণই কথিত খ্রীষ্টান রাণীমাতার দেশের প্রাচীন ধর্মীয় আচার-আচরণ অর্থাৎ খ্রীষ্টানদের আচরণ তাহা কি এই দেশের মুসলমান রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রীবর্গ, তথাকথিত বুদ্ধিজীবি, শিক্ষাজীবি, সংস্কৃতিজীবি কর্মজীবিরা আদৌ বুঝিতে চাহিবেনা? সাম্প্রতিক কালে অবশ্য এই ক্ষেত্রে নূতন মাত্রা যুক্ত হইয়াছে। এই দেশের তথাকথিত ইসলামী দলের মন্ত্রীরাও তাহাদের বিগত দিনের প্রচারিত আদর্শ বিসর্জন দিয়া খ্রীষ্টান কালচার প্রীতিতে, পুরান পাগল মন্ত্রীদের সাথে একাকার হইয়া গিয়াছে। ইসলামী দাবী করিয়া তাহারাও শহীদ মিনারে গিয়াছে, স্মৃতিসৌধে গিয়াছে এমনকি খ্রীষ্টান রাণীমাতার শেষকৃত্যের অনুষ্ঠানের ন্যায় পুস্পস্তবক অর্পণ অনুষ্ঠানেও কারিশমা দেখাইয়াছে। অথচ এইসব কার্যাবলীকে তাহারাই এতদিন শিরক, পূজা বা হারাম বলিয়াছে। ইহার কারণও অবশ্য রহিয়াছে। কারণ এই লেখার প্রথমেই বর্ণিত হইয়াছে যে, এইগুলি খ্রীষ্টান রাণীমাতার দেশের তথা খ্রীষ্টানদের কালচার। আর খ্রীষ্টান কালচার অনুসরণ করা যে ইসলাম বিরোধী সেই প্রসঙ্গে এই লেখায় কতিপয় কুরআন-হাদীস বিবৃত করা হইয়াছে। সাথে এইগুলি যে হিন্দুদের পূজার শামিল শিরক-হারাম তাহাও বলিবার অপেক্ষা রাখেনা। যেই প্রসঙ্গে শুধু এইলেখায় বিবৃত কুরআন-হাদীসের উল্লিখিত বক্তব্যই নয় আরও বহু নির্দেশ রহিয়াছে।
এক্ষণে ক্ষমতার মোহে, গদী রক্ষার তাগিদে, নেত্রীর নজর কাড়িতে নামধারী ইসলামী দলের ব্যবসায়ী মন্ত্রীরা বুলি পাল্টাইতে পারে, তাহাদের চরিত্র নষ্ট হইতে পারে, বক্তব্য বিকৃত ও পরিবর্তিত হইতে পারে কিন্তু আল্লাহ্ পাক ও তাঁহার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কথা পরিবর্তন হয় কি করিয়া? কাজেই, ২/১ মিনিট নীরবতা পালনে শ্রদ্ধা নিবেদন করা, তোপধ্বনি করিয়া, শোক বইয়ে স্বাক্ষর করা, ফুল ও মোমবাতি জ্বালাইয়া শ্রদ্ধা নিবেদন করা, মৃত্যুর পর যথাসম্ভব তাড়াতাড়ি দাফন না করা এইসব বিজাতীয়, বিধর্মীয় তথা খ্রীষ্টান ও হিন্দুয়ানী কালচার কখনও নামধারী ইসলামী মহলের মন্ত্রীদের মন্ত্রীত্ব রক্ষার্থে ইসলামের দৃষ্টিতে হালাল বা জায়িয হইতে পারেনা। অতএব নামধারী, ব্যবসায়ী ইসলামী নেতা তথা কেতাদূরস্ত খ্রীষ্টান সাহেবদিগের দিকে না তাকাইয়া মুসলমান হিসাবে আমাদেরকে আল্লাহ্ পাক এবং তাঁহার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর আদর্শের দিকেই প্রত্যাবর্তন করা উচিৎ। উহাই সবচাইতে আধুনিক ও ভদ্র এবং প্রজ্ঞাসম্মত ও ছহীহ্ পন্থ। মহান রাব্বুল ইজ্জত সকলকে কবুল করুন। (আমীন) -মুহম্মদ মাহবুবুর রহমান, ঢাকা।
মানব ক্লোনিং- পরিণতি ও প্রাসঙ্গিক ভাবনা