কুরআন শরীফের মু’জিযা এবং মাহিউদ্দীনের মিথ্যাচারীতা

সংখ্যা: ১১৩তম সংখ্যা | বিভাগ:

কালামুল্লাহ শরীফে আল্লাহ্ পাক ইরশাদ ফরমান, “আর তাদের মধ্যে একদল রয়েছে, যারা বিকৃত উচ্চারণে মুখ বাঁকিয়ে কিতাব পাঠ করে, যাতে তোমরা মনে কর যে তারা কিতাব থেকেই পাঠ করছে। তা আদৌ কিতাব নয়। এবং তারা বলে যে, এসব কথা আল্লাহ্ পাক-এর তরফ থেকে আগত। অথচ এসব আল্লাহ্ পাক-এর তরফ থেকে প্রেরিত নয়। তারা বলে যে, এটি আল্লাহ্ পাক-এর কথা অথচ এসব আল্লাহ্ পাক-এর কথা নয়। তারা জেনে শুনেই আল্লাহ্ পাক-এর প্রতি মিথ্যারোপ করে।” (সূরা আলে ইমরান/৭৮)

সত্যিই কুরআন শরীফের এ আয়াত শরীফের প্রত্যক্ষ প্রমাণ আমাদের অবলোকন করার সৌভাগ্য হল মাসিক আল বাইয়্যিনাত-এর মাধ্যমে।        বলাবাহুল্য, এই আয়াত শরীফের যিনি হুবহু মিছদাক হলেন, তিনি দাবীকৃত সাইত্রিশ বছরের তথাকথিত ইসলামী পত্রিকার সম্পাদক। এ সাইত্রিশ বছরে তিনি ইনিয়ে-বিনিয়ে ঘুরিয়ে-পেঁচিয়ে বহু সত্যকে ঢেকে রেখে স্বার্থ রক্ষামূলক মিথ্যা ছেপেছেন। নিম্নে তার একটি সাক্ষাৎ উদাহরণ দেয়া গেলো- জুন/২০০২ এ তথাকথিত ইসলামী মাসিকে নিম্নলিখিত প্রশ্নোত্তর ছাপানো হয়। প্রশ্নঃ কুরআন-হাদীসে নারী নেতৃত্ব হারাম নারীর সাথে একমত করে … আইন পালন করতে পারবে কিনা?

এর উত্তরে লিখা হয়- উত্তরঃ ‘ইসলামে নারী নেতৃত্ব হারাম’ এ ফতওয়াকে কোথায় কোন ভিত্তিতে দিলো, তা আমাদের জানা নাই। তাছাড়া এমন একটা ঢালাও বক্তব্যের পিছনে দলীল কি, তাও জানবার সুযোগ আমাদের হয়নি। পারস্য সাম্রাজ্যের সিংহাসনে পরলোকগত বা নিহত সম্রাটের এক কন্যার অভিষেক হওয়ার সংবাদ হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে শোনানোর পর তিনি মন্তব্য করেছিলেন যে, সে জাতির কল্যাণ হতে পারে না যে জাতির নেতৃত্ব নারীর হাতে অর্পিত হয়। এই হাদীসখানার পরিপ্রেক্ষিতে ফিক্বাহবিদগণ নারী নেতৃত্ব অনুত্তম সাব্যস্ত করেছেন। হারাম সাব্যস্ত করেন নাই। ইসলামী রাষ্ট্রের রাষ্ট্রপ্রধান নির্বাচনের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে ঈমানদার, সুস্থমস্তিষ্ক, সুবিবেচক ইত্যাদি গুণে গুণান্বিত হওয়ার শর্ত আরোপ করেছেন। সুস্থমস্তিষ্ক সম্পন্ন নয়, ফাসিক বা প্রমাণিত দুষ্কৃতকারীকে ইসলামী রাষ্ট্রের যে কোন ধরণেরই দায়িত্ব দেয়া নিষিদ্ধ। কিন্তু এমন কথা কোথাও রয়েছে বলে আমার জানা নাই যে, কোন অবস্থাতেই কোন নারীকে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া যাবে না। সুতরাং ইসলামের নামে ঢালাও ফতওয়া বা মন্তব্য করা কি ঠিক হবে?”

উল্লেখ্য, মদীনা সম্পাদক মাহিউদ্দীন যেভাবে ঘুরিয়ে-পেঁচিয়ে এ উত্তর লিখেছে তাতে সাধারণ মানুষের মনে হতে পারে যে মাহিউদ্দীনের কথাই বুঝি ঠিক। যে সম্পর্কে প্রদত্ত আয়াত শরীফে বলা হয়েছে।

“আর তাদের মধ্যে একদল রয়েছে, যারা বিকৃত উচ্চারণে মুখ বাঁকিয়ে কিতাব পাঠ করে, যাতে তোমরা মনে কর যে, তারা কিতাব থেকে পাঠ করছে। অথচ তারা যা আবৃত্তি করছে তা আদৌ কিতাব নয়।” কিন্তু মাহিউদ্দীনের কথা যে ঠিক নয় তা মাহিউদ্দীনই প্রমাণ করেছে। ঘটনার তারিখ ১৯৮৯ সালের এপ্রিল মাস। কিশোরগঞ্জ তারাইল বাজার থেকে মুহম্মদ আব্দুল হাই তাকে প্রশ্নটি করেছিলেন।

প্রশ্নটি ছিলো, “কোন মহিলাকে মুসলিম রাষ্ট্রের রাষ্ট্রপ্রধান বানানো শরীয়ত সম্মত কিনা জানালে কৃতজ্ঞ হব। উত্তরে সাইত্রিশ বছরের তথাকথিত ইসলামী পত্রিকার সম্পাদক তখন লিখেছিলেন-

উত্তরঃ কোন মুসলিম শাসনকর্তা যদি ইসলামী অনুশাসন অনুসরণ করতে যান তবে তার সর্ব প্রথম কর্তব্য দাঁড়ায় স্বীয় ইমামতিতে নামায প্রতিষ্ঠা করা ও জিহাদে নেতৃত্ব দেয়া। এ দুটি ক্ষেত্রেই কিন্তু নারীর নেতৃত্ব চলেনা। একজন মহিলা যত বড় বিদুষী ও পূণ্যবতীই হোননা কেন, তাঁর পক্ষে নামাযের ইমামতি করার প্রশ্ন আসে না। সেমতে কোন নারীর পক্ষে ইসলামী দেশের সর্বোচ্চ শাসন ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়া ইসলামী শরীয়ত সমর্থিত নয়। এক হাদীসে রয়েছে, আল্লাহ্ পাক-এর রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, তোমাদের  শাসকগণ যখন হবে কৃপন আর শাসন ক্ষমতা গিয়ে পড়বে নারীদের হাতে তখন দুনিয়ার পৃষ্ঠদেশ অপেক্ষা অভ্যন্তর ভাগই তোমাদের জন্য অধিক মঙ্গলজনক বলে বিবেচিত হবে।”

হযরত রসূলে করিম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সময়কালে পারস্য সম্রাট কিসরার এক কন্যাকে সিংহাসনে বসানো হয়েছিল। এ সংবাদ শুনে আল্লাহ্ পাক-এর রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া  সাল্লাম মন্তব্য করেছিলেন, যে জাতি তাদের শাসনকর্তৃত্ব নারীদের হাতে তুলে দেয়, তাদের কখনও মঙ্গল হতে পারে না।”

          উপরোক্ত দুটি হাদীসই ছহীহ্ এবং হাদীসের প্রায় সব ক’টি বিখ্যাত কিতাবে রয়েছে।    অতএব পাঠক! দেখা গেল মাহিউদ্দীন জেনে শুনেই আল্লাহ্ পাক-এর প্রতি, আল্লাহ্ পাক-এর রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি মিথ্যারোপ করছে। যদি একই প্রশ্নের উত্তরে ১৯৮৯ সালের এপ্রিল সংখ্যায় মাহিউদ্দীনের উক্ত উত্তর লিপিবদ্ধ না থাকত তাহলে বলার অবকাশ থাকত যে, মাহিউদ্দীন জানেনা অথবা ২০০১ জুনে সে যেরূপ লিখেছে সেরূপই সে বুঝেছে।

কিন্তু ১৯৮৯ এর লিখিত উত্তরের পর বর্তমান জুন ২০০২ এর উত্তর দ্বারা বুঝা গেল যে সে জেনে-শুনেই, আল্লাহ্ পাক-এর প্রতি, আল্লাহ্ পাক-এর রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি মিথ্যারোপ করেছে।

আর যারা আল্লাহ্ পাক-এর প্রতি মিথ্যারোপ করে, কুরআন শরীফে তাদের ঠিকানা নিকৃষ্ট জাহান্নামে উল্লেখ করা হয়েছে এবং যে আল্লাহ্ পাক-এর রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি মিথ্যারোপ করে হাদীস শরীফের ভাষায় তাকে দুনিয়াতেই জাহান্নামবাসী বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। কিন্তু সেটা মাহিউদ্দীনের ব্যক্তিগত পরিণতি হতে পারে।  কিন্তু ঈমানদার মুসলমানের কাছে তার পরিচয় এতটুকুতেই সীমাবদ্ধ নয়, কারণ সেতো ব্যক্তি জীবনেই আটক নয়। সে যে হাদীর পরিচয়ে, আলিমের পোশাকে বিচরণ করছে। হাদীস শরীফের পরিভাষায় এ মিথ্যাবাদী, স্ববিরোধী লোককে তাই বলতে হয় ধর্মব্যবসায়ী তথা উলামায়ে ‘ছূ’। উল্লেখ্য, শুধু এই একটি উদাহরণই তথাকথিত মদীনা সম্পাদক যে অপরাপর ইসলামী মাসয়ালা-মাসায়িলের ক্ষেত্রে কত বেশী সত্যের অপলাপ করে, কত ভুল ও গোমরাহী উত্তর দিয়ে বর্তমান উম্মাহ্র আমল-আক্বীদা নষ্ট করছে তা মাসিক আল বাইয়্যিনাত-এর প্রতিটি সংখ্যা খুললেই দলীলভিত্তিক জাওয়াব পাওয়া যায়।          আর মাহিউদ্দীন যে নিজের বিরুদ্ধেও নিজে লিখতে, নিজের বিরুদ্ধেও নিজে বলতে পারঙ্গম সেটি দলীলসহকারে আল বাইয়্যিনাতে তুলে ধরা হয় বলেই সে বাইয়্যিনাত-এর বিরুদ্ধেও বলে এবং লিখে। অথচ মাহিউদ্দীনের হাক্বীক্বত প্রদত্ত আয়াত শরীফেই স্পষ্ট প্রকাশ পেয়েছে।

– মুহম্মদ জিশান, ঢাকা।

আকবরের আমলের উলামায়ে ‘ছূ’দের উত্তরাধিকারী মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে দ্বীন-ই-ইলাহীর আদলে দ্বীন-ই-জুমহুরী প্রচলনে তারা এক হয়েছে-৪

প্রসঙ্গঃ গণতন্ত্র; এখনই চরম সময়, বিষয়টি ভাবিবার- ১০

একটি অভূতপূর্ব ওয়াজ শরীফ এবং কম্পিউটারে কুরআন শরীফ, মাজার শরীফের উপরে ভাসমান দৃশ্য ও তাঞ্জানিয়ার সেই ছেলের কথা

প্রসঙ্গঃ দরসে বুখারীর পঞ্চদশ বছর পূর্তি নামধারী জাহিরী আলিমদের ডামাডোলের বিপরীতে মুজাদ্দিদুয্ যামানের পরিচয়

আকবরের আমলের উলামায়ে ‘ছূ’দের উত্তরাধিকারী মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে দ্বীন-ই-ইলাহীর আদলে দ্বীন-ই-জুমহুরী প্রচলনে তারা এক হয়েছে-৫