কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে প্রাণীর মূর্তি তৈরি করা ও ছবি আঁকা, তোলা, তোলানো, রাখা, রাখানো, দেখা, দেখানো হারাম-নাজায়িয হওয়ার অকাট্য প্রমাণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া

সংখ্যা: ২১৭তম সংখ্যা | বিভাগ:

৫০তম পর্ব

[সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন-উনার জন্যে এবং অসংখ্য দুরূদ ও সালাম আল্লাহ পাক-উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু  আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার প্রতি। আল্লাহ পাক-উনার অশেষ রহ্মতে “গবেষণা কেন্দ্র মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ”-এর ফতওয়া বিভাগের তরফ থেকে বহুল প্রচারিত, হক্বের অতন্দ্র প্রহরী, বাতিলের আতঙ্ক ও আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদায় বিশ্বাসী এবং হানাফী মাযহাব-এর অনুসরণে প্রকাশিত একমাত্র দলীলভিত্তিক যামানার তাজদীদী মুখপত্র “মাসিক আল বাইয়্যিনাত” পত্রিকায় যথাক্রমে- ১. টুপির ফতওয়া (২য় সংখ্যা) ২. অঙ্গুলী চুম্বনের বিধান (৩য় সংখ্যা) ৩. নিয়ত করে মাজার শরীফ যিয়ারত করা (৪র্থ সংখ্যা) ৪. ছবি ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় হারাম হওয়ার ফতওয়া (৫ম-৭ম সংখ্যা) ৫. জুমুয়ার নামায ফরযে আইন ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ফতওয়া (৮ম-১০ম সংখ্যা) ৬. মহিলাদের মসজিদে গিয়ে জামায়াতে নামায পড়া মাকরূহ্ তাহ্রীমী সম্পর্কে ফতওয়া (১১তম সংখ্যা) ৭. কদমবুছী ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১২তম সংখ্যা) ৮. তাহাজ্জুদ নামায জামায়াতে পড়া মাকরূহ্ তাহ্রীমী ও বিদ্য়াতে সাইয়্যিয়াহ্ এবং তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৩তম সংখ্যা) ৯. ফরয নামাযের পর মুনাজাত ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৪-২০তম সংখ্যা) ১০. ইন্জেকশন নেয়া রোযা ভঙ্গের কারণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২১-২২তম সংখ্যা) ১১. তারাবীহ্-এর নামাযে বা অন্যান্য সময় কুরআন শরীফ খতম করে উজরত বা পারিশ্রমিক গ্রহণ করা জায়িয ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২৩-২৪তম সংখ্যা) ১২. তারাবীহ্ নামায বিশ রাকায়াত ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২৫-২৯তম সংখ্যা) ১৩. দাড়ী ও গোঁফের শরয়ী আহ্কাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৩০-৩৪তম সংখ্যা) ১৪. প্রচলিত তাবলীগ জামায়াত ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৩৫-৪৬তম সংখ্যা) ১৫. আযান ও ছানী আযান মসজিদের ভিতরে দেয়ার আহ্কাম এবং তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৪৭-৫০তম সংখ্যা) ১৬. দোয়াল্লীন-যোয়াল্লীন-এর শরয়ী ফায়সালা এবং তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে  ফতওয়া (৫১-৫২তম সংখ্যা) ১৭. খাছ সুন্নতী টুপি ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে  ফতওয়া (৫৩-৫৯তম সংখ্যা) ১৮. নূরে মুহম্মদী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও উনার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে  ফতওয়া (৬০-৮২তম সংখ্যা) ১৯. ইমামাহ্ বা পাগড়ী মুবারকের আহ্কাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কিত ফতওয়া (৮৩-৯৬তম সংখ্যা) ২০. শরীয়তের দৃষ্টিতে আখিরী যোহ্র বা ইহ্তিয়াতুয্ যোহ্রের আহ্কাম এবং তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৯৭-১০০তম সংখ্যা)  ২১. জানাযা নামাযের পর হাত তুলে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করার শরয়ী ফায়সালা ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১০১-১১১তম সংখ্যা) এবং  ২২. হিজাব বা পর্দা ফরযে আইন হওয়ার প্রমাণ ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১১২-১৩১তম সংখ্যা) ২৩. খাছ সুন্নতী ক্বমীছ বা কোর্তা এবং তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৪০তম সংখ্যা) ২৪. হানাফী মাযহাব মতে ফজর নামাযে কুনূত বা কুনূতে নাযেলা পাঠ করা নাজায়িয ও নামায ফাসিদ হওয়ার কারণ এবং তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৩২-১৫২তম সংখ্যা) ২৫. ইসলামের দৃষ্টিতে বিশ্বকাপ ফুটবল বা খেলাধুলা’র শরয়ী আহকাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ফতওয়া (১৫৫তম সংখ্যা) ২৬. হানাফী মাযহাব মতে পুরুষের জন্য লাল রংয়ের পোশাক তথা রুমাল, পাগড়ী, কোর্তা, লুঙ্গি, চাদর ইত্যাদি পরিধান বা ব্যবহার করা হারাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৫৩-১৬০তম সংখ্যা)   ২৭.  ইসলামের  নামে গণতন্ত্র ও নির্বাচন করা, পদপ্রার্থী হওয়া, ভোট চাওয়া ও দেয়া হারাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৬১-১৭৫তম সংখ্যা) ২৮. কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে প্রাণীর মূর্তি তৈরি করা ও ছবি আঁকা, তোলা, তোলানো, রাখা, রাখানো, দেখা, দেখানো হারাম নাজায়িয হওয়ার অকাট্য প্রমাণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৬৮-চলমান), ২৯. জুমুয়া ও ঈদাইনের খুৎবা আরবী ভাষায় দেয়া ওয়াজিব। আরবী ব্যতীত অন্য কোন ভাষায় খুৎবা দেয়া মাকরূহ তাহরীমী ও বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৯২-১৯৩তম সংখ্যা) ৩০. কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে লাইলাতুন নিছফি মিন শা’বান শবে বরাত-এর আহকাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৯৫-২১৩তম সংখ্যা) পেশ করা হয়েছে।

আর বর্তমানে ২৮তম ফতওয়াটি অর্থাৎ “কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে প্রাণীর মূর্তি তৈরি করা ও ছবি আঁকা, তোলা, তোলানো, রাখা, রাখানো, দেখা, দেখানো হারাম নাজায়িয হওয়ার অকাট্য প্রমাণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়াটি” এখনো পত্রস্থ হচ্ছে। তাই মহান আল্লাহ পাক-উনার দরবার শরীফ-এ শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি।

প্রাণীর মূর্তি তৈরি করা, করানো ও ছবি আঁকা, তোলা, তোলানো, রাখা, রাখানো, দেখা, দেখানো হারাম নাজায়িয হওয়ার অকাট্য প্রমাণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া দেয়ার কারণ

সুন্নতের পথিকৃত, হক্বের অতন্দ্র প্রহরী, দ্বীন ইসলামের নির্ভীক সৈনিক, সারা জাহান থেকে কুফরী, শিরক ও বিদ্য়াতের মূলোৎপাটনকারী, বাতিলের আতঙ্ক এবং আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদায় বিশ্বাসী একমাত্র দলীলভিত্তিক তাজদীদী মুখপত্র- “মাসিক আল বাইয়্যিনাত” পত্রিকায় এ যাবৎ যত লেখা বা ফতওয়াই প্রকাশ বা পত্রস্থ হয়েছে এবং ইনশাআল্লাহ হবে তার প্রতিটিরই উদ্দেশ্য বা মাকছূদ এক ও অভিন্ন। অর্থাৎ “মাসিক আল বাইয়্যিনাত”-এ এমন সব লেখাই পত্রস্থ হয়, যা মানুষের আক্বীদা ও আমলসমূহ পরিশুদ্ধ ও হিফাযতকরণে বিশেষ সহায়ক।

বর্তমানে ইহুদীদের এজেন্ট হিসেবে মুসলমানদের ঈমান আমলের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করছে যারা, তারা হলো ‘ওহাবী সম্প্রদায়’। ইহুদীদের এজেন্ট ওহাবী মতাবলম্বী উলামায়ে ‘ছূ’রা হারাম টিভি চ্যানেলে, পত্র-পত্রিকা, কিতাবাদি ও বক্তব্য বা বিবৃতির মাধ্যমে একের পর এক হারামকে হালাল, হালালকে হারাম, জায়িযকে নাজায়িয, নাজায়িযকে জায়িয বলে প্রচার করছে। (নাঊযুবিল্লাহ)

স্মরণীয় যে, ইহুদীদের এজেন্ট, ওহাবী মতাবলম্বী দাজ্জালে কায্যাব তথা উলামায়ে ‘ছূ’রা প্রচার করছে “ছবি তোলার ব্যাপারে ধর্মীয় কোন নিষেধাজ্ঞা নেই”। (নাউযুবিল্লাহ) সম্প্রতি দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে, “নির্বাচন কমিশনার বলেছে, ছবি তোলার বিরুদ্ধে বললে জেল-জরিমানা হবে, নির্বাচন কমিশনার ভোটার আই.ডি কার্ডের জন্য ছবিকে বাধ্যতামূলক করেছে এবং ছবির পক্ষে মসজিদে, মসজিদে প্রচারণা চালাবে বলেও মন্তব্য করেছে। আর উলামায়ে ‘ছূ’রা তার এ বক্তব্যকে সমর্থন করে বক্তব্য দিয়েছে যে, “রাষ্ট্রীয় প্রয়োজনে পুরুষ-মহিলা সকলের জন্যেই ছবি তোলা জায়িয।” (নাঊযুবিল্লাহ) শুধু তাই নয়, তারা নিজেরাও অহরহ ছবি তুলে বা তোলায়।

অথচ তাদের উপরোক্ত বক্তব্য সম্পূর্ণ মিথ্যা, চরম বিভ্রান্তিকর ও কুফরীমূলক। তাদের এ বক্তব্যের কারণে তারা নিজেরা যেরূপ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তদ্রুপ তাদের উক্ত কুফরীমূলক বক্তব্য ও বদ্ আমলের কারণে সাধারণ মুসলমানগণ ই’তিক্বাদী বা আক্বীদাগত ও আ’মালী বা আমলগত উভয় দিক থেকেই বিরাট ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে।

কারণ, তাদের উক্ত বক্তব্যের কারণে যারা এ আক্বীদা পোষণ করবে যে, “রাষ্ট্রীয় প্রয়োজনে ছবি তোলা জায়িয” তারা ঈমানহারা হয়ে কাট্টা কাফির ও চির জাহান্নামী হবে। কারণ শরীয়তের দৃষ্টিতে হারাম বা নাজায়িযকে হালাল বা জায়িয বলা কুফরী। কেননা কিতাবে স্পষ্টই উল্লেখ আছে যে,

استحلال الـمعصية كفر.

অর্থাৎ “গুনাহের কাজ বা হারামকে হালাল মনে করা কুফরী।” (শরহে আক্বাইদে নাসাফী।)

অতএব, বলার আর অপেক্ষাই রাখেনা যে, উলামায়ে “ছূ”দের উক্ত বক্তব্য সাধারণ মুসলমানদের আক্বীদা বা ঈমানের জন্য বিশেষভাবে হুমকিস্বরূপ।

অনুরূপ “ছবি তোলার ব্যাপারে ধর্মীয় কোন নিষেধ নেই বা রাষ্ট্রীয় প্রয়োজনে সকলের জন্যে ছবি তোলা জায়িয” উলামায়ে “ছূ”দের এ কুফরীমূলক বক্তব্য মুসলমানদের আমলের ক্ষেত্রেও বিশেষ ক্ষতির কারণ। কেননা যারা তাদের উক্ত বক্তব্যের কারণে ছবি তুলবে (যদিও হারাম জেনেই তুলুক না কেন) তারা আল্লাহ পাক এবং উনার হাবীব কর্তৃক নিষিদ্ধকৃত কাজে তথা হারাম কাজে মশগুল হবে যা শক্ত আযাব বা কঠিন গুনাহের কারণ। কেননা হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে-

قال حدثنا الاعمش عن مسلم قال كنا مع مسروق فى دار يسار بن نـمير فراى فى صفته تـماثيل فقال سمعت عبد الله قال سمعت النبى صلى الله عليه وسلم يقول ان اشد الناس عذابا عند الله الـمصورون.

অর্থঃ হযরত আ’মাশ রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত মুসলিম রহমতুল্লাহি আলাইহি হতে বর্ণনা করেন তিনি বলেন, আমি হযরত মাসরূক রহমতুল্লাহি আলাইহি-উনার সঙ্গে ইয়াসার ইবনে নুমাইর-উনার ঘরে ছিলাম, তিনি উনার ঘরের মধ্যে প্রাণীর ছবি দেখতে পেলেন, অতঃপর বললেন, আমি হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-উনার নিকট শুনেছি, তিনি বলেন, আল্লাহ পাক-উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেছেন, “নিশ্চয়ই মানুষের মধ্যে ঐ ব্যক্তিকে আল্লাহ পাক কঠিন শাস্তি দেবেন, যে ব্যক্তি প্রাণীর ছবি তোলে বা আঁকে।” (বুখারী শরীফ ২য় জিঃ, পৃঃ ৮৮০)

উক্ত হাদীছ শরীফ-এর ব্যাখ্যায় “উমদাতুল ক্বারী শরহে বুখারীতে” উল্লেখ আছে,

وفى التوضيح قال اصحابنا وغيرهم صورة الحيوان حرام اشد االتحريم وهم من الكبائر.

অর্থ: ‘তাওদ্বীহ’ নামক কিতাবে উল্লেখ আছে যে, হযরত উলামায়ে কিরামগণ প্রত্যেকেই বলেন, জীব জন্তুর ছবি বা প্রতিমূর্তি নির্মাণ করা হারাম বরং শক্ত হারাম এবং এটা কবীরা গুনাহর অন্তর্ভুক্ত।

অতএব, নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, উলামায়ে “ছূ”দের উক্ত বক্তব্য ও বদ আমলের কারণে সাধারণ মুসলমানগণ ছবি তুলে প্রকাশ্য হারাম কাজে মশগুল হয়ে কঠিন আযাবের সম্মুখীন হবে যা আমলের ক্ষেত্রে বিশেষভাবে ক্ষতিকর।

কাজেই, যারা এ ধরনের কুফরী আক্বীদায় বিশ্বাসী ও কুফরী বক্তব্য প্রদানকারী তারা ও হক্ব সমঝদার মুসলমানগণ ঈমান ও আমলকে যেন হিফাযত করতে পারে অর্থাৎ মূর্তি বা ছবিসহ সকল বিষয়ে আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদা অনুযায়ী আক্বীদা পোষণ করতে পারে এবং কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস মোতাবেক আমল করে আল্লাহ পাক উনার রিযামন্দি হাছিল করতে পারে সে জন্যেই “কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে প্রাণীর মূর্তি তৈরি করা ও ছবি আঁকা, তোলা, তোলানো, রাখা, রাখানো, দেখা, দেখানো হারাম নাজায়িয হওয়ার অকাট্য প্রমাণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কিত ফতওয়াটি” পুনরায় প্রকাশ করা হলো।

প্রাণীর মূর্তি, ভাস্কর্য তৈরি করা-করানো, ছবি তোলা-তোলানো, আঁকা-আঁকানো, রাখা-রাখানো হারাম ও নাজায়িয হওয়ার অকাট্য ও নির্ভরযোগ্য দলীল প্রমাণ

স্মর্তব্য যে, নির্ভরযোগ্য ও সর্বজনমান্য প্রায় হাদীছ শরীফ, হাদীছ শরীফ-এর ব্যাখ্যাগ্রন্থ ও ফিক্বাহ-ফতওয়ার কিতাবেই “প্রাণীর মূর্তি, ভাস্কর্য তৈরি করা-করানো, ছবি তোলা-তোলানো, আঁকা-আঁকানো, রাখা-রাখানো হারাম ও নাজায়িয” বলে উল্লেখ আছে। নিম্নে সেসকল কিতাবসমূহ থেকে ধারাবাহিকভাবে এ সম্পর্কিত দলীল প্রমাণ তুলে ধরা হলো-

 

মিরয়াতুল মানাজীহ

(৮৯৭)

اس فرمان سے معلوم ہو رھا ھے کہ تصویریں بنانے والے اور ان کو شوقیۃ رکھنے والے دونوں ھی اس مذکورۃ سزا کے  مستحق ھیں اس سے یہ بھی معلوم ھوا کہ شوقیۃ تصویر کھیچوانا بھی حرام ھے کہ تصویر کھیچوانے اور تصویر رکھنے میں تصویر بنانے والوں کی امداد ھے گناہ پر مدد کرنا بھی گناہ ھے. (مرأۃ المناجیح شرح مشکوۃ المصابیح لباس کا بیان تصویرون کا باب پھلی فصل جلد ۶ صفحۃ ۱۹۸)

অর্থ: বর্ণিত হাদীছ শরীফ থেকে বুঝা যাচ্ছে যে, প্রাণীর ছবি তৈরিকারী এবং এগুলো সম্মানের সাথে রাখনেওয়ালা উভয় প্রকার ব্যক্তি হাদীছ শরীফ-এ উল্লিখিত শাস্তির উপযুক্ত। বর্ণিত হাদীছ শরীফ দ্বারা এটাও বুঝা গেল যে, প্রাণীর ছবি তোলানোও হারাম। ছবি তোলানো ও সম্মানের সাথে ঘরে রাখার মাধ্যমে ছবি তৈরিকারীকে সহযোগিতা করা হয়। আর গুনাহের কাজে সাহায্য সহযোগিতা করাও গুনাহ। (মিরয়াতুল মানাজীহ শরহে মিশকাতুল মাছাবীহ অধ্যায়: পোশাক-পরিচ্ছদ, পরিচ্ছেদ: প্রাণীর ছবি-মূর্তি-ভাস্কর্যের শরয়ী বিধান ১ম অনুচ্ছেদ ৬ষ্ঠ খ- ১৯৮ পৃষ্ঠা)

(৮৯৮-৯০০)

یھاں مرقات نے فرمایا کہ اس جگہ تصویر والوں سے مراد تصویر بنانے والے اور تصویر استعمال کرنےوالے سب ھی ھیں اور ان سب پر یہ عتاب ھوگا، مگر اشعۃ اللمعات نے فرمایا کہ اس سے مراد صرف تصویر بنانے والے ھیں، کیونکہ خلقتم انھیں سے کھا جاسکتا ھے بہ ھر حال تصویر بنانا سخت حرام اور تصویر کھیچوانا اسے حرمت سے رکھنا اس لئے حرام ھے کہ یہ گناہ پر مدد ھے. (مرأۃ المناجیح شرح مشکوۃ المصابیح لباس کا بیان تصویرون کا باب پھلی فصل جلد ۶ صفحۃ ۱۹۸)

অর্থ: এ হাদীছ শরীফ-এর ব্যাখ্যায় ছহিবে মিরকাত তিনি বলেন, ‘তাছবীরওয়ালা’ দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে প্রাণীর ছবি-মূর্তি-ভাস্কর্য তৈরিকারী এবং এগুলো ব্যবহারকারী। আর এরা সকলেই বর্ণিত শাস্তির উপযুক্ত। আশয়াতুল লুময়াত  কিতাবের লিখক তিনি বলেন, এর দ্বারা শুধুমাত্র প্রাণীর ছবি-মূর্তি-ভাস্কর্য তৈরিকারী উদ্দেশ্য।

কেননা হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত تصوير শব্দ দ্বারা ছবি তৈরীকারীকেই বুঝানো হয়েছে। সুতরাং প্রত্যেক অবস্থাতেই প্রাণীর ছবি তৈরী করা শক্ত হারাম। আর ছবি তোলানো এবং সসম্মানে ছবিকে ঘরে রাখা এজন্য হারাম যে, তাতে গুনাহের কাজে বা হারাম কাজে সহযোগিতা করা হয়। (মিরয়াতুল মানাজীহ শরহে মিশকাতুল মাছাবীহ অধ্যায়: পোশাক-পরিচ্ছদ, পরিচ্ছেদ: প্রাণীর ছবি-মূর্তি-ভাস্কর্যের শরয়ী বিধান ১ম অনুচ্ছেদ ৬ষ্ঠ খ- ১৯৮ পৃষ্ঠা, মিরকাতুল মাফাতীহ, আশয়াতুল লুময়াত)

(৯০১)

جیسی جاندار  کی صورتیں اللہ تعالی بناتا  ھے ویسی یہ بناتے ھیں گویا رب تعالی کا مقابلۃ  کرتے ھیں اور اس سے مقابلۃ کرنے والا مستحق عذاب ھے. (مرأۃ المناجیح شرح مشکوۃ المصابیح لباس کا بیان تصویرون کا باب پھلی فصل جلد ۶ صفحۃ ۲۰۰)

অর্থ: মহান আল্লাহ পাক তিনি যেরূপ প্রাণীর আকৃতি তৈরি করেন, ছবি তৈরীকারীরাও তদ্রƒপ করে থাকে। আর এর মাধ্যমে মূলত তারা মহান আল্লাহ পাক উনার সমকক্ষতা দাবি করে থাকে। মহান আল্লাহ পাক উনার সমকক্ষ দাবিকারী কঠিন শাস্তির উপযুক্ত। (মিরয়াতুল মানাজীহ শরহে মিশকাতুল মাছাবীহ অধ্যায়: পোশাক-পরিচ্ছদ, পরিচ্ছেদ: প্রাণীর ছবি-মূর্তি-ভাস্কর্যের শরয়ী বিধান ১ম অনুচ্ছেদ ৬ষ্ঠ খ- ২০০ পৃষ্ঠা, মিরকাতুল মাফাতীহ, আশয়াতুল লুময়াত)

(৯০২)

یھاں مصوریں سے مراد بت سازبت تراش ھیں جو  پر ستش کیلئے بت بنائیں یاوہ مصور مراد ھیں جو رب تعالی کے مقابلۃ کیلئے تصویر سازی کریں یہ دونوں کافر ھیں اور کافر واقعی سخت عذاب کے مستحق ھیں اور اگر مصوریں سے  مراد عام فوٹو گرافر ھیں، تو یہ فرمان عالی ڈرانے کیلئے ھے تاکہ لوگ اس حرکت سے باز أجاویں ورنہ ایسے لوگ فاسق ھیں اور فاسق کا عذاب کافر سے ھلکا ھے، یا اس صورت میں ناس سے مراد مسلمان ھیں یعنی گنھگار مسلمانوں میں سب سے زیادہ سخت عذاب تصویر سازوں کو ھوگا تصویر سے مراد جاندار کی تصویر ھے.  (مرأۃ المناجیح شرح مشکوۃ المصابیح لباس کا بیان تصویرون کا باب پھلی فصل جلد ۶ صفحۃ ۲۰۱)

অর্থ: এখানে ‘মুছাব্বিরীন’ দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে ঐ সকল মূর্তি-পুতুল-ভাস্কর্য তৈরিকারী যেগুলোকে পুজা করা হয় অথবা ‘মুছাব্বির’ দ্বারা উদ্দেশ্যে হচ্ছে ঐ ব্যক্তি যে মহান আল্লাহ পাক উনার মোকাবিলার জন্য মূর্তি, পুতুল ভাস্কর্য ও ছবি তৈরী করে। এরা উভয়েই মূলত কাফির। আর কাফিররা শক্ত শাস্তি পাওয়ারই উপযুক্ত। আর যদি সাধারণভাবে ‘মুছাব্বির’ দ্বারা ফটোগ্রাফার বা প্রাণীর ছবি তোলনেওয়ালা ব্যক্তিকে বুঝায় তাহলে হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত শাস্তির বিষয়টি ভয়ভীতি দেখানোর জন্যে। যাতে করে এই ভীতিমূলক নিষেধের কারণে তারা হারাম থেকে বেঁচে থাকে। প্রাণীর ছবি তোলনেওয়ালা ও তোলানেওয়ালারা ফাসিক বা কবীরাহ গুনাহে গুনাহগার। আর ফাসিকের শাস্তি কাফিরের শাস্তির থেকে হালকা। এ দৃষ্টিকোন থেকে ‘নাস’ দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে মুসলমান। অর্থাৎ গুনাহগার মুসলমানের মধ্যে ঐ ব্যক্তিকে সবচেয়ে কঠিন আযাব দেয়া হবে, যে ব্যক্তি প্রাণীর ছবি-মূর্তি-ভাস্কর্য তৈরি করে। আর ‘তাছবীর’ দ্বারা প্রাণীর ছবি-মূর্তি-ভাস্কর্য উদ্দেশ্য। (মিরয়াতুল মানাজীহ শরহে মিশকাতুল মাছাবীহ অধ্যায়: পোশাক-পরিচ্ছদ, পরিচ্ছেদ: প্রাণীর ছবি-মূর্তি-ভাস্কর্যের শরয়ী বিধান ১ম অনুচ্ছেদ ৬ষ্ঠ খ- ২০১ পৃষ্ঠা)

(৯০৩)

یا تو اس کی بنائی ھوئی تصویر میں جان ڈالدی جاوے گی اور وہ سب مل کرا سے عذاب دیں گی یا ھر تصویر کی عوض ایک فرشتہ اس پر مسلط ھوگا جو اسے عذاب دےگا. لھذا نفس سے مراد روح ھے. (مرأۃ المناجیح شرح مشکوۃ المصابیح لباس کا بیان تصویرون کا باب پھلی فصل جلد ۶ صفحۃ ۲۰۲)

অর্থ: ক্বিয়ামতের দিন তার তৈরিকৃত হারাম মূর্তি-ভাস্কর্য-প্রাণীর ছবিগুলোতে প্রাণ দেওয়া হবে, আর তারা সবাই মিলে যে ছবিগুলো তৈরি করেছে তাকে শাস্তি দিতে থাকবে। অথবা প্রতিটি ছবির পরিবর্তে একজন ফেরেশতা নিযুক্ত করা হবে যাঁরা তাকে শাস্তি দিবে। হাদীছ শরীফে নফস দ্বারা রূহ বা প্রাণ উদ্দেশ্য। অর্থাৎ যার রুহ বা প্রাণ রয়েছে। (মিরয়াতুল মানাজীহ শরহে মিশকাতুল মাছাবীহ অধ্যায়: পোশাক-পরিচ্ছদ, পরিচ্ছেদ: প্রাণীর ছবি-মূর্তি-ভাস্কর্যের শরয়ী বিধান ১ম অনুচ্ছেদ ৬ষ্ঠ খ- ২০২ পৃষ্ঠা)

(৯০৪)

وہ استثناء سے معلوم ہوا کہ ھر غیر جندار کی تصویر بنانا جائز ھے بعض علماء نے فرمایا کہ پھل دار درختوں کی تصویر بنانا مکروہ ھے مگر حق یہ ھے کر مکروہ بھی نھیں باں لھو ولعب کی نیت سے بنانا  اس لیے مکروہ ہوگا کہ کھیل  کود مکروہ ہے. (مرأۃ المناجیح شرح مشکوۃ المصابیح لباس کا بیان تصویرون کا باب پھلی فصل جلد ۶ صفحۃ ۲۰۲)

অর্থ: হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত ‘ইস্তিছনা’ দ্বারা বুঝা যায় যে, প্রাণহীনের ছবি বা আকৃতি তৈরি করা জায়িয। কতক উলামায়ে কিরাম বলেছেন, ফলবিশিষ্ট গাছের ছবি বা আকৃতি তৈরি করা মাকরূহ। কিন্তু সঠিক মত এটাই যে, মাকরূহ নয়। তবে যদি খেল-তামাশা করার উদ্দেশ্যে তৈরি করে তাহলে মাকরূহ তাহরীমী বা হারাম হবে। যেহেতু খেল-তামাশা কৌতুক ইত্যাদি মাকরূহ তাহরীমী বা হারাম। (মিরয়াতুল মানাজীহ শরহে মিশকাতুল মাছাবীহ অধ্যায়: পোশাক-পরিচ্ছদ, পরিচ্ছেদ: প্রাণীর ছবি-মূর্তি-ভাস্কর্যের শরয়ী বিধান ১ম অনুচ্ছেদ ৬ষ্ঠ খ- ২০২ পৃষ্ঠা)

(৯০৫)

اس لئے بغیر جسم کے صرف چھرے کا فوٹو رکھنا ممنوع ھے مگر بغیر سر کے صرف جسم کا فوٹو یا تصویر رکھنا ممنوع نھیں یہ مسئلہ اسی حدیث سے مستنبط ہوتا ہے. (مرأۃ المناجیح شرح مشکوۃ المصابیح لباس کا بیان تصویرون کا باب دوسری فصل جلد ۶ صفحۃ  ۲۰۵)

অর্থ: দেহহীন শুধু মুখম-লের ফটো বা ছবি ঘরে রাখা নিষেধ বা হারাম। কিন্তু মাথাহীন দেহের ফটো বা ছবি (যা দেখতে গাছ-পালার মত দেখায় অর্থাৎ আকৃতি বুঝা যায় না) ঘরে রাখা নিষেধ নয়। এ মাসয়ালা বর্ণিত হাদীছ শরীফ থেকে প্রমাণিত হয়েছে। (মিরয়াতুল মানাজীহ শরহে মিশকাতুল মাছাবীহ অধ্যায়: পোশাক-পরিচ্ছদ, পরিচ্ছেদ: প্রাণীর ছবি-মূর্তি-ভাস্কর্যের শরয়ী বিধান ২য় অনুচ্ছেদ ৬ষ্ঠ খ- ২০৫ পৃষ্ঠা)

(৯০৬)

یھاں عذاب سے مراد تمھید عذاب ہے جیسا کہ اگلے مضمون سے واضح ہے اولا اسس سے روح پھونکنے کو فرمائے گاجب وہ نہ پھونک سکے گا تو عذاب دےگا، اگر حلال سمجہ کر تصویر سازی کرتا تھا تو دائمی عذاب ورنہ بھت دراز مدت تک عذاب. (مرأۃ المناجیح شرح مشکوۃ المصابیح لباس کا بیان تصویرون کا باب تیسری فصل جلد ۶ صفحۃ  ۲۰۹)

অর্থ: এখানে আযাব বা শাস্তি দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে শাস্তির ভয় দেখানো, যা পূর্বের আলোচনা দ্বারা সুস্পষ্ট হয়েছে। ক্বিয়ামতের দিন প্রথমে তাদেরকে তৈরিকৃত আকৃতিতে প্রাণ দিতে বলা হবে, কিন্তু যখন তারা তাতে প্রাণ দিতে পারবে না, তখন তাদেরকে আযাব দেয়া হবে। কিন্তু যদি কেউ প্রাণীর ছবি-মূর্তি-ভাস্কর্য ইত্যাদি হালাল মনে করে তৈরি করে থাকে, তাহলে তাকে দায়িমী অথবা লম্বা সময় ধরে কঠিন শাস্তি দিতে থাকা হবে। (কারণ হারামকে হালাল জানা কুফরী, আর কুফরীতে নিপতীত ব্যক্তি কাফির।) (মিরয়াতুল মানাজীহ শরহে মিশকাতুল মাছাবীহ অধ্যায়: পোশাক-পরিচ্ছদ, পরিচ্ছেদ: প্রাণীর ছবি-মূর্তি-ভাস্কর্যের শরয়ী বিধান ৩য় অনুচ্ছেদ ৬ষ্ঠ খ- ২০৯ পৃষ্ঠা)

(৯০৭-৯০৮)

پھلے راھب عیسائیوں نے گرجوں میں اپنے نیک لوگوکے فوٹو رکھتے تھے تاکہ لوگ ان کی عبادت دیکھ کر خود عبادت میں مشغول ھوں بعد میں ان تصویروں کی پرستش شروع ھوگئی (مرقات) ان کے دین میں تصویر سازی حرام نہ تھی اسلئے اسلام نے تصویر سازی حرام فرمادی کہ یہ بت پرستی کی جڑ ھے ہم نے بعض جاھل مسلمانوں کو دیکھا کہ وہ اپنے پیروں کے فوٹوؤں کو سلام کرتے ھیں بعض کو سجدۃ کرتے بھی دیکھا گیا ھے. (مرأۃ المناجیح شرح مشکوۃ المصابیح لباس کا بیان تصویرون کا باب تیسری فصل جلد ۶ صفحۃ ۲۱۰)

অর্থ: নাছারা বা খ্রিস্টান পাদ্রিরা শুরুর দিকে নেক বান্দাগণের ফটো বা ছবি তাদের গির্জায় রাখতো। যাতে করে তাদের উপাসনা দেখে তাদের লোকেরা স্বয়ং ইবাদতে মশগুল হয়। পরবর্তীতে ঐ সকল মূর্তি-ছবিগুলোকে ¯্রষ্টা  ভেবে লোকেরা পুজা শুরু করে দেয়। (মিরকাত শরহে মিশকাত)। সে সময়ে প্রাণীর ছবি তোলা হারাম ছিলো না। কিন্তু দ্বীন ইসলামে প্রাণীর ছবি-মূর্তি-ভাস্কর্যের চর্চা করাকে হারাম ঘোষণা করা হয়। এরপরও এখন কিছু জাহিল (মূর্খ) লোককে দেখা যায় যে, তারা তাদের পীরের ছবিকে ধারণ করে এবং সালাম করে, কেউ কেউ পীরের ছবিকে সিজদা করতেও দেখা যায়। (মূলত এই সমস্ত গোমরাহ মুরীদ এবং হারাম ও কুফরী কাজে প্রশ্রয়দানকারী পীর উভয়েই পথভ্রষ্ট ও পরিত্যাজ্য)। (মিরয়াতুল মানাজীহ শরহে মিশকাতুল মাছাবীহ অধ্যায়: পোশাক-পরিচ্ছদ, পরিচ্ছেদ: প্রাণীর ছবি-মূর্তি-ভাস্কর্যের শরয়ী বিধান ৩য় অনুচ্ছেদ ৬ষ্ঠ খ- ২১০ পৃষ্ঠা)

বিশ্ববিখ্যাত নির্ভরযোগ্য হাদীছ শরীফ-এর কিতাব এবং হাদীছ শরীফ-এর ব্যাখ্যাগ্রন্থসমূহে বর্ণিত প্রাণীর ছবি, মুর্তি, ভাস্কর্য, পুতুল ইত্যাদির চর্চা নিষেধ সম্পর্কিত দলীল-আদিল্লা থেকে যে মাসয়ালাগুলো ছাবিত হয়েছে, তা নি¤েœ উল্লেখ করা হলো:

১. প্রাণীর মূর্তি-ভাস্কর্য তৈরি করা ও প্রাণীর ছবি আঁকা-আঁকানো, তোলা, তোলানো, ঘরে রাখা, রাখানো, দেখা, দেখানো হারাম ও নাজায়িয। এগুলোর চর্চাকে হালাল ও জায়িয মনে করা কাট্টা কুফরী।

২. হারাম ছবি দ্বারা উদ্দেশ্য প্রাণীর ছবি।

৩. গাছ-পালা, পাহাড়-পর্বত ও জড় বস্তুর ছবি আঁকা, তোলা ও ঘরে রাখাতে অসুবিধা নেই। বরং জায়িয রয়েছে।

৪. কিন্তু যদি এগুলো খেলতামাশা করার জন্য তৈরি করে তাহলে তা মাকরূহ তাহরীমী হবে।

৫. প্রাণীর ছবি বা মূর্তি-ভাস্কর্যের মাথা কাটার কারণে যদি প্রাণীর আকৃতির মতো দেখা না যায়, অর্থাৎ গাছপালার মত দেখা যায় তাহলে এগুলো ব্যবহারে বাধা নেই।

৬. প্রাণীর ছবি লাঞ্ছনার জন্য তৈরি করা হোক অথবা সম্মানের উদ্দেশ্যে তৈরি করা হোক, সকল অবস্থায় তৈরি করা এবং এগুলো ঘরে রাখা হারাম।

৭. মহান আল্লাহ পাক উনার মতো ¯্রষ্টা দাবি করে মূর্তি, ভাস্কর্য ও প্রাণীর ছবি তৈরি করলে তা কুফরী হবে।

৮. অনুরূপ এ কাজগুলোকে হালাল জেনে তৈরি করলে অথবা এগুলোর চর্চা করলে কুফরী হবে। তবে কেউ যদি হারাম জেনেই করে তাহলে সে ব্যক্তি কাফির হবে না বরং ফাসিক বা কবীরাহ গুনাহে গুনাহগার হবে।

৯. নাছারা বা খ্রিস্টানদের ক্রুশের ছবি তৈরি করা বা ক্রুশ তৈরি করা হারাম। কারণ এতে ইসলামকে অবমাননা করা হয়।

১০. শিশুদের জন্য পুুতুল খেলাও হারাম। এতে অভিভাবকদের গুনাহ হবে। অতএব, শিশুদেরকে হারাম  কাজ থেকে ফিরিয়ে রাখা পিতা, মাতা ও অভিভাবকদের উপর ফরয-ওয়াজিব।

১২. মূর্তি, ভাস্কর্য, পুতুল, মেনিকিন ও প্রাণীর ছবি বিশিষ্ট ঘর বা স্থানে ছলাত বা নামায পড়া মাকরূহ তাহরীমী অর্থাৎ হারাম। তা ডানে, বামে, সামনে, পিছনে, উপরে, নিচে যে দিকেই থাকুক না কেন।

১৩. টিভি, ভিসিপি, ভিসিআর, ডিস অ্যান্টিনা ইত্যাদি দেখা হারাম ও নাজায়িয। কারণ এগুলোর মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে ছবি ও অশ্লীলতা বিস্তার।

১৪. মূর্তি, ভাস্কর্য, পুতুল, প্রাণীর ছবি ইত্যাদি যে ঘরে থাকে, সে ঘরে রহমতের ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা প্রবেশ করেন না।

১৫. প্রাণীর ছবির চর্চা করা জাহান্নামী হওয়ার আমল।

সামনে বিশ্ববিখ্যাত গ্রহনযোগ্য তাফসীর-এর কিতাব থেকে দলীল-আদিল্লাহ পেশ করা হবে। ইনশাআল্লাহ।

 

অসমাপ্ত

পরবর্তী সংখ্যার অপেক্ষায় থাকুন

কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে প্রাণীর মূর্তি তৈরি করা ও ছবি আঁকা, তোলা, তোলানো, রাখা, রাখানো, দেখা, দেখানো হারাম নাজায়িয হওয়ার অকাট্য প্রমাণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-২৪

কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে প্রাণীর মূর্তি তৈরি করা ও ছবি আঁকা, তোলা, তোলানো, রাখা, রাখানো, দেখা, দেখানো হারাম নাজায়িয হওয়ার অকাট্য প্রমাণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-২৫

জুমুয়া ও ঈদাইনের খুৎবা আরবী ভাষায় দেয়া ওয়াজিব। আরবী ব্যতীত অন্য কোন ভাষায় খুৎবা দেয়া মাকরূহ তাহরীমী ও বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া

কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে প্রাণীর মূর্তি তৈরি করা ও ছবি আঁকা, তোলা, তোলানো, রাখা, রাখানো, দেখা, দেখানো হারাম নাজায়িয হওয়ার অকাট্য প্রমাণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-২৬

জুমুয়া ও ঈদাইনের খুৎবা আরবী ভাষায় দেয়া ওয়াজিব। আরবী ব্যতীত অন্য কোন ভাষায় খুৎবা দেয়া মাকরূহ তাহরীমী ও বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-২