কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে লাইলাতুন নিছফি মিন শা’বান বা শবে বরাত-এর আহকাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া   ১৬

সংখ্যা: ২১০তম সংখ্যা | বিভাগ:

সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন-উনার জন্যে এবং অসংখ্য দুরূদ ও সালাম আল্লাহ পাক-উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু  আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার প্রতি। আল্লাহ পাক-উনার অশেষ রহমতে “ফতওয়া ও গবেষণা বিভাগ মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ”-এর তরফ থেকে বহুল প্রচারিত, হক্বের অতন্দ্র প্রহরী, বাতিলের আতঙ্ক ও আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদায় বিশ্বাসী এবং হানাফী মাযহাব-এর অনুসরণে প্রকাশিত একমাত্র দলীলভিত্তিক যামানার তাজদীদী মুখপত্র “মাসিক আল বাইয়্যিনাত” পত্রিকায় যথাক্রমে- ১. টুপির ফতওয়া (২য় সংখ্যা) ২. অঙ্গুলী চুম্বনের বিধান (৩য় সংখ্যা) ৩. নিয়ত করে মাজার শরীফ যিয়ারত করা (৪র্থ সংখ্যা) ৪. ছবি ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় হারাম হওয়ার ফতওয়া (৫ম-৭ম সংখ্যা) ৫. জুমুয়ার নামায ফরযে আইন ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ফতওয়া (৮ম-১০ম সংখ্যা) ৬. মহিলাদের মসজিদে গিয়ে জামায়াতে নামায পড়া মাকরূহ্ তাহরীমী সম্পর্কে ফতওয়া (১১তম সংখ্যা) ৭. ক্বদমবুছী ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১২তম সংখ্যা) ৮. তাহাজ্জুদ নামায জামায়াতে পড়া মাকরূহ্ তাহ্রীমী ও বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ এবং তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৩তম সংখ্যা) ৯. ফরয নামাযের পর মুনাজাত ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৪-২০তম সংখ্যা) ১০. ইন্জেকশন নেয়া রোযা ভঙ্গের কারণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২১-২২তম সংখ্যা) ১১. তারাবীহ্-এর নামাযে বা অন্যান্য সময় কুরআন শরীফ খতম করে উজরত বা পারিশ্রমিক গ্রহণ করা জায়িয ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২৩-২৪তম সংখ্যা) ১২. তারাবীহ্ নামায বিশ রাকায়াত ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২৫-২৯তম সংখ্যা) ১৩. দাড়ী ও গোঁফের শরয়ী আহ্কাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৩০-৩৪তম সংখ্যা) ১৪. প্রচলিত তাবলীগ জামায়াত ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৩৫-৪৬তম সংখ্যা) ১৫. আযান ও ছানী আযান মসজিদের ভিতরে দেয়ার আহ্কাম এবং তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৪৭-৫০তম সংখ্যা) ১৬. দোয়াল্লীন-যোয়াল্লীন-এর শরয়ী ফায়সালা এবং তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে  ফতওয়া (৫১-৫২তম সংখ্যা) ১৭. খাছ সুন্নতী টুপি ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে  ফতওয়া (৫৩-৫৯তম সংখ্যা) ১৮. নূরে মুহম্মদী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও তাঁর প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে  ফতওয়া (৬০-৮২তম সংখ্যা)

১৯. ইমামাহ্ বা পাগড়ী মুবারকের আহ্কাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কিত ফতওয়া (৮৩-৯৬তম সংখ্যা) ২০. শরীয়তের দৃষ্টিতে আখিরী যোহ্র বা ইহ্তিয়াতুয্ যোহ্রের আহ্কাম এবং তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৯৭-১০০তম সংখ্যা)  ২১. জানাযা নামাযের পর হাত তুলে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করার শরয়ী ফায়সালা ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১০১-১১১তম সংখ্যা) এবং ২২. হিজাব বা পর্দা ফরযে আইন হওয়ার প্রমাণ ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১১২-১৩১তম সংখ্যা) ২৩. খাছ সুন্নতী ক্বমীছ বা কোর্তা এবং তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৪০তম সংখ্যা) ২৪. হানাফী মাযহাব মতে ফজর নামাযে কুনূত বা কুনূতে নাযেলা পাঠ করা নাজায়িয ও নামায ফাসিদ হওয়ার কারণ এবং তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৩২-১৫২তম সংখ্যা) ২৫. ইসলামের দৃষ্টিতে বিশ্বকাপ ফুটবল বা খেলাধুলা’র শরয়ী আহকাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ফতওয়া (১৫৫তম সংখ্যা) ২৬. হানাফী মাযহাব মতে পুরুষের জন্য লাল রংয়ের পোশাক তথা রুমাল, পাগড়ী, কোর্তা, লুঙ্গি, চাদর ইত্যাদি পরিধান বা ব্যবহার করা হারাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৫৩-১৬০তম সংখ্যা)   ২৭.  ইসলামের  নামে গণতন্ত্র ও নির্বাচন করা, পদপ্রার্থী হওয়া, ভোট চাওয়া ও দেয়া হারাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৬১-১৭৫তম সংখ্যা), ২৮. কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে প্রাণীর মূর্তি তৈরি করা ও ছবি আঁকা, তোলা, তোলানো, রাখা, রাখানো, দেখা, দেখানো হারাম নাজায়িয হওয়ার অকাট্য প্রমাণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৬৮-চলমান), ২৯. জুমুয়া ও ঈদাইনের খুৎবা আরবী ভাষায় দেয়া ওয়াজিব। আরবী ব্যতীত অন্য কোন ভাষায় খুৎবা দেয়া মাকরূহ তাহরীমী ও বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৯২-১৯৩তম সংখ্যা) পেশ করার পর-

৩০তম ফতওয়া হিসেবে

১৯৫তম সংখ্যা থেকে কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে লাইলাতুন নিছফি মিন শা’বান শবে বরাত-এর আহকাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া পেশ করে আসতে পারায় মহান আল্লাহ পাক-উনার দরবার শরীফ-এ শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি।

কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে লাইলাতুন নিছফি মিন শা’বান বা শবে বরাত ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া দেয়ার কারণ

সুন্নতের পথিকৃত, হক্বের অতন্দ্র প্রহরী, দ্বীন ইসলামের নির্ভীক সৈনিক, সারা জাহান থেকে কুফর, শিরক ও বিদয়াতের মুলোৎপাটনকারী, বাতিলের আতঙ্ক এবং আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদায় বিশ্বাসী একমাত্র দলীলভিত্তিক তাজদীদী মুখপত্র- “মাসিক আল বাইয়্যিনাত” পত্রিকায় এ যাবৎ যত লেখা বা ফতওয়াই প্রকাশ বা পত্রস্থ হয়েছে এবং ইনশাআল্লাহ হবে তার প্রতিটিরই উদ্দেশ্য বা মাকছূদ এক ও অভিন্ন। অর্থাৎ “মাসিক আল বাইয়্যিনাত”-এ এমন সব লেখাই পত্রস্থ হয় যা মানুষের আক্বীদা ও আমলসমূহ পরিশুদ্ধ ও হিফাযতকরণে বিশেষ সহায়ক।

উলামায়ে ‘ছূ’রা ‘শবে বরাত’ সম্পর্কে সমাজে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। উলামায়ে ‘ছূ’ বা ধর্মব্যবসায়ীরা বলে ও প্রচার করে থাকে যে, শবে বরাত কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ-এর কোথাও  নেই, শবে বরাত পালন করা বিদয়াত, নাজায়িয ও হারাম। নাঊযুবিল্লাহ!

তাদের এ বক্তব্যের কারণে তারা নিজেরা যেরূপ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তদ্রুপ তাদের উক্ত কুফরীমূলক বক্তব্য ও বদ আমলের কারণে সাধারণ মুসলমানগণ ই’তিক্বাদী বা আক্বীদাগত ও আ’মালী বা আমলগত উভয় দিক থেকেই বিরাট ক্ষতির সম্মুক্ষীন হচ্ছে। কেননা হাদীছ শরীফে শবে বরাতের অশেষ ফযীলত বর্ণিত হয়েছে। যেমন এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফে বর্ণিত রয়েছে-

ان الدعاء يستجاب فى خمس ليال اول ليلة من رجب وليلة النصف من شعبان وليلة القدر المباركة وليلتا العيدين

অর্থ: “নিশ্চয়ই পাঁচ রাত্রিতে দোয়া নিশ্চিতভাবে কবুল হয়ে থাকে। (১) রজব মাসের প্রথম রাতে, (২) শবে বরাতের রাতে, (৩) ক্বদরের রাতে, (৪) ঈদুল ফিতরের রাতে, (৫) ঈদুল আযহার রাতে।”

হাদীছ শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে-

عن على رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم اذا كانت ليلة النصف من شعبان فقوموا ليلها وصوموا يومها فان الله تعالى ينزل فيها لغروب الشمس الى السماء الدنيا فيقول الامن مستغفر فاغفرله الا مسترزق فارزقه الا مبتلى فاعافيه الا كذا الا كذا حتى يطلع الفجر.

অর্থ: “হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহ পাক-উনার রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, যখন শা’বানের পনের তারিখ রাত্রি উপস্থিত হবে তখন তোমরা উক্ত রাত্রিতে নামায আদায় করবে এবং দিনে রোযা রাখবে। কেননা নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক উক্ত রাত্রিতে সূর্যাস্তের সময় পৃথিবীর আকাশে আসেন অর্থাৎ রহমতে খাছ নাযিল করেন। অতঃপর ঘোষণা করেন, “কোন ক্ষমা প্র্রার্থনাকারী আছ কি? আমি তাকে ক্ষমা করে দিব।” “কোন রিযিক প্রার্থনাকারী আছ কি? আমি তাকে রিযিক দান করব।” “কোন মুছিবতগ্রস্থ ব্যক্তি আছ কি? আমি তার মুছিবত দূর করে দিব।” এভাবে ফজর পর্যন্ত ঘোষণা করতে থাকেন।” (ইবনে মাজাহ্, মিশকাত)

এ ধরনের আরো অসংখ্য হাদীছ শরীফ রয়েছে, যাতে শবে বরাত-এর ফযীলতের কথা বলা হয়েছে অর্থাৎ যারা শবে বরাত পালন করবে তারা মহান আল্লাহ পাক ও উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনাদের উভয়েরই খাছ রেযামন্দি বা সন্তুষ্টি লাভ করবে।

অতএব, নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, উলামায়ে “ছূ”দের উক্ত বক্তব্য ও বদ আমলের কারণে সাধারণ মুসলমানগণ ‘শবে বরাত’ পালন থেকে বিরত থেকে অশেষ ফযীলত থেকে মাহরূম হবে। যা আমলের ক্ষেত্রে বিশেষভাবে ক্ষতিকর।

কাজেই যারা এ ধরনের কুফরী আক্বীদায় বিশ্বাসী ও কুফরী বক্তব্য প্রদানকারী, তারা ও হক্ব তালাশী সমঝদার মুসলমানগণ ঈমান ও আমলকে যেন হিফাযত করতে পারে। অর্থাৎ শবে বরাতসহ সকল বিষয়ে আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদার ন্যায় আক্বীদা পোষণ করতে পারে এবং কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস মোতাবেক আমল করে আল্লাহ পাক-উনার রেজামন্দী হাছিল করতে পারে। সে জন্যই কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে ‘লাইলাতুন নিছফি মিন শা’বান বা শবে বরাত’-এর আহকাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কিত ফতওয়াটি প্রকাশ করা হলো।

অসংখ্য ছহীহ হাদীছ শরীফ দ্বারাও শবে বরাত প্রমাণিত

পূর্ব প্রকাশিতের পর

শবে বরাত পালন করা ও এদিনে রোযা রাখা সম্পর্কে আব্দুল আযীয আব্দুল্লাহ বিন বা’য-এর প্রদত্ত্ব বক্তব্য সম্পূর্ণ কুফরী হয়েছে। কারণ, সে সুন্নতকে বিদ্য়াত বলে অভিহিত করেছে।

উল্লেখ্য, শবে বরাত বা বরাতের রাতে ইবাদত-বন্দিগী করা ও দিনের বেলায় রোযা রাখা হচ্ছে সুন্নতের অন্তর্ভুক্ত। স্বয়ং আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামই এ মুবারক রাতে ইবাদত-বন্দিগী করে কাটিয়েছেন এবং দিনের বেলায় রোযা রেখেছেন এবং উম্মতকেও এ রাতে সজাগ থেকে ইবাদত-বন্দিগী করার জন্য এবং দিনে রোযা রাখার জন্য আদেশ-নির্দেশ করেছেন। এ সম্পর্কে বহু হাদীছ শরীফও বর্ণিত রয়েছে। যার বিস্তারিত দলীল আমরা ইতিমধ্যে মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফের ফতওয়া বিভাগে বর্ণনা করেছি।

এ প্রসঙ্গে তাফসীর জগতের সুবিখ্যাত তাফসীর “তাফসীরে কুরতুবী”-এর ৮ম খণ্ডের ১৬তম জুযের ১২৬ পৃষ্ঠায় আরো উল্লেখ আছে-

(৩৪৪)

ليلة النصف من شعبان ولها اربعة اسماء الليلة المباركة وليلة البراءة وليلة الصك وليلة القدر ووصفها بالبركة لما ينزل الله فيها على عباده من البركات والخيرات والثواب

অর্থ: “লাইলাতুম মুবারাকা দ্বারা অর্ধ শা’বান তথা ১৫ই শা’বানের রাতকে বুঝানো হয়েছে। এই ১৫ই শা’বানের রাত তথা শবে বরাতের চারটি নাম রয়েছে, যেমন ১. লাইলাতুম মুবারাকা বা বরকতপূর্ণ রাত ২. লাইলাতুল বারায়াত তথা মুক্তি বা ভাগ্যের রাত ৩. লাইলাতুছ ছক্কি বা ক্ষমা স্বীকৃতিদানের রাত ৪. লাইলাতুল ক্বদর বা ভাগ্য রজনী। আর শবে বরাতকে বরকতের সঙ্গে এই জন্য সম্বন্ধ করা হয়েছে যেহেতু আল্লাহ পাক ওই শবে বরাতে বান্দাদের প্রতি বরকত, কল্যাণ, এবং পুণ্যময় দানের জন্য দুনিয়ায় কুদরতীভাবে নেমে আসেন অর্থাৎ খাছ রহমত নাযিল করেন।

উক্ত কিতাবের ১২৬ পৃষ্ঠায় আরো উল্লেখ আছে-

(৩৪৫)

وقال عكرمة  رضى الله تعالى عنه الليلة المباركة ههنا ليلة النصف من شعبان

অর্থ: “বিখ্যাত ছাহাবী হযরত ইকরামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, লাইলাতুম মুবারাকা দ্বারা এখানে অর্ধ শা’বান তথা ১৫ই শা’বানের রাতকে অর্থাৎ শবে বরাতকে বুঝানো হয়েছে।”

সূরা আদ দুখান-এর ليلة مباركة এর পরবর্তী আয়াত শরীফ-এ বলা হয়েছে-

(৩৪৬)

فيها يفرق كل امر حكيم

অর্থ: “সেই মুবারক রাতে প্রত্যেক প্রজ্ঞাপূর্ণ বিষয়সমূহের ফায়ছালা করা হয়।”

এখানে فيها তথা মুবারকপূর্ণ রাতের ব্যাখ্যায় সুপ্রসিদ্ধ তাফসীর “তাফসীরে কুরতুবী”-এর ১৬তম খণ্ডের ১২৬/১২৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-

(৩৪৭-৩৪৯)

وقال عكرمة رضى الله تعالى هى ليلة النصف من شعبان يبرم فيها امر السنة وينسخ الاحياء من الاموات ويكتب الحاج فلا يزاد فيهم احد ولا ينقص منهم احد. وروى عثمان ان المغيرة  رضى الله تعالى عنه قال قال النبى صلى الله عليه وسلم تقطع الاجال من شعبان الى شعبان حتى ان الرجل لينكح ويلد له وقد خرج اسمه فى الموتى.

عن النبى صلى الله عليه وسلم قال اذا كانت ليلة النصف من شعبان فقوموا ليلتها وصوموا نهارها فان الله ينزل لغروب الشمس الى سماء الدنياء يقول الا من مستغفر فاغفر له الا مبتلى فاعافيه الا مسترزق فارزقه الا كذا الا كذا حتى يطلع الفجر.

ذكر الثعلبى وخرج الترمذى بمعناه عن حضرت عائشة عليها السلام عن النبى صلى الله عليه وسلم قال ان الله عز وجل ينزل ليلة النصف من شعبان الى السماء الدنيا فيغفر لاكثر من شعر غنم كلب. وقد ذكر حديث حضرت عائشة عليها السلام مطولا صاحب كتاب العروس. واختار ان الليلة التى يفرق  فيها كل امر حكيم ليلة النصف من شعبان وانها تسمى ليلة البراءة.

অর্থ: “বিখ্যাত ছাহাবী হযরত ইকরামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, ফায়ছালার রাতই হচ্ছে- অর্ধ শা’বানের তথা ১৫ই শা’বানের রাত। এই শবে বরাতে সামনে এক বৎসরে যাবতীয় কিছুর ফায়ছালা করা হয় এবং তালিকা প্রস্তুত করা হয় মৃত ও জীবিতদের। এমনকি হজ্জ পালনকারীদের তালিকাও করা হয় সেই অর্ধ শা’বানের রাতে। ওই রাতে যার যার ভাগ্যে যা কিছু লেখা হয় তা থেকে কোন কমতিও করা হয়না এবং কোন কিছু বেশিও করা হয় না।

হযরত উসমান ইবনে মুহম্মদ ইবনে মুগীরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হযরত মুগীরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, হযরত রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, এক শা’বান হতে পরবর্তী শা’বান পর্যন্ত মৃতদের তালিকা প্রস্তুত করা হয়ে থাকে। অর্থাৎ এক অর্ধ শা’বান থেকে পরবর্তী অর্ধ শা’বান পর্যন্ত মৃতদের ভাগ্য তালিকা প্রস্তুত করা হয়। এবং ওই রাত্রিতে এটাও লেখা হয় ব্যক্তির বিবাহ কখন হবে এবং সেই বৎসর তার কি সন্তান হবে এবং সেই বৎসর কখন মৃত্যুবরণ করবে তার তালিকাও প্রস্তুত করা হয় শবে বরাতে।

নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আরো ইরশাদ করেন, যখন অর্ধ শা’বান তথা শবে বরাত তোমাদের কাছে সমাগত হয়, তখন তোমরা ওই ১৫ই শা’বানের রাত্রিতে ইবাদত বন্দেগী করে রাত্রি জাগরণ করিও এবং উহার দিবা বেলায় রোযা রাখিও। কেননা মহান আল্লাহ পাক ওই ১৫ই শা’বানের রাত্রির সূচনালগ্নে সূর্য অস্তমিত হওয়ার সাথে সাথেই পৃথিবীর আকাশে নেমে আসেন এবং বলতে থাকেন, হে পৃথিবীবাসী! তোমাদের মধ্যে এমন কে আছ? ক্ষমা প্রার্থী, আমার কাছে ক্ষমা চাও (আজ) আমি তোমাদেরকে ক্ষমা করে দিব। কে আছো রোগী? আমার কাছে দরখাস্ত কর আমি রোগ মোচন করে দিব। কে আছো রিযিক তালাশী? আমার কাছে রিযিক চাও, আজ আমি তাকে প্রচুর পরিমাণে রিযিক দিয়ে দিব। সাবধান! সাবধান! এইভাবেই মহান আল্লাহ পাক বান্দাদেরকে ফজর পর্যন্ত ডাকতে থাকেন। হযরত ইমাম ছালাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি এভাবে বর্ণনা করেন এবং ইমাম তিরমিযী রহমতুল্লাহি আলাইহি উপরোক্ত হাদীছ শরীফখানার সমার্থবোধক হিসেবে উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার বর্ণিত হাদীছ শরীফখানা বর্ণনা করেন।

উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম হযরত রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে বর্ণনা করে বলেন, আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক অর্ধ শাবান তথা ১৫ই শা’বানের রাত্রে অর্থাৎ শবে বরাতে দুনিয়ার আকাশে নেমে আসেন। অতপর বনী কলব গোত্রেয় ছাগলের লোম পরিমাণ অধিক সংখ্যক গুনাহগার ব্যক্তিদেরকে ক্ষমা করে থাকেন।

আর উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম-উনার এই বর্ণিত হাদীছ শরীফখানা অনেক লম্বা হাদীছ শরীফ যেটা “কিতাবুল উরুস’ গ্রন্থকার উল্লেখ করেন। আর তিনি নির্ভরযোগ্য মত হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, নিশ্চয়ই যেই রাত্রিতে সমস্ত প্রজ্ঞাপূর্ণ বিষয়সমূহের ফায়ছালা করা হয়ে থাকে সেই রাত্রিই হচ্ছে অর্ধ শা’বান তথা ১৫ই শা’বানের রাত। আর অবশ্যই ওই রাতকেই লাইলাতুল বরাত বা বরাতের রাত তথা ভাগ্য রজনী বলা হয়।

এ প্রসঙ্গে সূরা ক্বদরের তাফসীরে ‘তাফসীরে কুরতুবী’-এর ২০তম জুযে ১৩০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-

(৩৫০)

عن ابن عباس رضى الله تعالى عنه ايضا ان الله تعالى يقضى الاقضية فى ليلة النصف من شعبان ويسلمها الى اربابها فى ليلة القدر.

অর্থ: “প্রখ্যাত ছাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত আছে যে, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ তায়ালা অর্ধ শা’বান তথা ১৫ই শা’বানের রাত্রিতে অর্থাৎ শবে বরাতে যাবতীয় বিষয়ের ভাগ্য তালিকা প্রস্তুত করেন। আর ক্বদরের রাত্রিতে ওই ভাগ্যতালিকা পেশ করেন বাস্তবায়নকারী ফেরেশতাদের হাতে।

কাজেই উক্ত আলোচনা থেকে পরিষ্কারভাবে ফুটে উঠলো যে, শবে বরাত বান্দাদের তালিকা প্রস্তুত করা হয় আর শবে ক্বদরে সেই ভাগ্যতালিকা জারি বা কার্যকরী করা হয়।

এ প্রসঙ্গে বিশ্বখ্যাত তাফসীর ‘তাফসীরে লুবাব’-এর ১৭তম খণ্ডের ৩১০-৩১১ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-

(৩৫১)

(فيها) اى فى الليلة المباركة (يفرق) يفصل (كل امر حكيم) … وقال عكرمة رضى الله تعالى عنه هى ليلة النصف من شعبان يقوم فيها امر السنة وتنسخ الاحياء من الاموات فلا يزاد فيهم ولا ينقص منهم احد قال عليه الصلاة السلام تقطع الاجال من شعبان الى شعبان حتى ان الرجل لينكح ويولد له ولقد اخرج اسمه فى الموتى وعن ابن عباس رضى الله تعالى عنهما ان الله يقضى الاقضية فى ليلة النصف من شعبان ويسلمها الى اربابها فى ليلة القدر.

অর্থ: “ওই মুবারক তথা বরকতপূর্ণ রাত্রিতে অর্থাৎ শবে বরাতে প্রত্যেক হিক্বমতপূর্ণ যাবতীয় বিষয়সমূহের ফায়ছালা করা হয়। বিখ্যাত ছাহাবী হযরত ইকরামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, লাইলাতুম মুবারকা দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে অর্ধ শা’বান তথা ১৫ই শা’বানের রাত। এই শবে বরাতে আগামী এক বৎসরের যাবতীয় বিষয়ের ভাগ্যতালিকা প্রস্তুত করা হয় এবং তালিকা প্রস্তুত করা হয় মৃত ও জীবিতদের। ওই তালিকা থেকে কোন কম বেশি করা হয়না অর্থাৎ কোনরূপ পরিবর্তন হয় না।

হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, এক শা’বান তথা ১৫ই শাবান থেকে পরবর্তী ১৫ই শা’বান পর্যন্ত মৃতদের তালিকা প্রস্তুত করা হয়। এমনকি লোকেরা ওই বৎসরে বিবাহ করবে তার থেকে যে সন্তান জন্মগ্রহণ করবে সেই বৎসর কখন মৃত্যুবরণ করবে তার তালিকাও ওই শবে বরাতে প্রস্তুত করা হয়।

প্রখ্যাত ছাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা হযরত রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে বর্ণনা করেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক অর্ধ শা’বানের রাতে তথা শবে বরাতে যাবতীয় বিষয়ের ফায়ছালা করে থাকেন। আর শবে ক্বদরে ওই নির্ধারিত ফায়ছালার বাস্তবায়ন করার জন্য বাস্তবায়নকারী হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদের হাতে সেই তালিকা পেশ করেন।

“তাফসীরে রুহুল মায়ানী” কিতাবের ১৩তম খণ্ডের ১১২ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-

(৩৫২)

ووصف الليلة بالبركة لما أن انزال القران مستتبع للمنافع الدينية والدنوية بأ جمعها أو لما فيها من تنزل الملائكة والرحمة واجابة الدعوة وفضيلة العبادة او لما فيها من ذلك وتقدير الأرزاق وفضل الأقضية لاجال وغيرها واعطاء تمام الشفاعة له عليه الصلاة والسلام وهذا بناء على أنها ليلة البراءة فقد روى أنه صلى الله تعالى عليه وسلم سأل ليلة الثالث عشر من شعبان فى أمته فأعطى الثلث منها ثم سأل ليلة الرابع عشر فأعطى الثلثين ثم سأل ليلة الخامس عشر فاعطى الجميع الا من شرد على الله تعالى شراد البعير.

অর্থ: “লাইলাতুল মুবারাকাকে বরকতের রাত হিসেবে এজন্যই গুনান্বিত করা হয়েছে যেহেতু পবিত্র কুরআন শরীফ দ্বীনি এবং দুনিয়াবী বহুবিদ কল্যাণের জন্যই (ঐ রাতেই) নাজিলের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সমস্ত হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালামগণ উনারা অবতরণ করেন এবং রহমত নাযিল হয়, বান্দাদের দোয়া কবুল করা হয়। বান্দাদের মর্যাদা বৃদ্ধি করা হয় এবং যেহেতু ঐ রাতেই বান্দাদের রিযিক্ব বন্টন করা হয় এবং সমস্ত কিছুর ভাগ্যসমূহ পৃথক করা হয়। যেমন মৃত্যু এবং অন্যান্য সব বিষয়ের। এবং হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার সমস্ত বিষয়ের সুপারিশ কবুল করা হয়। আর এই বরকতের রাতকে বরাতের রাত হিসেবেও নাম করা হয়। যেহেতু এ সম্পর্কে হাদীছ শরীফে বর্ণিত আছে যে, আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহু হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি শা’বান মাসের ১৩ তারিখ রাতে স্বীয় উম্মতের ক্ষমার জন্য আল্লাহ পাক-উনার কাছে প্রার্থনা করেন। অতঃপর সেই রাতে মহান আল্লাহ পাক হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উম্মত থেকে এক তৃতীয়াংশ উম্মতকে ক্ষমা করেন। সুবহানাল্লাহ!

অতঃপর অনুরূপভাবে শা’বান মাসের ১৪ তারিখের রাতে আল্লাহ পাক-উনার কাছে প্রার্থনা করেন তখন সেই শবে বরাতে মহান আল্লাহ পাক উনার উম্মতের দুই তৃতীয়াংশ উম্মতকে ক্ষমা করেন। অতঃপর অনুরূপভাবে ১৫ই শা’বান তথা শবে বরাতেও মহান আল্লাহ পাক-উনার কাছে, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উম্মতের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেন তখন মহান আল্লাহ পাক তিনি সেই শবে বরাতে উনার সমস্ত উম্মতগণকে ক্ষমা করে দেন।  তবে ওই সমস্ত লোক ব্যতীত যারা মহান আল্লাহ পাক-উনার ব্যাপারে চরম বিভ্রান্তিতে পতিত হয়েছে। যেমন, হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে-

(৩৫৩-৩৫৭)

عن حضرت على رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم اذا كانت ليلة النصف من شعبان فقوموا ليلها وصوموا يومها فان الله تعالى ينزل فيها لغروب الشمس الى السماء الدنيا فيقول الا من مستغفر فاغفرله الا من مسترزق فارزقه الا مبتلى فاعافيه الا كذا الا كذا حتى يطلع الفجر. رواه ابن ماجه.

অর্থ: “হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, যখন অর্ধ শা’বান তথা শবে বরাতের আগমন ঘটে তখন ওই রাতে তোমরা ইবাদত-বন্দেগী করে জাগ্রত থাকবে এবং দিবাভাগে রোযা রাখবে। কেননা, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক ওই শবে বরাতে সূর্যাস্তের সাথে সাথেই নিকটবর্তী আকাশে নাযিল হন এবং বলতে থাকেন, কোন ক্ষমাপ্রার্থনাকারী আছ কি? যাকে আমি ক্ষমা করে দিব। কোন রিযিক প্রার্থনাকারী আছ কি? যাকে আমি অপরিমিত রিযিক দিয়ে দিব এবং কোন বিপদে বিপন্ন ব্যক্তি আছ কি? যাকে আমি বিপদ থেকে মুক্ত করে দিব। সাবধান! সাবধান! এভাবেই মহান আল্লাহ পাক ফজর পর্যন্ত ডাকতে থাকেন।” (ইবনে মাজাহ, মিরকাত ৩য় খণ্ড, ১৯৫-১৯৬, মিরয়াতুল মানাজিহ ৩য় খণ্ড, ২৯৩-২৯৪-২৯৫, লুময়াত, আশয়াতুল লুময়াত)

এ প্রসঙ্গে ‘জামিউত তিরমিযী’ শরীফ-এর ১ম খণ্ডের ৯২ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-

(৩৫৮-৩৬১)

عن ام المؤمنين حضرت عائشة عليها السلام قالت فقدت رسول الله صلى الله عليه وسلم ليلة فاذا هو بالبقيع فقال اكنت تخافين ان يحيف الله عليك ورسوله قلت يا رسول الله صلى الله عليه وسلم انى ظننت انك اتيت بعض نسائك فقال ان الله تعالى ينزل ليلة النصف من شعبان الى السماء الدنيا فيغفر لاكثر من عدد شعر غنم كلب. رواه الترمذى وابن ماجه.

অর্থ: “উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি একদা রাত্রিতে আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে খুঁজে পাচ্ছিলাম না। অতঃপর তালাশ করে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে জান্নাতুল বাক্বী নামক স্থানে দেখতে পেলাম। অতঃপর হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে লক্ষ্য করে বললেন, হে উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম! আপনি কি মনে করেন যে, আল্লাহ পাক এবং উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আপনার খিয়ানত করছেন? জবাবে উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ, ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমি মনে করেছিলাম যে, হয়তোবা আপনি আপনার অন্য কোন উম্মুল মু’মিনীন উনাদের হুজরা শরীফ-এ তাশরীফ নিয়েছেন। অতঃপর তখন উনাকে লক্ষ্য করে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক অর্ধ শাবান তথা শবে বরাতে দুনিয়ার আকাশে অবতীর্ণ হন (অর্থাৎ রহমতে খাছ নাযিল করেন) এবং ক্বালব গোত্রের মেষপালের পশম পরিমাণের চেয়েও অধিক সংখ্যক ব্যক্তিকে ক্ষমা করে দেন। (আজ সেই রাত।)” (তিরমিযী, ইবনে মাজাহ, রযীন, মিশকাত)

অতএব, সুন্নতকে অস্বীকার করা এবং সেটাকে বিদ্য়াত বলে অভিহিত করা শক্ত কুফরী। আর যে কুফরী করে সে কাফির হয়ে যায়। যেমন, হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে, আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-

لو تركتم سنة نبيكم لكفرتم

অর্থ: “যদি তোমরা তোমাদের নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সুন্নতকে তরক বা অস্বীকার করো তাহলে অবশ্যই তোমরা কাফির হয়ে যাবে।” (আবু দাউদ শরীফ) হাদীছ শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে, আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-

لو تركتم سنة نبيكم لضللتم

অর্থ: “যদি তোমরা তোমাদের নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সুন্নতকে তরক (অস্বীকার) করো তাহলে তোমরা গোমরাহ হয়ে যাবে।” (নাসায়ী, ইবনে মাজাহ, মুসনাদে আহমদ) আর আকাইদের কিতাবে বর্ণিত রয়েছে-

اهانة السنة كفر

অর্থ: “সুন্নতকে ইহানত করা কুফরী।”

উল্লিখিত হাদীছ শরীফ এবং আকাইদের বর্ণনা দ্বারা সউদী আরবের দারুল ইফতার সাবেক প্রধান আব্দুল আযীয আব্দুল্লাহ বিন বা’য প্রকাশ্য কাফির ও গোমরাহ হিসেবে সাব্যস্ত হয়। আর প্রকৃতপক্ষে সে কাফির ও গোমরাহ। এটাই তার আসল পরিচয়। কারণ, সে হচ্ছে কট্টর ওহাবী। আর আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের ফতওয়া মতে ওহাবীরা মু’মিন-মুসলমানের অন্তর্ভুক্ত নয়। তারা হাদীছ শরীফে বর্ণিত ৭২টি বাতিল ও জাহান্নামী ফিরক্বার অন্তর্ভুক্ত।

 

(অসমাপ্ত)

 পরবর্তী সংখ্যার অপেক্ষায় থাকুন

কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে প্রাণীর মূর্তি তৈরি করা ও ছবি আঁকা, তোলা, তোলানো, রাখা, রাখানো, দেখা, দেখানো হারাম নাজায়িয হওয়ার অকাট্য প্রমাণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-২৫

জুমুয়া ও ঈদাইনের খুৎবা আরবী ভাষায় দেয়া ওয়াজিব। আরবী ব্যতীত অন্য কোন ভাষায় খুৎবা দেয়া মাকরূহ তাহরীমী ও বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া

কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে প্রাণীর মূর্তি তৈরি করা ও ছবি আঁকা, তোলা, তোলানো, রাখা, রাখানো, দেখা, দেখানো হারাম নাজায়িয হওয়ার অকাট্য প্রমাণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-২৬

জুমুয়া ও ঈদাইনের খুৎবা আরবী ভাষায় দেয়া ওয়াজিব। আরবী ব্যতীত অন্য কোন ভাষায় খুৎবা দেয়া মাকরূহ তাহরীমী ও বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-২

কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে প্রাণীর মূর্তি তৈরি করা ও ছবি আঁকা, তোলা, তোলানো, রাখা, রাখানো, দেখা, দেখানো হারাম নাজায়িয হওয়ার অকাট্য প্রমাণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-২৭