কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে প্রাণীর মূর্তি তৈরি করা ও ছবি আঁকা, তোলা, তোলানো, রাখা, রাখানো, দেখা, দেখানো হারাম নাজায়িয হওয়ার অকাট্য প্রমাণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-২০

সংখ্যা: ১৮৭তম সংখ্যা | বিভাগ:

[সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন-এর জন্যে এবং অসংখ্য দুরূদ ও সালাম আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু  আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি। আল্লাহ পাক-এর অশেষ রহ্মতে “গবেষণা কেন্দ্র মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ”-এর ফতওয়া বিভাগের তরফ থেকে বহুল প্রচারিত, হক্বের অতন্দ্র প্রহরী, বাতিলের আতঙ্ক ও আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদায় বিশ্বাসী এবং হানাফী মাযহাব-এর অনুসরণে প্রকাশিত একমাত্র দলীলভিত্তিক যামানার তাজদীদী মুখপত্র “মাসিক আল বাইয়্যিনাত” পত্রিকায় যথাক্রমে- ১. টুপির ফতওয়া (২য় সংখ্যা) ২. অঙ্গুলী চুম্বনের বিধান (৩য় সংখ্যা) ৩. নিয়ত করে মাজার শরীফ যিয়ারত করা (৪র্থ সংখ্যা) ৪. ছবি ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় হারাম হওয়ার ফতওয়া (৫ম-৭ম সংখ্যা) ৫. জুমুয়ার নামায ফরযে আইন ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ফতওয়া (৮ম-১০ম সংখ্যা) ৬. মহিলাদের মসজিদে গিয়ে জামায়াতে নামায পড়া মাকরূহ্ তাহ্রীমী সম্পর্কে ফতওয়া (১১তম সংখ্যা) ৭. কদমবুছী ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১২তম সংখ্যা) ৮. তাহাজ্জুদ নামায জামায়াতে পড়া মাকরূহ্ তাহ্রীমী ও বিদ্য়াতে সাইয়্যিয়াহ্ এবং তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৩তম সংখ্যা) ৯. ফরয নামাযের পর মুনাজাত ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৪-২০তম সংখ্যা) ১০. ইন্জেকশন নেয়া রোযা ভঙ্গের কারণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২১-২২তম সংখ্যা) ১১. তারাবীহ্-এর নামাযে বা অন্যান্য সময় কুরআন শরীফ খতম করে উজরত বা পারিশ্রমিক গ্রহণ করা জায়িয ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২৩-২৪তম সংখ্যা) ১২. তারাবীহ্ নামায বিশ রাকায়াত ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২৫-২৯তম সংখ্যা) ১৩. দাড়ী ও গোঁফের শরয়ী আহ্কাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৩০-৩৪তম সংখ্যা) ১৪. প্রচলিত তাবলীগ জামায়াত ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৩৫-৪৬তম সংখ্যা) ১৫. আযান ও ছানী আযান মসজিদের ভিতরে দেয়ার আহ্কাম এবং তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৪৭-৫০তম সংখ্যা) ১৬. দোয়াল্লীন-যোয়াল্লীন-এর শরয়ী ফায়সালা এবং তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে  ফতওয়া (৫১-৫২তম সংখ্যা) ১৭. খাছ সুন্নতী টুপি ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে  ফতওয়া (৫৩-৫৯তম সংখ্যা) ১৮. নূরে মুহম্মদী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও তাঁর প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে  ফতওয়া (৬০-৮২তম সংখ্যা) ১৯. ইমামাহ্ বা পাগড়ী মুবারকের আহ্কাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কিত ফতওয়া (৮৩-৯৬তম সংখ্যা) ২০. শরীয়তের দৃষ্টিতে আখিরী যোহ্র বা ইহ্তিয়াতুয্ যোহ্রের আহ্কাম এবং তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৯৭-১০০তম সংখ্যা)  ২১. জানাযা নামাযের পর হাত তুলে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করার শরয়ী ফায়সালা ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১০১-১১১তম সংখ্যা) এবং  ২২. হিজাব বা পর্দা ফরযে আইন হওয়ার প্রমাণ ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১১২-১৩১তম সংখ্যা) ২৩. খাছ সুন্নতী ক্বমীছ বা কোর্তা এবং তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৪০তম সংখ্যা) ২৪. হানাফী মাযহাব মতে ফজর নামাযে কুনূত বা কুনূতে নাযেলা পাঠ করা নাজায়িয ও নামায ফাসিদ হওয়ার কারণ এবং তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৩২-১৫২তম সংখ্যা) ২৫. ইসলামের দৃষ্টিতে বিশ্বকাপ ফুটবল বা খেলাধুলা’র শরয়ী আহকাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ফতওয়া (১৫৫তম সংখ্যা) ২৬. হানাফী মাযহাব মতে পুরুষের জন্য লাল রংয়ের পোশাক তথা রুমাল, পাগড়ী, কোর্তা, লুঙ্গি, চাদর ইত্যাদি পরিধান বা ব্যবহার করা হারাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৫৩-১৬০তম সংখ্যা)   ২৭.  ইসলামের  নামে গণতন্ত্র ও নির্বাচন করা, পদপ্রার্থী হওয়া, ভোট চাওয়া ও দেয়া হারাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৬১-১৭৫তম সংখ্যা) পেশ করার পর ১৬৮তম সংখ্যা থেকে-

২৮তম ফতওয়া হিসেবে

“কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে প্রাণীর মূর্তি তৈরি করা ও ছবি আঁকা, তোলা, তোলানো, রাখা, রাখানো, দেখা, দেখানো হারাম নাজায়িয হওয়ার অকাট্য প্রমাণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া” পেশ করে আসতে পারায় মহান আল্লাহ পাক-এর দরবার শরীফ-এ শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি।

“কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে প্রাণীর মূর্তি তৈরি করা, করানো ও ছবি আঁকা, তোলা, তোলানো, রাখা, রাখানো, দেখা, দেখানো হারাম নাজায়িয হওয়ার অকাট্য প্রমাণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া” দেয়ার কারণ

সুন্নতের পথিকৃত, হক্বের অতন্দ্র প্রহরী, দ্বীন ইসলামের নির্ভীক সৈনিক, সারা জাহান থেকে কুফরী, শিরক ও বিদ্য়াতের মূলোৎপাটনকারী, বাতিলের আতঙ্ক এবং আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদায় বিশ্বাসী একমাত্র দলীলভিত্তিক তাজদীদী মুখপত্র- “মাসিক আল বাইয়্যিনাত” পত্রিকায় এ যাবৎ যত লেখা বা ফতওয়াই প্রকাশ বা পত্রস্থ হয়েছে এবং ইনশাআল্লাহ হবে তার প্রতিটিরই উদ্দেশ্য বা মাকছূদ এক ও অভিন্ন। অর্থাৎ “মাসিক আল বাইয়্যিনাত”-এ এমন সব লেখাই পত্রস্থ হয়, যা মানুষের আক্বীদা ও আমলসমূহ পরিশুদ্ধ ও হিফাযতকরণে বিশেষ সহায়ক।

বর্তমানে ইহুদীদের এজেন্ট হিসেবে মুসলমানদের ঈমান আমলের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করছে যারা, তারা হলো ‘ওহাবী সম্প্রদায়’। ইহুদীদের এজেন্ট ওহাবী মতাবলম্বী উলামায়ে ‘ছূ’রা হারাম টিভি চ্যানেলে, পত্র-পত্রিকা, কিতাবাদি ও বক্তব্য বা বিবৃতির মাধ্যমে একের পর এক হারামকে হালাল, হালালকে হারাম, জায়িযকে নাজায়িয, নাজায়িযকে জায়িয বলে প্রচার করছে। (নাঊযুবিল্লাহ)

স্মরণীয় যে, ইহুদীদের এজেন্ট, ওহাবী মতাবলম্বী দাজ্জালে কায্যাব তথা উলামায়ে ‘ছূ’রা প্রচার করছে “ছবি তোলার ব্যাপারে ধর্মীয় কোন নিষেধাজ্ঞা নেই”। (নাউযুবিল্লাহ) সম্প্রতি দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে, “নির্বাচন কমিশনার বলেছে, ছবি তোলার বিরুদ্ধে বললে জেল-জরিমানা হবে, নির্বাচন কমিশনার ভোটার আই.ডি কার্ডের জন্য ছবিকে বাধ্যতামূলক করেছে এবং ছবির পক্ষে মসজিদে, মসজিদে প্রচারণা চালাবে বলেও মন্তব্য করেছে। আর উলামায়ে ‘ছূ’রা তার এ বক্তব্যকে সমর্থন করে বক্তব্য দিয়েছে যে, “রাষ্ট্রীয় প্রয়োজনে পুরুষ-মহিলা সকলের জন্যেই ছবি তোলা জায়িয।” (নাঊযুবিল্লাহ) শুধু তাই নয়, তারা নিজেরাও অহরহ ছবি তুলে বা তোলায়।

অথচ তাদের উপরোক্ত বক্তব্য সম্পূর্ণ মিথ্যা, চরম বিভ্রান্তিকর ও কুফরীমূলক। তাদের এ বক্তব্যের কারণে তারা নিজেরা যেরূপ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তদ্রুপ তাদের উক্ত কুফরীমূলক বক্তব্য ও বদ্ আমলের কারণে সাধারণ মুসলমানগণ ই’তিক্বাদী বা আক্বীদাগত ও আ’মালী বা আমলগত উভয় দিক থেকেই বিরাট ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে।

কারণ, তাদের উক্ত বক্তব্যের কারণে যারা এ আক্বীদা পোষণ করবে যে, “রাষ্ট্রীয় প্রয়োজনে ছবি তোলা জায়িয” তারা ঈমানহারা হয়ে কাট্টা কাফির ও চির জাহান্নামী হবে। কারণ শরীয়তের দৃষ্টিতে হারাম বা নাজায়িযকে হালাল বা জায়িয বলা কুফরী। কেননা কিতাবে স্পষ্টই উল্লেখ আছে যে,

استحلال المعصية كفر.

অর্থাৎ, “গুনাহের কাজ বা হারামকে হালাল মনে করা কুফরী।” (শরহে আক্বাইদে নাসাফী।)

অতএব, বলার আর অপেক্ষাই রাখেনা যে, উলামায়ে “ছূ”দের উক্ত বক্তব্য সাধারণ মুসলমানদের আক্বীদা বা ঈমানের জন্য বিশেষভাবে হুমকিস্বরূপ।

অনুরূপ “ছবি তোলার ব্যাপারে ধর্মীয় কোন নিষেধ নেই বা রাষ্ট্রীয় প্রয়োজনে সকলের জন্যে ছবি তোলা জায়িয” উলামায়ে “ছূ”দের এ কুফরীমূলক বক্তব্য মুসলমানদের আমলের ক্ষেত্রেও বিশেষ ক্ষতির কারণ। কেননা যারা তাদের উক্ত বক্তব্যের কারণে ছবি তুলবে (যদিও হারাম জেনেই তুলুক না কেন) তারা আল্লাহ পাক এবং উনার হাবীব কর্তৃক নিষিদ্ধকৃত কাজে তথা হারাম কাজে মশগুল হবে যা শক্ত আযাব বা কঠিন গুনাহের কারণ। কেননা হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে-

قال حدثنا الاعمش عن مسلم قال كنا مع مسروق فى دار يسار بن نمير فراى فى صفته تماثيل فقال سمعت عبد الله قال سمعت النبى صلى الله عليه وسلم يقول ان اشد الناس عذابا عند الله المصورون.

অর্থঃ হযরত আ’মাশ রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত মুসলিম রহমতুল্লাহি আলাইহি হতে বর্ণনা করেন তিনি বলেন, আমি হযরত মাসরূক রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর সঙ্গে ইয়াসার ইবনে নুমাইর-এর ঘরে ছিলাম, তিনি উনার ঘরের মধ্যে প্রাণীর ছবি দেখতে পেলেন, অতঃপর বললেন, আমি হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর নিকট শুনেছি, তিনি বলেন, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “নিশ্চয়ই মানুষের মধ্যে ঐ ব্যক্তিকে আল্লাহ পাক কঠিন শাস্তি দেবেন, যে ব্যক্তি প্রাণীর ছবি তোলে বা আঁকে।” (বুখারী শরীফ ২য় জিঃ, পৃঃ ৮৮০)

উক্ত হাদীছ শরীফ-এর ব্যাখ্যায় “উমদাতুল ক্বারী শরহে বুখারীতে” উল্লেখ আছে,

وفى التوضيح قال اصحابنا وغيرهم صورة الحيوان حرام اشد االتحريم وهم من الكبائر.

অর্থঃ ‘তাওদ্বীহ’ নামক কিতাবে উল্লেখ আছে যে, হযরত উলামায়ে কিরামগণ প্রত্যেকেই বলেন, জীব জন্তুর ছবি বা প্রতিমূর্তি নির্মাণ করা হারাম বরং শক্ত হারাম এবং এটা কবীরা গুাহর অন্তর্ভুক্ত।

অতএব, নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, উলামায়ে “ছূ”দের উক্ত বক্তব্য ও বদ আমলের কারণে সাধারণ মুসলমানগণ ছবি তুলে প্রকাশ্য হারাম কাজে মশগুল হয়ে কঠিন আযাবের সম্মুখীন হবে যা আমলের ক্ষেত্রে বিশেষভাবে ক্ষতিকর।

কাজেই, যারা এ ধরনের কুফরী আক্বীদায় বিশ্বাসী ও কুফরী বক্তব্য প্রদানকারী তারা ও হক্ব সমঝদার মুসলমানগণ ঈমান ও আমলকে যেন হিফাযত করতে পারে অর্থাৎ মূর্তি বা ছবিসহ সকল বিষয়ে আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদা অনুযায়ী আক্বীদা পোষণ করতে পারে এবং কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস মোতাবেক আমল করে আল্লাহ পাক-এর রিযামন্দি হাছিল করতে পারে সে জন্যেই “কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে প্রাণীর মূর্তি তৈরি করা ও ছবি আঁকা, তোলা, তোলানো, রাখা, রাখানো, দেখা, দেখানো হারাম নাজায়িয হওয়ার অকাট্য প্রমাণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কিত ফতওয়াটি” পুনরায় প্রকাশ করা হলো।

বাতিলপন্থীদের প্রাণীর ছবি সম্পর্কিত আপত্তিকর ও প্রতারণামূলক বক্তব্যসমূহের খন্ডনমূলক জবাব

পূর্ব প্রকাশিতের পর

বাতিলপন্থীদের আপত্তিকর ও

 প্রতারণামূলক বক্তব্য-৫

বাতিলপন্থীরা ছবিকে জায়িয করতে গিয়ে বলে থাকে যে, “….. হাম্বলীরা মুতলাক্ব বা সাধারণভাবে শরীরবিহীন (গায়রে মুজাস্সাম) ছবি অঙ্কনকে বৈধ বলে মত পোষণ করেন। আর মালিকীদের মধ্যে বিশেষতঃ কুরতুবী; শাফিয়ীদের মধ্যে আল্লামা ইবনে হাজর আস্কালানী রহমতুল্লাহি আলাইহি শরীরবিহীন ছবির ব্যাপারে বৈধতার পক্ষে রায় দেন।  আর আমাদের হানাফীদের মধ্যে বিশেষতঃ আল্লামা বদরুদ্দীন আইন রহমতুল্লাহি আলাইহিও শরীরবিহীন ছবিকে প্রয়োজনবশতঃ বৈধ বলে মত পোষণ করেন। …”

অর্থাৎ তাদের মূল বক্তব্য হচ্ছে, পূর্ববর্তীদের কেউ কেউ হাম্বলী, শাফিয়ী, মালিকী এমনকি হানাফীদেরও কেউ কেউ নাকি (গায়রে মুজাস্সাম) শরীরবিহীন ছবিকে বৈধ বলেছেন। (নাঊযুবিল্লাহ্)

খণ্ডনমূলক জবাব

বস্তুতঃ বাতিলপন্থীদের উক্ত বক্তব্য চার মাযহাবের অনুসরণীয় ইমাম-মুজতাহিদগণের প্রতি সুস্পষ্ট মিথ্যা তোহ্মত বৈ কিছুই নয়। কারণ, তারা এরূপ একখানা দলীলও পেশ করতে পারবে না যেখানে উল্লেখ আছে যে, চার মাযহাবের কেউ গায়রে মুজাস্সাম বা শরীরবিহীন অর্থাৎ ছায়াহীন ছবিকে বৈধ বলেছেন।

পক্ষান্তরে আমরা বহু দলীল পেশ করতে পারবো যে, আমাদের হানাফী মাযহাবসহ অন্যান্য মাযহাবের মতে মুজাস্সাম (শরীরযুক্ত) আর গায়রে মুজাস্সাম (শরীরবিহীন) ছবির একই হুকুম। অর্থাৎ উক্ত উভয়প্রকার ছবিই তৈরী করা হারাম।

যেমন, হানাফী মাযহাবের অনুসারী আল্লামা বদরুদ্দীন আইনী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর বিশ্বখ্যাত কিতাব “উমদাতুল ক্বারী শরহে বুখারী”-এর ২২ খণ্ডের ৭০ পৃষ্ঠায় লিখেন,

صورة الحيوان حرام اشد التحريم وهو من الكبائر … ولما ماليس فيه صورة حيوان كالشجر ونحوه فليس حرام وسواء كان فى هذا كله ماله ظل ومالا ظل له.

অর্থঃ- “প্রাণীর ছবি তৈরী করা বা করানো শক্ত হারাম ও কবীরা গুনাহ্। … তবে প্রাণহীন বস্তুর ছবি যেমন, গাছপালা ইত্যাদি হারাম নয়। আর এ ব্যাপারে ‘ছায়াহীন ও ছায়াযুক্ত’ ছবির একই হুকুম। অর্থাৎ উভয়টাই হারাম।”

“উমদাতুল ক্বারী” কিতাবের ২২তম জিঃ ৭৩ পৃষ্ঠায় আরো উল্লেখ আছে,

لا فرق فى تحريم التصوير بين ان تكون الصورة لها ظل او لا.

অর্থঃ- “প্রাণীর ছবি হারাম হওয়ার ব্যাপারে ‘ছায়াযুক্ত বা ছায়াহীন’ হওয়ার মধ্যে কোনই পার্থক্য নেই। অর্থাৎ উভয়টার একই হুকুম।”

শাফিয়ী মাযহাবের অনুসারী আল্লামা হাফিয ইবনে হাজর আস্কালানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর বিশ্বসমাদৃত ব্যাখ্যাগ্রন্থ “ফতহুল বারী শরহে বুখারী”-এর ১০ম খণ্ডের ৩৮৮ পৃষ্ঠায় লিখেন,

ولا فرق فى ذالك بين ما له ظل ومالا ظل له فان كان معلقا على حائط او ملبوس او عمامة او نحو ذلك مما لا يعد ممتهنا فهو حرام.

অর্থঃ “ছায়াযুক্ত ও ছায়াহীন ছবির’ মধ্যে কোনই পার্থক্য নেই। যদি (উক্ত উভয় প্রকার ছবিই) দেয়ালে টাঙ্গানো থাকে অথবা পরিধেয় বস্ত্রে থাকে অথবা পাগড়ীতে থাকে অথবা অনুরূপ সম্মানিত কোন স্থানে বা বস্তুতে থাকে তবে তা হারাম।” উক্ত কিতাবে আরো উল্লেখ আছে,

فان الستر الذى انكره النبى صلى الله عليه وسلم كانت الصورة بلا ظل بغير شك ومع ذالك فامر بنزعه.

অর্থঃ “নিশ্চয়ই নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছবিযুক্ত যে পর্দাটি অপছন্দ করেছেন নিঃসন্দেহে তার ছবিটিও “ছায়াহীন” ছিলো তা সত্ত্বেও তিনি তা সরিয়ে ফেলার নির্দেশ দিয়েছেন।”

কাজেই বাতিলপন্থীরা যে বলে থাকে, “আল্লামা বদরুদ্দীন আইনী ও আল্লামা ইবনে হাজর আস্কালানী রহমতুল্লাহি আলাইহিমা গায়রে মুজাস্সাম  বা শরীরবিহীন অর্থাৎ “ছায়াহীন” ছবিকে বৈধ বলেছেন।” তাদের এ বক্তব্য ডাহা মিথ্যা, দলীলবিহীন ও মনগড়া প্রমাণিত হলো।

মূলকথা হলো, চার মাযহাব তথা আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের মতে মুজাস্সাম ও গায়রে মুজাস্সাম অর্থাৎ ছায়াযুক্ত বা ছায়াহীন উভয়প্রকার ছবি তৈরী করাই হারাম ও নাজায়িয। তবে কোন কোন বাতিল মাযহাব এবং রাফিযী বা শিয়াদের কোন এক দলের মতে গায়রে মুজাস্সাম ছবি তৈরী করা বৈধ। যা আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের নিকট গ্রহণযোগ্য নয় বরং সম্পূর্ণই পরিত্যাজ্য।

বাতিলপন্থীদের আপত্তিকর ও

প্রতারণামূলক বক্তব্য-৬

বাতিলপন্থীরা বলে থাকে যে, “ …. হুযূর আকরাম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শুরুর দিকে ছবি তৈরী ও সংরক্ষণ করাকে নিষেধ করেছিলেন কিন্তু পরবর্তীতে নকশাকৃত বা অঙ্কিত ছবির ব্যাপারে অনুমতি দেন।”

বাতিলপন্থীরা তাদের উপরোক্ত বক্তব্যের স্বপক্ষে দলীল হিসেবে “উমদাতুল ক্বারী” থেকে নিম্নোক্ত ইবারতখানা উল্লেখ করে থাকে,

وانما نهى الشارع اولا عن الصور كلها وان كانت رقما لانهم كانوا حديثى عهد بعبادة الصور فنهى عن ذالك جملة ثم لما تقرر نهيه عن ذالك اباح ماكن رقما  فى ثوب للضرورة.

বাতিলপন্থীরা উক্ত ইবারতের অর্থ করে থাকে এভাবে- “শারে আলাইহিস্ সালাম প্রথম দিকে প্রত্যেক ধরনের ছবি তৈরী করাকে নিষেধ করেছেন। যদিও তা কাপড়ের উপর নকশাকৃত হোক না কেন। কেননা ঐ সময় লোকেরা ছবির ইবাদত করতে অভ্যস্ত ছিলো। এজন্য সাধারণভাবে নিষেধ করেছেন। আর যখন ঐ নিষেধাজ্ঞার কারণ উঠে যায় তখন হুযূর ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রয়োজনবশতঃ কাপড়ের উপর নকশাকৃত বা অঙ্কিত ছবির অনুমতি দেন। (আল্লামা বদরুদ্দীন আইনীঃ উমদাতুল ক্বারী, ২ খণ্ড, ৭৪ পৃষ্ঠা)

খণ্ডনমূলক জবাব

বাতিলপন্থীদের উক্ত বক্তব্যের জবাবে বলতে হয় যে, তারা উক্ত বক্তব্যের দ্বারা সাধারণ মানুষদেরকে সূক্ষ্মভাবে ধোকা দিতে চেয়েছে। অর্থাৎ তারা এটাই বুঝাতে চেয়েছে যে, প্রথম দিকে সব ধরণের প্রাণীর ছবিই নিষিদ্ধ ছিল। তবে পরবর্তীতে কাপড়ে প্রাণীর ছবি অঙ্কন করার অনুমতি দেয়া হয়েছে। অর্থাৎ বর্তমানে কাপড়ের উপর প্রাণীর ছবি অঙ্কন করা জায়িয। আর তাই তারা উক্ত ইবারতের স্থান বিশেষে মনগড়া ও ভুল অর্থ করেছে।

বস্তুতঃ উক্ত ইবারতের দ্বারা যেটা বুঝানো হয়েছে তাহলো- صورة ‘ছূরত’ বা ‘আকৃতি’ দু’প্রকার।  ১। صورة الحيوان অর্থাৎ প্রাণীর ছূরত বা আকৃতি।  ২। صورة غير الحيوان অর্থাৎ প্রাণহীন  বস্তুর আকৃতি। যেমন, গাছপালা, তরুলতা, পাহাড়-পর্বত ইত্যাদি।  হাদীছ শরীফের ভাষায় এগুলোকে رقم বলা হয়। তাই হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রথম দিকে প্রাণী ও প্রাণহীন সকল ছবিই তৈরী করতে নিষেধ করেন। কিন্তু যখন গাছপালা ইত্যাদি প্রাণহীন বস্তুর পূজা বন্ধ হয়ে যায় তখন প্রয়োজনে কাপড়ের উপর গাছপালা ইত্যাদি প্রাণহীন বস্তুর ছবি অঙ্কনের অনুমতি দেন। অর্থাৎ প্রথমদিকে প্রাণী ও প্রাণহীন উভয়প্রকার ছবিই তৈরী করা নিষিদ্ধ ছিলো। তবে পরবর্তীতে প্রাণীর ছবি তৈরী করা নিষিদ্ধ থেকে যায় আর প্রাণহীনবস্তুর ছবি তৈরীর অনুমতি দেয়া হয়। এটাই “উমদাতুল ক্বারীর” উক্ত ইবারতের সঠিক ব্যাখ্যা।

কেননা, “উমদাতুল ক্বারীর” উক্ত ইবারতে স্পষ্টভাবেই উল্লেখ আছে যে,

انما نهى الشارع اولا عن الصور كلها وان كانت رقما.

অর্থাৎ- “শরীয়ত প্রণেতা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রথমতঃ সর্বপ্রকার ছবিই নিষেধ করেন। এমনকি প্রাণহীন বস্তুর ছবিও।”

অথচ রেযাখানীরা নিজ হীনস্বার্থ চরিতার্থ করার উদ্দেশ্যে উক্ত ইবারতে উল্লিখিত

وان كانت رقما.

এ অংশটুকুর অর্থ করেছে, “যদিও তা কাপড়ের উপর নকশাকৃত হোক না কেন।”

অথচ উক্ত ইবারতে ثوب বা কাপড় শব্দের কোন অস্তিত্ব নেই। বরং শুধুমাত্র رقم শব্দ রয়েছে আর  رقم শব্দের অর্থ যে, প্রাণহীন বস্তুর আকৃতি বা নকশা। তা উমদাতুল ক্বারীসহ আরো বহু কিতাবেই উল্লেখ আছে। নিম্নে  رقم শব্দের সঠিক অর্থ তুলে ধরা হলো-

هذا يحتج به من يدل باباحة ماكان رقما مطلقا كما سبق وجوابنا وجواب الجمهور عنه انه محمول على رقم على صورة الشجر وغيره ما ليس بحيوان وقد قدمنا ان هذا جائز عندنا.

অর্থঃ- “যারা মতলক বা সাধারণভাবে কাপড়ে অঙ্কিত ছবিকে জায়িয বলেছে তারা এ হাদীছ শরীফের উপর ভিত্তি করেই বলেছে। আর আমাদের ও জমহুর আলিমগণের ফতওয়া হলো- হাদীছ শরীফে বর্ণিত رقم দ্বারা গাছপালার অনুরূপ প্রাণহীন বস্তুর আকৃতিকেই বুঝানো হয়েছে। আর পূর্বেই বলা হয়েছে যে, এরূপ গাছপালার ছবি আমাদের নিকট জায়িয।”

উল্লিখিত ইবারত দ্বারা সুস্পষ্ট ও অকাট্য ভাবেই প্রমাণিত হলো যে, ইমাম নববী-এর মতে ও জমহুর আলিমগণের মতে হাদীছ শরীফে বর্ণিত الا رقم فى ثوب ”-এর অর্থ হলো গাছ-পালা বা প্রাণহীন বস্তুর ছবি।

শুধু শরহে নববীতেই নয়, হাদীছ শরীফের অন্যান্য ব্যাখ্যা গ্রন্থসমূহেও ইমাম নববী ও জমহুর আলিমগণের  উক্ত মত উল্লেখ রয়েছে, যেমন-

يحتج به من يجوز الرقم مطلقا وجوابنا وجواب الجمهور انه محمول على رقم مالا روح فيه.

অর্থ: “যারা সাধারণভাবে কাপড়ের উপর অঙ্কিত ছবিকে জায়িয বলে তারা এ হাদীছ শরীফকে দলীল হিসেবে পেশ করে থাকে। কিন্তু আমাদের এবং জমহুর উলামাদের ফতওয়া হলো উক্ত হাদীছ শরীফ দ্বারা মূলতঃ প্রাণহীন বস্তুর ছবিকেই বুঝানো হয়েছে।” (শরহুল উবাই ওয়া সিনূসী-এর ৭ম জিঃ ২৫৬ পৃষ্ঠা)

قال النووى يجمع بين الاحاديث بان المراد باستثناء الرقم فى الثوب ما كانت الصورة فيه من غير ذوات الارواح كصورة الشجر ونحوها.

অর্থ: “(কাপড়ের ছবি ব্যতীত) …. ইমাম নববী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, উক্ত হাদীছ শরীফে যে কাপড়ের উপর অঙ্কিত ছবিকে বাদ দেয়া হয়েছে অর্থাৎ জায়িয বলা হয়েছে তা দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, প্রাণহীন বস্তুর ছবি যেমন, গাছপালা, তরুলতা ইত্যাদি।” (ফাতহুল বারী শরহে বুখারী-এর ১০ জিঃ ৩৯০ পৃষ্ঠা)

..قال النووى ..بان المراد باستثناء الرقم فى الثوب ما كانت الصورة فيه من غير ذوات الارواح كصورة الشجر ونحوها.

অর্থঃ- “(কাপড়ের অঙ্কিত ছবি অর্থাৎ কাপড়ে অঙ্কিত (গাছপালার) নক্শা ব্যতীত) … ইমাম নববী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন,  الا رقما فى ثوب এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, প্রাণহীন বস্তুর ছবি। যেমন, গাছপালা ইত্যাদি।” (ইরশাদুস্ সারী শরহে বুখারী”-এর ৮ম জিঃ ৪৮৩ পৃষ্ঠা)

واجاب عنه الجمهور بان المراد من “الرقم فى الثوب” هو ما كان فيه من نقش الشجر ونحوه مما لا روح له.

অর্থঃ- হাদীছ শরীফে বর্ণিত

الا رقما فى ثوب

-এর   ব্যাখ্যায় জমহুর উলামাগণ বলেন, হাদীছ শরীফে বর্ণিত رقما শব্দ দ্বারা উদ্দেশ্য হলো গাছপালার নকশা, অনুরূপ প্রাণহীন বস্তুর আকৃতি।” (ফাতহুল মুলহিম- ৪র্থ জিঃ ১৫০ পৃষ্ঠা)

উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, উক্ত ইবারতে উল্লিখিত  رقم  শব্দের সঠিক ও গ্রহণযোগ্য অর্থ হলো, “প্রাণহীন বস্তু, যেমন- গাছপালা, তরুলতা, পাহাড়পর্বত ইত্যাদি। সাইয়্যিদুল কাওনাইন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রাণহীন বস্তুর ছবি তৈরী করার অনুমতি দিয়েছেন। প্রাণীর ছবি নয়। এটাই উক্ত ‘উমদাতুল ক্বারীতে’ উল্লেখ করা হয়েছে।

বাতিলপন্থীরা প্রাণহীন বস্তুর ছবিকে প্রাণীর ছবি হিসেবে চালিয়ে দিয়ে নিজেদেরকে প্রতারক, ঠকবাজ, ধোকাবাজ হিসেবে প্রমাণ করলো।

বাতিলপন্থীদের আপত্তিকর ও

প্রতারণামূলক বক্তব্য-৭

 বাতিলপন্থীদের আরেকটি বক্তব্য হলো, “……. অবশ্যই মুহব্বতের প্রেক্ষিতে কোন পীর, বুযূর্গ বা যে কোন ব্যক্তির ছবি তোলা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। কারণ ছবি হারাম হওয়ার মূলে হলো গয়রুল্লাহর সম্মান ও ইবাদত। ……..।”

খণ্ডনমূলক জবাব

অর্থাৎ তারা উক্ত বক্তব্য দ্বারা  এটাই ছাবেত করতে চায় যে, যেসব ছবি সম্মান বা ইবাদতের উদ্দেশ্যে উঠানো হয়না সেসব ছবি উঠানো জায়িয। (নাঊযুবিল্লাহ)

তাদের এ বক্তব্যটিও মনগড়া, প্রতারনামূলক ও দলীলবিহীন। কেননা, “সম্মান ও ইবাদতই” ছবি হারাম হওয়ার মূল কারণ নয়। নির্ভরযোগ্য কোন কিতাবেই এটাকে মূল কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়নি। তবে ছবি হারাম হওয়ার কারণ সমূহের মধ্যে এটিও একটি কারণ মাত্র। কিন্তু ছবি হারাম হওয়ার মূল কারণ হচ্ছে-

مضاهاة لخلق الله,

অর্থাৎ “স্রষ্টার সাথে সাদৃশ্যতা” কারণ ছবি ও মুর্তি তৈরী করার অর্থই হলো নিজেকে স্রষ্টা হিসেবে প্রকাশ করা। (নাঊযুবিল্লাহ)। নির্ভরযোগ্য সকল কিতাবেই এটা উল্লেখ আছে।

যেমন- ফখরুল মুহাদ্দিছীন, আল্লামা বদরুদ্দীন আইনী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর বিখ্যাত ব্যাখ্যা গ্রন্থ “বুখারী শরীফ”-এর শরাহ “উমদাতুল ক্বারী”-এর ২২ খণ্ড ৭০ পৃষ্ঠায় লিখেন-

صورة الحيوان حرام اشد التحريم وهو من الكبائر وسواء صنعه لما يمتهن او بغيره فحرام بكل حال لان فيه مضاهاة لخلق الله.

অর্থঃ “প্রাণীর ছবি তৈরী করা শক্ত হারাম ও কবীরা গুনাহ। সম্মানের জন্য তৈরী করুক অথবা অন্য কারণে, সবটার একই হুকুম। অর্থাৎ প্রত্যেক অবস্থাতেই তা হারাম। কেননা, ছবি ও মুর্তি তৈরীর মধ্যে স্রষ্টার সাদৃশ্যতা রয়েছে।

রঈসুল মুহাদ্দিছীন, আল্লাম ইমাম নববী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর বিখ্যাত মুসলিম শরীফ-এর ব্যাখ্যা গন্থ “শরহে নববী” ৭ম জিঃ ৮১ পৃষ্ঠায় লিখেন-

تصوير صورة الحيوان حرام شديد التجريم وهو من الكبائر لانه متوعد عليه بهذا الوعيد الشديد المذكور فى الاحاديث وسواء صنعه بما يمتهن او بغير فصنعته حرام بكل حال لان فيه مضاهاة لخلق الله تعالى.

অর্থ: “প্রাণীর ছবি তৈরী করা শক্ত হারাম ও কবীরা গুনাহের অন্তর্ভূক্ত। কেননা হাদীছ শরীফ সমূহে এ ব্যাপারে কঠিন শাস্তির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। প্রাণীর ছবি সম্মানের জন্য তৈরী করুক অথবা অন্য কোন উদ্দ্যেশ্যে তার একই হুকুম। অর্থাৎ সর্বাবস্থাই প্রানীর ছবি উঠানো হারাম। কেননা এতে স্রষ্টার সাদৃশ্যতা প্রকাশ পায়”।

উক্ত কিতাবের উক্ত খান্ডের ৮৪ পৃষ্ঠায় এ সম্পর্কে আরো উল্লেখ আছে যে-

قال العلماء سبب امتناعهم من بيت فيه صورة كونها معصية فاحشة وفيهامضاهاة لخلق الله تعالى.

অর্থঃ “উলামায়ে কিরামগণ বলেন, যে ঘরে প্রাণীর ছবি রয়েছে সে ঘরে ফেরেশ্তা প্রবেশ না করার কারণ হলো, ছবি তৈরী করা গুনাহ ও ফাহেশা কাজ এবং এতে স্রষ্টার সাদৃশ্যতা রয়েছে….।

“রেজভীয়া” বিতাবের ১০ম খন্ডে উল্লেখ আছে-

علامہ شامی در رد المحتار فرماید  فعل التصویر غیر جائز مطلقا  لانہ مض ہا لخلق اللہ تعال   بمدر اں از  “بحر الرائق است صنعنہ حرام بكل حال لان فیہ مضاهاة لخلق الله تعالى…   وچوں علت تحریم مشابہت بحلق الہی ست تفاوت نمی کند…”

অর্থঃ “…. আল্লামা শামী “রদ্দুল মুহতারে” উল্লেখ করেন যে, প্রাণীর ছবি তৈরী করা নাজায়িয। কেননা এটা স্রষ্টার সাদৃশ্যতা দাবী করার নামান্তর। অনুরূপ “বাহরূর রায়িকে” উল্লেখ আছে যে, প্রাণীর ছবি তৈরী করা প্রত্যেক অবস্থাতেই হারাম। কেননা এতে স্রষ্টার সাদৃশ্যতা রয়েছে। যেহেতু ছবি হারাম হওয়ার কারণ হলো স্রষ্টার সাথে সাদৃশ্যতা। তাই পার্থক্য করা যাবে না (বরং সব ধরনের ছবিই হারাম)।…”

উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা সুস্পষ্টভাবে এটাই প্রমাণিত হলো যে, বাতিলপন্থীদের উপরোক্ত বক্তব্য মনগড়া, জিহালতপূর্ণ, দলীলবিহীন ও প্রতারণামূলক।

বাতিলপন্থীদের আপত্তিকর ও

প্রতারণামূলক বক্তব্য-৮

 বাতিলপন্থীদের কেউ কেউ বলে থাকে যে, সামাজিক, রাজনৈতিক, আন্তর্জাতিক বিভিন্ন প্রেক্ষাপটের কারণে বিশেষ প্রয়োজনে ছবি তোলা বৈধ যা যুগের চাহিদাও।”

খণ্ডনমুলক জবাব

মূলতঃ তাদের এ বক্তব্য দলীলবিহীন, মনগড়া ও স্ববিরোধী। কারণ তারা প্রথমেই বিনা শর্ত-শারায়েতে ছায়াহীন ছবি জায়িয প্রমাণ করতে চাইলো কিন্তু এখানে এসে “বিশেষ প্রয়োজনে” শর্ত আরোপ করলো, কেন? যদি তাদের মতে ছায়াহীন” ছবি জায়িযই হয় তবে তো প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে ও বিশেষ প্রয়োজনে সব অবস্থাতেই ছবি তোলা বৈধ। “বিশেষ প্রয়োজনে” শর্ত আরোপ করার দ্বারা এতে কি এটাই প্রমাণিত হয় না যে, তারা যে বলেছে “ছায়াহীন ছবি বৈধ” তাদের একথা ভুল।

উপরন্তু বিশেষ প্রয়োজনের পাশাপাশি রেযাখানীরা আরো বলেছে যে, “ছবি তোলা বৈধ যা যুগের চাহিদাও।”

এ প্রেক্ষিতে বলতে হয়, তাদের এ বক্তব্য  কাট্টা কুফরীর  অন্তর্ভুক্ত।

কেননা, যদি যুগের চাহিদা অনুযায়ীই ফতওয়া দিতে হয়, তবে তো গান-বাজনা, সুদ-ঘুষ, জুয়া-মদ, বেপর্দা-বেহায়াপনা ইত্যাদিকেও জায়িয বা বৈধ বলে ফতওয়া দিতে হবে। কেননা এগুলোও তো যুগের চাহিদা। (নাঊযুবিল্লাহ)

পক্ষান্তরে নামায, রোযা, হজ্ব, যাকাত, পর্দা, হালাল কামাই, সুন্নতের আমল ইত্যাদিকে হারাম বলে ফতওয়া দিতে হবে। কেননা এটাও যুগের চাহিদা। (নাঊযুবিল্লাহ্)

মূলতঃ ফতওয়া দিতে হবে কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস অনুযায়ী, যুগের চাহিদা অনুযায়ী নয়।

হাক্বীক্বত ছবি তোলা সর্বাবস্থায়ই হারাম। তবে হ্যাঁ, কেউ যদি রাষ্ট্রীয় বা আর্ন্তজাতিক প্রেক্ষাপটের কারণে মা’জুর বা অপারগ হয় তবে সেক্ষেত্রে তার জন্য মা’জুর হিসেবে যতটুকু প্রয়োজন ততটুকু ছবি তোলা ‘মুবাহ’ বলে গণ্য হবে। এ প্রসঙ্গে ইমামূল মুহাদ্দিছীন, আল্লামা মুল্লা আলী ক্বারী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর বিশ্বখ্যাত “মিরকাত শরীফ”-এর ৮ম খণ্ড ৩৩০ পৃষ্ঠায় লিখেন,

فان الضرورة تبيح المحضورات

 অর্থঃ “নিশ্চয়ই জরুরত হারামকে মুবাহ করে দেয়।”  (আল আশরাহ ওয়ান নাযায়ির)

আর শরীয়তে এক্ষেত্রে মা’জুর বলা হয় তাকে, যাকে ফরয, ওয়াজিব ও সুুন্নাতে মুয়াক্কাদা  আদায় করার ক্ষেত্রে হারাম কাজে বাধ্য করা হয়। যেমন ইলম অর্জন করা ফরয, হালাল কামাই করা ফরজ।” সুতরাং ইল্ম অর্জনের লক্ষ্যে মাদ্রাসা বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে হলে ছবি তুলতেই হবে, হালাল কামাই করার লক্ষ্যে বিদেশ যেতে হলে ছবি তুলতেই হবে। এসকল ক্ষেত্রে সে মা’জুর। এক্ষেত্রে যতটুকু প্রয়োজন ঠিক ততটুকু ছবি তোলা তার জন্যে মুবাহ। অবশ্য এগুলোও তাকে হারাম জেনে ও মেনেই তুলতে হবে।

বাতিলপন্থীদের আপত্তিকর ও

প্রতারণামূলক বক্তব্য-৯

বাতিলপন্থীদের আরেকটি গোমরাহীমূলক বক্তব্য হলো-প্রয়োজনে রেকর্ডের জন্য ফাইল বন্দি ছবিসমূহ এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের নিকট জ্ঞান ও ইতিহাসের অনেক অজানা তথ্য জানার নিমিত্তে সরকারী-বেসরকারী যাদুঘর বা বিশেষ প্রতিষ্ঠানসমূহে পূর্বের নানা মনীষীগণের ছবি সংরক্ষণ বা ধারণ করে রাখা বিশেষ প্রয়োজনে মাকরূহ হবেনা।”

খণ্ডনমুলক জবাব

মূলতঃ তাদের এ কথাও যে স্পষ্ট শরীয়তের খিলাফ তা বলার অপেক্ষা রাখেনা। এ প্রসঙ্গে একটি হাদীছ শরীফই যথেষ্ট। যেমন বলা হয়েছে, “আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কা’বা শরীফের তাওয়াফ সমাপ্ত করে অত্যন্ত বিনয়ের সাথে কা’বা গৃহের ভিতর প্রবেশ করে সাইয়্যিদুনা হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস্ সালাম ও সাইয়্যিদুনা হযরত ইসমাঈল আলাইহিস্ সালাম-এর ছবি(প্রতিকৃতি) অঙ্কন করা দেখে বললেন, “আয় আল্লাহ্ পাক! এ কাজ যারা করেছে তাদেরকে ধ্বংস করুন।” সেখানে কাঠের তৈরী একটি কবুতরও সংরক্ষিত ছিলো। তিনি তৎক্ষনাৎ দু’জন নবী আলাইহিমুস্ সালাম-এর প্রতিকৃতি ও কবুতরের কাঠের মূর্তিটি অপসারণ করলেন।” (মুছান্নাফে ইবনে আবী শাইবাহ, মুছান্নাফে আব্দুর রযযাক, আর রাহীকুল মাখতুম-৪০৪ পৃষ্ঠা)

উল্লেখ্য, যেখানে হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস্ সালাম ও হযরত ইসমাঈল আলাইহিস্ সালাম-এর মত নবী-রসূলগণের ছবি আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অপসারণ করলেন; সেখানে অপর কোন্ মনীষী থাকতে পারে যে, বাতিলপন্থীরা তার ছবি রাখা প্রয়োজন মনে করছে?

উপরন্তু হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস্ সালাম ও হযরত ইসমাঈল আলাইহিস্ সালাম-এর ছবি রাখার জন্য যেখানে আল্লাহ্ পাক-এর রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বদ্ দোয়া করেছেন সেখানে এই ধরণের কাজকে কি করে বাতিলপন্থীরা বিশেষ প্রয়োজন বলতে পারে?

মূলতঃ তাদের এ বক্তব্য স্পষ্টভাবে আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বিরোধিতার শামীল যা প্রকাশ্য কুফরীর মধ্যে পড়ে।

অতএব, যাদুঘর বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ফাইল বন্দি করে রাখা বা ধারণ করার উদ্দেশ্যে ছবি তোলা সম্পূর্ণই হারাম।

তবে হ্যাঁ, ধর্ম ব্যবসায়ীদের উঠানো ছবি দলীল হিসেবে অর্থাৎ কেউ যদি হক্ব দাবী করে অথচ সে ছবি তোলে যা হারাম আবার স্বীকারও করে ও বলে যে, সে ছবি তোলেনা। তখন তার এ দাবী যে মিথ্যা ও প্রতারণামূলক এবং সে যে না হক্ব তা প্রমাণ করার লক্ষ্যে তার দ্বারা উঠানো ছবি কাটিং করে ফাইল বন্দি হতে পারে তবে সেটাও প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে খোলা রাখা জায়িয নয়। যেমন, ‘কেউ হদছ, কমিনী, তৈয়ব শাহ, তাহের শাহ এর ছবি দলীল হিসাবে কাটিং করে ফাইল বন্দি করে রাখলো’ এটা মাকরূহ্ বা নিষেধ নয়।

অতএব, বিশেষ প্রয়োজনে ছবি তোলা সম্পর্কিত বাতিলপন্থীদের উক্ত বক্তব্য সম্পূর্ণই দলীলবিহীন, অশুদ্ধ, মনগড়া, স্ববিরোধী ও কূফরীর অন্তর্ভুক্ত বলে প্রমাণিত হলো।

বাতিলপন্থীদের আপত্তিকর ও

প্রতারণামূলক বক্তব্য-১০

তথাকথিত আশেকে রসূল শাহ আলম কর্তৃক সম্পাদিত “পবিত্র কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ-এর আলোকে ছবি, খেযাব (কলপ) ও স্বর্ণ ব্যবহার নাযায়েজ নয়।” নামক চটি বইয়ের ২ পৃষ্ঠায় লিখেছে, “পবিত্র কুরআন শরীফ-এ ছবি বা প্রতিকৃতি সম্পর্কে বেশ দলীল পাওয়া যায়। ছবি বা প্রতিকৃতি নিষিদ্ধ কুরআন শরীফ-এর কোথাও নেই। তারপরও হযরত রাসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর দোহাই দিয়ে হযরত রাসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর হাদীছ বলে মিথ্যা হাদীছ বর্ণনা করে ছবিকে হারাম করা হয়েছে। ইহা একমাত্র উমাইয়া খলীফাদের চক্রান্ত বা ষড়যন্ত্র।” নাঊযুবিল্লাহ।

খন্ডনমূলক জবাব

বাতিলপন্থী তথাকথিত এ আর শাহ আলম-এর উক্ত বক্তব্যের জবাবে বলতে হয় যে, তার উক্ত বক্তব্যগুলি চরম কুফরীমূলক, বিভ্রান্তিকর, জালিয়াতীপূর্ণ ও প্রতারণামূলক হয়েছে। কারণ; পবিত্র কুরআন শরীফ-এর কোথাও প্রাণীর ছবি বা প্রতিকৃতি জায়িযের পক্ষে কোন দলীল নেই। বরং ছবি হারাম বা নাজায়িজের পক্ষে পরোক্ষভাবে তথা কুরআন শরীফ-এর ব্যাখ্যায় হাদীছ শরীফ-এ হাজার হাজার দলীল রয়েছে।

সামনে আমরা ধারাবাহিকভাবে প্রতারক বাতিলপন্থী শাহ আলমের পেশকৃত আয়াত শরীফসমূহের সঠিক ব্যাখ্যা এবং প্রাণীর ছবি হারাম বা নাজায়িজের পক্ষে সঠিক ফয়সালা ও দলীল আদিল্লাহ পেশ করব। ইনশাআল্লাহ।

মিথ্যাবাদী প্রতারক বাতিলপন্থী শাহ আলম প্রাণীর ছবি হারাম সম্পকির্ত হাদীছ শরীফগুলিকে মিথ্যা হাদীছ আখ্যায়িত করে ছবিকে জায়িয করার অপপ্রয়াস করেছে। তার উক্ত ভ্রান্তিমূলক বক্তব্যের প্রেক্ষিতে বলতে হয় যে, মুহাক্কিক মুদ্দাক্কিক হক্কানী রাব্বানী ইমাম মুজতাহিদগণই প্রানীর ছবি হারাম সম্পর্কিত হাদীছ শরীফগুলো তাঁদের ছহীহ ও নির্ভরযোগ্য কিতাবসমূহে তথা ছিহাহ সিত্তাসহ অন্যান্য ছহীহ কিতাবসমূহে ছহীহ বা বিশুদ্ধ রিওয়ায়েতে বর্ণনা করেছেন। যা অস্বীকার করার কোনই উপায় নেই। আর ছবি হারাম বা নাজায়িয হওয়ার বিষয়ে উক্ত কিতাবসমূহে আলাদা পরিচ্ছেদও লিপিবদ্ধ হয়েছে।

অতএব, ইমাম-মুজতাহিদগণ রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর দোহাই দিয়ে মিথ্যা বা জাল হাদীছ বর্ণনা করেননি, বরং ছহীহ হাদীছের ভিত্তিতেই প্রাণীর ছবিকে হারাম বা নাজায়িয বলেছেন। মূলতঃ সত্যিকার অর্থে প্রবঞ্চক, প্রতারক, ভ্রষ্ট, বাতিলপন্থী এ আর শাহ আলম-ই মিথ্যা ও জালিয়াতীর আশ্রয় নিয়ে কুট-কৌশলে ইমাম মুজতাহিদগণকে দোষারূপ করে ছবিকে জায়িয করার অপচেষ্টা করেছে মাত্র।

উল্লেখ্য, উমাইয়া খলীফার অধিকাংশরাই ফাসিক ও ভ্রান্তমতবাদের অনুসারী ছিল বলে তাদের প্রভাবে ইমাম মুজতাহিদ হাদীছ সংকলনে মিথ্যার আশ্রয় নিবেন’ একথা একেবারেই বিশ্বাসযোগ্য নয়। কারন, হক্কানী ইমাম মুজতাহিদগণ ফাসিক ও ভ্রান্ত খলীফা বা শাসকের আনুগত্য করতে পারেন না এবং বাস্তবেও আনুগত্য করেননি। তবে একটি চিরসত্য ইতিহাস জানতে হবে যে, হাদীছ সংকলনের ব্যাপারে ব্যাপক কাজ হয়েছিল বিশিষ্ট তাবিয়ী খলীফা হযরত উমর ইবনে আব্দুল আযীয রহমতুল্লাহি আলাইহি এর সময়। যিনি ন্যায় নিষ্ঠাবান, ন্যায় বিচারক, মুত্তাক্বী- পরহেযগার ও আল্লাহওয়ালা খলীফা ছিলেন। আর সে সময়ই ছহীহ ও জাল হাদীছগুলো আলাদাভাবে চিহ্নিত করে শুধু ছহীহ হাদীছসমূহ কিতাব আকারে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে আর জাল বা মিথ্যা হাদীছগুলোকে চিহ্নিত করে প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। যে সমস্ত হাদীছ শরীফ গ্রহণীয় সর্বজনমান্য ইমাম মুজতাহিদগণের কিতাবে লিপিবদ্ধ হয়েছে, তা তাঁরা ছহীহ সনদে বিশুদ্ধভাবেই লিপিবদ্ধ করেছেন। যা আমরা এখন কিতাব আকারে প্রাপ্ত হয়েছি। তাই উমাইয়া খলীফাদের কিছু ফাসিক ও ভ্রান্ত খলীফার দোহাই দিয়ে ঢালাওভাবে হাদীছ শরীফকে জাল বা মিথ্যা বলাতে এ আর শাহ আলম ও তার একান্ত অনুসারীরা কাফির বা মুরতাদ হয়ে গেছে।

সামনে আমরা ধারাবাহিকভাবে বাতিলপন্থী প্রতারক ধোঁকাবাজ এ আর শাহ আলমের পেশকৃত হাদীছ শরীফ-এর সঠিক ব্যাখ্যা এবং প্রাণীর ছবি হারাম বা নাজায়িযের পক্ষে সঠিক ফায়সালা ও দলীল আদিল্লাহ পেশ করব ইনশাআল্লাহ।

বাতিলপন্থীদের আপত্তিকর ও

প্রতারণামূলক বক্তব্য-১১

তথাকথিত এ আর শাহ আলম তার মিথ্যা ও অপব্যাখ্যায় ভরা চটি বইয়ের ৩য় পৃষ্ঠায় ছবি জায়িয করার স্বপক্ষে প্রসঙ্গবিহীন একখানা হাদীছ শরীফ-এর অংশ তুলে ধরে ছবিকে জায়িয করার অপপ্রয়াস চালিয়েছে। তার বক্তব্য ও দলীল হচ্ছে- “দুনিয়াতে আসার পূর্বেই আল্লাহ পাক মানুষের আত্মাকে সৃষ্টি করে তার আকার- অবয়ব প্রদান করেছেন। মানুষ হলো আল্লাহ তায়ালার প্রতিকৃতি বা প্রতিচ্ছবি। হাদীছ শরীফে এসেছে-

خلق الله ادم على صورته

অনুবাদ: আল্লাহ পাক হযরত আদম আলাইহিস সালামকে আপন ছূরত (আকৃতিতে) তৈরি করেছেন। (মিশকাত শরীফ ১ম খন্ড)”

খন্ডনমূলক জবাব

প্রতারক, অপব্যাখ্যাকারী এ আর শাহ আলমের উক্ত বক্তব্য এবং উক্ত হাদীছ শরীফ-এর অনুবাদ শিরক ও কুফরীমূলক হয়েছে। উক্ত হাদীছ শরীফ দ্বারা মূলতঃ হযরত আদম আলাইহিস সালাম-এর সৃষ্টি রহস্য বর্ণনা করা হয়েছে। তাই উক্ত হাদীছ শরীফ দ্বারা প্রাণীর প্রতিকৃতি, গঠন বা ছবি তৈরি করা জায়িয প্রমাণিত হয় না। বরং মহান আল্লাহ পাক হযরত আদম আলাইহিস্ সালামকে যে আদম আলাইহিস সালাম-এর উপযুক্ত ছূরত বা আকৃতিতে সৃষ্টি করেছেন তাই বলা হয়েছে।

প্রতারক এ আর শাহ আলম-এর বক্তব্য ও অনুবাদ দ্বারা ২টি বিষয় স্পষ্ট হয়েছে। তা হচ্ছে- (ক) মানুষ আল্লাহ পাক এর প্রতিকৃতি বা প্রতিচ্ছবি অর্থাৎ মানুষের মতই আল্লাহ পাক-এর আকৃতি বা দেহ আছে। নাঊযুবিল্লাহ।

(খ) على صورته হাদীছাংশের কুফরী ও শিরকী অনুবাদ। নাঊযুবিল্লাহ। নিম্নে প্রত্যেকটি বিষয়ের দলীলভিত্তিক সঠিক জবাব প্রদান করা হলো।

(ক) মানুষ আল্লাহ পাক-এর প্রতিকৃতি বা প্রতিচ্ছবি অর্থাৎ মানুষের মত আল্লাহ পাক-এর আকৃতি বা দেহ আছে। (নাঊযুবিল্লাহ)

জাওয়াব: কুফরী ও শিরকীমূলক উক্ত বক্তব্যের জবাবে বলতে হয় যে, মানুষ আল্লাহ পাক-এর প্রতিকৃতি বা প্রতিচ্ছবি নয়। আর মানুষের মত আল্লাহ পাক এর আকার আকৃতি বা দেহ নেই। বরং আল্লাহ পাক আকৃতি, প্রতিকৃতি, প্রতিচ্ছবি, অবয়ব বা দেহ বিশিষ্ট হওয়া থেকে সম্পূর্ণরূপে পুতঃপবিত্র। উক্ত বৈশিষ্টগুলো আল্লাহ পাক-এর সৃষ্টি। আর আল্লাহ পাক সৃষ্টির মত হওয়াকে বিশ্বাস করা কুফরী। মহান আল্লাহ পাক ‘সূরা ইখলাছ’-এ ইরশাদ করেন-

قل هو الله احد. الله الصمد. لم يلد ولم يولد. ولم يكن له كفوا احد.

অর্থঃ “হে হাবীব! আপনি বলুন- আল্লাহ পাক এক। আল্লাহ পাক ছমাদ তথা বেনিয়াজ। আল্লাহ পাক থেকে কেউ জন্ম নেয়নি এবং আল্লাহ পাককেও কেউ জন্ম দেয়নি। আর আল্লাহ পাক-এর সমকক্ষ কেউ নেই।”

‘সূরা শুরা’-এর ১১ নম্বর আয়াত শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে-

ليس كمثله شىء وهو السميع البصير.

অর্থঃ “আল্লাহ পাক এর মত কোন কিছুই নেই। তিনি শ্রবণকারী ও দ্রষ্টা।”

পৃথিবীর সর্বজনমান্য ও নির্ভরযোগ্য কিতাবসমূহে ইমাম মুজতাহিদগণ লিখেছেন, বিশ্বখ্যাত ও নির্ভরযোগ্য সকল আক্বাইদের কিতাব ও অন্যান্য কিতাবসমূহে এ কথাই উল্লেখ আছে যে, মহান আল্লাহ্ পাক দেহ বা আকার-আকৃতি বিশিষ্ট নন। মহান আল্লাহ্ পাক দেহ বা আকার-আকৃতি বিশিষ্ট একথা বিশ্বাস করা সুস্পষ্ট কূফরী। যেমন- এ প্রসঙ্গে প্রখ্যাত হাদীছ বিশারদ, ইমামুল মুহাদ্দিছীন, আল্লামা ইমাম বায়হাক্বী শাফিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর প্রসিদ্ধ কিতাব- “কিতাবুল আস্মা ওয়াছ্ ছিফত”-এর ২১৮ পৃষ্ঠায় লিখেন,

فان الذى يجب علينا وعلى كل مسلم ان يعلم ان ربنا ليس بذى صورة ولا هيئة فان الصورة تقتضى الكيفية وهى عن الله وعن صفاته منفية

অর্থ: “নিশ্চয়ই আমাদের উপর এবং সকল মুসলমানদের উপর একথা বিশ্বাস করা ওয়াজিব যে, আমাদের মহান আল্লাহ্ পাক “আকৃতি ও দেহ” বিশিষ্ট নন। কারণ আকৃতির জন্য “কাইফিয়্যাত” অর্থাৎ দৈর্ঘ্য-প্রস্ত, নরম-শক্ত ইত্যাদি প্রয়োজন। অথচ আল্লাহ্ পাক ও তাঁর ছিফাতসমূহ “কাইফিয়্যাত”  অর্থাৎ দৈর্ঘ্য-প্রস্ত, নরম-শক্ত ইত্যাদি হওয়া থেকে সম্পূর্ণই পবিত্র।”

বিখ্যাত ফক্বীহ, ইমামুল হুদা ওয়াদ্দ্বীন আল্লামা ইমাম ইবনুল হুমাম হানাফী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর বিখ্যাত কিতাব “আল মুসাইয়ারাহ্”-এর ২৮ পৃষ্ঠায় লিখেন-

فليس سبحانه بذى لون ولا رائحة ولا صورة وبشكل

অর্থ: “মহান আল্লাহ্ পাক রং ও গন্ধ বিশিষ্ট নন এবং আকৃতি ও দেহ বিশিষ্টও নন।”

হুজ্জাতুল ইসলাম, ইমাম ফী ইল্মিল  কালাম আল্লামা ইমাম গাজ্জালী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর সুপ্রসিদ্ধ কিতাব “ইহইয়াউ উলূমিদ্দীন”-এর ১ম খন্ড ৮১ পৃষ্ঠায় লিখেন-

مع كونه منزها عن الصورة والمقدار مقدسا عن الجهات والاقطار

অর্থ: “মহান আল্লাহ্ পাক “ছুরত” অর্থাৎ আকার-আকৃতি এমনকি সমস্ত “জিহাত” বা দিক হতেও পবিত্র।”

প্রসিদ্ধ, নির্ভরযোগ্য ও বিশ্ব বিখ্যাত কিতাব “শরহে আক্বায়িদে নাসাফীতে” উল্লেখ করা হয়েছে-

ولا جسم ولا جوهر ولا مصور اى ذى صورة وشكل مشكل مثل صورة الانسان او الفرس بان لها بواسطة الكميات تلك من خواص الاجسام جص ذى حد ونهاية.

অর্থ: “তিনি  (جسم) অর্থাৎ দেহ বিশিষ্ট নন। (কারণ দেহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ রয়েছে এবং দেহ স্থান দখলকারী)। মানুষ ও প্রাণীর صورة বা আকার-আকৃতি হলো- দেহের বৈশিষ্ট্য, যা দেহের প্রান্তসীমা ও পরিধি তথা দৈর্ঘ্য, প্রস্থ বেধ দ্বারা অর্জিত অর্থাৎ আয়তন ও পরিমাণ হতে সৃষ্টি হয়ে থাকে। তিনি প্রান্ত, সীমা ও পরিধি বিশিষ্ট নন।

এ উপমহাদেশের সুপ্রসিদ্ধ ও প্রখ্যাত হাদীছ বিশারদ ইমামুল মুহাদ্দিছীন, আল্লামা শাহ্ ওয়ালীউল্লাহ্ মুহাদ্দিছে দেহলভী হানাফী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর নির্ভরযোগ্য কিতাব “আল ক্বাওলুল জামীল”-এর ৩১ পৃষ্ঠায় লিখেন-

منزه من جميع سمات النقص والزوال من الجسمية والتجيز والعرضية والهة والاالوان والاشكال.

অর্থ: মহান আল্লাহ্ পাক অপূর্ণতা ও নশ্বরতার যাবতীয় ছিফ্ত বা গুণ হতে সম্পূর্ণই মুক্ত। তিনি দেহ বিশিষ্ট, স্থান দখলকারী, কোন জিহাত বা দিকে অবস্থানকারী, বর্ণ ও আকৃতিধারী এবং দেহের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যধারী নন।”

বিখ্যাত ও নির্ভরযোগ্য কিতাব “শরহে মাওয়াক্বিফ”-এর ৫৭১ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-

انه تعالى ليس فى جهة ولا فى مكان من الامكنة وخالف فيه المشبهة.

অর্থ: নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ্ পাক কোন দিকে ও কোন স্থানে নন। কিন্তু পথভ্রষ্ট মুশাব্বিহা ফিরকা এ মতটির বিরোধীতা করে থাকে।”

সুপ্রসিদ্ধ আলিমে দ্বীন আল্লামা রমজান আফেনদী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর লিখিত “শরহে আক্বাইদ”-এর ১০৬ ও ১০৮ পৃষ্ঠার হাশিয়ায় উল্লেখ করেছেন-

ولا مصور اى ذى صورة وشكل لان تلك من خواص الاجسام … ولا يتمكن فى مكان.

অর্থ: মহান আল্লাহ্ পাক ছূরত ও শেকল অর্থাৎ আকার-আকৃতি বিশিষ্ট নন। কেননা আকার-আকৃতি দেহের বৈশিষ্ট্য। …. এবং তিনি কোন স্থানে স্থিতিশীলও নন।”

মহান আল্লাহ্ পাক-এর “জাতের পরিচয়” সম্পর্কিত উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা সুস্পষ্ট ও অকাট্যভাবেই প্রমাণিত হলো যে, মহান আল্লাহ্ পাক-এর “জাত” ওয়াজিবুল ওয়াজূদ, তাঁর জাত হাদিছ বা সৃষ্ট নয়, মহান আল্লাহ্ পাক জিস্ম বা দেহ, ছূরত বা আকার-আকৃতি এবং দৈর্ঘ্য-প্রস্থ ভেদ ও তাশবীহ্ বা সাদৃশ্য ইত্যাদি হতে সম্পূর্ণরূপেই পবিত্র।

অতএব প্রমাণিত হলো যে, মানুষ স্রষ্টার প্রতিকৃতি বা প্রতিচ্ছবি নয়। আর আল্লাহ পাক মানুষের আকৃতি বিশিষ্টও নন। বরং আকার আকৃতি প্রতিকৃতি প্রতিচ্ছবি হওয়া থেকে তিনি সম্পূর্ণরূপে পুতঃপবিত্র। সুবহানাল্লাহ।

তাই, বাতিলপন্থী শাহ আলম কর্তৃক পেশকৃত হাদীছ শরীফ-এর সাথে প্রানীর ছবি জায়িয বা নাজায়িয হওয়ার কোন সম্পর্ক নেই। বরং উল্লিখিত হাদীছ শরীফ দ্বারা হযরত আদম আলাইহিস সালামকে আদম আলাইহিস সালাম-এর উপযুক্ত ছূরত বা আকৃতিতে তৈরি করা হয়েছে, ইহাই বুঝানো হয়েছে। সুতরাং এ আর শাহ আলম-এর বক্তব্য চরম মিথ্যা, প্রতারণামূলক, ধোঁকাপ্রসূত, জালিয়াতীপূর্ণ, অপব্যাখ্যায় ভরপুর, কুফরী ও শিরকী হিসেবে প্রমাণিত হলো।

(খ) على صورته হাদীছাংশের কুফরী ও শিরকী অনুবাদ (নাঊযুবিল্লাহ)

জাওয়াব: বাতিলপন্থী এ আর শাহ আলম কর্তৃক উক্ত হাদীছাংশের অনুবাদ “আল্লাহ পাক হযরত আদম আলাইহিস সালামকে আপন ছূরত (আকৃতিতে) তৈরি করেছেন।” কুফরী ও শিরকীমূলক হয়েছে। কারণ, এতে মানুষকে আল্লাহ পাক এর মতই সাব্যস্ত করা হয়েছে। যা সুস্পষ্টভাবেই কুফরী ও শিরকীর শামিল।

মূলতঃ হাদীছ শরীফ খানার সঠিক অনুবাদ হচ্ছে, “মহান আল্লাহ পাক হযরত আদম আলাইহিস সালামকে তাঁর (অর্থাৎ আদম আলাইহিস সালাম-এর) ছূরত বা আকৃতিতেই সৃষ্টি করেছেন।” সুবনাল্লাহ। (বুখারী শরীফ, মিশকাত শরীফ)

এই বিশুদ্ধ অনুবাদের স্বপক্ষে উক্ত হাদীছ শরীফ-এর ব্যাখ্যায় হক্কানী রব্বানী ব্যাখ্যাকারগণের বিশুদ্ধ ব্যাখ্যা তুলে ধরা হলো।

বিখ্যাত হাদীছ বিশারদ, সাইয়্যিদুল মুহাদ্দিছীন, ফখরুল ওলামা, ফক্বীহুল উম্মত, বুখারী শরীফের প্রখ্যাত ব্যখ্যাকার আল্লামা শায়খ ইমাম বদরুদ্দীন আবী মুহম্মদ মাহ্মূদ ইবনে আইনী হানাফী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর বিখ্যাত ব্যাখ্যাগ্রন্থ “উমদাতুল ক্বারী শরহে বুখারী”-এর ২২তম জিঃ ২২৯ পৃষ্ঠায় লিখেন,

(خلق الله ادم على صورته) قوله على صورته اى على صورة ادم لانه اقرب اى خلقه فى اول الامر بشرا سويا …. وقد يقال هو عائد الى الله تعالى لكن الصورة هى الهيئة وذلك الاعلى الاجسام فمعنى الصورة الصفة … اى صفته يعنى خلق ادم صفته اى حيا عالما سميعا بصيدا متكلما او هو اضافة تشريفية نحو بيت الله وروح الله لانه ابتدأها لاعلى مثال سابق بل بمحض الاختراع فشرفها بالاضافة اليه.

অর্থ: “(মহান আল্লাহ্ পাক হযরত আদম আলাইহিস সালামকে তাঁর ছূরতে সৃষ্টি করেছেন) এ হাদীছ শরীফের অর্থ বা ব্যাখ্যা হলো- হযরত আদম আলাইহিস সালামকে মহান আল্লাহ্ পাক হযরত আদম আলাইহিস সালাম-এর ছূরত বা আকৃতিতেই সৃষ্টি করেছেন। এ ব্যাখ্যাটিই অধিক নিকটবর্তী বা ছহীহ্। অর্থাৎ মহান আল্লাহ্ পাক হযরত আদম আলাইহিস সালামকে সর্ব প্রথম মানুষ হিসেবে সৃষ্টি করেছেন। ……..

বলা হয় যে, ه ‘হু’ জমীর মহান আল্লাহ্ পাক-এর দিকে ফিরেছে। কিন্তু “ছূরত” হচ্ছে- আকার-আকৃতি (যার জন্য দৈর্ঘ্য-প্রস্ত ইত্যাদি জরুরী) অথচ তা মহান আল্লাহ্ পাক-এর জন্য প্রযোজ্য নয়। বরং দেহ বিশিষ্ট বস্তুর জন্যই প্রযোজ্য। সুতরাং এ হাদীছ শরীফে বর্ণিত ছূরত” শব্দের অর্থ হচ্ছে- “ছিফত বা গুণাবলী। অর্থাৎ আল্লাহ্ পাক নিজ গুণাবলী যেমন, হায়াত, ইল্ম, শ্রবণ শক্তি, দেখার শক্তি ও কথা বলার শক্তি ইত্যাদি দিয়ে হযরত আদম আলাইহিস সালামকে সৃষ্টি করেছেন। অথবা এ হাদীছ শরীফের আরেকটি ব্যাখ্যা হলো- হাদীছ শরীফে যে ইজাফত বা সম্বন্ধ রয়েছে তা ইজাফতে তাশ্রীফী। অর্থাৎ হযরত আদম আলাইহিস সালাম-এর সম্মান প্রকাশার্থেই তাঁর ছূরতকে আল্লাহ্ পাক-এর দিকে ইজাফত বা সম্বন্ধ করেছেন। যেমন- বাইতুল্লাহ্ ও রূহুল্লাহ্। মূলতঃ হযরত আদম আলাইহিস সালাম হলেন মানুষ হিসেবে আল্লাহ্ পাক-এর প্রথম তৈরি যার কোন মেছাল পূর্বে ছিল না। তাই আদম আলাইহিস সালাম-এর ছূরতকে নিজের দিকে ইজাফত করে উক্ত ছূরতকে সম্মানিত করেছেন।” অনুরূপ “শরহে কিরমানী আলাল বুখারীতে”ও উল্লেখ আছে।

হাফিজুল হাদীছ, ইমামুল মুহাদ্দিছীন, প্রখ্যাত হাদীছ বিশারদ, বুখারী শরীফের বিখ্যাত ব্যাখ্যাকার আল্লামা ইমাম হাফিয আহমদ ইবনে আলী ইবনে হাজ্র আসক্বালানী শাফিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর  জগতখ্যাত ব্যাখ্যা গ্রন্থ “ফতহুল বারী শরহে বুখারী”-এর ১১ তম জিঃ, ৩ পৃষ্ঠায় লিখেন,

قوله (خلق الله ادم على صورته) … واختلف الى ماذا يعود الضمير؟ فقيل الى ادم اى خلقه على صورته التى استمر عليها الى ان اهبط والى ان مات… والمراد بالصورة الصفة والمعنى ان الله خلقه على صفتة من العلم والحياة والسمع والبصر وغير ذالك.

অর্থ: “(মহান আল্লাহ্ পাক হযরত আদম আলাইহিস সালামকে তাঁর ছূরতে সৃষ্টি করেন) …….. এ হাদীছ শরীফে বর্ণিত ه  ‘হু’ জমীরটি কোন দিকে ফিরেছে তা নিয়ে ইখতিলাফ বা মতভেদ রয়েছে বলে উল্লেখ করেন। কেউ কেউ বলেন, হযরত আদম আলাইহিস সালাম-এর দিকে ফিরেছে। অর্থাৎ এ হাদীছ শরীফের অর্থ হলো- আল্লাহ্ পাক হযরত আদম আলাইহিস সালামকে হযরত আদম আলাইহিস সালাম-এর ছূরতেই সৃষ্টি করেছেন। যে ছূরতে হযরত আদম আলাইহিস সালাম জান্নাত থেকে পৃথিবীতে তাশরীফ এনেছেন এবং বিছাল শরীফ লাভ করেছেন। ………

(আবার কেউ বলেন, হাদীছ শরীফে বর্ণিত  “ছূরত” শব্দ দ্বারা “ছিফত বা গুণাবলীকেই বুঝানো হয়েছে। অর্থাৎ নিশ্চয়ই আল্লাহ্ পাক তাঁর নিজ ছিফত বা গুণাবলী যেমন- ইল্ম, হায়াত, শ্রবণ শক্তি, দেখার শক্তি, ইত্যাদি দিয়ে হযরত আদম আলাইহিস সালামকে সৃষ্টি করেছেন।”

সুপ্রসিদ্ধ হাদীছ বিশারদ, জগতখ্যাত আলিমে দ্বীন ও ফক্বীহ বহু কিতাব রচয়িতা, শায়খুল মুহাদ্দিছীন, আল্লামা আবুল আব্বাস শিহাবুদ্দীন আহমদ বিন মুহম্মদ কুস্তালানী শাফিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর “ইরশাদুস্ সারী শরহে বুখারী”-এর ৯ম জিঃ, ১৩০ পৃষ্ঠায় লিখেন,

انه (قال خلق الله ادم على صورته) الضمير عائد على ادم عليه السلام اى خلقه تاما مستويا …. الاضافة فيها تكريم وتشيف وذالك ان لله تعالى خلق ادم على صورته لم يشا كلها شئ من الصور.

অর্থ: “(সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামন্নাবিয়্যীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আল্লাহ্ পাক হযরত আদম আলাইহিস সালামকে তাঁর ছূরতে সৃষ্টি করেন)। এ হাদীছ শরীফে যে ه জমীর বা সর্বনাম রয়েছে তা হযরত আদম আলাইহিস সালাম-এর দিকে ফিরেছে। অর্থাৎ আল্লাহ্ পাক হযরত আদম আলাইহিস সালামকে স্বয়ং সম্পূর্ণ করে সৃষ্টি করেছেন।” ….. তার সম্মান ও মর্যাদা প্রকাশার্থেই আল্লাহ্ পাক-এর দিকে ইজাফত বা সম্বন্ধ করা হয়েছে। কেননা পূর্ব নমুনা বা দৃষ্টান্ত ছাড়াই মহান আল্লাহ্ পাক হযরত আদম আলাইহিস সালামকে সৃষ্টি করেন।”

মাওলানা আনওয়ার শাহ্ কাশমিরী তাঁর “ফাইদুল বারী শরহে বুখারী”-এর ৪র্থ জিঃ, ৪০৩ পৃষ্ঠায় লিখেন,

قوله (خلق الله ادم على صورته)… فقال القاضى ابو بكربن العربى ان المراد الصورة الصفة والمعنى ان الله تعالى خلق ادم على صفاته … وقيل الغرض من الاسناد الصورة الى نفسه مجرد التشريف.

অর্থ: “(মহান আল্লাহ্ পাক হযরত আদম আলাইহিস সালামকে তাঁর ছূরতে সৃষ্টি করেন)। ….. আল্লামা ক্বাযী আবূ বকর ইবনে আরাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, হাদীছ শরীফে বর্ণিত “ছূরত” দ্বারা “ছিফত” বা গুণাবলীকে বূঝানো হয়েছে। অর্থাৎ নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ্ পাক হযরত আদম আলাইহিস সালামকে তাঁর গুণাবলী দ্বারা সৃষ্টি করেছেন।  …… আবার কেউ কেউ বলেন, মূলতঃ সম্মান ও মর্যাদা প্রকাশার্থেই “ছূরত” শব্দকে নিজের দিকে ইজাফত বা সম্বন্ধ করেছেন।”

সাইয়্যিদুল মুহাদ্দিছীন, হাদীছ শরীফের বিখ্যাত ব্যাখ্যাকার আল্লামা মুল্লা আলী ক্বারী হানাফী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর বিখ্যাত ব্যাখ্যাগ্রন্থ “মিরকাতুল মাফাতীহ্ আলা মিশকাতিল মাছাবীহ্”-এর ৯ম জিঃ, ৪৬ পৃষ্ঠায় লিখেন,

(خلق الله ادم على صورته) اى على صورته التى استمر عليها الى ان اهبط والى ان ما ت دفعا لتوهم ان صورته كانت فى الجنة على صفة اخرى. وقيل الضمير لله والمراد بالصورة الصفة من الحياة والسمع والبصر.

অর্থ: “(মহান আল্লাহ্ পাক হযরত আদম আলাইহিস সালামকে তাঁর ছূরতে সৃষ্টি করেছেন।) অর্থাৎ যে ছূরতে হযরত আদম আলাইহিস সালাম জান্নাতে ছিলেন এবং জান্নাত থেকে পৃথিবীতে অবতরণ করেছেন এবং বিছাল শরীফ লাভ করেছেন সেই ছূরতেই সৃষ্টি করেছেন। যারা এ ধারণা পোষণ করে যে, “হযরত আদম আলাইহিস সালাম জান্নাতে অন্য ছূরতে ছিলেন।” এ ভুল ধারণা খন্ডন করার জন্যেই এ হাদীছ শরীফ বর্ণিত হয়েছে। কেউ কেউ বলেন, জমীর বা সর্বনামটি আল্লাহ্ পাক-এর দিকে ফিরেছে। এক্ষেত্রে “ছূরত” শব্দ দ্বারা উদ্দেশ্য হলো “ছিফত বা গুণাবলী” যেমন- হায়াত, ইল্ম, শ্রবণ শক্তি ও দেখার শক্তি। অর্থাৎ এ সকল গুণাবলী দিয়েই মহান আল্লাহ্ পাক হযরত আদম আলাইহিস সালামকে সৃষ্টি করেছেন।”

মিশকাত শরীফের বিখ্যাত ব্যাখ্যাগ্রন্থ “তালীকুছ্ছবীহ্ আলা মিশকাতিল মাছাবীহ্-এর ৫ম জিঃ, ১০০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ  আছে,

قوله (خلق الله ادم على صورته) الحديث ذهب بعض اهل العلم اى ان الضمير من الصورة راجع الى ادم عليه السلام .. الاضافة فيها اضافة تكريم وشريف وذالك ان الله تعالى خلق ادم ابا الشر على صورة لم يشاكلها شئ من الصور… وقيل المراد بالصورة الصفة من الحياة والعلم والقدرة والسمع والبصر والمعنى ان الله تعالى خلق ادم على هذه الصفات.

অর্থ: “(আল্লাহ্ পাক হযরত আদম আলাইহিস সালামকে তাঁর ছূরতে সৃষ্টি করেন) কোন কোন আলিম বলেন, ছূরত শব্দের সাথে যে জমীর বা সর্বনাম রয়েছে তা হযরত আদম আলাইহিস সালাম-এর দিকে ফিরেছে। অর্থাৎ আদম আলাইহিস সালামকে আল্লাহ্ পাক আদম আলাইহিস সালাম-এর ছূরতেই সৃষ্টি করেছেন। ……….. আর উক্ত হাদীছ শরীফে যে ইজাফত রয়েছে তা ইজাফতে তাশরীফী। অর্থাৎ আল্লাহ পাক যেহেতু হযরত আদম আলাইহিস সালামকে এরূপ ছূরতে তৈরী করেছেন যে ছূরতের কোন দৃষ্টান্ত বা নমুনাই পূর্বে ছিল না। তাই সম্মানার্থে উক্ত ছূরতকে নিজের দিকে ইজাফত বা সম্বন্ধ করেছেন। কেউ কেউ বলেন, “ছূরত” দ্বারা উদ্দেশ্য হলো- “ছিফত বা গুণাবলী।” যেমন- হায়াত, ইল্ম, কুদরত, শ্রবণ শক্তি, দেখার শক্তি ইত্যাদি। অর্থাৎ আল্লাহ্ পাক হযরত আদম আলাইহিস সালামকে এ সকল ছিফত বা গুণাবলী দিয়ে সৃষ্টি করেছেন।”

সুপ্রসিদ্ধ হাদীছ বিশারদ, প্রখ্যাত ব্যাখ্যাকার ইমামুল কবীর, আল্লামা শরফুদ্দীন হুসাইন ইবনে মুহম্মদ ইবনে আব্দুল্লাহ্ ত্বীবী শাফিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর বিখ্যাত ব্যাখ্যাগ্রন্থ “শরহুত ত্বীবী আলা মিশকাতিল মাছাবীহ্”-এর ৯ম জিঃ, ৫ পৃষ্ঠায় লিখেন,

قوله (على) صورته) الهاء مرجعها الى ادم عليه السلامم….. الاضافة فيها اضافة تكريم وتشريف وذالك ان الله تعالى خلق ادم ابا البشر على صورة لم يشاكلها شئى من الصور.

অর্থ: “(মহান আল্লাহ্ পাক হযরত আদম আলাইহিস সালামকে তাঁর ছূরতে সৃষ্টি করেছেন)। হাদীছ শরীফে যে “হা ” জমীর বা সর্বনাম রয়েছে তা হযরত আদম আলাইহিস সালাম-এর দিকে ফিরেছে।” অর্থাৎ হযরত আদম আলাইহিস সালামকে হযরত আদম আলাইহিস সালাম-এর ছূরতেই সৃষ্টি করা হয়েছে। ……. আর হাদীছ শরীফে যে ইজাফত বা সম্বন্ধ রয়েছে তা ইজাফতে তাশরীফী। অর্থাৎ হযরত আদম আলাইহিস সালাম-এর সম্মান, মর্যাদা প্রকাশার্থেই তাঁর ছূরতকে নিজের দিকে ইজাফত বা সম্বন্ধ করেছেন। কেননা আবুল বাশার হযরত আদম আলাইহিস সালামকে যে ছূরতে সৃষ্টি করেছেন এরূপ কোন ছূরতই পূর্বে ছিল না।”

শাইখুল উলামা ওয়াল মুহাদ্দিছীন, প্রখ্যাত আলিমে দ্বীন আল্লামা শাহ্ আব্দুল হক মুহাদ্দিছে দেহলভী হানাফী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ মিশকাত শরীফের ফার্সী শরাহ্ “আশয়াতুল লুময়াত”-এর ৪র্থ জিঃ, ৩য় পৃষ্ঠায় লিখেন,

(خلق الله ادم على صورة)….. وبعضے تاویل کنند مشہور در تاویل انست کہ صورت بمعنی صفت ست… یعنی  پیدا کرد پرورد  گار تعالی ادم را صفت خود… اضافت برائے تشریف است چنانکہ روح اللہ بیت اللہ.

অর্থ: “(মহান আল্লাহ্ পাক হযরত আদম আলাইহিস সালামকে তাঁর ছূরতে সৃষ্টি করেছেন)। …. উক্ত হাদীছ শরীফের তা’বীল বা ব্যাখ্যাসমূহের মধ্যে মশহুর ব্যাখ্যা হলো- “ছূরত” শব্দের অর্থ হলো, “ছিফত”। … অর্থাৎ মহান আল্লাহ্ পাক হযরত আদম আলাইহিস সালামকে নিজ গুণাবলী দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। … অথবা “ছূরত” শব্দে যে ইজাফত রয়েছে তা সম্মান প্রকাশার্থে  যেমন, “বাইতুল্লাহ্ ও রূহুল্লাহ্”-এর মধ্যে রয়েছে।”

প্রখ্যাত মুহাদ্দিছ, বিখ্যাত ব্যাখ্যাকার, আল্লামা কুতুবুদ্দীন হানাফী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর প্রসিদ্ধ ব্যাখ্যা গ্রন্থ মিশকাত শরীফের শরাহ্ “মুযাহিরে হক্ব”-এর ৪র্থ জিঃ, ৪৫ পৃষ্ঠায় লিখেন,

(خلق الله ادم على صورة)….. مشہور اسکی تاویلمی یہ ہے کہ “صورت” بمعنی صفت کے ہے…یعنی پیدا کیا اللہ تعالی نے ادم کو اوپر صفت ا پنی کے… یا اضافت تشریف کے لئے ہے جیسا کہ روح اللہ بیت اللہ.

অর্থ: “(মহান আল্লাহ্ পাক হযরত আদম আলাইহিস সালামকে তাঁর ছূরতে সৃষ্টি করেছেন)।…. উক্ত হাদীছ শরীফের তা’বীল বা ব্যাখ্যাসমূহের মধ্যে মশহুর ব্যাখ্যা হলো- “ছূরত” শব্দের অর্থ হলো, “ছিফত”। … অর্থাৎ মহান আল্লাহ্ পাক হযরত আদম আলাইহিস সালামকে নিজ গুণাবলী দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। … অথবা “ছূরত” শব্দে যে ইজাফত রয়েছে তা সম্মান প্রকাশার্থে  যেমন, “বাইতুল্লাহ্ ও রূহুল্লাহ্”-এর মধ্যে রয়েছে।”

মুফতী আহমদ ইয়ার খান নঈমী হানাফী ছাহেব তাঁর “মিরআতুল মানাজীহ শরহে মিশকাত”-এর ৬ষ্ঠ জিঃ, ৩১২ পৃষ্ঠায় লিখেন,

(خلق الله ادم على صورة)….. اس جملہ کی چار شرحین ہیں “صورت” بمعنی ہیئت وشکل  ہے یا بمعںی صفت اور ضمیر کا مرجع یا ادم علیہ السلام ہین یا اللہ تعالی لہذا اس جملہ کے چار معنی ہیں اللہ تعالی ادم علیہ السلام کو ان کی شکل وہیئت پر پیدا فرمایا جس شکل میں انہیں بناتھا انہیں اول ہی سے وہ شکل دی  دوسرں  کی طرح نہ کیا  کہ پھلے بچہ پھر   جوان پھر  بوڑھا  وغیرہ یا اللہ نے حضرت ادم کو صفت پر پیدا کیا کہ وہ اول ہی سے  عالم, عاقل,  عامل, عارف, سمیع, بصیر وغیرہ  تھے. یا اللہ نے صرف ادم کو اپنی پسندیدہ صورت پر پیدا فرمایا,  خود فرمایا یا   لقد خلقنا الانسان فى احسن تقويم اسلئے کے کوئی شخص دوزخ میں شکل انسان سے نہ جاویگا کہ یہ شکل خدا کو   پیاری  ہے یا اللہ نے حضرت ادم کو اپنی صفات پر پیدا  فرمایا  کہ انہیں اپنا علم اپنا تصرف اپنی سمع اپنی  قدرت وغیرہ بخشے.

অর্থ: “(মহান আল্লাহ্ পাক হযরত আদম আলাইহিস সালামকে তাঁর ছূরতে সৃষ্টি করেছেন)। এ হাদীছ শরীফের চারটি ব্যাখ্যা রয়েছে। “ছূরত” শব্দের অর্থ হচ্ছে- আকার-আকৃতি অথবা “ছিফত বা গুণাবলী।” আর জমীর বা সর্বনামটি হয় হযরত আদম আলাইহিস সালাম-এর দিকে ফিরবে অথবা মহান আল্লাহ্ পাক-এর দিকে ফিরবে। তাই এ হাদীছ শরীফের চারটি অর্থ হবে। (১) মহান আল্লাহ্ পাক হযরত আদম আলাইহিস সালামকে হযরত আদম আলাইহিস সালাম-এর ছূরতেই সৃষ্টি করেছেন। তাঁকে সৃষ্টির শুরু থেকেই এ ছূরত দেয়া হয়েছে। অন্যান্যদের ন্যায় প্রথমে শিশু অতঃপর যুবক, অতঃপর বৃদ্ধ ইত্যাদি হিসেবে সৃষ্টি করেননি।

(২) অথবা মহান আল্লাহ্ পাক হযরত আদম আলাইহিস সালামকে তাঁর ছিফতেই সৃষ্টি করেছেন। কেননা তিনি প্রথম থেকেই আলিম, আক্বিল, আমিল, আরিফ,  দ্রষ্টা ও শ্রোতা ছিলেন।

(৩) অথবা মহান আল্লাহ্ পাক হযরত আদম আলাইহিস সালামকে নিজের পছন্দনীয় ছূরত বা আকৃতিতে সৃষ্টি করেছেন। যেমন- আল্লাহ্ পাক নিজেই কালামে পাকে ইরশাদ করেন, “নিশ্চয়ই আমি মানব জাতীকে সর্বোত্তম ছূরতে সৃষ্টি করেছি। তাই কোন মানুষই মানুষের ছূরতে জাহান্নামে যাবে না। কেননা এ ছূরত আল্লাহ্ পাক-এর প্রিয়।

(৪) অথবা মহান আল্লাহ্ পাক হযরত আদম আলাইহিস সালামকে স্বীয় গুণাবলী যেমন- ইল্ম, চলাফেরার শক্তি, শ্রবণ শক্তি, দেখার শক্তি, কুদরত ইত্যাদি দিয়ে সৃষ্টি করেছেন।”

মিশকাত শরীফের শরাহ্ “তানযীমুল আশতাত”-এর ৪র্থ জিঃ, ১৯৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-

(خلق الله ادم على صورة)….. اور یہاں صورت کی ضمیر اگر اللہ کی طرف راجع ہو تو  اللہ صورت کی سے صفت مراد ہے یعنی صفات ہر تو سایہ کرکے پیدا کرتے ہوئے ادم علیہ السلام کو حی وعالم و مرید وقادر و سمیع وبصیر کرکے بنائے ہیں یا علی صورته اضافت سے ادم کو تشریف وتکریم مراد جیساکہ روح اللہ و بیت اللہ.

অর্থ: “(মহান আল্লাহ্ পাক হযরত আদম আলাইহিস সালামকে তাঁর ছূরতে সৃষ্টি করেছেন)। …. হাদীছ শরীফে বর্ণিত “ছূরত” শব্দের সাথে যে জমীর বা সর্বনাম রয়েছে তা আল্লাহ্ পাক-এর দিকে ফিরলে তার অর্থ হবে “ছিফত” অর্থাৎ মহান আল্লাহ্ পাক হযরত আদম আলাইহিস সালামকে তাঁর নিজ গুণাবলী যেমন- হায়াত, ইল্ম, কুদরাত, শ্রবণশক্তি ও দেখার শক্তি ইত্যাদি দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। অথবা হযরত আদম আলাইহিস সালাম-এর সম্মান-মর্যাদা ইত্যাদি প্রকাশার্থেই হযরত আদম আলাইহিস সালাম-এর ছূরতকে নিজের দিকে ইজাফত বা সম্বন্ধ করেছেন। যেমন- কা’বা শরীফ ও হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম-এর মর্যাদা প্রকাশার্থেই কা’বা শরীফকে “বাইতুল্লাহ্ ও হযরত ঈসা আলাইহিস সালামকে “রূহুল্লাহ্” বলেছেন।

হাদীছ শরীফের উপরোক্ত ব্যাখ্যা দ্বারাই এটা প্রমাণিত হলো যে, মহান আল্লাহ্ পাক-এর দিকে কোন কিছুর ইজাফত হলেই তা আল্লাহ্ পাক-এর জাত-এর অংশ বলে সাব্যস্ত হবেনা। যদি হতো তবে এ হাদীছ শরীফ দ্বারাই আল্লাহ্ পাক-এর আকার-আকৃতি থাকা সাব্যস্ত হতো। অথচ কোন মুহাদ্দিছীন উক্ত হাদীছ শরীফের সরাসরী অর্থ গ্রহণ করে আল্লাহ্ পাক-এর আকার-আকৃতিকে সাব্যস্ত করেননি। বরং সকলেই তা’বীলী অর্থ গ্রহণ করেছেন।

অতএব, প্রমাণিত হলো- উক্ত হাদীছ শরীফ-এর সাথে প্রাণীর ছবি জায়িয বা নাজায়িয হওয়ার কোনই সামঞ্জস্য নেই। তথাকথিত আশিকে রসূল বাতিলপন্থী শাহ আলম প্রসঙ্গ ছাড়া দলীল পেশ করে সর্বসাধারণ মানুষকে ধোকা দিয়েছে এবং হাদীছ শরীফ-এর মনগড়া অনুবাদ করে কুফরী করেছে।

(অসমাপ্ত)

পরবর্তী সংখ্যার অপেক্ষায় থাকুন

কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে প্রাণীর মূর্তি তৈরি করা ও ছবি আঁকা, তোলা, তোলানো, রাখা, রাখানো, দেখা, দেখানো হারাম নাজায়িয হওয়ার অকাট্য প্রমাণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-১৮

কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে প্রাণীর মূর্তি তৈরি করা ও ছবি আঁকা, তোলা, তোলানো, রাখা, রাখানো, দেখা, দেখানো হারাম নাজায়িয হওয়ার অকাট্য প্রমাণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-১৯

কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে প্রাণীর মূর্তি তৈরি করা ও ছবি আঁকা, তোলা, তোলানো, রাখা, রাখানো, দেখা, দেখানো হারাম নাজায়িয হওয়ার অকাট্য প্রমাণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-২১

কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে প্রাণীর মূর্তি তৈরি করা ও ছবি আঁকা, তোলা, তোলানো, রাখা, রাখানো, দেখা, দেখানো হারাম নাজায়িয হওয়ার অকাট্য প্রমাণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-২২

কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে প্রাণীর মূর্তি তৈরি করা ও ছবি আঁকা, তোলা, তোলানো, রাখা, রাখানো, দেখা, দেখানো হারাম নাজায়িয হওয়ার অকাট্য প্রমাণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-২৩