কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে লাইলাতুন নিছফি মিন শা’বান বা শবে বরাত-এর আহকাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-৮

সংখ্যা: ২০৩তম সংখ্যা | বিভাগ:

সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন-উনার জন্যে এবং অসংখ্য দুরূদ ও সালাম আল্লাহ পাক-উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু  আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার প্রতি। আল্লাহ পাক-উনার অশেষ রহমতে “ফতওয়া ও গবেষণা বিভাগ মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ”-এর তরফ থেকে বহুল প্রচারিত, হক্বের অতন্দ্র প্রহরী, বাতিলের আতঙ্ক ও আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদায় বিশ্বাসী এবং হানাফী মাযহাব-এর অনুসরণে প্রকাশিত একমাত্র দলীলভিত্তিক যামানার তাজদীদী মুখপত্র “মাসিক আল বাইয়্যিনাত” পত্রিকায় যথাক্রমে- ১. টুপির ফতওয়া (২য় সংখ্যা) ২. অঙ্গুলী চুম্বনের বিধান (৩য় সংখ্যা) ৩. নিয়ত করে মাজার শরীফ যিয়ারত করা (৪র্থ সংখ্যা) ৪. ছবি ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় হারাম হওয়ার ফতওয়া (৫ম-৭ম সংখ্যা) ৫. জুমুয়ার নামায ফরযে আইন ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ফতওয়া (৮ম-১০ম সংখ্যা) ৬. মহিলাদের মসজিদে গিয়ে জামায়াতে নামায পড়া মাকরূহ্ তাহরীমী সম্পর্কে ফতওয়া (১১তম সংখ্যা) ৭. ক্বদমবুছী ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১২তম সংখ্যা) ৮. তাহাজ্জুদ নামায জামায়াতে পড়া মাকরূহ্ তাহ্রীমী ও বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ এবং তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৩তম সংখ্যা) ৯. ফরয নামাযের পর মুনাজাত ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৪-২০তম সংখ্যা) ১০. ইন্জেকশন নেয়া রোযা ভঙ্গের কারণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২১-২২তম সংখ্যা) ১১. তারাবীহ্-এর নামাযে বা অন্যান্য সময় কুরআন শরীফ খতম করে উজরত বা পারিশ্রমিক গ্রহণ করা জায়িয ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২৩-২৪তম সংখ্যা) ১২. তারাবীহ্ নামায বিশ রাকায়াত ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২৫-২৯তম সংখ্যা) ১৩. দাড়ী ও গোঁফের শরয়ী আহ্কাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৩০-৩৪তম সংখ্যা) ১৪. প্রচলিত তাবলীগ জামায়াত ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৩৫-৪৬তম সংখ্যা) ১৫. আযান ও ছানী আযান মসজিদের ভিতরে দেয়ার আহ্কাম এবং তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৪৭-৫০তম সংখ্যা) ১৬. দোয়াল্লীন-যোয়াল্লীন-এর শরয়ী ফায়সালা এবং তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে  ফতওয়া (৫১-৫২তম সংখ্যা) ১৭. খাছ সুন্নতী টুপি ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে  ফতওয়া (৫৩-৫৯তম সংখ্যা) ১৮. নূরে মুহম্মদী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও তাঁর প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে  ফতওয়া (৬০-৮২তম সংখ্যা)

১৯. ইমামাহ্ বা পাগড়ী মুবারকের আহ্কাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কিত ফতওয়া (৮৩-৯৬তম সংখ্যা) ২০. শরীয়তের দৃষ্টিতে আখিরী যোহরবা ইহ্তিয়াতুয্ যোহর-এর আহ্কাম এবং তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৯৭-১০০তম সংখ্যা)  ২১. জানাযা নামাযের পর হাত তুলে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করার শরয়ী ফায়সালা ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১০১-১১১তম সংখ্যা) এবং ২২. হিজাব বা পর্দা ফরযে আইন হওয়ার প্রমাণ ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১১২-১৩১তম সংখ্যা) ২৩. খাছ সুন্নতী ক্বমীছ বা কোর্তা এবং তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৪০তম সংখ্যা) ২৪. হানাফী মাযহাব মতে ফজর নামাযে কুনূত বা কুনূতে নাযেলা পাঠ করা নাজায়িয ও নামায ফাসিদ হওয়ার কারণ এবং তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৩২-১৫২তম সংখ্যা) ২৫. ইসলামের দৃষ্টিতে বিশ্বকাপ ফুটবল বা খেলাধুলা’র শরয়ী আহকাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ফতওয়া (১৫৫তম সংখ্যা) ২৬. হানাফী মাযহাব মতে পুরুষের জন্য লাল রংয়ের পোশাক তথা রুমাল, পাগড়ী, কোর্তা, লুঙ্গি, চাদর ইত্যাদি পরিধান বা ব্যবহার করা হারাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৫৩-১৬০তম সংখ্যা)   ২৭.  ইসলামের  নামে গণতন্ত্র ও নির্বাচন করা, পদপ্রার্থী হওয়া, ভোট চাওয়া ও দেয়া হারাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৬১-১৭৫তম সংখ্যা), ২৮. কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে প্রাণীর মূর্তি তৈরি করা ও ছবি আঁকা, তোলা, তোলানো, রাখা, রাখানো, দেখা, দেখানো হারাম নাজায়িয হওয়ার অকাট্য প্রমাণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৬৮-চলমান), ২৯. জুমুয়া ও ঈদাইনের খুৎবা আরবী ভাষায় দেয়া ওয়াজিব। আরবী ব্যতীত অন্য কোন ভাষায় খুৎবা দেয়া মাকরূহ তাহরীমী ও বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৯২-১৯৩তম সংখ্যা) পেশ করার পর-

৩০তম ফতওয়া হিসেবে

১৯৫তম সংখ্যা থেকে কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে লাইলাতুন নিছফি মিন শা’বান শবে বরাত-এর আহকাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া পেশ করে আসতে পারায় মহান আল্লাহ পাক-উনার দরবার শরীফ-এ শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি।

 

কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে লাইলাতুন নিছফি মিন শা’বান বা শবে বরাত ও তার সংশ্লিষ্ট

বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া দেয়ার কারণ

সুন্নতের পথিকৃত, হক্বের অতন্দ্র প্রহরী, দ্বীন ইসলামের নির্ভীক সৈনিক, সারা জাহান থেকে কুফর, শিরক ও বিদয়াতের মুলোৎপাটনকারী, বাতিলের আতঙ্ক এবং আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদায় বিশ্বাসী একমাত্র দলীলভিত্তিক তাজদীদী মুখপত্র- “মাসিক আল বাইয়্যিনাত” পত্রিকায় এ যাবৎ যত লেখা বা ফতওয়াই প্রকাশ বা পত্রস্থ হয়েছে এবং ইনশাআল্লাহ হবে তার প্রতিটিরই উদ্দেশ্য বা মাকছূদ এক ও অভিন্ন। অর্থাৎ “মাসিক আল বাইয়্যিনাত”-এ এমন সব লেখাই পত্রস্থ হয় যা মানুষের আক্বীদা ও আমলসমূহ পরিশুদ্ধ ও হিফাযতকরণে বিশেষ সহায়ক।

উলামায়ে ‘ছূ’রা ‘শবে বরাত’ সম্পর্কে সমাজে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। উলামায়ে ‘ছূ’ বা ধর্মব্যবসায়ীরা বলে ও প্রচার করে থাকে যে, শবে বরাত কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ-এর কোথাও  নেই, শবে বরাত পালন করা বিদয়াত, নাজায়িয ও হারাম। নাঊযুবিল্লাহ!

তাদের এ বক্তব্যের কারণে তারা নিজেরা যেরূপ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তদ্রুপ তাদের উক্ত কুফরীমূলক বক্তব্য ও বদ আমলের কারণে সাধারণ মুসলমানগণ ই’তিক্বাদী বা আক্বীদাগত ও আ’মালী বা আমলগত উভয় দিক থেকেই বিরাট ক্ষতির সম্মুক্ষীন হচ্ছে। কেননা হাদীছ শরীফে শবে বরাতের অশেষ ফযীলত বর্ণিত হয়েছে। যেমন এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফে বর্ণিত রয়েছে-

ان الدعاء يستجاب فى خمس ليال اول ليلة من رجب وليلة النصف من شعبان وليلة القدر الـمباركة وليلتا العيدين

অর্থ: “নিশ্চয়ই পাঁচ রাত্রিতে দোয়া নিশ্চিতভাবে কবুল হয়ে থাকে। (১) রজব মাসের প্রথম রাতে, (২) শবে বরাতের রাতে, (৩) ক্বদরের রাতে, (৪) ঈদুল ফিতরের রাতে, (৫) ঈদুল আযহার রাতে।”

হাদীছ শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে-

عن على رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم اذا كانت ليلة النصف من شعبان فقوموا ليلها وصوموا يومها فان الله تعالى ينزل فيها لغروب الشمس الى السماء الدنيا فيقول الامن مستغفر فاغفرله الا مسترزق فارزقه الا مبتلى فاعافيه الا كذا الا كذا حتى يطلع الفجر.

অর্থ: “হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহ পাক-উনার রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, যখন শা’বানের পনের তারিখ রাত্রি উপস্থিত হবে তখন তোমরা উক্ত রাত্রিতে নামায আদায় করবে এবং দিনে রোযা রাখবে। কেননা নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক উক্ত রাত্রিতে সূর্যাস্তের সময় পৃথিবীর আকাশে আসেন অর্থাৎ রহমতে খাছ নাযিল করেন। অতঃপর ঘোষণা করেন, “কোন ক্ষমা প্র্রার্থনাকারী আছ কি? আমি তাকে ক্ষমা করে দিব।” “কোন রিযিক প্রার্থনাকারী আছ কি? আমি তাকে রিযিক দান করব।” “কোন মুছিবতগ্রস্থ ব্যক্তি আছ কি? আমি তার মুছিবত দূর করে দিব।” এভাবে ফজর পর্যন্ত ঘোষণা করতে থাকেন।” (ইবনে মাজাহ্, মিশকাত)

এ ধরনের আরো অসংখ্য হাদীছ শরীফ রয়েছে, যাতে শবে বরাত-এর ফযীলতের কথা বলা হয়েছে অর্থাৎ যারা শবে বরাত পালন করবে তারা মহান আল্লাহ পাক ও উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনাদের উভয়েরই খাছ রেযামন্দি বা সন্তুষ্টি লাভ করবে।

অতএব, নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, উলামায়ে “ছূ”দের উক্ত বক্তব্য ও বদ আমলের কারণে সাধারণ মুসলমানগণ ‘শবে বরাত’ পালন থেকে বিরত থেকে অশেষ ফযীলত থেকে মাহরূম হবে। যা আমলের ক্ষেত্রে বিশেষভাবে ক্ষতিকর।

কাজেই যারা এ ধরনের কুফরী আক্বীদায় বিশ্বাসী ও কুফরী বক্তব্য প্রদানকারী, তারা ও হক্ব তালাশী সমঝদার মুসলমানগণ ঈমান ও আমলকে যেন হিফাযত করতে পারে। অর্থাৎ শবে বরাতসহ সকল বিষয়ে আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদার ন্যায় আক্বীদা পোষণ করতে পারে এবং কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস মোতাবেক আমল করে আল্লাহ পাক-উনার রেজামন্দী হাছিল করতে পারে। সে জন্যই কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে ‘লাইলাতুন নিছফি মিন শা’বান বা শবে বরাত’-এর আহকাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কিত ফতওয়াটি প্রকাশ করা হলো।

 

অসংখ্য ছহীহ হাদীছ শরীফ দ্বারাও

শবে বরাত প্রমাণিত

 

পূর্ব প্রকাশিতের পর

এ প্রসঙ্গে শুয়াবুল ঈমান কিতাবের ৩য় খ-ের ৩৮১ পৃষ্ঠায় আরো উল্লেখ আছে-

(১১৬)

اخبرنا ابو عبد الله الحافظ ومحمد بن موسى قالا نا محمد بن يعقوب نا محمد بن اسحاق الصناعانى نا شجاع بن الواليد نا زهير بن معاوية انا الحسن بن الحر حدثنى مكحول ان الله يطلع على اهل الارض فى النصف من شعبان فيغفر لهم الا لرجلين الاكافرا او مشاحن. اخبرنا ابو الحسن بن الفضل القطان ببغداد انا او سهل بن زياد القطان انا اسحاق بن الحسن الحربى نا عفان نا عبد الواحد بن زياد عن الحجاج عن مكحول عن كثير بن مرة الحضرمى عن النبى صلى الله عليه وسلم فى ليلة النصف من شعبان يغفر الله عز وجل لاهل الارض الا مشرك والـمشاحن.

অর্থ: হযরত ইমাম বায়হাক্বী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, আমাদের কাছে বর্ণনা করেন হযরত আব্দুল্লাহ আল হাফিয রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং হযরত মুহম্মদ ইবনে মুসা রহমতুল্লাহি আলাইহি। উনারা উভয়ে বলেন, আমাদের কাছে বর্ণনা করেন হযরত মুহম্মদ ইবনে ইয়াকুব রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি বলেন, আমাদের কাছে বর্ণনা করেন হযরত মুহম্মদ ইবনে ইসহাক্ব ছনয়ানী রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি বলেন, আমাদের কাছে বর্ণনা করেন হযরত শুজা ইবনে ওয়ালিদ রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি বলেন, আমাদের কাছে বর্ণনা করেন হযরত যহীর ইবনে মুয়াবিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি বলেন, আমাদের কাছে বর্ণনা করেন হযরত হাসান ইবনে হুররু রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি বলেন, আমার কাছে হযরত মাকহুল রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বর্ণনা করেন যে, মহান আল্লাহ পাক তিনি ১৫ই শা’বান রাতে তথা শবে বরাতে দুনিয়াবাসীর উপর নাযিল হন তথা রহমতে খাছ নাযিল করেন। অতঃপর ওই শবে বরাতে সমস্ত লোককেই ক্ষমা করে দেন। তবে দু’ব্যক্তি ছাড়া অর্থাৎ হিংসুক ও কাফির ব্যক্তিদ্বয়কে ক্ষমা করেন না।

অনুরূপভাবে হযরত আবুল হাসান ইবনে ফযল ইবনে কাতত্বান রহমতুল্লাহি আলাইহি…. হযরত কাছীর ইবনে মুররাতুল হাদরামী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সূত্রে বর্ণনা করেন যে, হযরত নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, অর্ধ শা’বানের রাতে তথা শবে বরাতে মহান আল্লাহ পাক তিনি দুনিয়াবাসীর সকল ব্যক্তিকেই ক্ষমা করে দেন। তবে মুশরিক ও হিংসুককে ওই শবে বরাতে ক্ষমা করেন না। (শুয়াবুল ঈমান)

এ প্রসঙ্গে উক্ত কিতাবের ১৮৩ পৃষ্ঠায় আরো বর্ণিত-

(১১৭)

اخبرنا ابو طاهر الفقيه انا حامد بن بلال نا محمد بن اسماعيل الاحمس نا الـمحاربى عن الاحوص بن حكيم عن الـمهاجر بن حبيب عن الـمكحول عن حضرت ابى ثعلبة الخشنى عن النبى صلى الله عليه وسلم قال اذا كانت ليلة النصف من شعبان اطلع الله الى خلقه فيغفر للمؤمن ويـملى للكافرين ويدع اهل الحقد بحقدهم حتى يدعوه.

اخبرنا ابو عبد الله الحافظ نا ابو احمد الحافظ نا ابو جعفر محمد بن عمران النسوى النيسابورى نا ابو الوليد محمد بن احمد بن برد الانطاكى نا محمد بن كثير الـمصيصى نا الاوزعى عن مكحول

عن معاذ بن جبل رضى الله تعالى عنه عن النبى صلى الله عليه وسلم قال يطلع الله فى ليلة النصف من شعبان فيغفر لجميع خلقه الالـمشرك او مشاحن.

অর্থ: হযরত ইমাম বায়হাক্বী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, আমাদের কাছে বর্ণনা করেন হযরত আবু তাহির আল ফক্বীহ রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি বলেন, আমাদের কাছে বর্ণনা করেন হযরত আবু হামিদ ইবনে বিলাল রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি বলেন, আমাদের কাছে বর্ণনা করেন হযরত মুহম্মদ ইবনে ইসমাঈল আল আহমাস রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি বলেন, আমাদের কাছে বর্ণনা করেন হযরত মুহারবী রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি হযরত আহওয়াছ ইবনে হাকীম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে। তিনি হযরত মুহাজির ইবনে হাবীব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে। তিনি হযরত মাকহুল রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে। তিনি হযরত আবু ছালাব আল খাশানী রদ্বিয়াল্লাহু তায়লা আনহু উনার থেকে। তিনি হযরত নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে হাদীছ শরীফখানা বর্ণনা করেন। হযরত নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, যখন অর্ধ শা’বানের রাত তথা শবে বরাত সমাগত হয়; তখন মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার সৃষ্টির প্রতি রহমত নাযিল করেন। অতঃপর ওই শবে বরাতে সমস্ত মু’মিনদেরকে ক্ষমা করেন এবং যারা হিংসুক রয়েছে তাদেরকে সে অবস্থায় ছেড়ে দেন, তাদের হিংসা থেকে তওবা না করা পর্যন্ত ক্ষমা করেন না।

অনুরূপভাবে হযরত আব্দুল্লাহ হাফিয রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি হযরত মুয়ায ইবনে জাবাল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার সূত্রে বর্ণনা করেন। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, মহান আল্লাহ পাক তিনি অর্ধ শা’বান তথা শবে বরাতে বান্দার উপর রহমত নাযিল করেন। অতঃপর সমস্ত সৃষ্টিকে ওই শবে বরাতে ক্ষমা করে দেন। তবে মুশরিক ও হিংসুক ব্যক্তিকে ক্ষমা করেন না। (বায়হাক্বী শরীফ)

উপরোক্ত হাদীছ শরীফ দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, ১৫ই শা’বান তথা অর্ধ শা’বানের রাতে অর্থাৎ শবে বরাতে ইবাদত-বন্দেগী করার ব্যাপারে অসংখ্য হাদীছ শরীফ বর্ণিত আছে এবং হযরত নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি স্বয়ং ওই শবে বরাতে ইবাদত-বন্দেগী করে উম্মতে হাবীবীকে উক্ত রাতে ইবাদত-বন্দেগী করার প্রতি উৎসাহিত করেছেন।

এ প্রসঙ্গে হযরত ইমাম বাইহাক্বী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার বিশ্ববিখ্যাত কিতাব শুয়াবুল ঈমান নামক কিতাবের ৩য় খ-ের ৩৮২ ও ৩৮৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেছেন-

(১১৮)

اخبرنا ابو نصر بن قتادة نا ابو منصور محمد بن احمد بن الازهرى الهروى نا الحسين بن ادريس نا ابو عبيد الله بن اخى ابن وهب نا عمى نا معاوية بن صالح عن العلاء بن الحارث ان ام الـمؤمنين حضرت عائشة الصديقة عليها السلام قالت قام رسول الله صلى الله عليه وسلم من الليل يصلى فاطال السجود حتى ظننت انه قد قبض فلما رايت ذلك قمت حتى حركت ابهامه فتحرك فرجعت فلما رفع (الى) رأسه من السجود وفرغ من صلاته قال يا ام الـمؤمنين حضرت عائشة الصديقة عليها السلام او حميراء عليها السلام اظننت ان النبى صلى الله عليه وسلم قد خاس بك، قلت لا والله يا رسول الله صلى الله عليه وسلم ولكننى ظننت انك قبضت لطول سجودك. فقال اتدرين اى ليلة هذه؟ قلت الله ورسوله اعلم قال: هذه ليلة النصف من شعبان ان الله عز وجل يطلع على عباده فى ليلة النصف من شعبان فيغفر للمستغفرين ويرحم الـمسترحمين ويؤخر اهل الحقد كما هم.

অর্থ: হযরত ইমাম বায়হাক্বী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, আমাদের কাছে হাদীছ শরীফখানা বর্ণনা করেন হযরত আবু নছর ইবনে কাতাদাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি বলেন, আমাদের কাছে বর্ণনা করেন হযরত আবু মানছুর মুহম্মদ ইবনে আহমদ ইবনে আল আযহারীল হারবী রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি বলেন, আমাদের কাছে বর্ণনা করেন হাছান ইবনে ইদরীস রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি বলেন, আমাদের কাছে বর্ণনা করেন হযরত আবু উবাইদুল্লাহ ইবনে আখী ইবনে ওয়াহাব রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি বলেন, আমাদের কাছে বর্ণনা করেন আমার চাচা। তিনি বলেন, আমাদের কাছে বর্ণনা করেন হযরত মুয়াবিয়া ইবনে ছলিহ রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি হযরত আলা ইবনে হারিছ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে। তিনি উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার থেকে। উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনি বলেন, এক রাত্রে হযরত নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নামায আদায় করতেছিলেন। অতঃপর নামাযে দীর্ঘক্ষণ ধরে সিজদায় ছিলেন। এমনকি আমি মনে করেছিলাম যে, হয়তো হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিছাল মুবারক হয়ে গেছে! অতঃপর আমি এ অবস্থা দেখে দাঁড়িয়ে গেলাম। এমনকি হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পা মুবারক-এর বৃদ্ধাঙ্গুলে নাড়া দিলাম। তখন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সাড়া দিলেন। অতঃপর আমি আমার স্বস্থানে চলে আসার মনস্থ করলাম। পরে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সিজদা থেকে স্বীয় মাথা মুবারক উঠালেন এবং যথারীতি নামায শেষ করে আমাকে লক্ষ্য করে বললেন, হে উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম! রাবী বলেন, অথবা এভাবে ডেকেছিলেন, হে হুমায়রা আলাইহাস সালাম! আপনি কি মনে করেন যে, হযরত নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আপনার সঙ্গে অবিশ্বাস্য কিছু করেছেন? উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনি বলেন, অবশ্যই না। আল্লাহ পাক উনার কসম! ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি দীর্ঘক্ষণ সিজদায় থাকার কারণে আমি মনে করেছিলাম হয়তোবা আপনি বিছাল শরীফ লাভ করেছেন।

অতঃপর হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, হে উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম! আপনি কি জানেন ইহা কোন রাত্রি? উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনি বলেন, আমি জবাবে বললাম: আল্লাহ পাক এবং উনার রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারাই অধিক ভালো জানেন। অতঃপর হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, ইহাই হচ্ছে ১৫ই শা’বান তথা অর্ধ শা’বানের রাত্রি অর্থাৎ বরাতের রাত্রি। নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি এই অর্ধ শা’বানের রাতে তথা শবে বরাতে বান্দাদের উপর রহমত বর্ষণের জন্য অবতরণ করেন তথা রহমতে খাছ নাযিল করেন এবং সমস্ত ক্ষমা প্রার্থনাকারীদেরকে ক্ষমা করে দেন এবং রহমত প্রত্যাশীদেরকে রহমত করেন। এবং যারা হিংসুক রয়েছে তাদেরকে পূর্বের অবস্থায় রেখে দেন।

এ প্রসঙ্গে উক্ত কিতাবের ৩৮৩ পৃষ্ঠায় আরো উল্লেখ আছে-

(১১৯)

اخبرنا ابو الحسن بن بشران انا ابو جعفر الرزاز نا محمد بن احمد الرياحى نا جامع بن صبيح الرملى نا مرحوم بن عبد العزيز عن داود بن عبد الرحمن عن هشام بن حسان عن الحسين عن عثمان ابن ابى العاص عن النبى صلى الله عليه وسلم قال اذا كان ليلة النصف من شعبان فاذا مناد هل من مستغفر فاغفر له هل من سائل فأعطيه فلا يسأل احد الا اعطى الا زانية بفرجها او مشرك.

অর্থ: হযরত ইমাম বায়হাক্বী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, আমাদের কাছে বর্ণনা করেন হযরত আবুল হাসান ইবনে বুশরান রহমতুল্লাহি আলাইহি ……। তিনি হযরত ওসমান ইবনে আবুল আছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার সূত্রে। তিনি হযরত নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে বর্ণনা করেন। হযরত নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, যখন অর্ধ শা’বানের রাত তথা বরাতের রাত সমাগত হয়, তখন আহ্বানকারী (মহান আল্লাহ পাক) আহ্বান করতে থাকেন কে আছো ক্ষমা প্রার্থী? আমি তাকে ক্ষমা করে দিবো। কে আছো অভাবী? আমার কাছে চাও আমি তার চাহিদা পূরণ করে দিবো। অতঃপর এমন কোনো প্রার্থী নেই যে, তার প্রার্থনা কবুল করা হয় না। অর্থাৎ সকলের প্রার্থনা কবুল করা হয়। তবে ব্যভিচারী ও মুশরিকদের দোয়া কবুল করা হয় না এবং ক্ষমা করাও হয়না।

এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফ-এ আরো উল্লেখ আছে-

(১২০)

اتانى جبريل عليه عليه السلام فقال هذه الليلة ليلة النصف من شعبان والله فيها عتقاء من النار بعدد شعور غنم كلب الا ينظر الله فيها الى مشرك ولا الى مشاحن ولا الى قاطع رحم ولا الى مسبل ولا الى عاق لوالديه ولا الى مدمن خمر قال: ثم وضع عنه ثوبيه فقال لى يا ام الـمؤمنين حضرت عائشة الصديقة عليها السلام تأذنين فى قيام هذه الليلة.

অর্থ: হযরত নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, হযরত জিবরাঈল আলাইহিস সালাম তিনি আমার নিকট আসলেন অতঃপর বললেন: এই রাত্রিই হচ্ছে অর্ধ শা’বানের রাত তথা শবে বরাত। এই শবে বরাতে মহান আল্লাহ পাক তিনি কালব গোত্রের বকরীর সমপরিমাণ বান্দাদেরকে জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তি দিয়ে থাকেন। তবে এই শবে বরাতে মহান আল্লাহ পাক তিনি ওই সমস্ত লোকদেরকে ক্ষমা করেন না- যারা মুশরিক, হিংসুক, আত্মীয়তা ছিন্নকারী, অহঙ্কারী, পিতা-মাতাকে কষ্ট দানকারী, মদ্যপায়ী। অতঃপর হযরত রসূল পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দু’টুকরা কাপড় মুবারক রাখলেন এবং উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনাকে লক্ষ্য করে বললেন: হে উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম! আপনি আমাকে এই বরাতের রাত্রি জাগরণের ব্যাপারে অনুমতি দিন। (শুয়াবুল ঈমান ৩য় খণ্ড)

উপরোক্ত হাদীছ শরীফ-এর আলোকেই প্রমাণিত হলো যে, অর্ধ শা’বানের রাতে তথা শবে বরাতে ইবাদত করা এবং সার্বিক বিষয়ের মঙ্গল কামনা করা এবং যাবতীয় মন্দ কাজ থেকে বিরত থাকার ব্যাপারে মহান আল্লাহ পাক উনার দরবারে তাওফীক কামনা করা একান্ত জরুরী এবং সুন্নত। যা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার উম্মতদেরকে শিক্ষা দানের জন্য শবে বরাতে সারা রাত জাগ্রত থেকে শবে বরাতের রাত্রি জাগরণের উৎসাহ প্রদান করেছেন। যেহেতু ওই রাতেই আগামী এক বৎসরের বান্দাদের যাবতীয় বিষয়ের ভাগ্য তালিকা তৈরি হয়ে থাকে। যা পবিত্র কুরআন শরীফ-এর সূরা আদ দুখান-এর ৩ ও ৪ নম্বর আয়াত শরীফ-এ মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন-

(১২১)

انا انزلناه فى ليلة مباركة

(নিশ্চয়ই আমি উহা বরকতময় রজনীতে অবতীর্ণ করেছি) অতঃপর আল্লাহ পাক তিনি পরবর্তী আয়াত শরীফ-এ বলেন-

فيها يفرق كل امر حكيم

ওই বরকতের রাত্রিতে প্রত্যেক হিকমতপূর্ণ বিষয়ের ফায়ছালা করা হয়ে থাকে।

প্রথমত ه (হু) যমির বা সর্বনাম দ্বারা পবিত্র কুরআন শরীফকেই বুঝানো হয়েছে। যেহেতু অসংখ্য তাফসীরে উল্লেখ আছে, যেমন তাফসীরে দুররে মানছুর, তাফসীরে তাবারী ইত্যাদি তাফসীরে আছে মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ যখন লওহে মাহফুযে লিপিবদ্ধ করেন তখন সেই সময়টি ছিলো লাইলাতুল মুবারক-এর রাত্রি। আর লাইলাতুম মুবারাকা দ্বারা সকল তাফসীরে সকল মুফাসসীরীনগণ উনারা উল্লেখ করেছেন যে, অর্ধ শা’বানের রাত্রি তথা শবে বরাতের ফায়ছালাকৃত বিষয়সমূহ জারি করা হয় লাইলাতুল ক্বদরে তথা শবে ক্বদরে। এবং এটাও উল্লেখ আছে যে, শবে ক্বদরে যে পবিত্র কুরআন শরীফ নাযিলের কথা বলা হয়েছে আর তা হচ্ছে লওহে মাহফুয থেকে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উপর প্রথম নাযিল করা হয় শবে ক্বদরে। কাজেই পবিত্র কুরআন শরীফ-এ শবে ক্বদরে এবং শবে বরাতে নাযিল হওয়ার ব্যাপারে কোনো মতানৈক্যই মূলত নেই।

অতএব প্রমাণিত হয় যে, শবে বরাতে বান্দাদের যাবতীয় বিষয়ের ফায়ছালা করা হয়। আর শবে ক্বদরে উক্ত ভাগ্যলিপি তথা ফায়ছালাকৃত বিষয়সমূহ জারি বা চালু করা হয়। এ প্রসঙ্গে অসংখ্য হাদীছ শরীফও দলীল হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। মূলত যাদের আক্বীদা খারাপ যাদের অন্তরে গালিজ রয়েছে, শয়তানী কুমন্ত্রণা রয়েছে, যারা বাতিলপন্থী বদ মাযহাবের বদ আক্বীদার অধিকারী, আল্লাহ পাক এবং উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের দুশমন শুধুমাত্র তারাই কুরআন শরীফ এবং হাদীছ শরীফকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য, অগ্রাহ্য, অমান্য এবং দুর্বল মনে করে থাকে। নাঊযুবিল্লাহ! তারা যেভাবে গোমরাহ হয়ে আল্লাহ পাক উনার ইবাদত থেকে এবং হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আদর্শ থেকে গাফিল ও বঞ্চিত হয়েছে, ঠিক সেভাবেই যেনো অন্যান্য মুসলমানগণও গাফিল ও বঞ্চিত থাকে। এজন্যই তারা শবে বরাতের মহান ফযীলত ও বুযুর্গী থেকে মুসলমানদেরকে দূরে রাখার জন্যই ওই শবে বরাতের ইবাদত-বন্দেগী এবং রাত্রি জাগরণের ব্যাপারে বাধা প্রদান করে থাকে তথা কুমন্ত্রণা দিয়ে থাকে। যা ইবলিসের কাজ। হতে পারে সামান্যতম নেক আমল মানুষের সারাজীবনের নাজাতের মূল ওসীলা। সামান্যতম নেক আমল হলেও আদনা মুসলমানও তা থেকে নিষেধ করতে পারে না। বরং সামান্যতম ঈমান থাকলেও সে সামান্যতম নেক আমলের প্রতি মানুষদের তথা মু’মিনদেরকে উৎসাহিত করবে। মূলত যারা শবে বরাত বিরোধী মূলত তারা হাদীছ শরীফ-এর বিরোধী তথা আল্লাহ পাক এবং উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের দুশমন। তাদের কাজই হচ্ছে বিভিন্ন ছুতা-নাতা, জোড়াতালি, বিভিন্ন খোড়া যুক্তি দাঁড় করিয়ে মুসলমানদেরকে নেক আমল থেকে সরিয়ে রাখার অপচেষ্টা চালানো। এরাই ইবলিস এবং ইহুদী-নাছারাদের এজেন্ট তথা উত্তরসূরি। এরাই ইসলামের লেবেল পরিয়ে নিজেদেরকে মুফতি, মুহাদ্দিস, ফক্বীহ শায়খুল হাদীছ, শায়খুত তাফসীর হিসেবে পরিচয় দিয়ে থাকে। অথচ অসংখ্য হারাম ও কুফরী কাজে নিজেরা সারাটি জীবন অতিবাহিত করছে। যেমন বেপর্দা বেগানা মহিলাদের সঙ্গে উঠা-বসা, মিটিং-মিছিল করা, সিনেমা তথা টিভিতে প্রোগ্রাম করা, ইসলামের নামে গণতন্ত্র করে নিজেদের বিভিন্ন কায়দায় ফায়দা হাছিল করা, মৌলবাদী দাবি করা, ব্লাসফেমী আইন চাওয়া, হরতাল করা, কুশপুত্তলিকা দাহ করা ইত্যাদি ইহুদীদের ধর্ম ও বিশ্বাসকে চালু করার কাজেই সর্বদা বাকপটু এরাই হাদীছ শরীফ-এর ভাষায় উলামায়ে ‘ছূ’ তথা দুনিয়াদার ও ধর্ম ব্যবসায়ী নামধারী মাওলানা। এরাই হচ্ছে ওহাবী খারিজী, মওদুদী, রাফিজী, কাদিয়ানী বাতিল ফিরক্বার অন্তর্ভুক্ত। যাদের মাথার তালু থেকে পায়ের তলা পর্যন্ত হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কোনো সুন্নত তথা কোনো আদর্শই খুঁজে পাওয়া যায় না। এদের কোনো কথাই শুনা যাবে না। এদের থেকে নিজেদেরকে দূরে রাখতে হবে এবং দূরে থাকতে হবে। তাছাড়া ঈমানদার হওয়া কস্মিনকালেও কল্পনা করা যায়না।

অথচ অসংখ্য অগণিত হাদীছ শরীফ-এ রয়েছে ১৫ই শা’বানের রাতে তথা শবে বরাতে রাত্রি জাগরণ করে ইবাদত-বন্দেগী করা সুন্নত তো অবশ্যই নাজাত ও ফযীলতের কারণ এবং এই শবে বরাতে বান্দাদের ভালো মন্দ আগামী এক বৎসরের যাবতীয় ভাগ্য নির্ধারণ হয়ে থাকে। এজন্য আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি রাত্রে ইবাদত-বন্দেগী এবং দিনে রোযা পালন করার নির্দেশ দিয়েছেন। এবং যাবতীয় খায়ের বরকতযুক্ত বিষয়ের জন্য প্রার্থনা করার মুবারক নির্দেশ দিয়েছেন এবং বুরায়ী বা খারাবী থেকে পানাহ চাওয়ার ব্যাপারে আদেশ করেছেন।

 

(অসমাপ্ত)

পরবর্তী সংখ্যার অপেক্ষায় থাকুন

কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে প্রাণীর মূর্তি তৈরি করা ও ছবি আঁকা, তোলা, তোলানো, রাখা, রাখানো, দেখা, দেখানো হারাম নাজায়িয হওয়ার অকাট্য প্রমাণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-২৬

জুমুয়া ও ঈদাইনের খুৎবা আরবী ভাষায় দেয়া ওয়াজিব। আরবী ব্যতীত অন্য কোন ভাষায় খুৎবা দেয়া মাকরূহ তাহরীমী ও বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-২

কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে প্রাণীর মূর্তি তৈরি করা ও ছবি আঁকা, তোলা, তোলানো, রাখা, রাখানো, দেখা, দেখানো হারাম নাজায়িয হওয়ার অকাট্য প্রমাণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-২৭

কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে প্রাণীর মূর্তি তৈরি করা ও ছবি আঁকা, তোলা, তোলানো, রাখা, রাখানো, দেখা, দেখানো হারাম-নাজায়িয হওয়ার অকাট্য প্রমাণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-২৮

কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে লাইলাতুন নিছফি মিন শা’বান বা শবে বরাত-এর আহকাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-১