কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে “কুলাঙ্গার, পাপিষ্ঠ ইয়াযীদ লা’নাতুল্লাহি আলাইহি সম্পর্কে শরীয়তের সঠিক ফায়ছালা ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া

সংখ্যা: ২০৩তম সংখ্যা | বিভাগ:

সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন উনার জন্যে এবং অসংখ্য দুরূদ ও সালাম আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি। আল্লাহ পাক উনার অশেষ রহমতে “ফতওয়া ও গবেষণা বিভাগ মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ”-এর তরফ থেকে বহুল প্রচারিত, হক্বের অতন্দ্র প্রহরী, বাতিলের আতঙ্ক ও আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদায় বিশ্বাসী এবং হানাফী মাযহাব-এর অনুসরণে প্রকাশিত একমাত্র দলীলভিত্তিক যামানার তাজদীদী মুখপত্র “মাসিক আল বাইয়্যিনাত” পত্রিকায় যথাক্রমে- ১. টুপির ফতওয়া (২য় সংখ্যা) ২. অঙ্গুলী চুম্বনের বিধান (৩য় সংখ্যা) ৩. নিয়ত করে মাজার শরীফ যিয়ারত করা (৪র্থ সংখ্যা) ৪. ছবি ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় হারাম হওয়ার ফতওয়া (৫ম-৭ম সংখ্যা) ৫. জুমুয়ার নামায ফরযে আইন ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ফতওয়া (৮ম-১০ম সংখ্যা) ৬. মহিলাদের মসজিদে গিয়ে জামায়াতে নামায পড়া মাকরূহ তাহরীমী সম্পর্কে ফতওয়া (১১তম সংখ্যা) ৭. ক্বদমবুছী ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১২তম সংখ্যা) ৮. তাহাজ্জুদ নামায জামায়াতে পড়া মাকরূহ তাহরীমী ও বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ এবং তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৩তম সংখ্যা) ৯. ফরয নামাযের পর মুনাজাত ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৪-২০তম সংখ্যা) ১০. ইনজেকশন নেয়া রোযা ভঙ্গের কারণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২১-২২তম সংখ্যা) ১১. তারাবীহ-এর নামাযে বা অন্যান্য সময় কুরআন শরীফ খতম করে উজরত বা পারিশ্রমিক গ্রহণ করা জায়িয ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২৩-২৪তম সংখ্যা) ১২. তারাবীহ নামায বিশ রাকায়াত ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২৫-২৯তম সংখ্যা) ১৩. দাড়ী ও গোঁফের শরয়ী আহকাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৩০-৩৪তম সংখ্যা) ১৪. প্রচলিত তাবলীগ জামায়াত ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৩৫-৪৬তম সংখ্যা) ১৫. আযান ও ছানী আযান মসজিদের ভিতরে দেয়ার আহকাম এবং তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৪৭-৫০তম সংখ্যা) ১৬. দোয়াল্লّীন-যোয়াল্লীন-এর শরয়ী ফায়ছালা এবং তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে  ফতওয়া (৫১-৫২তম সংখ্যা) ১৭. খাছ সুন্নতী টুপি ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে  ফতওয়া (৫৩-৫৯তম সংখ্যা) ১৮. নূরে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও তাঁর প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে  ফতওয়া (৬০-৮২তম সংখ্যা) ১৯. ইমামাহ বা পাগড়ী মুবারক-এর আহকাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কিত ফতওয়া (৮৩-৯৬তম সংখ্যা) ২০. শরীয়তের দৃষ্টিতে আখিরী যোহর বা ইহতিয়াতুয যোহরের আহকাম এবং তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৯৭-১০০তম সংখ্যা) ২১. জানাযা নামাযের পর হাত তুলে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করার শরয়ী ফায়ছালা ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১০১-১১১তম সংখ্যা) এবং ২২. হিজাব বা পর্দা ফরযে আইন হওয়ার প্রমাণ ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১১২-১৩১তম সংখ্যা) ২৩. খাছ সুন্নতী ক্বমীছ বা কোর্তা এবং তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৪০তম সংখ্যা) ২৪. হানাফী মাযহাব মতে ফজর নামাযে কুনূত বা কুনূতে নাযিলা পাঠ করা নাজায়িয ও নামায ফাসিদ হওয়ার কারণ এবং তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৩২-১৫২তম সংখ্যা) ২৫. ইসলামের দৃষ্টিতে বিশ্বকাপ ফুটবল বা খেলাধুলার শরয়ী আহকাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ফতওয়া (১৫৫তম সংখ্যা) ২৬. হানাফী মাযহাব মতে পুরুষের জন্য লাল রঙয়ের পোশাক তথা রুমাল, পাগড়ী, কোর্তা, লুঙ্গি, চাদর ইত্যাদি পরিধান বা ব্যবহার করা হারাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৫৩-১৬০তম সংখ্যা)   ২৭.  ইসলামের  নামে গণতন্ত্র ও নির্বাচন করা, পদপ্রার্থী হওয়া, ভোট চাওয়া ও দেয়া হারাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৬১-১৭৫তম সংখ্যা), ২৮. কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে প্রাণীর মূর্তি তৈরি করা ও ছবি আঁকা, তোলা, তোলানো, রাখা, রাখানো, দেখা, দেখানো নাজায়িয হারাম হওয়ার অকাট্য প্রমাণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৬৮-চলমান), ২৯. জুমুয়া ও ঈদাইনের খুতবা আরবী ভাষায় দেয়া ওয়াজিব। আরবী ব্যতীত অন্য কোনো ভাষায় খুতবা দেয়া মাকরূহ তাহরীমী ও বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৯২-১৯৩তম সংখ্যা), ৩০. কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে লাইলাতুন নিছফি মিন শা’বান বা শবে বরাতের আহকাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৯৫তম সংখ্যা থেকে চলমান) পেশ করার পাশাপাশি-

৩১তম ফতওয়া হিসেবে

কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে “কুলাঙ্গার, পাপিষ্ঠ ইয়াযীদ লা’নাতুল্লাহি আলাইহি সম্পর্কে শরীয়তের সঠিক ফায়ছালা ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া” পেশ করতে পারায় মহান আল্লাহ পাক উনার দরবার শরীফ-এ শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি।

 

কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে “কুলাঙ্গার, পাপিষ্ঠ ইয়াযীদ লা’নাতুল্লাহি আলাইহি সম্পর্কে শরীয়তের সঠিক ফায়ছালা ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া দেয়ার কারণ

 

সমস্ত প্রশংসা সেই মহান আল্লাহ পাক রব্বুল আ’লামীন উনার দরবারে, যিনি অসংখ্য মাখলূকাতের মধ্যে একমাত্র মানব জাতিকে তথা মানুষকে সর্বশ্রেষ্ঠ মর্যাদা দান করেছেন অর্থাৎ “আশরাফুল মাখলূকাত” করেছেন। এ প্রসঙ্গে স্বয়ং আল্লাহ পাক রব্বুল আ’লামীন তিনি উনার পবিত্র কালামে পাকে ইরশাদ করেন-

لقد  كرمنا بنى ادم

অর্থ: “আমি বনী আদম তথা মানব জাতিকে সম্মানিত করেছি।” (সূরা বনী ইসরাঈল : আয়াত শরীফ ৭০)

কিন্তু কথা হলো- শুধু মানুষ বা “আশরাফুল মাখলূকাত” হিসেবে সৃষ্টি হওয়াই কি কামিয়াবী বা সফলতা? কখনো নয়। কারণ, যদি তাই হতো তবে আবূ জাহিল, আবূ লাহাব জাহান্নামী হতোনা। কেননা তারাও মানুষ ছিলো।

মূলত মানবজাতির “আশরাফিয়াত” তখনই বজায় থাকবে, যখন সে আল্লাহ পাক উনার আল্লাহ পাক উনার বিধানের প্রতি পূর্ণ বিশ্বাস ও আনুগত্যতা প্রকাশ করবে। আর যদি এর বিপরীত হয়, তবে সে হবে মাখলূকাতের মধ্যে সবচেয়ে নিকৃষ্ট। তাই এ প্রসঙ্গে পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে-

لقد خلقنا الانسان فى احسن تقويم. ثم رددنه اسفل سافلين. الا الذين امنوا وعملوا الصلحات

অর্থ: “নিশ্চয় আমি মানব জাতিকে সর্বোত্তম আকৃতিতে সৃষ্টি করেছি। অতঃপর তাদেরকে জাহান্নামের অতল তলে পৌঁছে দিবো, একমাত্র তাদেরকে ব্যতীত, যারা ঈমান আনবে এবং নেক আমল করবে।” (সূরা ত্বীন)

উপরোক্ত আয়াত শরীফ দ্বারা এটাই প্রমাণিত হলো যে, মানবজাতির মধ্যে যারা আল্লাহ পাক ও উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের এবং দ্বীন ইসলামের ব্যাপারে আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদা মুতাবিক আক্বীদা পোষণ করবে এবং কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস মুতাবিক আমল করবে, একমাত্র তারাই আশরাফিয়াত বা শ্রেষ্ঠত্ব তথা পূর্ণ সফলতা লাভ করতে পারবে।

স্মর্তব্য যে, সুন্নতের পথিকৃত, হক্বের অতন্দ্র প্রহরী, দ্বীন ইসলামের নির্ভীক সৈনিক, সারা জাহান থেকে কুফরী, শিরকী ও বিদয়াতের মূলোৎপাটনকারী, বাতিলের আতঙ্ক এবং আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদায় বিশ্বাসী একমাত্র দলীলভিত্তিক তাজদীদী মুখপত্র- “মাসিক আল বাইয়্যিনাত” পত্রিকায় এ যাবৎ যত লেখা বা ফতওয়াই প্রকাশ বা পত্রস্থ হয়েছে এবং ইনশাআল্লাহ হবে তার প্রতিটিরই উদ্দেশ্য বা মাকছূদ এক ও অভিন্ন। অর্থাৎ “মাসিক আল বাইয়্যিনাতে” এমন সব লেখাই পত্রস্থ হয়, যা মানুষের আক্বীদা ও আমলসমূহ পরিশুদ্ধ ও হিফাযতকরণে বিশেষ সহায়ক।

তদ্রƒপ ‘মাসিক আল বাইয়্যিনাতে’ “কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে কুলাঙ্গার, পাপিষ্ঠ ইয়াযীদ লা’নাতুল্লাহি আলাইহি সম্পর্কে শরীয়তের সঠিক ফায়ছালা ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া” দেয়ার মাকছুদ এবং উদ্দেশ্যও ঠিক তাই। অর্থাৎ ঈমান-আমল হিফাযতে সহায়তা করাই এ ফতওয়া দেয়ার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য।

উল্লেখ্য যে, মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কালামে পাকে ‘সূরা মায়িদা’-এর ৮২ নম্বর আয়াত শরীফ-এ ইরশাদ করেন-

لتجدن اشد الناس عداوة للذين امنوا اليهود والذين اشركوا

অর্থ: “তোমরা তোমাদের সবচেয়ে বড় শত্রু হিসেবে পাবে ইহুদীদেরকে। অতঃপর যারা মুশরিক তাদেরকে।”

মূলত এই ইহুদীরাই মুনাফিক সেজে আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে কষ্ট দিয়েছিলো, উনাকে শহীদ করার চক্রান্ত করেছিলো। এই ইহুদীরাই মুনাফিকী করে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের পরস্পরের মাঝে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করার অপপ্রয়াস চালিয়েছিলো। আর মূলত এই ইহুদীরাই মুসলমানের ঈমান-আমল বিনষ্ট করে দ্বীন ইসলামে ফিৎনা সৃষ্টি করার লক্ষ্যে বিভিন্ন বাতিল ফিরক্বার উদ্ভব ঘটিয়েছে। অর্থাৎ শিয়া, খারিজী, মু’তাযিলা, জাবারিয়া, ক্বদরিয়া, বাহাই, কাদিয়ানী, ওহাবী ইত্যাদি বাতিল ফিরক্বাগুলো ইহুদীদেরই সৃষ্টি এবং এদেরই এজেন্ট।

বর্তমানে ইহুদীদের এজেন্ট হিসেবে মুসলমানদের ঈমান আমলের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করছে যারা, তারা হলো- ‘উলামায়ে ছূ তথা সর্বনিকৃষ্ট দুনিয়াদার ধর্ম ব্যবসায়ী মাওলানারা।’ ইহুদীদের এজেন্ট উলামায়ে ছূ’রা হারাম টিভি চ্যানেল, পত্র-পত্রিকা, কিতাবাদি ও বক্তব্য বা বিবৃতির মাধ্যমে একের পর এক হারামকে হালাল, হালালকে হারাম, জায়িযকে নাজায়িয, নাজায়িযকে জায়িয বলে প্রচার করছে। যেমন, তারা প্রচার করছে- ফরয নামাযের পর মুনাজাত করা বিদয়াত ও হারাম। নিয়ত করে রওযা শরীফ ও মাযার শরীফ যিয়ারত করা শিরক, কদমবুছী করা নাজায়িয ও শিরক, মাযহাব মানার কোনো প্রয়োজন নেই, পীর-মুরীদী শরীয়ত বিরোধী প্রথা, মীলাদ শরীফ, ক্বিয়াম শরীফ করা শিরক-বিদয়াত, শবে বরাত পালন করা বিদয়াত, তারাবীহ নামায জরুরী কোনো নামায নয়, আট রাকায়াত তারাবীহ পড়লেই চলে ইত্যাদি ইত্যাদি। নাঊযুবিল্লাহ! অথচ উল্লিখিত প্রতিটি বিষয়ই কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফ তথা শরীয়তসম্মত এবং তন্মধ্যে কোনটা সুন্নত আবার কোনটা  ফরয।

পক্ষান্তরে উলামায়ে ছূ তথা দুনিয়াদার মাওলানারা টেলিভিশন, সিনেমা, নাটক, নোবেল, বেপর্দা হওয়া, নারী নেতৃত্ব মানা, ভোট দেয়া, রোযা অবস্থায় ইনজেকশন নেয়া, মহিলাদের জামায়াতের জন্যে মসজিদে যাওয়া, মহিলাদের বাইরে বের হওয়ার সময় হাত ও মুখ খোলা রাখা, হরতাল করা, লংমার্চ করা, গণতন্ত্র করা, ব্লাসফেমী আইন চাওয়া, মৌলবাদী দাবি করা, কুশপুত্তলিকা দাহ করা, টিভি চ্যানেলে প্রোগ্রাম বা অনুষ্ঠান করা ইত্যাদি নাজায়িয কাজগুলোকে জায়িয বলে প্রচার করছে। নাঊযুবিল্লাহ! অর্থাৎ তাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে, মুসলমানদেরকে ইসলাম থেকে সরিয়ে, ইবাদত থেকে সরিয়ে অনৈসলামিক ও হারাম কাজে মশগুল করে দিয়ে বেঈমান করে দেয়া।

মূলত যুগে যুগে দুনিয়া লোভী উলামায়ে ছূ’রা দুনিয়াবী ফায়দা লুটার উদ্দেশ্যে হারামকে হালাল ও হালালকে হারাম ফতওয়া দিয়ে আসছে। যেমন, ক্বাইয়্যূমে আউয়াল হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার যামানায় উলামায়ে ছূ আবূল ফযল, ফৈজী ও মোল্লা মুবারক নাগোরী গংরা বাদশাহ আকবরকে সন্তুষ্ট করে দুনিয়াবী কিছু ফায়দা লাভের উদ্দেশ্যে কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফ-এর মনগড়া অপব্যাখ্যা করে বহু হারামকে হালাল ও হালালকে হারাম ফতওয়া দিয়েছিলো।

বর্তমান যামানার উলামায়ে ছূ তথাকথিত পীর, আমীর, খতীব, শাইখুল হাদীছ, মুফতী, আল্লামা, মুফাসসিরে কুরআন, মাওলানা ও তার অনুসারী গংরা যেন আবূল ফযল গংদেরই পূর্ণ মিছদাক তথা নমুনা।

দুনিয়াবী ফায়দা লাভের উদ্দেশ্যে এবং খানিকটা পদ লাভের প্রত্যাশায় তারা নাজায়িয ও হারাম কাজগুলো নির্দ্বিধায় করে যাচ্ছে। সাথে সাথে নাজায়িয ও হারাম কাজগুলোকে হালাল বলে ফতওয়া দিচ্ছে। বস্তুত এরাই হচ্ছে হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত দাজ্জালের চেলা। যেমন, হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে-

عن ابى هريرة رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم فى اخر الزمان دجالون كذابون يأتونكم من الاحاديث بما لم تسمعو انتم ولا اباؤكم واياكم واياهم لا يضلونكم ولا يفتنونكم.

অর্থ: “হযরত আবূ হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, আখিরী যামানায় কিছু সংখ্যক মিথ্যাবাদী দাজ্জাল বের হবে, তারা তোমাদের নিকট এমন সব (মিথ্যা-মনগড়া) কথা উপস্থাপন করবে, যা তোমরা কখনো শুননি এবং তোমাদের বাপ-দাদারাও শুনেনি। সাবধান! তোমরা তাদের থেকে দূরে থাকবে এবং তাদেরকেও তোমাদের থেকে দূরে রাখবে। তবে তারা তোমাদেরকে গোমরাহ্ করতে পারবে না এবং ফিৎনায় ফেলতে পারবেনা।” (মুসলিম শরীফ, মিশকাত শরীফ)

স্মরণীয় যে, ইহুদীদের এজেন্ট, দাজ্জালে কাযযাব তথা উলামায়ে ছূ’রা উল্লিখিত বিষয়গুলোর ন্যায় “পাপিষ্ঠ ইয়াযীদ লা’নাতুল্লাহি আলাইহিকে নিয়েও সমাজে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। যেমন উলামায়ে ছূ মাসিক মদীনার সম্পাদক ‘মাহিউদ্দীন’ তার পত্রিকার এপ্রিল ২০১০ ঈসায়ী সংখ্যায় এক প্রশ্নের জবাবে লিখেছে “ইয়াযীদ তাবিয়ী ছিলো।” কারবালার মর্মান্তিক ঘটনার ব্যাপারে তার প্রতি মন্দারূপ কিংবা কিছু বলা ঠিক হবে না। নাঊযুবিল্লাহি মিন যালিক!

অথচ তার উপরোক্ত বক্তব্য সম্পূর্ণ মিথ্যা, চরম বিভ্রান্তিকর ও কুফরীমূলক। তার এ বক্তব্যের কারণে সে নিজে যেরূপ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তদ্রƒপ তার উক্ত কুফরীমূলক বক্তব্যের কারণে সাধারণ মুসলমানগণ ই’তিক্বাদী বা আক্বীদাগত দিক থেকে বিরাট ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে এবং হবে।

কারণ মাহিউদ্দীন তার পত্রিকায় ইয়াযীদ লা’নাতুল্লাহি আলাইহি সম্পর্কে যে বক্তব্য প্রদান করেছে তা কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস তথা মুজতাহিদ ইমাম উনাদের মতের বিপরীত হওয়ার কারণে কাট্টা কুফরীর অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। কেননা শরীয়তের আম ফতওয়া মতে ইয়াযীদ লা’নাতুল্লাহি আলাইহি চরম ফাসিকের অন্তর্ভুক্ত। আর খাছ ফতওয়া মতে সে কাট্টা কাফির ও চির জাহান্নামী ও মালঊন।

সুতরাং কাফির, মালউন ও চির জাহান্নামী ব্যক্তিকে কোনো মুসলমান সমর্থন করতে পারে না। তার প্রশংসা বা ছানা-ছিফত করতে পারে না এবং তাকে উত্তম বা ভালো খিতাবেও অভিহিত করতে পারে না। বরং কাফিরের প্রশংসা শুধুমাত্র যারা কাফির কেবল তারাই করে থাকে।

উল্লেখ্য, ঈমান আর কুফর বিপরীতধর্মী দুটি বিষয়। ছাহাবী, তাবিয়ী, মুজতাহিদ, মুজাদ্দিদ, ওলীআল্লাহ, মু’মিন, মুত্তাক্বী ইত্যাদি বিষয়গুলো ঈমানের সাথে সম্পর্কযুক্ত।

আর কাফির, মুশরিক, মুনাফিক, যালিম, ফাসিক, মালঊন, দাইয়ূছ, মুজরিম, মরদুদ, মাগদূব, শয়তান, গোমরাহ ইত্যাদি বিষয়গুলো কুফরের সাথে সম্পর্কযুক্ত।

শরীয়তের ফায়ছালা বা বিধান হলো: যিনি ছাহাবী উনাকে ছাহাবী বলতে হবে, একইভাবে তাবিয়ী, মুজতাহিদ, মুজাদ্দিদ, ওলীআল্লাহ, মু’মিন, ম্ত্তুাক্বী যিনি যে নিসবতের অধিকারী উনাকে সেই নিসবতে অভিহিত করতে হবে।

অপরপক্ষে যে কাফির তাকে কাফির বলাই শরীয়তের হুকুম। অনুরূপভাবে যে মুশরিক, মুনাফিক, যালিম, ফাসিক, মালউন, দাইয়ূছ, মুজরিম, মাগদূব, শয়তান, পথভ্রষ্ট তাকে সেই নিসবতে অভিহিত করাটাই শরীয়তের হুকুম।

উল্লেখ্য, কোনো ব্যক্তি ছাহাবী হওয়ার জন্য যেরূপ নবী ও রসূল উনাকে দেখা শর্ত সাথে সাথে ঈমানদার ও নেককার হওয়াও শর্ত, আরো শর্ত হচ্ছে ঈমানের সাথে ইনতিকাল। তদ্রƒপ কোনো ব্যক্তি তাবিয়ী হওয়ার জন্য কোনো ছাহাবী উনাকে দেখা যেমন শর্ত সাথে সাথে ঈমানদার ও নেককার হওয়াও শর্ত, আরো শর্ত হচ্ছে ঈমানের সাথে ইনতিকাল।

কিন্তু ইয়াযীদ লা’নাতুল্লাহি আলাইহি সে হলো কাবিল ও কিনানের মতো কাট্টা কাফির ও চির জাহান্নামী।

কাবিল ও কেনান যেরূপ নবী ও রসূল আলাইহিমুস সালাম- উনাদের যিয়ারত (সাক্ষাৎ) লাভ তো করেছেই উপরন্তু উনাদের সন্তান হওয়া সত্ত্বেও তারা ছাহাবী হওয়া তো দূরের কথা তারা ঈমানদারই ছিলো না বরং কুফরী আমলের কারণে কাট্টা কাফির ও চির জাহান্নামী হয়েছে। তদ্রƒপ ইয়াযীদ লা’নাতুল্লাহি আলাইহিও বিশিষ্ট ছাহাবী আমীরুল মু’মিনীন হযরত মু’আবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার সন্তান হওয়া সত্ত্বেও কুফরী আমল করার কারণে সে কাট্টা কাফির, মালউন ও চির জাহান্নামী হয়েছে। নাঊযুবিল্লাহ!

কারণ যিনি ঈমান, ইসলাম ও হিদায়েতের মূল, যিনি শাফায়াত, নাজাত ও জান্নাতের মালিক, যিনি সৃষ্টির উৎস, যিনি কুল মাখলূক্বাতের নবী ও রসূল, নবী আলাইহিমুস সালাম উনাদের নবী, রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আহলে বাইত আলাইহিমুস সালাম তথা পবিত্রতম বংশের উনাদেরকে সে মানহানি করেছে। উনাদেরকে সে উৎপীড়ন করেছে, সীমাহীন কষ্ট-তাকলীফ দিয়েছে। সর্বোপরি বেহেশতের যুবকগণ উনাদের সাইয়্যিদ হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম উনাকেসহ পবিত্র আহলে বাইত আলাইহিমুস সালাম উনাদের অন্যান্য সম্মানিত সদস্য ও সঙ্গীগণ উনাদেরকে শহীদ করেছে। নাঊযুবিল্লাহ!

কাজেই, ইয়াযীদ লা’নাতুল্লাহি আলাইহি তাকে ভালো বলা বা তার প্রশংসা করার অর্থ হলো তার উল্লিখিত কুফরীমূলক কাজগুলোকে ভালো বলা বা প্রশংসা করা। যা ঈমান নষ্ট হওয়ার কারণ।

অতএব বলার আর অপেক্ষাই রাখেনা যে, উলামায়ে ছূ’দের উক্ত বক্তব্য সাধারণ মুসলমানদের আক্বীদা বা ঈমানের জন্য বিশেষভাবে হুমকিস্বরূপ। অথচ বান্দার ইবাদত-বন্দেগী বা নেক আমল কবুলযোগ্য হওয়ার জন্যে প্রধানতম শর্ত হচ্ছে- আক্বীদা শুদ্ধ থাকা অর্থাৎ আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদার ন্যায় আক্বীদা পোষণ করা। কারণ বিশুদ্ধ আক্বীদা আমল কবুল হওয়ার পূর্ব শর্ত। তাই মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কালামে পাকে ইরশাদ করেন,

والعصر ان الانسان لفى خسر. الا الذين امنوا وعملوا الصلحات

অর্থ: “আছরের কছম বা সময়ের কছম! সকল মানুষ ক্ষতিগ্রস্তের মধ্যে, একমাত্র তারা ছাড়া, যারা ঈমান এনেছে এবং নেক আমল করেছে।” (সূরা আছর)

উপরোক্ত আয়াত শরীফ-এ আল্লাহ পাক তিনি মানবজাতির ধ্বংস হতে নাজাত পাওয়ার প্রথম উপায় হিসেবে ঈমান (আক্বীদা)কে আখ্যায়িত করেছেন। অতঃপর আমলের প্রশ্ন। কারণ ঈমানহীন ব্যক্তির নেক আমলের কোনো কোন মূল্যই আল্লাহ পাক উনার নিকট নেই। কাজেই বান্দার জন্যে প্রধানতম ফরয এই যে, সে সর্বপ্রথম তার ঈমান বা আক্বীদাকে বিশুদ্ধ করবে অর্থাৎ ইসলামের প্রতিটি বিষয়ে, আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের ন্যায় আক্বীদা পোষণ করবে।

কেননা আক্বীদাগত কারণেই ইসলামে ৭২টি বাতিল ফিরক্বার আবির্ভাব হয়েছে। যদিও তাদের কথাবার্তা, চাল-চলন, সীরত-ছূরত ইত্যাদি বাহ্যিক দৃষ্টিতে অনেক ক্ষেত্রেই মুসলমানের ন্যায় বা ইসলামসম্মত, কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই তারা ইসলামের মৌলিক বিষয়ে ইসলাম তথা কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস অর্থাৎ আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদার সম্পূর্ণ বিপরীত আক্বীদা পোষণ করে থাকে, যা সুস্পষ্ট কুফরী।

যেমন- ক্বদরিয়া সম্প্রদায়। তারা তক্বদীরকে অবিশ্বাস করে। অথচ তক্বদীরের উপর ঈমান আনা ফরয।

খারিজী সম্প্রদায়: তাদের আক্বীদা হলো- হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা কাফির নাঊযুবিল্লাহ! অথচ হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের প্রতি সুধারণা পোষণ করা ঈমানের অঙ্গ বা ফরয।

রাফেজী বা শিয়া সম্প্রদায়: তাদের আক্বীদা মতে শিয়াদের ইমামের মর্যাদা নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের চেয়েও বেশি, বর্তমান কুরআন শরীফ পরিবর্তিত, হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি ব্যতীত খুলাফায়ে রাশিদীন উনাদের সকলেই মুরতাদ, ছবি আঁকা হারাম তোলা জায়িয। নাঊযুবিল্লাহ!

অনুরূপ বর্তমান যামানার ভয়ঙ্কর ফিতনা- কাদিয়ানী ফিতনা। তাদের আক্বীদা হলো- সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি শেষ নবী নন, উনার পর আরো নবী পৃথিবীতে আসবেন, তাই তারা গোলাম কাদিয়ানীকে নবী বলে বিশ্বাস করে, যা কাট্টা কুফরী।

অথচ তারা প্রত্যেকেই বাহ্যিক দৃষ্টিতে নামায রোযা হজ্জ যাকাতের কথা বলে, টুপি কোর্তা পাগড়ী পরিধান করে। এতকিছুর পরও তারা আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের ফতওয়া মুতাবিক কাফির বা অমুসলিম। কারণ তাদের উপরোক্ত আক্বীদাসমূহ সম্পূর্ণই কুফরী।

আর এদের প্রসঙ্গেই হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে,

عن عبد الله بن عمر رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم ستفترق امتى على ثلاث وسبعين فرقة كلهم فى النار الا ملة واحدة قيل من هى يا رسول الله صلى الله عليه وسلم قال ما انا عليه و اصحابى.

অর্থ: “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, অতি শীঘ্রই আমার উম্মত ৭৩ দলে বিভক্ত হবে, একটি দল ব্যতীত সকল দল জাহান্নামে যাবে। জিজ্ঞাসা করা হলো- ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! যে দলটি (নাজাত পাবে) সেটা কোন দল? সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, “যে (মত-পথের) উপর আমি ও আমার ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা রয়েছি, তার উপর যারা থাকবে, তারাই সেই নাজাতপ্রাপ্ত দল।” (আহমদ, আবূ দাউদ, মিশকাত, মিরকাত, লুময়াত, আশয়াতুল লুময়াত, শরহুত ত্বীবী, তা’লীকুছ ছবীহ, মুযাহিরে হক্ব)

উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা এটা সুস্পষ্টভাবেই প্রমাণিত হলো যে, ইসলামের যেকোনো আমলই করা হোক না কেন এবং যে কেউই করুক না কেন, তা যদি আক্বীদা শুদ্ধ রেখে শরীয়ত সম্মতভাবে করা হয়, তবে তা গ্রহণযোগ্য। আর যদি আক্বীদার মধ্যে কোনো ত্রুটি থাকে, তবে তা অবশ্যই পরিত্যাজ্য। যেমন- খারিজী, রাফেজী, কাদিয়ানী ইত্যাদি সম্প্রদায় পরিত্যাজ্য ও বাতিল। সুতরাং ইয়াযীদকে যারা ভালো বলবে তারাও কুফরী আক্বীদার কারণে বাতিল ও পরিত্যাজ্য বলে গণ্য হবে।

কাজেই যারা এ ধরনের কুফরী আক্বীদায় বিশ্বাসী ও কুফরী বক্তব্য প্রদানকারী তারা এবং হক্ব তালাশী সমঝদার মুসলমানগণ যেনো তাদের ঈমান ও আমলকে হিফাযত করতে পারে সে জন্যই “কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে কুলাঙ্গার, পাপিষ্ঠ ইয়াযীদ লা’নাতুল্লাহি আলাইহি সম্পর্কে শরীয়তের সঠিক ফায়ছালা ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া” প্রকাশ করা হলো।

স্মর্তব্য যে ইয়াযীদ লা’নাতুল্লাহি আলাইহি তার সম্পর্কে সঠিক ফায়ছালায় পৌঁছতে হলে আমাদেরকে সর্বপ্রথম আহলে বাইত আলাইহিমুস সালাম উনাদের বিশেষ করে সাইয়্যিদুশ শুহাদা হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম উনার ফাযায়িল-ফযীলত, মর্যাদা-মর্তবা, শান-শওকত এবং উনাদেরকে মুহব্বত করার গুরুত্ব ও তাৎপর্য সম্পর্কে যথাযথ অবগত হতে হবে।

 

সাইয়্যিদুশ শুহাদা হযরত ইমাম

হুসাইন আলাইহিস সালাম

 

সাইয়্যিদুশ শুহাদা হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম তিনি চতুর্থ হিজরীর শা’বান মাসের ৫ তারিখ মদীনা শরীফ-এ বিলাদত শরীফ লাভ করেন। বিলাদত শরীফ-এর পর সরকারে দুজাহাঁ, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার কানে আযান দিয়ে দুআ করেন। সাতদিন পর আকীকা করে উনার নাম মুবারক রাখেন ‘হুসাইন’।

হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত আছে-

الحسن والحسين اسمان من اهل الجنة

অর্থ: ‘হাসান ও হুসাইন জান্নাতী নামসমূহের দুটি নাম মুবারক।‘ এর আগে আরবের জাহিলিয়াত যুগে এ দু’নামের প্রচলন ছিলো না।

হযরত ইমাম হাসান আলাইহিস সালাম ও হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম উনারা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খুবই প্রিয় ছিলেন। আপন সন্তান থেকেও হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনাদেরকে বেশি ভালোবাসতেন।

আল্লামা হযরত জামী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বর্ণনা করেন, একদিন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম উনাকে ডানে ও স্বীয় ছাহেবজাদা হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম উনাকে বামে বসিয়েছিলেন। এমতাবস্থায় হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি উপস্থিত হয়ে আরয করলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আল্লাহ তায়ালা তিনি এ দুজনকে আপনার কাছে এক সাথে না রেখে উনাদের মধ্য থেকে একজনকে ফিরিয়ে নিয়ে যাবেন। অতএব, আপনি এ দু’জনের মধ্যে যাকে ইচ্ছা পছন্দ করুন। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, যদি হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম তিনি বিদায় হয়ে যান, তাহলে উনার বিরহে হযরত ফাতিমাতুয যাহরা আলাইহাস সালাম ও হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাদের খুবই কষ্ট হবে এবং আমার মনটাও ক্ষুণœ হবে। আর যদি হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম তিনি বিছাল শরীফ লাভ করেন, তাহলে সবচেয়ে বেশি দুঃখ একমাত্র আমিই পাবো। এজন্য নিজে দুঃখ পাওয়াটাই আমি পছন্দ করি। এ ঘটনার তিন দিন পর হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম তিনি বিছাল শরীফ লাভ করেন।

এরপর থেকে যখনই হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম তিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সমীপে আসতেন তখন তিনি উনাকে মুবারকবাদ দিতেন এবং উনার কপাল মুবারক-এ চুমু দিতেন এবং উপস্থিত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে সম্বোধন করে বলতেন, “আমি হযরত হুসাইন আলাইহিস সালাম উনার জন্য আপন সন্তান হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম উনাকে কুরবানী দিয়েছি।” (শাওয়াহিদুন নুবুওওয়াত)

হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন: নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি একদা এমন অবস্থায় বাইরে তাশরীফ আনলেন যে, উনার এক কাঁধ মুবারক-এর উপর হযরত ইমাম হাসান আলাইহিস সালাম এবং অন্য কাঁধ মুবারক-এর উপর হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম উনাকে বসিয়েছিলেন। এভাবে আমাদের সামনে তাশরীফ আনলেন এবং ইরশাদ করলেন-

من احبهما فقد احبنى ومن ابغضهما فقد ابغضنى

অর্থ: “যে এ দুজনকে মুহব্বত করলো, সে আমাকে মুহব্বত করলো। আর যে উনাদের সাথে দুশমনি করলো, সে আমার সাথে দুশমনি করলো।’

হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম উনার বিলাদত শরীফ-এর কিছুদিন পরই উনার শাহাদাতের কথা সবার কাছে জানাজানি হয়ে গিয়েছিলো। হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত ফাতিমাতুয যাহরা আলাইহাস সালাম, অন্যান্য ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম ও আহলে বাইত শরীফ উনাদের সাথে সংশ্লিষ্ট সকলেই হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম উনার শৈশবাবস্থায় জানতে পেরেছিলেন যে, এ বরকতময় ছেলেকে একান্ত নির্মমভাবে শহীদ করা হবে এবং কারবালার ময়দান উনার রক্ত মুবারক দ্বারা রঞ্জিত হবে। এ ব্যাপারে অনেক হাদীছ শরীফ বর্ণিত হয়েছে।

হযরত উম্মুল ফযল বিনতে হারিছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা (হযরত আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার আহলিয়া) তিনি বলেন, আমি একদিন হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমতে উপস্থিত হয়ে হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম উনাকে উনার কোলে দিলাম। এরপর আমি দেখলাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার চোখ মুবারক থেকে টপটপ করে পানি পড়ছে। আমি আরয করলাম, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমার পিতা-মাতা আপনার জন্য কুরবান হোক, এর কারণ কী? তিনি ইরশাদ করলেন, আমার কাছে হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি এসে এ খবর দিয়ে গেলেন-

ان امتى ستقتل ابنى هذا

‘নিশ্চয়ই আমার উম্মত আমার এ আওলাদ উনাকে শহীদ করবে।’ হযরত উম্মুল ফযল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা তিনি বলেন, আমি আরয করলাম, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! এ শিশুকে শহীদ করবে? হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, ‘হ্যাঁ, হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি শাহাদাত স্থলের লাল মাটিও এনেছেন।

হযরত ইবনে সা’দ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি হযরত শা’বী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণনা করেছেন, হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি জঙ্গে সিফফীনের সময় কারবালার পথ দিয়ে যাওয়ার সময় দাঁড়িয়ে গেলেন এবং সেই জায়গার নাম জানতে চাইলেন। লোকেরা বললেন, এ জায়গার নাম কারবালা। কারবালার নাম শুনামাত্র তিনি এত কান্নাকাটি করলেন যে, উনার চক্ষু মুবারক-এর পানিতে মাটি পর্যন্ত ভিজে গিয়েছিলো। অতঃপর ফরমালেন, আমি একদিন হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমতে হাজির হয়ে দেখতে পেলাম, তিনি কাঁদছেন। আমি আরয করলাম, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি কেন কাঁদছেন? তিনি ইরশাদ করলেন, এইমাত্র হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি এসে আমাকে খবর দিয়ে গেলেন-

ان ولدى الحسين يقتل بشاطئ الفرأت بموضع يقال له كربلا

অর্থ: ‘আমার আওলাদ (দৌহিত্র) হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম উনাকে ফোরাত নদীর তীরে যে জায়গায় শহীদ করা হবে, সে জায়গার নাম কারবালা।’ (সাওয়ায়িকে মুহাররাকাহ)

আর সত্যি সত্যিই নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ভবিষ্যদ্বাণী মুতাবিক হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম তিনি কারবালার প্রান্তরে শাহাদাত বরণ করেন।

 

কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ-এর বর্ণনায় আহলে বাইত আলাইহিমুস সালাম ও আওলাদে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের ফযীলত

 

মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন-

قل لا اسئلكم عليه اجرا الا المودة فى القربى

অর্থ: “ হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি (উম্মতদেরকে) বলুন, আমি তোমাদের নিকট নুবুওওয়াতের দায়িত্ব পালনের কোনো প্রতিদান চাইনা। তবে আমার নিকটজন তথা আহলে বাইত উনাদের প্রতি তোমরা সদাচরণ করবে।” (সূরা শূরা : আয়াত শরীফ ২৩)

এ আয়াত শরীফ-এর ব্যাখ্যায় বিশ্বখ্যাত তাফসীর ‘তাফসীরে মাযহারী’ ৮ম জিলদ ৩২০ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে-

لا اسئلكم اجرا الا ان تودوا اقربائى واهل بيتى وعترتى وذلك لانه صلى الله عليه وسلم كان خاتم النبين لا نبى بعده.

অর্থ: “আমি তোমাদের নিকট প্রতিদান চাইনা তবে তোমরা আমার নিকটাত্মীয়, আহলে বাইত ও বংশধর উনাদের (যথাযথ সম্মান প্রদর্শন পূর্বক) হক্ব আদায় করবে। কেননা, আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হচ্ছেন শেষ নবী। উনার পরে কোনো নবী নেই।”

আহলে বাইত আলাইহিমুস সালাম উনাদের ফযীলত সম্পর্কে বহু হাদীছ শরীফ বর্ণিত রয়েছে। তন্মধ্যে কতিপয় হাদীছ শরীফ নি¤েœ উল্লেখ করা হলো:

عن ام المؤمنين حضرت عائشة عليها السلام قالت خرج النبى صلى الله عليه وسلم غداة وعليه مرط مرحل من شعر اسود فجاء حضرت الحسن عليه السلام بن على رضى الله تعالى عنه فادخله ثم جاء حضرت الحسين عليه السلام فدخل معه ثم جاءت فاطمة عليها السلام فادخلها ثم جاء على رضى الله تعالى عنه فادخله ثم قال انما يريد الله ليذهب عنكم الرجس اهل البيت ويطهركم تطهيرا.

অর্থ: “উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনি বলেন, একদা ভোরবেলা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি একখানা কালো বর্ণের পশমী নকশী কম্বল শরীর মুবারক-এ জড়িয়ে বের হলেন। এমন সময় হযরত ইমাম হাসান আলাইহিস সালাম তিনি সেখানে আসলেন, তিনি উনাকে কম্বলের ভিতরে প্রবেশ করিয়ে নিলেন। তারপর হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম তিনি আসলেন, উনাকেও হযরত ইমাম হাসান আলাইহিস সালাম উনার সাথে প্রবেশ করিয়ে নিলেন। অতঃপর সাইয়্যিদাতুন নিছা হযরত ফাতিমাতুয যাহরা আলাইহাস সালাম তিনি আসলেন উনাকেও তাতে প্রবেশ করিয়ে নিলেন। তারপর হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি আসলেন, উনাকেও তার ভিতরে প্রবেশ করিয়ে নিলেন। অতঃপর হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কুরআন শরীফ-এর এই আয়াত শরীফখানা পড়লেন, হে আমার আহলে বাইত! আল্লাহ তায়ালা তিনি আপনাদেরকে সকল প্রকার অপবিত্রতা থেকে মুক্ত রেখে পবিত্র করার মতো পবিত্র করবেন।” অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক তিনি আপনাদেরকে পবিত্র করেই সৃষ্টি করেছেন। এটা আনুষ্ঠানিক ঘোষণা মাত্র। (মুসলিম শরীফ)

عن سعد بن ابى وقاص رضى الله تعالى عنه قال لما نزلت هذه الاية فقل تعالوا ندع ابناءنا وابناءكم دعا رسول الله صلى الله عليه وسلم عليا وفاطمة وحسنا وحسينا فقال اللهم هؤلاء اهل بيتى.

অর্থ: “হযরত সা’দ ইবনে আবি ওয়াক্কাছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, যখন ندع ابناءنا وابناءكم الاية (আসো আমরা আহবান করি আমাদের সন্তানগণকে ও তোমাদের সন্তানগণকে) আয়াত শরীফ নাযিল হলো, তখন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, সাইয়্যিদাতুন নিসা হযরত ফাতিমাতুয যাহরা আলাইহাস সালাম ও হযরত ইমাম হাসান  আলাইহিস সালাম এবং হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম উনাদেরকে ডাকলেন এবং বললেন, আয় আল্লাহ পাক! এরা সকলে আমার আহলে বাইত।” (মুসলিম শরীফ)

عن الـمسور بن مخرمة رضى الله تعالى عنه ان رسول الله صلى الله عليه وسلم قال حضرت فاطمة عليها السلام بضعة منى فمن اغضبها اغضبنى.

অর্থ: “হযরত মিসওয়ার ইবনে মাখরামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, সাইয়্যিদাতুন নিসা হযরত ফাতিমাতুয যাহরা আলাইহাস সালাম তিনি আমার (দেহ মুবারক-এরই) একটি টুকরা মুবারক। যে উনাকে রাগান্বিত করলো, সে আমাকেই রাগান্বিত করলো।” (বুখারী, মুসলিম)

عن حضرت زيد بن ارقم رضى الله تعالى عنه قال قام رسول الله صلى الله عليه وسلم يوما فينا خطيبا بماء يدعى خما بين مكة والمدينة فحمد الله واثنى عليه ووعظ وذكر ثم قال اما بعد الا ايها الناس انما انا بشر يوشك ان ياتينى رسول ربى فاجيب وانا تارك فيكم الثقلين اولهما كتاب الله فيه الهدى والنور فخذوا بكتاب الله واستمسكوا به فحث على كتاب الله ورغب فيه ثم قال واهل بيتى اذكركم الله فى اهل بيتى اذكركم الله فى اهل بيتى.

অর্থ: “হযরত যায়িদ ইবনে আরকাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, একবার রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মক্কা শরীফ ও মদীনা শরীফ-এর মধ্যবর্তী ‘খোম” নামক পানির নালার নিকট দাঁড়িয়ে আমাদেরকে খুতবা দান করলেন। প্রথমে আল্লাহ পাক উনার হামদ ও ছানা বর্ণনা করলেন, এরপর ওয়ায ও নছীহত করলেন। অতঃপর বললেন, সাবধান! হে লোক সকল! নিশ্চয়ই আমি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, অচিরেই আমার নিকট আল্লাহ পাক উনার দূত (হযরত মালাকুল মউত আলাইহিস সালাম) আসবেন, তখন আমি আমার রব তায়ালা উনার আহবানে সাড়া দিবো অর্থাৎ উনার সাক্ষাতে যাবো। তবে আমি তোমাদের মাঝে দুটি মূল্যবান সম্পদ রেখে যাচ্ছি। তন্মধ্যে প্রথমটি হল, আল্লাহ পাক উনার কিতাব, এর মধ্যে রয়েছে হিদায়েত ও নূর। অতএব, তোমরা আল্লাহ পাক উনার কিতাবকে খুব মজবুতভাবে আঁকড়ে ধরো এবং দৃঢ়তার সাথে তার বিধি-বিধান মেনে চলো। (বর্ণনাকারী তিনি বলেন,) আল্লাহ পাক উনার কিতাবের নির্দেশাবলী কঠোরভাবে মেনে চলার জন্য তিনি খুব বেশি উৎসাহিত করলেন। অতঃপর বললেন, আর দ্বিতীয়টি হলো; আমার আহলে বাইত আলাইহিমুস সালাম। আমি তোমাদেরকে আমার আহলে বাইত আলাইহিমুস সালাম উনাদের সম্পর্কে আল্লাহ পাক উনার তরফ থেকে বিশেষ নছীহত করছি। আমি তোমাদেরকে আমার আহলে বাইত আলাইহিমুস সালাম উনাদের সম্পর্কে আল্লাহ পাক উনার তরফ থেকে বিশেষ নছীহত করছি।” (মুসলিম শরীফ)

عن حضرت البراء رضى الله تعالى عنه قال رايت النبى صلى الله عليه وسلم والحسن بن على على عاتقه يقول اللهم انى احبه فاحبه

অর্থ: “হযরত বারা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, আমি হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে দেখেছি যে, তিনি হাসান ইবনে আলী আলাইহাস সালাম উনাকে নিজের কাঁধের উপর রেখে বলছেন: হে আল্লাহ পাক! আমি উনাকে মুহব্বত করি, আপনিও উনাকে মুহব্বত করুন।” (মুত্তাফাকুন আলাইহি)

عن حضرت جابر رضى الله تعالى عنه قال رايت رسول الله صلى الله عليه وسلم فى حجته يوم عرفة وهو على ناقته القصواء يخطب فسمعته يقول يا ايها الناس انى تركت فيكم ما ان اخذتم به لن تضلوا كتاب الله وعترتى اهل بيتى.

অর্থ: “হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে দেখেছি, তিনি (বিদায়) হজ্জে আরাফাতের দিন উনার ‘কাসওয়া’ নামক উষ্ট্রীর উপর সওয়ার অবস্থায় খুতবা দান করছেন। আমি শুনেছি, তিনি খুতবায় বলেছেন, হে লোক সকল! আমি তোমাদের মাঝে এমন জিনিস রেখে যাচ্ছি, তোমরা যদি তাকে শক্তভাবে ধরে রাখো, তবে কখনো গোমরাহ হবেনা। তা হলো আল্লাহ পাক উনার কিতাব ও আমার ইতরত বা আহলে বাইত আলাইহিমুস সালাম।” (তিরমিযী শরীফ)

عن حضرت زيد بن ارقم رضى الله تعال عنه قال ان رسول الله صلى الله عليه وسلم قال لعلى رضى الله تعالى عنه وفاطمة عليها السلام والحسن عليه السلام والحسين عليه السلام انا حرب لـمن حاربهم وسلم لـمن سالـمهم.

অর্থ: “হযরত যায়িদ ইবনে আরকাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, নিশ্চয়ই রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, সাইয়্যিদাতুন নিসা হযরত ফাতিমাতুয যাহরা আলাইহাস সালাম, হযরত ইমাম হাসান আলাইহিস সালাম ও হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম উনাদের সম্পর্কে বলেছেন, যারা উনাদের প্রতি শত্রুতা পোষণ করবে, আমি তাদের শত্রু। পক্ষান্তরে যে উনাদের সাথে সদ্ব্যবহার করবে, আমি তাদের সাথে সদ্ব্যবহার করবো।” (তিরমিযী শরীফ)

عن حضرت ابى سعيد رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم الحسن عليه السلام والحسين عليه السلام سيدا شباب اهل الجنة.

অর্থ: “হযরত আবূ সাঈদ খুদরী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, হযরত ইমাম হাসান আলাইহিস সালাম ও হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম উনারা দুজনই জান্নাতী যুবকগণের সাইয়্যিদ।” (তিরমিযী শরীফ)

عن حضرت ابن عمر رضى الله تعالى عنه ان رسول الله صلى الله عليه وسلم قال ان الحسن عليه السلام والحسين عليه السلام عليه السلام هما ريحانى من الدنيا.

অর্থ: “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত যে, রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, হযরত ইমাম হাসান আলাইহিস সালাম এবং হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম উনারা দুজনেই দুনিয়াতে আমার দুটি ফুলস্বরূপ।” (তিরমিযী শরীফ)

عن يعلى بن مرة رضى الله تعلى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم حسين عليه السلام منى وانا من حسين عليه السلام احب الله من احب حسينا حسين سبط من الاسباط.

অর্থ: “হযরত ইয়া’লা ইবনে মুররাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন: হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম তিনি আমার থেকে আর আমি হযরত হুসাইন আলাইহিস সালাম উনার থেকে। যে ব্যক্তি হযরত হুসাইন আলাইহিস সালাম উনাকে মুহব্বত করবে আল্লাহ পাক তিনি তাকে মুহব্বত করবেন। হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম তিনি বংশসমূহের মধ্যে একটি বংশ।” (তিরমিযী শরীফ)

عن حضرت على رضى الله تعالى عنه قال الحسن عليه السلام اشبه رسول الله صلى الله عليه وسلم ما بين الصدر الى الرأس والحسين عليه السلام اشبه النبيى صلى الله عليه وسلم ما كان اسفل من ذلك.

অর্থ: “হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেছেন, হযরত ইমাম হাসান আলাইহিস সালাম তিনি হলেন (চেহারা-আকৃতি-অবয়বে) মাথা মুবারক হতে বক্ষ মুবারক পর্যন্ত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সদৃশ। আর হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম তিনি হলেন বক্ষ মুবারক হতে নিচ পর্যন্ত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সদৃশ।” (তিরমিযী শরীফ)

عن حضرت ابن عباس رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم احبوا الله لـما يغذوكم من نعمة واحبونى لحب الله واحبوا اهل بيتى لحبى.

অর্থ: “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেছেন, তোমরা আল্লাহ পাক উনাকে মুহব্বত করো। কেননা, তিনি তোমাদের প্রতি খাদ্যসামগ্রীর মাধ্যমে অনুগ্রহ করে থাকেন। আর আমাকে মুহব্বত করো আল্লাহ পাক উনার মুহব্বতে, যেহেতু আমি আল্লাহ পাক উনার হাবীব। আর আমার আহলে বাইত উনাদেরকে মুহব্বত করো আমার মুহব্বতে।” (তিরমিযী শরীফ)

عن حضرت ابى ذر رضى الله تعالى عنه انه قال وهو اخذ بباب الكعبة سمعت النبى صلى الله عليه وسلم يقول الا ان مثل اهل بيتى فيكم مثل سفينة نوح من ركبها نجا ومن تخلف عنها هلك.

অর্থ: “হযরত আবূ যর গিফারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত, তিনি কা’বা শরীফ-এর দরজা ধরে বলেছেন, আমি নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে বলতে শুনেছি, সাবধান! আমার আহলে বাইত হলেন তোমাদের জন্য হযরত নূহ আলাইহিস সালাম উনার নৌকার ন্যায়। যে তাতে আরোহণ করবে, সে রক্ষা পাবে। আর যে তা হতে পশ্চাতে থাকবে সে ধ্বংস হবে।” (মুসনাদে আহমদ শরীফ)

হাদীছ শরীফ-এ আরো বর্ণিত রয়েছে, আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে একবার হযরত ইমাম হাসান  আলাইহিস সালাম এবং হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম তিনি বসা ছিলেন এমতাবস্থায় হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমতে আসলেন।

হযরত দাহইয়াতুল কলবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ঈমান আনার পর হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম সাধারণত উনার ছূরত মুবারক-এ আসতেন। আর হযরত দাহইয়াতুল কলবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার আদত (অভ্যাস) ছিলো তিনি যখন আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমতে আসতেন তখন হযরত হাসান আলাইহিস সালাম এবং হযরত হুসাইন আলাইহিস সালাম উনাদের জন্য কিছু হাদিয়া নিয়ে আসতেন। উনাদেরকে কোলে নিতেন। যার কারণে উনার সাথে উনাদের আলাদা একটা মুহব্বত পয়দা হয়েছিলো। উনারা দুজন উনাকে দেখলেই উনার কাছে চলে যেতেন। হযরত দাহইয়াতুল কলবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাদেরকে খাছভাবে মুহব্বত করতেন। যে কারণে উনারাও উনাকে মুহব্বত করতেন।

যখন হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট আসলেন হযরত দাহইয়াতুল কলবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার ছূরত মুবারক-এ। সাধারণত হযরত দাহইয়াতুল কলবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু আসলে হযরত ইমাম হাসান আলাইহিস সালাম এবং হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম উনারা উনার কাছে যেতেন। তাই হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম আসা মাত্র উনারা উনার কাছে যেতে চাচ্ছিলেন।

হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে জরুরী কিছু আলোচনা করছিলেন আর এ দিকে হযরত ইমাম হাসান আলাইহিস সালাম এবং হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম তিনি উনার কাছে যেতে চাচ্ছিলেন। আর আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদেরকে ফিরিয়ে রাখছিলেন। এমনিভাবে একবার, দু’বার তিনবার হয়ে গেলো। হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমি ব্যাপারটা বুঝতে পারছি না। হযরত ইমাম হাসান আলাইহিস সালাম এবং হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম উনারা আমার কাছে আসতে চাচ্ছেন, আপনি উনাদেরকে ফিরিয়ে রাখছেন, ব্যাপারটি কি?

আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, হে ভাই হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম! আপনি তো হযরত দাহইয়াতুল কলবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার ছূরত মুবারক-এ এসেছেন। হযরত দাহইয়াতুল কলবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার একটা আদত রয়েছে, তিনি আমার নিকট যখনই আসেন তখনই উনাদের জন্য কিছু হাদিয়া নিয়ে আসেন, উনাদেরকে  কোলে নেন, মুহব্বত করেন, উনারাও উনার কাছে যান। আপনাকে দেখে উনারা মনে করেছেন, আপনি হয়তো হযরত দাহইয়াতুল কলবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, সেহেতু উনারা আপনার কাছে যেতে চাচ্ছেন। তিনি বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমার বেয়াদবী ক্ষমা করবেন, আমাকে একটু সময় দিন, আমি এখনই আসছি। এটা বলে তিনি বের হয়ে গেলেন, কিছুক্ষণ পর আবার আসলেন এক থোকা আঙ্গুর ফল নিয়ে, আঙ্গুরগুলো পেশ করলেন, হযরত ইমাম হাসান আলাইহিস সালাম এবং হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম উনাদের খিদমতে। উনারা সেটা গ্রহণ করলেন। আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, হে জিবরীল আলাইহিস সালাম! আপনি এগুলো এতো তাড়াতাড়ি কোথা থেকে আনলেন? হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম বললেন, আল্লাহ পাক উনাদের জন্য যে জান্নাত নির্ধারণ  করে রেখেছেন সে জান্নাত থেকে এ আঙ্গুর ফলগুলো আমি এনেছি। সুবহানাল্লাহ!

আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, হে হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম! আপনার হয়তো কষ্ট হয়েছে, আপনি কিছু মনে করবেন না। তখন হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, আপনি বলেন কি, আমি কেন কিছু মনে করবো, আমরা ফেরেশতারা তো উনাদের খাদিম। সুবহানাল্লাহ!

কেননা হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং হযরত ফাতিমাতুয যাহরা আলাইহাস সালাম উনারা যখন ঘুমিয়ে থাকেন, আর হযরত ইমাম হাসান আলাইহিস সালাম এবং হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম উনাদের যখন ঘুম আসেনা গরমের কারণে, তখন আল্লাহ পাক উনার নির্দেশে আমরা ফেরেশতারা উনাদেরকে বাতাস করে থাকি ঘুমানোর জন্য। সুবহানাল্লাহ! কাজেই, আমরা কেন কিছু মনে করবো।

সুতরাং ফেরেশতা, জিন-ইনসান, পশু-পাখি, কীট-পতঙ্গ, তরুলতা, জামাদাত, শাজারাত, হাজারাত যা কিছু রয়েছে সকলের জন্যই ফরয-ওয়াজিব হচ্ছে- ‘আহলে বাইত আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে মুহব্বত করা। আহলে বাইত আলাইহিমুস সালাম উনাদের মুহব্বত করা সকলেরই নাজাতের কারণ। সেজন্য ফেরেশতারা মুহব্বত করেছেন, তা’যীম-তাকরীম করেছেন, ইজ্জত-সম্মান করেছেন। সেটা জিন-ইনসানের উপরও ফরয করা হয়েছে। এখন যে যতটুকু মুহব্বত করবে, সে ততটুকু মর্যাদা লাভ করবে।

আরো বর্ণিত রয়েছে, হযরত উমর ফারূক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার প্রস্তাবিত বিষয়ে প্রায় ২২ খানা আয়াত শরীফ নাযিল হয়েছে। সেই হযরত উমর ফারূক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার সাওয়ানেহ উমরী মুবারক-এ বর্ণিত রয়েছে, যখন আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিদায় নেন তখন হযরত হাসান আলাইহিস সালাম উনার বয়স মুবারক ছিলো সাড়ে সাত বছর আর হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম উনার বয়স মুবারক ছিলো সাড়ে ছয় বছর। দুজনের মধ্যে হযরত ইমাম হাসান আলাইহিস সালাম তিনি ছিলেন জামালী তবিয়ত আর হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম তিনি ছিলেন জালালী তবিয়ত সম্পন্ন।

হযরত আব্দুল্লাহ বিন উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু যিনি ছিলেন বিশিষ্ট ছাহাবী। কিতাবে বর্ণিত রয়েছে, যাঁরা সুন্নতের ইত্তিবা করতেন, সুন্নতের ইত্তিবার মধ্যে যাঁরা মশহুর রয়েছেন, বেমেছাল রয়েছেন উনাদের মধ্যে একজন হচ্ছেন হযরত আব্দুল্লাহ বিন উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু। যার জন্য হযরত উমর বিন খত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার শাহাদত বরণ করার সময় অনেক ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা প্রস্তাব দিয়েছিলেন, হে খলীফাতুল মুসলিমীন, আমীরুল মু’মিনীন! আপনি আপনার পরবর্তী খলীফা হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তয়ালা আনহু উনাকে মনোনীত করুন, উনার যে যোগ্যতা রয়েছে, আমল-আখলাক্ব রয়েছে তা বেমেছাল।

কিন্তু হযরত উমর ফারূক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি যেহেতু ইলহাম-ইলক্বার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। আর আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আগেই ফায়ছালা করেছেন, সে ফায়ছালা অনুযায়ী তিনি রায় দিয়েছেন হযরত উছমান যুন নূরাইন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার সম্পর্কে।

সেই হযরত আব্দুল্লাহ বিন উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম উনার সাথে চলাচল করতেন, উঠাবসা করতেন। কোনো এক প্রসঙ্গে হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম তিনি উনাকে বলেছিলেন, ‘গোলামের ছেলে গোলাম’। এটা শুনে তিনি বিষয়টার শরঈ ফায়ছালার জন্য উনার পিতা যিনি খলীফাতুল মুসলিমীন, আমীরুল মু’মিনীন উনাকে জানালেন যে, হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম তিনি আমাকে বলেছেন, ‘গোলামের ছেলে গোলাম’। এখন জানার বিষয় হচ্ছে- আমি কি প্রকৃতপক্ষেই গোলামের ছেলে গোলাম হয়েছি? খলীফাতুল মুসলিমীন, আমীরুল মু’মিনীন হযরত উমর বিন খত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন, বেশ ভালো কথা। এ বক্তব্যের শরঈ ফায়ছালা করতে হলে মৌখিকভাবে বললে হবে না বরং লিখিত আনতে হবে, কাগজে-কলমে থাকতে হবে।

হযরত আব্দুল্লাহ বিন উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম উনার নিকট গিয়ে বললেন, হে হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম! আপনি যে আমাকে বলেছেন, ‘গোলামের ছেলে গোলাম’ এটা লিখিত দিতে হবে। কারণ এ বক্তব্যের শরঈ ফায়ছালার জন্য আমি খলীফাতুল মুসলিমীন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার কাছে পেশ করেছি। তিনি বললেন হ্যাঁ, আমি লিখিত দিবো। সত্যিই তিনি একটা কাগজে লিখে দিলেন, ‘গোলামের ছেলে গোলাম’। সেটা নিয়ে পেশ করা হলো খলীফাতুল মুসলিমীন, আমীরুল মু’মিনীন হযরত উমর বিন খত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার কাছে। তিনি বললেন, ঠিক আছে আমি এর শরঈ ফায়ছালা বর্ণনা করবো। বিষয়টি নিয়ে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা সকলেই চিন্তিত হলেন। উনারা চিন্তিত হলেন যে, হযরত উমর বিন খত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু জালালী তবিয়তের, তিনি ইনসাফগার হিসেবে মশহুর, আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিশিষ্ট ছাহাবী, নবী আলাইহিমুস সালাম উনাদের পরে দ্বিতীয় ব্যক্তিত্ব।

একদিকে হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম, আরেকদিকে হযরত উমর বিন খত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু। সকলেই চিন্তিত হলেন, বিষয়টির শরঈ কী ফায়ছালা? হযরত উমর বিন খত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি তো অনেক সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম তাহক্বীক করে শরঈ ফায়ছালা দিয়ে থাকেন। তিনি কী ফতওয়া দিবেন? নির্দিষ্ট স্থান, সময়, দিন, তারিখ সব ঘোষণা করা হলো। হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম, হযরত তাবিয়ীনে কিরাম যাঁরা ছিলেন সকলেই সেখানে জমা হয়ে গেলেন যে, কী ফতওয়া দেয়া হয় সেটা জানার জন্য।

এদিকে হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম তিনি উপস্থিত হলেন। তিনি যখন উপস্থিত হলেন, হযরত উমর ফারূক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি উনাকে অত্যন্ত তা’যীম-তাকরীম করে একটা সম্মানিত স্থানে বসালেন। আর হযরত আব্দুল্লাহ বিন উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু যখন আসলেন, উনাকেও এক পাশে বসালেন। শরঈ ফায়ছালার নির্দিষ্ট সময় যখন উপস্থিত হলো, খলীফাতুল মুসলিমীন উনার পকেট থেকে কাগজটা বের করে বললেন যে, একটা কাগজ আমার কাছে পেঁৗঁছানো হয়েছে, এ কাগজের মধ্যে লিখিত রয়েছে ‘গোলামের ছেলে গোলাম’। কাগজটা দিয়েছেন আমার ছেলে হযরত আব্দুল্লাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু। উনার বক্তব্য হচ্ছে- হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম উনাকে বলেছেন- ‘গোলামের ছেলে গোলাম’।

এ বিষয়ে সঠিক শরঈ ফায়ছালার জন্য এ কাগজটা আমার নিকট পেশ করা হয়েছে। তখন হযরত উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম উনাকে জিজ্ঞাসা করলেন, এটা কি আপনি লিখেছেন? তিনি বললেন যে, হ্যাঁ। এটা আমার লিখিত, আমি বলেছি এবং লিখেছি। যখন জিজ্ঞাসা করে উনার স্বীকৃতি মুবারক নেয়া হলো তখন বিষয়টা সবাইকে জানানো হলো যে, হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম তিনি দয়া করে এ কথা বলেছেন এবং দয়া করে লিখেও দিয়েছেন। এটা সকলেই শুনলেন। তখন হযরত উমর বিন খত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন যে, এখন এ বিষয়ে হাক্বীক্বী শরঈ ফায়ছালা করা হবে। সকলেই অত্যন্ত মনোযোগ দিয়ে শুনতে থাকলেন। মনে হয়েছে যেন বাতাস চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে, সকলেই একদৃষ্টিতে খলীফাতুল মুসলিমীন, আমীরুল মু’মিনীন হযরত উমর বিন খত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার দিকে চেয়ে রয়েছেন। এ বিষয়টা তিনি কীভাবে ফায়ছালা করেন এবং এর কী ফায়ছালা রয়েছে শরীয়তে?

হযরত উমর বিন খত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি ঘোষণা করলেন, এই যে কাগজটা যার মধ্যে লিখিত রয়েছে, ‘গোলামের ছেলে গোলাম’। অর্থাৎ আহলে বাইত উনাদের যিনি অন্যতম ব্যক্তিত্ব হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম তিনি আমার ছেলেকে বলেছেন, ‘গোলামের ছেলে গোলাম’। এর অর্থ হচ্ছে খলীফাতুল মুসলিমীন, আমীরুল মু’মিনীন তিনি হচ্ছেন গোলাম আর উনার ছেলে হচ্ছে ‘গোলামের ছেলে গোলাম’। এর শরঈ হাক্বীক্বী ফায়ছালা হচ্ছে- আপনারা সকলেই সাক্ষী থাকুন, আমি আমার যিন্দিগীর অনেক সময় অতিবাহিত করেছি, পূর্ববর্তী কুফরী যিন্দিগী বাদ দিয়েছি, আমার অতীতের স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি যা ছিলো সেটা আমি ত্যাগ করেছি, শরীয়তের নির্দেশ বহির্ভূত আহলিয়া ছিলো তাদেরকেও পরিত্যাগ করেছি আল্লাহ পাক ও উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের সন্তুষ্টির জন্য। আমার চাওয়া এবং পাওয়ার বিষয় এটাই ছিলো যে, আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টি এবং আল্লাহ পাক উনার হাবীব উনার সন্তুষ্টি। আল্লাহ পাক এবং উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারা যতটুকু দিয়েছেন ততটুকু পাওয়া হয়েছে। তবে আমার একটা লিখিত দলীল প্রয়োজন ছিলো, যে লিখিত দলীলের আমি প্রত্যাশা করেছিলাম। আজকে হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম তিনি এটা লিখিত দিয়েছেন। এখন থেকে আমি নিশ্চিত হয়ে গেলাম ‘আমি উনাদের গোলাম।’ সুবহানাল্লাহ!

কাজেই, বর্তমানে আমার ওছীয়ত হচ্ছে আপনাদের প্রতি, আমি বিছাল শরীফ লাভ করলে এই কাগজখানা আমার কাফনের ভিতরে, আমার সিনার উপর রেখে দিবেন। আমি ক্বিয়ামতের দিন আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কাছে আরযু করবো যে, “ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনার যিনি লখতে জিগার হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম উনি আমাকে লিখিত দিয়েছেন যে, ‘আমি গোলাম’। কাজেই, আমার আমল যা-ই রয়েছে কমপক্ষে এই দলীলের খাতিরে আমাকে গোলাম হিসেবে কবুল করা হোক।” সুবহানাল্লাহ!

উনি যখন এটা ফায়ছালা করলেন, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম এবং তাবিয়ীনে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম যাঁরা সেখানে উপস্থিত ছিলেন সকলেই আহলে বাইত আলাইহিমুস সালাম উনাদের প্রতি হযরত উমর বিন খত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার মুহব্বত ও তা’যীম দেখে আশ্চর্য হয়ে হাক্বীক্বী ইবরত ও নছীহত হাছিল করলেন।

মূলত এ ঘটনাটির মাধ্যমে যে বিষয়টি সুস্পষ্টরূপে ফুটে উঠেছে তা হলো- আল্লাহ পাক ও উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের সন্তুষ্টি লাভ করতে হলে প্রত্যেক উম্মতের জন্য দায়িত্ব হলো আহলে বাইত এবং আওলাদে রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের প্রতি সুধারণা পোষণ করা, উনাদেরকে মুহব্বত করা ও সম্মান-ইজ্জত করা। হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম তিনি আহলে বাইত আলাইহিমুস সালাম উনাদের অন্যতম। হযরত আহলে বাইত ও আওলাদে রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে মুহব্বত করা জুযই ঈমান বা ঈমানের অঙ্গ। উনাদেরকে মুহব্বত করা এবং উনাদেরকে তা’যীম-তাকরীম করা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য ফরযে আইন।

কুরআন ও সুন্নাহর উপরোক্ত বর্ণনা থেকে আহলে বাইত আলাইহিমুস সালাম উনারা যে সীমাহীন ফযীলত, মর্যাদা-মর্তবা, বুযূর্গী ও সম্মানের অধিকারী তা সুস্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে। সাথে সাথে এটাও ফুটে উঠেছে যে, আল্লাহ পাক ও উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের সন্তুষ্টি ও রেযামন্দি হাছিল করতে হলে প্রত্যেক উম্মতের জন্য দায়িত্ব হচ্ছে আহলে বাইত আলাইহিমুস সালাম উনাদের প্রতি হুসনে জন তথা সুধারণা পোষণ করা, উনাদেরকে মুহব্বত করা এবং উনাদেরকে তা’যীম-তাকরীম বা সম্মান-ইজ্জত করা। কারণ উনাদের প্রতি তা’যীম-তাকরীম ও মুহব্বতই ঈমান। আর উনাদের প্রতি বিন্দু থেকে বিন্দুতম বিদ্বেষ পোষণ করা এবং উনাদেরকে বিন্দু থেকে বিন্দুতম অসম্মান করা কাট্টা কুফরী। এখন প্রশ্ন হচ্ছে উনাদেরকে অসম্মান করা যদি কুফরী হয় তাহলে শহীদ করা কি? তাছাড়া কালামুল্লাহ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে-

ومن يقتل مؤمنا متعمدا فجزاءه جهنم

অর্থ: ‘যে ব্যক্তি স্বেচ্ছায় কোনো মু’মিনকে কতল করে সে জাহান্নামী।’ (সূরা নিসা : আয়াত শরীফ ৯৩)

হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে-

عن حضرت عبد الله بن مسعود رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم سباب الـمسلم فسوق وقتاله كفر

অর্থ: “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, মুসলমানকে গালি দেয়া ফাসিকী আর কতল করা কুফরী।” (বুখারী ও মুসলিম শরীফ)

কাজেই, সাধারণ মু’মিন মুসলমানকে কতল করা যদি কুফরী ও জাহান্নামী হওয়ার কারণ হয় তাহলে আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার লখতে জিগার, সাইয়্যিদু শাবাবি আহলিল জান্নাহ হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালামসহ আহলে বাইত আলাইহিমুস সালাম উনাদের অন্যান্য সম্মানিত সদস্য ও সঙ্গী উনাদেরকে যারা শহীদ করেছে তাদের ফায়ছালা কি হবে? তা বলার অপেক্ষা রাখে না। মূলত তারা সকলেই কাট্টা কাফির, মালঊন ও চির জাহান্নামী।

কাজেই ইয়াযীদ লা’নাতুল্লাহি আলাইহি সেও কাট্টা কাফির, মালঊন ও চির জাহান্নামী। এটাই কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফ-এর ফায়ছালা। এর বিপরীত মত পোষণকারীরা বাতিল ও গোমরাহ।

 

ইয়াযীদের কুকর্মকে স্বীকৃতি না দেয়ার কারণেই ইয়াযীদ হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম উনাকে শহীদ করে

 

আমীরুল মু’মিনীন, খলীফাতুল মুসলিমীন হযরত মুআবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার বিছাল শরীফ-এর পর ইয়াযীদ খিলাফতের দায়িত্ব গ্রহণ করে। অর্থাৎ খলীফা হয়। খলীফা হওয়ার পর তার গুমরাহ ও বিভ্রান্ত পরামর্শদাতাদের ওয়াসওয়াসায় তার মনের মধ্যে সীমাহীন অহঙ্কার ও গর্ববোধের সৃষ্টি হলো। যার ফলে এমন কাজ-কর্ম শুরু করলো, যা মহান দ্বীনি শরীয়তের সম্পূর্ণ বিপরীত। প্রায় মানুষ-ই ক্ষমতার মোহে বিভোর হয়ে ধরাকে সরা জ্ঞান করে। যেমন ফিরআউন প্রথমে গরিব ছিলো, কিন্তু ভাগ্যক্রমে বাদশাহ হয়ে সিংহাসনে আরোহণ করার সাথে সাথে এমন অহঙ্কারী হয়ে বসলো যে, শেষ পর্যন্ত নিজেকে খোদা বলে ঘোষণা করলো। নাঊযুবিল্লাহ! সে বলতে লাগলো, ‘আমি তোমাদের সবচেয়ে বড় খোদা’। আমার পূজা, আরাধনা করো। যে আমার পূজা করবে সে-ই রক্ষা পাবে। আর যে আমার পূজা করতে অস্বীকার করবে, তাকে আমি খতম করবো। নাঊযুবিল্লাহ! একমাত্র এ কারণেই সে অনেক লোকের গর্দান দ্বিখ-িত করেছিলো। উনাদের অপরাধ ছিলো, উনারা তার পূজা করতেন না এবং তাকে মাবুদ মানতে অস্বীকার করেছিলেন। তদ্রƒপ ইয়াযীদও যখন গুমরাহ হয়ে গেলো তখন সে হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম, হযরত আব্দুল্লাহ বিন যুবাইর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত আব্দুল্লাহ বিন উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু প্রমুখ ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের থেকে বাইয়াত তলব করলো। একে তো উনারা ছিলেন ছাহাবী, বিশেষ সম্মানিত ব্যক্তি এবং উনারা বিশেষ মর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তিদের বংশধর ছিলেন। তাই উনারা কিভাবে ফাসিক-ফাজির ইয়াযীদের হাতে বাইয়াত গ্রহণ করতে পারেন? সুতরাং উনারা অস্বীকার করলেন এবং এটা উনাদের মর্যাদাগত সদাচরণই ছিলো। অস্বীকার করার পর হযরত আব্দুল্লাহ বিন উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত আব্দুল্লাহ বিন যুবাইর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু মদীনা শরীফ থেকে মক্কা শরীফ-এ চলে গেলেন।

হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম তিনি মদীনা শরীফ-এর গভর্নর ওয়ালীদের দাওয়াতে তার দরবারে তাশরীফ নিয়ে গেলেন। তার সঙ্গে আলোচনা করলেন। মদীনা শরীফ-এর গভর্নর বললো, ইয়াযীদ আপনার বাইয়াত তলব করেছেন। তিনি বললেন, ‘আমি ইয়াযীদের হাতে কি করে বাইয়াত গ্রহণ করতে পারি? ইয়াযীদ হলো ফাসিক-ফাজির, এ ধরনের অনুপযুক্ত লোকের হাতে আমি বাইয়াত গ্রহণ করতে পারি না। এটা কোনো অবস্থাতেই সম্ভব নয়। তিনি সুস্পষ্টভাবে বাইয়াত গ্রহণ অস্বীকার করলেন। এটা উনার মর্যাদাগত সদাচরণই ছিলো।

উল্লেখ্য তিনি যদি বাইয়াত গ্রহণ করতেন, তাহলে নিজের প্রাণ বাঁচতো, পরিবার-পরিজন বাঁচতো, হয়তো এমনও হতো যে, অগাধ সম্পত্তির মালিকও তিনি হয়ে যেতেন। কিন্তু ইসলামের আইন-কানুন ভঙ্গ হয়ে যেত এবং ক্বিয়ামত পর্যন্ত ফাসিক-ফাজিরের আনুগত্য বৈধ হয়ে যেত এবং তাদের কাছে হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম উনার আনুগত্য প্রধান দলীল হিসেবে পরিগণিত হতো। লোকেরা বলতো, হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম তিনি যখন ফাসিক-ফাজিরের আনুগত্য স্বীকার করেছেন, তাহলে নিশ্চয়ই তা জায়িয।

কিন্তু ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম তিনি অস্বীকারের মাধ্যমে বিশ্ববাসীর সামনে প্রমাণ করে দিলেন, হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম তিনি শত কষ্ট-যাতনা ভোগ করতে পারেন, অনেক বিপদ-আপদের মুকাবিলা করতে পারেন, এমনকি আপন পরিজনের সমস্ত লোকদের নির্দয়ভাবে শহীদ হওয়াটা অবলোকন করতে পারেন; নিজেও যালিমদের হাতে নির্মমভাবে শাহাদাত বরণ করতে পারেন, কিন্তু ইসলামের নিযাম বা বিধান ভঙ্গ হওয়া কিছুতেই সহ্য করতে পারেন না। নিজের নানাজান হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দ্বীন ধ্বংস হওয়াটা কিছুতেই মেনে নিতে পারেন না। হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম তিনি নিজের কাজ ও কর্মপন্থা দ্বারা তা প্রমাণ করেছেন এবং দুনিয়াবাসীকে এটা দেখিয়ে দিয়েছেন, আল্লাহ তায়ালা উনার মনোনীত ও খাছ বান্দাগণের এটাই শান যে, বাতিলের সামনে বুক ফুলিয়ে দাঁড়িয়ে যান এবং তীর তলোয়ারের সামনে বুক পেতে দেন, কিন্তু কখনো বাতিলের সামনে মাথা নত করেন না। হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম তিনি নিজের আমল দ্বারা উনার উচ্চ মর্যাদার পরিচয় দান করেছেন এবং জনগণের সামনে নিজের পদমর্যাদা তুলে ধরেছেন।

মূলত ইয়াযীদকে প্রত্যাখ্যান করার কারণেই উনার প্রতি বিদ্বেষবশত সে হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম উনাকেসহ আহলে বাইত আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে নির্মমভাবে শহীদ করেছে। অর্থাৎ কুলাঙ্গার, মালঊন ইয়াযীদের নির্দেশেই উনাদেরকে শহীদ করা হয়েছে।

 

ইয়াযীদের সম্মুখে শহীদ পরিবার

ও ইয়াযীদের ভ-ামী

 

ইয়াযীদী বাহিনী দামেস্কে পৌঁছলো এবং ইয়াযীদের নিকট গিয়ে সমস্ত ঘটনার বিবরণ দিলো। ইয়াযীদ সমস্ত ঘটনা শুনে বললো, ইবনে যিয়াদ খুবই বাড়াবাড়ি করেছে। আমি ওকে এতটুকু করতে বলিনি। এমনকি অনেক কিতাবে লিখা হয়েছে যে, ইবনে যিয়াদের প্রতি ইয়াযীদ লা’নত দিয়েছিলো। অর্থাৎ সে বলেছিলো, আল্লাহ তায়ালা তিনি ইবনে যিয়াদের উপর লা’নত বর্ষণ করুন। ইবনে যিয়াদ খুবই অত্যাচার করেছে, আমার উদ্দেশ্য তা ছিলো না। আমার উদ্দেশ্য ছিলো, হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম উনাকে যেন নজর বন্দী করে রাখা হয়, যাতে লোকেরা আমার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ না করে। কিন্তু এ ধরনের কথার দ্বারা ইয়াযীদ রেহাই পেতে পারে না। এগুলো ছিলো ইয়াযীদের লোক দেখানো মায়া কান্না মাত্র। অর্থাৎ সুস্পষ্ট মুনাফিকী। কারণ যা কিছু হয়েছে ইয়াযীদের ইঙ্গিতেই হয়েছে। সে ইবনে যিয়াদকে সর্বময় ক্ষমতা প্রদান করেছিলো যেন সে যা প্রয়োজন হয়, তা করে। যাতে তার বিরুদ্ধে গড়ে উঠা বিদ্রোহ দমন হয়ে যায়। ইয়াযীদ ভণিতাপূর্ণ দরদমাখা কথাবার্তা এজন্যে বলেছিলো, যাতে লোকজন তার বিরুদ্ধে চলে না যায় এবং লোকেরা যেন মনে করে, সে এ ধরনের আচরণ করার পক্ষপাতি ছিলো না। এসব কথার কারণে অনেক লোক ইয়াযীদকে ভালো বলে আখ্যায়িত করে তাদের রচিত কিতাবে লিখেছে যে, ‘ইয়াযীদ এ শাহাদাতে রাজি ছিলো না। সুতরাং ইয়াযীদ নয় বরং ইবনে যিয়াদই এ ঘটনার জন্য দায়ী।’ নাঊযুবিল্লাহ!

মূলত এ ঘটনার জন্য ইয়াযীদই দায়ী ছিলো। যার কারণে আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের নির্ভরযোগ্য কিতাব ‘কিতাবুল আক্বায়িদ’-এ লিখা হয়েছে, ইয়াযীদের উপর, ইবনে যিয়াদের উপর, আহলে বাইত উনাদের সদস্য উনাদের শহীদকারীদের উপর লা’নত বর্ষিত হোক। যদি ইয়াযীদ নির্দোষ ও নিষ্পাপ হতো তাহলে হযরত ইমাম নাসাফী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ‘কিতাবুল আক্বায়িদ’-এ এ ধরনের কথা কখনো লিখতেন না। আর ইয়াযীদের পরবর্তী পদক্ষেপে তার আসল রূপ আরো স্পষ্ট হয়ে উঠে। এতকিছু বলার পরও সে শহীদগণ উনাদের মস্তক মুবারকগুলোকে রাতে রাষ্ট্রীয় ভবনের শাহী দরজায় টাঙ্গানোর জন্য এবং দিনে দামেস্কের অলিতে-গলিতে ঘুরানোর নির্দেশ দিয়েছিলো। নির্দেশ মতো মস্তক মুবারকসমূহ দামেস্কের অলি-গলিতে ঘুরানো হয়েছিলো। নাঊযুবিল্লাহ!

নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিশিষ্ট ছাহাবী হযরত মিনহাল বিন আমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেছেন, খোদার কসম! আমি স্বচক্ষে দেখেছি যে, হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম উনার মস্তক মুবারক যখন বর্শার অগ্রভাগে উঠিয়ে দামেস্কের গলিতে এবং বাজারসমূহে ঘুরানো হচ্ছিলো, তখন মিছিলের আগে আগে এক ব্যক্তি কুরআন শরীফ-এর ‘সূরা কাহাফ’ তিলাওয়াত করছিলো। যখন সে এ আয়াতে কারীমা-

ام حسبت ان اصحاب الكهف والرقيم كانوا من ايتنا عجبا

অর্থ: “নিশ্চয়ই আছহাবে কাহাফ ও রক্বীম আমার নিদর্শনসমূহের মধ্যে এক আশ্চর্যজনক নিদর্শন ছিলো” (সূরা কাহাফ-৯) পাঠ করছিলো। তখন হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম উনার বিচ্ছিন্ন মস্তক মুবারক থেকে আওয়াজ বের হলো- اعجب من اصحاب الكهف قتلى وحملى অর্থাৎ ‘আছহাবে কাহাফ-এর ঘটনা থেকে আমার শাহাদাত এবং আমার মস্তক মুবারক নিয়ে ঘুরাফেরা আরো অধিক আশ্চর্যজনক।’ আল্লাহ তায়ালা তিনি ইরশাদ ফরমান- ولاتقولوا لـمن يقتل فى سبيل الله اموات “যারা আমার রাস্তায় শহীদ হয়েছে, উনাদেরকে মৃত বলো না।” (সূরা বাক্বারা-১৫৪) হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম উনার মস্তক মুবারক তা প্রমাণ করে দিলো।

 

হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস

সালাম উনার মুবারক শাহাদাতের ঘটনার সাথে যারা জড়িত ছিলো,

তারা সকলেই আল্লাহ পাক উনার লা’নতে পড়ে ধ্বংস হয়ে গেছে

 

হাদীছ শরীফ-এ উল্লেখ আছে, “একজন নবী আলাইহিস সালাম উনাকে শহীদ করার কারণে ৭০ হাজার লোককে কাফফারা আদায় করতে হয়েছে, একজন খলীফা উনাকে শহীদ করার কারণে ৩৫ হাজার লোককে কাফফারা আদায় করতে হয়েছে বা হবে। আর হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম উনাকে শহীদ করার কারণে ১ লক্ষ ৪০ হাজার লোককে কাফফারা আদায় করতে হবে বা হয়েছে।” তাই দেখা গেছে যে উনার শাহাদাতের ঘটনার সাথে যারা জড়িত ছিলো তারা প্রত্যেকেই কোনো না কোনো গযবে পড়ে ধ্বংস হয়ে গেছে।

হযরত ইমাম যাহাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেছেন, কারবালার শাহাদাতের ঘটনা অতঃপর মদীনা শরীফ আক্রমণের পর ইয়াযীদের বিরুদ্ধে প্রচ- গণবিদ্রোহ সংঘটিত হয়। তার আয়ুও ছিলো খুব কম। মাত্র তিন বছর কর্তৃত্ব করার পর সে ৪০ বছর বয়সে মারা যায়। বিভিন্ন ইতিহাস গ্রন্থ থেকে জানা যায় যে, হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম উনার শহীদকারীদের কেউই আল্লাহ পাক উনার গযব থেকে রক্ষা পায়নি। লা’নতে পড়ে কেউ নিহত হয়েছে এবং কেউ এমন কষ্টদায়ক অবস্থার শিকার হয়েছে যে, মৃত্যুও তার চেয়ে অনেক ভালো ছিলো।

হযরত ইমাম ইবনুল জাওযী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেছেন: “হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম উনার শহীদকারীদের সকলেই কোনো না কোনো প্রকারে দুনিয়াতেই শাস্তি পেয়েছে। কেউ নিহত হয়েছে, কেউ অন্ধ হয়ে গেছে। আর ক্ষমতাসীনরা অল্প সময়েই ক্ষমতাচ্যুত হয়েছে।”

বিশিষ্ট তাফসীরবিদ হযরত ইবনে কাছীর রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, “হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম উনার শাহাদাতের পর যে সকল দুর্যোগ সংঘটিত হওয়ার বর্ণনা ইতিহাসে পাওয়া যায়, তার বেশিরভাগই সত্য। উনার শহীদকারীদের প্রত্যেকেই কোনো না কোনোভাবে আযাব ভোগ করেছে। অনেকে কঠিন রোগে আক্রান্ত হয়েছে। অধিকাংশই উন্মাদ হয়ে মরেছে।”

আব্দুল মালেক ইবনে মারওয়ানের শাসনামলে যখন হযরত মুখতার সাকাফী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি কূফার শাসক হলেন, তখন তিনি হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম উনার শাহাদাতে অংশগ্রহণকারীদেরকে এবং উনার বিরুদ্ধে লেলিয়ে দেয়া বাহিনীতে যোগদানকারীদেরকে বেছে বেছে হত্যা করেন। এমনকি একদিনেই তিনি এ ধরনের দুইশ চল্লিশ ব্যক্তিকে হত্যা করেন। আমর বিন হাজ্জাজ হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম উনার শহীদকারী ছিলো। সে কূফা থেকে পালিয়েও বাঁচতে পারেনি। হযরত মুখতার সাকাফী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার লোকদের হাতে নিহত হয়েছে। হযরত মুখতার সাকাফী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার লোকেরা পাপিষ্ঠ সিমারকে হত্যা করে তার লাশ কুকুরকে খাইয়ে দিয়েছেন।

হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম উনার শহীদকারীদেরকে হযরত মুখতার সাকাফী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সম্মুখে আনা হতো এবং তিনি তাদেরকে অত্যন্ত কষ্টদায়ক পদ্ধতিতে হত্যা করার নির্দেশ দিতেন। কাউকে জ্যান্ত আগুনে পুড়িয়ে মারতেন। কাউকে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কেটে রেখে দিতেন এবং ছটফট করে করে মরে যেত। খাওলী বিন ইয়াযীদ হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম উনার মাথা মুবারক কাটার চেষ্টা করেছিলো। হযরত মুখতার সাকাফী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি তাকে হত্যা করে তার লাশ জ্বালিয়ে দিয়েছিলেন। ইবনে যিয়াদও হযরত মুখতার সাকাফী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সেনাপতি আল আশতারের হাতে নিহত হয় এবং তার মস্তকও হযরত মুখতার সাকাফী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার কাছে পাঠানো হয়। ইবনে যিয়াদের বাহিনীর অধিনায়ক আমর বিন সা’দ এবং তার ছেলেকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম উনার শহীদকারীদের যারা পালিয়ে প্রাণে বেঁচে গেছে, হযরত মুখতার সাকাফী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি তাদের বাড়িঘর ধ্বংস করে জ্বালিয়ে দেন। হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম উনার কণ্ঠনালীতে তীর নিক্ষেপকারী হাসিন বিন নুমাইরও তার হাতে নিহত হয়। ইবনে যিয়াদ ও আমর বিন সা’দ-এর মাথা কেটে হযরত মুখতার সাকাফী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম উনার ছেলে হযরত ইমাম যাইনুল আবিদীন আলাইহিস সালাম উনার কাছে প্রেরণ করলে হযরত ইমাম যাইনুল আবিদীন আলাইহিস সালাম সিজদায় চলে যান এবং তিনি বলেন, “আল্লাহ পাক উনার শোকর, যিনি আমার শত্রুদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নিয়েছেন।” মোটকথা, হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম উনার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ও ষড়যন্ত্রে অংশগ্রহণকারী প্রত্যেককেই আল্লাহ পাক তিনি ধ্বংস করে দেন।

 

ইয়াযীদ লা’নাতুল্লাহি আলাইহির কুকর্মের কারণে আমীরুল মু’মিনীন হযরত মুআবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে দোষারোপ করা কুফরী

 

এখানে একটা বিষয় মনে রাখা জরুরী যে, আল্লাহ পাক উনার রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আদরের দৌহিত্র হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালামসহ আহলে বাইত আলাইহিমুস সালাম উনাদের অন্যান্য সদস্য ও সঙ্গী উনাদের মর্মান্তিক শাহাদাতে মুসলিম উম্মাহর অন্তর ব্যথাতুর হবে তা চরম সত্য কথা এবং এটি ঈমান মজবুতির আলামতও বটে। কিন্তু এজন্য আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিশিষ্ট ছাহাবী হযরত মুআবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে দোষারোপ করা কস্মিনকালেও শরীয়তসম্মত হতে পারে না। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন-

ولاتزر وازرة وزر اخرى

অর্থ: “একজনের পাপের বোঝা অপরজন বহন করবে না।” (সূরা বনী ইসরাইল : আয়াত শরীফ ১৫)

এ আয়াত শরীফ-এর ব্যাখ্যায় উল্লেখ করা হয়েছে যে, “সন্তানের অপরাধের জন্য পিতাকে এবং পিতার অপরাধের জন্য সন্তানকে দায়ী করা বৈধ নয়।” কাবিলের অপরাধের জন্য হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনাকে, কেনানের  অপরাধের জন্য হযরত নূহ আলাইহিস সালাম উনাকে দায়ী করা যেমন বৈধ নয়, তেমনি ইয়াযীদের অপরাধের জন্য হযরত মুআবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে দায়ী করাও বৈধ নয়। বরং তা সম্পূর্ণ নাজায়িয, হারাম ও কুফরীর অন্তর্ভুক্ত। কারণ তিনি ছিলেন একজন জলীলুল ক্বদর ছাহাবী। আর কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফ-এর দৃষ্টিতে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের সমালোচনা করা, দোষারোপ করা ও বিদ্বেষ পোষণ করা কুফরী।

এ প্রসঙ্গে আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন-

ليغيظبهم اللكفار

অর্থ: “কাফিরেরাই ছাহাবায়ে কিরামগণ উনাদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে থাকে।” (সূরা ফাতহ : আয়াত শরীফ ২৯)

হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত রয়েছে-

عن حضرت مالك بن انس رحمة الله عليه قال من غاظ اصحاب محمد صلى الله عليه وسلم فهو كافر

অর্থ: “হযরত মালিক ইবনে আনাস রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বর্ণনা করেন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছাহাবায়ে কিরাম উনাদের প্রতি যে ব্যক্তি বিদ্বেষ পোষণ করে, সে কাফির।” (নাসীমুর রিয়াদ্ব)

হাদীছ শরীফ-এ আরো বর্ণিত রয়েছে-

عن حضرت ابى سعيد الخدرى رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه و سلم ¬¬¬ لاتسبوا اصحابى فلو ان احدكم انفق مثل احد ذهبا ما بلغ مد احدهم ولا نصيفه.

অর্থ: “হযরত আবূ সায়ীদ খুদরী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, তোমরা আমার ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে গাল মন্দ বা দোষারোপ করো না। যদি তোমাদের কেউ উহুদ পাহাড় পরিমাণ স্বর্ণ আল্লাহ পাক উনার রাস্তায় দান করো, তবুও হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাদের এক মুদ বা অর্ধ মুদ গম দান করার ফযীলতের সমপরিমাণ ফযীলত অর্জন করতে পারবে না।” (বুখারী শরীফ)

হাদীছ শরীফ-এ আরো বর্ণিত রয়েছে-

عن حضرت عويمر بن ساعدة رضى الله تعالى عنه انه صلى الله عليه و سلم قال ان الله اختارنى واختار لى اصحابا فجعل لى منهم وزراء وانصارا واصهارا فمن سبهم فعليه لعنة الله والـملئكة والناس اجمعين ولايقبل الله منهم صرفا وعدلا

অর্থ: হযরত উয়াইমির ইবনে সায়িদাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত রয়েছে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, “নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক তিনি আমাকে মনোনীত করেছেন এবং আমার ছাহাবায়ে কিরাম উনাদেরকে মনোনীত করেছেন এবং উনাদের মধ্য থেকে আমার কার্য সম্পাদনকারী, খিদমতকারী ও বৈবাহিক সূত্রের আত্মীয়বর্গ নির্ধারণ করেছেন। অতএব, যে ব্যক্তি উনাদেরকে গালি দিবে বা দোষারোপ করবে, তার প্রতি আল্লাহ পাক উনার, ফেরেশতা ও মানুষ সকলেরই লা’নত এবং তার কোনো ফরয ও নফল ইবাদত আল্লাহ পাক তিনি কবুল করবেন না।” (তবারানী, হাকিম)

যারা সাইয়্যিদুনা হযরত মুআবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে দোষারোপ করে তারা মূলত উনার সুমহান মর্যাদা সম্পর্কে নেহায়েতই জাহিল বা অজ্ঞ।

হযরত মুআবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের মধ্যে একজন বিশেষ শ্রেণীর ছাহাবী, যাঁকে উলুল আযম বা জলীলুল ক্বদর ছাহাবী বলা হয়। তিনি ছিলেন আমীরুল মু’মিনীন, খলীফাতুল মুসলিমীন, কাতিবীনে ওহীর সদস্য, হাদীছ শরীফ-এর রাবী, ফক্বীহ ইত্যাদি মর্যাদার অধিকারী। উনার ইলমের পূর্ণতা, হিদায়েতের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকা, উনার দ্বারা লোকদের হিদায়েত লাভ, কিতাব শিক্ষাদান এবং জাহান্নাম থেকে নিষ্কৃতি পাওয়ার ব্যাপারে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আল্লাহ তায়ালা উনার নিকট দু’আ করেছেন।

যেমন হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত রয়েছে-

عن حضرت ام حرام رضى الله تعالى عنها انها سمعت النبى صلى الله عليه وسلم يقول اول جيش من امتى يغزون البحر قد اوجبوا

অর্থ: হযরত উম্মু হারাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা উনার থেকে বর্ণিত। তিনি হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে বলতে শুনেছেন। তিনি বলেন, “আমার উম্মতের প্রথম যে দল সমুদ্রের যুদ্ধে অংশগ্রহণ করবে তাদের জন্য জান্নাত ওয়াজিব।” (বুখারী শরীফ)

হযরত ইমাম তাবারী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, “হযরত মুআবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি ২৮ হিজরীতে সর্বপ্রথম সমুদ্র যুদ্ধের মাধ্যমে কাবরাসের উপর আক্রমণ করেন এবং কাবরাস তিনিই বিজয় করেন।”

হযরত মুআবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার মর্যাদা-মর্তবার মধ্যে অন্যতম মর্যাদা হলো- তিনি ছিলেন একজন আদিল বা ইনসাফগার খলীফা। উনার ন্যায় বিচার ও ইনসাফ সম্পর্কে কিতাবে উল্লেখ করা হয় যে, জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত ছাহাবী হযরত সা’দ ইবনে আবী ওয়াক্কাছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন-

ما رايت احدا بعد حضرت عثمان رضى الله تعالى عنه اقضى بحق من صاحب هذا الباب

“আমার দৃষ্টিতে হযরত উছমান যুন নূরাইন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এরপর হযরত মুআবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার চেয়ে অধিক ন্যায় বিচারক কেউ নেই।”

এক ব্যক্তি বিশিষ্ট ফক্বীহ হযরত মুয়াফা ইবনে ইমরান রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে জিজ্ঞেস করলো, “ন্যায় বিচারের দিক দিয়ে হযরত মুআবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ও হযরত উমর ইবনে আব্দুল আযীয রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাদের মধ্যে কে শ্রেষ্ঠ?” একথা শুনে তিনি রাগান্বিত হয়ে বললেন, “হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ উনাদের সাথে কোনো প্রকার ক্বিয়াস করা যাবে না। হযরত মুআবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি তো হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছাহাবী, কাতিবে ওহী ও আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ‘আমীন’ (আমানতদার)।”  আমীরুল মু’মিনীন ফিল হাদীছ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মুবারক রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে জিজ্ঞাসা করা হলো যে, “হযরত মুআবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি শ্রেষ্ঠ, না হযরত উমর ইবনে আব্দুল আযীয রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি শ্রেষ্ঠ?” জবাবে তিনি বলেন, “আল্লাহ পাক উনার কসম! হযরত মুআবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি যখন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে ঘোড়ায় চড়ে জিহাদে যেতেন, তখন ঘোড়ার নাকে যে ধুলাবালিগুলো প্রবেশ করতো, সে ধুলাবালিগুলোও হযরত উমর ইবনে আব্দুল আযীয রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বহুগুণে শ্রেষ্ঠ।”

সুতরাং এত সব মর্যাদা ও মর্তবার পরও যারা হযরত মুআবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে, উনাকে নাক্বিছ বলে গালি দেয়, তাদের জন্যে হযরত ইমাম শিহাবুদ্দীন খাফফাযী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার কথাই অধিক প্রযোজ্য। তিনি বলেন-

من يكون يطعن فى حضرت معاوية رضى الله تعالى عنه فذلك كلب من كلاب الحاوية

“যে ব্যক্তি হযরত মুআবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে উনাকে গালি দেয়, নাক্বিছ বলে, সমালোচনা করে সে হাবিয়া দোযখের কুকুরসমূহের মধ্য হতে একটি কুকুর।” (নাসীমুর রিয়াদ্ব)

উপরোক্ত সংক্ষিপ্ত আলোচনা থেকে স্পষ্ট প্রমাণিত হলো যে, হযরত মুআবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি শুধু ছাহাবীই ছিলেন না বরং উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন, জলীলুল ক্বদর ছাহাবী ও খলীফা ছিলেন। সুতরাং হযরত মুআবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু আনহু তিনিসহ সকল ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের সম্পর্কে সাবধানে কথা বলতে হবে। মূলত উনাদের সকলের প্রতিই সুধারণা পোষণ করতে হবে, মুহব্বত করতে হবে এবং উনাদেরকে অনুসরণ-অনুকরণও করতে হবে। কেননা উনারা হলেন দ্বীনের ইমাম এবং নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আদর্শের বাস্তব প্রতিফলন।

অনেকে ইয়াযীদ লা’নাতুল্লাহি আলাইহিকে খলীফা নিযুক্ত করার কারণে বিশিষ্ট ছাহাবী হযরত মুআবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে দোষারোপ করে বলে যে, তিনি খিলাফতের পরিবর্তে রাজতন্ত্র ও রাজবংশের প্রতিষ্ঠা করে গেছেন। নাঊযুবিল্লাহ!

মূলত যারা হযরত মুআবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে রাজতন্ত্র ও রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতারূপে চিহ্নিত করতে চায় যারা প্রকৃতপক্ষে তারা চরম শ্রেণীর জাহিল। কারণ রাজবংশ বা রাজতন্ত্র ইসলামের অনেক পূর্বকাল থেকেই চলে আসছে। যা আমরা হাদীছ শরীফ-এ দেখতে পাই যে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রোম, পারস্য, আবিসিনিয়া, চীন, মালাবার, গুজরাট ইত্যাদির সম্রাট বা রাজাদের নিকট ইসলাম গ্রহণের দাওয়াত দিয়ে দূত মারফত পত্র পাঠিয়েছেন।

উল্লেখ্য, ‘রাজতন্ত্র’ অর্থ হলো- ‘রাজ’ অর্থ ‘রাজা’, আর ‘তন্ত্র’ অর্থ ‘নিয়ম-নীতি’। যিনি রাজা হন সাধারণত তিনি তার নিজস্ব মনগড়া নিয়ম-নীতিই তার কর্তৃত্বাধীন এলাকায় প্রণয়ন বা বাস্তবায়ন করে থাকেন, তাকেই রাজতন্ত্র বলে। আর ‘রাজবংশ’ বলতে ‘রাজার বংশকে‘ বুঝানো হয়।

অথচ হযরত মুআবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি নিজেও রাজা ছিলেন না এবং অন্য কাউকেও রাজা মনোনীত করেননি। বরং তিনি স্বয়ং নিজের, উনার পরিবার, উনার সমাজ এবং উনার কর্তৃত্বাধীন সমগ্র এলাকার উপর কুরআন শরীফ-সুন্নাহ শরীফ-এর বিধানই জারি বা বাস্তবায়ন করেছিলেন, যাকে ‘খিলাফত আলা মিনহাজিন নুবুওওয়াহ’ বলা হয়।

মূলত উনার খিলাফত পূর্ববর্তী খলীফাগণেরই অনুরূপ ছিলো এবং উনার খলীফা হওয়ার বিষয়টি ছিলো স্বয়ং আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ভবিষ্যদ্বাণীর ফসল।

হযরত মুআবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি নিজেই বর্ণনা করেন, আমি একদা আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমতে ছিলাম। তিনি আমাকে উদ্দেশ্য করে বললেন, “হে মুআবিয়া! কখনো যদি আপনার হাতে জনগণের কর্তৃত্বভার আসে তখন তাদের প্রতি ইনসাফ করবেন।” হযরত মুআবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, “আমি তখনই নিশ্চিত হলাম যে, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উক্ত কথা বাস্তবায়িত হবেই।”

আর সত্যিই তিনি প্রথমে দু’খলীফা হযরত উমর ফারূক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং হযরত উছমান যুন নূরাইন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার খিলাফতকালে আমীরে শু’বা বা প্রাদেশিক গভর্নর হিসেবে নিযুক্ত হন। অতঃপর চতুর্থ খলীফা হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার শাহাদাতের পর প্রায় ছয় মাস উনার জ্যেষ্ঠ পুত্র হযরত ইমাম হাসান আলাইহিস সালাম খিলাফত পরিচালনা করেন। অতঃপর তিনি ষষ্ঠ খলীফা হিসেবে হযরত মুআবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে এই শর্তে খিলাফত দেন বা মনোনীত করেন যে, “আপনার পর আমি অথবা আমার ভাই হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম অর্থাৎ দু’জনের একজন হায়াতে থাকলে আমাদেরকে খিলাফত ফিরিয়ে দিতে হবে।”

অতঃপর ইমাম হাসান আলাইহিস সালাম উনার শাহাদাতের সময় তিনি উনার ছোট ভাই হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম উনাকে নছীহত করেন যে, “দেখুন, খিলাফতের জন্যেই আমাদের পিতা শহীদ হয়েছেন, আমিও শহীদ হচ্ছি, সুতরাং আপনি আর খিলাফতের জিম্মাদারী নিবেন না। আপনি দ্বীনি তা’লীম-তালক্বীনের কাজে নিয়োজিত থাকুন। হযরত মুআবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি অন্য যাকে ভালো মনে করেন তাকে খিলাফতের দায়িত্ব অর্পণ করে যাবেন।”

হযরত ইমাম হাসান আলাইহিস সালাম প্রদত্ত শর্ত মুতাবিক হযরত মুআবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু খলীফা মনোনীত হয়ে সঠিকভাবে খিলাফত পরিচালনা করেন এবং পরবর্তীতে খিলাফত পরিচালনার যোগ্য ব্যক্তি হিসেবে উনার ছেলেকে খলীফা মনোনীত করেন।

অতএব, এটা অবশ্যই সত্য যে, হযরত মুআবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার ছেলে ইয়াযীদকে যখন খলীফা নিযুক্ত করেন তখন ইয়াযীদ ভালো ছিলো। কিন্তু মুনাফিকদের দ্বারা প্ররোচিত হয়ে পরবর্তীতে ইয়াযীদ গুমরাহ হয়ে যায়।

অতএব, কেউ যদি ছেলের বদ আমলের কারণে পিতাকে দোষারোপ করে অর্থাৎ ইয়াযীদের জন্য বিশিষ্ট ছাহাবী হযরত মুআবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে দোষারোপ করে তবে তা সম্পূর্ণরূপে কুফরী হবে।

এ প্রসঙ্গে আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন-

ولاتزر وازرة وزر اخرى

“একজনের গুনাহর বোঝা অন্যজন বহন করবে না।” (সূরা বনী ইসরাইল : আয়াত শরীফ ১৫)

এখন পিতার পর ছেলে খলীফা হলে যদি রাজতন্ত্র ও রাজবংশ প্রতিষ্ঠাকারী হয় তাহলে তো দেখা যায় আল্লাহ পাক তিনিই রাজতন্ত্র ও রাজবংশের প্রতিষ্ঠাকারী হয়ে যান। নাঊযুবিল্লাহ!

কারণ আল্লাহ পাক উনার নবী ও রসূল হযরত দাউদ আলাইহিস সালাম যিনি ছিলেন খলীফাতুল্লাহ অর্থাৎ আল্লাহ পাক উনার খলীফা এবং উনার বিদায়ের পর উনার ছেলে হযরত সুলাইমান আলাইহিস সালাম উনাকে আল্লাহ পাক তিনি সারা পৃথিবীর খলীফা নিযুক্ত করেন।

এছাড়া হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার পর উনার ছেলে হযরত ইমাম হাসান আলাইহিস সালাম তিনিও তো খলীফা নিযুক্ত হয়েছিলেন। তাই বলে কি হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে রাজতন্ত্র ও রাজবংশ জারি হয়েছে? নাঊযুবিল্লাহ!

মূলত আল্লাহ পাক, হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম, হযরত আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম কেউই রাজতন্ত্র ও রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা নন। যদি কেউ উল্লিখিত কাউকে রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা বলে তবে সেটা হবে উনার প্রতি প্রকাশ্য তোহমত এবং কুফরীর শামিল।

অতএব সুস্পষ্টরূপে প্রমাণিত হলো যে, হযরত মুআবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি রাজতন্ত্র কিংবা রাজবংশ কোনোটিরই প্রতিষ্ঠাতা নন বা ছিলেন না।

 

কুলাঙ্গার ইয়াযীদ লা’নাতুল্লাহি আলাইহি সম্পর্কে শরীয়তের দলীলভিত্তিক ফায়ছালা

 

পাপিষ্ঠ ইয়াযীদ লা’নাতুল্লাহি আলাইহি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আহলে বাইত আলাইহিমুস সালাম অর্থাৎ পবিত্র বংশের অবমাননা করেছে। উনাদের নির্দয়ভাবে উৎপীড়ন করেছে। উনাদেরকে শহীদ করেছে। নাঊযুবিল্লাহ! এর চেয়ে বড় কুফরী আর কি হতে পারে?

সুতরাং যে বা যারা হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বংশের প্রতি এরূপ অবমাননাকর আচরণ করবে তাদের প্রতি আল্লাহ পাক এবং উনার সকল নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের পক্ষ হতে লা’নত করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে বিশিষ্ট তাফসীরকার হযরত আল্লামা আলূসী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সুপ্রসিদ্ধ তাফসীরগ্রন্থ ‘তাফসীরে রূহুল মা’আনীতে’ হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন-

وفى الحديث ستة لعنهم الله وكل نبى مجاب الدعوة المحرف لكتاب الله المكذب لقدر الله المتسلط بالجروت ليعز من اذل الله ويذل من اعز الله والمستحل من عترتى والتارك لسنتى.

অর্থ: হাদীছ শরীফ-এ ছয় ব্যক্তির বর্ণনা এসেছে যাদের প্রতি আল্লাহ পাক এবং সকল নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম যাঁদের দোয়া আল্লাহ পাক উনার নিকট মকবূল উনারা লা’নত করেছেন। এক. আল্লাহ পাক উনার কিতাব পরিবর্তনকারীর প্রতি। দুই. আল্লাহ পাক উনার তাকদীরে অবিশ্বাসীর প্রতি। তিন. বল প্রয়োগে ক্ষমতা দখলকারীর প্রতি। চার. ওই ব্যক্তির প্রতি আল্লাহ পাক যাকে অপদস্ত করেন সে তাকে সম্মান দান করে, আর আল্লাহ পাক যাকে সম্মান দিয়েছেন তাকে সে অপদস্ত করে। পাঁচ. আমার বংশধরদের অবমাননাকারীর প্রতি। ছয়. আমার সুন্নত তরককারীর প্রতি।

এ হাদীছ শরীফ-এর আলোকে ইয়াযীদের প্রতি আল্লাহ পাক এবং উনার সকল নবী-রসূল আলাইমিুস সালাম উনাদের তরফ হতে লা’নত। কারণ সে হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বংশের মানহানি করেছে। আর সে গুমরাহ হওয়ার পর বল প্রয়োগে ক্ষমতা দখল করে রেখেছিলো অথচ মুসলমানগণ তাকে চাচ্ছিলো না। তার যামানায় মদীনা শরীফ লুণ্ঠনকারী হুসাইন বিন নুমাইর, ঘাতক উবায়দুল্লাহ ইবনে যিয়াদ, শিমার ইবনে জুল জাউশান, উমর ইবনু সা’য়াদের ন্যায় যালিমরা সম্মান পায়। আর হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম এবং হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত আহলে বাইত আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে সম্মান করা হয়নি। কাজেই, তার যামানায় আল্লাহ পাক যাঁদেরকে সম্মানিত করেছেন উনারা সম্মানিত ছিলেন না। আর লাঞ্ছিতরা ছিলো সম্মানিত। এমন ব্যক্তির প্রতি আল্লাহ পাক ও উনার নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনারা লা’নত করেছেন। গুমরাহ হওয়ার পর ইয়াযীদ লা’নাতুল্লাহি আলাইহি সে সুন্নতের পাবন্দী ছেড়ে দিয়ে সর্বপ্রকার হারাম যেমন- শরাব পান, নাচ-গান, বাঁদর খেলা, কবুতরবাজি ইত্যাদি কুকর্মে লিপ্ত হয়েছিলো। তা ঐতিহাসিক সত্য বলে প্রমাণিত। কাজেই সুন্নত অবজ্ঞা এবং তরককারীরূপেও ইয়াযীদ লা’নাতুল্লাহি আলাইহি তথা লা’নতের উপযুক্ত পাত্র।

হযরত আল্লামা হাইছামী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ‘সাওয়ায়িক’ গ্রন্থে এবং হযরত আল্লামা বারজাঞ্জী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ‘ইশাআ’ গ্রন্থে হযরত ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ক্বওল মুবারক-এ অভিমত বর্ণনা করেছেন। হযরত ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ইয়াযীদের প্রতি লা’নত করাকে বৈধ বলে কুরআন শরীফ-এর আয়াতে কারীমা দ্বারা প্রমাণ পেশ  করেছেন।

এ প্রসঙ্গে বর্ণিত রয়েছে-

انا الامام احمد سأله ولد عبد الله عن لعن يزيد قال كيف لا يلعن من لعنه الله تعالى فى كتابه؟ فقال عبد الله قد قرأت كتاب الله عز وجل فلم اجد فيه لعن يزيد فقال الامام ان الله تعالى يقول فهل عسيتم ان توليتم ان تفسدو فى الارض وتقطعوا ارحامكم اولئك الذين لعنهم الله. واى فساد وقطيعة اشد مما فعله يزيد؟

অর্থ: “হযরত ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ছেলে হযরত আব্দুল্লাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার পিতাকে ইয়াযীদের প্রতি লা’নত করা প্রসঙ্গে প্রশ্ন করেন। তিনি ছেলেকে বলেন, আল্লাহ পাক যাকে উনার কিতাব (কুরআন শরীফ)-এ লা’নত করেছেন তাকে লা’নত করা হবে না কেন? হযরত আব্দুল্লাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, আমি আল্লাহ পাক উনার কিতাব (কুরআন শরীফ) পাঠ করেছি। কুরআন শরীফ-এ ইয়াযীদের প্রতি লা’নতের সন্ধান পাইনি। হযরত ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার ছেলেকে বললেন, আল্লাহ পাক তিনি বলেন, ‘হতে পারে তোমরা ফিরে যাবে আর পৃথিবীতে উপদ্রব সৃষ্টি করবে এবং তোমাদের রেহমি বা জঠর সম্পর্ক ছিন্ন করবে। এরূপ লোকদের প্রতি আল্লাহ পাক তিনি লা’নত করেন।’ কাজেই, ইয়াযীদ লা’নাতুল্লাহি আলাইহি যা করেছে তার চেয়ে অধিক উপদ্রব ও রেহমি সম্পর্ক ছিন্ন করা আর কি হতে পারে?” (তাফসীরে রূহুল মাআনী, জিলদ ২৫, পৃষ্ঠা ৭২)

হযরত ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি সূরা মুহম্মদ শরীফ-এ উল্লিখিত ২২ নম্বর আয়াত শরীফ দ্বারা প্রমাণ করেন যে, ইয়াযীদের প্রতি লা’নত করা বৈধ। কারণ ইয়াযীদ লা’নাতুল্লাহি আলাইহি পৃথিবীতে উপদ্রব করেছে। কাতয়ি রেহমী করেছে। আত্মীয়তার মর্যাদা রাখেনি। হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আহলে বাইত উনাদের চেয়ে আপনজন আর কে হবে? উনাদের সাথে সে চরম দুর্ব্যবহার করেছে। রেহমি বা জঠর সম্পর্ক অপেক্ষা হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আহলে বাইত উনাদের সম্পর্ক অতি ঘনিষ্ঠ, অতি আপন। যা ইয়াযীদের দ্বারা বিচ্ছিন্ন হয়েছে। কাজেই, তার প্রতি লা’নত করা বৈধ।

হযরত আল্লামা আলূসী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি তাফসীরে রূহুল মাআনীতে ইয়াযীদ লা’নাতুল্লাহি আলাইহি কাফির ছিলো বলে এক জামায়াত উলামায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের অভিমত বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন-

وقد صرح بكفره وصرح بلعنه جماعة من العلماء منهم الحافظ ناصر السنة ابن الجوزى وسبقه القاضى ابو يعلى وقال العلامة التفتازانى لانتوقف فى شانه بل فى ايمانه لعنة الله تعالى عليه وعلى انصاره واعوانه وممن صرح بلعنه الجلال السيوطى عليه الرحمة.

অর্থ: ইয়াযীদের কাফির হওয়া সম্পর্কে এবং তার প্রতি লা’নত করার বৈধতার বিষয়ে এক জামায়াত উলামা পরিষ্কার মন্তব্য করেছেন। উনারা হলেন হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সুন্নতের মদদগার হযরত ইবনুল জাওযী রহমতুল্লাহি আলাইহি আর উনার পূর্বে হযরত ক্বাযী আবূ ইয়া’লা রহমতুল্লাহি আলাইহি। আর হযরত আল্লামা তাফতাযানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, আমরা ইয়াযীদের ব্যাপারে দ্বিধা করবো না। এমনকি তার ঈমানের ব্যাপারেও না। তার প্রতি, তার সাহায্যকারীদের প্রতি এবং শুভানুধ্যায়ীদের প্রতি আল্লাহ পাক উনার লা’নত। যাঁরা সুস্পষ্ট ভাষায় ইয়াযীদ লা’নাতুল্লাহি আলাইহিকে লা’নত করেছেন উনাদের মধ্যে হযরত আল্লামা জালালুদ্দীন সুয়ূতী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনিও রয়েছেন।

সুনির্দিষ্টভাবে ইয়াযীদের প্রতি লা’নত করা বৈধ হওয়ার প্রশ্নে হযরত আল্লামা আলূসী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার মত প্রদান করে বলেন-

على هذا القول (اى على جواز القول بلعن معين) لانوقف فى لعن يزيد بكثرة اوصافه الخبيثة وارتكابه الكبائر فى جميع ايام تكليفه ويكفى ما فعله ايام استلائه باهل المدينة ومكة فقد روى الطبرانى بسند حسن: اللهم من ظلم اهل المدينة واخافهم فاخفه عليه لعنة الله والملائكة والناس اجمعين لايقبل منه صرف ولا عدل.

والطامة الكبرى ما فعله باهل البيت ورضاه بقتل الحسين على جده وعليه الصلوة والسلام واستبشارة بذالك واهانته اهل بيته مما تواتر معناه وان كانت تفاصيله احدا.

অর্থ: “এ কথার ভিত্তিতে (অর্থাৎ সুনির্দিষ্টভাবে অভিসম্পাত দানের বৈধতার ভিত্তিতে) ইয়াযীদ লা’নাতুল্লাহি আলাইহিকে লা’নত করার প্রশ্নে আমরা দ্বিধা করবো না। সে বহুবিধ নিকৃষ্টমানের দোষ করেছে। তার জবর দখলের দিনগুলোতে সে মদীনা শরীফ ও মক্কা শরীফ-এর অধিবাসীদের সাথে যে আচরণ করেছে তার ব্যাপারে বিচার করতে গেলে তাই যথেষ্ট। প্রসঙ্গত হযরত ইমাম তিবরানী রহমতুল্লাহি আলাইহি হাসান সূত্রে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, ‘হে বারে ইলাহী! যে মদীনাবাসীদের প্রতি যুলুম করবে, উনাদের সন্ত্রস্ত করবে, আপনি তাকেও ভীতির সম্মুখীন করুন।’ এরূপ ব্যক্তির প্রতি আল্লাহ পাক, ফেরেশতাকুল, মানবকুলসহ সকলের অভিশাপ (লা’নত) বর্ষিত হোক। এরূপ ব্যক্তির কোনো ফরয ও নফল ইবাদত কবুল করা হবেনা।

আর মহাপ্রলয়ের ন্যায় ইয়াযীদ লা’নাতুল্লাহি আলাইহি হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আহলে বাইত (পরিবারবর্গ)উনাদের সাথে যা করেছে আর হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম উনার শাহাদাতকে যেভাবে সানন্দে সে গ্রহণ করেছে। নাঊযুবিল্লাহ! হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম উনার নানা ও উনাদের উভয়ের প্রতি ছলাত ও সালাম ও উত্তম বিনিময় নিবেদন করি এবং হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম উনার পরিবারবর্গের সাথে সে যেসব মানহানিকর ব্যবহার করেছে, তার বিস্তারিত বিবরণ সূত্রগত একক বর্ণনায় বর্ণিত হলেও অর্থ ও তথ্য দৃষ্টে (মুতাওয়াতির) ব্যাপক সূত্রে বর্ণিত।” (তাফসীরে রূহুল মাআনী, জিলদ ২৫, পৃষ্ঠা ৭২)

এখানে হযরত আল্লামা আলূসী রহমতুল্লাহি আলাইহি ইয়াযীদের আপত্তিকর কার্যকলাপকে ব্যাপক সূত্রে বর্ণিত বলে উল্লেখ করেছেন। যার উপর নির্ভর করে ইয়াযীদের প্রতি লা’নত করা বৈধ বলেছেন। ইয়াযীদ লা’নাতুল্লাহি আলাইহি এমন কর্ম করেছে যার কারণে সে হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দ্বারা অভিশপ্ত মালঊন সাব্যস্ত হয়েছে। সে মদীনা শরীফ ও মক্কা শরীফ-এর অধিবাসী উনাদেরকে নির্যাতন করেছে। পবিত্র কা’বা ঘর আক্রমণ করেছে। মদীনা শরীফ-এ নারী নির্যাতন করিয়েছে। তিনদিন যাবৎ অবাধে হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে যাওয়ার লিখিত ফরমান জারি করেছে। মদীনা শরীফ-এর অধিবাসী উনাদেরকে শহীদ করিয়েছে। নাঊযুবিল্লাহ!

সুন্নী আক্বীদার কিতাব আক্বাঈদে নাসাফীতে বলা হয়েছে যে, হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম উনাকে যে শহীদ করেছে, যে শহীদ করার হুকুম জারি করেছে, উনাকে শহীদ করা জায়িয বলে যে মত প্রকাশ করেছে, এ বিষয়ে যে রাযি রয়েছে, তাদের সকলের প্রতি লা’নত ও অভিসম্পাত করার বৈধতার প্রতি সকল আলিম একমত। আর ইয়াযীদ লা’নাতুল্লাহি আলাইহি হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম উনাকে শহীদ করার নির্দেশ দেয়। এ কর্মে সম্মতি জানায়। উনার শহীদ হওয়ার খবরে সন্তোষ প্রকাশ করে। নাঊযুবিল্লাহ! নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র আহলে বাইত আলাইহিমুস সালাম উনাদের মানহানি করে। নাঊযুবিল্লাহ! এসব কথা ব্যাপক বর্ণনা সূত্রে বর্ণিত। কাজেই ইয়াযীদের প্রতি অভিশাপ দেয়ার বৈধতার প্রশ্নে দ্বিধান্বিত থাকার প্রয়োজন নেই বলে মত প্রকাশ করে আক্বাঈদে নাসাফীতে বর্ণিত রয়েছে-

… وبعضهم اطلق اللعن عليه لـما انه كفر حين امر يقتل الحسين رضى الله تعالى عنه واتفقوا على جواز اللعن على من قتله او امر به او اجازه ورضى به. والحق ان رضا يزيد يقتل حضرت الحسين عليه السلام واستبشاره بذلك واهانة اهل بيت النبى صلى الله عليه وسلم مما تواتر معناه ان كان تفاصيله احادا فنحن لانتوقف فى شانه بل فى ايمانه لعنة الله عليه وعلى انصاره واعوانه.

অর্থ: কতক আলিম ইয়াযীদের প্রতি লা’নত বর্ষণ করেছেন। কারণ ইয়াযীদ লা’নাতুল্লাহি আলাইহি হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম উনাকে শহীদ করার নির্দেশ দিয়ে কাফিরের কর্ম করে। আর যে হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম উনাকে শহীদ করেছে, যে উনাকে শহীদ করার নির্দেশ জারি করেছে, যে উনাকে শহীদ করাকে বৈধ বলে মত পোষণ করেছে, যে এসব কা-ে সন্তোষ প্রকাশ করেছে- এরূপ লোকজনের প্রতি লা’নত ও অভিসম্পাত দেয়াকে সকলেই বৈধ বলেছেন।

আর সত্য কথা হলো, ইয়াযীদ লা’নাতুল্লাহি আলাইহি হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম উনাকে শহীদ করার ব্যাপারে রাযি ছিলো। উনার শাহাদাত বরণের খবরে সে উল্লসিত হয়। সে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আহলে বাইত আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে মানহানি করে আনন্দিত হয়। নাঊযুবিল্লাহ! এ তথ্যাদি নির্ভুল বর্ণনা পরম্পরায় ব্যাপকভাবে সমর্থিত যদিও সূত্রগত একক বর্ণনা দ্বারা বর্ণিত হয়। কাজেই, আমরা (আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত) ইয়াযীদের ব্যাপারে এতটুকু দ্বিধা করবো না, এমনকি তার ঈমানের প্রশ্নেও না। ইয়াযীদের প্রতি লা’নত ও অভিসম্পাত, ইয়াযীদের সাহায্যকারীদের প্রতি লা’নত ও অভিসম্পাত। ইয়াযীদের পক্ষ সমর্থনকারীদের প্রতি লা’নত ও অভিসম্পাত। (শরহে আক্বাঈদে নাসাফী, পৃষ্ঠা-১৬২)

হযরত আল্লামা আলূসী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি রূহুল মাআনী তাফসীর গ্রন্থে ইয়াযীদ লা’নাতুল্লাহি আলাইহি প্রসঙ্গে আরো বলেন-

انا اقول: الذى يغلب على ظنى ان الخبيث لم يكن مصدقا برسالة النبى صلى الله تعالى عليه وسلم. وان مجموع ما فعل مع اهل حرم الله تعالى و اهل حرم نبيه عليه لالاة والسلام وعترته الطيبين الطاهرين فى الحياة وبعد الممات وما صدر منه من المخازى ليس باضعف دلالة على عدم تصديقه من القاء ورقة المصحف الشريف فى قذر. ولا اظن ان امره كان خافيا على اجلة المسلمين اذ ذالك ولكن كانوا مغلوبين مقهورين لم يسعهم الا الصبر ليقضى الله امرا كان مفعولا.  ولو سلم ان الخبيث كان مسلما فهو مسلم جميع الكبائر ما لا يحيط به نطاق البيان انا اذهب الى جواز لعن مثله على التعيين ولو لم يتصور ان يكون له مثل من الفاسقين.

অর্থ: “আমি বলছি, আমার এটাই অধিক ধারণা যে, খবীসটি হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে রসূল বলে বিশ্বাস করতো না। সে আল্লাহ পাক উনার হেরেম শরীফ-এ (কা’বা শরীফ প্রান্তে) অবস্থানকারীদের সাথে, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার হেরেম শরীফ (মদীনা শরীফ)-এ অবস্থানকারীদের সাথে এবং উনার পূত-পবিত্র বংশধর উনাদের সাথে উনাদের জীবদ্দশায় ও উনাদের বিছাল শরীফ-এর পরে যে আচরণ করেছে, এছাড়া তার দ্বারা যে সমস্ত অনাচার প্রকাশ পেয়েছে তা তার ঈমান না থাকার ব্যাপারটিই স্পষ্ট করে, (তার ঈমান থাকার) ব্যাপারটি প্রমাণ করতে কোনো দুর্বল দলীলও নেই। কারণ এ কাজটি ছিলো কুরআন শরীফ-এর পাতা অবহেলা অবজ্ঞার সাথে ময়লা-আবর্জনায় নিক্ষেপ করার মতো অন্যায়। আমার ধারণা তখন তার কার্যকলাপ অধিকাংশ মুসলমানদের নিকট অজানা ছিলো না। কিন্তু উনারা অসহায় ছিলেন। ধৈর্যধারণ করা ব্যতীত উনাদের গত্যন্তর ছিলো না। আল্লাহ পাক উনার যা করার তিনি যেন তা করেন।

অগত্যা যদি ধরে নেয়া হয় যে, খবীসটি মুসলমানই ছিলো, তাহলে বলতে হয় সে এমন মুসলমান ছিলো যে যাবতীয় বড় পাপ একত্র করেছে। যা বর্ণনা করার ভাষা নেই। আর আমার অভিমত হলো, নাম করে তার মতো ব্যক্তির প্রতি অভিসম্পাত (লা’নত) করা বৈধ। তার ন্যায় অন্য কোনো পাপীর ধারণা করা যায় না। (তাফসীরে রূহুল মাআনী জিলদ-২৫, পৃষ্ঠা-৭৩)

হযরত আল্লামা আলূসী রহমতুল্লাহি আলাইহি একজন সুন্নী তাফসীরকার। তিনি ইয়াযীদ লা’নাতুল্লাহি আলাইহিকে খবীস, নিকৃষ্ট পাপী বলে স্মরণ করেছেন। আর তার ঈমান ছিলো না বলেই তিনি স্বীয় অভিমত ব্যক্ত করেছেন। কুরআন শরীফ অবমাননা করার জন্য কেউ তা বিষ্ঠা পুঞ্জে নিক্ষেপ করলে নিক্ষেপকারীর ঈমান থাকেনা। এরূপ ব্যক্তি কাফির হয়ে যায়। হযরত আল্লামা আলূসী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেছেন, ইয়াযীদ লা’নাতুল্লাহি আলাইহি সে এর চেয়েও অবমাননাকর কাজ করেছে হারামাইন শরীফাইন-এর বাসিন্দাদের সাথে। হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বংশের লোকজনের সাথে। কাজেই তাকে কাফির বলা জায়িয। আর এরূপ ব্যক্তির প্রতি সুনির্দিষ্টভাবে লা’নত করা বৈধ। কারণ ইয়াযীদের ন্যায় নরাধম পাপিষ্ঠ গোটা যমীনে আর কেউ নেই।

যারা ইয়াযীদের প্রতি লা’নত করাকে বৈধ মনে করবে না, তাকে পাপী মনে করবে না তারা ইয়াযীদের সহচরদের অন্তর্ভুক্ত বলে হযরত আল্লামা আলূসী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি সিদ্ধান্ত প্রদান করেছেন। আর তিনি ইয়াযীদের সহচরদের প্রতি ইয়াযীদের ন্যায় লা’নত করেছেন। তিনি বলেন-

ويلحق به ابن زياد وابن سعد وجماعة فلعنة الله عز وجل عليهم اجمعين وعلى انصارهم واعوانهم وشيعتهم ومن مال اليهم الى يوم القيامة ما دمعت عين على ابى عبد الله الحسين.

অর্থ: “আর লা’নতের উপযোগী হওয়ার ব্যাপারে ইয়াযীদের সাথে শামিল উবায়দুল্লাহ ইবনু যিয়াদ, আমর ইবনু সাআদ এবং তাদের দলবল। তাদের সবার প্রতি আল্লাহ পাক উনার লা’নত ও অভিসম্পাত। তাদের সাহায্যকারী ও শুভানুধ্যায়ী এবং সাঙ্গ পাঙ্গদের প্রতি লা’নত। আর যারা তাদের প্রতি সহানুভূতি দেখাবে তাদের প্রতিও লা’নত ক্বিয়ামতের দিন পর্যন্ত, যতদিন হযরত আবূ আব্দুল্লাহ হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম উনার জন্য একটি মাত্র চোখও অশ্রু ঝরাবে।”(তাফসীরে রূহুল মাআনী, জিলদ ২৫, পৃষ্ঠা ৭৩)

যারা ইয়াযীদ লা’নাতুল্লাহি আলাইহিকে ইতিহাসের নিপীড়িত ব্যক্তি বলে তার সাফাই গাইছে তারাও হযরত আল্লামা আলূসী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মতে লা’নতের যোগ্য। তারাও ইয়াযীদের দলভুক্ত, ইয়াযীদের শুভানুধ্যায়ী। তাদের প্রতিও ইয়াযীদের ন্যায় লা’নত করা বৈধ বলে হযরত আল্লামা আলূসী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সুচিন্তিত অভিমত ব্যক্ত করেছেন।

আর যারা চরম ইয়াযীদপন্থী, ইয়াযীদের প্রতি যারা কোনোরূপ দোষারোপ করতে চায় না তাদের প্রসঙ্গে হযরত আল্লামা আলূসী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন-

ذالك لعمرى هو الضلال البعيد الذى يكاد يزيد على ضلال يزيد

অর্থ: আমি কসম করে বলি, এটা হলো চরম ভ্রষ্টতা। যা ইয়াযীদের ভ্রষ্টতাকেও অতিক্রম করেছে। (তাফসীরে রূহুল মাআনী, জিলদ ২৫, পৃষ্ঠা ৭৩)

উল্লেখ্য, ইবনে যিয়াদ ইয়াযীদের নির্দেশে হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত আহলে বাইত উনাদেরকে বন্দী করে এবং কারবালায় শাহাদাতপ্রাপ্ত শহীদানের কর্তিত মস্তক মুবারক নিয়ে মিছিল করে দামেস্কে নিয়ে যাওয়ার জন্য শিমার ইবনে জুল জাউশান ইবনে সা’লাবা, শীস ইবন রাবী, আমর ইবনে হাজ্জাজ এবং আরো কতক লোককে নিযুক্ত করে। তাদেরকে হুকুম দেয় তারা যে শহরে পৌঁছবে সেখানেই যেন কর্তিত মস্তক মুবারক-এর প্রদর্শনী করা হয়। নাঊযুবিল্লাহ! এরূপে মিছিলটি পহেলা ছফর দামেস্ক শহরের দ্বার দেশে পৌঁছে। ইয়াযীদ লা’নাতুল্লাহি আলাইহি তখন জায়রূন রাজ প্রাসাদে অবস্থান করছিলো। সে প্রাসাদের বেলকুনীতে বসে এ দৃশ্য উপভোগ করছিলো। নাঊযুবিল্লাহ! সে দেখতে পেলো আহলে বাইত আলাইহিমুস সালাম উনারা বন্দী অবস্থায় আসছেন। কর্তিত শির মুবারকসমূহ বর্শার আগায় বিদ্ধ রয়েছে। জায়রূন উপকণ্ঠে মিছিল পৌঁছলে পরে ওখানকার কাকগুলো কলরব করে বিলাপ প্রকাশ করতে থাকে। ইয়াযীদ লা’নাতুল্লাহি আলাইহি তখন কবিতা আবৃত্তি করে বিজয় উল্লাস করে বলে-

لما بدت تلك الحمول واشرقت + تلك الرؤس على شفا جيرون + نعب الغراب فقلت قل او لاتقل+ فقد اقتضيت من الرسول ديونى.

অর্থ: “যখন ওইসব বাহন চোখে পড়লো, আর ওইসব মস্তক সামনে ভেসে উঠলো জায়রূন উপকণ্ঠে তখন কাককুল কলরব করে উঠলো। আমি বললাম, কলরব করো বা নাই করো, আমি রসূলের নিকট হতে আমার ঋণগুলো শোধ করে নিয়েছি।” নাঊযুবিল্লাহ!

ইয়াযীদ লা’নাতুল্লাহি আলাইহি তার কথিত বিজয় গাথায় যে ঋণের উল্লেখ করেছে সে বিষয়ে তাফসীরকার হযরত আল্লামা আলূসী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বিখ্যাত তাফসীর গ্রন্থ তাফসীরে রূহুল মা’আনীতে উল্লেখ করে বলেন-

قال الالوسى: اراد بقول فقد افتضيت من الرسول ديونى انه قتل بما قتله رسول الله صلى الله عليه وسلم يوم بدر كجدة عتبة وخاله ولد عتبة وغيرهما وهذا كفر صريح فاذا صح عنه فقد كفر به ومثل تمثله بقول ابن الزبعرى قبل اسلامه (ليت اشياخى) الابيات.

অর্থ: “ইয়াযীদ লা’নাতুল্লাহি আলাইহি তার উক্তি: আমি হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট হতে আমার ঋণগুলো শোধ করে নিয়েছি- এর দ্বারা বুঝাতে চাচ্ছে যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বদর যুদ্ধে ইয়াযীদের নানা উতবা এবং তার মামাকে ও তার অন্যান্য আপনজনকে হত্যা করেছিলেন। যার প্রতিশোধরূপে ইয়াযীদ লা’নাতুল্লাহি আলাইহি আলে রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে শহীদ করেছে। নাঊযুবিল্লাহ! এটা স্পষ্ট কুফরীর প্রমাণ। তার এ উক্তি প্রমাণিত হওয়ায় ইয়াযীদ লা’নাতুল্লাহি আলাইহি এজন্যে অবশ্যই কাফির হয়ে গেছে। অনুরূপ ইয়াযীদ লা’নাতুল্লাহি আলাইহি কবি ইবনে যাবআরীর মুসলমান হওয়ার পূর্বের এক কবিতাখ- দ্বারাও একই ধরনের উক্তি করেছে।” নাঊযুবিল্লাহ!

এখানে দেখা যায়, ইয়াযীদ লা’নাতুল্লাহি আলাইহি ইসলামের প্রথম সমরে (বদর যুদ্ধে) তার কাফির পূর্ব পুরুষদের নিহত হওয়ার প্রতিশোধ গ্রহণ করেছে হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কাছ থেকে আহলে বাইত আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে কারবালার ময়দানে শহীদ করে। নাঊযুবিল্লাহ! তাহলে ইয়াযীদের অন্তরে হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি দুশমনি ছিলো বলে সাব্যস্ত হয়। যা স্পষ্ট কুফরী। এসব কারণেই হযরত কাযী আবূ ইয়া’লা রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত আল্লামা ইবনু জাউযী রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত আল্লামা তাফতাজানী রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত আল্লামা ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনারা ইয়াযীদ লা’নাতুল্লাহি আলাইহিকে সরাসরি কাফির বলেছেন এবং ইয়াযীদের প্রতি লা’নত করেছেন। হযরত শায়খ আব্দুল হক্ব মুহাদ্দিছ দেহলবী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ‘দিয়ারে হাবীব’ গ্রন্থে ইয়াযীদ লা’নাতুল্লাহি আলাইহিকে লায়ীন বা লা’নতগ্রস্ত বলেছেন। হযরত শাহ আব্দুল আযীয দেহলবী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ‘তুহফা ইছনা আশারিয়া’ কিতাবে ইয়াযীদ লা’নাতুল্লাহি আলাইহিকে পালীদ অর্থাৎ অপবিত্র বা নাপাক বলেছেন। অর্থাৎ আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের উলামায়ে কিরাম উনারা ন্যূনতম পর্যায়ে ইয়াযীদ লা’নাতুল্লাহি আলাইহিকে চরম ফাসিক, লা’নতগ্রস্ত, অপবিত্র ইত্যাদি বলেছেন। আর চরম পর্যায়ে তাকে কাফির বলে মন্তব্য করেছেন।

এছাড়া ইয়াযীদ লা’নাতুল্লাহি আলাইহি সম্পর্কে বলতে গিয়ে উনারা আরো উল্লেখ করেছেন যে, ইয়াযীদ লা’নাতুল্লাহি আলাইহি ছাহাবী তো নয়ই, বরং তাবিয়ী হওয়ার যোগ্যতাও সে হারিয়ে ফেলেছে। এমনকি সে খলীফা বা আমীরুল মু’মিনীন পদবিতে ভূষিত হওয়ার যোগ্যতাও হারিয়ে ফেলেছে। উনারা বলেছেন, ছাহাবী, তাবিয়ী, খলীফা ও আমীরুল মু’মিনীন এসব মহান মর্যাদা সম্বলিত পদবি লাভের যোগ্যতাও হারিয়ে ফেলেছে। কাজেই, ইয়াযীদের ন্যায় দুরাচার, ফাসিক, অপবিত্র, লা’নতগ্রস্ত এবং সর্বোপরি কাফির ব্যক্তি কোনোক্রমেই উপরোক্ত সম্মানে সম্মানিত হতে পারে না। বরং সে গুমরাহ হওয়ার কারণে যে তাকে খলীফা বা আমীরুল মু’মিনীন বলে আখ্যায়িত করেছে বা করবে ইসলামের দ-বিধি মুতাবিক এরূপ ব্যক্তিকে দোররা মারা হয়েছে এবং হবে। হযরত ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতী রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং অনুসরণীয় উলামায়ে কিরাম উনারা এ বর্ণনা উল্লেখ করেছেন। যেমন হযরত আল্লামা ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ‘তারীখুল খুলাফা’ গ্রন্থে ১৯৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেছেন-

قال نوفل بن ابى الفرات كنت عند عمر بن عبد العزيز فذكر رجل يزد فقال قال امير المؤمنين يزيد بن معاوية رضى الله تعالى عنه فقال تقول امير المؤمنين؟ وامر به فضرب عشرين سوطا.

অর্থ: “নাওফিল ইবনু আবীল ফুরাত বলেন, আমি খলীফা হযরত উমর ইবনু আব্দুল আযীয রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার নিকট ছিলাম, সেখানে এক ব্যক্তি ইয়াযীদ লা’নাতুল্লাহি আলাইহি প্রসঙ্গে বর্ণনা করতে গিয়ে বলে ফেলে-

(قال امير المؤمنين يزيد بن معاوية)

হযরত মুআবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার পুত্র (আমীরুল মু’মিনীন) ইয়াযীদ লা’নাতুল্লাহি আলাইহি বলেছে। এ কথা শোনার সাথে সাথেই খলীফা হযরত উমর ইবনু আব্দুল আযীয রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলে উঠলেন, তুমি ইয়াযীদ লা’নাতুল্লাহি আলাইহিকে আমীরুল মু’মিনীন বলছো? হযরত উমর ইবনু আব্দুল আযীয রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি লোকটিকে দোররা মারার নির্দেশ দিলেন। তখনই তাকে বিশটি দোররা মারা হয়।”

উল্লেখ্য, ইয়াযীদ লা’নাতুল্লাহি আলাইহিকে যারা আমীরুল মু’মিনীন অথবা খলীফা বলার দুঃসাহস দেখাবে তাদের শাস্তি কি এখানে তা পরিষ্কার। তাহলে যে বা যারা ইয়াযীদ লা’নাতুল্লাহি আলাইহিকে তাবিয়ী কিংবা কোনো ভালো খিতাবে অভিহিত করবে একইভাবে তারাও শাস্তির উপযুক্ত। কেননা ইয়াযীদ লা’নাতুল্লাহি আলাইহি যে অপকর্ম করেছে তা কোনো মু’মিন মুসলমান বরদাশত করতে পারে না।

ইয়াযীদের হারাম ও কুফরী কাজগুলো হলো: নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পরিবার উনাদের ক্ষতি করা, মদীনা শরীফ-এ অবাধ লুণ্ঠন ও নারী নির্যাতন, কা’বা ঘরে অগ্নি সংযোগ এবং গুমরাহ হওয়ার পর অবৈধ পন্থায় ক্ষমতা দখল করে রেখে ইসলামের খিলাফত আলা মিন হাজিন নুবুওওয়াহ-এর বরখিলাফ কাজ কর্ম করা।

ইয়াযীদ লা’নাতুল্লাহি আলাইহি কর্তৃক পবিত্র মদীনা শরীফ-এর সম্ভ্রান্ত মহিলাদেরকে সেনাবাহিনী দ্বারা সতীত্ব নষ্ট ও লাঞ্ছিত করার বিবরণ দিয়ে হযরত আল্লামা ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন-

وكانت وقعة الحرة على باب طيبة وما ادراك ما وقعة الحرة؟ ذكره الحسن مرة فقال والله ماكاد ينجو منهم احد قتل فيها خلق من الصحابة رضى الله تعالى عنهم ومن غيرهم. ونهيت المدينة وافتض فيها الف عذراء فانا لله وانا اليه راجعون. قال صلى الله عليه وسلم من اخاف اهل المدينة اخافه الله وعليه لعنة الله والملائكة والناس اجمعين.

অর্থ: “মদীনা শরীফ-এর উপকণ্ঠ ‘আল হাররা’য় বিপর্যয় ঘটে। তুমি কি জান যে, আল হাররা বিপর্যয়টি কি ছিলো। একদা হযরত ইমাম হাসান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি এ প্রসঙ্গে এরূপ বর্ণনা করেন- আল্লাহ পাক উনার কসম করে বলছি, এ ঘটনায় কারো পরিত্রাণের কোনো উপায় ছিলো না। এ ঘটনায় বহু সংখ্যক হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম এবং অন্যান্য বহু লোক প্রাণ হারান। মদীনা শরীফ-এ অবাধে লুণ্ঠন চলতে থাকে। এ ঘটনায় এক হাজার অবিবাহিতা পর্দানশীন যুবতীর সতীত্ব বিনষ্ট করা হয়। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজউন। হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেছেন, যে মদীনাবাসীকে ভয় দেখাবে আল্লাহ পাক তিনি তাকে ভয় দেখাবেন। তার প্রতি আল্লাহ পাক, ফেরেশতা এবং সকল মানুষ উনাদের লা’নত ও অভিসম্পাত।” (মুসলিম শরীফ)

উপরোক্ত বর্ণনা ও আলোচনা থেকে এ কথা স্পষ্ট যে, ইয়াযীদ লা’নাতুল্লাহি আলাইহি সে যেসব অপকর্ম করেছে তা সুস্পষ্ট কুফরীর অন্তর্ভুক্ত। কেউ কুফরী করলে সে মুসলমান থেকে খারিজ হয়ে যায়। যার কারণে আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের ইমাম-মুজতাহিদ, আওলিয়ায়ে কিরাম উনারা ইয়াযীদ লা’নাতুল্লাহি আলাইহিকে কাফির, লা’নতগ্রস্ত ও জাহান্নামী বলতে কোনো দ্বিধা করেননি।

কাজেই, ইয়াযীদ লা’নাতুল্লাহি আলাইহিকে তাবিয়ী বলার অর্থ হলো তার ছানা-ছিফত করা, তাকে হক্ব বলে স্বীকার করা। ইয়াযীদের মতো পাপিষ্ঠ ব্যক্তির ছানা-ছিফত কেবল ওইসব ব্যক্তিই করতে পারে যে তার শুভাকাঙ্খী, সমর্থনকারী। ফলে শরীয়তের ফতওয়া অনুযায়ী ইয়াযীদের যা হুকুম তার শুভাকাঙ্খী ও সমর্থনকারী তাদেরও একই হুকুম। আর তা হলো শরীয়তের আম ফতওয়া মতে তারা চরম ফাসিক আর খাছ ফতওয়া মতে কাট্টা কাফির ও চির জাহান্নামী। অতএব, কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফ উভয়ের আলোকে মাহিউদ্দীন এবং তার সমগোত্রীয়দের উপরও একই ফতওয়া বর্তাবে।

সমাপ্ত

কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে প্রাণীর মূর্তি তৈরি করা ও ছবি আঁকা, তোলা, তোলানো, রাখা, রাখানো, দেখা, দেখানো হারাম নাজায়িয হওয়ার অকাট্য প্রমাণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-২৫

জুমুয়া ও ঈদাইনের খুৎবা আরবী ভাষায় দেয়া ওয়াজিব। আরবী ব্যতীত অন্য কোন ভাষায় খুৎবা দেয়া মাকরূহ তাহরীমী ও বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া

কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে প্রাণীর মূর্তি তৈরি করা ও ছবি আঁকা, তোলা, তোলানো, রাখা, রাখানো, দেখা, দেখানো হারাম নাজায়িয হওয়ার অকাট্য প্রমাণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-২৬

জুমুয়া ও ঈদাইনের খুৎবা আরবী ভাষায় দেয়া ওয়াজিব। আরবী ব্যতীত অন্য কোন ভাষায় খুৎবা দেয়া মাকরূহ তাহরীমী ও বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-২

কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে প্রাণীর মূর্তি তৈরি করা ও ছবি আঁকা, তোলা, তোলানো, রাখা, রাখানো, দেখা, দেখানো হারাম নাজায়িয হওয়ার অকাট্য প্রমাণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-২৭