ইহুদী সংবাদ মাধ্যম পুরো বিশ্ব নিয়ন্ত্রণ করছে। বিশেষতঃ মুসলিম বিশ্বের দেশসমূহে ওদের প্রচারণা বিশেষ উদ্দেশ্যমূলক ও প্রতারণামূলক। ইহুদী প্রচার মাধ্যমগুলোর কারণে মুসলিম বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশই জনসংখ্যা বৃদ্ধি সমস্যা নিয়ে চিন্তিত। ইহুদীরা এ বিষয়টি Population Explosion বা জনসংখ্য। বিস্ফোরণ হিসেবে Concept দাঁড় করিয়েছে এবং বলা চলে তা প্রায় প্রতিষ্ঠিত করিয়েছে। বলাবাহুল্য, এই তত্ত্বের আলোচিত প্রবক্তা ছিল ম্যালথাস। ‘ম্যালথাস তত্ত্বে’ বলা হয়েছিল, “২৫ বছরে পৃথিবীর জনসংখ্যা দ্বিগুণ হয়ে পড়বে।” আরো বলা হয়েছিল যে, “জনসংখ্যা বাড়ে জ্যামিতিক হারে, যথা- ৪, ৮, ১৬ এভাবে।
পক্ষান্তরে খাদ্যোৎপাদন বাড়ে গাণিতিক হারে, যেমন- ১, ২, ৩, ৪ এইভাবে। (By nature food increase in slow arithmetic ratio; man himself increases in a quick geometrica! ratio) ফলে জনসংখ্যা ও খাদ্য উৎপাদনের মধ্যে ভারসাম্য নষ্ট হয়ে দেশে খাদ্য সমস্যা দেখা দেয়।
১৭৯৮ সালে বৃটিশ অর্থনীতিবিদ টমাস ম্যালথাস এসব কথা বলে চমক সৃষ্টি করেছিলো। (Essy on Principle of population) অনেকেই তাকে কালের উপযুক্ত ত্রানকর্তা হিসেবে অভিহিত করেছিলেন এবং তার কথার কারণে অনেক পদক্ষেপও গৃহীত হয়েছিল। অনেকেই এই লাইনে আরো অগ্রসর, চিন্তা-ভাবনা তথা লেখালেখি করেছিলেন। The Population Bomb নামে একটি বই লিখেছেন ডঃ আরলিখ ১৯৬৮ সালে। তার বইয়ে তিনি ভবিষ্যদ্বানী করেছিলেন যে, ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার ভারে ন্যুজ এই পৃথিবীতে সত্তর-এর দশকে লক্ষ-কোটি লোক না খেয়ে মারা যাবে। কিন্তু আরলিখের ভবিষ্যদ্বাণীও ফলেনি। জাতিসংঘের হিসেব অনুসারে ১৯৬১ সালে যেখানে গরীব দেশগুলোর মানুষ প্রতিদিন গড়ে মাথাপিছু ১৯৩২ ক্যালরিযুক্ত খাবার পেত সেখানে ১৯৯৮ সালে তা বেড়ে গিয়ে দাঁড়ায় ২৬৫০ ক্যালরিযুক্ত খাবারে। আশা করা হচ্ছে ২০৩০ সাল নাগাদ গরীব দেশের মানুষ মাথাপিছু প্রতিদিন গড়ে গ্রহণ করতে পারবে ৩০২০ ক্যালরি করে।
শুধু তাই নয় ১৯৪৯ সালে যেখানে উন্নয়ণশীল গরীব দেশগুলোতে অভুক্ত লোকের সংখ্যা ছিল ৪৫ শতাংশ সেখানে আজ সে সংখ্যা এসে দাঁড়িয়েছে ১৮ শতাংশে। আশা করা হচ্ছে ২০৩০ সালে এসব দেশে অভুক্ত লোকের সংখ্যা কমে ৬ শতাংশে এসে দাঁড়াবে। তবে এরপরেও জনসংখ্যা রোধের প্রচেষ্টা থেমে থাকেনি বটে।
আন্তর্জাতিক পর্যায়েও এজন্য অনেক পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। এর রেশ ধরে রুমানিয়ার বুখারেষ্ট শহরে ১৯৭৪ সালে, মেক্সিকো শহরে ১৯৮৪ সালে জনসংখ্যা সম্মেলন এবং ১৯৯৪ সালে মিশরের কায়রোতে জনসংখ্যা সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। কায়রো সম্মেলনে বলা হয়েছিল- বিশ বছরের এ জরুরী কর্মসূচী সফল হলে আগামী ২০১৫ সালে পৃথিবীর জনসংখ্যা ৭৯২ কোটিতে ধরে রাখা সম্ভব হবে। আর না হলে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে হবে ১২৫০ কোটিতে। অথচ বর্তমান বাস্তবতা হচ্ছে জনসংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে বলে রীতিমত আতঙ্কিত কিছু দেশ। Population explosion যেমন আমাদের জন্য ভীতিকর একটা টার্ম, তেমনি ওদের জন্য ভীতিকর টার্ম হচ্ছে Population implosion! আসলে কয়েকটি দেশ নয়, বরং গোটা ইউরোপের জনসংখ্যাই দিন দিন কমে যাচ্ছে। ২০০৭ সাল নাগাদ ইউরোপীয় ইউনিয়নে (ইইউ) সদস্য দেশের সংখ্যা ২৭ হবার কথা। এই ২৭টি দেশের বর্তমান মোট জনসংখ্যা ৪৮ কোটি ২০লাখ। জাতিসংঘের হিসেব অনুসারে ২০৫০ সাল নাগাদ ঐ দেশগুলোর মোট জনসংখ্যা কমে ৪৫ কোটি ৪০ লাখে দাঁড়াবে। ইউরোপের দেশগুলোর কথা আলাদাভাবে বিচার করলে দেখা যাবে কয়েকটি দশের জনসংখ্যা কমছে নাটকীয়ভাবে। ২০৫০ সাল নাগাদ ইতালীর জনসংখ্যা ৫ কোটি ৭৫ লাখ থেকে কমে ৪ কোটি ৫০ লাখে এবং স্পেনের জনসংখ্যা ৪ কোটি থেকে নেমে ৩ কোটি ৭০ লাখে দাঁড়াবে। আর জার্মান ব্যাংকের (Deutsche Bank) হিসেব অনুসারে চলতি শতাব্দী শেষ হবার আগেই জার্মানীর জনসংখ্যা ৮ কোটি থেকে কমে মাত্র আড়াই কোটিতে দাঁড়াবে। যদি জার্মানী প্রতিবছর আড়াই লাখ করে অভিবাসীও গ্রহণ করে তবুও ঐ সময়ের মধ্যে জার্মানীর জনসংখ্যা কমে হবে পাঁচ কোটি। উল্লেখ্য, জনসংখ্যা কমার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ইউরোপে বাড়ছে পেনশনভোগী নাগরিকদের সংখ্যা এবং কমছে কর্মক্ষম মানুষের সংখ্যা। এর যেমন অর্থনৈতিক প্রতিক্রিয়া আছে, তেমনি আছে রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া। কর্মক্ষম লোকের সংখ্যা কমার অর্থ দেশের অর্থনীতিকে সামনে টেনে নেয়ার শক্তি কমে যাওয়া। ওদিকে ক্রমবর্ধমান পেনশনভোগীরা, ক্রমহ্রাসমান কর্মক্ষম নাগরিকদের উপর নির্ভরশীল হয়ে পরিস্থিতি আরো খারাপ করে দিচ্ছে। মনে রাখতে হবে জার্মানী, ফ্রান্স ও ইতালীর মত ইউরোপীয় দেশগুলোতে কর্মক্ষম ব্যক্তিদের ট্যাক্সের অর্থে পেনশনভোগীদের পেনশন দেয়া হয়। আর ঐসব দেশে পেনশনের পরিমাণও অনেক বেশি। এখন ক্রমবর্ধমান পেনশনভোগীদের পেনশনের অর্থ জোগানের জন্য ক্রমহ্রাসমান কর্মক্ষম নাগরিকদের উপর অতিরিক্ত করের বোঝা চাপানো হচ্ছে একটি উপায়। কিন্তু এ পথ মাড়াতে গেলে সরকারগুলোকে অবধারিতভাবেই পড়তে হবে রাজনৈতিক সংকটে। বিকল্প হিসেবে পেনশনভোগীদের সুযোগ-সুবিধা কমানো যেতে পারে। কিন্তু গত বছর সে চেষ্টা করে ফ্রান্স, অস্ট্রিয়া, ইতালী ও জার্মানীতে সংশ্লিষ্ট সরকারগুলো শ্রমিকদের তীব্র প্রতিবাদের মুখে পড়েছিল। ইউরোপে আলোচ্য সমস্যা ধীরে ধীরে কী ভয়াবহরূপ ধারণ করতে চলেছে তা বোঝাতে এখানে আরো কিছু তথ্য দেখা যায়- ইউরোপে বর্তমানে প্রতি একশত জন কর্মক্ষম ব্যক্তির বিপরীতে পেনশনভোগী আছে ৩৫ জন; ২০৫০ সাল নাগাদ ইউরোপে প্রতি ১০০ জন কর্মক্ষম ব্যক্তির বিপরীতে পেনশনভোগীর সংখ্যা হবে ৭৫ জন; জার্মানীর করদাতারা দেশে পেনশন স্কীমে এখনই নিজেদের আয়ের ২৯ শতাংশ দিচ্ছে; ইতালীর করদাতারা সেদেশে পেনশন স্কীমে দিচ্ছেন নিজেদের আয়ের শতকরা ৩৩ ভাগ; ইত্যাদি ইত্যাদি। পরিস্থিতি ইতোমধ্যে ইউরোপের কোন কোন দেশকে ভোগাতে শুরু করেছে। সামনে ভোগান্তির মাত্রা দ্রুত বাড়বে বলে আশংকা করছেন পর্যবেক্ষকরা। সমস্যা হবে ইইউ-র সদস্য দেশগুলোর নিজেদের মধ্যেও।
তবে বিশেষভাবে আরো উল্লেখ্য যে, শুধু ইউরোপেই নয় বরং জনসংখ্যাবিদদের মতে আগামী পঞ্চাশ বছরে এশিয়ায় জাপানের জনসংখ্যা অর্ধেক কমে যাবে। আর এই যখন প্রকৃত অবস্থা তখন এদেশে তথা মুসলিম বিশ্বে এখনও বেশ কিছু দ্বীনী ও দুনিয়াবী শিক্ষিত লোক “জন্ম নিয়ন্ত্রণের পক্ষে বলে থাকে। এমনকি ধর্মব্যবসায়ী মাওলানারা এর সপক্ষে কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফের দলীল উপস্থাপন করে কিছু বই-পুস্তকও প্রনয়ণ করে বলছে যে, “জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি সম্পূর্ণ ইসলাম সম্মত। আর বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমেও এর প্রয়োজনীয়তা ঢালাও ভাবে প্রচার করে জনগণকে এর প্রতি উদ্বুদ্ধও করা হয়ে থাকে।” মূলতঃ জন্ম নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে- একটি আন্তর্জাতিক চক্রান্ত, যার মাধ্যমে মুসলমানদের চরিত্র নষ্ট করার তথা মুসলমানদের সংখ্যা বৃদ্ধি ঠেকিয়ে তাদের সংখ্যা হ্রাস করার একটি নীল নকশা প্রণয়ন করা হয়েছে।
অথচ আল্লাহ্ পাক-এর রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, “তোমরা এমন মেয়ে বিয়ে কর যাদের সন্তান অধিক হয়। কেননা, ক্বিয়ামতের ময়দানে আমার উম্মাহ্র আধিক্য দ্বারা আমি অন্যান্য নবী আলাইহিমুস্ সালামগণের মাঝে ফখর করব।” (সুবহানাল্লাহ্) প্রখ্যাত সমাজবিজ্ঞানী ইবনে খালদুনের মতে জনসংখ্যা বৃদ্ধি প্রগতিকে ত্বরান্বিত করতে সাহায্য করে। মূলতঃ জনসংখ্যা মানব সম্পদ। কাজেই এর হ্রাস নয় বরং যথাযথ প্রয়োগের মাধ্যমেই মুসলমানদের দ্বীন ও দুনিয়ার উন্নতি সম্ভব। তাই ইহুদীরা নিজেদের সংখ্যা হ্রাসের ভয়ে তথা মুসলমানদের উন্নতি রোধকল্পে মুসলমানদের জনসংখ্যা বৃদ্ধিকে ঠেকিয়ে রাখতে চায়। অতএব, মুসলমান সাবধান হোন, সচেতন হোন।
-খন্দকার মুহম্মদ সাখাওয়াত হুসাইন, ঢাকা।
এভাবেই বিরোধীদের হাক্বীক্বত প্রকাশ পাবে ॥ আর আল বাইয়্যিনাত-এর যথার্থতা প্রমাণিত হবে