জাতীয় হেলাল কমিটির চরম গাফলতি এবং প্রাসঙ্গিক কথা

সংখ্যা: ১১৫তম সংখ্যা | বিভাগ:

জাহিদের বয়স চার। সে অক্ষর জ্ঞানের বই পড়ছে। কচি কণ্ঠে মিষ্টি সুরেলা আওয়াজ তুলছে অ-তে-অজু কর সকাল বেলা। আ-তে আল্লাহ্র নাম নাও সব বেলা। এভাবে স্বরবর্ণ শেষ করে ব্যঞ্জনবর্ণ শুরু করে ‘চ’তে এসে বলছে চাঁদ-তারা ইসলামী নিশান।

হ্যাঁ, শুধু জাহিদই নয় বরং মুসলিম সন্তান-মাত্রই জ্ঞান হওয়া অবধি বুঝতে শিখে চাঁদ, ইসলাম, মুসলমানের অনবদ্য বিষয়। মুসলমানের আমল, নামায, রোযা, হজ্ব-যাকাত সবই চাঁদকে ঘিরে, চাঁদের মাসকে কেন্দ্র করে। পবিত্র কুরআন শরীফ সহ হাদীস শরীফেও চাঁদকেই মুসলমানদের সময়, মাস গণনা করার অমোঘ নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

এমনকি দেশে ইসলামী শাসন না থাকলেও প্রতিটি মুসলিম রাষ্ট্রও সরকারীভাবে চাঁদের বিষয়টিকে মহা গুরুত্বের সাথে বিচার করে। এজন্য অন্যান্য দেশের মত বাংলাদেশেও সরকারীভাবে জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটি রয়েছে।

বলাবাহুল্য, এ চাঁদ দেখা কমিটিতে নামধারী নামী-দামী লোকের অভাব নেই। বরং তাদের বিচারে এ কমিটিতে স্থান পাওয়া রীতিমত প্রতিযোগিতামূলক। সে প্রেক্ষিতে এখানে ঠাঁই পেয়েছে ৩৮ বছরের তথাকথিত ইসলামী পত্রিকার সম্পাদক, জাতীয় মসজিদের খতীব, লালবাগ শাহী মসজিদের খতীব ইত্যাদি ইত্যাদি ব্যক্তিবর্গ।

উল্লেখ্য, সমঝদাররা মনে না করলেও অনেক সাধারণ মানুষ রয়েছে যারা মনে করে, ইসলামিক ফাউন্ডেশনই এদেশের ইসলামের অভিভাবক। এখানকার মাওলানা-মুফতীরাই বর্তমান ইসলামের ধারক বাহক। সেক্ষেত্রে ইসলামী ফাউন্ডেশনের চাঁদ দেখা কমিটি যখন চাঁদ দেখা নিয়ে লেজে-গোবরে অবস্থার সৃষ্টি করে তখন তাদের এ উপলব্ধি জোরদার হয়- বর্তমানে কাদের হাতে দায়িত্ব ন্যস্ত আছে অথবা যারা নিজেদের বর্তমান ইসলামের প্রতিভূ বলে হাক-ডাক ছাড়েন তাদের প্রকৃত পরিচয় কি? জাতির জন্য, উম্মাহ্র জন্য তারা কতকুটু আস্থাভাজন ও অনুসরণীয়?

উল্লেখ্য, জাতীয় হেলাল কমিটির চাঁদ দেখা নিয়ে গাফলতির ক্রমবর্ণনা নিচে দেয়া হল-

(১) ২ ফেব্রুয়ারী রাত প্রায় সাড়ে আটটার মধ্যেই তড়ি-ঘড়ি করে বৈঠক শেষ করণ এবং পত্র-পত্রিকায় ফ্যাক্স প্রেরণ।

(২) বৈঠকে বাংলাদেশের আকাশে একজন পাইলট সহ আরো কয়েকজনের চাঁদ দেখার সংবাদ প্রাপ্তি সত্ত্বেও এর উপর গুরুত্ব না দেয়া এবং বৈঠককে আরো দীর্ঘায়িত না করা।

(৩) ২ ফেব্রুয়ারীর চাঁদ দেখার সিদ্ধান্ত ৬ ফেব্রুয়ারী নির্ধারণ করা অর্থাৎ নির্দিষ্ট দিনের চারদিন পর, মুসলমানদের ঈমান-আমলের মত মহা গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর একটি বিষয়ে সিদ্ধান্তে পৌঁছা।

(৪) অথচ ২ ফেব্রুয়ারীই মাগুরার সীমাখালী বাজারের আড়াই শতাধিক লোক চাঁদ দেখেছেন এবং ৩ ফেব্রুয়ারী স্থানীয় চাঁদ দেখা কমিটির সভাপতি জেলার ডি সি তা জাতীয় হেলাল কমিটিকে অবহিতও করেছেন।

কিন্তু তার পরেও জাতীয় হেলাল কমিটি এমনকি জাতীয় খতীবও তাতে কর্ণপাত করেননি।

উল্লেখ্য, মাগুরা ছাড়াও বরিশাল সহ আরো কয়েকটি স্থানের লোক চাঁদ দেখার বিষয়টি জাতীয় হেলাল কমিটিকে অবহিত করে।

(৫) এরূপে সুস্পষ্টভাবে অবগত হওয়ার পরও, ৪ ফেব্রুয়ারী দ্বিতীয় দফা বৈঠক হবার পরও ইসলামিক ফাউন্ডেশন তথা জাতীয় হেলাল কমিটি ১২ তারিখে ঈদ ঘোষণা দেয়া থেকে বিরত থাকে।

(৬) ৫ ফেব্রুয়ারী বরিশাল মাগুরার প্রতক্ষ্যদর্শীরা জোরালো প্রতিবাদ জানানোর পরও ইসলামিক ফাউন্ডেশন তথা জাতীয় হেলাল কমিটি তাদের গাফলতির চরম পারাকাষ্ঠা প্রদর্শন করে।

(৭) পক্ষান্তরে এ ব্যাপারে ফাউন্ডেশনের সচিব বলেন, “৪ ফেব্রুয়ারী মাগুরা জেলা প্রশাসক চাঁদ দেখার কথা আমাদের জানিয়েছেন। যারা দেখেছেন তাদের নাম ঠিকানাও দিয়েছেন।

উল্লেখ্য, মাগুরার জেলা প্রশাসক ৩ ফেব্রুয়ারীর কথা বললেও তিনি স্বীকার করেছেন ৪ তারিখের কথা। তিনি বলেন, ১৩ ফেব্রুয়ারী ঈদ পালনে কোন সমস্যা নেই।

অর্থাৎ কুরবানীর ঈদ তিন দিন করা যায় এ হিসেবে তিনি তা বলেছেন। কিন্তু এতে করে যে ঈদ একদিন পরে ভেবে, কুরবানী ঈদের আগের দিন রোযা রাখা সুন্নত ভেবে মানুষ ঈদের দিনও রোযা রাখবে, যা কিনা কাট্টা হারাম সে কথা আদৌ তার খেয়াল হয়নি। তদুপরি ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সচিব সাহেব আরো বলেন, “হাদীসে রয়েছে, প্রচুর সংখ্যক লোককে চাঁদ দেখতে হবে।” অথচ কোন্ হাদীসে আছে তা তিনি উল্লেখ করেন নি। অথচ আমাদের হানাফী মাযহাব মুতাবিক বরং মাত্র দু’জন মুসলমান পুরুষ চাঁদ দেখার সাক্ষ্য দিলেই তা গ্রহণযোগ্য হবে আকাশ মেঘলা থাকলে। সে হিসেবে ৩ ফেব্রুয়ারী মাগুরার ডিসি তার এলাকার কমপক্ষে আড়াইশ জনের সাক্ষ্য দেবার পরও তা সেদিন গ্রহণ না করে আরো তিনদিন পরে গ্রহণ করা- জাতীয় হেলাল কমিটি তথা ইসলামিক ফাউন্ডেশনের বিশেষ অবিমৃষ্যকারিতা তথা অথর্বতা প্রতীয়মান করে।

উল্লেখ্য, ইসলামিক ফাউন্ডেশন সম্পৃক্ত বায়তুল মুর্কারম মসজিদকে বলা হয় জাতীয় মসজিদ। এর খতীবকে বলা হয় জাতীয় খতীব। কিন্তু তিনিও এ ব্যাপারে যথারীতি চুপ মারলেন অর্থাৎ নিজের সিদ্ধান্তহীনতা তথা ইল্মী অপারগতা প্রমাণ করলেন।

কথিত ইসলামিক ফাউন্ডেশন তথা হেলাল কমিটি সম্পৃক্ত ৩৮ বছরের তথাকথিত ইসলামী পত্রিকার সম্পাদক, লালবাগ শাহী জামে মসজিদের খতীব, মালিবাগ, খিলগাঁও ইত্যাদি মাদ্রাসার মুহতামিম তথা এদের সমগোত্রীয় মাওলানা, মুফতী; মূলতঃ অনেক আগেই এরা ইল্ম অনুযায়ী আমল না করে, নফ্সের পায়রবী করে, ইবলিসের ক্রমাগত ওয়াস্ওয়াসায় পড়ে, সুন্নত বাদ দিয়ে, দুনিয়াদারী আচার প্রথায় অভ্যস্ত হয়ে, মহা গাফিল তথা বালহুম আদলের অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। এ ঈদুল আযহার চাঁদ দেখার গাফলতিতে কেবল তার আনুষ্ঠানিক প্রকাশ ঘটেছে।

-মুহম্মদ আবু তারীফ।

আকবরের আমলের উলামায়ে ‘ছূ’দের উত্তরাধিকারী মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে দ্বীন-ই-ইলাহীর আদলে দ্বীন-ই-জুমহুরী প্রচলনে তারা এক হয়েছে-৪

প্রসঙ্গঃ গণতন্ত্র; এখনই চরম সময়, বিষয়টি ভাবিবার- ১০

একটি অভূতপূর্ব ওয়াজ শরীফ এবং কম্পিউটারে কুরআন শরীফ, মাজার শরীফের উপরে ভাসমান দৃশ্য ও তাঞ্জানিয়ার সেই ছেলের কথা

প্রসঙ্গঃ দরসে বুখারীর পঞ্চদশ বছর পূর্তি নামধারী জাহিরী আলিমদের ডামাডোলের বিপরীতে মুজাদ্দিদুয্ যামানের পরিচয়

আকবরের আমলের উলামায়ে ‘ছূ’দের উত্তরাধিকারী মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে দ্বীন-ই-ইলাহীর আদলে দ্বীন-ই-জুমহুরী প্রচলনে তারা এক হয়েছে-৫