তাফসীরুল: কুরআন সুমহান সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ পালনই সর্বশ্রেষ্ঠ আমল

সংখ্যা: ২৭৪তম সংখ্যা | বিভাগ:

يَاۤ اَيُّهَا النَّاسُ قَدْ جَاءَتْكُمْ مَّوْعِظَةٌ مِّنْ رَّبِّكُمْ وَشِفَاءٌ لِّمَا فِىْ الصُّدُوْرِ. وَهُدًى وَّرَحْمَةٌ لِّلْمُؤْمِنِيْنَ. قُلْ بِفَضْلِ اللهِ وَبِرَحْمَتِهٖ فَبِذٰلِكَ فَلْيَفْرَحُوْا هُوَ خَيْرٌ مِّـمَّا يَجْمَعُوْنَ

তরজমা: “হে মানুষেরা! তোমাদের রব তায়ালা উনার তরফ থেকে তোমাদের নিকট এসেছেন মহান নছীহতকারী, অন্তরের মহান আরোগ্য দানকারী, মহান হিদায়েত দানকারী এবং মু’মিনদের জন্য মহান রহমত দানকারী। (অতএব, আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!) আপনি (উম্মতদেরকে) বলে দিন, মহান আল্লাহ পাক উনার সম্মানিত ফদ্বল ও সম্মানিত রহমতস¦রূপ আপনাকে যে তারা পেয়েছে, সেজন্য তাদের প্রতি কর্তব্য তথা ফরয হচ্ছে খুশি প্রকাশ করা। এই খুশি প্রকাশের ইবাদত হবে তাদের সমস্ত ইবাদত বা আমল অপেক্ষা উত্তম বা শ্রেষ্ঠ।” (পবিত্র সূরা ইউনুস শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৫৭, ৫৮)

তাফসীর: উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনাদের মধ্যে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যমীনে তাশরীফ মুবারক আনার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে এবং সেই উপলক্ষে খুশি মুবারক প্রকাশ করার  জন্য আদেশ মুবারক করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, উক্ত খুশি মুবারক প্রকাশ করার ফযীলত কতখানি সে বিষয়টিও উল্লেখ করা হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে “হযরত মাকহুল রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণিত। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত বিলাল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে উদ্দেশ্য করে ইরশাদ মুবারক করেন, হে বিলাল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু! আপনি কখনো ইছনাইনিল আযীম শরীফ রোযা রাখা পরিত্যাগ করবেন না। কারণ আমি ইছনাইনিল আযীম শরীফ পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেছি। এ দিন ওহী মুবারক নাযিল হয়, এ দিন হিজরত মুবারক করি।” সুবহানাল্লাহ! (উসদুল গবা ফি মা’রিফাতিছ ছাহাবা ১ম খ- ১২৭ পৃষ্ঠা, লেখক : ইমাম হযরত ইবনে আছীর রহমতুল্লাহি আলাইহি; প্রকাশনী : দারু কুতুবুল ইলমিয়া)

অন্য এক বর্ণনায় বর্ণিত রয়েছে- নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত আনাস বিন মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে লক্ষ্য করে ইরশাদ মুবারক করেন, “হে আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু! আপনি যদি রোযা রাখতে চান তবে ‘ইয়াওমুল ইছনাইন’ বা ইছনাইনিল আযীম শরীফ-এ রোযা রাখবেন। কেননা ইছনাইনিল আযীম শরীফ আমার বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ হয়েছে, আমার প্রতি পবিত্র কুরআন শরীফ নাযিল হয়েছে, আমার মি’রাজ শরীফ হয়েছে, আমার হিজরত মুবারক হয়েছে এবং আমার বিছালী শান মুবারক প্রকাশ হবে।”

উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ সমূহ দ্বারা স্বয়ং নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নিজেই উম্মতদেরকে উনার পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ ও পবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশ দিবস উদযাপন করার জন্য উৎসাহিত করেছেন। অনুসরণীয় ইমাম-মুজতাহিদ, মুহাক্কিক্ব-মুদাক্কিক্ব অর্থাৎ আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ সমূহের উপর ভিত্তি করেই পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ ও পবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশ দিবস পালন বা উদযাপন করেন এবং পালন বা উদযাপন করাকে পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ সম্মত বলে ফতওয়া দেন।

এ প্রসঙ্গে বিশ্বখ্যাত ঐতিহাসিক আল্লামা হযরত ইয়াকুব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার ‘তারীখে ইয়াকুবী’ গ্রন্থের ১ম খ-, ৩৬২ পৃষ্ঠায় লিখেন, “নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

رَاَيْتُ اَبَا لَـهَبٍ فِـىْ النَّارِ يَصِيْحُ الْعَطَشَ الْعَطَشَ فَيُسْقٰى مِنَ الْـمَاءِ فِـىْ نُقْرِ اِبْـهَامِهٖ فَقُلْتُ بِـمَ هٰذَا فَقَالَ بِعِتْقِىْ حَضْرَتْ ثُوَيْبَةَ عَلَيْهَا السَّلَامُ لِاَنَّـهَا اَرْضَعَتْكَ.

অর্থ: আমি আবু লাহাবকে দেখেছি জাহান্নামের আগুনে নিমজ্জিত অবস্থায় চিৎকার করে বলছে, পানি দাও! পানি দাও!! অতঃপর তার বৃদ্ধাঙুলীর গিরা দিয়ে পানি পান করানো হচ্ছে। আমি ইরশাদ মুবারক করলাম, কি কারণে এ পানি পাচ্ছো? আবু লাহাব বললো, আপনার পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করে হযরত ছুয়াইবা আলাইহাস সালাম উনাকে মুক্ত করার কারণে এই ফায়দা পাচ্ছি। কেননা তিনি আপনাকে দুধ মুবারক পান করিয়েছেন।” সুবহানাল্লাহ!

এ প্রসঙ্গে ‘মাওয়াহিবুল লাদুননিয়া’ কিতাবের বিখ্যাত শরাহ ‘শরহুয্ যারকানী’ কিতাবের ১ম খ-ের ২৬১ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-হযরত ইবনুল জাযরী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, “আবু লাহাবের মতো কাট্টা কাফির যার নিন্দায় পবিত্র কুরআন শরীফ উনার আয়াত শরীফ ও সূরা শরীফ পর্যন্ত নাযিল হয়েছে, তাকে যদি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশে আনন্দিত হয়ে খুশি প্রকাশ করার কারণে জাহান্নামেও তার পুরস্কার দেয়া হয়ে থাকে তবে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উম্মতের কোন মুসলমান যদি পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তথা সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করে তার সাধ্যানুযায়ী টাকা-পয়সা ইত্যাদি খরচ করে তাহলে তাদের অবস্থা কিরূপ হবে? নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার ফযল ও করমে অবশ্যই অবশ্যই তাকে নিয়ামতপূর্ণ জান্নাতে প্রবেশ করাবেন।” সুবহানাল্লাহ! (মা ছাহবাতা বিস সুন্নাহ ১ম খ-, ৮৩ পৃষ্ঠা)

তাফসীরুল কুরআন: হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে নিজেদের মতো বাশার বলা কাট্টা কুফরী

তাফসীরুল কুরআন: হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে নিজেদের মতো বাশার বলা কাট্টা কুফরী

তাফসীরুল কুরআন: হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে নিজেদের মতো বাশার বলা কাট্টা কুফরী

তাফসীরুল কুরআন: মিথ্যার কুফল ও ভয়াবহ পরিণতি

তাফসীরুল কুরআন