নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ইস্তিঞ্জা মুবারক, রক্ত মুবারক সব পবিত্র থেকে পবিত্রতম

সংখ্যা: ২১৯তম সংখ্যা |

মুহম্মদ আব্দুল ওয়াদুদ

সদর, চাঁদপুর

সুওয়াল : আমরা জানি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ইস্তিঞ্জা মুবারক, রক্ত মুবারক সব পবিত্র থেকে পবিত্রতম। সেগুলো খেলে জাহান্নামী লোক জান্নাতী হয়ে যায়। কিন্তু আমাদের এলাকার কতিপয় উলামায়ে ‘সূ’ পবিত্র কুরআন শরীফ উনার পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ উনার ১৭৩ নম্বর আয়াত শরীফ উনার দলীল দিয়ে বলে থাকে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার রক্ত মুবারক, ইস্তিঞ্জা মুবারক খাওয়া নিষেধ। এ ব্যাপারে সঠিক জাওয়াব দিয়ে আমাদের ঈমান-আমল-আক্বীদা উনাদের হিফাযত করবেন বলে আশা রাখি।

জাওয়াব : সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার রক্ত মুবারক, ইস্তিঞ্জা মুবারক, ঘাম মুবারক ইত্যাদি সবই পবিত্র থেকে পবিত্রতম। সেসব পবিত্র জিনিস পান করা বা খাওয়াটা অনেক সু নছিব যা শেফা লাভ ও পবিত্র জান্নাত ওয়াজিব হয়ে জাহান্নাম হারাম হওয়ার কারণ। সুবহানাল্লাহ! এটাই হচ্ছে পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ সম্মত আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত উনাদের অনুসরণীয় ইমাম-মুজতাহিদ উলামায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের ফতওয়া। এ ফতওয়া আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের অনুসারী সকল বান্দা-বান্দী ও উম্মতের জন্য মানা বা বিশ্বাস করা ফরয-ওয়াজিবের অন্তর্ভুক্ত।

অতএব, যারা উক্ত ফতওয়ার বিপরীত মত প্রকাশ করে তারা ৭২টি বাতিল ও জাহান্নামী ফিরক্বার অন্তর্ভুক্ত। তাদের কোন বক্তব্য গ্রহণযোগ্য নয়। বাতিল ফিরক্বার প্রদত্ত বক্তব্য ও দলীল বিভ্রান্তিকর, গোমরাহীমূলক এবং জাহান্নামী হওয়ার কারণ। কেননা যাদের আক্বীদা-আমল-আখলাক্ব শুদ্ধ নয়- তাদের ফতওয়া দেয়ার অধিকার আদৌ নেই।

বিশেষ করে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্পর্কে যাদের আক্বীদা শুদ্ধ নয় প্রকৃতপক্ষে তারা মুসলমানই নয়। যারা মুসলমানই নয় তাদের ফতওয়া ও দলীল কি করে গ্রহণযোগ্য হতে পারে?

কাজেই, ফতওয়া দিতে হলে সর্বপ্রথম আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত উনাদের আক্বীদায় পরিপূর্ণ বিশ্বাসী হতে হবে। বিশ্বাস করতে হবে যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার উম্মতের কারো মতো নন। যেমনিভাবে খালিক্ব, মালিক, রব মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার কোন বান্দা-বান্দী বা কোন সৃষ্টির মতো নন।

কাজেই, কুল-মাখলূক্বাতের নবী ও রসূল সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খুছূছিয়ত বা বৈশিষ্ট্য আর উম্মতের বৈশিষ্ট্য এরকম নয়।

যেমন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সৃষ্টি হয়েছেন মহান আল্লাহ পাক উনার প্রথম সৃষ্টিকৃত নূর মুবারক থেকে। অর্থাৎ উনার দেহ মুবারক উনার সবকিছুই হচ্ছে নূর মুবারক দ্বারা সৃষ্ট; এ কারণে উনাকে বলা হয় নূরে মুজাসসাম।

কিন্তু আমরা যারা উম্মত রয়েছি আমাদের সৃষ্টির উপাদান হচ্ছে পবিত্র পানি বা নুতফা থেকে অর্থাৎ স্বচ্ছ পানির নির্যাস থেকে। আমাদের দেহ বা শরীরের সাথে মিশ্রিত রয়েছে পানি, মাটি, বাতাস ও আগুন।

সুতরাং কুল-মাখলূক্বাতের নবী ও রসূল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্রতম দেহ মুবারক উনার হুকুম আর আমাদের সাধারণ উম্মতের দেহ বা শরীরের হুকুমের মধ্যে অনেক পার্থক্য রয়েছে।

যেমন পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

ان اجساد الانبياء كاجساد الـملائكة

অর্থ : “নিশ্চয়ই হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের শরীর মুবারক হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদের শরীর মুবারক উনার অনুরূপ।”

এ কারণেই উম্মতের মধ্যে যারা অগ্রগামী ও প্রথম হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের মধ্যে কেউ কেউ উনারা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্রতম রক্ত ও ইস্তিঞ্জা মুবারক পান করেছিলেন। সুবহানাল্লাহ!

এ মর্মে বর্ণিত আছে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি রাতের বেলা যে খাটিয়া (চকি) মুবারক-এ শয়ন করতেন, তার নিচে একখানা পাত্র রেখে দেয়া হতো, যেন প্রয়োজনে তিনি তাতে প্রস্রাব মুবারক করতে পারেন। তিনি একবার এক রাতে উক্ত পাত্রের মধ্যে প্রস্রাব মুবারক করলেন। সকালে তিনি স্বীয় খাদিমা হযরত উম্মে আয়মান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা উনাকে বললেন, খাটের নিচে একটি পেয়ালাতে প্রস্রাব মুবারক রয়েছে, তা বাইরে ফেলে দিয়ে আসুন।

হযরত উম্মে আয়মান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা তিনি বলেন, মহান আল্লাহ পাক উনার কসম, রাতে আমার খুব পিপাসা লেগেছিল যার কারণে আমি তা পান করে ফেলেছি। একথা শুনে হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মৃদু হাসলেন। কিন্তু উনাকে মুখ ধুয়ে নিতেও বলেননি বা ভবিষ্যতে এরূপ করতে নিষেধও করেননি। বরং ইরশাদ করলেন, “এখন থেকে আপনার আর পেটের অসুখ হবেনা।” সুবহানাল্লাহ! কতই না সৌভাগ্য, কতইনা খোশ নছীব। সুবহানাল্লাহ!

অপর এক বর্ণনায় রয়েছে, হযরত বারাকাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা নামে এক মহিলা ছাহাবী ছিলেন সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খাদিমা। একবার তিনি হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র প্রস্রাব মুবারক পান করে ফেললেন। তখন সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনাকে লক্ষ্য করে বললেন, হে উম্মে ইউসুফ! আপনি চির সুস্থ হয়ে গেলেন। আপনার কখনও কোন অসুখ হবে না। সুবহানাল্লাহ! পরবর্তীতে উক্ত মহিলা ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা বিছাল শরীফ লাভ অবধি কোন রোগেই আক্রান্ত হননি।

আরেক বর্ণনায় রয়েছে, জনৈক ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রস্রাব মুবারক পান করেছিলেন। ফলশ্রুতিতে তিনি জান্নাতী হওয়ার সুসংবাদপ্রাপ্ত হন এবং উনার সমস্ত শরীর মুবারক থেকে সারাজীবন সুঘ্রাণ ছড়াতো। এমনকি উনার বংশধরদের সাত পুরুষ পর্যন্ত সুঘ্রাণ পাওয়া যেত। সুবহানাল্লাহ!

মূলত হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র প্রস্রাব মুবারক ও রক্ত মুবারককে বরকতময় মনে করতেন। বর্ণিত রয়েছে, হযরত হাজ্জাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শরীর মুবারক উনার মধ্যে শিঙ্গা লাগাতেন। তিনি শিঙ্গা দিয়ে টানা রক্ত মুবারক বের করে তা নির্দ্বিধায় পান করে ফেলতেন। একবার সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনাকে জিজ্ঞেস করলেন, আপনি রক্ত কি করেছেন? তিনি জাওয়াব দিলেন, আমি রক্ত মুবারক বের করে তা আমার পেটের মধ্যেই রেখে দিয়েছি। কেননা আমি এটা কামনা করিনা যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র শরীর মুবারক থেকে উনার পবিত্র রক্ত মুবারক মাটিতে পড়ুক। একথা শুনে হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, নিঃসন্দেহে আপনি আপন আশ্রয় খুঁজে নিয়েছেন এবং নিজেকে সুরক্ষিত করে নিয়েছেন। অর্থাৎ এ ওসীলায় আপনি রোগ ব্যাধি থেকে নিরাপদ হয়ে গেলেন এবং জান্নাতী হয়ে গেলেন। সুবহানাল্লাহ!

উহুদের যুদ্ধের দিন সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যখন আহত হলেন, তখন উনার জখম মুবারক থেকে রক্ত মুবারক গড়িয়ে পড়তে লাগলো। সে মুহূর্তে হযরত আবূ সাঈদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার পিতা হযরত মালিক ইবনে সিনান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি আপন জিহ্বা দ্বারা সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যখম মুবারক থেকে রক্ত মুবারক চুষে নিয়ে জখমকে পরিষ্কার করে দিয়েছিলেন। লোকেরা বললেন, মুখ থেকে রক্ত মুবারক বাইরে ফেলুন। তিনি অসম্মতি প্রকাশ করে বললেন, মহান আল্লাহ পাক উনার কসম! সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার রক্ত মুবারক আমি যমীনে পড়তে দিবনা। তিনি রক্ত মুবারক গিলে ফেললেন। তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উপস্থিত লোকদেরকে লক্ষ্য করে বললেন, “কেউ যদি এ মুহূর্তে কোন জান্নাতী লোককে দেখতে চায়, সে যেন এ ব্যক্তিকে দেখে নেয়।” সুবহানাল্লাহ!

উপরোক্ত বর্ণনা ছাড়াও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরও অনেক বর্ণনা রয়েছে সে সমস্ত বর্ণনা দ্বারা সুস্পষ্টরূপে প্রমাণিত ও সাব্যস্ত হয়েছে যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ইস্তিঞ্জা মুবারক, প্রস্রাব মুবারক ও রক্ত মুবারক অতীব পবিত্র, বরকতময় এবং নাযাত ও কামিয়াবী লাভ উনার কারণ। (মাজমায়ে ছগীর, দালায়িলে আবু নঈম, মাওয়াহিবে লাদুন্নিয়া, আশ শিফা, মাদারিজুন নুবুওওয়াত)

স্মরণীয় যে, যখন হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের দ্বারা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র রক্ত মুবারক, ইস্তিঞ্জা মুবারক পান করার বিষয়টি প্রমাণিত তখন আর বলার অপেক্ষা রাখে না যে, পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ উনার ১৭৩ নম্বর আয়াত শরীফ উনার হুকুম নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ক্ষেত্রে আদৌ প্রযোজ্য ছিল না বা প্রযোজ্য নয়। কারণ হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের সম্পর্কে পরবর্তী উম্মতের চাইতে অনেক বেশি জানতেন ও বুঝতেন।

কাজেই, পবিত্র ‘সূরা বাক্বারা’ শরীফ উনার উক্ত আয়াত শরীফ উনার সম্পর্কে যেমনি পূর্ণ ওয়াকিফহাল ছিলেন ছহিবুল ওয়াহ্য়ি মুবারক, ছাহিবুল আয়াত শরীফ ওয়াল হাদীছ শরীফ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, তেমনি উনার থেকে অবগত হয়েছিলেন উনার মহানতম আদর্শের প্রকৃত পতাকাবাহী হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা। উনাদের মাধ্যমেই তো পরবর্তী উম্মত পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের  ব্যাখ্যা, ভাষ্য, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পরিচয়, শিক্ষা, পবিত্র জীবনাদর্শ মুবারক সম্পর্কে জেনেছেন।

কাজেই, কোন বিষয়ে উনাদের বিপরীত মত প্রকাশ করার অর্থই হচ্ছে ঈমান ও পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনাদের থেকে খারিজ হয়ে যাওয়া।

যেমন মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

فان امنوا بمثل ما امنتم به فقدهتدوا

অর্থ : “যদি তারা অর্থাৎ মুসলমান ছূরতে মুনাফিকরা ওইরূপ ঈমান আনে যেরূপ আপনারা অর্থাৎ হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা ঈমান এনেছেন; তবেই তারা হিদায়েত লাভ করবে।” (পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১৩৭)

মহান আল্লাহ পাক তিনি আরও ইরশাদ মুবারক করেন-

والذين اتبعوهم باحسان رضى الله عنهم ورضوا عنه

অর্থ : “হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে যারা উত্তমভাবে অনুসরণ করবে, তাদের প্রতি মহান আল্লাহ পাক তিনি সন্তুষ্ট এবং উনারাও মহান আল্লাহ পাক উনার প্রতি সন্তুষ্ট।” (পবিত্র সূরা ফাতহ শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ২৯)

এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

اصحابى كالنجوم فبايهم اقتديتم اهتديتم

অর্থ : “আমার ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা তারকা সাদৃশ্য। উনাদের যে কাউকে তোমরা অনুসরণ করবে, হিদায়েত লাভ করবে বা হিদায়েতের উপর থাকবে।” (মিশকাত শরীফ)

কাজেই, পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ উনার মধ্যে রক্ত পান করা বা খাওয়া হারাম ঘোষণা করা হয়েছে; এর দ্বারা উদ্দেশ্য ‘প্রবাহমান রক্ত’ অর্থাৎ শুধুমাত্র সে রক্তকেই হারাম করা হয়েছে যা জীব-জন্তু যবেহ করলে বা কেটে গেলে প্রবাহিত হয়। যেহেতু প্রবাহমান রক্তই হারাম ও নাপাক, সেহেতু যবেহ করা জন্তুর গোশতের সাথে যে রক্ত লেগে থাকে তা পাক ও হালাল।

উল্লেখ্য, পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ উনার মধ্যে উল্লিখিত ১৭৩ নম্বর আয়াত শরীফ উনার হুকুমের ন্যায় আরও অনেক আয়াত শরীফ উনার মধ্যে রয়েছে যার হুকুম কেবল উম্মতের জন্যেই প্রযোজ্য। যেমন ‘পবিত্র সূরা নিসা শরীফ’ উনার ৩ নম্বর আয়াত শরীফ উনার মধ্যে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

فانكحوا ما طاب لكم من النساء مثنى وثلث وربع فان خفتم الا تعدلوا فواحدة

অর্থ : “আর মহিলাদের মধ্য থেকে যাদেরকে তোমাদের পছন্দ হয় তাদেরকে বিবাহ কর দুই, তিন কিংবা চারজন পর্যন্ত। আর যদি আশঙ্কা হয় যে, তাদের মধ্যে ইনসাফ (সমতা) বজায় রাখতে পারবে না, তাহলে একজনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাক।”

এ পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে প্রয়োজনে একইসাথে চারজন মহিলাকে আহলিয়া হিসেবে গ্রহণ করার অনুমতি প্রদান করা হয়েছে। এর বেশি গ্রহণ করার অনুমতি নেই। এ হুকুম কেবল আমাদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। এ হুকুম কুল-মাখলূক্বাতের যিনি নবী ও রসূল, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জন্য প্রযোজ্য নয় বা ছিলনা।

তাই পবিত্র হাদীছ শরীফ ও সীরত গ্রন্থসমূহে আমরা দেখতে পাই যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক  ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যখন বিছাল শরীফ গ্রহণ করেন তখন উনার পবিত্রা আহলিয়া হযরত উম্মুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনারা ৯ জন বর্তমান ছিলেন।

কাজেই, পবিত্র আয়াত শরীফ এবং পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদেরকে দলীল হিসেবে পেশ করতে হবে সত্য; তবে কোন্ আয়াত শরীফ উনার কি হুকুম এবং কোন পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার কি হুকুম, তা জানতে হবে। না জেনে, না বুঝে দলীল দেয়া জিহালতী ও গোমরাহী বৈ কিছইু নয়।

বিশেষ করে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যিনি হচ্ছেন ঈমান উনার মূল উনার বিষয়ে মুসলমানের কোন কথা বলতে হলে সাবধানে বলতে হবে। অন্যথায় কঠিন পরিণতির সম্মুখীন হতে হবে। কেননা উনার প্রতি ঈমান আনা ব্যতীত, উনার প্রতি সুধারণা পোষণ করা ব্যতীত, উনাকে সবচেয়ে বেশি মুহব্বত না করা ব্যতীত, উনাকে অনুসরণ অনুকরণ না করা ব্যতীত, উনার আদেশ-নিষেধগুলো মনে প্রাণে বিশ্বাস করা ও না মানা পর্যন্ত কারো পক্ষে প্রকৃত মু’মিন মুসলমান হওয়া এবং কামিয়াবী অর্জন করা সম্ভব নয়।