বাররাকুল জাবীন, বাসিতুল ইয়াদাইন, বালিগুল বয়ান, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিতা আহলিয়া হযরত উম্মুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের ফাযায়িল-ফযীলত ও পবিত্রতা

সংখ্যা: ২২১তম সংখ্যা | বিভাগ:

সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছোহবত মুবারক উনার মধ্যেই রয়েছে সর্বাধিক মর্যাদা-মর্তবা। হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছোহবত মুবারক উনার মহান সৌভাগ্যশালী হওয়ার কারণেই হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা দুনিয়ায় থাকতেই খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টি-রেযামন্দী মুবারক উনার সুসংবাদ অর্জন করেন।

যেমন- খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার পবিত্র কালাম পাক উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

رضى الله عنهم ورضوا عنه

অর্থ : “মহান আল্লাহ পাক তিনি উনাদের (হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম) উপর সন্তুষ্ট; উনারাও খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার প্রতি সন্তুষ্ট।” (পবিত্র সূরা মায়িদা শরীফ-১১৯, পবিত্র সূরা মুজাদালাহ শরীফ-২২, পবিত্র সূরা বাইয়্যিনাহ শরীফ-৮)

হযরত উম্মুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনারা একদিকে যেমন হযরত ছাহাবীয়াগণ উনাদের অন্তর্ভুক্ত, অন্যদিকে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ইহকাল ও পরকালীন জীবনসঙ্গিনী হওয়ারও সুমহান সৌভাগ্য অর্জন করেন। যার কারণে অন্যান্য পরহেযগার-মুত্তাক্বী মহিলাগণ উনাদের থেকে উনাদেরকে অসংখ্য-অগণিত নিয়ামত, মর্যাদা-মর্তবা, ফাযায়িল-ফযীলত বেশি প্রদান করা হয়েছে। যা স্বয়ং খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি ও উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারা প্রদান করেছেন।

খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার কালাম পাক উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-

يا نساء النبى لستن كاحد من النساء

অর্থ : “হে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আহলিয়া অর্থাৎ উম্মুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম! আপনারা অন্য নারীদের মতো নন।” (পবিত্র সূরা আহযাব শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৩২)

এ পবিত্র আয়াত শরীফ উনার ব্যাখ্যায় বিশ্ববিখ্যাত ও সর্বজনমান্য তাফসীরের কিতাব “তাফসীরে মাযহারী” উনার ৭ম খণ্ডের ৩৩৬ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-

اى ليست كل واحدة منكن او الـمعنى لـم توجد جماعة واحدة من جماعات النساء مثلكن فى الفضل قال ابن عباس اى ليس قدركن عندى مثل قدر غيركن من النساء الصالـحات انتن اكرم على وثوابكن اعظم لدى. هذه الاية تدل على فضلهن على سائر النساء.

অর্থ : “হে উম্মুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম! আপনারা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! উনার সহধর্মিণী হওয়ার কারণেই মর্যাদা, মর্তবা, ফযীলতের দিক থেকে কোন মহিলাই আপনাদের সমকক্ষ নয়। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি (আয়াত শরীফ উনার ব্যাখ্যায়) বলেছেন, আপনাদের মর্যাদা, মর্তবা, ফাযায়িল, ফযীলত অন্যান্য সতী-সাধ্বী মহিলাগণ উনাদের মতো নয়। বরং আপনাদের সম্মান-মরযাদা, ফাযায়িল-ফযীলত, অধিক পুণ্য ও প্রতিদান আমার নিকটে অধিক মর্যাদা সম্পন্ন, অনেক ঊর্ধ্বে। এ পবিত্র আয়াত শরীফ উনার দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, সমস্ত মহিলাগণের উপরে হযরত উম্মুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের অধিক মর্যাদা-মর্তবা, ফাযায়িল-ফযীলত রয়েছে।” (অনুরূপভাবে তাফসীরে খাযিন শরীফ ৫ম খণ্ডের ২৫৭ পৃষ্ঠা, তাফসীরে বাগবী শরীফ ৫ম খণ্ডের ২৫৭ পৃষ্ঠা, তাফসীরে মাদারিকুত তানযীল শরীফ ৩য় খণ্ডের ৪৬৫ পৃষ্ঠা এবং অন্যান্য সকল নির্ভরযোগ্য তাফসীর গ্রন্থে আলোচনা রয়েছে।)

 

মহান আল্লাহ পাক স্বয়ং উম্মুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদেরকে আহলে বাইত শরীফ হিসেবে ঘোষণা করেছেন এবং পূত-পবিত্রা করেছেন

 

খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন তিনি বলেন-

انما يريد الله ليذهب عنكم الرجس اهل البيت ويطهركم تطهيرا

অর্থ : “হে আহলে বাইত শরীফগণ! মহান আল্লাহ পাক তিনি চান আপনাদের থেকে অপবিত্রতা দূর করতে এবং আপনাদেরকে পরিপূর্ণরূপে পূত-পবিত্র রাখতে।” (পবিত্র সূরা আহযাব শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৩৩)

এ পবিত্র আয়াত শরীফ উনার ব্যাখ্যায় “তাফসীরে মাযহারী” উনার ৭ম খ-ের ৩৩৯ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-

قال عكرمة ومقاتل اراد باهل البيت نساء النبى صلى الله عليه وسلم

অর্থ : “হযরত ইকরামা রহমতুল্লাহি আলাইহি ও মুক্বাতিল রহমতুল্লাহি আলাইহি উনারা বলেন, পবিত্র আয়াত শরীফ-এ ‘আহলে বাইত শরীফ’ দ্বারা হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আহলিয়া অর্থাৎ উম্মুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদেরকে উদ্দেশ্য করা হয়েছে।”

“তাফসীরে ইবনে কাছীর” উনার ৩য় খণ্ডের ৭৬৯ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-

نص فى دخول ازواج النبى صلى الله عليه وسلم فى اهل البيت ههنا لانهن سبب نزول هذه الاية.

অর্থ : “এ আয়াত শরীফখানা এটাই প্রমাণ করে যে, হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিতা আহলিয়া অর্থাৎ হযরত উম্মুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালামগণ উনারা আহলে বাইত শরীফ উনাদের অন্তর্ভুক্ত।”

উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে হযরত উম্মুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের সাথে উনাদের সন্তান-সন্ততিগণও আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের অন্তর্ভুক্ত হবেন। যেমনটি পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে।

“তাফসীরে মাযহারী” উনার ৭ম খণ্ডের ৩৪০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে, হযরত আবু সাঈদ খুদরী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি এবং তাবিয়ীনগণ উনাদের একটি বিরাট জামাআত হযরত মুজাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত কাতাদা রহমতুল্লাহি আলাইহি ও অন্যান্যগণ উনারা বলেন : হযরত আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের অন্তর্ভুক্ত হচ্ছেন- হযরত আলী র্কারামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম, হযরত ফাতিমাতুয যাহরা আলাইহাস সালাম, হযরত ইমাম হাসান আলাইহিস সালাম ও হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম।

পবিত্র “ছহীহ মুসলিম শরীফ” উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে, উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্ব¡া আলাইহাস সালাম তিনি বলেন, “একদা রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি চাদরাবৃত হয়ে হুজরা শরীফ থেকে বাহিরে তাশরীফ মুবারক নিলেন। চাদর মুবারকটি ছিলো পশমী। একটু পরে সেখানে উপস্থিত হলেন হযরত ইমাম হাসান আলাইহিস সালাম। আখিরী রসূল হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনাকে চাদর দ্বারা ঢেকে নিলেন। এরপর এলেন হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম। তিনি উনাকেও চাদরে ঢেকে নিলেন। এরপর এলেন উম্মু আবীহা হযরত ফাতিমাতুয যাহরা আলাইহাস সালাম। তিনি উনাকেও প্রবেশ করিয়ে নিলেন চাদরের ভিতর। শেষে এলেন হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম। আখিরী রসূল হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনাকেও জড়িয়ে নিলেন চাদরের ভিতর। তারপর পাঠ করলেন পবিত্র এই আয়াত শরীফ, “হে আহলে বাইত শরীফগণ! খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি চান আপনাদের থেকে অপবিত্রতা দূর করতে এবং আপনাদেরকে পরিপূর্ণরূপে পূত-পবিত্র রাখতে।”

(অনুরূপভাবে তাফসীরে ইবনে কাছীর শরীফ, আহকামুল কুরআন লিল কুরতুবী শরীফ, আহকামুল কুরআন লি ইবনিল আরাবী শরীফ, মিশকাত শরীফ এবং অন্যান্য হাদীছ শরীফ উনার কিতাবসমূহে হাদীছ শরীফখানা বর্ণিত আছে।)

উপরোক্ত আয়াত শরীফ, তাফসীর শরীফ এবং হাদীছ শরীফ উনাদের দলীল থেকে প্রমাণিত হলো যে, হযরত ইমাম-মুজতাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের ঐকমত্যে আখিরী রসূল হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম, উম্মু আবীহা হযরত ফাতিমাতুয যাহরা আলাইহাস সালাম, হযরত ইমাম হাসান আলাইহিস সালাম ও হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম এবং সমস্ত হযরত উম্মুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনারা সকলেই হচ্ছেন আহলে বাইত শরীফ উনাদের অন্তর্ভুক্ত।

হযরত উম্মুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদেরকে বিবাহ করা কোন মুসলমানের জন্য জায়িয নেই; যেহেতু উনারা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আহলিয়া তথা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম

এ প্রসঙ্গে খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার পবিত্র কালাম পাক উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-

ولا ان تنكحوا ازواجه من بعده ابدا ان ذلكم كان عند الله عظيما.

অর্থ : “উনার অর্থাৎ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিছাল শরীফ উনার পর উনার আহলিয়া অর্থাৎ হযরত উম্মুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদেরকে বিবাহ করা তোমাদের জন্য জায়িয নেই। খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার কাছে এটা অত্যন্ত গুরুতর অপরাধ।” (পবিত্র সূরা আহযাব শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৫৩)

“তাফসীরে ইবনে কাছীর শরীফ” উনার ৩য় খণ্ডের ৮০৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-

ولـهذا اجمع العلماء قاطبة على ان من توفى عنها رسول الله صلى الله عليه وسلم من ازواجه انه يحرم على غيره تزوجها من بعده لانـهن ازواجه فى الدنيا والاخرة وامهات الـمؤمنين.

অর্থ : “সমস্ত হযরত উলামায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ উনারা ইজমা করেছেন যে, হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিছাল শরীফ উনার পর উনার কোন আহলিয়া আলাইহিন্নাস সালাম উনাদেরকে বিবাহ করা অন্য কারো জন্য জায়িয নেই বরং হারাম। কেননা, উনারা ইহকালে উনার (হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার) সহধর্মিণী ছিলেন পরকালেও সহধর্মিণী হিসেবে থাকবেন। আর উনারা ক্বিয়ামত পর্যন্ত সকল মু’মিনগণের সম্মানিতা মাতা।” সুবহানাল্লাহ!

“তাফসীরে মাযহারী” উনার ৭ম খণ্ডের ৩৭২, ৩৭৩ পৃষ্ঠায় বর্ণিত আছে যে, হযরত ইবনু আবী হাতিম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি হযরত ইবনু যায়িদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, “একদা হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কাছে সংবাদ পৌঁছলো যে, এক ব্যক্তি বলেছে- হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিছাল মুবারক উনার পর আমি উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনাকে বিবাহ করবো। এ প্রেক্ষিতে উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ অবতীর্ণ হয়।”

হযরত ইমাম বাগবী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, হযরত মুয়াম্মার রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি হযরত ইমাম যুহরী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণনা করেছেন, হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আহলিয়া আলাইহিন্নাস সালাম উনাদেরকে বিবাহ করা নিষিদ্ধতার হুকুম আসার পূর্বে হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ‘আলিয়া বিনতে যুবইয়ান’নামের এক আহলিয়াকে তালাক দিয়েছিলেন। পরে তিনি জনৈক ব্যক্তির সহধর্মিণী হন এবং কয়েকজন সন্তান-সন্ততির জননীও হন।

হযরত ইমাম বাইযাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, আখিরী রসূল হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ওই সকল আহলিয়াগণ বিবাহ নিষিদ্ধ আইনের বিধানের বাইরে যারা উনার সাথে নির্জন অবস্থানের সুযোগ পাননি।

এক বর্ণনায় এসেছে- “হযরত উমর ফারূক আলাইহিস সালাম উনার খিলাফতকালে আশয়াছ ইবনে কায়েস নামীয় এক আরবীয় ব্যক্তি হযরত মুস্তায়িযা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা উনাকে বিবাহ করেছিলেন। হযরত উমর ফারূক আলাইহিস সালাম তিনি এ খবর জানতে পেরে আশয়াছ ইবনে কায়েসকে প্রস্তর নিক্ষেপের মাধ্যমে হত্যা করতে মনস্থ করলেন। কারণ হযরত মুস্তায়িযা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা তিনি ছিলেন- হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আহলিয়া। কিন্তু পরে তিনি যখন জানতে পারলেন যে, হযরত মুস্তায়িযা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা উনার সঙ্গে নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নির্জন অবস্থান হওয়ার আগেই তিনি উনাকে পরিত্যাগ করেছিলেন। তখন তিনি আশয়াছ ইবনে কায়েসকে হত্যা করার সিদ্ধান্ত পরিত্যাগ করেন।” (তাফসীরে বাইযাবী, শায়খ যাদাহ, হাশিয়াতুশ শিহাব, তাফসীরে বাগবী, খাযিন, মাদারিকুত তানযীল ইত্যাদি তাফসীর গ্রন্থেও এ সম্পর্কে আলোচনা রয়েছে।)

হায়াতুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হওয়ার কারণেই উনার আহলিয়া আলাইহিন্নাস সালাম উনাদেরকে বিবাহ করা হারাম

“তাফসীরে মাযহারী” উনার ৭ম খণ্ডের ৩৭৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-

اى ذنبا عظيما قلت وجاز ان يكون ذلك لاجل ان النبى صلى الله عليه وسلم حى فى قبره ولذلك لـم يورث ولـم يتئم ازواجه عن ابى هريرة رضى الله عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم من صلى على عند قبرى سمعته ومن صلى على نائبا ابلغته

অর্থ : “(হযরত উম্মুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম) উনাদেরকে বিবাহ করা বড় গুনাহ। আমি বলি : হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আহলিয়া আলাইহিন্নাস সালাম উনাদেরকে বিবাহ করা হারাম এজন্যই যে, যেহেতু তিনি উনার রওযা শরীফ উনার মধ্যে জীবিত আছেন, তিনি হায়াতুন নবী। সে কারণে উনার সম্পত্তির কোন ওয়ারিছ নেই এবং উনার আহলিয়া আলাইহিন্নাস সালামগণও বিধবা নন।”

হযরত আবু হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “যে ব্যক্তি আমার রওযা শরীফ উনার নিকটে এসে ছলাত ও সালাম দিবে আমি তা সরাসরি শুনি। আর যে আমার নিকট দূরদেশ থেকে ছলাত ও সালাম পাঠাবে তা আমার কাছে পৌঁছে দেয়া হয়।” (বাইহাক্বী ফী শুয়াবিল ঈমান)

 

হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কারণেই মহান আল্লাহ পাক উনার থেকে উনাদেরকে নিয়ামত প্রদান

 

খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার পবিত্র কালাম পাক উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-

ومن يقنت منكن لله ورسوله وتعمل صالـحا نؤتها اجرها مرتين واعتدنا لـها رزقا كريما.

অর্থ : “আপনাদের মধ্যে যে কেউ খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের প্রতি অনুগত হবেন ও সৎকার্য করবেন উনাকে আমি পুরস্কার দিবো দুইবার এবং উনার জন্য আমি প্রস্তুত রেখেছি সম্মানজনক রিযিক।” (পবিত্র সূরা আহযাব শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৩১)

“তাফসীরে মাযহারী”উনার ৭ম খণ্ডের ৩৩৬ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে, দ্বিগুণ পুরস্কারের অর্থ হচ্ছে-

প্রথমত : উনারা দ্বিগুণ পুরস্কার লাভ করবেন খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের ইতায়াত বা আনুগত্যতার জন্য।

দ্বিতীয়ত : হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সন্তুষ্টি-রেযামন্দী মুবারক অর্জনের জন্য। উনার উপর সন্তুষ্ট হয়ে উত্তম জীবনযাপনের জন্য।

হযরত মুক্বাতিল রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, উনাদের প্রতিটি পুণ্যের প্রতিদান দেয়া হবে দশগুণ করে। এটা হচ্ছে আম বদলা। আর খাছ বদলা হচ্ছে অসংখ্য, অগণিত। কারণ দাতা খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি হচ্ছেন অসীম আর উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হচ্ছেন উনার কুদরত মুবারক উনার অধীন। সুবহানাল্লাহ!

“তাফসীরে মাযহারী” উনার ৭ম খণ্ডের ৩৩৬ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-

اى جليل القدر وهو الجنة زيادة على اجرها قلت وذالك لانهن يرزقن بمتابعة النبى صلى الله عليه وسلم مايرزق النبى صلى الله عليه وسلم.

অর্থ : “(হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আহলিয়া আলাইহিন্নাস সালামগণ) উনাদেরকে সম্মানজনক রিযিক প্রদান করা হবে। তা হচ্ছে জান্নাত। যা সবচেয়ে বড় প্রতিদান। আমি বলি : উনারা উত্তম রিযিক পাবেন হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আহলিয়া হওয়ার কারণেই। তাই হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জন্য যে রিযিক, উনাদের জন্যও সে রিযিক ধার্য হবে।” সুবহানাল্লাহ! (তাফসীরে ইবনে কাছীর, কুরতুবী, আহকামুল কুরআন, খাযিন, বাগবী, মাদারিক ইত্যাদি তাফসীরগুলোতে আরও বিশদভাবে আলোচনা রয়েছে।)

পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, তাফসীর শরীফ ইত্যাদি কিতাব উনাদের উপরোক্ত আলোচনা থেকে স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো যে-

(১) আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আহলিয়া হওয়ার কারণেই হযরত উম্মুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের মর্যাদা অন্যান্য সকল নারীর উপরে। সুবহানাল্লাহ!

(২) হযরত উম্মুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনারা যেমন ইহকালে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আহলিয়া; তদ্রূপ বেহেশতেও উনারা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আহলিয়া হিসেবেই থাকবেন। সুবহানাল্লাহ!

(৩) হযরত উম্মুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনারা আহলে বাইত শরীফ উনাদের অন্তর্ভুক্ত। সুবহানাল্লাহ!

(৪) অন্যান্য মানুষের থেকে উনাদের আমলের প্রতিদান দ্বিগুণ-বহুগুণে প্রদান করা হবে। সুবহানাল্লাহ!

(৫) পৃথিবী সৃষ্টির পূর্বে-পরে, যে কোন কালে যাঁরাই অনেক মর্যাদাশালী হয়েছেন; তাঁরাই আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কারণেই মর্যাদাময় হয়েছেন। এর উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হযরত উম্মুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনারা। সুবহানাল্লাহ!

খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের সন্তুষ্টি, রেযামন্দী মুবারক অর্জনের মূল মাধ্যম হচ্ছে ছোহবত মুবারক। এজন্য হযরত ইমাম-মুজতাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ উনারা ওলীআল্লাহ উনাদের ছোহবত অর্জন করাকে ফরযে আইন ফতওয়া দিয়েছেন। তাই বর্তমান যামানার ইমাম ও মুজতাহিদ, আওলাদুর রসূল, গাউছুল আ’যম, মুজাদ্দিদ আ’ম, ইমাম রাজারবাগ শরীফ উনার হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার হাক্বীক্বী ছোহবত অর্জনের মাধ্যমে খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক আমাদের সকলকে উনার এবং উনার রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, হযরত উম্মুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম, হযরত আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম এবং সমস্ত হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের প্রতি যথাযথ সম্মান-মর্যাদা, তা’যীম-তাকরীম ও সুধারণা রাখার তাওফীক দান করুন। আমীন

-আল্লামা সাইয়্যিদ আহমদ শিহাবুদ্দীন মুজাদ্দিদী

আলআছদাকু, আলআত্বহারু, আলআত্বইয়াবু, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নাম মুবারক শেষে সংক্ষেপে (সাঃ, দঃ) দুরূদ শরীফ লিখা প্রসঙ্গে

আওওয়ালু শাফিয়িন, আওওয়ালু মুশাফ্ফায়িন, আওওয়ালু মাঁইইয়ুর্হারিক হালক্বাল জান্নাতি হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে ‘বিশ্বনেতা’, ‘মহামানব’, ‘মহাপুরুষ’, ইত্যাদি শব্দ দ্বারা সম্বোধন করা প্রসঙ্গে

ইমামুল মুরসালীনা, ইমামুন্ নাবিইয়ীনা, ইমামুল উম্মাতি, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিতা আম্মা সাইয়্যিদাতুন্ নিসায়ি আলাল আলামীন হযরত আমিনা আলাইহাস্্ সালাম রচিত সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ না’ত শরীফ প্রমাণ করে যে, তিনি ইলমে গইব-এর অধিকারিণী ছিলেন

আলবাশীরু, আলবালীগু, আলবাদরুল মুনীরু, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আহলিয়াগণ অর্থাৎ উম্মুল মু’মিনীন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুন্না উনাদের ফাযায়িল-ফযীলত ও পবিত্রতা

জালীলুল ক্বদরি, জামীলুয যিকরি, জাওয়ামিউল কালিমি, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উর্ধ্বতন পূর্বপুরুষ উনারা ছিলেন পবিত্র থেকে পবিত্রতম