পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ অর্থাৎ সম্মানিত শরীয়ত উনার আলোকে খাছ সুন্নতী বাল্যবিবাহ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (পর্ব-১৩)

সংখ্যা: ২৭৬তম সংখ্যা | বিভাগ:

৩৫তম ফতওয়া হিসেবে

“পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ অর্থাৎ সম্মানিত শরীয়ত উনার আলোকে খাছ সুন্নতী বাল্যবিবাহ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া” পেশ করতে পারায় মহান আল্লাহ পাক উনার পবিত্র দরবার শরীফ-এ শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি। আলহামদুলিল্লাহ।

খাছ সুন্নতী বাল্যবিবাহ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া দেয়ার কারণ

সুন্নতের পথিকৃত, হক্বের অতন্দ্র প্রহরী, দ্বীন ইসলাম উনার নির্ভীক সৈনিক, সারা জাহান থেকে কুফরী, শিরকী ও বিদ্য়াতের মূলোৎপাটনকারী, বাতিলের আতঙ্ক এবং আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াত উনাদের আক্বীদায় বিশ্বাসী একমাত্র দলীলভিত্তিক তাজদীদী মুখপত্র- “মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ” পত্রিকায় এ যাবৎ যত লেখা বা ফতওয়াই প্রকাশ বা পত্রস্থ হয়েছে এবং ইনশাআল্লাহ হবে তার প্রতিটিরই উদ্দেশ্য বা মাকছূদ এক ও অভিন্ন। অর্থাৎ “মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ” উনার মধ্যে এমনসব লেখাই পত্রস্থ হয়, যা মানুষের আক্বীদা ও আমলসমূহ পরিশুদ্ধ ও হিফাযতকরণে বিশেষ সহায়ক।

বর্তমানে ইহুদীদের এজেন্ট হিসেবে মুসলমানদের ঈমান আমলের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করছে যারা, তারা হলো “উলামায়ে সূ”। ইহুদীদের এজেন্ট উলামায়ে ‘সূ’রা হারাম টিভি চ্যানেল, পত্র-পত্রিকা, কিতাবাদি ও বক্তব্য বা বিবৃতির মাধ্যমে খাছ সুন্নতী বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে বলছে। অর্থাৎ তাদের বক্তব্য হচ্ছে সম্মানিত শরীয়ত উনার মধ্য বাল্য বিবাহকে স্বীকৃতি দেয়া হয়নি। তাই বাল্য বিবাহ করা বা দেয়া যাবে না। নাউযুবিল্লাহ!

অথচ তাদের উপরোক্ত বক্তব্য সম্পূর্ণ মিথ্যা, চরম বিভ্রান্তিকর ও কুফরীমূলক। তাদের এসব বক্তব্যের কারণে তারা নিজেরা যেরূপ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তদ্রুপ তাদের উক্ত কুফরীমূলক বক্তব্য ও বদ্ আমলের কারণে সাধারণ মুসলমানগণ ই’তিক্বাদী বা আক্বীদাগত ও আ’মালী বা আমলগত উভয় দিক থেকেই বিরাট ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে এবং হবে। নাউযুবিল্লাহ!

কারণ, তাদের উক্ত বক্তব্যের কারণে যারা এ আক্বীদা পোষণ করবে যে, সম্মানিত শরীয়ত উনার মধ্যে বাল্যবিবাহকে স্বীকৃতি দেয়া হয়নি। তাই বাল্যবিবাহ করা বা দেয়া যাবে না। নাউযুবিল্লাহ! নাউযুবিল্লাহ! নাউযুবিল্লাহ! তারা ঈমানহারা হয়ে কাট্টা কাফির ও চির জাহান্নামী হবে। কারণ বাল্য বিবাহ শুধু জায়িযই নয় বরং খাছ সুন্নত উনার অন্তর্ভুক্ত। আর সম্মানিত ইসলামী শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে হালাল বা জায়িয বিষয়কে হারাম বা নাজায়িয বলা এবং হারাম বা নাজায়িযকে হালাল বা জায়িয বলা কুফরী। কেননা কিতাবে স্পষ্টই উল্লেখ আছে যে-

اِسْتِحْلَالُ الْـمَعْصِيَةِ كُفْرٌ.

অর্থাৎ “গুনাহের কাজ বা হারামকে হালাল মনে করা কুফরী।” (শরহে আক্বাইদে নাসাফী শরীফ)

অতএব, বলার আর অপেক্ষাই রাখেনা যে, উলামায়ে “সূ”দের উক্ত বক্তব্য সাধারণ মুসলমান উনাদের আক্বীদা বা ঈমানের জন্য বিশেষভাবে হুমকিস্বরূপ।

উল্লেখ্য, বাল্যবিবাহ করতে বা দিতে হবে এরূপ বাধ্যবাধকতা সম্মানিত শরীয়ত উনার মধ্যে নেই। কারণ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র শরীয়ত বিবাহের বয়স নির্দিষ্ট করে দেয়নি। তবে বাল্যবিবাহ যেহেতু সম্মানিত শরীয়ত উনার মধ্যে জায়িয ও সুন্নত তাই বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে বলা যাবে না। বললে কুফরী হবে, ঈমান নষ্ট হবে। নাউযুবিল্লাহ!

অনুরূপ উলামায়ে “সূ”দের এ কুফরীমূলক বক্তব্য মুসলমানদের আমলের ক্ষেত্রেও বিশেষ ক্ষতির কারণ। কেননা যারা তাদের উক্ত বক্তব্যের কারণে প্রয়োজন থাকা স্বত্বেও বাল্যবিবাহ থেকে বিরত থাকবে তারা একটি খাছ সুন্নত পালন করা থেকে বঞ্চিত হওয়ার পাশাপাশি অশ্লীল, অশালীন, অসামাজিক কাজে মশগুল হতে পারে। নাউযুবিল্লাহ!

কাজেই, যারা এ ধরনের কুফরী আক্বীদায় বিশ্বাসী ও কুফরী বক্তব্য প্রদানকারী তারা ও হক্ব সমঝদার মুসলমানগণ তারা তাদের ঈমান ও আমলকে যেন হিফাযত করতে পারে অর্থাৎ সকল বিষয়ে সম্মানিত আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত উনাদের আক্বীদা অনুযায়ী আক্বীদা পোষণ করতে পারে এবং পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ মোতাবেক আমল করে মহান আল্লাহ পাক উনার রিযামন্দি হাছিল করতে পারে সে জন্যেই “পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ অর্থাৎ সম্মানিত শরীয়ত উনার আলোকে খাছ সুন্নতী বাল্যবিবাহ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কিত ফতওয়াটি” প্রকাশ করা হলো।

খাছ সুন্নতী বাল্য বিবাহ সম্পর্কে উলামায়ে ‘সূ’, নাস্তিক, মুরতাদ, মুনাফিক, বিদয়াতী, গোমরাহ ও বাতিল ফিরক্বার লোকদের উত্থাপিত ও প্রচারিত মনগড়া, মিথ্যা ও দলীলবিহীন বক্তব্যসমূহের দলীলভিত্তিক খণ্ডনমূলক জাওয়াব

সম্মানিত শরীয়ত উনার চারখানা দলীল পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনাদের দ্বারা অকাট্যভাবে প্রমানিত হয়েছে যে, স্বয়ং মহান আল্লাহ পাক তিনি বাল্য বিবাহের অনুমতি দিয়েছেন। স্বয়ং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বাল্য বিবাহ করেছেন, করিয়েছেন ও সমর্থন করেছেন। হযরত খুলাফায়ে রাশিদীন, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম, তাবিয়ীন, তাবে তাবিয়ীন, ইমাম-মুজতাহিদ ও আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের অনেকেই বাল্য বিবাহ করেছেন ও করিয়েছেন। শুধু তাই নয়, বাল্য বিবাহ জায়িয হওয়ার বিষয়ে ইজমা বা ঐক্যমত প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সুবহানাল্লাহ!

অথচ এর পরও কতিপয় উলামায়ে ‘সূ’, নাস্তিক, মুরতাদ, মুনাফিক, বিদয়াতী, গোমরাহ ও বাতিল ফিরক্বার লোকেরা খাছ সুন্নতী বাল্য বিবাহ সম্পর্কে চু চেরা, ক্বীল ও ক্বাল করে থাকে। নানান মনগড়া, বিভ্রান্তিকর আপত্তিসমূহ উত্থাপন করে থাকে। পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের মনগড়া ব্যাখ্যা করে বাল্য বিবাহ সম্পর্কে মিথ্যা ও দলীলবিহীন বক্তব্য পেশ ও প্রচার করে থাকে। নাউযুবিল্লাহ!

নিম্নে উলামায়ে ‘সূ’, নাস্তিক, মুরতাদ, মুনাফিক, বিদয়াতী, গোমরা ও বাতিল ফিরক্বার লোকদের উত্থাপিত ও প্রচারিত মনগড়া, মিথ্যা ও দলীলবিহীন বক্তব্যসমূহ খণ্ডন করে দলীলভিত্তিক সঠিক জাওয়াব প্রদান করা হলো-

২নং আপত্তি ও তার জাওয়াব

উলামায়ে ‘সূ’, নাস্তিক, মুরতাদ ও মুনাফিক বিদয়াতী, গোমরা ও বাতিল ফিরক্বার লোকেরা বলে থাকে যে, “… প্রায় ৫টি সনদে উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার নিসবতে আযীমাহ বা নিকাহ মুবারক উনার বয়স মুবারক সম্পর্কিত রেওয়ায়েত উল্লেখ রয়েছে, সবই হযরত হিশাম ইবনে উরওয়াহ রহমতুল্লাহি আলাইহি কর্তৃক বর্ণিত। তিনি শেষ বয়সে স্মৃতিশক্তির দুর্বলতায় ভুগেছিলেন। যে কারণে উনার শেষ বয়সের অর্থাৎ ইরাকে বসবাসকালীন সময়ে বর্ণিত হাদীছ শরীফগুলোর উপর আস্থা রাখা যায় না।…” (নাউযুবিল্লাহ)

জাওয়াব: উলামায়ে ‘সূ’, নাস্তিক, মুরতাদ, মুনাফিক, বিদয়াতী, গোমরাহ ও বাতিল ফিরক্বার লোকদের উপরোক্ত বক্তব্যের জবাবে বলতে হয় যে, মুলতঃ তাদের উক্ত বক্তব্যের মূল বিষয় হচ্ছে ২টি-

(১) “উম্মুল মু’মিনীন আছছালিছাহ ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার আক্বদ মুবারক বা নিসবতে আযীমাহ মুবারককালীন বয়সের বর্ণনা সম্বলিত পবিত্র হাদীছ শরীফগুলো হযরত হিশাম ইবনে উরওয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি ব্যতীত অন্য কোন রাবী থেকে বর্ণিত নেই।”

(২) “হযরত হিশাম ইবনে উরওয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বর্ণিত পবিত্র হাদীছ শরীফ গ্রহনযোগ্য নয়। কারণ তিনি শেষ বয়সে ইরাকে অবস্থান করেছেন এবং স্মৃতি দূর্বলতায় ভুগেছিলেন। তাই উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফখগুলো বাল্যবিবাহ জায়িয হওয়ার স্বপক্ষে কখনো দলীল হতে পারে না।”

তাদের উল্লেখিত প্রথম বক্তব্যের জবাব হচ্ছে-উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার আক্বদ মুবারক বা নিসবতে আযীমকালীন বয়স  মুবারক সম্পর্কিত রেওয়ায়েত শুধু হযরত হিশাম ইবনে উরওয়াহ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বর্ণনার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং অন্য সনদেও এ সম্পর্কে বহু পবিত্র হাদীছ শরীফ বর্ণিত রয়েছে। যেমন, পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-

حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ يَحْيَى وَإِسْحَاقُ بْنُ إِبْرَاهِيْمَ وَأَبُوْ بَكْرِ بْنُ اَبِـىْ شَيْبَةَ وَأَبُوْ كُرَيْبٍ قَالَ يَـحْيٰـى وَاِسْحَاقُ أَخْبَرَنَا وَقَالَ الْاٰخَرَانِ حَدَّثَنَا أَبُوْ مُعَاوِيَةَ عَنِ الْأَعْمَشِ عَنْ إِبْرَاهِيْمَ عَنِ الْأَسْوَدِ عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ تَزَوَّجَهَا رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَهِىَ بِنْتُ سِتٍّ وَبَنٰـى بِـهَا وَهِىَ بِنْتُ تِسْعٍ

অর্থ: সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। নিশ্চয়ই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে (হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম) উনার আক্বদ বা নিসবাতুল আযীম মুবারক সম্পন্ন হয় যখন উনার বয়স মুবারক ছিল ৬ বছর। আর তিনি ৯ বছর বয়স মুবারকে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র হুজরা শরীফে তাশরীফ মুবারক গ্রহণ করেন।” সুবহানাল্লাহ! (ছহীহুল বুখারী কিতাবু বাদইল ওয়াহই বাবু ইনকাহির রজুলি ওয়ালাদাহুছ ছিগার)

বুখারী শরীফে বর্ণিত উল্লেখিত হাদীছ শরীফ উনার রাবী বা বর্ণনকারী উনারা হলেন হযরত ইয়াহইয়া ইবনে ইয়াহইয়া, ইসহাক ইবনে ইবরাহীম, আবূ বকর ইবনে আবী শায়বা, আবূ কুরাইব, হযরত আবূ মুয়াবিয়া, হযরত আবূ আ’মাশ, হযরত ইবরাহীম ও হযরত আসওয়াদ রহমতুল্লাহি আলাইহিম। এ পবিত্র হাদীছ শরীফের সাথে হযরত হিশাম ইবনে উরওয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার কোনো সম্পর্ক নেই।

حَدَّثَنَا عَبْدُ اللهِ حَدَّثَنِـىْ اَبِـىْ ثَنَا مُـحَمَّدُ بْنُ بُشْرٍ قَالَ حَدَّثَنَا مُـحَمَّدُ بْنُ عَمْرٍو قَالَ ثَنَا حَضْرَتْ اَبُوْ سَلْمَةَ وَيَـحْيٰـى قَالَا: فَزَوَّجَهَا اِيَّاهُ وَاُمَّ الْـمُؤْمِنِيْنَ عَائِشَةَ عَلَيْهَا السَّلَامُ يَوْمَئِذٍ بِنْتُ سِتِّ سِنِيْنَ … وَبَنٰـى بِـىْ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَاَنَا يَوْمَئِذٍ بِنْتُ تِسْعِ سِنِيْنَ ….. اِسْنَادُهٗ حَسَنٌ.

অর্থ: হযরত আবূ সালামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ও হযরত ইয়াহইয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি উনারা বলেন, উম্মুল মু’মিনীন হযরত ছিদ্দীক্বাহ আলাইহাস সালাম উনার বয়স মুবারক যখন ৬ বছর তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার সাথে আক্বদ মুবারক সম্পন্ন করেন। উম্মুল মু’মিনীন হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনি বলেন, আর আমার বয়স মুবারক যখন ৯ বছর তখন আমি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র হুজরা শরীফে তাশরীফ মুবারক গ্রহণ করি। এ পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার সনদ হাসান পর্যায়ের। (ছহীহ মুসনাদে আহমদ ইবনে হাম্বল, হাদীছু আস সাইয়্যিদাহ ছিদ্দীক্বাহ আলাইহাস সালাম ৬ খণ্ড, ২১০ পৃষ্ঠা)

মুসনাদে আহমদ শরীফে বর্ণিত উল্লেখিত হাদীছ শরীফ উনার রাবী বা বর্ণনাকারীরা হলেন- হযরত আব্দুল্লাহ, হযরত মুহম্মদ ইবনে বশীর, হযরত মুহম্মদ ইবনে আমর,  হযরত আবূ সালামা ও হযরত ইয়াহইয়া রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা। এ পবিত্র হাদীছ শরীফের রাবীদের মধ্যে হযরত হিশাম ইবনে উরওয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার নাম মুবারক নেই।

حَدَّثَنَا عَبْدُ اللهِ بْنِ عَامِرِ بْنُ زُرَارَةَ الْـحَضْرَمِىُّ حَدَّثَنَا زَكَرِيَّا بْنُ اَبـِىْ زَائِدَةَ عَنْ مُـحَمَّدِ بْنِ عَمْرٍو عَنْ يـَحْيَـى بْنِ عَبْدِ الرَّحْـمٰنِ بْنِ حَاطِبٍ عَنْ حَضْرَتْ اُمِّ الْـمُؤْمِنِيْنَ عَائِشَةَ عَلَيْهَا السَّلَامُ اَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ تَزَوَّجَهَا وَهِىَ سِتُّ سِنِيْنَ وَبَنٰـى بِـهَا وَهِىَ بِنْتُ تِسْعِ سِنِيْنَ.

অর্থ: উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। নিশ্চয়ই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে (হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম) উনার সাথে আক্বদ বা নিসবাতুল আযীম মুবারক সম্পন্ন হয় যখন উনার বয়স মুবারক ছিল ৬ বছর। আর ৯ বছর বয়স মুবারকে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র হুজরা শরীফে আমি তাশরীফ মুবারক গ্রহণ করেন।” সুবহানাল্লাহ! (মুসনাদু আবী ইয়া’লা তাবে’ মুসনাদে আয়িশা আলাইহাস সালাম, ৮ম খণ্ড, ১৩২ পৃষ্ঠা)

মুসনাদে আবী ই’য়ালা শরীফে বর্ণিত উল্লেখিত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার রাবী বা বর্ণনাকারীরা হলেন- হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমির ইবনে যারারাহ খাদ্বরামী, হযরত ইয়াহইয়া ইবনে যাকারিয়া ইবনে আবী যায়িদাহ, মুহম্মদ ইবনে আমর, ইয়াহইয়া ইবনে আব্দুর রহমান ইবনে হাতিব রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা। এখানেও হযরত হিশাম ইবনে উরওয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সংশ্লিষ্টতা নেই।

حَدَّثَنَا حَجَّاجُ بْنُ اَبِـىْ مَنِيْعِ الرَّصَافِـىِّ حَدَّثَنِـىْ جَدِّىْ عُبَيْدُ اللهِ بْنُ اَبِـىْ زِيَادٍ عَنْ حَضْرَتِ الزُّهْرِىِّ رَحْـمَةُ اللهِ عَلَيْهِ قَالَ … ثُـمَّ تَزَوَّجَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حَضْرَتْ اُمَّ الْـمُؤْمِنِيْنَ عَائِشَةَ عَلَيْهَا السَّلَامُ بَعْدَ حَضْرَتْ اُمَّ الْـمُؤْمِنِيْنَ الْكُبْرٰى عَلَيْهَا السَّلَامُ وَكَانَ قَدْ اَرٰى فِـى النَّوْمِ مَرَّتَيْنِ يُقَالُ هِىَ اِمْرَأَتُكَ اُمُّ الْـمُؤْمِنِيْنَ الثَّالِثَةَ الصِّدِّيْقَةَ عَائِشَةَ عَلَيْهَا السَّلَامُ يَوْمَئِذٍ بِنْتُ سِتِّ سِنِيْنَ بِـمَكَّةَ ثُـمَّ اِنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بَنٰـى اُمَّ الْـمُؤْمِنِيْنَ الثَّالِثَةَ الصِّدِّيْقَةَ عَلَيْهَا السَّلَامُ بَعْدَ مَا قَدِمَ الْـمَدِيْنَةَ وَ اُمَّ الْـمُؤْمِنِيْنَ الصِّدِّيْقَةَ عَلَيْهَا السَّلَامُ يَوْمَ بَنٰـى بِـهَا بِنْتَ تِسْعِ سِنِيْنَ.

অর্থ: হযরত যুহরী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উম্মুল মু’মিনীন হযরত আল ঊলা কুবরা আলাইহাস সালাম উনার পর (উম্মুল মু’মিনীন হযরত আছছালিছাহ) হিসেবে হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনাকে গ্রহণ করেন। তখন উনার বয়স মুবারক ছিল ৬ বছর। উনাকে স্বপ্ন মুবারকে দুবার দেখানো হয় এবং বলা হয় ইনি আপনার সম্মানিত যাওজুম মুকাররামা। আর তা সংঘটিত হয় পবিত্র মক্কা শরীফে। আর উনার বয়স মুবারক যখন ৯ বছর তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র মদীনা শরীফ তাশরীফ মুবারক নেয়ার পর উনাকে নিজ হুজরা শরীফে নিয়ে আসেন। সুবহানাল্লাহ! (সুনানুল কুবরা লিল বাইহাক্বী, কিতাবুন নিকাহ,  বাবু তাসমিয়াতু আযওয়াযিন নাবিয়্যি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)

সুনানুল কুবরা লিল বাইহাক্বী শরীফে বর্ণিত উল্লিখিত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার রাবী বা বর্ণনাকারীরা হলেন- হযরত হাজ্জাজ ইবনে আবী মানীবির রুছাদী, হযরত উবাইদুল্লাহ ইবনে আবী ইয়াছ ও হযরত যুহরী রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা। এখানে হযরত হিশাম বিন উরওয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার কোনো সংশ্লিষ্টতা আছে কি? নাই।

حَدَّثَنَا مُـحَمَّدُ بْنُ مُوْسَى بْنُ حَـمَّادِ الْبَـرْبَرِىُّ حَدَّثَنَا عَبْدُ الرَّحْـمٰنِ بْنُ صَالـِحِ الْاَزْدِىُّ حَدَّثَنَا يَـحْيَـى بْنُ اٰدَمَ حَدَّثَنَا شَرِيْكٌ عَنْ اَبِـىْ اِسْحَاقَ عَنْ اَبِـىْ عُبَيْدَةَ عَنْ حَضْرَتْ عَبْدِ الله رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ تَزَوَّجَ النَّبِـىُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حَضْرَتْ اُمَّ الْـمُؤْمِنِيْنَ حَضْرَتْ اَلصِّدِّيْقَةَ عَلَيْهَا السَّلَامُ وَهِىْ بِنْتُ سِتِّ سِنِيْنَ، وَدَخَلَ بـِهَا وَهِىَ بِنْتُ تِسْعٍ.

অর্থ: হযরত আব্দুল্লাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। নিশ্চয়ই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে (উম্মুল মু’মিনীন হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম) উনার আক্বদ মুবারক সম্পন্ন হয় যখন উনার বয়স মুবারক ছিল ৬ বছর। আর তিনি ৯ বছর বয়স মুবারকে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র হুজরা শরীফে তাশরীফ মুবারক গ্রহণ করেন এবং ৯ বছর বয়স মুবারকেই তিনি উনার সাথে অবস্থান মুবারক করেন।” সুবহানাল্লাহ! (আল মু’জামুল কাবীর লিত তবারানী ৪র্থ খণ্ড ৪৯০ পৃষ্ঠা)

মু’জামুল কবীর লিততবারানী শরীফে বর্ণিত উল্লেখিত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার রাবী বা বর্ণনাকারীরা হলেন- হযরত মুহম্মদ ইবনে মূসা ইবনে হাম্মাদ আল বারবারী, আব্দুর রহমান ছলেহ আল আযদিয়্যু, হযরত ইয়াহইয়া ইবনে আদম, হযরত শারীক, হযরত আবূ ইসহাক, হযরত উবাইদা ও হযরত আব্দুল্লাহ রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা। এখানে হযরত হিশাম বিন উরওয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার কোনো সংশ্লিষ্টতা আছে কি?

حَدَّثَنَا مُـحَمَّدُ بْنُ عَلِىِّ الْـمَرْوَزِىُّ ثَنَا مُـحَمَّدُ بْنُ عَبْدِ الْكَرِيْـمِ الْعَبْدِىُّ ثَنَا بَكْرُ بْنُ يُوْنُسَ ثَنَا عَبْدُ الرَّحْـمٰنِ بْنُ اَبِـى الزَّنَّادِ عَنْ اَبِيْهِ عنْ حَضْرَتْ عُرْوَةَ بْنِ الزُّبَيْرِ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَتْ اُمُّ الْـمُؤْمِنِيْنَ الصِّدِّيْقَةُ عَلَيْهَا السَّلَامُ تَزَوَّجَنِىْ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَاَنَا بِنْتُ سِتِّ سِنِيْنَ وَاَدْخَلْتُ عَلَيْهِ وَاَنَا بِنْتُ تِسْعِ سِنِيْنَ وَمَكَثْتُ عِنْدَهٗ تِسْعًا فَهَلَكَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَاَنَا بِنْتُ ثَـمَانِىْ عَشَرَةً.

অর্থ: হযরত উরওয়া ইবনে যুবাইর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। উম্মুল মু’মিনীন আছছালিছাহ সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনি বলেন, নিশ্চয়ই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে আমার আক্বদ মুবারক সম্পন্ন হয় যখন আমার বয়স মুবারক ছিল ৬ বছর। আর আমি ৯ বছর বয়স মুবারকে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র হুজরা শরীফে তাশরীফ মুবারক গ্রহণ করি। আর আমি উনার সাথে অবস্থান মুবারক করি ৯ বছর। তিনি যখন পবিত্র বিছালী শান মুবারক গ্রহণ করেন তখন আমার বয়স মুবারক ১৮ বছর।” সুবহানাল্লাহ! (আল মু’জামুল আওছাত লিত তাবারানী ৭ম জিলদ, ৯৪ পৃষ্ঠা)

মু’জামুল আওসাত লিত তবারানী শরীফে বর্ণিত উল্লেখিত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার রাবী বা বর্ণনাকারীরা হলেন- হযরত মুহম্মদ ইবনে আলী আল মারুযী, হযরত মুহম্মদ ইবনে আব্দুল করীম আল আবিদী, হযরত  বকর ইবনে ইউনুস, হযরত আব্দুর রহমান ইবনে আবী যিনাদ ও হযরত উরওয়া ইবনে যুবাইর রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা।

উপরোক্ত দলীলভিত্তিক আলোচনা দ্বারা অকাট্যভাবে প্রমাণিত হলো যে, উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত আক্বদ মুবারক বা নিসবতে আযীমাকালীন বয়স মুবারক সম্পর্কিত পবিত্র হাদীছ শরীফ হযরত হিশাম ইবনে উরওয়াহ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ছাড়াও আরো অনেক নির্ভরযোগ্য রাবী থেকে বর্ণিত আছে। বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ ছাড়াও আরো অনেক নির্ভরযোগ্য হাদীছ শরীফ গ্রন্থেও উল্লেখ আছে।

কাজেই উম্মুল মু’মিনীন আছছালিছাহ ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার আক্বদ মুবারক ৬ বছর বয়সে হয়েছে এবং ৯ বছর বয়সে তিনি হুজরা শরীফে তাশরীফ মুবারক নিয়েছেন এটিই সবচেয়েই ছহীহ ও দলীলভিত্তিক মত। এর খিলাফ সকল মত বাতিল ও পরিত্যাজ্য।

সুতরাং উলামায়ে ‘সূ’, নাস্তিক, মুরতাদ, মুনাফিক, বিদয়াতী, গোমরাহ ও বাতিল ফিরক্বার লোকেরা যে বলে থাকে, “উম্মুল মু’মিনীন আছছালিছাহ ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার নিসবতে আযীমাহ বা নিকাহ মুবারককালীন বয়সের বর্ণনা সম্বলিত পবিত্র হাদীছ শরীফগুলো হযরত হিশাম বিন উরওয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি ব্যতীত অন্য কোন রাবী থেকে বর্ণিত নেই।” তা সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট ও দলীলবিহীন বলে প্রমাণিত হলো।

উলামায়ে ‘সূ’, নাস্তিক, মুরতাদ, মুনাফিক, বিদয়াতী, গোমরাহ ও বাতিল ফিরক্বার লোকদের দ্বিতীয় বক্তব্য হলো, “হযরত হিশাম বিন উরওয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বর্ণিত পবিত্র হাদীছ শরীফ গ্রহনযোগ্য নয়। কারণ তিনি শেষ বয়সে ইরাকে অবস্থান করেছেন এবং স্মৃতি দূর্বলতায় ভুগেছিলেন।” নাউযুবিল্লাহ!

তাদের উল্লেখিত দ্বিতীয় বক্তব্যের জাওয়াবে বলতে হয় যে, শুধু আক্বদ মুবারককালীন বয়স মুবারক সম্পর্কিত পবিত্র হাদীছ শরীফগুলোই নয়, বরং হযরত হিশাম ইবনে উরওয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বর্ণিত সকল পবিত্র হাদীছ শরীফই ছহীহ ও গ্রহনযোগ্য। আর ছহীহ ও গ্রহনযোগ্য বলেই হযরত ইমাম বুখারী রহমতুল্লাহি আলাইহি ও হযরত ইমাম মুসলিম রহমতুল্লাহি আলাইহি, ইমাম তিরমিযী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনারাসহ পৃথিবীর বড় বড় অনুসরণীয় সর্বজনমান্য প্রখ্যাত মুহাদ্দিছ উনারা হযরত হিশাম ইবনে উরওয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে পবিত্র হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেন। তাছাড়া একই পবিত্র হাদীছ শরীফ যখন বিভিন্ন সনদে একাধিক রাবী থেকে বর্ণিত হয় তখন রাবী নিয়ে ইখতিলাফ করার কোনোই সুযোগ থাকে না। কাজেই উনার বর্ণিত পবিত্র হাদীছ শরীফ নিঃসন্দেহে গ্রহনযোগ্য। কারণ তিনি একজন ছিক্বাহ বা বিশ্বস্ত রাবী।

উল্লেখ্য, হযরত হিশাম ইবনে উরওয়াহ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি যদিও শেষ বয়সে ইরাকে অবস্থান করেছেন এবং বাগদাদ শরীফে বিছাল শরীফ প্রকাশ করেছেন, তথাপি উনার জীবনের অধিকাংশ সময় তিনি পবিত্র মদীনা শরীফে অতিবাহিত করেছেন। উনার মূল অবস্থান স্থল হলো পবিত্র মদীনা শরীফ। উনার সনদের জন্য পবিত্র মদীনা শরীফ উনার অন্য কোনো রাবীর সংযোগ প্রয়োজন নেই। কেননা, উনার ছিক্বাহ হওয়া সম্পর্কে অধিকাংশ মুহাদ্দিছগণ ঐকমত্য পোষণ করেছেন।

হযরত হিশাম ইবনে উরওয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি গ্রহণযোগ্য রাবী হওয়ার কিছু কারণ নিচে তুলে ধরা হলো-

১। হযরত হিশাম ইবনে উরওয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বর্ণিত পবিত্র হাদীছ শরীফ দ্বারা সম্মানিত ইমামগণ উনারা দলীল পেশ করে থাকেন।

২। উনার বর্ণনাকৃত পবিত্র হাদীছ শরীফ বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফসহ অসংখ্য নির্ভরযোগ্য হাদীছ শরীফ গ্রন্থে উল্লেখ রয়েছে। তিনি ত্রুটি যুক্ত হলে এরূপ ব্যাপকভাবে উনার থেকে পবিত্র হাদীছ শরীফ বর্ণিত হতো না।

৩। তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার স্পষ্ট আয়াত শরীফ উনার বিপক্ষে বলেননি বরং পবিত্র কুরআন শরীফ উনার স্পষ্ট আয়াত শরীফ উনার সমর্থক উনার বর্ণিত পবিত্র হাদীছ শরীফসমূহ।

৪। উনাকে কেউ মিথ্যাবাদী বলেননি।

৫। বাতিল ফিরক্বার লোকেরা ইমাম ইবনে হাজর আসক্বালানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার কিতাব (তাহযীবুত তাহযীব) দ্বারা দলীল পেশ করে হযরত হিশাম ইবনে উরওয়াহ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সম্পর্কে অভিযোগ করে থাকে।

অথচ ঐ কিতাবেই বর্ণিত রয়েছে-

قَالَ يَـحْيَـى بْنُ سَعِيْدٍ رَاَيْتُ مَالِكَ بْنَ اَنَسٍ فِـى النَّوْمِ فَسَاَلْتُه عَنْ هِشَامِ بْنِ عُرْوَةَ رَحْـمَةُ اللهِ عَلَيْهِ فَقَالَ اِمَامًا حَدَّثَ بِهٖ وَهُوَ عِنْدَنَا فَهُوَ اَىْ كَاَنَّهُ يُصَحِّحُهٗ وَمَا حَدَّثَ بِهٖ بَعْدَ مَا خَرَجَ مِنْ عِنْدِنَا فَكَاَنَّهٗ يُوَهِّنُهٗ

অর্থ: ইয়াহইয়া ইবনে সাঈদ রহমাতুল্লাহি আলইহি তিনি বলেন, আমি হযরত মালিক ইবনে আনাস রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে স্বপ্নে দেখে হযরত হিশাম ইবনে উরওয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার (বর্ণনাসমূহ) সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। উত্তরে তিনি বললেন, জেনে রাখুন, তিনি আমাদের নিকট থাকা অবস্থায় যা বর্ণনা করেছেন তা তো ছহীহ হিসেবেই গণ্য। আর আমাদের নিকট থেকে চলে যাওয়ার পর তিনি যা কিছু বর্ণনা করেছেন তা কমজোর মনে হয়।

অর্থাৎ, হযরত হিশাম ইবনে উরওয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে কিংবা উনার বর্ণনাসমূহকে কেউই মিথ্যা প্রতিপন্ন করেননি। বরং উনার শেষ দিকের কোনো কোনো বর্ণনাকে কমজোড় বলে উল্লেখ করেছেন। কাজেই উনার থেকে যেসকল ইমাম ও মুহাদ্দিছ উনারা পবিত্র হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন, উনারা জেনে বুঝেই করেছেন।

زَادَ اِبْنُ سَعْدٍ ثَبَتًا  كَثِيْرُ الْـحَدِيْثِ حُجَّةٌ وَقَالَ اَبُوْ حَاتِـمٍ ثِقَةٌ اِمَامٌ

অর্থ: ইবনে সা’দ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উক্ত বর্ণনা থেকে কিছু বৃদ্ধি করে বলেন যে, হযরত হিশাম ইবনে উরওয়াহ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বহু হাদীছ শরীফ দলীল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত এবং ইমাম আবূ হাতিম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, হযরত হিশাম ইবনে উরওয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি হচ্ছেন পবিত্র হাদীছ শরীফ শাস্ত্রের একজন ছিক্বাহ রাবী। (অতি নির্ভরযোগ্য) ইমাম। সুবহানাল্লাহ!

وَذَكَرَهٗ اِبْنُ حِبَّانَ فِـى الثِّقَاتِ وَقَالَ كَانَ مُتَّقِنًا وَرِعًا فَاضِلًا حَافِظًا وَقاَلَ اِبْنُ شَاهِيْنُ فِـى الثِّقَاتِ

অর্থ: এবং হযরত ইবনে হিব্বান রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি হযরত হিশাম ইবনে উরওয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে ছিক্বাহ রাবীদের অন্তর্ভুক্ত বলে উল্লেখ করেছেন এবং তিনি আরো বলেছেন হযরত হিশাম ইবনে উরওয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি হচ্ছেন নির্ভরযোগ্য, পরহেযগার, হাদীছ শরীফ শাস্ত্রের হাফিয। সুবহানাল্লাহ!

অতএব, যারা ইবনে হাজার রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ‘তাহযীবুত তাহযীব’ কিতাবের নাম দিয়ে হযরত হিশাম ইবনে উরওয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার উপর অভিযোগ করেছে তারা মিথ্যা ও মনগড়াভাবে অভিযোগ করেছে। কারণ হযরত ইবনে হাজার রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি স্বয়ং নিজেই উনার উক্ত কিতাবের মধ্যেই হযরত হিশাম ইবনে উরওয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে ছিক্বাহ বা নির্ভরযোগ্য এবং বিশ্বস্ত বর্ণনাকারী হিসেবে উল্লেখ করেছেন। আর তিনি নির্ভরযোগ্য ও বিশ্বস্ত বর্ননাকারী বলেই উনার থেকে শত শত মুহাদ্দিছ পবিত্র হাদীছ শরীফ গ্রহণ করেছেন ও বর্ণনা করেছেন।

কাজেই, উলামায়ে ‘সূ’, নাস্তিক, মুরতাদ, মুনাফিক, বিদয়াতী, গোমরাহ ও বাতিল ফিরক্বার লোকদের উক্ত বক্তব্য সম্পূর্ণই মিথ্যা বানোয়াট দলীলবিহীন ও পরিত্যাজ্য।

অসমাপ্ত-

(পরবর্তী সংখ্যার অপেক্ষায় থাকুন)

কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে প্রাণীর মূর্তি তৈরি করা ও ছবি আঁকা, তোলা, তোলানো, রাখা, রাখানো, দেখা, দেখানো হারাম-নাজায়িয হওয়ার অকাট্য প্রমাণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-২৮

কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে লাইলাতুন নিছফি মিন শা’বান বা শবে বরাত-এর আহকাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-১

কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে প্রাণীর মূর্তি তৈরি করা ও ছবি আঁকা, তোলা, তোলানো, রাখা, রাখানো, দেখা, দেখানো হারাম-নাজায়িয হওয়ার অকাট্য প্রমাণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-২৯

কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে লাইলাতুন নিছফি মিন শা’বান বা শবে বরাত-এর আহকাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-২

কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে প্রাণীর মূর্তি তৈরি করা ও ছবি আঁকা, তোলা, তোলানো, রাখা, রাখানো, দেখা, দেখানো হারাম-নাজায়িয হওয়ার অকাট্য প্রমাণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-৩০