পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ অর্থাৎ সম্মানিত শরীয়ত উনার আলোকে খাছ সুন্নতী বাল্যবিবাহ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (পর্ব-১০)

সংখ্যা: ২৭৩তম সংখ্যা | বিভাগ:

৩৫তম ফতওয়া হিসেবে

পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ অর্থাৎ সম্মানিত শরীয়ত উনার আলোকে খাছ সুন্নতী বাল্যবিবাহ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া” পেশ করতে পারায় মহান আল্লাহ পাক উনার পবিত্র দরবার শরীফ-এ শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি। আলহামদুলিল্লাহ।

খাছ সুন্নতী বাল্যবিবাহ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া দেয়ার কারণ

সুন্নতের পথিকৃত, হক্বের অতন্দ্র প্রহরী, দ্বীন ইসলাম উনার নির্ভীক সৈনিক, সারা জাহান থেকে কুফরী, শিরকী ও বিদ্য়াতের মূলোৎপাটনকারী, বাতিলের আতঙ্ক এবং আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াত উনাদের আক্বীদায় বিশ্বাসী একমাত্র দলীলভিত্তিক তাজদীদী মুখপত্র- “মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ” পত্রিকায় এ যাবৎ যত লেখা বা ফতওয়াই প্রকাশ বা পত্রস্থ হয়েছে এবং ইনশাআল্লাহ হবে তার প্রতিটিরই উদ্দেশ্য বা মাকছূদ এক ও অভিন্ন। অর্থাৎ “মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ” উনার মধ্যে এমনসব লেখাই পত্রস্থ হয়, যা মানুষের আক্বীদা ও আমলসমূহ পরিশুদ্ধ ও হিফাযতকরণে বিশেষ সহায়ক।

বর্তমানে ইহুদীদের এজেন্ট হিসেবে মুসলমানদের ঈমান আমলের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করছে যারা, তারা হলো “উলামায়ে সূ”। ইহুদীদের এজেন্ট উলামায়ে ‘সূ’রা হারাম টিভি চ্যানেল, পত্র-পত্রিকা, কিতাবাদি ও বক্তব্য বা বিবৃতির মাধ্যমে খাছ সুন্নতী বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে বলছে। অর্থাৎ তাদের বক্তব্য হচ্ছে সম্মানিত শরীয়ত উনার মধ্য বাল্য বিবাহকে স্বীকৃতি দেয়া হয়নি। তাই বাল্য বিবাহ করা বা দেয়া যাবে না। নাউযুবিল্লাহ!

অথচ তাদের উপরোক্ত বক্তব্য সম্পূর্ণ মিথ্যা, চরম বিভ্রান্তিকর ও কুফরীমূলক। তাদের এসব বক্তব্যের কারণে তারা নিজেরা যেরূপ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তদ্রুপ তাদের উক্ত কুফরীমূলক বক্তব্য ও বদ্ আমলের কারণে সাধারণ মুসলমানগণ ই’তিক্বাদী বা আক্বীদাগত ও আ’মালী বা আমলগত উভয় দিক থেকেই বিরাট ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে এবং হবে। নাউযুবিল্লাহ!

কারণ, তাদের উক্ত বক্তব্যের কারণে যারা এ আক্বীদা পোষণ করবে যে, সম্মানিত শরীয়ত উনার মধ্যে বাল্যবিবাহকে স্বীকৃতি দেয়া হয়নি। তাই বাল্যবিবাহ করা বা দেয়া যাবে না। নাউযুবিল্লাহ! নাউযুবিল্লাহ! নাউযুবিল্লাহ! তারা ঈমানহারা হয়ে কাট্টা কাফির ও চির জাহান্নামী হবে। কারণ বাল্য বিবাহ শুধু জায়িযই নয় বরং খাছ সুন্নত উনার অন্তর্ভুক্ত। আর সম্মানিত ইসলামী শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে হালাল বা জায়িয বিষয়কে হারাম বা নাজায়িয বলা এবং হারাম বা নাজায়িযকে হালাল বা জায়িয বলা কুফরী। কেননা কিতাবে স্পষ্টই উল্লেখ আছে যে-

اِسْتِحْلَالُ الْـمَعْصِيَةِ كُفْرٌ.

অর্থাৎ “গুনাহের কাজ বা হারামকে হালাল মনে করা কুফরী।” (শরহে আক্বাইদে নাসাফী শরীফ)

অতএব, বলার আর অপেক্ষাই রাখেনা যে, উলামায়ে “সূ”দের উক্ত বক্তব্য সাধারণ মুসলমান উনাদের আক্বীদা বা ঈমানের জন্য বিশেষভাবে হুমকিস্বরূপ।

উল্লেখ্য, বাল্যবিবাহ করতে বা দিতে হবে এরূপ বাধ্যবাধকতা সম্মানিত শরীয়ত উনার মধ্যে নেই। কারণ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র শরীয়ত বিবাহের বয়স নির্দিষ্ট করে দেয়নি। তবে বাল্যবিবাহ যেহেতু সম্মানিত শরীয়ত উনার মধ্যে জায়িয ও সুন্নত তাই বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে বলা যাবে না। বললে কুফরী হবে, ঈমান নষ্ট হবে। নাউযুবিল্লাহ!

অনুরূপ উলামায়ে “সূ”দের এ কুফরীমূলক বক্তব্য মুসলমানদের আমলের ক্ষেত্রেও বিশেষ ক্ষতির কারণ। কেননা যারা তাদের উক্ত বক্তব্যের কারণে প্রয়োজন থাকা স্বত্বেও বাল্যবিবাহ থেকে বিরত থাকবে তারা একটি খাছ সুন্নত পালন করা থেকে বঞ্চিত হওয়ার পাশাপাশি অশ্লীল, অশালীন, অসামাজিক কাজে মশগুল হতে পারে। নাউযুবিল্লাহ!

কাজেই, যারা এ ধরনের কুফরী আক্বীদায় বিশ্বাসী ও কুফরী বক্তব্য প্রদানকারী তারা ও হক্ব সমঝদার মুসলমানগণ তারা তাদের ঈমান ও আমলকে যেন হিফাযত করতে পারে অর্থাৎ সকল বিষয়ে সম্মানিত আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত উনাদের আক্বীদা অনুযায়ী আক্বীদা পোষণ করতে পারে এবং পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ মোতাবেক আমল করে মহান আল্লাহ পাক উনার রিযামন্দি হাছিল করতে পারে সে জন্যেই “পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ অর্থাৎ সম্মানিত শরীয়ত উনার আলোকে খাছ সুন্নতী বাল্যবিবাহ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কিত ফতওয়াটি” প্রকাশ করা হলো।

সম্মানিত শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে বাল্য বিবাহের বিরোধিতা করা কুফরী, যে কুফরী করে সে মুরতাদ

পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের সুস্পষ্ট ও অকাট্য দলীল দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, স্বয়ংৃ মহান আল্লাহ পাক তিনি সম্মানিত ইসলাম উনার মধ্যে বাল্যবিবাহকে বৈধতা দান করেছেন। আর নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি স্বয়ং নিজেই বাল্যবিবাহ মুবারক করেছেন ও দিয়েছেন, যা মহান আল্লাহ পাক উনারই নির্দেশ মুবারক। হযরত খুলাফায়ে রাশিদীন আলাইহিমুস সালাম, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা ও ইমাম মুজতাহিদ রহমতুলআহি আলাইহিম উনারাও বাল্যবিবাহ করেছেন, দিয়েছেন ও সমর্থন করেছেন। সুবহানাল্লাহ!

অতএব, বলার অপেক্ষাই রাখে না যে, পবিত্র বাল্য বিবাহের বিরোধিতা করার অর্থ হলো, স্বয়ং মহান আল্লাহ পাক উনার, উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার, হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাছ ছালাম উনাদের, হযরত খুলাফায়ে রাশিদীন আলাইহিমুস সালাম উনাদের, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের এবং হযরত ইমাম মুজতাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের বিরোধিতা করা। আর উনাদের বিরোধিতা করা সুস্পষ্ট কুফরীর অন্তর্ভুক্ত।

এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

وَمَا كَانَ لِمُؤْمِنٍ وَّلَا مُؤْمِنَةٍ اِذَا قَضَى اللهُ وَرَسُوْلُه اَمْرًا اَنْ يَّكُوْنَ لَـهُمُ الْـخِيَرَةُ مِنْ اَمْرِهِمْ  ۗ  وَمَنْ يَّعْصِ اللهَ وَرَسُوْلَه فَقَدْ ضَلَّ ضَلَالًا مُّبِيْنًا

অর্থ : “কোন মু’মিন নর-নারীর জন্য জায়িয হবেনা, মহান আল্লাহ পাক এবং উনার রসূল নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারা যে ফায়ছালা করেছেন, সে ফায়ছালার মধ্যে চু-চেরা, ক্বীল ও ক্বাল করা অর্থাৎ নিজস্ব মত পোষণ করা। আর যে ব্যক্তি মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের নাফরমানী বা বিরোধিতা করবে সে প্রকাশ্য গোমরাহীতে গুমরাহ হবে। অর্থাৎ কাট্টা কাফির হবে।” নাউযুবিল্লাহ! (পবিত্র সূরা আহযাব শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৩৬)

এ পবিত্র আয়াত শরীফ উনার শানে নুযুল সম্পর্কে বলা হয়, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ফুফাতো বোন হযরত যয়নব বিনতে জাহাশ আলাইহাস সালাম, যিনি পরবর্তীতে উম্মুল মু’মিনীন আলাইহাস সালাম উনাদের অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন। হযরত যয়নাব বিনতে জাহাশ আলাইহাস সালাম উনাকে বিয়ে দিতে হবে।

নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার জন্য একজন ছেলে খুঁজছিলেন। এদিকে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি চিন্তা করলেন, হযরত যায়েদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকেও বিয়ে করাতে হবে, আর হযরত যয়নাব বিনতে জাহাশ আলাইহাস সালাম উনাকেও বিয়ে দিতে হবে। এখন একজন ছেলে দরকার এবং একজন মেয়ে দরকার। আর যদি এই ছেলে-মেয়ে উনাদেরকে পরস্পর বিয়ে দিয়ে দেয়া হয়, তাহলে তো আর ছেলে-মেয়ের দরকার হয় না।

নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি শুধু মনে মনে চিন্তা করলেন যে, হযরত যায়িদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার কাছে হযরত যয়নাব বিনতে জাহাশ আলাইহাস সালাম উনাকে বিয়ে দেয়া হবে। এ সংবাদ গিয়ে পৌঁছলো হযরত যয়নাব বিনতে জাহাশ আলাইহাস সালাম উনার এবং উনার ভাই হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে জাহাশ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাদের কাছে। তখন উনারা কুফু বা সমকক্ষতার বিষয়টা চিন্তা করে বললেন, আমরা কুরাইশ বংশীয়, আমরা অভিজাত ব্যক্তি। আর হযরত যায়িদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি হলেন খাদিম। তাহলে কুফুর বিষয়টা কি হবে? উনারা শুধু এতটকু চিন্তা করলেন, এ চিন্তা করার সাথে সাথেই মহান আল্লাহ্ পাক তিনি পবিত্র আয়াত শরীফ নাযিল করে দিলেন-

وَمَا كَانَ لِمُؤْمِنٍ وَّلَا مُؤْمِنَةٍ اِذَا قَضَى اللهُ وَرَسُوْلُه اَمْرًا اَنْ يَّكُوْنَ لَـهُمُ الْـخِيَرَةُ مِنْ اَمْرِهِمْ  ۗ  وَمَنْ يَّعْصِ اللهَ وَرَسُوْلَه فَقَدْ ضَلَّ ضَلَالًا مُّبِيْنًا

অর্থ : “কোন মু’মিন নর-নারীর জন্য জায়িয হবেনা, মহান আল্লাহ পাক এবং উনার রসূল নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারা যে ফায়ছালা করেছেন, সে ফায়ছালার মধ্যে চু-চেরা, ক্বীল ও ক্বাল করা অর্থাৎ নিজস্ব মত পোষন করা। আর যে ব্যক্তি মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের নাফরমানী বা বিরোধিতা করবে সে প্রকাশ্য গোমরাহীতে গুমরাহ হবে। অর্থাৎ কাট্টা কাফির হবে।”

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে জাহাশ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং হযরত যয়নাব বিনতে জাহাশ আলাইহাস সালাম উনাদের কাছে গিয়ে যখন পবিত্র আয়াত শরীফ পৌঁছলো, তখন উনারা বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ্, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমরা কখনো দ্বিমত পোষণ করিনি। তবে চিন্তা করেছিলাম ‘কুফু’ হবে কিনা?

এখন এ বিষয়টা ফিকির করুন, মহান আল্লাহ পাক তিনি এবং উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারা যে ফায়ছালা করেছেন, সে বিষয়ে সামান্য ব্যতিক্রম ফিকির করলেই যদি হাক্বীক্বী মু’মিন থাকা না যায়, তাহলে যারা প্রকাশ্যে মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার রসূল নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের আদেশ নির্দেশের বিরোধিতা করছে অর্থাৎ বাল্য বিবাহের বিরোধিতা করছে তারা কি করে ঈমানদার বা মুসলমান থাকতে পারে?

এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক করেন-

فَلَا وَرَبِّكَ لَا يُؤْمِنُوْنَ حَتّٰى يُـحَكِّمُوْكَ فِيْمَا شَجَرَ بَيْنَهُمْ ثُـمَّ لَا يَـجِدُوْا فِيْ اَنْفُسِهِمْ حَرَجًا مِّـمَّا قَضَيْتَ وَيُسَلِّمُوْا تَسْلِيْمًا

অর্থ : “আপনার মহান রব তায়ালা উনার কসম, তারা কখনই ঈমানদার হতে পারবে না। যতক্ষণ না তাদের মধ্যে সৃষ্ট বিবাদের ব্যাপারে আপনাকে ফায়সালাকারী হিসাবে মেনে না নিবে। অতঃপর আপনি যা ফায়সালা করেছেন, আপনার সেই ফায়সালার ব্যাপারে তারা তাদের নিজেদের অন্তরে কোন রকম চু-চেরা, ক্বীল ও ক্বাল অর্থাৎ কোন প্রকার সংকীর্ণতা অনুভব করবে না। বরং আনুগত্যের সহিত আনন্দচিত্তে মেনে নিবে।” (পবিত্র সূরা নিসা শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৬৫)

এ পবিত্র আয়াত শরীফ কেন নাযিল হয়েছিলো? হযরত মুফাসসিরীনে কিরাম উনারা বলেন, এক ব্যক্তি ছিল মুনাফিক, তার নাম ছিল বিশর। সে মুসলমান দাবী করতো, হাক্বীক্বীত সে ছিলো মুনাফিক। এই মুনাফিক বিশরের সাথে এক ইহুদীর কোনো এক বিষয়ে গন্ডগোল হয়। তখন ফায়সালার জন্য নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কাছে আসলো। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বিচার করলেন। মুনাফিক বিশরের বিরুদ্ধে, ইহুদীর পক্ষে রায় পড়লো। মুনাফিক বিশর সেখানে তা বাহ্যিকভাবে মেনে নিলেও দরবার শরীফ থেকে বের হয়ে বললো, বিচারটা আমার মনঃপূত হচ্ছে না। নাউযুবিল্লাহ! সে ইহুদীকে নিয়ে পূনরায় বিচারের জন্য গেল সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার কাছে। কারণ তিনিও সম্মানিত ও পবিত্র অনুমতিক্রমে বিচারকাজ করতেন। বিশর ভেবেছিল, সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি হচ্ছেন-

اَشِدَّآءُ عَلَى الْكُفَّارِ.

অর্থাৎ “হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি কাফিরদের প্রতি কঠোর।” (পবিত্র সূরা ফাতহ্ শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ২৯)

তাই বিচারের রায় হয়তো তার পক্ষেই আসবে। ইহুদী খুব চালাক ছিল, সে শুরুতেই বললো, হে হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম! এই বিশর আমাকে নিয়ে এসেছে আপনার কাছে বিচারের জন্য, অথচ এই মাত্র নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নিজে বিচার করে দিয়েছেন। রায় আমার পক্ষে হওয়ায় বিশর সে বিচার মানতে নারাজ; সেজন্য পুনরায় বিচার করার জন্য আপনার কাছে এসেছে। সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূকে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি একথা শুনে বললেন, ঠিক আছে তোমরা বস, আমি তোমাদের বিচার করবো। উনি ঘরে প্রবেশ করে সবচেয়ে ধারালো তরবারী এনে মুনাফিক বিশরকে এক কোপে দু’ভাগ করে দিলেন এবং বললেন, এটাই তোমার বিচার।

কারণ, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যে বিচার করেছেন, সেটা তুমি মাননি। তাই তোমার একমাত্র শাস্তি ও বিচার বা ফয়সালা হলো মৃত্যুদ-। যখন উনি তাকে হত্যা করে ফেললেন, তখন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কাছে গিয়ে মুনাফিক্ব বিশরের আত্মীয়-স্বজন হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার কর্তৃক বিশরকে হত্যার অভিযোগ করলো। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, এটা কি করে সম্ভব? হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি তো বিশেষ ব্যক্তিত্ব।

উনার প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ عُقْبَةَ بْنِ عَامِرٍ رَضِىَ اللهُ نَعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَوْ كَانَ بَعْدِىْ نَبِيٌّ لَكَانَ حَضْرَتْ عُمَرُ بْنُ الْـخَطَّابِ عَلَيْهِ السَّلَامُ.

অর্থ : “হযরত উক্ববাহ্ ইবনে ‘আমির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আমার পরে যদি কেউ নবী হতেন, তাহলে হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি নবী হতেন।” সুবহানাল্লাহ! (তিরমিযী শরীফ)

কাজেই উনার পক্ষে এটা সম্ভব নয়, ঠিক আছে উনাকে ডাকা হোক। সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনাকে ডেকে আনা হলো। তখন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, “হে ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম! আপনি নাকি একজন মুসলমানকে হত্যা করেছেন?” সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ্, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি আমাকে বিচারের দায়িত্ব দিয়েছেন সে অনুযায়ী আমি তার বিচার করেছি। অর্থাৎ বিচারে তার মৃত্যুদ- হয়েছে। তাই আমি তাকে শাস্তি স্বরূপ মৃত্যুদ- দিয়েছি। কারণ হচ্ছে- সে মুনাফিকী করেছে। অর্থাৎ সে মুনাফিক ছিল।

আপনি যে বিচার করেছিলেন, সে বিচার সে মানেনি, সেজন্য আমি তাকে শাস্তি স্বরূপ হত্যা করেছি। তখন মুনাফিক্ব বিশরের আত্বীয়-স্বজন বললো, হে ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম! আপনি যাকে হত্যা করেছেন, সে যে মুনাফিকী করেছে, অর্থাৎ সে যে মুনাফিক ছিলো তার প্রমাণ কি? কোথায় আপনার দলীল, আপনার সাক্ষী কোথায়? যেহেতু সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে সাক্ষী ছাড়া কোনো কথা গ্রহণযোগ্য নয়।

সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি চুপ করে রইলেন। সাথে সাথে মহান আল্লাহ পাক তিনি স্বয়ং নিজে সাক্ষী হয়ে আয়াত শরীফ নাযিল করে জানিয়ে দিলেন-

فَلَا وَرَبِّكَ لَا يُؤْمِنُوْنَ حَتّٰى يُـحَكِّمُوْكَ فِيْمَا شَجَرَ بَيْنَهُمْ ثُـمَّ لَا يَـجِدُوْا فِيْ اَنْفُسِهِمْ حَرَجًا مِّـمَّا قَضَيْتَ وَيُسَلِّمُوْا تَسْلِيْمًا

অর্থ : “আপনার মহান রব তায়ালা উনার কসম, তারা কখনই ঈমানদার হতে পারবে না। যতক্ষণ না তাদের মধ্যে সৃষ্ট বিবাদের ব্যাপারে আপনাকে ফায়সালাকারী হিসাবে মেনে না নিবে। অতঃপর আপনি যা ফায়সালা করেছেন, আপনার সেই ফায়সালার ব্যাপারে তারা তাদের নিজেদের অন্তরে কোন রকম চু-চেরা, ক্বীল ও ক্বাল অর্থাৎ কোন প্রকার সংকীর্ণতা অনুভব করবে না। বরং আনুগত্যের সহিত আনন্দচিত্তে মেনে নিবে।” (পবিত্র সূরা নিসা শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৬৫)

এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র সূরা নিসা শরীফ উনার ১৪ নং আয়াত শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক করেন-

وَمَنْ يَّعْصِ اللهَ وَرَسُوْلَه وَيَتَعَدَّ حُدُوْدَه يُدْخِلْهُ نَارًا خَالِدًا فِيْهَا وَلَه عَذَابٌ مُّهِيْنٌ

অর্থ : “যে ব্যক্তি খ¦ালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার হাবীব সাইয়্যিদুল মুরসালীন ইমামুল মুরসালীন খাতামুন্্ নাবিয়্যীন নূরে মুজাস্্সাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের নাফরমানী বা বিরোধিতা করে এবং উনার সীমা অতিক্রম করে তিনি তাকে জাহান্নামে প্রবেশ করাবেন। সে সেখানে চিরকাল থাকবে। এবং তার জন্য রয়েছে অপমানজনক শাস্তি।”

মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র সূরা মায়িদা শরীফ উনার ৪৪ নং পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-

وَمَنْ لَّـمْ يـَحْكُمْ بِـمَا اَنْزَلَ اللهُ فَاُولٰئِكَ هُمُ الْكَافِرُوْنَ

অর্থ : “মহান আল্লাহ পাক তিনি যা নাযিল বা ফায়ছালা করেছেন সে মুতাবিক যারা আদেশ নির্দেশ করেনা অর্থাৎ বিপরীত করে তারা কাফির।”

উপরোক্ত পবিত্র আয়াত শরীফসমূহ ও শানে নুযূল উনাদের বর্ণনা দ্বারা যে বিষয়টি সুস্পষ্ট ও অকাট্যভাবে প্রমাণিত হয়েছে তাহলো- মহান আল্লাহ পাক তিনি এবং উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারা যে ফায়ছালা মুবারক দিয়েছেন তার বিরোধিতা করা তো দূরের কথা বরং সে বিষয়ে সামান্যতম দ্বিমত পোষণের চিন্তা করাটাও কাট্টা কুফরীর অন্তর্ভুক্ত। আর কোনো মুসলমান যখন কুফরী করে তখন সে মুসলমান থাকে না বরং সে মুরতাদ হয়ে যায়। নাঊযূবিল্লাহ!

 

অসমাপ্ত

পরবর্তী সংখ্যার অপেক্ষায় থাকুন

কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে প্রাণীর মূর্তি তৈরি করা ও ছবি আঁকা, তোলা, তোলানো, রাখা, রাখানো, দেখা, দেখানো হারাম নাজায়িয হওয়ার অকাট্য প্রমাণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-২৬

জুমুয়া ও ঈদাইনের খুৎবা আরবী ভাষায় দেয়া ওয়াজিব। আরবী ব্যতীত অন্য কোন ভাষায় খুৎবা দেয়া মাকরূহ তাহরীমী ও বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-২

কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে প্রাণীর মূর্তি তৈরি করা ও ছবি আঁকা, তোলা, তোলানো, রাখা, রাখানো, দেখা, দেখানো হারাম নাজায়িয হওয়ার অকাট্য প্রমাণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-২৭

কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে প্রাণীর মূর্তি তৈরি করা ও ছবি আঁকা, তোলা, তোলানো, রাখা, রাখানো, দেখা, দেখানো হারাম-নাজায়িয হওয়ার অকাট্য প্রমাণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-২৮

কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে লাইলাতুন নিছফি মিন শা’বান বা শবে বরাত-এর আহকাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-১