পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে সম্মানিত ও পবিত্র মাযহাব চতুষ্ঠয় উনাদের মধ্যে যে কোন একটি সম্মানিত ও পবিত্র মাযহাব মানা ও অনুসরণ করা ফরয ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-২৫

সংখ্যা: ২৪৪তম সংখ্যা | বিভাগ:

পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে

সম্মানিত ও পবিত্র মাযহাব চতুষ্ঠয় উনাদের মধ্যে যে কোন একটি সম্মানিত ও পবিত্র মাযহাব মানা ও অনুসরণ করা ফরয ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-২৫

[সমস্ত প্রশংসা মহান আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন উনার জন্যে এবং অসংখ্য দুরূদ ও সালাম মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামউনার প্রতি। মহান আল্লাহ পাক উনার অশেষ রহ্মতে “গবেষণা কেন্দ্র মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ” উনার ফতওয়া বিভাগের তরফ থেকে বহুল প্রচারিত, হক্বের অতন্দ্র প্রহরী, বাতিলের আতঙ্ক ও আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত উনাদের আক্বীদায় বিশ্বাসী এবং হানাফী মাযহাব-উনার অনুসরণে প্রকাশিত একমাত্র দলীলভিত্তিক যামানার তাজদীদী মুখপত্র “মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ” পত্রিকায় যথাক্রমে- ১. টুপির ফতওয়া (২য় সংখ্যা) ২. অঙ্গুলী চুম্বনের বিধান (৩য় সংখ্যা) ৩. নিয়ত করে মাজার শরীফ যিয়ারত করা (৪র্থ সংখ্যা) ৪. ছবি ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় হারাম হওয়ার ফতওয়া (৫ম-৭ম সংখ্যা) ৫. জুমুয়ার নামায ফরযে আইন ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ফতওয়া (৮ম-১০ম সংখ্যা) ৬. মহিলাদের মসজিদে গিয়ে জামায়াতে নামায পড়া মাকরূহ্ তাহ্রীমী সম্পর্কে ফতওয়া (১১তম সংখ্যা) ৭. কদমবুছী ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১২তম সংখ্যা) ৮. তাহাজ্জুদ নামায জামায়াতে পড়া মাকরূহ্ তাহ্রীমী ও বিদ্য়াতে সাইয়্যিয়াহ্ এবং তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৩তম সংখ্যা) ৯. ফরয নামাযের পর মুনাজাত ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৪-২০তম সংখ্যা) ১০. ইন্জেকশন নেয়া রোযা ভঙ্গের কারণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২১-২২তম সংখ্যা) ১১. তারাবীহ্-এর নামাযে বা অন্যান্য সময় কুরআন শরীফ খতম করে উজরত বা পারিশ্রমিক গ্রহণ করা জায়িয ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২৩-২৪তম সংখ্যা) ১২. তারাবীহ্ নামায বিশ রাকায়াত ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২৫-২৯তম সংখ্যা) ১৩. দাড়ী ও গোঁফের শরয়ী আহ্কাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৩০-৩৪তম সংখ্যা) ১৪. প্রচলিত তাবলীগ জামায়াত ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৩৫-৪৬তম সংখ্যা) ১৫. আযান ও ছানী আযান মসজিদের ভিতরে দেয়ার আহ্কাম এবং তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৪৭-৫০তম সংখ্যা) ১৬. দোয়াল্লীন-যোয়াল্লীন উনার শরয়ী ফায়সালা এবং তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৫১-৫২তম সংখ্যা) ১৭. খাছ সুন্নতী টুপি ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৫৩-৫৯তম সংখ্যা) ১৮. নূরে মুহম্মদী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও উনার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৬০-৮২তম সংখ্যা) ১৯. ইমামাহ্ বা পাগড়ী মুবারকের আহ্কাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কিত ফতওয়া (৮৩-৯৬তম সংখ্যা) ২০. শরীয়তের দৃষ্টিতে আখিরী যোহ্র বা ইহ্তিয়াতুয্ যোহ্রের আহ্কাম এবং তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৯৭-১০০তম সংখ্যা) ২১. জানাযা নামাযের পর হাত তুলে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করার শরয়ী ফায়সালা ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১০১-১১১তম সংখ্যা) এবং ২২. হিজাব বা পর্দা ফরযে আইন হওয়ার প্রমাণ ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১১২-১৩১তম সংখ্যা) ২৩. খাছ সুন্নতী ক্বমীছ বা কোর্তা এবং তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৪০তম সংখ্যা) ২৪. হানাফী মাযহাব মতে ফজর নামাযে কুনূত বা কুনূতে নাযেলা পাঠ করা নাজায়িয ও নামায ফাসিদ হওয়ার কারণ এবং তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৩২-১৫২তম সংখ্যা) ২৫. ইসলামের দৃষ্টিতে বিশ্বকাপ ফুটবল বা খেলাধুলা’র শরয়ী আহকাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ফতওয়া (১৫৫তম সংখ্যা) ২৬. হানাফী মাযহাব মতে পুরুষের জন্য লাল রংয়ের পোশাক তথা রুমাল, পাগড়ী, কোর্তা, লুঙ্গি, চাদর ইত্যাদি পরিধান বা ব্যবহার করা হারাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৫৩-১৬০তম সংখ্যা)  ২৭. ইসলামের নামে গণতন্ত্র ও নির্বাচন করা, পদপ্রার্থী হওয়া, ভোট চাওয়া ও দেয়া হারাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৬১-১৭৫তম সংখ্যা) ২৮. কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে প্রাণীর মূর্তি তৈরি করা ও ছবি আঁকা, তোলা, তোলানো, রাখা, রাখানো, দেখা, দেখানো হারাম নাজায়িয হওয়ার অকাট্য প্রমাণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৬৮-চলমান), ২৯. জুমুয়া ও ঈদাইনের খুৎবা আরবী ভাষায় দেয়া ওয়াজিব। আরবী ব্যতীত অন্য কোন ভাষায় খুৎবা দেয়া মাকরূহ তাহরীমী ও বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৯২-১৯৩তম সংখ্যা) ৩০. কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে লাইলাতুন নিছফি মিন শা’বান শবে বরাত-এর আহকাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৯৫-২১৩তম সংখ্যা), ৩১. পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা ও ক্বিয়াস উনাদের দৃষ্টিতে “কুলাঙ্গার, পাপিষ্ঠ ইয়াযীদ লা’নাতুল্লাহি আলাইহি সম্পর্কে শরীয়তের সঠিক ফায়ছালা ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া” পেশ করার পর-

৩২তম ফতওয়া হিসেবে

“পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে সম্মানিত ও পবিত্র মাযহাব চতুষ্ঠয় উনাদের মধ্যে যে কোন একটি সম্মানিত ও পবিত্র মাযহাব মানা ও অনুসরণ করা ফরয ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া”-

পেশ করতে পারায় মহান আল্লাহ পাক উনার পবিত্র দরবার শরীফ-এ শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি।

সম্মানিত ও পবিত্র মাযহাব চতুষ্ঠয় উনাদের মধ্যে যে কোন একটি সম্মানিত ও পবিত্র

মাযহাব উনার উপর মউত পর্যন্ত ইস্তিক্বামত থাকা ফরয

পূর্ব প্রকাশিতের পর

পবিত্র তাফসীর শরীফ উনাদের নির্ভরযোগ্য কিতাব থেকে ‘আত-তাক্বলীদুশ্ শারয়ী তথা শরীয়াত সমর্থিত অনুসরণ’ উনার সমর্থনে

পবিত্র আয়াত শরীফ সমূহ উনাদের ছহীহ ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ ও আহকাম

পবিত্র কুরআন মাজীদ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, ইজমাউল উম্মাহ ও ছহীহ ক্বিয়াস শরীফ উনাদের দলীল-আদিল্লাহ মোতাবেক সম্মানিত ইসলামী শরীয়াত উনার যাবতীয় হুকুম-আহকাম মেনে চলার জন্য কারো অনুসরণ করাকে ‘আত-তাকলীদুশ শারয়ী তথা শরীয়াত সমর্থিত অনুসরণ’ বলে। উনাকে ‘তাকলীদুল ইসলাম’, ‘তাকলীদুদ্ দীন’ ও ‘তাকলীদুদ্ দালায়িলিল আরবায়াহ’ অর্থাৎ পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার চারখানা দলীল উনাদের অনুসরণও বলা হয়ে থাকে।

নি¤েœ পবিত্র তাফসীর শরীফ উনাদের নির্ভরযোগ্য কিতাব থেকে ‘আত-তাক্বলীদুশ্ শারয়ী তথা শরীয়াত সমর্থিত অনুসরণ’ উনার সমর্থনে পবিত্র আয়াত শরীফ সমূহ উল্লেখ করে উনাদের ছহীহ ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ ও আহকাম বা বিধি-বিধান আলোচনা করা হলো।

পবিত্র আয়াত শরীফ নম্বর- ২৪

اُولئِكَ الَّذِينَ هَدَى اللهُ فَبِهُدَاهُمُ اقْتَدِهْ قُلْ لَا اَسْاَلُكُمْ عَلَيْهِ اَجْرًا انْ هُوَ الَّا ذِكْرى لِلْعَالَمِينَ (سورة الانعام الشريف ۹۰ الاية الشريفة)

অর্থ: উনারা এমন ছিলেন, যাঁদেরকে মহান আল্লাহ তায়ালা তিনি পথ প্রদর্শন করেছিলেন। অতএব আপনিও (এখানে মূলত: উম্মাত উদ্দেশ্য) উনাদের পথ অনুসরণ করুন। অর্থাৎ উম্মতদেরকে বলুন তারা যেন উনাদেরকে অনুসরণ করে। আপনি বলে দিন, আমি তোমাদের কাছে এর জন্য কোন প্রতিদান চাই না। এটি সারা বিশ্ববাসীর জন্য উপদেশ বাণী। (পবিত্র সূরাতুল্ আনয়াম শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ নং ৯০)

অত্র পবিত্র আয়াত শরীফ উনার বিশুদ্ধ তাফসীর বা ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ

(৪৮৬)

{اولئك الذين} قصصناهم من النبيين عليهم السلام {هَدَى الله} هداهم الله بالاخلاق الحسنى {فَبِهُدَاهُمُ} فباخلاقهم الحسنى من الصبر والاحتمال والرضا والقناعة وغير ذلك {اقتده قُل} يا محمد صلى الله عليه وسلم لاهل مكة {لاَّ اَسْاَلُكُمْ عَلَيْهِ} على التوحيد والقران {اَجْراً} جعلاً {انْ هُوَ} ما هو يعنى القران {الاَّ ذكرى} عظة {لِلْعَالَمِينَ} الجن والانس. (تنوير المقباس من تفسير ابن عباس رضى الله عنهما المتوفى ৬৮ هجرى سورة الانعام الشريف ۹۰ الاية الشريفة جمعه: محمد بن يعقوب الفيروز آبادى الحنفى الماتريدي رحمة الله عليه المتوفى ۸۱۷ هجرى)

অর্থ: (উনারা এমন ছিলেন,) যে সমস্ত নবী আলাইহিমুস সালাম উনাদের বিবরণ দিলাম (যাঁদেরকে মহান আল্লাহ তায়ালা তিনি পথ প্রদর্শন করেছিলেন।) উনাদেরকে মহান আল্লাহ তায়ালা তিনি উত্তম চরিত্র মুবারক হাদিয়া করেছিলেন। (অতএব আপনিও অর্থাৎ এখানে মূলত: উম্মাত উদ্দেশ্য উনাদের পথ অনুসরণ করুন।) উনাদের উত্তম চরিত্রের গুনাবলী যেমন ধৈর্য্য, সহিঞ্চুতা, সন্তুষ্টি, তাক্বদীরের তুষ্টি ইত্যাদীর অনুসরণ করুন।

(আপনি বলে দিন,) হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি মক্কা শরীফ বাসীদেরকে বলে দিন (আমি তোমাদের কাছে এর জন্য চাই না) পবিত্র তাওহীদ ও পবিত্র কুরআন শরীফ উনাদের জন্য (কোন প্রতিদান।) কোন পারিতোষিক। (এটি) পবিত্র কুরআন শরীফ (উপদেশবানী) নছীহতবানী (সারা বিশ্ববাসীর জন্য।) জিন জাতী ও মানুষ জাতীর জন্য। (তানবীরুল মাকবাস মিন তাফসীরি ইবনি আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা ওয়াফাত মুবারক: ৬৮ হিজরী পবিত্র সূরাতুল্ আনয়াম শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ নং ৯০ সংকলনকারী: হযরত মুহাম্মাদ বিন ইয়া’কূব ফীরোজাবাদী হানাফী মাতুরীদী রহমাতুল্লাহি আলাইহি ওয়াফাত: ৮১৭ হিজরী)

(৪৮৭)

{فَبِهُدَاهُمُ اقْتَدِه} اى اقتد واتبع، واذا كان هذا امرا للرسول صلى الله عليه وسلم فامته تبع له فيما يشرعه لهم ويأمرهم به. (تفسير القران العظيم اى تفسير ابن كثير سورة الانعام الشريف ۹۰ الاية الشريفة المؤلف: ابو الفداء اسماعيل بن عمر بن كثير القرشى الدمشقى الشافعى الاشعرى رحمة الله عليه الولادة ۷۰۰ هجرى الوفاة ۷۷۸ هجرى)

অর্থ: অতএব আপনিও (এখানে মূলত: উম্মাত উদ্দেশ্য) উনাদের পথ অনুসরণ করুন। অর্থাৎ ইক্তিদা করুন ও ইত্তিবা করুন। পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে যেখানে বাহ্যিকভাবে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে নির্দেশ মুবারক করা হয়েছে সেখানে বুঝতে হবে, উম্মত উনাদের উদ্দেশ্যে বলা হয়েছে সম্মানিত শরীয়ত ও আদেশ মুবারক পালন করার জন্য। (তাফসীরুল কুরআনিল আযীম অর্থাৎ তাফসীরে ইবনুল কাছীর পবিত্র সূরাতুল্ আনয়াম শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ নং ৯০ লেখক: হযরত আবুল ফিদা ইসমাঈল বিন উমর বিন কাছীর কুরাশী দামিশকী শাফিয়ী আশয়ারী রহমাতুল্লাহি আলাইহি বিলাদত: ৭০০ হিজরী ওয়াফাত: ৭৭৪ হিজরী)

(৪৮৮-৪৯৬)

الـمراد بهداهم طريقتهم فى الايمان بالله تعالى وتوحيده واصول الدين ودون الشرائع القابلة للنسخ فانها بعد النسخ لا تبقى هدى، واحتج العلماء بهذه الاية على انه عليه الصلوة والسلام افضل جميع الانبياء عليهم السلام لان خصال الكمال وصفات الشرف كانت متفرقة فيهم، فداود عليه السلام وسليمان عليه السلام كانا من اصحاب الشكر على النعمة، وايوب عليه السلام كان من اصحاب الصبر على البلية، ويوسف عليه السلام كان جامعا بينهما. وموسى عليه السلام كان صاحب المعجزات القاهرة، وزكريا عليه السلام ويحيى عليه السلام وعيسى عليه السلام والياس عليه السلام كانوا اصحاب الزهد، واسماعيل عليه السلام كان صاحب الصدق، فكل منهم قد غلب عليه خصلة معينة، فجمع الله كل خصلة فى حبيبه عليه الصلوة والسلام. (روح البيان اى تفسير الحقى سورة الانعام الشريف ۹۰ الاية الشريفة المؤلف: اسماعيل حقى بن مصطفى البروسوي الحنفى الماتريدى رحمة الله عليه الوفاة ۱۱۲۷ هجرى، ارشاد العقل السليم الى مزايا الكتاب الكريم اى تفسير ابى السعود، مدارك التنزيل وحقائق التأويل اى تفسير النسفى، الجامع لاحكام القران اى تفسير القرطبى، التسهيل لعلوم التنزيل اى تفسير ابن جزى، تفسير القران العظيم للطبرانى، روح المعانى للالوسى، التفسير المظهرى للبانيباتى، مفاتيح الغيب اى التفسير الكبير اى تفسير الرازى(

অর্থ: এখানে উনাদের হিদায়াত দ্বারা মহান আল্লাহ তায়ালা উনার প্রতি ঈমান, পবিত্র তাওহীদ ও পবিত্র দীন উনার মূলনীতি উনাদের ব্যাপারে উনাদের ত্বরীক্বাহ অর্থাৎ পথ ও পন্থা উদ্দেশ্য। তবে পূর্ববর্তীদের মানসূখ তথা রহিত শরীয়াত উদ্দেশ্য নয়। কেননা, নিশ্চয়ই কোন বিধান মানসূখ হওয়ার পর তা আর হিদায়াত বর্তিকা থাকে না। অত্র পবিত্র আয়াত শরীফ দ্বারা হযরত উলামা কিরাম রহমাতুল্লাহি আলাইহিম উনারা প্রমাণ করেছেন যে, নূরুম্ মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনি সমস্ত আম্বিয়া আলাইহিমুস সালাম উনাদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ। কেননা, উনার চরিত্র মুবারকের পূর্ণতা ও উত্তম ছিফাত সমূহ ছিলো অন্যান্যগণের থেকে ব্যতীক্রম। হযরত দাঊদ আলাইহিস সালাম ও হযরত সুলাইমান আলাইহিস সালাম উনারা ছিলেন মহান আল্লাহ তায়ালা উনার নিয়ামতের শুকরিয়া আদায়কারী। হযরত আইয়ূব আলাইহিস সালাম তিনি ছিলেন কঠিন রোগের সময় ছবরকারী। হযরত ইউসুফ আলাইহিস সালাম তিনি ছিলেন শুকরগুজার ও ছবরকারী। হযরত মূসা কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি ছিলেন আশ্চাম্বিত মু’জিযাহ উনার অধিকারী। হযরত যাকারিয়া আলাইহিস সালাম, হযরত ইয়াহইয়া আলাইহিস সালাম, হযরত ঈসা রূহুল্লাহ আলাইহিস সালাম ও হযরত ইলইয়াস আলাইহিস সালাম উনারা ছিলেন দুনিয়ার মোহ থেকে পবিত্র। হযরত ইসমাঈল যবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি ছিলেন সত্যের প্রতিক। উনাদের প্রত্যেকের মধ্যে কোন কোন নির্দিষ্ট চরিত্র-গুনাগুন মুবারক প্রকাশ পেয়েছিলো। কিন্তু মহান আল্লাহ তায়ালা তিনি সকল প্রকার সৎ চরিত্র ও গুনাগুন সমূহ উনার হাবীব নূরুম মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মধ্যে সমাবেশ ঘটিয়েছেন। সুবহানাল্লাহ। অর্থাৎ সমস্ত ছিফত বা গুণাবলী উনাদের অধিকারী নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি। উনার থেকে ছিফত বা গুণাবলীসমূহ প্রয়োজন মাফিক সমস্ত হযরত আম্বিয়া আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে ও হযরত আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদেরকে বণ্টন করে দেয়া হয়েছে। সুবহানাল্লাহ! (রূহুল বয়ান অর্থাৎ তাফসীরুল হাক্কী পবিত্র সূরাতুল্ আনয়াম শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ নং ৯০ লেখক: হযরত ইসমাঈল হাক্কী বিন মুছ্তফা বারূসাবী হানাফী মাতুরীদী রহমাতুল্লাহি আলাইহি ওয়াফাত: ১১২৭ হিজরী, ইরশাদুল আক্বলিস সালীম ইলা মাযাইয়াল্ কিতাবিল কারীম অর্থাৎ তাফসীরে আবুস সাঊদ, মাদারিকুত তানযীল ওয়া হাক্বায়িকুত তা’বীল অর্থাৎ তাফসীরুন নাসাফী, আল্ জামিউ লিআহকামিল কুরআন লিল্ কুরতুবী অর্থাৎ তাফসীরুল কুরতুবী, আত্ তাসহীল লিউলূমিত্ তানযীল অর্থাৎ তাফসীরে ইবনু জুযী, তাফসীরুল কুরআনিল আযীম লিত্ ত্ববারানী, রূহুল মায়ানী লিল্ আলূসী, আত্ তাফসীরুল মাযহারী লিল্ পানীপথী, মাফাতীহুল গইব অর্থাৎ আত্ তাফসীরুল কবীর অর্থাৎ তাফসীর্রু রাযী)

উল্লেখিত পবিত্র আয়াত শরীফ ও উনার তাফসীর থেকে প্রমাণিত হল যে, পবিত্র ঈমান-আক্বায়িদ উনার ব্যাপারে সমস্ত নাবী-রসূল আলাইহিমুছ ছলাতু ওয়াস সালাম উনাদের বিধান একই। কিন্তু পবিত্র শরীয়াত অর্থাৎ ফিক্বহ উনার মাসয়ালার ব্যাপারে অবস্থাভেদে হুকুম ভিন্ন-ভিন্ন হতো। তাই পূর্ববর্তী উম্মাত উনাদের সময়ের বিধানসমূহ আমাদের জন্য পালন করা জায়িয নেই।

পবিত্র আয়াত শরীফ নম্বর- ২৫

ياَيُّهَا الَّذِيْنَ امَنُوا اتَّقُوا اللهَ وَابْتَغُوْا الَيْهِ الْوَسِيْلَةَ وَجَاهِدُوْا فِىْ سَبِيْلِه لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُوْنَ. (سورة المائدة الشريفة ۳۵ الاية الشريفة)

অর্থ: হে মু’মিনগণ! তোমরা মহান আল্লাহ তায়ালা উনাকে ভয় করো এবং উনার নৈকট্য লাভের জন্য ওয়াসীলা তালাশ করো। আর উনার পথে জিহাদ করো। এতে তোমরা অবশ্যই সফলকাম হতে পারবে। (পবিত্র সূরাতুল্ মায়িদাহ শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ নম্বর ৩৫)

অত্র পবিত্র আয়াত উনার বিশুদ্ধ তাফসীর বা ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ

(৪৯৭)

ياَيُّهَا الَّذِينَ امَنُوا اتَّقُوا اللهَ وَابْتَغُوا الَيْهِ الْوَسِيلَةَ اى التقرب رواه الحاكم رحمة الله عليه عن حذيفة رضى الله عنه وكذا روى الفريانى رحمة الله عليه وعبد بن حميد رحمة الله عليه وابن المنذر رحمة الله عليه وابن ابى حاتم رحمة الله عليه عن ابن عباس رضى الله عنهما قلت يعنى تقربا ذاتيا بلا كيف فى القاموس الوسيلة المنزلة عند الملك والدرجة والقربة والواسل الراغب وفى الصحاح الوسيلة التوصل الى شىء برغبة وهى اخص من الوصيلة لتضمنها

معنى الرغبة وفى الحديث الوسيلة درجة عند الله ليس فوقها درجة فسلوا الله ان يوتينى الوسيلة رواه احمد رحمة الله عليه بسند صحيح عن ابى سعيد الخدرى رضى الله عنه مرفوعا وروى مسلم رحمة الله عليه عن عبد الله ابن عمرو بن العاص رضى الله عنه قال قال رسول الله صلى اللّه عليه وسلم اذا سمعتم المؤذن فقولوا مثل ما يقول ثم صلوا علىّ فانه من صلى علىّ صلوة صلى اللّه عليه بها عشرا ثم سلوا الله لى الوسيلة فانها منزلة فى الجنة لا ينبغى الا لعبد من عباد الله وارجو ان اكون انا هو فمن سال لى الوسيلة حلت عليه الشفاعة فان قيل هذه الاحاديث تدل على ان الوسيلة درجة ليست فوقها درجة ولا جرم انها مختصة بالنبى صلى الله عليه وسلم كما يدل عليه النصوص والاجماع وقوله تعالى وابتغوا اليه الوسيلة امر بطلبه ويظهر بذلك جواز حصوله لغيره فما الوجه لتخصيصه قلت المرتبة المختصة بالنبى صلى الله عليه وسلم لا يمكن حصولها لاحد من الناس بالاصالة ولكن جاز حصولها لكمل افراد امته بالتبعية والوراثة ومن طلب زيادة شرح هذا المقام فليرجع الى مكاتيب سيدى وامامى القيوم الرباني المجدد للالف الثانى رحمة الله عليه ومن هاهنا يتلاشى كثير من اعتراضات المعاندين المتعصبين الغافلين عن حقيقة الامر عن كلامه ويمكن ان يقال الوسيلة تعم درجات قربه تعالى وما طلبه النبي صلى الله عليه وسلم لنفسه هو اعلى افرادها والله اعلم.  (فائدة) وكون الرغبة والمحبة داخلة فى مفهوم الوسيلة كما ذكره الجوهرى فى الصحاح يفيدك ان الترقى الى هنالك منوط بالمحبة لا بشئ اخر ويؤيده ما قال المجدد رحمة الله عليه ان السير يعنى النظرى فى مرتبة اللاتعين التى هى اعلى مراتب القرب التى ليس فوقها درجة وهى المكنى عنها بقوله صلى الله عليه وسلم لى مع الله وقت لا يسعنى فيه ملك مقرب ولا نبى مرسل منوط بالمحبة لا غير والله اعلم، والمحبة ثمرة اتباع السنة قال الله تعالى فاتبعونى يحببكم الله فكمال متابعة النبى صلى الله عليه وسلم ظاهرا وباطنا يفيد حصول تلك المرتبة لمن يشاء الله تعالى تبعا ووراثة وَجاهِدُوا فِى سَبِيْلِه مع اعداء الله سبحانه عن النفس والشياطين والكفار لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ وتفوزون الى ما هو مقصودكم من الخلوص لعبودية الله تعالى وكمال التقوى وابتغاء الوسيلة. (التفسير المظهرى سورة المائدة الشريفة ۳۵ الاية الشريفة المؤلف: حضرت محمد ثناء الله الهندى البانى بنى النقشبندى الحنفى رحمة الله عليه المتوفى سنة ۱۲۲۶ هجرى)

অর্থ: হে মু’মিনগণ! তোমরা মহান আল্লাহ তায়ালা উনাকে ভয় করো এবং উনার নৈকট্য লাভের জন্য ওয়াসীলা তালাশ করো অর্থাৎ উনার নৈকট্য তালাশ করো। হযরত হাকিম রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি হযরত হুযাইফাহ রদ্বিয়াল্লাহু আনহু উনার থেকে এরূপ অর্থ বর্ণনা করেছেন। অনুরূপ অর্থ হযরত আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহু উনার থেকে হযরত ফিরইয়ানী রহমাতুল্লাহি আলাইহি, হযরত আব্দ বিন হুমাইদ রহমাতুল্লাহি আলাইহি, হযরত ইবনুল্ মুনযির রহমাতুল্লাহি আলাইহি ও হযরত ইবনু আবী হাতিম রহমাতুল্লাহি আলাইহি বর্ণনা করেছেন। গ্রন্থকার বলেন, আমি বলি: এ নৈকট্য হলো আত্মিক নৈকট্য যা বর্ণনার উর্ধ্বে। ‘আল্ ক্বামূস’ গ্রন্থে বলা হয়েছে যে, ওয়াসীলাহ অর্থ বাদশাহের দরবারে পদ, মর্যাদা ও নৈকট্য লাভ করা। ওয়াসিল অর্থ আগ্রহশীল। ‘আছ্ ছিহ্হাহ’ গ্রন্থে আছে, ওয়াসীলাহ অর্থ কোন কিছুর কাছে আগ্রহের সাথে পৌঁছা। وسيلة শব্দের মধ্যে وصيلة থেকে খাছ করে বেশী অর্থ পাওয়া যায়। কেননা, ওয়াসীলাহ শব্দ উনার মধ্যে আগ্রহের অর্থ নিহিত। পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে, মহান আল্লাহ তায়ালা উনার নিকট ওয়াসীলাহ একটি স্তরের নাম, যার উপর কোন স্তর নেই। সুতরাং তোমরা মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট প্রার্থনা করো তিনি যেন আমাকে সেই ওয়াসীলাহ নামের স্তর মুবারক হাদিয়া করেন। হযরত ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি অত্র হাদীছ শরীফখানা ছহীহ সনদে হযরত আবূ সাঈদ খুদরী রদ্বিয়াল্লাহু আনহু উনার থেকে মারফূ’ সুত্রে বর্ণনা করেছেন। মুসলিম শরীফ উনার মধ্যে হযরত আব্দুল্লাহ বিন আমর বিন আছ রদ্বিয়াল্লাহু আনুহু উনার থেকে বর্ণিত আছে, নূরুম্ মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, তোমরা যখন মুয়াযযিনের আযান শুনো তখন মুয়াযযিন যা বলেন তোমরাও তা-ই বলো এবং আযান শেষ হলে আমার প্রতি দুরূদ শরীফ পড়। যে ব্যক্তি আমার প্রতি একবার পবিত্র দুরূদ শরীফ পড়ে, মহান আল্লাহ পাক তিনি তার উপর বিনিময়ে দশটি রহমত নাযিল করেন। তারপর মহান আল্লাহ তায়ালা উনার নিকট আমার জন্য ওয়াসীলার দুয়া করো। কেননা, ওয়াসীলাহ পবিত্র জান্নাত উনার একটি মর্যাদাপূর্ণ স্থানের নাম, যা মহান আল্লাহ তায়ালা উনার আব্দ গণের মধ্যে মাত্র একজন লাভ করবেন। আর আমি জানি যে সেই আব্দ আমিই। সুতরাং যে ব্যক্তি আমার জন্য ঐ ওয়াসীলাহ প্রাপ্তির দুয়া করবে, তাকে শাফায়াত করা আমার জন্য ওয়াজিব হয়ে পড়বে।

এখানে একটি প্রশ্ন হতে পারে যে, এত সব হাদীছ শরীফ থেকে জানা যায় যে, ওয়াসীলাহ জান্নাতের মধ্যে একটি সর্ব্বোচ্চ স্তরের নাম, যার উপর আর কোন স্তর নেই। আরো জানা যায় যে, ঐ স্তর মুবারক খানা নূরুম্ মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জন্য নির্দিষ্ট। পবিত্র হাদীছ শরীফ ও ইজমাউল উম্মাহ থেকে এটাই প্রমাণীত হয়। অথচ মহান আল্লাহ পাক তিনি অত্র পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে নির্দেশ দিচ্ছেন তোমরা উনার নিকট ওয়াসীলাহ তালাশ কর। এর দ্বারা বুঝা যায় যে উসীলা লাভ করা অন্যের পক্ষেও সম্ভব, তা কারো জন্য নির্দিষ্ট নয়। এ প্রশ্নের অবসান কিভাবে হতে পারে?।

গ্রন্থকার বলেন, আমার মতে: এ প্রশ্নের সমাধান এই হতে পারে যে, জান্নাত উনার মধ্যে ওয়াসীলাহ নামক মাকামটি যা নূরুম্ মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জন্যে নির্দিষ্ট, তথায় অন্য কেউ সরাসরি পৌঁছতে পারবে না। তবে নূরুম্ মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মাধ্যমে উনার শ্রেষ্ঠ উম্মাত উনারা পরোক্ষভাবে ও মীরাসী সূত্রে তা লাভ করতে পারবে। এ বিষয়ে অধিক জানতে হলে হযরত মুজাদ্দিদে আলফি ছানী রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার মাকতূবাত শরীফ পড়ে দেখুন। স্বার্থপর বিদ্বেষপরায়ণ লোকেরা এ স্থান থেকে বহু মনগড়া কথা তৈরি করেছে, যার সাথে মূল বিষয়ের দূরতম সম্পর্কও নেই। এখানে এ উত্তরও দেয়া যেতে পারে যে, মহান আল্লাহ পাক উনার নৈকট্য লাভ করার যত স্তর আছে, উনাদের সবগুলোকেই ওয়াসীলাহ বলা হয়। তম্মধ্যে সর্ব্বোচ্চ স্তরখানা নূরুম্ মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জন্য নির্দিষ্ট।

ওয়াসীলাহ শব্দের অর্থের মধ্যে আগ্রহ ও মুহব্বত উনাদের অর্থ নিহিত আছে। হযরত আল্লামা জাওহারী রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার ‘আছ্ ছিহহাহ’ নামক কিতাবে এ কথার উল্লেখ করেছেন। উনার দ্বারা বুঝা যায় যে, মহান আল্লাহ পাক উনার নৈকট্য লাভে ক্রমোন্নতির জন্যে আমলের সাথে মুহব্বাত থাকাও প্রয়োজন, অন্য কিছুর দ্বারা এটা সম্ভব নয়। তিনি বলেছেন, سير অর্থাৎ لاتعين মাক্বামে আত্মিক ভ্রমণ, যা মহান আল্লাহ পাক উনার নৈকট্যের সর্ব্বোচ্চ স্তর, যার উপর আর কোন স্তর নেই। হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ কথাটি বলেছেন এভাবে

 لى مع الله وقت لا يسعنى فيه ملك مقرب ولا نبى مرسل

‘অর্থাৎ মহান আল্লাহ তায়ালা উনার সাথে আমার এমন একটি অবস্থা বা সময় আছে যে, সেখানে কোন নৈকট্যশীল হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম এবং হযরত নবীয়ে মুরসাল আলাইহিমুস্ সালাম উনারাও পৌঁছতে পারেন না।’ এ স্তর মুবারকখানা হচ্ছে মুহাব্বত উনার স্তর, অন্য কিছুর নয়। এ মুহাব্বত লাভ হয় সুন্নাতের অনুকরণের দ্বারা। মহান আল্লাহ তায়ালা তিনি ইরশাদ মুবারক করেছেন: ‘তোমরা আমার তথা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অনুসরণ করো, তাহলে মহান আল্লাহ তায়ালা তোমাদেরকে মুহাব্বত করবেন’। সুতরাং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বাহ্যিক ও আভ্যন্তরিণ সকল দিক থেকে যে ব্যক্তি উনার পূর্ণ অনুসরণ করবে, সে ব্যক্তিকে মহান আল্লাহ তায়ালা ইচ্ছা করলে উক্ত মর্যাদা দান করবেন পরোক্ষ ও ওয়ারিছ হিসেবে। সুবহানাল্লাহ। (আত্ তাফসীরুল মাযহারী পবিত্র সূরাতুল্ মায়িদাহ শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ নম্বর ৩৫ লেখক: হযরত মুহাম্মাদ ছানাউল্লাহ হিন্দী পানীপথী নকশাবন্দী হানাফী মাতুরীদী রহমাতুল্লাহি আলাইহি ওয়াফাত: ১২১৬ হিজরী)

(৪৯৮)

واعلم ان الاية الكريمة صرحت بالامر بابتغاء الوسيلة ولا بد منها البتة فان الوصول الى الله تعالى لا يحصل الا بالوسيلة وهى علماء الحقيقة ومشايخ الطريقة.

والعمل بالنفس يزيد فى وجودها واما العمل وفق اشارة المرشد ودلالة الانبياء عليهم الصلوة السلام والاولياء رحمة الله عليهم فيخلصها من الوجود ويرفع الحجاب ويوصل الطالب الى رب الارباب. (تفسير روح البيان فى تفسير القران اى تفسير الحقى سورة المائدة الشريفة ۳۵ الاية الشريفة المؤلف: حضرت اسماعيل حقى بن مصطفى الاستانبولى الحنفى الخلوتى البروسوى رحمة الله عليه تاريخ الوفاة ۱۱۲۷ هجرى(

অর্থ: জেনে রাখুন! নিশ্চয়ই অত্র পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে ওয়াসীলাহ তালাশ করার জন্য স্পষ্টভাবে নির্দেশ রয়েছে। যা না হলেই নয়। নিশ্চয়ই ওয়াসীলাহ ব্যতীত মহান আল্লাহ পাক উনার নৈকট্য লাভ করা যায় না। আর উক্ত ওয়াসীলাহ হচ্ছেন হাক্বীক্বী উলামা কিরাম ও ত্বরীক্বতপন্থী কামিল মুরশিদ উনারা।

ওয়াসীলাহ উনার কারণে আমলে ইখলাছ বৃদ্ধি পায়। আর আমল করার তাওফীক্ব আসে মুরশিদ ক্বিবলা উনার নেক দৃষ্টি বা ফায়েযের মাধ্যমে এবং হযরত আম্বিয়া আলাইহিমুছ ছলাতু ওয়াস সালাম ও হযরত আউলিয়া কিরাম রহমাতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের ইঙ্গিতে। এতে ইবাদতে ইখলাছ পয়দা হয়, গাফলাতীর বাঁধা উঠে যায় এবং সালিক মহান রব তায়ালা উনার নৈকট্যে পৌঁছতে সক্ষম হয়। (তাফসীরে রূহুল বয়ান ফী তাফসীরিল কুরআন অর্থাৎ তাফসীরুল হাক্কী পবিত্র সূরাতুল্ মায়িদাহ শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ নম্বর ৩৫ লেখক: হযরত ইসমাঈর হাক্কী বিন মুছ্তফা ইস্তাম্বুলী হানাফী খালওয়াতী বারূসাবী রহমাতুল্লাহি আলাইহি ওয়াফাত: ১১২৭ হিজরী)

(৪৯৯)

فالوسيلة هى التى يتوسل بها الى المقصود قالت التعليمية دلت الاية على انه لا سبيل الى الله تعالى الا بمعلم يعلمنا معرفته ومرشد يرشدنا الى العلم به وذلك لانه امر بطلب الوسيلة اليه مطلقاً والايمان به من اعظم المطالب واشرف المقاصد فلا بدّ فيه من الوسيلة. (مفاتيح الغيب اى التفسير الكبير اى تفسير الرازى سورة المائدة الشريفة ۳۵ الاية الشريفة المؤلف: الامام العالم العلامة والحبر البحر الفهامة فخر الدين محمد بن عمر التميمى الرازى الشافعى المتوفى سنة ۶۰۶ هجرى)

অর্থ: যে নিয়ামত মুবারক উনার মাধ্যমে মানযিলে মাক্বছূদে পৌঁছতে সক্ষম হওয়া যায় উনাকে ওয়াসীলাহ বলা হয়। হযরত উলামায়ে কিরাম রহমাতুল্লাহি আলাইহিম উনারা বলেন: অত্র পবিত্র আয়াত শরীফ প্রমাণ করে যে, শিক্ষক তথা মুরশিদ ছাড়া মহান আল্লাহ তায়ালা উনার নৈকট্য লাভের কোনই পথ নেই। যিনি আমাদেরকে মা’রিফাত শিক্ষা দেন। তাই মুরশিদ আমাদেরকে ইলমে মা’রিফাত উনার ইল্ম শিখান। একারণেই এখানে ওয়াসীলাহ তালাশ করার জন্য আদেশ করা হয়েছে। আর মহান আল্লাহ পাক উনার প্রতি ঈমান বড় শিক্ষনীয় বিষয় এবং শ্রেষ্ঠ অবলম্বন। যা ওয়াসীলাহ ব্যতীত শুদ্ধ করা যায় না। (মাফাতীহুল গইব তথা আত্ তাফসীরুল্ কবীর অর্থাৎ তাফসীর্রু রাযী পবিত্র সূরাতুল্ মায়িদাহ শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ নম্বর ৩৫ লেখক: আল ইমাম আল্ আলিমুল আল্লামাহ ওয়াল্ হিবরুল বাহরুল ফহ্হামাহ ফখরুদ্দীন মুহাম্মাদ বিন উমর তামীমী রাযী শাফিয়ী রহমাতুল্লাহি আলাইহি ওয়াফাত: ৬০৬ হিজরী)

(৫০০)

مطلقُ الوسيلة وهو داخل فيها دخولاً اولياً. (ارشاد العقل السليم الى مزايا الكتاب الكريم اى تفسير ابى السعود سورة المائدة الشريفة ۳۵ الاية الشريفة المؤلف: ابو السعود العمادى محمد بن محمد بن مصطفى رحمة الله عليه المتوفى ۹۸۲ هجرى(

অর্থ: সাধারণত: ওয়াসীলাহ উনার মধ্যে হযরত আউলিয়া কিরাম রহমাতুল্লাহি আলাইহিম উনারাও অন্তর্ভুক্ত। (ইরশাদুল্ আক্বলিস্ সালীম ইলা মাযাইয়াল্ কিতাবিল কারীম অর্থাৎ তাফসীরু আবিস্ সাঊদ পবিত্র সূরাতুল্ মায়িদাহ শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ নম্বর ৩৫ লেখক: হযরত আবুস্ সাঊদ আম্মাদী মুহাম্মাদ বিন মুহাম্মাদ বিন মুছ্তফা রহমাতুল্লাহি আলাইহি ওয়াফাত: ৯৮২ হিজরী)

(৫০১)

“وابتغوا اليه الوسيلة” يقول: واطلبوا القربة اليه بالعمل بما يرضيه. (جامع البيان فى تأويل القران اى تفسير الطبرى سورة المائدة الشريفة ۳۵ الاية الشريفة المؤلف: محمد بن جرير بن يزيد بن كثير بن غالب الآملى ابو جعفر الطبرى رحمة الله عليه المتوفى ۳۱۰ هجرى)

অর্থ: “তোমরা উনার নৈকট্য লাভের জন্য ওয়াসীলা তালাশ করো‘’ অর্থাৎ উনার সন্তোজজনক কাজ দ্বারা উনার নৈকট্য অনুসন্ধান করো। (জামিউল বয়ান ফী তা’বীলিল্ কুরআন অর্থাৎ তাফসীরুত্ ত্ববারী পবিত্র সূরাতুল্ মায়িদাহ শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ নম্বর ৩৫ লেখক: হযরত মুহাম্মাদ বিন জারীর বিন ইয়াযীদ বিন কাছীর বিন গালিব আমালী আবূ জা’ফর ত্ববারী রহমাতুল্লাহি আলাইহি ওয়াফাত: ৩১০ হিজরী)

(৫০২)

{وابتغوا إِلَيهِ الوسيلة} يعنى اطلبوا القرابة والفضيلة بالاعمال الصالحة. (بحر العلوم اى تفسير السمرقندى سورة المائدة الشريفة ۳۵ الاية الشريفة المؤلف: ابو الليث نصر بن محمد بن احمد بن ابراهيم السمرقندى الحنفى رحمة الله عليه المتوفى۳۷۳ هجرى)

অর্থ: (তোমরা উনার নৈকট্য লাভের জন্য ওয়াসীলাহ তালাশ করো) অর্থাৎ নেক আমল সমূহ দ্বারা তোমরা নৈকট্য ও মর্যাদা অনুসন্ধান করো। (বাহরুল উলূম অর্থাৎ তাফসীরুস্ সামারকান্দী পবিত্র সূরাতুল্ মায়িদাহ শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ নম্বর ৩৫ লেখক: হযরত আবুল লাইছ নছর বিন মুহাম্মাদ বিন আহমাদ বিন ইবরাহীম সামারকান্দী হানাফী রহমাতুল্লাহি আলাইহি ওয়াফাত: ৩৭৩ হিজরী)

অত্র পবিত্র আয়াত শরীফ এবং উনার ব্যাখ্যা সমূহ দ্বারা এটাই প্রমাণীত হলো যে, মহান আল্লাহ তায়ালা উনার নৈকট্য অর্জন করার জন্য ওয়াসীলাহ হচ্ছে- সাইয়্যিদুল মুরসালীন ইমামুল মুরসালীন নূরুম্ মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, হযরত উলামায়ে কিরাম, হযরত আউলিয়ায়ে কিরাম এবং যার যার হক্কানী-রব্বানী শায়েখ তথা মুরশিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনারা। উনাদের অনুসরণই হলো মাযহাব মান্য করা।

পবিত্র আয়াত শরীফ নম্বর- ২৬

وَانْ اَحَدٌ مِنَ الْمُشْرِكِينَ اسْتَجَارَكَ فَاَجِرْهُ حَتى يَسْمَعَ كَلَامَ اللهِ ثُمَّ اَبْلِغْهُ مَاْمَنَه ذلِكَ بِاَنَّهُمْ قَوْمٌ لَا يَعْلَمُونَ. (سورة التوبة الشريفة ۶ الاية الشريفة)

অর্থ: মুশরিকদের কেউ যদি আপনার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করে, তবে তাকে আশ্রয় দিবেন, যাতে সে মহান আল্লাহ তায়ালা উনার কালাম শুনতে পায়। অতপর তাকে তার নিরাপদ স্থানে পৌঁছে দিবেন। এটি এজন্য যে এরা এমন সম্প্রদায় যারা জ্ঞান রাখে না। (পবিত্র সূরাতুত্ তাওবাহ শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ নম্বর ৬)

অত্র পবিত্র আয়াত উনার বিশুদ্ধ তাফসীর বা ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ

(৫০৩)

قال الفقهاء حربى اسلم فى دار الحرب ولا يعلم بالشرائع من الصوم والصلاة ونحوهما ثم دخل دار الاسلام لم يكن عليه قضاؤها ولا يعاقب عليه اذا مات ولو اسلم فى دار الاسلام ولم يعلم بالشرائع يلزمه القضاء. (روح البيان اى تفسير الحقى سورة التوبة الشريفة ۶ الاية الشريفة المؤلف: اسماعيل حقى بن مصطفى البروسوي الحنفى الماتريدى رحمة الله عليه الوفاة ۱۱۲۷ هجرى(

অর্থ: হযরত ফুক্বাহায়ে কিরাম রহমাতুল্লাহি আলাইহিম উনারা বলেন, কোন যোদ্ধা যদি যুদ্ধের অঞ্চলে ইসলাম গ্রহণ করে এবং সে অবস্থায় সে রোযা নামায ইত্যাদী শরয়ী বিষয়ে ইল্ম অর্জন করেনি, অতপর সে ইসলামী ভূখন্ডে প্রবেশ করলো, তখন তার পিছনের অনাদায়ী ইবাদত সমূহের ক্বাযা করা ওয়াজিব থাকে না এবং সে সে অবস্থায় মারা গেলে তাকে শাস্তিও দেয়া হবে না। আর কেউ যদি ইসলামী ভূখন্ডে ইসলাম কবূল করে এবং সম্মানিত শরীয়াত উনার ইল্ম অর্জন না করে, তাহলে তার উপর পিছনের অনাদায়ী ইবাদত সমূহের ক্বাযা আদায় করা ওয়াজিব হবে। (রূহুল বয়ান অর্থাৎ তাফসীরুল হাক্কী পবিত্র সূরাতুত্ তাওবাহ শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ নম্বর ৬ লেখক: হযরত ইসমাঈল হাক্কী বিন মুছ্তফা বারূসাবী হানাফী মাতুরীদী রহমাতুল্লাহি আলাইহি ওয়াফাত: ১১২৭ হিজরী)

(৫০৪)

{حتى يَسْمَعَ كَلاَمَ الله} ويتدبره. (مدارك التنزيل وحقائق التأويل اى تفسير النسفى سورة التوبة الشريفة ۶ الاية الشريفة المؤلف: ابو البركات عبد الله بن احمد بن محمود النسفى الحنفى الماتريدى رحمة الله عليه المتوفى ۷۱۰ هجرى)

অর্থ: (যাতে সে মহান আল্লাহ তায়ালা উনার কালাম শুনতে পায়) এবং উহা নিয়ে চিন্তা-ফিক্র করার সুযোগ পায়। (মাদারিকুত্ তানযীল ওয়া হাক্বায়িকুত তা’বীল অর্থাৎ তাফসীরুন নাসাফী পবিত্র সূরাতুত্ তাওবাহ শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ নম্বর ৬ লেখক: হযরত আবুল বারাকাত আব্দুল্লাহ বিন আহমাদ বিন মাহমূদ নাসাফী হানাফী মাতুরীদী রহমাতুল্লাহি আলাইহি ওয়াফাত: ৭১০ হিজরী)

অত্র পবিত্র আয়াত শরীফ এবং উনার তাফসীর থেকে বুঝা যায় যে, আশ্রয় প্রার্থনাকারী মুশরিক ব্যক্তি যাতে পবিত্র কুরআন শরীফ শ্রবণ করে ফিক্র করার সুযোগ পায় এজন্য তাকে পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ তিলাওয়াত করে শুনাবেন। এতে সে পবিত্র ঈমান গ্রহণ করতে পারে।

পবিত্র আয়াত শরীফ নম্বর- ২৭

وَالسَّابِقُوْنَ الْاَوَّلُوْنَ مِنَ الْمُهَاجِرِيْنَ وَالْاَنْصَارِ وَالَّذِيْنَ اتَّبَعُوْهُمْ بِاحْسَانٍ رَضِىَ اللهُ عَنْهُمْ وَرَضُوْا عَنْهُ وَاَعَدَّ لَهُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِىْ تَحْتَهَا الْاَنْهَارُ خَالِدِيْنَ فِيْهَا اَبَدًا ذلِكَ الْفَوْزُ الْعَظِيْمُ (سورة التوبة الشريفة ۱۰۰ الاية الشريفة)

অর্থ: মুহাজিরীন (হিজরতকারী) ও আনছার (হিজরতকারী উনাদেরকে সাহায্যকারী) হযরত ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু আনহুম উনাদের মধ্যে যাঁরা পূর্ববর্তীদের মধ্যে অগ্রগামী এবং পরবর্তীতে উত্তমভাবে উনাদেরকে যাঁরা (ইমাম, মুজতাহিদ, উলামা-আউলিয়া রহমাতুল্লাহি আলাইহিম) অনুসরণ করেছেন। মহান আল্লাহ তায়ালা তিনি উনাদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন, আর উনারাও উনার প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন। মহান আল্লাহ তায়ালা উনাদের জন্য এমন জান্নাত প্রস্তুত করে রেখেছেন যার তলদেশে নদীসমূহ প্রবাহিত আছে, উনারা সেখানে চিরকাল অবস্থান করবেন। এটাই হলো মহান সফলতা। (পবিত্র সূরাতুত্ তাওবাহ শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ নম্বর ১০০)

অত্র পবিত্র আয়াত উনার বিশুদ্ধ তাফসীর বা ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ

(৫০৫)

{وَالسابقُوْنَ} مبتدأ {الْاَولُوْنَ} صفة لهم {مِنَ الْمُهَاجريْنَ} تبيين لهم وهم الذين صلوا الى القبلتين او الذين شهدوا بدرا او بيعة الرضوان {وَالْاَنْصَار} عطف على المهاجرين اى ومن الانصار وهم اهل بيعة العقبة الاولى وكانوا سبعة نفر، واهل العقبة الثانية وكانوا سبعين {وَالذيْنَ اتبَعُوْهُمْ بِاحْسَانٍ} من المهاجرين والانصار فكانوا سائر الصحابة رضى الله عنهم. وقيل: هم الذين اتبعوهم بالايمان والطاعة الى يوم القيامة والخبر {رَّضِىَ الله عَنْهُمْ} باعمالهم الحسنة {وَرَضُوْا عَنْهُ} بما افاض عليهم من نعمته الدينية والدنيوية {وَاَعَدَّ لَهُمْ} عطف على رَضِى {جَنات تَجْرِىْ تَحْتَهَا الاَنْهَارُ} مِن تَحْتِهَا مكى {خَالديْنَ فِيْهَا اَبَدًا ذلكَ الْفَوْزُ الْعَظيْمُ}. (مدارك التنزيل وحقائق التأويل اى تفسير النسفى سورة التوبة الشريفة ۱۰۰ الاية الشريفة المؤلف: ابو البركات عبد الله بن احمد بن محمود النسفى الحنفى الماتريدى رحمة الله عليه المتوفى ۷۱۰ هجرى)

অর্থ: (ওয়াস্ সাবিকূনা অর্থাৎ যাঁরা অগ্রগন্য) শব্দটি মুবতাদা (সর্বপ্রথম) শব্দটি আস্ সাবিকূন শব্দ মুবারকের ছিফাত (মুহাজিরীন অর্থাৎ হিজরতকারী উনাদের মধ্যে) উনারা হলেন দুই পবিত্র ক্বিবলা উনাদের দিকে মুখ করে নামায আদায়কারী, পবিত্র বদর জিহাদ ও পবিত্র বাইয়ার্তু রিদ্বওয়ান উনার মধ্যে অংশগ্রহণকারী (আনছার অর্থাৎ হিজরতকারী উনাদেরকে সাহায্যকারী উনাদের মধ্যে) এখানে ‘আল্ আনছার’ লফ্য মুবারক খানা ‘আল্ মুহাজিরীন’ লফ্য মুবারক উনার উপর আত্ফ হয়েছে। অর্থাৎ উনারা হলেন প্রথম বাইয়াতুল্ আক্বাবাহ উনার সাতজন সদস্য এবং দ্বিতীয় বাইয়াতুল্ আক্বাবাহ উনার সত্তুর জন সদস্য ছহাবাহ কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুম উনারা। (এবং উত্তমভাবে উনাদেরকে যাঁরা অনুসরণ করেছেন) হযরত মুহাজিরীন ও আনছার রদ্বিয়াল্লাহু আনহুম উনাদেরকে যাঁরা উত্তমভাবে অনুসরণ করেছেন উনারা হলেন- অন্যান্য সকল হযরত ছহাবাহ কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুম। কেউ বলেন: যাঁরা পবিত্র ঈমান-আক্বায়িদ ও আমলী আনুগত্যতার ব্যাপারে ক্বিয়ামত পর্যন্ত উনাদেরকে অনুসরণ করবেন এখানে উনাদের কথাই বলা হয়েছে।

(মহান আল্লাহ তায়ালা তিনি উনাদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন) উনাদের উত্তম আমল সমূহের কারণে। (আর উনারাও উনার প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন) এজন্য যে মহান আল্লাহ তায়ালা তিনি উনাদের প্রতি দীনী ও দুনিয়াবী সকল প্রকার নিয়ামত পরিপূর্ণভাবে ঢেলে দিয়েছেন।

(তিনি উনাদের জন্য প্রস্তুত করে রেখেছেন) এ বাক্যাংশ খানা ‘রদ্বিয়া’ লফ্য উনার প্রতি আত্ফ হয়েছে (এমন পবিত্র জান্নাত সমূহ উনাদের তলদেশে নদীসমূহ প্রবাহিত আছে, উনারা সেখানে চিরকাল অবস্থান করবেন। এটাই হলো মহান সফলতা)। (মাদারিকুত তানযীল ওয়া হাক্বায়িকুত্ তা’বীল অর্থাৎ তাফসীরুন্ নাসাফী পবিত্র সূরাতুত্ তাওবাহ শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ নম্বর ১০০ লেখক: হযরত আবুল বারাকাত আব্দুল্লাহি বিন আহমাদ বিন মাহমূদ নাসাফী হানাফী মাতুরীদী রহমাতুল্লাহি আলাইহি ওয়াফাত: ৭১০ হিজরী)

(৫০৬)

{والسابقون الاولون من المهاجرين} والمراد قدماء الصحابة رضى الله عنهم وهم الذين سبقوا الى الايمان وصلوا الى القبلتين وشهدوا بدرا وكان اول من اسلم خديجة رضى الله عنها وعليها السلام وعليه الجمهور {والانصار} اهل بيعة العقبة الاولى وكانوا سبعة نفر واهل العقبة الثانية وكانوا سبعين والذين امنوا حين قدم عليهم الوزارة مصعب بن عمير كما سيأتى وانما مدح السابقين لان السابق امام للتالى والفضل للمتقدم {والذين اتبعوهم باحسان} اى متلبسين به والمراد كل خصلة حسنة وهم اللاحقون بالسابقين من الفريقين. وقيل المراد بهم جميع الصحابة من المهاجرين والانصار فانهم سابقون الى الاسلام بالنسبة الى سائر المسلمين فمن بيانه والتابعون هم اهل الايمان الى يوم القيامة. (روح البيان اى تفسير الحقى سورة التوبة الشريفة ۱۰۰ الاية الشريفة المؤلف: اسماعيل حقى بن مصطفى البروسوي الحنفى الماتريدى رحمة الله عليه الوفاة ۱۱۲۷ هجرى)

অর্থ: (যাঁরা সর্বপ্রথম মুহাজিরীন তথা হিজরতকারী ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু আনহুম উনাদের মধ্যে অগ্রগামী) পবিত্র আয়াতাংশ দ্বারা উদ্দেশ্য প্রবীণ হযরত ছহাবাহ কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুম উনারা। উনারা হলেন পবিত্র ঈমান গ্রহণের ক্ষেত্রে অগ্রগণ্য, পবিত্র দুই ক্বিবলাহ উনাদের দিকে নামায আদায়কারী এবং পবিত্র বদর জিহাদে অংশগ্রহণকারী। যাঁরা সর্বপ্রথম পবিত্র ইসলাম গ্রহণ করেন তিনি হলেন হযরত খদীজাতুল কুবরা আলাইহাস সালাম। হযরত জমহূর তথা অধিকাংশ উলামা কিরাম রহমাতুল্লাহি আলাইহিম উনারা এ মতই পোষণ করেছেন। (ও আনছার তথা হিজরতকারী উনাদেরকে সাহায্যকারী ছহাবী রদ্বিয়াল্লাহু আনহুম উনাদের মধ্যে অগ্রগামী) উনারা হলেন- প্রথম বাইয়াতুল্ আক্বাবাহ উনার সাতজন সদস্য এবং দ্বিতীয় বাইয়াতুল্ আক্বাবাহ উনার সত্তর জন সদস্য ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুম। আর হযরত মুছয়াব ইবনে উমাইর রদ্বিয়াল্লাহু আনহু উনার সহযোগীতায় আগমণ করে পবিত্র ঈমান গ্রহণকারী হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুম উনারা। নিশ্চয়ই অগ্রগামী উনাদের জন্য প্রশংসা। কেননা, নিশ্চয়ই অগ্রগামী উনারাই পরবর্তীগণের ইমাম এবং অগ্রগামী উনারাই প্রথম মর্যাদাময়। (উত্তমভাবে উনাদেরকে যাঁরা অনুসরণ করেছেন) অর্থাৎ উনাদের পথে চলেছেন। উনার দ্বারা সকল উত্তম খাছলাত বা স্বভাব উদ্দেশ্য। উনারা হলেন- অগ্রগামী হযরত মুহাজিরীন ও আনছার রদ্বিয়াল্লাহু আনহুম উনাদের পরবর্তী অনুসারী। কারো মতে: পবিত্র আয়াতাংশ দ্বারা অন্যান্য সকল হযরত মুহাজিরীন ও আনছার ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুম উনারা উদ্দেশ্য, কেননা উনারা দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করার দিক থেকে পরবর্র্তী সকল মুসলমান উনাদের মধ্যে অগ্রগামী। আর হযরত তাবিঊন কিরাম রহমাতুল্লাহি আলাইহিম উনারা এবং যাঁরা ক্বিয়ামত পর্যন্ত দুনিয়ায় আসবেন উনাদের জন্য পবিত্র ঈমান উনার মাপকাঠি। (রূহুল বয়ান অর্থাৎ তাফসীরুল হাক্কী পবিত্র সূরাতুত্ তাওবাহ শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ নম্বর ১০০ লেখক: হযরত ইসমাঈল হাক্কী বিন মুছ্তফা বারূসাবী হানাফী মাতুরীদী রহমাতুল্লাহি আলাইহি ওয়াফাত: ১১২৭ হিজরী)

অত্র পবিত্র আয়াত শরীফ এবং উনার তাফসীর থেকে স্পষ্ট প্রমাণিত হলো যে, ক্বিয়ামত পর্যন্ত যাঁরা দুনিয়ায় আসবেন উনাদের সকলের জন্য হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুম উনারা অনুসরনীয়। এটাও প্রমানীত হলো যে, হযরত ইমাম-মুজতাহিদ রহমাতুল্লাহি আলাইহিম উনারা অগ্রগামী ও অনুসরনীয়।

অসমাপ্ত

পরবর্তী সংখ্যার অপেক্ষায় থাকুন

কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে প্রাণীর মূর্তি তৈরি করা ও ছবি আঁকা, তোলা, তোলানো, রাখা, রাখানো, দেখা, দেখানো হারাম নাজায়িয হওয়ার অকাট্য প্রমাণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-২৫

জুমুয়া ও ঈদাইনের খুৎবা আরবী ভাষায় দেয়া ওয়াজিব। আরবী ব্যতীত অন্য কোন ভাষায় খুৎবা দেয়া মাকরূহ তাহরীমী ও বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া

কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে প্রাণীর মূর্তি তৈরি করা ও ছবি আঁকা, তোলা, তোলানো, রাখা, রাখানো, দেখা, দেখানো হারাম নাজায়িয হওয়ার অকাট্য প্রমাণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-২৬

জুমুয়া ও ঈদাইনের খুৎবা আরবী ভাষায় দেয়া ওয়াজিব। আরবী ব্যতীত অন্য কোন ভাষায় খুৎবা দেয়া মাকরূহ তাহরীমী ও বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-২

কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে প্রাণীর মূর্তি তৈরি করা ও ছবি আঁকা, তোলা, তোলানো, রাখা, রাখানো, দেখা, দেখানো হারাম নাজায়িয হওয়ার অকাট্য প্রমাণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-২৭