পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে সম্মানিত ও পবিত্র মাযহাব চতুষ্ঠয় উনাদের মধ্যে যে কোন একটি সম্মানিত ও পবিত্র মাযহাব মানা ও অনুসরণ করা ফরয ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-৬৪

সংখ্যা: ২৮৪তম সংখ্যা | বিভাগ:

৩৩তম ফতওয়া হিসেবে

“পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে সম্মানিত ও পবিত্র মাযহাব চতুষ্ঠয় উনাদের মধ্যে যে কোন একটি সম্মানিত ও পবিত্র মাযহাব মানা ও অনুসরণ করা ফরয ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া”-

পেশ করতে পারায় মহান আল্লাহ পাক উনার পবিত্র দরবার শরীফ-এ শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি।

সম্মানিত চার মাযহাব হানাফী, মালিকী, শাফিয়ী ও হাম্বলী উনাদের সম্মানিত প্রতিষ্ঠাতা ও ইমাম উনাদের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি মুবারক

সম্মানিত শরীয়ত অর্থাৎ পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনাদের ফায়ছালা মতে প্রত্যেক মুসলমান পুরুষ-মহিলা, জ্বিন-ইনসান সকলের জন্য সম্মানিত চার মাযহাব উনাদের যেকোনো একটি সম্মানিত মাযহাব উনাদের অনুসরণ করা যেরূপ ফরয-ওয়াজিব তদ্রূপ সম্মানিত শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে মাযহাব পরিবর্তন করা বা এক মাযহাবের অনুসারী হয়ে অন্য মাযহাবের উপর আমল করা জায়িয নেই।

এ প্রসঙ্গে মুসলিম শরীফ উনার বিখ্যাত ব্যাখ্যাকার প্রখ্যাত মুহাদ্দিছ হযরত ইমাম নববী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ‘মুসলিম শরীফ উনার’ টিকায় এবং ইমাম তাহাবী ‘দুররুল মুখতার’ কিতাবের হাশিয়াতে লিখেন-

عَلَيْكُمْ يَا مَعْشَرَ الْـمُؤْمِنِيْنَ اِتِّبَاعُ الْفِرْقَةِ النَّاجِيَةِ الْـمُسَمَّاةِ بِأَهْلِ السُّنَّةِ وَالْـجَمَاعَةِ فَأِنَّ نَصْرَةَ اللهِ وَحِفْظَهٗ وَتَـوْفِيْـقَهٗ فِيْ مُوَافِقَتِهِمْ وَخَذَلًالَّهٗ وَسَخْطَهٗ وَمَقْتَهٗ فِيْ مُـخَالِفَتِهِمْ وَهٰذِهِ الطَّائِفَةُ النَّاجِيَةُ قَدْ اِجْتَمَعَتِ الْيَوْمَ فِيْ مَذْهَبِ أَرْبَعٍ وَهُمُ الْـحَنَفِيُّـوْنَ وَالْـمَالِكِيُّـوْنَ وَالشَّـفِعِيُّـوْنَ وَالْـحَنَبِلِيُّـوْنَ رَحِـمَهُمُ اللهُ وَمَنْ كَانَ خَارِجًا مِّنْ هٰذِهِ الْأَرْبَعَةِ فَـهُوَ أَهْلُ الْبِدْعَةِ وَالنَّارِ

অর্থ: হে ঈমানদারগণ! আপনারা নাজিয়া (নাজাতপ্রাপ্ত) দলকে অনুসরণ করে চলুন যা আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামায়াহ নামে মশহূর। কারণ মহান আল্লাহ পাক উনার সাহায্য, হিফাযত ও তাওফীক্ব অর্জন সম্মানিত আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত উনাদের অনুসরণের মাধ্যমেই সম্ভব এবং মহান আল্লাহ পাক উনার অসন্তুষ্টি, গযব ও অপদস্ততা উনাদের সাথে বিরোধিতার কারণেই। আর ‘আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত’ বর্তমান যুগে চার মাযহাবে বিভক্ত। উনারাই হলেন সম্মানিত হানাফী, মালিকী, শাফিয়ী ও হাম্বলী মাযহাব। আর যারাই বর্তমানে এ ৪ মাযহাব বহির্ভূত তারাই বিদয়াতী ও জাহান্নামী। (তাম্বিহ ৪৬৬ পৃষ্ঠা)

অনুসরণীয় সকল ইমাম মুজতাহিদ উনারা এ ব্যাপারে একমত পোষণ করেছেন যে, অনুসরণীয় ও গ্রহণযোগ্য মাযহাব হচ্ছে চারটি।

১। হানাফী ২। মালিকী

৩। শাফিয়ী ৪। হাম্বলী।

সম্মানিত হানাফী মাযহাব উনার প্রতিষ্ঠাতা ও পৃষ্ঠপোষক হচ্ছেন ইমাম আ’যম ইমাম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি।

সম্মানিত মালিকী মাযহাব উনার প্রতিষ্ঠাতা ও পৃষ্ঠপোষক হচ্ছেন হযরত ইমাম মালিক রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি।

সম্মানিত শাফিয়ী মাযহাব উনার প্রতিষ্ঠাতা ও পৃষ্ঠপোষক হচ্ছেন হযরত ইমাম শাফিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি।

সম্মানিত হাম্বলী মাযহাব উনার প্রতিষ্ঠাতা ও পৃষ্ঠপোষক হচ্ছেন হযরত ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি।

নিম্নে সংক্ষিপ্তভাবে উনাদের পরিচিতি ও সাওয়ানেহ উমরী মুবারক তুলে ধরা হলো-

 

হযরত ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বাইয়াত গ্রহণ ও ইলমে তাছাওউফ হাছিল শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার প্রতি আদব প্রদর্শন

পূর্ব প্রকাশিতের পর

সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

اَحِبُّوا اللهَ لِمَا يَغْذُوْكُمْ مِّنْ نّـعْمَةٍ وَّاَحِبُّـوْنِـىْ لـِحُبّ اللهِ وَاَحِبُّـوْا اَهْلَ بَــيْـتِـىْ لِـحُبّـىْ

অর্থ: “তোমরা মহান আল্লাহ পাক উনাকে মুহব্বত করো। কেননা তিনি তোমাদেরকে রিযিক তথা খাদ্য দান করেন। মহান আল্লাহ পাক উনার মুহব্বত পাওয়ার জন্য আমাকে মুহব্বত করো। আর আমার মুহব্বত পাওয়ার জন্য আমার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে মুহব্বত করো।” (তিরমিযী শরীফ)

তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন-

اَلشَّيْخُ لِقَوْمِهٖ كَالنَّبِـىِّ فِـىْ اُمَّتِهٖ

অর্থ: শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা ক্বওম তথা মুরীদের কাছে সেরূপ সম্মানিত, অনুসরণীয়-অনুকরনীয় যেমন হযরত নবী আলাইহিমুস সালামগণ উনারা উনাদের উম্মতের নিকট সম্মানিত, অনুসরণীয়-অনুকরণীয়।”

তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন-

بَـجِّلُوا الْـمَشَائِخَ فَاِنَّ تَـبْجِيْلَ الْـمَشَائِخِ مِنْ اِجْلَالِ اللهِ تَعَالٰى. فَمَنْ لَّـمْ يُـبَجِّلْهُمْ فَـلَيْسَ مِنَّا

অর্থ: “তোমরা শায়েখগণ উনাদেরকে সম্মান করবে। কেননা উনাদের সম্মান করা মহান আল্লাহ পাক উনাকেই সম্মান করার অন্তর্ভুক্ত। কাজেই, যাঁরা উনাদেরকে সম্মান করেনা তারা আমাদের দলভুক্ত না। (মিশকাতুল আনওয়ার-১৬৮, মুস্তাদরাকে হাকিম-২/৭৪)

ইমামুল মুসলিমীন, মুজাদ্দিদে মিল্লাত ওয়াদ দ্বীন, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের পরিপূর্ণ অনুসরণকারী। তিনি একটি মুস্তাহাব-সুন্নত মুবারক আদায় না হওয়ার কারণে বিশ বছরের পবিত্র নামায দোহরিয়ে (পুনরায়) আদায় করেছিলেন। সুবহানাল্লাহ!

উল্লেখ্য, পায়ের আঙ্গুলগুলো নিচের দিক দিয়ে খিলাল করা মুস্তাহাব, সুন্নতে যায়িদা। তিনি বিশ বছর যাবত উপর দিক দিয়ে খিলাল করেছিলেন। যখন পুর্ণ তাহক্বীক হলো যে, আঙ্গুলের নিচের দিক দিয়ে খিলাল সুন্নাত তখন তিনি পূর্বে আদায়কৃত পবিত্র নামাযগুলো দোহরিয়ে নিলেন। সুবহানাল্লাহ! (জামিউর রুমুজ)

কাজেই পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনার কিরূপ অনুসরণকারী তিনি ছিলেন তা সহজেই অনুমেয়।

তিনি উল্লেখিত পবিত্র আয়াত শরীফ এবং পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের পরিপূর্ণ হক্ব আদায় করেছেন। যা নিম্নের ওয়াকিয়া থেকে আরো সুস্পষ্ট হয়েছে। হযরত ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি অত্যন্ত আদব-ইহতিরাম ও গুরুত্বের সাথে দরস (পাঠদান) দিতেন। উনার দরসে হাজার হাজার তলিবুল ইলিম (ইলিম অন্বেষণকারী) মুরীদ, মুতাকিদ উপস্থিত থাকতেন। এমনকি একদিন দরস দেয়ার সময় একটি সাপ এসে উনার দরসগাহে প্রবেশকরতঃ উনাকে পর পর ছয়বার কামড় দিলো। পরিশেষে সপ্তমবার খুব জোরে কামড় দেয়ার পর সাপটি মারা গেলো। তা’লীম শেষ হলো। কেউ কোনো কথা-বার্তা বলার সাহস করলো না। সবাই চলে গেলো। উনার একজন ঘনিষ্ঠ ছাত্র জিজ্ঞাসা করলেন, হুযূর! বেয়াদবী ক্ষমা চাই। আজকে একটা আশ্চর্যজনক ঘটনা দেখতে পেলাম। একটা সাপ এসে আপনাকে পর পর সাত বার কামড় দিয়ে সাপটিই মারা গেলো। এর কারণ কি? তিনি বললেন, সাপটি ছয়বার কামড় দিয়ে তার বিষ আমার শরীর মুবারকে প্রবেশ করাতে না পেরে গোস্সা করে সে সপ্তমবার খুব জোরে কামড় দিয়েছিলো। তবুও তার বিষ আমার শরীরে প্রবেশ করাতে পারেনি। বরং আমার শরীরে মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যে মুহব্বত মুবারক ছিলো তা সাপের ভিতর প্রবেশ করেছে। কিন্তু সাপের পক্ষে তা বরদাস্ত (সহ্য) করা সম্ভব হয়নি। ফলে সাপটি মারা গেছে। সুবহানাল্লাহ!

সেই হযরত ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার পবিত্র দরসগাহে একটি বিপরীত ঘটনা সংঘটিত হলো। একদিন তিনি তা’লীম দেয়ার সময় মাঝে মাঝে উঠে দাঁড়াতেন। কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে আবার বসে যেতেন। এভাবে বেশ কয়েকবারই হলো। আর উনি দাঁড়ানোর কারণে মুরীদণ্ডমুহিব্বীন, ত্বলাবাগণ উনারাও দাঁড়াতেন, আবার বসতেন। উনার রোব (ব্যক্তিত্বের প্রভাব) মুবারক উনার কারণে কেউ কোনো কথা বলার সাহস পাননি। মজলিস শেষ হলো।  উনার একজন খাছ মুরীদ উনাকে বললেন, হুযূর! বেয়াদবী ক্ষমা চাই। আজকে আপনাকে ব্যতিক্রম আমল করতে দেখেছি। আপনি দরসের সময় কয়েকবার দাঁড়িয়েছেন আবার বসেছেন, তার কারণ কি? তিনি বললেন, আপনারা অবশ্যই দেখতে পেয়েছেন যে, একজন ছোট্ট ছেলে দরসগাহের নিকটবর্তী হয়েছেন। আবার কিছুক্ষণ পর চলে গেছেন। এভাবে কয়েকবারই তিনি এসেছেন আবার চলে গেছেন।

সেই ছোট্ট ছেলে, যিনি ছিলেন আওলাদে রসূল অর্থাৎ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র আহলে বাইতে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। তিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বংশধর। উনি আমার দৃষ্টি গোচর হলে উনার সম্মানার্থে আমি দাঁড়িয়ে যেতাম। উনি দৃষ্টিগোচর হওয়া পর্যন্ত দাঁড়িয়ে থাকতাম। আর যখন দৃষ্টিসীমার বাইরে যেতেন তখন বসতাম ও পাঠদানে (তা’লীমে) মনোনিবেশ করতাম। সুবহানাল্লাহ!

ইমাম আবূ ইউসুফ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, একদিন মুজাদ্দিদে মিল্লাত ওয়াদ দ্বীন, ইমামুল মুসলিমীন, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি পবিত্র মসজিদে হারাম শরীফে বসে ফতওয়া তথা উপস্থিত লোকদের বিভিন্ন সুওয়ালের জওয়াব দিচ্ছিলেন। সে সময় ইমামুল মুত্তাক্বীন, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র আহলে বাইতে রসূল, ইমামুস সাদিস সাইয়্যিদুনা ইমাম জাফর ছাদিক আলাইহিস সালাম তিনি তাশরীফ মুবারক রাখলেন। মানুষদের মাঝে দাঁড়িয়ে রইলেন। ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার দৃষ্টিগোচর হওয়া মাত্রই তিনি উনার সম্মানার্থে দাঁড়ালেন। আর বিনীতভাবে আরয করলেন, “হে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আওলাদ! বেয়াদবী ক্ষমা চাই। আমি যদি আপনার তাশরীফ মুবারক আনার বিষয়টি জানতাম তাহলে কখনোই এভাবে আমি বসে থাকতাম না। আর কাউকে ফতওয়াও দিতাম না। তখন মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র আহলে বাইতে রসূল হযরত ইমামুস সাদিস আলাইহিস সালাম তিনি বললেন- আপনি বসে মানুষদেরকে ফতওয়া দিতে থাকুন। আমি আমার সম্মানিত পূর্বপুরুষগণ উনাদেরকে এভাবেই পেয়েছি।” সুবহানাল্লাহ! (মানাকিবুল ইমামিল আ’যম-১/১১৬, ইমাম আবু হানিফা রহমতুল্লাহি আলাইহি হাদীছ শাস্ত্রের প্রধান ইমাম- ৩১৪)

ইমামুল মুসলিমীন, ইমামুল মুহাদ্দিছীন ওয়াল ফুকাহা, মুজাদ্দিদে মিল্লাত ওয়াদ দ্বীন, সাইয়্যিদুনা ইমাম আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনাকে সর্বশ্রেষ্ঠ মনে করতেন। যা ইলমে তাছাওউফ তথা মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের মুবারক তায়াল্লুক নিছবত, মুহব্বত,মা’রিফাত হাছিলের প্রথম ও প্রধান শর্ত।

বিশিষ্ট মুহাদ্দিছ ইমাম আবূ হামযা সুমালী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, আমরা ইমামুল খ্বমিস মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা ইমাম আবূ জাফর মুহম্মদ বাকির আলাইহিস সালাম উনার দরবার শরীফে একদিন উপস্থিত ছিলাম। ইমামুল মুহাদ্দিছীন ওয়াল ফুক্বাহা, ইমামুল মুসলিমীন, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনিও সেই মুবারক মজলিসে উপস্থিত ছিলেন। তিনি অত্যন্ত বিনয়-নম্রতার সাথে উনার শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল খ্বমিস মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে কিছু মাসয়ালা-মাসায়িল সমাধানের জন্য উনার মুবারক খিদমতে পেশ করলেন। আর ইমামুল মুহাক্কিক্বীন, ইমামুল মুত্তাক্বীন, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল খমিস মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তার সমাধান দিলেন। অতঃপর হযরত ইমাম আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি যখন সেই মুবারক মজলিস থেকে চলে গেলেন তখন সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল খ্বমিস মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমাদেরকে বলেন,

 مَا اَحْسَنُ هَدِيَـتُهٗ وَسَـمْتُهٗ وَمَا اَكْثَـرُ فِقْهُهٗ

অর্থ: “এ ব্যক্তিত্বের হিদায়েত কতইনা উত্তম। উনার মত-পথ তথা মাযহাব কতই না শ্রেষ্ঠ। আর উনার আক্বল-সমঝের গভীরতা কতই না ব্যাপক।” (আল ইনতিক্বা ফী ফাযায়িলিল আইম্মাতিস সালাসাতিল ফুক্বাহা-১৯৩, মানাকিবুল ইমামিল আ’যম আবী হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি-৩৩, ইমাম আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি হাদীছ শাস্ত্রের প্রধান ইমাম-৩০৬)

মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাবীব সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের মুবারক মা’রিফাত, মুহব্বত, সন্তুষ্টি, রেযামন্দি, তায়াল্লুক-নিছবত হাছিলের ক্ষেত্রে স্বীয় শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনাকে সকলের চেয়ে সর্বশ্রেষ্ঠ মর্যাদা সম্পন্ন মনে করা পূর্বশর্ত। ইহা ব্যতীত তাকমীল বা পূর্ণতা লাভ করা সম্ভব নয়।

ইমামুল মুসলিমীন, মুজাদ্দিদে মিল্লাত ওয়াদ দ্বীন, হাকিমুল হাদীছ, ইমামুল আইম্মাহ, মুহইস সুন্নাহ, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার জীবনী মুবারকে তার পরিপূর্ণ প্রতিফলন দেখতে পাই। উনার চার হাজার শায়েখ ও শিক্ষক ছিলেন। তারমধ্যে ইলমে তাছাওউফ উনার প্রধান শায়েখ ছিলেন ইমামুল মুত্তাক্বীন, ইমামুল খ্বমিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বিছাল শরীফ গ্রহণ করার পর উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র আওলাদ ইমামুল মুহাক্কিক্বীন, পেশওয়ায়ে দ্বীন, ইমামুস সাদিস মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট বাইয়াত হন এবং ছোহবত মুবারক ইখতিয়ার করেন। এছাড়াও তিনি সমসাময়িক সকল হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের সদস্য ও আওলাদে রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের ৯ জন সম্মানিত ব্যক্তিত্ব উনাদের সাক্ষাত মুবারক লাভ করেছেন। উনাদেরকে তিনি অত্যন্ত মুহব্বত করতেন। উনাদের খিদমত মুবারকের আঞ্জাম দিতেন। অত্যন্ত তা’যীম-তাকরীম করতেন। সবসময়ই উনাদেরকে সমসাময়িক সকল ইমাম মুজতাহিদ ও আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের উপর প্রাধান্য দিতেন।

একদিন হযরত ইমাম আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার শায়েখ সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল খ্বমিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক ছোহবতে গেলেন। তিনি ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে দেখে বললেন, “হে আবূ হানিফা রহমতুল্লাহি আলাইহি! আমি আপনাকে অত্যন্ত ফিরাসাত বা দূরদৃষ্টিসম্পন্ন দেখতে পাচ্ছি।”

তিনি আরো বললেন, “আপনি আমার সম্মানিত নানাজান ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলুপ্ত সম্মানিত সুন্নত মুবারক জিন্দা বা পুণর্জীবিত করবেন। আপনি প্রত্যেক গরীব দুঃখিকে সাহায্য-সহযোগিতা করবেন। প্রত্যেক বিপদগ্রস্ত ব্যক্তিদের ডাকে সাড়া দিবেন। বিপদগ্রস্ত লোক যখন নিরূপায় হবে তখন আপনি হবেন তাদের সহায়ক। আপনি পথহারা, আত্মভোলা লোকদেরকে সঠিক পথের সন্ধান দিবেন। আপনি মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে বিশেষ সাহায্য ও  গাইবি মদদপ্রাপ্ত হবেন। আপনি আল্লাহওয়ালাগণ উনাদেরকে একটি পথ বা মাযহাবে একত্রিত করবেন। অর্থাৎ যারা আপনার নির্দেশিত পথ তথা প্রবর্তিত সম্মানিত মাযহাবের অনুসরণ করবেন তারা সবাই আল্লাহওয়ালা হবেন।” সুবহানাল্লাহ! (মানাকিবুল ইমামিল আ’যম-১/৩১)

সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম যায়েদ ইবনে আলী যাইনুল আবিদীন আলাইহিস সালাম উনারও ছোহবত মুবারক ইখতিয়ার করেছেন। তিনি উনার ছোহবত মুবারক উনারও হক্ব আদায় করেছেন। তিনি উনার সম্পর্কে বলেছেন-

شَاهَدْتُّ حَضْرَتْ زَيْدَ بْنَ عَلِىٍّ عَلَيْهِ السَّلَامُ كَمَا شَاهَدْتُّ اَهْلَهٗ فَمَا رَأَيْتَ فِـىْ زَمَانِهٖ اَفْـقَهُ مِنْهُ وَلَا اَعْلَمُ وَلَا اَسْرَعُ جَوَابًا وَلَا اَبْـيَنُ قَـوْلًا

অর্থ: আমি সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম যায়েদ ইবনে হযরত আলী যাইনুল আবিদীন আলাইহিস সালাম উনার মুবারক সাক্ষাত লাভ করেছি। যেমন আমি উনার সম্মানিত পরিবারের লোকজন উনাদের সাথে সাক্ষাত মুবারক করেছি। আমি উনার যুগে উনার চেয়ে বড় আলিম, ফক্বীহ, অধিক জ্ঞানী, উনার চেয়ে বেশি দ্রুত জাওয়াবদাতা ও স্পষ্টভাষী আর কাউকে দেখিনি। (আবু হানিফা রহমতুল্লাহি আলাইহি প্রধান ইমাম-৩১০)

অসমাপ্ত- পরবর্তী সংখ্যার অপেক্ষায় থাকুন

 

কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে প্রাণীর মূর্তি তৈরি করা ও ছবি আঁকা, তোলা, তোলানো, রাখা, রাখানো, দেখা, দেখানো হারাম-নাজায়িয হওয়ার অকাট্য প্রমাণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-২৮

কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে লাইলাতুন নিছফি মিন শা’বান বা শবে বরাত-এর আহকাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-১

কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে প্রাণীর মূর্তি তৈরি করা ও ছবি আঁকা, তোলা, তোলানো, রাখা, রাখানো, দেখা, দেখানো হারাম-নাজায়িয হওয়ার অকাট্য প্রমাণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-২৯

কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে লাইলাতুন নিছফি মিন শা’বান বা শবে বরাত-এর আহকাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-২

কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে প্রাণীর মূর্তি তৈরি করা ও ছবি আঁকা, তোলা, তোলানো, রাখা, রাখানো, দেখা, দেখানো হারাম-নাজায়িয হওয়ার অকাট্য প্রমাণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-৩০