পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে সম্মানিত ও পবিত্র মাযহাব চতুষ্ঠয় উনাদের মধ্যে যে কোন একটি সম্মানিত ও পবিত্র মাযহাব মানা ও অনুসরণ করা ফরয ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-৫৯

সংখ্যা: ২৭৯তম সংখ্যা | বিভাগ:

৩৩তম ফতওয়া হিসেবে

“পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে সম্মানিত ও পবিত্র মাযহাব চতুষ্ঠয় উনাদের মধ্যে যে কোন একটি সম্মানিত ও পবিত্র মাযহাব মানা ও অনুসরণ করা ফরয ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া”-

পেশ করতে পারায় মহান আল্লাহ পাক উনার পবিত্র দরবার শরীফ-এ শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি।

সম্মানিত চার মাযহাব হানাফী, মালিকী, শাফিয়ী ও হাম্বলী উনাদের সম্মানিত প্রতিষ্ঠাতা ও ইমাম উনাদের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি মুবারক

 

সম্মানিত শরীয়ত অর্থাৎ পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনাদের ফায়ছালা মতে প্রত্যেক মুসলমান পুরুষ-মহিলা, জ্বিন-ইনসান সকলের জন্য সম্মানিত চার মাযহাব উনাদের যেকোনো একটি সম্মানিত মাযহাব উনাদের অনুসরণ করা যেরূপ ফরয-ওয়াজিব তদ্রƒপ সম্মানিত শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে মাযহাব পরিবর্তন করা বা এক মাযহাবের অনুসারী হয়ে অন্য মাযহাবের উপর আমল করা জায়িয নেই।

এ প্রসঙ্গে মুসলিম শরীফ উনার বিখ্যাত ব্যাখ্যাকার প্রখ্যাত মুহাদ্দিছ হযরত ইমাম নববী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ‘মুসলিম শরীফ উনার’ টিকায় এবং ইমাম তাহাবী ‘দুররুল মুখতার’ কিতাবের হাশিয়াতে লিখেন-

عَلَيْكُمْ يَا مَعْشَرَ الْـمُؤْمِنِيْنَ اِتِّبَاعُ الْفِرْقَةِ النَّاجِيَةِ الْـمُسَمَّاةِ بِأَهْلِ السُّنَّةِ وَالْـجَمَاعَةِ فَأِنَّ نَصْرَةَ اللهِ وَحِفْظَه وَتَوْفِيْقَه فِيْ مُوَافِقَتِهِمْ وَخَذَلًالَّه وَسَخْطَه وَمَقْتَه فِيْ مُـخَالِفَتِهِمْ وَهٰذِهِ الطَّائِفَةُ النَّاجِيَةُ قَدْ اِجْتَمَعَتِ الْيَوْمَ فِيْ مَذْهَبٍ أَرْبَعٍ وَهُمُ الْـحَنَفِيُّوْنَ وَالْـمَالِكِيُّوْنَ وَالشَّفِعِيُّوْنَ وَالْـحَنَبِلِيُّوْنَ رَحِـمَهُمُ اللهُ وَمَنْ كَانَ خَارِجًا مِّنْ هٰذِهِ الْأَرْبَعَةِ فَهُوَ أَهْلُ الْبِدْعَةِ وَالنَّارِ.

অর্থ: হে ঈমানদারগণ! আপনারা নাজিয়া (নাজাতপ্রাপ্ত) দলকে অনুসরণ করে চলুন যা আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামায়াহ নামে মশহূর। কারণ মহান আল্লাহ পাক উনার সাহায্য, হিফাযত ও তাওফীক্ব অর্জন সম্মানিত আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত উনাদের অনুসরণের মাধ্যমেই সম্ভব এবং মহান আল্লাহ পাক উনার অসন্তুষ্টি, গযব ও অপদস্ততা উনাদের সাথে বিরোধিতার কারণেই। আর ‘আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত’ বর্তমান যুগে চার মাযহাবে বিভক্ত। উনারাই হলেন সম্মানিত হানাফী, মালিকী, শাফিয়ী ও হাম্বলী মাযহাব। আর যারাই বর্তমানে এ ৪ মাযহাব বহির্ভূত তারাই বিদয়াতী ও জাহান্নামী। (তাম্বিহ ৪৬৬ পৃষ্ঠা)

অনুসরণীয় সকল ইমাম মুজতাহিদ উনারা এ ব্যাপারে একমত পোষণ করেছেন যে, অনুসরণীয় ও গ্রহণযোগ্য মাযহাব হচ্ছে চারটি। ১। হানাফী ২। মালিকী ৩। শাফিয়ী ৪। হাম্বলী।

সম্মানিত হানাফী মাযহাব উনার প্রতিষ্ঠাতা ও পৃষ্ঠপোষক হচ্ছেন ইমাম আ’যম ইমাম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি।

সম্মানিত মালিকী মাযহাব উনার প্রতিষ্ঠাতা ও পৃষ্ঠপোষক হচ্ছেন হযরত ইমাম মালিক রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি।

সম্মানিত শাফিয়ী মাযহাব উনার প্রতিষ্ঠাতা ও পৃষ্ঠপোষক হচ্ছেন হযরত ইমাম শাফিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি।

সম্মানিত হাম্বলী মাযহাব উনার প্রতিষ্ঠাতা ও পৃষ্ঠপোষক হচ্ছেন হযরত ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি।

নিম্নে সংক্ষিপ্তভাবে উনাদের পরিচিতি ও সাওয়ানেহ উমরী মুবারক তুলে ধরা হলো-

 

সম্মানিত হানাফী মাযহাব উনার প্রতিষ্ঠাতা ও ইমাম সাইয়্যিদুনা ইমামে আ’যম হযরত আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সাওয়ানেহ উমরী মুবারক!

 

মহান আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন তিনি মা’রিফাত-মুহব্বত, তায়াল্লুক-নিছবত দানের নিমিত্তে হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে খাছভাবে কবুল করেছেন। মুজাদ্দিদ, ইমাম এবং আখাছছুল খাছ ওলীআল্লাহ উনাদের বিষয়টিও অনুরূপ মনোনীত। নিবিষ্ট মনে, দৃঢ়তার সাথে ইবাদত-বন্দেগী, যিকির-ফিকির, রিয়াযত-মাশাক্কাতের দ্বারা মহান আল্লাহ পাক উনার রহমত ও ইহসান পাওয়া যায়। সাধনায় সিদ্ধি লাভ হয়, ওলীআল্লাহ হওয়া যায়; কিন্তু নবী-রসূল হওয়া যায় না। একইভাবে মুজাদ্দিদ বা সংস্কারক হওয়া, ইমাম হওয়া তথা আখাছছুল খাছ ওলীআল্লাহ হওয়াও যায় না। নবী-রসূল হওয়া, মুজাদ্দিদ হওয়ার বিষয়টি মহান আল্লাহ পাক এবং উনার হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের খাছ মনোনয়ন, ফযল-করম, একান্ত দয়া, দান ও ইহসানের অন্তর্ভুক্ত। তিনি যাঁকে ইচ্ছা তাঁকে কবুল করেন, মনোনীত করেন, তায়াল্লুক বা নৈকট্য দানে ধন্য করেন। যে প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন-

ذٰلِكَ فَضْلُ اللهِ  يُؤْتِيْهِ مَنْ يَّشَآءُ

অর্থাৎ ইহা মহান আল্লাহ পাক উনার একান্ত দয়া-অনুগ্রহ। তিনি যাঁকে ইচ্ছা তাঁকে তা দান করেন।” (পবিত্র সূরা জুমুয়া শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৪)

মহান আল্লাহ পাক তিনি আরো বলেন-

اَللهُ يَجْتَبِيْۤ إِلَيْهِ مَنْ يَّشَآءُ وَيَهْدِىْۤ إِلَيْهِ مَنْ يُّنِيْبُ

অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক তিনি যাঁকে ইচ্ছা তাঁকে খাছভাবে কবুল করেন, মনোনীত করেন। আর যে ব্যক্তি উনার দিকে রুজু হন, মনোনিবেশ করেন উনাকেও তিনি হিদায়েত তথা নৈকট্য দান করেন।” (সূরা শুরা শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১৩)

হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের পর মহান আল্লাহ পাক তিনি এবং উনার হাবীব সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারা যাঁদেরকে খাছভাবে কবূল বা মনোনীত করেছেন উনাদের মধ্যে বিশেষ ব্যক্তিত্ব হচ্ছেন- ইমামুল মুসলিমীন, মুজাদ্দিদে মিল্লাত ওয়াদ দ্বীন, হাকিমুল হাদীছ, ইমামে আ’যম, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি। সুবহানাল্লাহ!

মহান আল্লাহ পাক তিনি এবং উনার হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারা উনাকে ইলম-হিকমত, আক্বল-সমঝ, ধন-সম্পদ, সীরত-ছূরত, প্রভাব-প্রতিপত্তি, ব্যক্তিত্ব-অস্তিত্ব ইত্যাদির এমনি পরিপূর্ণতা দান করেছেন যে, তদানীন্তন সময়ে চক্ষুষ্মান সকল ব্যক্তিরই এরূপ হক্কুল ইয়াক্বীন পয়দা হয়েছিল যে, ইমামে আ’যম হযরত রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি সবই জানেন, সবই বুঝেন। সুবহানাল্লাহ!

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, একদিন এক ব্যক্তি উনার খিদমতে হাজির হয়ে সবিনয়ে আরয করলেন, হুযূর বেয়াদবি ক্ষমা চাই! আমার ঘরের এক স্থানে অনেক দিন আগে কিছু দিনার-দিরহাম রেখেছিলাম। কিন্তু এখন তা খুঁজে পাচ্ছি না। দয়া করে, মেহেরবানী করুন। সেগুলো কোথায় আছে, তা একটু বলে দিন। সে ব্যক্তির কাকুতি-মিনতি শুনে ইমামুল মুসলিমীন, মুজাদ্দিদে মিল্লাত ওয়াদ দ্বীন, হাকিমুল হাদীছ, সাইয়্যিদুনা ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি লোকটিকে বললেন- হে ব্যক্তি! তুমি তোমার দিনার-দিরহাম কোথায় রেখেছো তা আমি কিভাবে বলবো?

সে ব্যক্তি বললো- হুযূর বেয়াদবী ক্ষমা চাই! আপনি জানেন এটা আমার বিশ্বাস। আপনি আমাকে মেহেরবানী করুন।

ইমামুল মুসলিমীন, সাইয়্যিদুনা ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ওই ব্যক্তির কথার দৃঢ়তা এবং কাকুতি-মিনতি দেখে বাধ্য হয়ে তার বাড়িতে যেতে রাযি হলেন। লোকটির বাড়িতে উপস্থিত হয়ে এক স্থানের দিকে ইশারা করে বললেন, এ জায়গা খুঁড়ে দেখ তো। লোকটি সে জায়গা কিছুদূর খুঁড়তেই তার দিনার-দিরহামগুলো পেয়ে গেলো। সুবহানাল্লাহ! এ রকম একটি দুটি নয়, অসংখ্য-অগণিত ঘটনা রয়েছে।

ইমামে আ’যম, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি মুসলিম মিল্লাতের একজন অবিস্মরণীয় ইমাম ও মুজতাহিদ। আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশের পর দ্বীন ইসলামের খুঁটিনাটি সকল বিষয়ের শরয়ী হুকুম-আহকাম, বিধি-বিধানকে সুসংহত করার অমর কৃতিত্ব উনারই। দ্বীন ইসলাম উনার এ সকল শরয়ী হুকুম-আহকাম যদি বর্তমান আকারে সুবিন্যস্ত না থাকতো তাহলে ইসলামী অনুশাসন মেনে চলা অত্যন্ত কঠিন ও কষ্ট সাধ্য হতো। উপরন্তু মুসলিম উম্মাহকে গুমরাহীর দ্বারপ্রান্তে উপনীত হতে হতো।

তিনি উনার জীবনের শেষ বিন্দু রক্তের বিনিময়ে যে মাযহাব রচনা করেছেন, সেই মাযহাব এমনি মকবুল বা কবুল হয়েছে যে, যারা সেই মাযহাব অনুসরণ করেন ও করবেন তারা অতি সহজেই মহান আল্লাহ পাক এবং উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মা’রিফত-মুহব্বত, সন্তুষ্টি-রেযামন্দি লাভে ধন্য হবেন। বিগত, আগত, অসংখ্য-অগণিত ইমাম-মুজতাহিদ ও আওলিয়ায়ে কিরাম উনার মাযহাবের অনুসারী হতে পেরে মহান আল্লাহ পাক উনার অসংখ্য শুকরিয়া আদায় করেছেন। সঙ্গত কারণে উনার মুবারক জীবন ও কর্ম সম্পর্কে জানা সকলের জন্য আবশ্যক। নি¤েœ সংক্ষিপ্তভাবে উনার পবিত্র সাওয়ানেহ উমরী মুবারক তুলে ধরা হলো:

তা’রীফ বা পরিচিতি:

পবিত্র বিলাদত শরীফ: ইমামুল মুসলিমীন, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ৮০ হিজরী সনে পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন। খলীফাতুল্লাহ, খলীফাতু রসূলিল্লাহ, ইমামুল আইম্মাহ, মুহ্ইস সুন্নাহ, কুতুবুল আলম, মুজাদ্দিদে আ’যম, হাকিমুল হাদীছ, আশরাফুল আওলিয়া, সাইয়্যিদুনা ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি এটাকেই মু’তাবার বা সর্বাধিক নির্ভরযোগ্য বলেছেন। আল্লামা আব্দুল কাদির কুরশী এবং আল্লামা মুল্লা আলী ক্বারী আল হানাফী রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারাসহ অধিকাংশ ইমাম, মুজতাহিদ, আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারাও এ অভিমত ব্যক্ত করেছেন। (তাবয়ীদুস ছহীফাহ, জাওয়াহিরুল মুদ্বিয়্যাহ লিস সুয়ূতী)।

মুবারক নাম: নু’মান। কুনিয়াত বা উপনাম আবু হানীফা। ইমামে আ’যম লক্বব মুবারক এবং আবু হানীফা উপনামে তিনি মাশহূর বা বিশেষ খ্যাতি লাভ করেছেন।

পিতা উনার নাম মুবারক: হযরত ছাবিত রহমতুল্লাহি আলাইহি।

দাদা উনার নাম মুবারক: হযরত যুতী রহমতুল্লাহি আলাইহি। উনার পিতা এবং দাদা আমীরুল মু’মিনীন, খলীফাতুল মুসলিমীন, বাবুল ইলমে ওয়াল হিকাম সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার বরকতপূর্ণ ছোহবত লাভ করেছিলেন। উনার পিতা বাল্যকালে উনার দাদার সাথে অসংখ্য বার উনার ছোহবতে গিয়েছিলেন এবং বিভিন্নভাবে খিদমত মুবারক করার সুযোগ পেয়েছিলেন। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে উনার  মুবারক খিদমতে ফালুদা নামক উন্নতমানের আহার্য পেশ করতেন। উনার দাদা হযরত যুতী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি একবার এক ঈদের দিনে খলীফাতুল মুসলিমীন, বাবুল ইলম ওয়াল হিকাম সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার মুবারক খিদমতে অতি উন্নতমানের মিষ্টান্ন পেশ করলেন। ইহাতে তিনি অত্যন্ত খুশি হলেন এবং বললেন, “আমাদের এখানে প্রতিদিনই ঈদ।” তিনি হযরত ছাবিত রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং উনার সন্তান-সন্ততির জন্য বিশেষভাবে দোয়া করেছিলেন। সেই দোয়ার প্রতিফলনই ঘটেছিল ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মুবারক জীবন ও কর্মের পরতে পরতে।  সুবহানাল্লাহ!

তিনি ছিলেন শ্রেষ্ঠতম তাবিয়ী: সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ২৫/২৬ জন ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের দিদার লাভে ধন্য হয়েছিলেন। সাতজন ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের নিকট থেকে পবিত্র হাদীছ শরীফ রেওয়ায়েত বা বর্ণনা করেছেন। হযরত আনাস ইবনে মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে তিনটি, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে জুয রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে একটি। হযরত ওয়াছিলাহ ইবনুল আসকা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে একটি, হযরত জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে একটি, হযরত আয়িশা বিনতে আজরাদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা উনার থেকে একটি এবং হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আবী আওফা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে একটি। সুবহানাল্লাহ! (তাবয়ীদুস ছহীফাহ)।

লালন পালন: অত্যন্ত পরহিযগার, মুত্তাক্বী, আল্লাহওয়ালা এবং প্রভাব প্রতিপত্তিশালী পরিবারে তিনি লালিত-পালিত হয়েছেন। সে পরিবারের অর্থ-সম্পদের প্রাচুর্যতা ছিল প্রশংসনীয় ও অতুলনীয়। ইলিম-হিকমত ও ইসলামী তাহযীব-তামাদ্দুনের পূণ্যভূমি কুফায় তিনি পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন। সর্বোপরি উনার পিতা হযরত ছাবিত রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ছিলেন পারস্য বংশোদ্ভূত রাজন্যবর্গের এক অনন্য ব্যক্তিত্ব। তিনি কুফার তায়মুল্লাহ ইবনে সালাবাহ গোত্রের মিত্র ছিলেন বলে উনাকে ‘তায়ামুল্লাহ’ও বলা হয়। (আখবারু ইমাম আবু হানীফা ওয়া আসহাবুহু)

বাল্যকাল ও শিক্ষা জীবন: ইমামুল মুসলিমীন, মুজাদ্দিদে মিল্লাত ওয়াদ দ্বীন, হাকিমুল হাদীছ, ইমামুল আইম্মাহ, মুহইস সুন্নাহ, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি শৈশবকাল থেকেই অত্যন্ত মেধাবী প্রখর বুদ্ধিদীপ্ত এবং অসাধারণ স্মৃতিশক্তি সম্পন্ন ছিলেন। জীবনের অধিকাংশ সময়ই ইলিম ও হিকমতের পূণ্যভূমি কুফা নগরীতে বসবাস করেন। ইলিম আহরণ, বিতরণ এবং গবেষণায় জীবন কুরবান করেন। উনার দাদা ও পিতা অত্যন্ত প্রভাব-প্রতিপত্তিশালী ব্যবসায়ী এবং খাঁটি দ্বীনদার, আল্লাহওয়ালা ছিলেন। হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের সাথে এ পরিবারের অত্যন্ত গভীর সম্পর্ক ছিল।

সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি শৈশবকালেই পবিত্র কুরআন শরীফ হিফয করেছিলেন। উনার জীবনের দৈনন্দিন কাজের মধ্যে পবিত্র কুরআন শরীফ তিলাওয়াতে খুবই অনুরাগ ছিল। নির্ভরযোগ্যসূত্রে বর্ণিত আছে যে, তিনি ইমাম আছিম রহমতুল্লাহি আলাইহি যিনি সাত জন ক্বারীর অন্যতম ছিলেন, উনার কাছ থেকে ইলমে ক্বিরায়াত শিক্ষা লাভ করেন। তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার প্রদত্ত তীক্ষè প্রতিভা ও স্মৃতিশক্তির সাথে সুন্দর, আকর্ষনীয় চেহারা মুবারকের অধিকারী ছিলেন। উনাকে দেখামাত্রই দৃষ্টিপাতকারীদের দৃষ্টি উনার প্রতি নিবদ্ধ হতো। ইলমে হাদীছ, তাফসীর, ফিক্বাহ, কালাম, বালাগাত, ফাসাহাত, মানতিক, সাহিত্য ও কবিতাসহ ইলমের প্রতিটি শাখায় বিশেষ বুৎপত্তি অর্জন করেছিলেন। শৈশবকাল থেকেই ইলমে লাদুন্নীর পূর্ণ অধিকারী ছিলেন তিনি। তিনি ছিলেন তীক্ষè ধীশক্তির অধিকারী। একবার যা শুনতেন জীবনে কখনো তা ভুলতেন না। সুবহানাল্লাহ!

তিনি যৌবনের প্রথম দিকেই হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম এবং হযরত আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের পবিত্র ছোহবত বা সান্নিধ্য পান। ফলে ইলিম ও হিকমতের সমস্ত শাখায় গভীরভাবে বিচরণ করেন। পরিশেষে ইলমে হাদীছ ও ইলমে ফিক্বাহ-এর গভীর প্রজ্ঞা লাভ করে ইরাকের শ্রেষ্ঠ ফক্বীহ এবং সারাবিশ্বে ‘ইমামে আ’যম’ হিসেবে খ্যাতি লাভ করেন।

একদিনের ঘটনা। ইমামুল মুসলিমীন, মুজাদ্দিদে মিল্লাত ওয়াদ দ্বীন, হাকিমুল হাদীছ হযরত ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বয়স মুবারক তখন বিশ বছর। তিনি কুফা নগরীর বিখ্যাত ইমাম হযরত শা’বী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বাড়ীর নিকট দিয়ে বাজারে যাচ্ছিলেন। হঠাৎ হযরত ইমাম শা’বী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সাথে সাক্ষাৎ হলো।

হযরত ইমাম শা’বী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি কিছুক্ষণ উনার চেহারা মুবারক-এর দিকে তাকিয়ে রইলেন। পরে তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, আপনার যাতায়াত কোথায়?

উল্লেখ্য যে, হযরত ইমাম শা’বী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার চেহারা মুবারক-এ ইলিম উনার নূর বিচ্ছুরিত হতে দেখে মনে করেছিলেন যে, তিনি একজন তলিবুল ইলিম। কোন বিশিষ্ট ইমাম, মুজতাহিদ কিংবা কোন আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ছোহবত ইখতিয়ার করেন। ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি হযরত ইমাম শা’বী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার প্রশ্নের উত্তরে বললেন, আমি ব্যবসা-বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে বাজারে যাতায়াত করি।”

হযরত ইমাম শা’বী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি পূনরায় জিজ্ঞাসা করলেন, আমি জানতে চাচ্ছি যে, আপনি কার ছোহবত ইখতিয়ার করেন তথা কার নিকট থেকে ইলিম হাছিল করেন?

ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উত্তরে বললেন, আমি এখন উল্লেখযোগ্য কোন ব্যক্তিত্বের ছোহবত ইখতিয়ার করি না তথা ইলিম হাছিল করি না। তখন হযরত ইমাম শা’বী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বললেন, আমি তো আপনার চেহারা মুবারক-এ ইলির উনার নূর বিচ্ছুরিত হতে দেখছি।

কাজেই, আপনি ইমাম-মুজতাহিদ, আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের ছোহবত ইখতিয়ার করুন। মহান আল্লাহ পাক তিনি আপনাকে কামিয়াব করবেন।

হযরত ইমাম শা’বী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার উপদেশ ও দোয়া ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার উপর বিশেষ তা’ছীর (প্রভাব বিস্তার) করলো। তিনি ইমাম, মুজতাহিদ ও আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের ছোহবত মুবারক ইখতিয়ার করার জন্য বিশেষভাবে আগ্রহী হলেন। সেই দিনেই ইমাম, মুজতাহিদ, আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের ছোহবত মুবারক ইখতিয়ার করা শুরু করলেন। সুবহানাল্লাহ!

সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বিশেষ ছাত্র হযরত ইমাম আবু ইউসুফ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, একবার আমি ইমাম আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার খিদমতে আরয করলাম, আপনি কার থেকে ফিক্বাহ অর্জন করার সৌভাগ্য লাভ করেছেন? তিনি বললেন, শক্তি সামর্থ্য ও সুযোগ-সুবিধা চিরস্থায়ী মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকেই হয়ে থাকে। সুতরাং উনারই জন্য সকল প্রশংসা ও কৃতজ্ঞতা। যখন আমি ইলিম হাছিল তথা জ্ঞান অন্বেষণে মনোনিবেশ করলাম, তখন আমি সকল জ্ঞান-বিজ্ঞানের উপর এক এক করে দৃষ্টিপাত করলাম এবং এ সবের উপকারিতা ও পরিণামের উপর চিন্তা করলাম। আমার মন চাইলো ‘ইলমে কালাম’-এর উপর বিশেষ লেখা-পড়া করবো। তারপর চিন্তা করে দেখলাম এর পরিণাম ভাল নয়। আর এতে উপকারিতাও সামান্য। এ বিষয়ে গভীর পা-িত্য অর্জন করলেও এ বিষয়ে সঠিক বর্ণনা করা সহজসাধ্য নয়। তদুপরি এ বিষয়ের উপর নানা ধরণের আপত্তি ও অনুযোগ উত্থাপিত হয়ে থাকে এবং এ শাস্ত্র বিশেষজ্ঞকে বিদয়াতী ও ভ্রষ্ট বলা হয়ে থাকে।

তারপর আমি আরবী সাহিত্য ও নাহু-ছরফ (ব্যাকরণ)-এর উপর দৃষ্টিপাত করলাম। এতে আমি এ সিদ্ধান্তে পৌঁছলাম যে, অবশেষে এ শাস্ত্রবিদদের বসে বসে ছাত্রদের সাহিত্য ও ব্যাকরণের পাঠদান ব্যতীত কোন কাজ থাকে না। তারপর আমি কবিতা ও পদ্য শাস্ত্রের দিকে মনোনিবেশ করলাম। এতে আমার এ শাস্ত্রের মূল উদ্দেশ্য কারো প্রশংসা ও কুৎসা রটনা এবং অপ্রয়োজনীয় বাক-চাতুরতা ও দ্বীনের ক্ষতি ভিন্ন কিছু নয় বলে ধরা পড়লো।

তারপর আমি ক্বিরাআত ও তাজবীদের বিষয়ে চিন্তা করলাম। আমি বুঝলাম, এ বিষয়ে বিশেষ কৃতিত্ব অর্জনের পর অবশেষে কয়েকজন যুবক সমবেত হয়ে আমার নিকট কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করবে। আর পবিত্র কুরআন শরীফ-এর মর্মবাণী ও সার্বিক অর্থ, ব্যাখ্যা তার নিকট রয়ে যাবে এক দুর্ভেদ্য বিষয় হিসেবে।

তারপর মনে হলো, হাদীছ শরীফ অন্বেষণে আত্মনিয়োগ করি। অবশেষে বুঝলাম, হাদীছ শরীফ-এর বিশাল ভা-ার একত্রিত করা সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। আর একথা স্পষ্ট যে, হাদীছ শরীফ অন্বেষণে কম বয়সেই লেগে যেতে হয়। তদুপরি আমার আশঙ্কা হলো যে, এ বয়সে হাদীছ শরীফ সংগ্রহে মিথ্যা ও হিফযে বিভ্রাটের সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। এতে ক্বিয়ামত পর্যন্ত আমার উপর অভিযোগের পাহাড় গড়ে উঠবে।

তারপর আমি ইলমে ফিক্বাহ হাছিলের জন্য গভীরভাবে আত্মনিয়োগ করলাম। তাকরার (বারবার পঠন ও গবেষণা) হলো এ বিষয়ের মূল কথা। এ বিষয়ের মহিমা, শ্রেষ্ঠত্ব ও প্রয়োজনীয়তা আমার নিকট বেশি মনে হলো। এতে কোন দোষ-ত্রুটিও পরিলক্ষিত হলো না। আমি ভাবলাম ইলমে ফিক্বাহ আহরণের ক্ষেত্রে উলামায়ে কিরাম ও শায়েখগণ উনাদের মজলিসে গমন, উনাদের ছোহবত বা সান্নিধ্য লাভ এবং উনাদের মহান চারিত্রিক গুণাবলীতে নিজকে সাজানোর মতো বিরাট সৌভাগ্যলাভের সুযোগ সহজতর হবে। আমি এ সিদ্ধান্তে পৌঁছলাম যে, ফরয আদায়, ইক্বামতে দ্বীন, মহান আল্লাহ পাক উনার গোলামীর প্রকাশ এবং ইহকাল ও পরকালে  কামিয়াবী অর্জন ইলমে ফিক্বাহ ব্যতীত কখনোই সম্ভবপর নয়। যদি কোন ব্যক্তি ইলমে ফিক্বাহের মাধ্যমে ইহকালীন কল্যাণ লাভ করতে চান, তবে তিনি উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন দায়িত্বে সমাসীন হতে পারেন। আর যদি কেউ মহান আল্লাহ পাক উনার ইবাদত-বন্দেগী, যিকির-ফিকির, রিয়াজত-মাশাক্কাতে তথা মা’রিফাত-মুহব্বত, সন্তুষ্টি-রেযামন্দি হাছিলে মগ্ন হতে চান তবে কেউ একথা বলার সাহস পাবেন না যে, লোকটি ইলিম হাসিল না করেই নিজকে ইবাদতে মশগুল করেছে; বরং বলবে যে, তিনি ইলমে ফিক্বাহ উনার একজন ধারক-বাহক ও ইলিম অনুযায়ী আমলকারী হক্কানী-রব্বানী আলিম।

সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বিশিষ্ট ছাত্র হযরত ইমাম যুফার ইবনু হুযাইল রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, “আমি ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে বলতে শুনেছি যে, আমি ‘ইলমে কালাম’ পড়তাম ও পড়াতাম। এমন কি আমি এ বিষয়ে বিশেষ খ্যাতি লাভ করলাম। আমার দরসগাহ (আলোচনা গৃহ) হযরত ইমাম হাম্মাদ ইবনে সুলায়মান রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার দরসগাহ থেকে বেশি দূরে ছিল না। একদিন একজন স্ত্রীলোক এসে আমাকে জিজ্ঞাসা করল, এক ব্যক্তি একজন দাসী বিয়ে করলো এবং সে তাকে সুন্নতী পদ্ধতিতে তালাক দিতে ইচ্ছুক। সুতরাং সে তাকে কত তালাক দিবে? আমি বললাম, হযরত হাম্মাদ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে জিজ্ঞাসা করুন এবং তিনি যে জাওয়াব দিবেন তা আমাকে অবহিত করবেন। মহিলাটি হযরত ইমাম হাম্মাদ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে জিজ্ঞাসা করলেন। তিনি জাওয়াবে বললেন, স্বাভাবিক মাজুরতা থেকে পবিত্র হলে তার সাথে নির্জনবাস না করে তাকে এক তালাক দিবে। এরপর যখন তার দ্বিতীয় স্বাভাবিক মাজুরতা দেখা দিবে এবং তা থেকে পবিত্র হলে সে বাঁদী অন্য কারো সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারবে। মহিলা আমাকে এ ফতওয়াটি জানালেন। আমি বললাম, ‘ইলমে কালাম’-এর আমার কোন প্রয়োজন নেই। তারপর আমি নিজের স্যান্ডেল পরলাম এবং সরাসরি হযরত ইমাম হাম্মাদ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার দরসগাহের সাথে সম্পৃক্ত হয়ে গেলাম। আমি উনার প্রদত্ত মাসয়ালা শুনতাম এবং তা মুখস্থ রাখতাম। পরবর্তী সকালে পূর্ববর্তী দিনের মাসয়ালার তাকরার (পুনরাবৃত্তি) হলে আমি মাসয়ালাসমূহ হুবহু বলে দিতাম। কিন্তু উনার অপরাপর ছাত্রগণ কিছুটা ভুলও করতেন। কাজেই, হযরত ইমাম হাম্মাদ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ইহাও বলে দিলেন যে, মজলিসের প্রথম সারিতে হযরত ইমাম আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ব্যতীত আমার সামনা সামনি কেউ বসবে না।”

উপরোক্ত আলোচনা থেকে বুঝা যায় যে, তিনি যুগের সকল বিষয়ের উপর গভীর পর্যবেক্ষণ করেছেন এবং ব্যুৎপত্তি লাভ করেছেন। উপযুক্ত ও অত্যন্ত কল্যাণকর ইলিম অন্বেষণ বেছে নিয়ে তিনি তাতে বিশেষভাবে কৃতিত্ব অর্জন করেছেন। আর এ কথা অনস্বীকার্য, ইলমে ফিক্বাহের প্রতি উনার অনুরাগ ও আকর্ষণ অপরাপর অত্যাবশ্যকীয় ইলিম হাছিলের পরই হয়েছিল।

আর একথা সুস্পষ্ট যে, কোন বিষয়ে গভীরভাবে জ্ঞান অর্জন করা তথা হাক্বীক্বতে পৌঁছা ব্যতীত এরূপ সিদ্ধান্ত নেয়া কখনোই সম্ভব নয়। উনার মতো মহান ব্যক্তিত্বের পক্ষেই তা সম্ভব হয়েছে। উনার এই মহান কৃতিত্বের জন্যই সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার মুবারক শানে বলেছেন-

لَوْ كَانَ الدِّيْنُ مُعَلَّقًا بِالثُّرْيَا لَتَنَاوَلَهٗ نَاسٌ مِّنْ اَبْنَاءِ فَارِسَ

অর্থ: “দ্বীন যদি সুরইয়া তারকার নিকট চলে যায় সেখান থেকে ফিরিয়ে আনবেন পারস্যবাসীদের একজন ব্যক্তিত্ব তথা ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি।” সুবহানাল্লাহ! (মু’জামুল কবীর লিত তবারানী, তাফসীরে মাযহারী-৭/২৬৯)

বাহাছ বা তর্কযুদ্ধে ইমাম আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি

ইমামুল আইম্মাহ, মুহইস সুন্নাহ, ইমামুল মুসলিমীন, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ইলমে ফিক্বাহর প্রতি মনোনিবেশের পর পরই খারিজীদের সাথে বাহাছ বা তর্কযুদ্ধ হয়। অবশ্য বাতিল ফিরক্বা সবার সাথেই উনার বাহাছ হয়। আর সেই বাহাছে সবাই পরাজিত হয়। এমনকি কাফির-নাস্তিকদেরকেও তিনি বাহাছে পরাস্ত করে সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার শাশ্বত গৌরব ফিরিয়ে এনেছেন। আমরা খারিজীদের সাথে সংঘটিত বাহাছের কথা এখানে বর্ণনা করবো, যা খারিজীদের মতবাদ ‘কবীরা গুনাহকারী কাফির হয়ে যায়’ বিষয়ে হয়েছিল।

সেদিন খারিজীদের একটি দল ইমামুল মুসলিমীন, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মসজিদে এসে উনার মজলিসে বসে বলেছিল, মসজিদের দরজায় দুটি জানাযা হাযির। একটি হলো এক মদ্যপায়ীর, যে অধিক মদপানের কারণে শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মারা গেছে। দ্বিতীয়টি হলো এক ব্যভিচারিণীর, যে ব্যভিচারে লিপ্ত ছিল এবং সন্তানসম্ভবা হওয়ার ভয়ে আত্মহত্যা করেছে।

ইমামুল মুসলিমীন, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি তাদেরকে জিজ্ঞাসা করলেন, এরা কোন ধর্ম ও গোষ্ঠীর সাথে সম্পর্কযুক্ত ছিল? এরা কী ইহুদী? বলা হলো- না। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, তারা কী খ্রিস্টান? জবাবে বলা হলো- না। তারপর জিজ্ঞাসা করলেন, তারা তো অগ্নিপূজক নয়? বলা হলো- না। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, সবশেষ তাদের সম্পর্ক কোন দ্বীনের সাথে ছিল? খারিজীরা বললো:

لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا اللهُ مُـحَمَّدٌ رَّسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ

উনার সাথে সাক্ষ্যদাতা মিল্লাতের সাথে। ইমামুল মুসলিমীন, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি তাদেরকে জিজ্ঞাসা করলেন, ঠিক আছে। বলুন, কালিমা ত্বয়্যিবার শাহাদাত কী ঈমানের এক-তৃতীয়াংশ, এক-চতুর্থাংশ, না এক-পঞ্চমাংশ? তারা বললো, ঈমান তো বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা যায় না।

ইমামুল মুসলিমীন, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, তাহলে এই স্বাক্ষ্যের সাথে ঈমানের সম্পর্ক কী? জবাবে খারিজীরা বলল, পূর্ণাঙ্গ ঈমান। ইমাম আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বললেন, তারপর এমন ব্যক্তিদের সম্পর্কে প্রশ্নের কী অর্থ থাকতে পারে, যাদের মু’মিন হওয়ার বিষয়ে আপনারা নিজেরাই স্বীকৃতি দিচ্ছেন? খারিজীরা বললো : এখন আমাদের বলুন, এরা কী জান্নাতী না জাহান্নামী? ইমাম আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বললেন, আমি তাদের বিষয়ে সে কথাই বলবো যা হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম তিনি এদের চেয়ে আরও জঘন্য অপরাধী সম্প্রদায়ের ব্যাপারে বলেছিলেন-

فَمَنْ تَبِعَنِيْ فَإِنَّهٗ مِنِّيْ ۖ وَمَنْ عَصَانِـيْ فَإِنَّكَ غَفُوْرٌ رَّحِيْمٌ

অর্থ : “যে আমার অনুসরণ করবে, সেই আমার দলভুক্ত কিন্তু কেউ আমার অবাধ্য হলে আপনি তো ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু।” (সূরা ইবরাহীম শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৩৬)

আর ওই কথাই বলবো যা হযরত ঈসা রূহুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি এদের চেয়েও বড় গুণাহগার সম্প্রদায় সম্পর্কে বলেছিলেন-

إِنْ تُعَذِّبْـهُمْ فَإِنَّهُمْ عِبَادُكَ ۖ وَإِنْ تَغْفِرْ لَـهُمْ فَإِنَّكَ أَنْتَ الْعَزِيْزُ الْحَكِيْمُ

অর্থ : “আপনি যদি তাদেরকে শাস্তি দেন, তবে তারা তো আপনারই বান্দা। আর যদি আপনি তাদেরকে ক্ষমা করেন তবে আপনি তো পরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাময়।” (পবিত্র সূরা মায়িদা শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১১৮)

আর যখন হযরত নূহ আলাইহিস সালাম উনাকে উনার সম্প্রদায় বলেছিল-

أَنُؤْمِنُ لَكَ وَاتَّبَعَكَ الْأَرْذَلُوْنَ

অর্থ : “আমরা কী আপনার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করবো অথচ ইতর জনেরা আপনার অনুসরণ করবে।” (পবিত্র সূরা শূ’আরা : পবিত্র আয়াত শরীফ ১১১)

তখন তিনি বলেছিলেন,

قَالَ وَمَا عِلْمِىْ بِـمَا كَانُوْا يَعْمَلُوْنَ. إِنْ حِسَابُـهُمْ إِلَّا عَلٰى رَبِّيْ ۖ لَوْ تَشْعُرُوْنَ. وَمَاۤ اَنَا بِطَارِدِ الْمُؤْمِنِيْنَ

অর্থ: “তারা কী করতো তা আমার জানা নেই। তাদের হিসাব নেয়া তো আমার রব মহান আল্লাহ পাক উনার কাজ, যদি তোমরা বুঝতে। আর মু’মিনদের তাড়িয়ে দেয়া আমার কাজ নয়।” (সূরা শু’আরা : আয়াত শরীফ ১১২-১১৪)

ইমামুল মুসলিমীন, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বললেন, আমি হযরত নূহ আলাইহিস সালাম উনার কথারই পুনরাবৃত্তি করবো। তিনি বলেন-

وَلَاۤ أَقُوْلُ لَكُمْ عِندِىْ خَزَآئِنُ اللهِ وَلَاۤ أَعْلَمُ الْغَيْبَ وَلَاۤ أَقُوْلُ إِنِّـيْ مَلَكٌ وَّلَاۤ أَقُوْلُ لِلَّذِيْنَ تَزْدَرِىْۤ أَعْيُنُكُمْ لَنْ يُّؤْتِيَهُمُ اللهُ خَيْرًا ۖ اَللهُ أَعْلَمُ بِـمَا فِيْۤ أَنْفُسِهِمْ ۖ إِنِّيْۤ إِذًا لَّمِنَ الظَّالِمِيْنَ.

অর্থ: “তোমাদের দৃষ্টিতে যারা হেয়, তাদের সম্বন্ধে আমি বলি না যে, মহান আল্লাহ পাক তিনি তাদেরকে কখনই কল্যাণ দান করবেন না, তাদের অন্তরে যা আছে, তা মহান আল্লাহ পাক তিনি সম্যক অবগত। তাহলে আমি অবশ্যই যালিমদের অন্তর্ভুক্ত হবো।” (পবিত্র সূরা হূদ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৩১)

খারিজীরা ইমামুল মুসলিমীন, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার পূর্ণাঙ্গ জবাব শুনে চুপ হয়ে গেলো।

তিনি একবার উনার পুত্র হযরত হাম্মাদ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে বাহাছ বা বাকযুদ্ধে রত দেখে তা থেকে বারণ করেছিলেন। তখন উনার পুত্র বলেছিলেন, “আপনি বাহাছ করে থাকেন, অথচ আমাকে বারণ করছেন এর হিকমত কি?” তিনি বললেন, আমি বাহাছকালে গভীরভাবে এ বিষয়টির উপর দৃষ্টি রাখি যে, বিরোধী পক্ষ যেন এসব থেকে বিরত থাকে। আর তোমাদের এ বিষয়ে উদ্দেশ্যে থাকে তোমাদের প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করা ও লজ্জিত করা। যারা নিজের প্রতিপক্ষকে ঘায়েল কিংবা লজ্জিত করার ইচ্ছা রাখে, মূলত তারা যেন তাদের প্রতিপক্ষকে কাফির বানানোর ইচ্ছা পোষণ করে। আর যে ব্যক্তি তার প্রতিপক্ষকে কাফির বানাতে চায়, সে প্রতিপক্ষকে কাফির সাব্যস্ত করার পূর্বেই নিজে কাফির হয়ে যায়। নাউযুবিল্লাহ!

ব্যবসায়িক বৈশিষ্ট্য:

ইমামুল মুসলিমীন, মুজাদ্দিদে মিল্লাত ওয়াদ দ্বীন সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি দ্বীনের ধারক ও বাহক। কাজেই, তিনি যে শুধু একজন উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন আলিমে দ্বীনই ছিলেন তা নয়, বরং সর্বক্ষেত্রে তিনি ছিলেন সকলের জন্য অনুসরণীয়-অনুকরণীয়। ব্যবসায়িক ক্ষেত্রেও একজন ব্যবসায়ীর জন্য অনুকরণীয় ও অনুসরণীয় ইমাম।

তিনি একজন সহৃদয়বান ধনী ব্যক্তিত্ব ছিলেন। লোভ-লালসা কখনও উনার উপর প্রবল হতে পারেনি। তিনি ধনাঢ্য ঘরের সন্তান ছিলেন। দারিদ্র্যতার কষাঘাত থেকে তিনি ছিলেন সম্পূর্ণ সুরক্ষিত।

তিনি শুধু পরম বিশ্বস্ত ও আমানতদারই ছিলেন না। বরং তিনি সর্বকালের সর্বযুগের সকল আমানতদারের আদর্শ। কখনও তিনি আমানতদারীর মর্যাদা থেকে একটুকুও সরে যাননি।

তিনি ছিলেন উচ্চমানের দানশীল ও দাতা। কৃপণতার মতো জঘন্য ব্যাধি থেকে তিনি ছিলেন সম্পূর্ণরূপে পূতপবিত্র।

তিনি একজন অসাধারণ ব্যবসায়ী ছিলেন। অধিকাংশ লোক উনাকে খলীফাতু রসূলিল্লাহ, সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে  আকবর আলাইহিস সালাম উনার মতো ব্যবসায়ী মনে করতেন। উনাকে দেখলে মনে হতো তিনি যেন হযরত ছিদ্দীক্বে  আকবর আলাইহিস সালাম অর্থাৎ উনার হুবহু নকশা। উনার অনুসৃত ব্যবসায়িক রীতি-নীতিই তিনি গ্রহণ করেছিলেন। তিনি ব্যবসায়িক মালামাল কেনার ক্ষেত্রেও আমানতদারীর প্রতি বিশেষ লক্ষ্য রাখতেন।

একবার জনৈক মহিলা একখানা রেশমী কাপড় বিক্রি করতে এলো। তিনি মূল্য জিজ্ঞেস করলেন। মহিলা বললো, একশত মুদ্রা। তিনি বললেন, কাপড়টির মূল্য আরও অধিক। মহিলাটি কাপড়ের মূল্য বাড়াতে বাড়াতে চারশ-তে পৌঁছলে তিনি বললেন, এখনও মূল্য কম। তখন মহিলা বললো, আপনি আমাকে নিয়ে ঠাট্টা করছেন। তিনি বললেন, দরদাম করার জন্য কাউকে ডেকে আনুন। মহিলা একজন লোক ডেকে আনলো। তারপর তিনি উক্ত কাপড়খানা পাঁচশত স্থানীয় মুদ্রায় খরিদ করলেন। (আল খাইরাতুল হিসান- পৃষ্ঠা ৪৪)

লক্ষ্যণীয়, তিনি ক্রেতা হওয়া সত্ত্বেও বিক্রেতার লাভের দিকে কিভাবে দৃষ্টি রেখেছেন। মহিলার অজ্ঞতা থেকে তিনি অবৈধ কোন ফায়দা না উঠিয়ে বরং তাকে সঠিক পথ-নির্দেশনা দিয়েছেন; যা ইতিহাসে বিরল।

তিনি এমন দরদি বিক্রেতা ছিলেন যে, যখন ক্রেতা দুর্বল হতো, তখন তিনি তার সাথে বন্ধুসুলভ ব্যবহার করতেন এবং পণ্যের সঠিক মূল্য পেলেই নিজের লভ্যাংশ ছেড়ে দিতেন। একবার এক মহিলা এসে বলতে লাগলেন, আমি অতি সাধারণ ও দুর্বল ব্যক্তি। আমার নিকট এ পরিমাণ মুদ্রা আছে, আপনি আমাকে এ কাপড়খানা প্রকৃত দামে দিয়ে দিন এবং লাভ মোটেই নিবেন না। তিনি বললেন, চার দিরহামে নিয়ে নিন। মহিলা বললো, বৃদ্ধা মহিলাকে নিয়ে ঠাট্টা করবেন না। তিনি বললেন, ঠাট্টা নয়। বাস্তবতা হলো এই যে, আমি এ ধরনের দু’খানা কাপড় কিনেছিলাম। একখানা বিক্রি করে প্রকৃত খরিদ মূল্য পেয়ে গেছি, বর্তমানে মাত্র চার দিরহাম বাকী আছে। এখন এ কাপড়ের ক্রয় মূল্য হবে মাত্র চার দিরহাম।

একদিন ইমাম আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার একজন বন্ধু এলো এবং একটা বিশেষ ধরনের রেশমী কাপড় তালাশ করলো। সে ব্যক্তি সে কাপড়ের রঙ ও গুণাগুণও বললো। তিনি বললেন, অপেক্ষা কর, আমি সংগ্রহ করে দিচ্ছি। একটু পরেই তিনি সে কাপড়খানা পেয়ে গেলেন। তার সে বন্ধু একটু পরে এলে তিনি বললেন, তোমার চাহিদা পূর্ণ হয়েছে। তিনি কাপড়খানা বের করে তাকে দিলেন। বন্ধু বললো, মূল্য কত দিতে হবে? তিনি বললেন, এক দিরহাম। লোকটি বললো, আমার বুঝতে কষ্ট হচ্ছে যে, আপনি আমার সাথে তামাশা করছেন কিনা? তিনি বললেন, তামাশা নয়। বাস্তবতা হলো এই যে, আমি দু’খানা কাপড় বিশ দিনার ও এক দিরহামে কিনেছিলাম। একখানা বিক্রি করে বিশ দিনার পেয়ে গেছি। আর অপর কাপড়খানা মাত্র এক দিরহামে রয়ে গেছে। (তারীখে বাগদাদ : ১৩ খ-, পৃষ্ঠা- ৩৬২)

অসমাপ্ত-পরবর্তী সংখ্যার অপেক্ষায় থাকুন

কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে প্রাণীর মূর্তি তৈরি করা ও ছবি আঁকা, তোলা, তোলানো, রাখা, রাখানো, দেখা, দেখানো হারাম নাজায়িয হওয়ার অকাট্য প্রমাণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-২৫

জুমুয়া ও ঈদাইনের খুৎবা আরবী ভাষায় দেয়া ওয়াজিব। আরবী ব্যতীত অন্য কোন ভাষায় খুৎবা দেয়া মাকরূহ তাহরীমী ও বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া

কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে প্রাণীর মূর্তি তৈরি করা ও ছবি আঁকা, তোলা, তোলানো, রাখা, রাখানো, দেখা, দেখানো হারাম নাজায়িয হওয়ার অকাট্য প্রমাণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-২৬

জুমুয়া ও ঈদাইনের খুৎবা আরবী ভাষায় দেয়া ওয়াজিব। আরবী ব্যতীত অন্য কোন ভাষায় খুৎবা দেয়া মাকরূহ তাহরীমী ও বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-২

কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে প্রাণীর মূর্তি তৈরি করা ও ছবি আঁকা, তোলা, তোলানো, রাখা, রাখানো, দেখা, দেখানো হারাম নাজায়িয হওয়ার অকাট্য প্রমাণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-২৭