পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে সম্মানিত ও পবিত্র মাযহাব চতুষ্ঠয় উনাদের মধ্যে যে কোন একটি সম্মানিত ও পবিত্র মাযহাব মানা ও অনুসরণ করা ফরয ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-৫৪

সংখ্যা: ২৭৪তম সংখ্যা | বিভাগ:

৩২তম ফতওয়া হিসেবে

“পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে সম্মানিত ও পবিত্র মাযহাব চতুষ্ঠয় উনাদের মধ্যে যে কোন একটি সম্মানিত ও পবিত্র মাযহাব মানা ও অনুসরণ করা ফরয ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া”-

পেশ করতে পারায় মহান আল্লাহ পাক উনার পবিত্র দরবার শরীফ-এ শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি।

 

সম্মানিত শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে সম্মানিত চার মাযহাব উনাদের যেকোনো একটি মাযহাব অনুসরণ করা ফরয-ওয়াজিব

 

সম্মানিত শরীয়ত অর্থাৎ পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনাদের ফায়ছালা হলো- প্রত্যেক মুসলমান পুরুষ-মহিলা, জ্বিন-ইনসান সকলের জন্য সম্মানিত চার মাযহাব উনাদের যেকোনো একটি সম্মানিত মাযহাব উনাদের অনুসরণ করা ফরয-ওয়াজিবের অন্তর্ভুক্ত। যে বা যারা সম্মানিত মাযহাব অস্বীকার করে বা অনুসরণ করেনা সে বা তারা বিদয়াতী, গুমরাহ ও জাহান্নামী। এ ব্যাপারে সম্মানিত ইমাম-মুজতাহিদ উনাদের মধ্যে ইজমা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। নি¤েœ এ সম্পর্কিত দলীল-আদিল্লাহসমূহ উল্লেখ করা হলো-

মাযহাব বিদ্বেষীদের কেউ কেউ বলে থাকে যে, মহান আল্লাহ পাক তিনি ও উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারা বলেন যে, ‘যদি তোমরা না জান তবে অন্যকে জিজ্ঞাসা কর।’

তাই আমি যদি পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের দ্বারা প্রত্যেক মাসয়ালা জানতে পারি তবে আমি কেন ইমামকে মানবো ও জিজ্ঞাসা করবো? কেননা পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে সব বিষয়ই আছে বলে স্বয়ং মহান আল্লাহ পাক তিনিই ঘোষণা করেছেন। যেমন ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

وَنَزَّلْنَا عَلَيْكَ الْكِتَابَ تِبْيَانًا لِّكُلِّ شَيْءٍ

অর্থ: হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আপনার উপর কিতাব নাযিল করেছি যা প্রত্যেক বিষয় বর্ণনাকারী। (পবিত্র সূরা নহল শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৮৯)

اَلْيَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِيْنَكُمْ

অর্থ: আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পূর্ণ করেছি। (পবিত্র সূরা মায়িদাহ শরীফ: পবিত্র আয়া শরীফ ৩)

كُلٌّ فِـيْ كِتَابٍ مُّبِيْنٍ

অর্থঃ সমস্ত বিষয়ই প্রকাশ্য কিতাব পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে আছে। (পবিত্র সূরা হুদ শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৬)

تَفْصِيْلًا لِّكُلِّ شَيْءٍ

অর্থ: পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে প্রত্যেক বিষয়ের বিস্তারিত বিবরণ আছে। (পবিত্র সূরা আ’রাফ শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১৪৫)

মাযহাব বিদ্বেষীদের উপরোক্ত বক্তব্যের জবাবে বলতে হয় যে, উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফগুলোর ব্যাখ্যায় বিখ্যাত তাফসীরকারকগণ উনারা বলেন-

(১২২৮-১২৩০)

যা বিখ্যাত ‘তাফসীরে বায়যাবী’ ৩য় খ- ১৮৯ পৃষ্ঠা, ‘তাফসীরে কবীর’ ৩য় খ- ৩৬৮ পৃষ্ঠা, বুখারী শরীফ উনার বিখ্যাত শরাহ ‘ফতহুল বারী’ ১১ খ- ১৯২ পৃষ্ঠায় বিশদভাবে উল্লেখ আছে। তার সারমর্ম এই যে, সম্মানিত শরীয়ত উনার মূল ভিত্তিগুলি এবং সমস্ত ঘটনার ব্যবস্থাগুলি বর্ণনা করেছেন। যার কতকগুলি স্পষ্টভাবে ব্যক্ত করেছেন এবং কতকগুলি অস্পষ্টভাবে বর্ণনা করেছেন। অস্পষ্টাংশগুলি স্পষ্টাংশের উপর কিয়াস করে জানতে হবে এবং এই অংশই ১০ ভাগের ১ ভাগ। এই বিষয়গুলিকে ফুরুয়াত (আমলের শাখা প্রশাখা) বলা হয়। এটি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে স্পষ্টাভাবে মোটেই প্রকাশ করা হয়নি। যেমন- দাদী, নানী, ও নাতিকে বিবাহ করা হারাম হওয়া সম্বন্ধে এবং ধান, কলাইর মধ্যে সুদ হারাম না হওয়া সম্বন্ধে। এইরূপ লক্ষ লক্ষ বিষয় সম্বন্ধে স্পষ্টভাবে কিছুই উল্লেখ নাই। এটি শুধু মুজতাহিদ, ইমামদের অগাধ জ্ঞানে ইজতিহাদ দ্বারাই প্রকাশ হয়েছে তাছাড়া জানার কোন উপায় ছিল না। এটাই ক্বিয়াস বা মাযহাব, যা সাধারণ আলিমের পক্ষে সম্ভব নয়।

মহান আল্লাহ পাক তিনি এ প্রসঙ্গে ইরশাদ মুবারক করেন-

(১২৩১)

يَا أَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوا ادْخُلُوا فِـي السِّلْمِ كَافَّةً

অর্থ: “হে ঈমানদার তোমরা সম্পূর্ণরূপে দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে প্রবেশ কর।” (পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ২০৮)

এ পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার অস্পষ্টাংশ ও স্পষ্টাংশ উভয় অংশ গ্রহণ করে পবিত্র দ্বীন ইসলাম সম্পূর্ণ করায় প্রমাণিত হচ্ছে মহান আল্লাহ পাক তিনি অনেক অস্পষ্ট বিষয় পবিত্র কুরআন শরীফ বা কিতাবে নাযিল করেছেন তারপর হযরত নবী আলাইহিস উনাদের সময় যা আবশ্যক হয়েছিল অস্পষ্টাংশ হতে তা ব্যাখ্যা করেছেন তাছাড়া অন্য অবশিষ্ট বিষয়গুলির ব্যাখ্যা পরবর্তী আলিমগণ উনাদের প্রতি ন্যাস্ত করেছেন। সুতরাং মহান আল্লাহ পাক তিনি পুর্ণদ্বীন ইসলাম ও পবিত্র ওহী মুবারক দ্বারা নাযিল করে দিয়েছেন। পরবর্তীতে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাবীব নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নাযিলকৃত পূর্ণদ্বীন ইসলাম উনার পূর্ণ ব্যাখ্যা করে উম্মতকে অর্থাৎ হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে বুঝিয়ে দিয়েছেন। পরবর্তী উম্মতদের সমঝ কম হওয়ার কারণে ইমাম মুজতাহিদগণ উনারা বিশদ ব্যাখ্যা করে বুঝিয়ে দিয়েছেন। সম্মানিত দ্বীন ইসলাম পূর্ণ। নিম্নে এ সম্পর্কিত কয়েকটি উদাহরণ পেশ করা হলো-

(১২৩২)

যেমন মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-

أَحَلَّ اللهُ الْبَيْعَ وَحَرَّمَ الرِّبٰو

অর্থ: “মহান আল্লাহ পাক তিনি ক্রয়-বিক্রয় হালাল করেছেন এবং সুদ হারাম করেছেন।” (পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ২৭৫)

কিন্তু কিভাবে হারাম করেছেন তা কিছুই উল্লেখ করেননি। তাই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে মূল ছয় বস্তুর নাম উল্লেখ করে তার ব্যাখ্যা দিয়ে হারাম হওয়ার বিষয়টি বুঝিয়ে দিয়েছেন। যেমন-

(১২৩৩)

اَلْـحِنْطَةُ باِلْـحِنْطَةِ وَ الشَّعِيْرُ بِالشَّعِيْرِ وَ التَّمَرُ بِالتَّمَرِ وَ الْـمِلْحُ بِالْـمِلْحِ وَ الذَّهَبُ بِالذَّهَبِ مَثَلًا بـِمَثَلٍ يَدًا بِيَدٍ وَالْفَضْلُ الرِّبَاءُ.

অর্থাৎ, “গম গমের সাথে, যব যবের সাথে, খুরমা খুরমার সাথে, লবণ লবণের সাথে স্বর্ণ স্বর্নের সাথে, চাঁদি চাঁদির সাথে হাতে হাতে সমতুল্য বদল কর এর ব্যতিক্রম ও বেশী হলে সুদ হবে।”

কিন্তু উক্ত ছয় বস্তু ছাড়া ধান, কালাই, সরিষা, পাট ইত্যাদি বস্তুর মধ্যে কি হুকুম হবে তা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সরাসরি কিছুই বলেননি। ইমাম মুজতাহিদ উনারা উক্ত ছয় বস্তুর উপর কিয়াস করে ধান, কালাই, সরিষা ও পাট সহ অন্যান্য বস্তুর মধ্যে সুদ সাব্যস্ত করেছেন এবং এটি সর্বসম্মতিক্রমে সমস্ত ইমাম ও মুজতাহিদ উনারা মেনে নিয়েছেন। এটাই ইজমা শরীফ ও কিয়াস শরীফ। হাজার হাজার বিষয়ে এরূপ নজির ধরে কিয়াস করা হয়েছে।

অতএব, স্পষ্ট প্রমাণিত হল যে, মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ও ইমাম মুজতাহিদ উনাদের সকলের মতাবলম্বনেই পূর্ণ দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে দাখিল হওয়া সম্ভব, এছাড়া মোটেও সম্ভবপর নয়। তাই পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে স্বয়ং মহান আল্লাহ পাক তিনি নিজেকে অর্থাৎ উনাকে অনুসরণ করার কথা বলার সাথে সাথে উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকেও অনুসরণ করতে বলেছেন এবং সাথে সাথে উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নায়িব বা প্রতিনিধি ইমাম ও মুজতাহিদ উনাদেরকেও অনুসরণ করার কথা বলে দিয়েছেন-

(১২৩৪)

أَطِيْعُوا اللهَ وَأَطِيْعُوا الرَّسُوْلَ وَأُولِـي الْأَمْرِ مِنْكُمْ ۖ

অর্থ: তোমরা মহান আল্লাহ পাক উনাকে এবং উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে এবং তোমাদের মধ্যে যারা উলিল আমর (ইমাম-মুজতাহিদ) উনাদেরকে অনুসরণ করো।” (পবিত্র সূরা নিসা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৫৯)

সুতরাং পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ ও উনাদের ব্যাখ্যা সম্মানিত ইজমা শরীফ উনাদের সমন্বয়েই মাযহাব পূর্ণতা পেয়েছে যা সম্মানিত শরীয়তে বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। যদি কেউ সম্মানিত ইজমা শরীফ না মেনে বলে যে, আমি পূর্ণ শরীয়ত পালন করি তবে তার দাবি বাতিল ও পরিত্যাজ্য।

তবে হ্যাঁ, মুল হচ্ছেন পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ। সম্মানিত ইজমা শরীফ ও সম্মানিত ক্বিয়াস শরীফ হচ্ছেন উনাদের ব্যাখ্যা। যেমন উপরোল্লিখিত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

وَحَرَّمَ الرِّبٰو

(সুদকে হারাম করেছেন)

আর এ সম্মন্ধে উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ ও সম্মানিত ইজমা শরীফ উনার ব্যাখ্যা, ভিন্ন কিছু নয়। তাই যারা এ প্রকার সম্মানিত ক্বিয়াস শরীফ মানবে না তারা এ উম্মতের শরীয়ত বাহক আলিমের মধ্যে মোটেও গণ্য হতে পারে না। যেমন বিখ্যাত ইমাম নববী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি তার ‘তাহযীবুল আসমা’ কিতাবে উল্লেখ করেন-

(১২৩৫)

قَالَ اِمَامُ الْـحَرَمَيْنِ الَّذِىْ ذَهَبَ اَهْلُ التَّحْقِيْقِ اَنَّ مُنْكِرِى الْقِيَاسَ لَا يَتَعَدُّوْنُ مِنْ عُلَمَاءِ الْاُمَّةِ وَجُـمْلَةِ الشَّرْيْعَةِ لِاَنَّـهُمْ مُعَانِدُوْنَ مُبَاهِتُوْنَ فِيْمَا ثَبَتَ اِسْتِتَعَاضَةً وَتَوَاتُرًا وَ لِاَنَّ مُعْظَمَ الشَّرِيْعَةِ صَادِرَةٌ عَنِ الْاِجْتِهَادِ وَاِلَّا تَنْفِى النُّصُوْصُ بِعَشْرِ مِعْشَارِهَا وَهُوَ لَاءُ مُنْتَحِقُوْنَ بِالْعَوَامَ

অর্থ: “ইমামুল হারামাইন রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, মুহাক্কিক আলিম-উলামা উনারা ফায়ছালা করেছেন যে, পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ অমান্যকারীরা সম্মানিত শরীয়ত উনার আলিমও নয় আবার বাহকও নয়। কারণ তারা যুগে যুগে বিজ্ঞ আলিম উনাদের সাব্যস্তকৃত বিষয়ের (ক্বিয়াসের) সঙ্গে বিরোধিতা করে থাকে, অথচ তা সম্মানিত শরীয়ত উনার বিরাট অংশ যা ইজতিহাদের দ্বারা প্রকাশ হয়েছে এবং যা ১০ ভাগের ৯ ভাগ। অতএব, উক্ত অমান্যকারীরা সাধারণ অজ্ঞ লোকের মধ্যে পরিগণিত।”

সুতরাং সম্পূর্ণ দ্বীন ইসলাম স্বীকার ও মান্য করতে ইচ্ছা করলে ৪ মাযহাবের মধ্যে কোন এক মাযহাব অনুসরণ করতেই হবে। তাই সম্মানিত শরীয়ত উনার অনুসারী উনারা মাযহাবের অনুসরণকারী। কাজেই, মাযহাব বিরোধী সকলেই যে কোন একজন ইমাম উনার মত অবলম্বন করছে তা অস্বীকার করলে চরম মিথ্যাচার করা হবে।

কেননা পবিত্র কুরআন শরীফ মানাই মাযহাব মানা এবং মাযহাব মানাই পবিত্র কুরআন শরীফ মানা। অর্থাৎ দুটি মূলে একই বিষয়, কোনটা কোনটার ভিন্ন মোটেও নয়।

যেমন ‘তাফসীরে মাদারিক’ ১ম খ- ৪১৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-

(১২৩৬)

(تَفْصِيْلٌ لِّكُلِّ شَىْءٍ) يـُحْتَاجُّ اِلَيْهَ فِـى الدِّيْنِ لِاَنَّه الْقَانُوْنَ الَّذِىْ تُسْنَدُ اِلَيْهِ السُّنَّةُ وَالْاِجْـمَاعُ وَالْقِيَاسُ

অর্থ: সম্মানিত দ্বীন উনার যে কোন বিষয় আবশ্যক হয় উহার বিস্তারিত বিবরণ পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে আছে। কেননা পবিত্র কুরআন শরীফই মূল কানুন এবং পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনার ব্যাখ্যা।

‘তাফসীরে আবী সাউদ’ ৬ষ্ঠ খ- ১৮০ পৃষ্ঠায় উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার ব্যাখ্যায় উল্লেখ আছে-

(১২৩৭)

مـِمَّا يـُحْتَاجُّ اِلَيْهَ فِـى الدِّيْنِ لِاَنَّه الْقَانُوْنَ الَّذِىْ تُسْنَدُ اِلَيْهِ السُّنَّةُ وَالْاِجْـمَاعُ وَالْقِيَاسُ اِذْ مَا مِنْ اَمْرِ دِيْنِیْ اِلَّا هُوَ يُسْنَدُ اِلَـى الْقَرْاٰنِ بِالذَّاتِ اَوْ بِوَاسِطٍ الخ

অর্থাৎ, সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার যে কোন বিষয় আবশ্যক হয় তার বিস্তারিত বিবরণ পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে আছে। কেননা প্রত্যেক দ্বীন সংক্রান্ত বিষয়ের দলীল হয় প্রত্যক্ষভাবে, না পরোক্ষভাবে (পবিত্র হাদীছ শরীফ, সম্মানিত ইজমা শরীফ, সম্মানিত কিয়াস শরীফ) পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যেই আছে।

(১২৩৮)

অনুরূপ ‘তাফসীরে বায়যাবী’ তৃতীয় খ- ১৪৫ পৃষ্ঠায় উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার ব্যাখ্যায় উল্লেখ আছে যে, সম্মানিত শরীয়ত উনার প্রত্যেক মাসয়ালার দলীল পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে কতক স্পষ্টভাবে আর কতক ব্যাখ্যা সপেক্ষভাবে আছে। এই ব্যাখ্যা সাপেক্ষ বিষয়ের কতক পবিত্র হাদীছ শরীফ দ্বারা ব্যাখ্যা করে প্রকাশ করা হয়েছে। যেমন গম, যব, লবণ, ইত্যাদির সুদ এবং অবশিষ্ট অধিকাংশ মাসয়ালাই সম্মানিত ইমাম মুজতাহিদ উনাদের কর্তৃক ব্যাখ্যার মাধ্যমে ক্বিয়াস শরীফ দ্বারা প্রকাশ করা হয়েছে যেমন ধান, পাট, কালাইর মধ্যে সুদ।

(১২৩৯)

পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে কেবল মাত্র নামায পড়ার আদেশ-

اَقِيْمُوا الصَّلٰوةَ

স্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে।

কিন্তু রাকায়াত, রুকু, সিজদা, ফরয, ওয়াজিব, সুন্নত ইত্যাদি বিস্তারিত নিয়মাবলী পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে সরাসরি বলা হয়নি। বরং কিছু পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে কিছু পবিত্র ইজমা শরীফ উনার মধ্যে রয়েছে।

অনুরূপভাবে সম্মানিত শরীয়ত উনার বহু মাসয়ালাই পবিত্র পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের মধ্যে স্পষ্টভাবে অর্থাৎ সরাসরি উল্লেখ করা হয়নি। যথা- ট্রেনে, মটরে, স্টিমারে, প্লেনে, নামায পড়া জায়িয কি না।

তিন হাত বিশিষ্ট ব্যক্তির কয় হাত অজুতে ধৌত করা ফরয, যার হাতের কতকস্থান কর্তন বা নষ্ট হয়েছে তার অজুর ব্যবস্থা কি? পানি ও মাটির অভাবে অযুর ব্যবস্থা কি? টাকার নোটের বদলে নোটে কম ও বেশী জায়িয কি না? হিজরার কাফনের ব্যবস্থা কিরূপ?

বানর, ভল্লুক, কুকুর, বাঘের মলমূত্র পাক না নাপাক। এরূপ বহু সংখ্যক মাসয়ালার ব্যবস্থা পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের মধ্যে স্পষ্টভাবে অর্থাৎ সরাসরি বর্ণনা করা হয়নি। তাই সে সমস্ত বিষয়ের সমাধান ইমাম ও মুজতাহিদ উনারা পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের আলোকে পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনাদের মাধ্যমে দিয়েছেন।

অতএব, সম্মানিত ইমাম উনাদের সমাধানকৃত যাবতীয় মাসয়ালাগুলি পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের ব্যাখ্যা সাপেক্ষ অংশেরই বিশদ ব্যাখ্যা, ভিন্ন কিছুই নয়। মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

(১২৪০)

أَفَتُؤْمِنُوْنَ بِبَعْضِ الْكِتَابِ وَتَكْفُرُوْنَ بِبَعْضٍ

অর্থ: “তোমার কি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার কিছু অংশ বিশ্বাস করবে আর কিছু অংশ অমান্য করবে?” (পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৮৫)

অর্থাৎ সেটা করো না। বরং পুরোটাই মানতে হবে। কারণ যতক্ষণ পর্যন্ত স্পষ্ট ও ব্যাখ্যা সাপেক্ষ উভয় অংশ মানবেনা ততক্ষণ পুরো কুরআন শরীফ মানা হবে না। সুতরাং উভয় অংশই মানা ফরয ওয়াজিব। ইমাম মুজতাহিদ উনারা পবিত্র কুরআন শরীফ উনার ব্যাখ্যা সাপেক্ষ বিষয়সমূহই প্রকাশ করেছেন। আর এজন্যই উনাদের প্রকাশিত মাসয়ালা-মাসায়িলগুলা মানা গোটা মুসলিম উম্মাহর জন্য ফরয-ওয়াজিব। আর এটা হচ্ছে সম্মানিত মাযহাব। আর সেই সম্মানিত মাযহাব মতেই খাঁটি মুসলমান উনারা সকলেই চলছেন। অন্যথায় পবিত্র কুরআন শরীফ অমান্য করে ভ্রান্ত সম্প্রদায় (যেমন শিয়া খারিজী ইত্যাদি) ভুক্ত হতে হবে।

তাই হে মাযহাব বিদ্বেষী দল! যদি তোমরা উপরোক্ত মাসয়ালাগুলো পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে দেখাতে না পার বরং কখনো পারবেও না। তবে পূর্ণ সম্মানিত শরীয়ত ঠিক রাখতে তোমাদের জন্য অবশ্যই মাযহাব মানা ফরয হবে কি না? বরং তোমরা বাধ্য হয়ে ইমাম মুজতাহিদ উনাদের প্রকাশিত মাসয়ালা মাযহাবী শিক্ষক উনাদের নিকট শিক্ষা করে তা অবলম্বন করত সদা চলে আসছো। কিন্তু হিংসা ও শত্রুতামূলক বেদ্বীনদের মত মনের ত্রুটি মনে করে স্বীকার করছো না এটি সম্পূর্ণরূপে সম্মানিত শরীয়ত উনার প্রতি বিদ্বেষ মাত্র।

অসমাপ্ত- পরবর্তী সংখ্যার অপেক্ষায় থাকুন

 

কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে প্রাণীর মূর্তি তৈরি করা ও ছবি আঁকা, তোলা, তোলানো, রাখা, রাখানো, দেখা, দেখানো হারাম নাজায়িয হওয়ার অকাট্য প্রমাণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-২৫

জুমুয়া ও ঈদাইনের খুৎবা আরবী ভাষায় দেয়া ওয়াজিব। আরবী ব্যতীত অন্য কোন ভাষায় খুৎবা দেয়া মাকরূহ তাহরীমী ও বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া

কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে প্রাণীর মূর্তি তৈরি করা ও ছবি আঁকা, তোলা, তোলানো, রাখা, রাখানো, দেখা, দেখানো হারাম নাজায়িয হওয়ার অকাট্য প্রমাণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-২৬

জুমুয়া ও ঈদাইনের খুৎবা আরবী ভাষায় দেয়া ওয়াজিব। আরবী ব্যতীত অন্য কোন ভাষায় খুৎবা দেয়া মাকরূহ তাহরীমী ও বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-২

কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে প্রাণীর মূর্তি তৈরি করা ও ছবি আঁকা, তোলা, তোলানো, রাখা, রাখানো, দেখা, দেখানো হারাম নাজায়িয হওয়ার অকাট্য প্রমাণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-২৭