পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনাদের দৃষ্টিতেসম্মানিত ও পবিত্র মাযহাব চতুষ্ঠয় উনাদের মধ্যে যে কোন একটি সম্মানিত ও পবিত্র মাযহাব মানা ও অনুসরণ করা ফরয ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-৪৫

সংখ্যা: ২৬৫তম সংখ্যা | বিভাগ:

৩৩তম ফতওয়া হিসেবে

“পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে সম্মানিত ও পবিত্র মাযহাব চতুষ্ঠয় উনাদের মধ্যে যে কোন একটি সম্মানিত ও পবিত্র মাযহাব মানা ও অনুসরণ করা ফরয ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া”-

পেশ করতে পারায় মহান আল্লাহ পাক উনার পবিত্র দরবার শরীফ-এ শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি।

 

সম্মানিত ও পবিত্র মাযহাব চতুষ্ঠয় উনাদের মধ্যে যে কোন একটি সম্মানিত ও পবিত্র মাযহাব উনার উপর মউত পর্যন্ত ইস্তিক্বামত থাকা ফরয

 

‘খইরুল কুরূন তথা শ্রেষ্ঠ তিন যুগ’

উনাদের পরিচয় এবং উনাদের

শুরু ও শেষসীমা

‘খইরুল কুরূন তথা শ্রেষ্ঠ তিন যুগ’ অর্থাৎ  কুরূনে ছালাছাহ্ তথা উত্তম তিন যুগ সম্পর্কিত পবিত্র হাদীছ শরীফ ইবারতের তারতম্য অনুসারে একাধিক রাবী; যেমন হযরত আবূ বারযাহ্ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত ইমরান ইবনে হুছাঈন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা, হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে মাসঊদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম ও হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু প্রমূখ ছাহাবী থেকে বর্ণিত আছে।

এখানে মূল ২ খানা পবিত্র হাদীছ শরীফ উল্লেখ করে তার সঠিক অনুবাদ ও ব্যাখ্যার আলোকে খইরুল কুরূন তথা শ্রেষ্ঠ তিন যুগ উনাদের পরিচয় এবং উনাদের শুরু ও শেষসীমা তুলে ধরা হলো:

১ নম্বর পবিত্র হাদীছ শরীফ

(৯৭২-৯৭৩)

عن حضرت ابى برزة رضى الله عنه ان النبى صلى الله عليه وسلم قال: خير القرون قرنى ثم الذين يلونهم ثم الذين يلونهم ثم الذين يلونهم.

অর্থ: ছাহাবী হযরত আবূ বারযাহ্ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। নিশ্চয়ই নূরে মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন: উত্তম যুগ হলো আমার যুগ, অতপর তৎপরবর্তী যুগ, অতপর তৎপরবর্তী যুগ, অতপর তৎপরবর্তী যুগ। (মুসনাদুল বায্যার পরিচ্ছেদ: মুসনাদ বুরাইদাহ্ বিন হাছীব রদ্বিয়াল্লাহু আনহু হাদীছ শরীফ নম্বর: ৪৫০৮ খণ্ড: ২য় পৃষ্ঠা: ১৪৯ লেখক: ইমাম হাফিযুল কবীর আবূ বকর আহমদ বিন আমর বিন আব্দুল খালিক্ব বছরী বায্যার রহমতুল্লাহি আলাইহি ওয়াফাত: ২৯২ হিজরী, আত-তা’লীকুল মুমাজ্জাদ লি মুয়াত্তাল ইমাম মুহাম্মাদ অধ্যায়: কিতাবুছ র্ছফ ওয়া আবওয়াবুর রিবা পরিচ্ছেদ ১৪: বাবুর রজুল ইয়াকূনু ইন্দাহুশ শাহাদাহ্ ৩য় খণ্ড ২৯৫ পৃষ্ঠা শারিহ বা ব্যাখ্যাকার: হযরত আব্দুল হাই লখ্নবী হানাফী রহমতুল্লাহি আলাইহি প্রকাশনা: দারুল কলম, দামেশ্ক)

২ নম্বর পবিত্র হাদীছ শরীফ:

(৯৭৪-৯৮০)

عن حضرت عِمْرَانَ بْنِ حُصَيْنٍ رضى الله عنهما يَقُولُ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم: خَيْرُ اُمَّتِىْ قَرْنِىْ ثُمَّ الَّذِينَ يَلُونَهُمْ ثُمَّ الَّذِينَ يَلُونَهُمْ. قَالَ حضرت عِمْرَانُ رضى الله عنه فَلَا اَدْرِى اَذَكَرَ بَعْدَ قَرْنِه قَرْنَيْنِ اَوْ ثَلَاثًا.

অর্থ: ছাহাবী হযরত ইমরান ইবনে হুছাঈন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন: আমার উম্মতের জন্য সর্বোত্তম যুগ হলো আমার যুগ। অতঃপর তৎপরবর্তী উনাদের যুগ। অতঃপর তৎপরবর্তী উনাদের যুগ। ছহাবী হযরত ইমরান ইবনে হুছাঈন রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা তিনি বলেন, আমি জানি না যে, তিনি (নূরে মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিজ যুগের পরে আরো দু’টি যুগের কথা উল্লেখ করেছেন অথবা তিনটি যুগের কথা উল্লেখ করেছেন? (আল-জামিউছ ছহীহু লিল্ বুখারী অধ্যায় ৬২: ফাদ্বায়িলুছ ছহাবাহ্ পরিচ্ছেদ ১: বাবু ফাদ্বায়িলি আছহাবিন নাবিয়্যি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম লেখক: হযরত ইমাম আবূ আব্দুল্লাহ মুহম্মদ বিন ইসমাঈল বিন ইবরাহীম বিন মুগীরাহ্ বুখারী শাফিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি ওয়াফাত: ২৫৬ হিজরী, আছ-ছহীহু লিল মুসলিম, সুনানু আবী দাঊদ শরীফ, আল-জামিউস সুনানু লিত্ তিরমিযী, ইবনু মাজাহ শরীফ, মুসনাদ আহমদ বিন হাম্বল, মিশকাতুল মাছাবীহ শরীফ ৫৫৩-৫৫৪ পৃষ্ঠা)

তাশরীহ্ বা ব্যাখ্যা:

প্রথমেই জেনে রাখা দরকার যে, উপরোক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ দু’খানা দ্বারা সর্বোত্তম তিন যুগ তথা হযরত ছাহাবাহ্ কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম, হযরত তাবিয়ীন রহমতুল্লাহি আলাইহিম ও হযরত তাবে’ তাবিয়ীন রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের যুগকে বুঝানো হয়েছে।

যেমন, এ প্রসঙ্গে বুখারী শরীফ উনার বিশ্ব বিখ্যাত শরাহ “ফতহুল বারী” ৭ম জিঃ ৫ ও ৬ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-

(৯৮১-৯৮৭)

(خير امتى قرنى) اى اهل قرنى … والمراد بقرن النبى صلى الله عليه وسلم وهذا الحديث الصحابة (ثم الذين يلونهم) اى القرن الذى بعدهم وهم التابعون (ثم الذين يلونهم) وهم اتباع التابعين واقتضى هذا الحديث ان تكون الصحابة افضل من التابعين والتابعون افضل من اتباع التابعين.

অর্থ: خير امتى قرنى “আমার যুগের উম্মত সর্বোত্তম” অর্থাৎ আমার যুগের (ঈমানদার) অধিবাসী। অত্র পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত নূরে মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার র্ক্বন বা যুগ বলতে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের যুগকেই উদ্দেশ্য করা হয়েছে।

ثم الذين يلونهم “অতপর উনাদের পরবর্তী যুগ” অর্থাৎ হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের পরবর্তী র্ক্বন তথা হযরত তাবিয়ীন কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের র্ক্বন বা যুগ। ثم الذين يلونهم “অতপর উনাদের পরবর্তী যুগ” আর তা হচ্ছে, হযরত তাবে’ তাবিয়ীন রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের যুগ। অত্র পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার দ্বারা স্পষ্টভাবে বুঝানো হয়েছে যে, হযরত ছাহাবাহ্ কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা হযরত তাবিয়ীন কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের উপর, এবং হযরত তাবিয়ীন কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা হযরত তাবে’ তাবিয়ীন রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের উপর মর্যাদা সম্পন্ন।” সুবহানাল্লাহ!

অনুরূপভাবে নিম্নোক্ত কিতাবগুলোতেও উল্লেখ করা হয়েছে, যেমন-উমদাতুল ক্বারী শরহে বুখারী ১৬তম খণ্ড ১৭০ পৃষ্ঠা, ইরশাদুস্ সারী শরহে বুখারী ৬ষ্ঠ খণ্ড ৮০ পৃষ্ঠা, শরহুন নববী আলাল মুসলিম ৮ম খণ্ড ৮৫ পৃষ্ঠা, মিরক্বাতুল মাফাতীহ শরহে মিশকাতুল মাছাবীহ ১১তম খণ্ড ২৭৬ পৃষ্ঠা, শরহুত ত্বীবী শরহে মিশকাতুল মাছাবীহ ১১তম খণ্ড ২১৪ পৃষ্ঠা ও আত্ তা’লীকুছ ছবীহ্ শরহে মিশকাতুল মাছাবীহ্ ৭ম খণ্ড ২৯১ পৃষ্ঠা।

কুরূণে ছালাছাহ্ উনাদেরসময়সীমা

কুরূনে ছালাছাহ্ অর্থাৎ সর্বোত্তম তিন যুগ উনাদের মধ্যে প্রথম ও প্রধানতম যুগ হচ্ছে নূরে মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তথা হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের যুগ। পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত قرنى (র্ক্বণী) অর্থাৎ আমার যুগ। পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার ব্যাখ্যা গ্রন্থসমূহে এই প্রথম যুগ সম্পর্কে দু’টি পদ্ধতিতে গণনা পরিলক্ষিত হয়।

প্রথম র্ক্বণ বা যুগের সময়সীমা

প্রথমত:নূরে মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে নুবুওওয়াত মুবারক প্রকাশ পাওয়ার পর হতে হযরত ছহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের পবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করা পর্যন্ত একশত বিশ বছর প্রথম র্ক্বণ বা যুগ। যেমন, সুনাদে আবূ দাঊদ শরীফ উনার শরাহ্ ‘বযলুল মাজহূদ’ উনার ৬ষ্ঠ খণ্ড ২০৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-

(৯৮৮-৯৮৯)

قال فى فتح الودود قيل قرنه صلى الله عليه وسلم من اول بعثته صلى الله عليه وسلم الى اخر من مات من الصحابة وكان مدته عشرين ومائة سنة.

অর্থ: ‘ফতহুল ওয়াদুদ’ কিতাবে উল্লেখ রয়েছে যে, নূরে মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে নুবুওওয়াত মুবারক প্রকাশ হওয়ার পর হতে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের পবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশ হওয়া পর্যন্ত যুগটিই নূরে মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যুগ। উনার সময়সীমা হলো ১২০ বছর পর্যন্ত।

দ্বিতীয়ত: নূরে মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশের সময় হতে হযরত ছহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুম উনাদের পবিত্র বিছালী শান প্রকাশ করা পর্যন্ত একশত বছর ১ম র্কন বা যুগ। যেমনটি, ‘বুখারী শরীফ’ উনার বিখ্যাত ব্যাখ্যাগ্রন্থ ‘ফতহুল বারী’ উনার ৭ম খণ্ড ৬ পৃষ্ঠা, মিশকাতুল মাছাবীহ উনার শরাহ্ ‘আত-তা’লীকুছ ছবীহ্’ উনার ৭ম খণ্ড ২৯১ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-

(৯৯০)

وفى رواية بريدة عند احمد (خير هذه الامة القرن الذين بعثت فيهم) وقد ظهران الذى بين البعثة واخر من مات من الصحابة مائة سنة وعشرون سنة او دونها او فوقها بقليل على الاختلاف فى وفاة ابى الطفيل رضى الله عنه، وان اعتبر ذلك من بعد وفاته صلى الله عليه وسلم فيكون مائة سنة او تسعين او سبعا وتسعين.

অর্থ: ‘মুসনাদ আহমদ বিন হাম্বল’ উনার মধ্যে হযরত বুরাইদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার রিওয়ায়াতে রয়েছে, (আমার উম্মতের এ মহান যুগ উত্তম, যাতে আমি প্রেরিত হয়েছি), এখানে স্পষ্ট যে, আবির্ভাব থেকে শুরু করে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের পবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশ পর্যন্ত একশত বছর এবং বিশ বছর অর্থাৎ একশত বিশ বছর অথবা তার কিছু কম বা বেশী এক র্ক্বণ বা যুগ। তবে হযরত আবূ তুফায়েল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার পবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশ অনুযায়ী কম সংখ্যার উপর ইখতিলাফ (মত বিরোধ) রয়েছে। আর যদি নূরে মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশ লগ্ন থেকে গণনা শুরু করা হয় তবে একশত অথবা নব্বই নতুবা সাতানব্বই বছর হয়।

উল্লেখ্য যে, পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত র্ক্বণ বা যুগ উনার ব্যাখ্যায় ‘ফতহুল বারী’ ৭ম খণ্ড ৫ পৃষ্ঠা, ‘আত্ তা’লীকুছ ছবীহ’ ৭ম খণ্ড ২৯০ পৃষ্ঠায় একশত বছরকে মাশহূর তথা প্রসিদ্ধ মত বলা হয়েছে। যেমন বর্ণিত হয়েছে,

(৯৯১-৯৯২)

وقد وقع فى حديث عبد الله بن بسر رضى الله عنه عند مسلم ما يدل على ان القرن مائة وهو المشهور.

অর্থ: হযরত ইমাম মুসলিম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার নিকট হযরত আব্দুল্লাহ বিন বুস্র রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার পবিত্র হাদীছ শরীফ স্থান পেয়েছে। যা প্রমাণ করে যে, নিশ্চয়ই র্ক্বণ বা যুগ একশত বছরে হয়। আর এটাই প্রসিদ্ধ মত।

তাই উপরের আলোচনা থেকে আমরা সুস্পষ্টভাবে বুঝতে পারি যে, নূরে মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যুগ অর্থাৎ হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের যুগ যা উনাদের পবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশ পর্যন্ত একশত বছর। অর্থাৎ একশত হিজরী পর্যন্ত উনাদের যুগ। যা প্রথম র্ক্বণ বা যুগ হিসেবে মশহূর।

এখানে উল্লেখ্য যে, সর্বশেষ হযরত ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি ইন্তিকাল করেছেন ৯৮ হিজরীতে। কারো মতে ১০২ হিজরীতে। সুতরাং ছহীহ্ সমাধান মতে ১০০ হিজরী পর্যন্তই হচ্ছে প্রথম র্ক্বন বা যুগ।

দ্বিতীয় ও তৃতীয় র্ক্বণ বা

যুগের সময়সীমা

দ্বিতীয় র্ক্বণ তথা হযরত তাবিয়ীন কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের যুগ শুরু একশত হিজরী থেকে, শেষ একশত সত্তর হিজরীতে। আর তৃতীয় র্ক্বণ তথা হযরত তাবে’ তাবিয়ীন কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের যুগ শুরু এক শত সত্তর হিজরী থেকে, আর তা শেষ দু’শত বিশ হিজরীতে।

যেমন, এ প্রসঙ্গে মিশকাতুল মাছাবীহ্ কিতাব উনার শরাহ “মিরকাতুল মাফাতীহ্” ১১তম খণ্ড ২৭৬ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-

(৯৯৩-৯৯৬)

وَقَرْنُ التَّابِعِيْنَ مِنْ مِّائَةِ سَنَةٍ اِلٰى نَحْوِ سَبْعِيْنَ وَقَرْنُ اَتْبَاعِ التَّابِعِيـْنَ مِنْ ثُمَّ اِلٰى نَحْوِ الْعِشْرِيْنَ وَّمِائَتَيـْنِ.

অর্থ: হযরত তাবিয়ীন কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের যুগ একশত হিজরী থেকে একশত সত্তর হিজরী পর্যন্ত। আর হযরত তাবে’ তাবিয়ীন কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের যুগ একশত সত্তর হিজরী থেকে দু’শত বিশ হিজরী পর্যন্ত।”

অনুরূপভাবে ‘বযলুল মাজহূদ শরহে আবূ দাঊদ’ ৬ষ্ঠ খণ্ড ২০৩ পৃষ্ঠা, বুখারী শরীফ ১ম খণ্ড ৩৬২ পৃষ্ঠার ১নং হাশিয়া ও সুনানে আবূ দাঊদ শরীফ ২য় খণ্ড ২৯২ পৃষ্ঠার ৬ নং হাশিয়ায় উল্লেখ আছে।

অতএব, খাইরুল কুরূণ বা উত্তম যুগ বলতে কুরূণে ছালাছাহ্ তথা শ্রেষ্ঠ তিন যুগকে বুঝানো হয়েছে। যা পর্যায়ক্রমে হলো-

প্রথম যুগ: হযরত ছহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুম উনাদের যুগ।

দ্বিতীয় যুগ: হযরত তাবিয়ীন কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের যুগ।

তৃতীয় যুগ: হযরত তাবে’ তাবিয়ীন কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের যুগ।

আর হিজরী সন হিসেবে মাশহূর বা প্রসিদ্ধ সময়কাল হচ্ছে-

প্রথম যুগ: শুরু থেকে ১০০ (একশত) হিজরী পর্যন্ত।

দ্বিতীয় যুগ: ১০০ (একশত) হিজরী থেকে ১৭০ (একশত সত্তর) হিজরী পর্যন্ত।

তৃতীয় যুগ: ১৭০ (একশত সত্তর) হিজরী থেকে ২২০ (দু’শত বিশ) হিজরী পর্যন্ত।

মাযহাব চতুষ্ঠয়ের চারজন মহান ইমাম ও মুজতাহিদ মুতলাক রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা কে কোন যুগের ছিলেন

আল্লামা মাওলানা মুফতী মুহম্মদ ইব্রাহীম মোহব্বতপুরী রহমতুল্লাহি আলাইহি (পোষ্ট: পাঁচবিবি, বগুড়া) উনার লেখা ‘ছায়ফোল মোকাল্লেদীন বা মাছায়েলে হানাফিয়া’ কিতাব উনার ২৬০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ রয়েছে যে-

(৯৯৭)

হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুম উনাদের যামানা ১২০ হিজরী, হযরত তাবিয়ীন কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের যামানা ১৭০ হিজরী ও হযরত তাবে তাবিয়ীন রমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের যামানা ২২০ হিজরী পর্যন্ত ছিল। ইহার পরেই বিদয়াত মতগুলি প্রবলভাবে প্রকাশিত হয়েছিল। (মিরকাতুল মাফাতীহ্ ৫ম খণ্ড ৫২০ পৃষ্ঠা)

হযরত ইমাম আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি তাবিয়ী আর অবশিষ্ট তিন ইমাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা তাবে’ তাবিয়ীন ছিলেন। উনারা যে নাজী বা নাজাতপ্রাপ্ত ফিরক্বাভুক্ত ইহার উপর ইজমা’ হয়েছে। সুবহানাল্লাহ!”

অত্র আলোচনা থেকে প্রমাণিত হলো যে, মাযহাব চতুষ্ঠয়ের চারজন মূল প্রতিষ্ঠাতা ইমাম-মুজতাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা খইরুল কুরূন তথা উত্তম যুগেরই ব্যক্তিত্ব ছিলেন। উনাদেরকে অনুসরণ করা যে জরুরী তা এখান থেকেও স্পষ্ট হয়।

 

অসমাপ্ত: পরবর্তী সংখ্যার অপেক্ষায় থাকুন

কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে প্রাণীর মূর্তি তৈরি করা ও ছবি আঁকা, তোলা, তোলানো, রাখা, রাখানো, দেখা, দেখানো হারাম নাজায়িয হওয়ার অকাট্য প্রমাণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-২৫

জুমুয়া ও ঈদাইনের খুৎবা আরবী ভাষায় দেয়া ওয়াজিব। আরবী ব্যতীত অন্য কোন ভাষায় খুৎবা দেয়া মাকরূহ তাহরীমী ও বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া

কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে প্রাণীর মূর্তি তৈরি করা ও ছবি আঁকা, তোলা, তোলানো, রাখা, রাখানো, দেখা, দেখানো হারাম নাজায়িয হওয়ার অকাট্য প্রমাণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-২৬

জুমুয়া ও ঈদাইনের খুৎবা আরবী ভাষায় দেয়া ওয়াজিব। আরবী ব্যতীত অন্য কোন ভাষায় খুৎবা দেয়া মাকরূহ তাহরীমী ও বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-২

কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে প্রাণীর মূর্তি তৈরি করা ও ছবি আঁকা, তোলা, তোলানো, রাখা, রাখানো, দেখা, দেখানো হারাম নাজায়িয হওয়ার অকাট্য প্রমাণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-২৭