পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে সম্মানিত ও পবিত্র মাযহাব চতুষ্ঠয় উনাদের মধ্যে যে কোন একটি সম্মানিত ও পবিত্র মাযহাব মানা ও অনুসরণ করা ফরয ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-৪০

সংখ্যা: ২৬০তম সংখ্যা | বিভাগ:

[সমস্ত প্রশংসা মহান আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন উনার জন্যে এবং অসংখ্য দুরূদ ও সালাম মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামউনার প্রতি। মহান আল্লাহ পাক উনার অশেষ রহ্মতে “গবেষণা কেন্দ্র মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ” উনার ফতওয়া বিভাগের তরফ থেকে বহুল প্রচারিত, হক্বের অতন্দ্র প্রহরী, বাতিলের আতঙ্ক ও আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত উনাদের আক্বীদায় বিশ্বাসী এবং হানাফী মাযহাব-উনার অনুসরণে প্রকাশিত একমাত্র দলীলভিত্তিক যামানার তাজদীদী মুখপত্র “মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ” পত্রিকায় যথাক্রমে- ১. টুপির ফতওয়া (২য় সংখ্যা) ২. অঙ্গুলী চুম্বনের বিধান (৩য় সংখ্যা) ৩. নিয়ত করে মাজার শরীফ যিয়ারত করা (৪র্থ সংখ্যা) ৪. ছবি ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় হারাম হওয়ার ফতওয়া (৫ম-৭ম সংখ্যা) ৫. জুমুয়ার নামায ফরযে আইন ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ফতওয়া (৮ম-১০ম সংখ্যা) ৬. মহিলাদের মসজিদে গিয়ে জামায়াতে নামায পড়া মাকরূহ্ তাহ্রীমী সম্পর্কে ফতওয়া (১১তম সংখ্যা) ৭. কদমবুছী ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১২তম সংখ্যা) ৮. তাহাজ্জুদ নামায জামায়াতে পড়া মাকরূহ্ তাহ্রীমী ও বিদ্য়াতে সাইয়্যিয়াহ্ এবং তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৩তম সংখ্যা) ৯. ফরয নামাযের পর মুনাজাত ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৪-২০তম সংখ্যা) ১০. ইন্জেকশন নেয়া রোযা ভঙ্গের কারণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২১-২২তম সংখ্যা) ১১. তারাবীহ্-এর নামাযে বা অন্যান্য সময় কুরআন শরীফ খতম করে উজরত বা পারিশ্রমিক গ্রহণ করা জায়িয ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২৩-২৪তম সংখ্যা) ১২. তারাবীহ্ নামায বিশ রাকায়াত ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২৫-২৯তম সংখ্যা) ১৩. দাড়ী ও গোঁফের শরয়ী আহ্কাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৩০-৩৪তম সংখ্যা) ১৪. প্রচলিত তাবলীগ জামায়াত ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৩৫-৪৬তম সংখ্যা) ১৫. আযান ও ছানী আযান মসজিদের ভিতরে দেয়ার আহ্কাম এবং তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৪৭-৫০তম সংখ্যা) ১৬. দোয়াল্লীন-যোয়াল্লীন উনার শরয়ী ফায়সালা এবং তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৫১-৫২তম সংখ্যা) ১৭. খাছ সুন্নতী টুপি ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৫৩-৫৯তম সংখ্যা) ১৮. নূরে মুহম্মদী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও উনার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৬০-৮২তম সংখ্যা) ১৯. ইমামাহ্ বা পাগড়ী মুবারকের আহ্কাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কিত ফতওয়া (৮৩-৯৬তম সংখ্যা) ২০. শরীয়তের দৃষ্টিতে আখিরী যোহ্র বা ইহ্তিয়াতুয্ যোহ্রের আহ্কাম এবং তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৯৭-১০০তম সংখ্যা) ২১. জানাযা নামাযের পর হাত তুলে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করার শরয়ী ফায়সালা ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১০১-১১১তম সংখ্যা) ২২. হিজাব বা পর্দা ফরযে আইন হওয়ার প্রমাণ ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১১২-১৩১তম সংখ্যা) ২৩. খাছ সুন্নতী ক্বমীছ বা কোর্তা এবং তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৪০তম সংখ্যা) ২৪. হানাফী মাযহাব মতে ফজর নামাযে কুনূত বা কুনূতে নাযেলা পাঠ করা নাজায়িয ও নামায ফাসিদ হওয়ার কারণ এবং তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৩২-১৫২তম সংখ্যা) ২৫. ইসলামের দৃষ্টিতে বিশ্বকাপ ফুটবল বা খেলাধুলা’র শরয়ী আহকাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ফতওয়া (১৫৫তম সংখ্যা) ২৬. হানাফী মাযহাব মতে পুরুষের জন্য লাল রংয়ের পোশাক তথা রুমাল, পাগড়ী, কোর্তা, লুঙ্গি, চাদর ইত্যাদি পরিধান বা ব্যবহার করা হারাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৫৩-১৬০তম সংখ্যা)  ২৭. ইসলামের নামে গণতন্ত্র ও নির্বাচন করা, পদপ্রার্থী হওয়া, ভোট চাওয়া ও দেয়া হারাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৬১-১৭৫তম সংখ্যা) ২৮. কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে প্রাণীর মূর্তি তৈরি করা ও ছবি আঁকা, তোলা, তোলানো, রাখা, রাখানো, দেখা, দেখানো হারাম নাজায়িয হওয়ার অকাট্য প্রমাণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৬৮-২৩৭), ২৯. জুমুয়া ও ঈদাইনের খুৎবা আরবী ভাষায় দেয়া ওয়াজিব। আরবী ব্যতীত অন্য কোন ভাষায় খুৎবা দেয়া মাকরূহ তাহরীমী ও বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৯২-১৯৩তম সংখ্যা) ৩০. কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে লাইলাতুন নিছফি মিন শা’বান শবে বরাত-এর আহকাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৯৫-২১৩তম সংখ্যা), ৩১. পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা ও ক্বিয়াস উনাদের দৃষ্টিতে “কুলাঙ্গার, পাপিষ্ঠ ইয়াযীদ লা’নাতুল্লাহি আলাইহি সম্পর্কে শরীয়তের সঠিক ফায়ছালা ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া” পেশ করার পর-

৩২তম ফতওয়া হিসেবে

“পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে সম্মানিত ও পবিত্র মাযহাব চতুষ্ঠয় উনাদের মধ্যে যে কোন একটি সম্মানিত ও পবিত্র মাযহাব মানা ও অনুসরণ করা ফরয ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া”-

পেশ করতে পারায় মহান আল্লাহ পাক উনার পবিত্র দরবার শরীফ-এ শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি।

সম্মানিত ও পবিত্র মাযহাব চতুষ্ঠয় উনাদের মধ্যে যে কোন একটি সম্মানিত ও

পবিত্র মাযহাব উনার উপর মউত পর্যন্ত ইস্তিক্বামত থাকা ফরয

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের মধ্যে ‘আত-তাক্বলীদুশ্ শাখছী’ অর্থাৎ নির্দিষ্ট ইমাম-মুজতাহিদ উনার অনুসরণ করা জরুরী সম্পর্কিত দলীল-আদিল্লাহ

 

পবিত্র হাদীছ শরীফ নম্বর- ১

عَنْ عِكْرِمَةَ رحمة الله عليه اَنَّ اَهْلَ الْمَدِيْنَةِ سَاَلُوْا اِبْنَ عَبَّاسٍ رَضِىَ اللهُ عَنْهُمَا عَنِ امْرَاَةٍ طَافَتْ ثُمَّ حَاضَتْ قَالَ لَهُمْ تَنْفِرُ قَالُوْا لَا نَاْخُذُ بِقَوْلِكَ وَنَدَعُ قَوْلَ زَيْدٍ رضى الله عنه

অর্থ: হযরত ইকরামাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণিত আছে। নিশ্চয়ই একদল মদীনাবাসী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহু উনাকে জিজ্ঞাসা করলেন যে, তাওয়াফ অবস্থায় কোন মহিলার স্বাভাবিক মাজূরতা শুরু হলে তিনি তখন কি করবেন? (অর্থাৎ বিদায়ী তাওয়াফের জন্য সুস্থ হওয়ার অপেক্ষা করবে নাকি তখনি ফিরে চলে যাবে?) জাওয়াবে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহু তিনি বললেন, (বিদায়ী তাওয়াফ না করেই) ফিরে চলে যাবে। এ জাওয়াবের প্রেক্ষিতে মদীনাবাসী দলটি বললেন, আমরা মদীনাবাসীগণ হযরত যায়িদ বিন ছাবিত রদ্বিয়াল্লাহু আনহু উনাকে বাদ দিয়ে আপনার ফায়সালাকে গ্রহণ করতে পারি না। (আছ-ছহীহু লিল্ বুখারী কিতাবুল হাজ্জ পরিচ্ছেদ ১৪৬: বাবুন ইযা হাদ্বাতিল্ মারয়াতু বা’দা মা আফাদ্বাত লেখক: হযরত আবূ আব্দুল্লাহ মুহাম্মাদ বিন ইসমাঈল বিন ইবরাহীম বিন মুগীরাহ বুখারী শাফিয়ী রহমাতুল্লাহি আলাইহি ওয়াফাত: ২৫৬ হিজরী)

فقالوا لا نبالى افتيتنا او لـم تفتنا، زيد بن ثابت رضى الله عنه يقول لا تنفر.

অর্থ: মদীনাবাসী দলটি বললেন, আপনি আমাদেরকে ফাতাওয়া দেন অথবা ফাতাওয়া না-ই দেন এতে আমাদের কোন যায় আসে না। বিদায়ী তাওয়াফ না করেই চলে যেতে পারবে না। (ফাতহুল বারী শরহুল বুখারী কিতাবুল হজ্জ বাবুন ইযা হাদ্বাতিল্ মারয়াতু বা’দা মা আফাদ্বাত লেখক: হযরত আবুল ফযল আহমাদ বিন আলী বিন হাজার আসক্বালানী শাফিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি প্রকাশনা: দারুল মা’রিফাহ্ বইরূত-লেবানন)

অত্র পবিত্র হাদীছ শরীফ এবং উনার শরাহ থেকে যে কয়েকটি বিষয় বোঝা গেল তা হলো:

প্রথমত: পবিত্র মদীনাবাসী দলটি হযরত যায়েদ বিন ছাবিত রদ্বিয়াল্লাহু আনহু উনার নির্দিষ্টভাবে মুক্বাল্লিদ বা অনুসারী ছিলেন। তাই উনার ফতওয়াকেই উনারা প্রাধান্য দিয়েছেন। এমনকি অন্য এক বর্ণনা মতে, নিজের মতের সমর্থনে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহু তিনি উনাদেরকে হযরত উম্মু সুলাইম রদ্বিয়াল্লাহু আনহা উনার হাদীছ শরীফও শুনিয়েছিলেন। কিন্তু হযরত যায়েদ বিন ছাবিত রদ্বিয়াল্লাহু আনহু উনার ইল্ম ও প্রজ্ঞার উপর উনাদের পূর্ণ আস্থা থাকার কারণে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহু উনার ফতওয়া উনার উপর হযরত যায়িদ বিন ছাবিত রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার ফতওয়াকেই প্রাধান্য দিয়েছেন।

দ্বিতীয়ত: নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে তাক্বলীদ করার কারণে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহু তিনি মদীনাবাসী উনাদেরকে কোনই তিরস্কার করেননি।

তৃতীয়ত: হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহু ও হযরত যায়েদ বিন ছাবিত রদ্বিয়াল্লাহু আনহু উনারা ছাহাবী ছিলেন। আর সুওয়ালকারী উনারা কেউ ছাহাবী আবার কেউ তাবিয়ী ছিলেন। তাই প্রমানিত হয় যে, ছাহাবী ও তাবিয়ী যুগে ‘আত-তাক্বলীদুশ শাখছী তথা নির্দিষ্ট ইমাম-মুজতাহিদ উনার অনুসরণ’ করার রেওয়াজ ছিল।

পবিত্র হাদীছ শরীফ নম্বর- ২

عَنْ هُزَيْلَ بْنَ شُرَحْبِيْلَ رحمة الله عليه قَالَ سُئِلَ اَبُوْ مُوْسى رضى الله عنه عَنْ بِنْتٍ وَابْنَةِ ابْنٍ وَاُخْتٍ فَقَالَ لِلْبِنْتِ النِّصْفُ وَلِلْاُخْتِ النِّصْفُ وَاْتِ ابْنَ مَسْعُوْدٍ رضى الله عنه فَسَيُتَابِعُنِىْ فَسُئِلَ ابْنُ مَسْعُوْدٍ رضى الله عنه وَاُخْبِرَ بِقَوْلِ اَبِىْ مُوْسى رضى الله عنه فَقَالَ لَقَدْ ضَلَلْتُ اِذًا وَمَا اَنَا مِنَ الْمُهْتَدِيْنَ اَقْضِىْ فِيْهَا بِمَا قَضَى النَّبِىُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لِلْاِبْنَةِ النِّصْفُ وَلِاِبْنَةِ ابْنٍ السُّدُسُ تَكْمِلَةَ الثُّلُثَيْنِ وَمَا بَقِىَ فَلِلْاُخْتِ فَاَتَيْنَا اَبَا مُوْسَى فَاَخْبَرْنَاهُ بِقَوْلِ ابْنِ مَسْعُوْدٍ رضى الله عنه فَقَالَ لَا تَسْاَلُوْنِىْ مَا دَامَ هذَا الْحبْرُ فِيْكُمْ.

অর্থ: তাবিয়ী হযরত হুযাইল বিন শুরাহ্বীল রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণিত আছে। তিনি বলেন, ছাহাবী হযরত আবূ মূসা আশয়ারী রদ্বিয়াল্লাহু আনহু উনাকে মেয়ে, পৌত্রী ও বোন সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হল (কার অংশ কত), তিনি বললেন মেয়ের অর্ধেক ও বোনের অর্ধেক। তবে একবার আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রদ্বিয়াল্লাহু আনহু উনাকে জিজ্ঞাসা করলে আশা করি তিনি আমার অনুরূপ বলবেন। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রদ্বিয়াল্লাহু আনহু উনাকে জিজ্ঞাসা করা হল এবং উনাকে হযরত আবূ মূসা আশয়ারী রদ্বিয়াল্লাহু আনহু উনার প্রদত্ত উত্তরও জানানো হল। তিনি বলেন, (যদি আমি ঐরূপ বলি,) তবে তো আমি পথভ্রষ্ট হয়ে যাব এবং পথপ্রাপ্তদের অন্তর্ভূক্ত থাকবো না। আমি এ ব্যাপারে সেই ফায়সালা দিব যে ফায়সালা দিয়েছিলেন হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি। মেয়ের অর্ধেক, পৌত্রীর এক ষষ্ঠাংশ, দুই তৃতীয়াংশ পূর্ণ করার উদ্দেশ্যে। আর বাকী যা থাকবে (অর্থাৎ এক তৃতীয়াংশ) তা বোনের (আছাবারূপে)। রাবী বলেন, অতপর আমরা হযরত আবূ মূসা আশয়ারী রদ্বিয়াল্লাহু আনহু উনার নিকট গেলাম এবং উনাকে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রদ্বিয়াল্লাহু আনহু উনার উত্তর জানালাম। তখন তিনি বললেন, এ বিজ্ঞ ব্যক্তিত্ব থাকাবস্থায় তোমরা আমাকে কোন কিছুই জিজ্ঞাসা করবে না। সুবহানাল্লাহ। (আল-জামিউছ ছহীহ লিল্ বুখারী কিতাবুল ফারায়িদ্ব বাবু মীরাছি ইবনাতিল্ ইবনি মায়া বিনতিন হাদীছ শরীফ নং ৬৭৩৬ লেখক: আবূ আব্দিল্লাহ মুহম্মদ বিন ইসমাঈর বিন ইবরাহীম বিন মুগীরাহ বুখারী রহমতুল্লাহি আলাইহি ওয়াফাত: ২৫৬ হিজরী, আস-সুনানুল কুবরা লিল্ বাইহাক্বী, মাছাবীহুস সুন্নাহ, মিশকাতুল মাছাবীহ)

স্মর্তব্য যে, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা প্রত্যেকেই অনুসরণীয় ও অনুকরণীয়। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

وَالَّذِيْنَ اتَّبَعُوهُمْ بِإِحْسَانٍ رَّضِيَ اللّهُ عَنْهُمْ وَرَضُوْا عَنْهُ

অর্থাৎ, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে যারা উত্তমভাবে অনুসরণ করবে মহান আল্লাহ পাক তিনি তাদের প্রতি সন্তুষ্ট। সুবহানাল্লাহ!

নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

اصحابى كالنجوم بايهم اقتديتم اهتديتم

অর্থাৎ, আমার প্রত্যেক হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা তারকা সদৃশ্য। উনাদের যে কাউকে তোমরা অনুসরণ করবে, তোমরা হিদায়েত পেয়ে যাবে। সুবহানাল্লাহ!

উপরে উল্লিখিত প্রথম পবিত্র হাদীছ শরীফে বর্ণিত হযরত যায়িদ বিন ছাবিত রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার বর্ণিত পবিত্র হাদীছ শরীফখানা পূর্বের বা প্রথম দিকের আর হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার বর্ণিত পবিত্র হাদীছ শরীফখানা পরের বা শেষের দিকের অর্থাৎ মহিলারা স্বাভাবিক মাজুরতা শুরু হলে বিদায়ী তাওয়াফ না করেই ফিরে যাবে এটি সর্বশেষ ফায়ছালা। আর এর উপরই আমাদের হানাফী মাযহাব উনার ফতওয়া।

অনুরূপভাবে দ্বিতীয় পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত হযরত আবূ মূসা আশয়ারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার মতটি পূর্বের বা প্রথম দিকের ফায়সালা। আর হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়লা আনহু উনার বর্ণিত মতটি পরের বা শেষের দিকের ফায়ছালা। আর শেষেরটার উপরই আমাদের হানাফী মাযহাব উনার ফতওয়া।

অতএব, বর্ণিত হাদীছ শরীফদ্বয়ের উপর ভিত্তি করে ভিন্ন মত পোষন করার কোনোই সুযোগ নেই।

লক্ষ্য করুন! হযরত আবূ মূসা আশয়ারী রদ্বিয়াল্লাহু আনহু তিনি সকলকেই হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রদ্বিয়াল্লাহু আনহু উনার হায়াতে উনাকেই মাসয়ালা জিজ্ঞাসা করার পরামর্শ দিলেন। এভাবে তিনি ‘আত-তাক্বলীদুশ শাখছী বা নির্দিষ্ট মুক্বাল্লিদ উনার অনুসরণ’কে উৎসাহিত করলেন।

পবিত্র হাদীছ শরীফ নম্বর- ৩

عَنْ اُنَاسٍ مِنْ اَهْلِ حِمْصَ مِنْ اَصْحَابِ مُعَاذِ بْنِ جَبَلٍ رضى الله عنه اَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صلى الله عليه وسلم لَمَّا اَرَادَ اَنْ يَّبْعَثَ مُعَاذًا رضى الله عنه اِلَى الْيَمَنِ قَالَ كَيْفَ تَقْضِىْ اِذَا عَرَضَ لَكَ قَضَاءٌ قَالَ اَقْضِىْ بِكِتَابِ اللهِ قَالَ فَاِنْ لَمْ تَجِدْ فِىْ كِتَابِ اللهِ قَالَ فَبِسُنَّةِ رَسُوْلِ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ فَاِنْ لَمْ تَجِدْ فِىْ سُنَّةِ رَسُوْلِ اللهِ صلى الله عليه وسلم وَلاَ فِى كِتَابِ اللهِ قَالَ اَجْتَهِدُ رَأْيِىْ وَلاَ آلُو فَضَرَبَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم صَدْرَه وَقَالَ اَلْحَمْدُ لله الَّذِى وَفَّقَ رَسُوْلَ رَسُوْلِ اللهِ صلى الله عليه وسلم لِمَا يُرْضِىْ رَسُوْلَ اللهِ صلى الله عليه وسلم.

অর্থ: হিম্ছ অধিবাসীদের মধ্যে হযরত মুয়ায বিন জাবাল রদ্বিয়াল্লাহু আনহু উনার সঙ্গি-সাথীদের কতক বর্ণনাকারী থেকে বর্ণিত আছে। নিশ্চয়ই নূরে মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যখন হযরত মুয়ায বিন জাবাল রদ্বিয়াল্লাহু আনহু উনাকে ইয়ামান এলাকায় পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিলেন, তখন তিনি উনাকে পাঠানোর সময় জিজ্ঞাসা করলেন: যখন কোন সমস্যা দেখা দিবে তখন আপনি কিভাবে তার ফায়সালা করবেন? তিনি বললেন, আমি মহান আল্লাহ তায়ালা উনার কিতাব উনার দ্বারা ফায়সালা করব। তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন: আপনি যদি পবিত্র কিতাবুল্লাহ উনার মধ্যে সরাসরি সমাধান না পান! তাহলে কি করবেন? উত্তরে তিনি বললেন, তাহলে পবিত্র সুন্নাতু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দ্বারা ফায়সালা করব। তিনি আবারো ইরশাদ মুবারক করলেন: আপনি যদি পবিত্র সুন্নাতু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মধ্যে এবং পবিত্র কিতাবুল্লাহ উনার মধ্যে সরাসরি সমাধান না পান! তাহলে কি করবেন? উত্তরে তিনি বললেন, তাহলে আমি আমার রায় বা সমাধান বের করতে ইজতিহাদ বা ক্বিয়াস করব; এতে আমি চেষ্টায় কোন ত্রুটি করব না। তখন নূরে মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার প্রতিনিধি ছাহাবী উনার সীনা মুবারকে পবিত্র হাত মুবারক দ্বারা স্পর্শ্ব করে বললেন: মহান আল্লাহ তায়ালা উনার সমস্ত প্রসংশা! যিনি উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার রসূল বা প্রতিনিধিকে রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সন্তুষ্টি মুতাবিক কথা বলার তাওফীক্ব দিয়েছেন। সুবহানাল্লাহ! (সুনানু আবী দাঊদ লেখক: হযরত আবূ দাঊদ সুলাইমান বিন আশয়াছ সাজিস্তানী রহমাতুল্লাহি আলাইহি পরিচ্ছে ১১: বাবু ইজতিহাদির রায় ফিল্ ক্বদ্বা ৩য় খ- ৩৩০ পৃষ্ঠা হাদীছ শরীফ নম্বর: ৩৫৯৪ প্রকাশক: দারুল কিতাবিল আরাবী-বইরূত লেবনান, মোট ৪ খণ্ডে সমাপ্ত; আল-জামিউ ওয়াস্ সুনান লিত্ তিরমিযী, মুসনাদ আহমাদ বিন হাম্বাল, মুসনাদুত্ ত্বয়ালাসী, মুছান্নাফ ইবনু আবী শাইবাহ, সুনানুদ দারিমী, আস-সুনানুল্ কুবরা লিল্ বাইহাক্বী, মিশকাতুল মাছাবীহ)

অত্র পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে নূরে মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ফক্বীহ ও মুজতাহিদ ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু আনহুম উনাদের মধ্য থেকে শুধু নির্দিষ্ট একজন ছহাবী হযরত মুয়ায বিন জাবাল রদ্বিয়াল্লাহু আনহু উনাকে শাসক, বিচারক ও শিক্ষকরূপে ইয়ামান এর উক্ত অঞ্চলে পাঠিয়েছিলেন। পবিত্র কুরআন মাজীদ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ পালনের পাশাপাশি প্রয়োজনে নিজস্ব প্রজ্ঞার আলোকে ইজতিহাদ করারও আদেশ দিয়েছিলেন এবং ইয়ামান এর উক্ত অঞ্চল বাসীদেরকে নির্দেশ দিয়েছিলেন উনাকে নির্দিষ্টভাবে অনুসরণ করতে। মূলত: ইহাই তো আত-তাক্বলীদুশ শাখছী বা নির্দিষ্ট ইমাম-মুজতাহিদ উনার অনুসরণ।

পবিত্র হাদীছ শরীফ নম্বর- ৪

عَنْ عَمْرِو بْنِ مَيْمُونٍ الاَوْدِىِّ قَالَ قَدِمَ عَلَيْنَا مُعَاذُ بْنُ جَبَلٍ رضى الله عنه الْيَمَنَ رَسُولُ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم اِلَيْنَا قَالَ فَسَمِعْتُ تَكْبِيرَه مَعَ الْفَجْرِ رَجُلٌ اَجَشُّ الصَّوْتِ قَالَ فَاُلْقِيَتْ عَلَيْهِ مَحَبَّتِىْ فَمَا فَارَقْتُه حَتّى دَفَنْتُه بِالشَّامِ مَيْتًا ثُمَّ نَظَرْتُ اِلى اَفْقَهِ النَّاسِ بَعْدَه فَاَتَيْتُ ابْنَ مَسْعُوْدٍ رضى الله عنه فَلَزِمْتُه حَتّى مَاتَ

অর্থ: তাবিয়ী হযরত আমর বিন মাইমূন আওদী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণিত আছে। তিনি বলেন: নূরে মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতিনিধি হয়ে হযরত মুয়ায বিন জাবাল রদ্বিয়াল্লাহু আনহু তিনি ইয়ামান অঞ্চলে আমাদের মাঝে আসেন। তিনি বলেন, ফজর উনার ছলাতে আমি উনার তাকবীর শুনতে পেলাম। তিনি ছিলেন গভীর ও ভরাট কণ্ঠের অধিকারী। আমি উনাকে মুহব্বত করলাম এবং শামদেশে উনাকে কবরস্থ করার পূর্বপর্যন্ত উনার সানিধ্যে আঁকড়ে থাকলাম। অতপর উনার পরে শ্রেষ্ঠ  ফক্বীহ একজনকে খুজতে লাগলাম, তাই আমি হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রদ্বিয়াল্লাহু আনহু উনার নিকটে আসলাম। আর উনার সান্নিধ্যকে মঊত পর্যন্ত ওয়াজিব করে নিলাম। (সুনানু আবী দাঊদ কিতাবুছ ছলাহ্ বাবুন ইযা আখ্খরাল ইমামুছ ছলাতা আনিল ওয়াক্ত লেখক: আবূ দাঊদ সুলাইমান বিন আশয়াছ সাজিস্তানী রহমতুল্লাহি আলাইহি)

অত্র পবিত্র হাদীছ শরীফ দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, হযরত আমর বিন মাইমূন আওদী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মন্তব্য দ্বারা ছাবিত হয় যে, ইলমুল ফিক্হ ও মাসায়িল শিক্ষাই ছিল যথাক্রমে হযরত মুয়ায বিন জাবাল রদ্বিয়াল্লাহু আনহু ও হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসঊদ রদ্বিয়াল্লাহু আনহু উনাদের সাথে উনার সম্পর্কের বুনিয়াদ। এটা দ্বারা একক তাক্বলীদ বা আত-তাক্বলীদুশ শাখছী প্রমাণিত হয়।

কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে প্রাণীর মূর্তি তৈরি করা ও ছবি আঁকা, তোলা, তোলানো, রাখা, রাখানো, দেখা, দেখানো হারাম নাজায়িয হওয়ার অকাট্য প্রমাণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-২৬

জুমুয়া ও ঈদাইনের খুৎবা আরবী ভাষায় দেয়া ওয়াজিব। আরবী ব্যতীত অন্য কোন ভাষায় খুৎবা দেয়া মাকরূহ তাহরীমী ও বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-২

কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে প্রাণীর মূর্তি তৈরি করা ও ছবি আঁকা, তোলা, তোলানো, রাখা, রাখানো, দেখা, দেখানো হারাম নাজায়িয হওয়ার অকাট্য প্রমাণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-২৭

কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে প্রাণীর মূর্তি তৈরি করা ও ছবি আঁকা, তোলা, তোলানো, রাখা, রাখানো, দেখা, দেখানো হারাম-নাজায়িয হওয়ার অকাট্য প্রমাণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-২৮

কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে লাইলাতুন নিছফি মিন শা’বান বা শবে বরাত-এর আহকাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-১