পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে- সম্মানিত ও পবিত্র মাযহাব চতুষ্ঠয় উনাদের মধ্যে যে কোন একটি সম্মানিত ও পবিত্র মাযহাব মানা ও অনুসরণ করা ফরয ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-৩১

সংখ্যা: ২৫০তম সংখ্যা | বিভাগ:

[সমস্ত প্রশংসা মহান আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন উনার জন্যে এবং অসংখ্য দুরূদ ও সালাম মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামউনার প্রতি। মহান আল্লাহ পাক উনার অশেষ রহ্মতে “গবেষণা কেন্দ্র মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ” উনার ফতওয়া বিভাগের তরফ থেকে বহুল প্রচারিত, হক্বের অতন্দ্র প্রহরী, বাতিলের আতঙ্ক ও আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত উনাদের আক্বীদায় বিশ্বাসী এবং হানাফী মাযহাব-উনার অনুসরণে প্রকাশিত একমাত্র দলীলভিত্তিক যামানার তাজদীদী মুখপত্র “মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ” পত্রিকায় যথাক্রমে- ১. টুপির ফতওয়া (২য় সংখ্যা) ২. অঙ্গুলী চুম্বনের বিধান (৩য় সংখ্যা) ৩. নিয়ত করে মাজার শরীফ যিয়ারত করা (৪র্থ সংখ্যা) ৪. ছবি ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় হারাম হওয়ার ফতওয়া (৫ম-৭ম সংখ্যা) ৫. জুমুয়ার নামায ফরযে আইন ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ফতওয়া (৮ম-১০ম সংখ্যা) ৬. মহিলাদের মসজিদে গিয়ে জামায়াতে নামায পড়া মাকরূহ্ তাহ্রীমী সম্পর্কে ফতওয়া (১১তম সংখ্যা) ৭. কদমবুছী ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১২তম সংখ্যা) ৮. তাহাজ্জুদ নামায জামায়াতে পড়া মাকরূহ্ তাহ্রীমী ও বিদ্য়াতে সাইয়্যিয়াহ্ এবং তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৩তম সংখ্যা) ৯. ফরয নামাযের পর মুনাজাত ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৪-২০তম সংখ্যা) ১০. ইন্জেকশন নেয়া রোযা ভঙ্গের কারণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২১-২২তম সংখ্যা) ১১. তারাবীহ্-এর নামাযে বা অন্যান্য সময় কুরআন শরীফ খতম করে উজরত বা পারিশ্রমিক গ্রহণ করা জায়িয ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২৩-২৪তম সংখ্যা) ১২. তারাবীহ্ নামায বিশ রাকায়াত ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২৫-২৯তম সংখ্যা) ১৩. দাড়ী ও গোঁফের শরয়ী আহ্কাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৩০-৩৪তম সংখ্যা) ১৪. প্রচলিত তাবলীগ জামায়াত ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৩৫-৪৬তম সংখ্যা) ১৫. আযান ও ছানী আযান মসজিদের ভিতরে দেয়ার আহ্কাম এবং তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৪৭-৫০তম সংখ্যা) ১৬. দোয়াল্লীন-যোয়াল্লীন উনার শরয়ী ফায়সালা এবং তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৫১-৫২তম সংখ্যা) ১৭. খাছ সুন্নতী টুপি ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৫৩-৫৯তম সংখ্যা) ১৮. নূরে মুহম্মদী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও উনার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৬০-৮২তম সংখ্যা) ১৯. ইমামাহ্ বা পাগড়ী মুবারকের আহ্কাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কিত ফতওয়া (৮৩-৯৬তম সংখ্যা) ২০. শরীয়তের দৃষ্টিতে আখিরী যোহ্র বা ইহ্তিয়াতুয্ যোহ্রের আহ্কাম এবং তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৯৭-১০০তম সংখ্যা) ২১. জানাযা নামাযের পর হাত তুলে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করার শরয়ী ফায়সালা ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১০১-১১১তম সংখ্যা) এবং ২২. হিজাব বা পর্দা ফরযে আইন হওয়ার প্রমাণ ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১১২-১৩১তম সংখ্যা) ২৩. খাছ সুন্নতী ক্বমীছ বা কোর্তা এবং তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৪০তম সংখ্যা) ২৪. হানাফী মাযহাব মতে ফজর নামাযে কুনূত বা কুনূতে নাযেলা পাঠ করা নাজায়িয ও নামায ফাসিদ হওয়ার কারণ এবং তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৩২-১৫২তম সংখ্যা) ২৫. ইসলামের দৃষ্টিতে বিশ্বকাপ ফুটবল বা খেলাধুলা’র শরয়ী আহকাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ফতওয়া (১৫৫তম সংখ্যা) ২৬. হানাফী মাযহাব মতে পুরুষের জন্য লাল রংয়ের পোশাক তথা রুমাল, পাগড়ী, কোর্তা, লুঙ্গি, চাদর ইত্যাদি পরিধান বা ব্যবহার করা হারাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৫৩-১৬০তম সংখ্যা)  ২৭. ইসলামের নামে গণতন্ত্র ও নির্বাচন করা, পদপ্রার্থী হওয়া, ভোট চাওয়া ও দেয়া হারাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৬১-১৭৫তম সংখ্যা) ২৮. কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে প্রাণীর মূর্তি তৈরি করা ও ছবি আঁকা, তোলা, তোলানো, রাখা, রাখানো, দেখা, দেখানো হারাম নাজায়িয হওয়ার অকাট্য প্রমাণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৬৮-চলমান), ২৯. জুমুয়া ও ঈদাইনের খুৎবা আরবী ভাষায় দেয়া ওয়াজিব। আরবী ব্যতীত অন্য কোন ভাষায় খুৎবা দেয়া মাকরূহ তাহরীমী ও বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৯২-১৯৩তম সংখ্যা) ৩০. কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে লাইলাতুন নিছফি মিন শা’বান শবে বরাত-এর আহকাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৯৫-২১৩তম সংখ্যা), ৩১. পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা ও ক্বিয়াস উনাদের দৃষ্টিতে “কুলাঙ্গার, পাপিষ্ঠ ইয়াযীদ লা’নাতুল্লাহি আলাইহি সম্পর্কে শরীয়তের সঠিক ফায়ছালা ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া” পেশ করার পর-

৩২তম ফতওয়া হিসেবে

“পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে সম্মানিত ও পবিত্র মাযহাব চতুষ্ঠয় উনাদের মধ্যে যে কোন একটি সম্মানিত ও পবিত্র মাযহাব মানা ও অনুসরণ করা ফরয ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া”-

পেশ করতে পারায় মহান আল্লাহ পাক উনার পবিত্র দরবার শরীফ-এ শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি।

সম্মানিত ও পবিত্র মাযহাব চতুষ্ঠয় উনাদের মধ্যে যে কোন একটি সম্মানিত ও পবিত্র মাযহাব উনার উপর মউত পর্যন্ত ইস্তিক্বামত থাকা ফরয

পূর্ব প্রকাশিতের পর

পবিত্র তাফসীর শরীফ উনাদের নির্ভরযোগ্য কিতাব থেকে ‘আত-তাক্বলীদুশ্ শারয়ী তথা শরীয়াত সমর্থিত অনুসরণ’ উনার সমর্থনে পবিত্র আয়াত শরীফ সমূহ উনাদের ছহীহ ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ ও আহকাম

পবিত্র কুরআন মাজীদ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, ইজমাউল উম্মাহ ও ছহীহ ক্বিয়াস শরীফ উনাদের দলীল-আদিল্লাহ মোতাবেক সম্মানিত ইসলামী শরীয়াত উনার যাবতীয় হুকুম-আহকাম মেনে চলার জন্য কারো অনুসরণ করাকে ‘আত-তাকলীদুশ শারয়ী তথা শরীয়াত সমর্থিত অনুসরণ’ বলে। উনাকে ‘তাকলীদুল ইসলাম’, ‘তাকলীদুদ্ দীন’ ও ‘তাকলীদুদ্ দালায়িলিল আরবায়াহ’ অর্থাৎ পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার চারখানা দলীল উনাদের অনুসরণও বলা হয়ে থাকে।

নিম্নে পবিত্র তাফসীর শরীফ উনাদের নির্ভরযোগ্য কিতাব থেকে ‘আত-তাক্বলীদুশ্ শারয়ী তথা শরীয়াত সমর্থিত অনুসরণ’ উনার সমর্থনে পবিত্র আয়াত শরীফ সমূহ উল্লেখ করে উনাদের ছহীহ ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ ও আহকাম বা বিধি-বিধান আলোচনা করা হলো।

পবিত্র আয়াত শরীফ নম্বর- ৪০

وَالَّذِيْنَ جَاهَدُوْا فِيْنَا لَنَهْدِيَنَّهُمْ سُبُلَنَا وَاِنَّ الله لَمَعَ الْمُحْسِنِيْنَ.

অর্থ: যাঁরা আমার পথে (আমাকে পাওয়ার জন্য) কোশেশে আত্মনিয়োগ করে, আমি অবশ্যই উনাদেরকে আমাকে পাওয়ার পথ সমূহ প্রদর্শন করি। নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ তায়ালা তিনি মুহসিনীন তথা নেককার  উনাদের সাথে রয়েছেন। (পবিত্র সূরাতুল আনকাবূত শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ নং ৬৯)

অত্র পবিত্র আয়াত উনার বিশুদ্ধ তাফসীর

বা ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ

(৫৮০)

وَالَّذِيْنَ جَاهَدُوْا فِيْنَا لَنَهْدِيَنَّهُمْ سُبُلَنَا قال ابن عطاء رحمة الله عليه: اى الذين جاهدوا فى رضانا لنهدينهم الى محل الرضا، … وقال بعضهم: اى الذين شغلوا ظواهرهم بالوظائف لنوصلن اسرارهم الى اللطائف، وقيل: اى الذين جاهدوا نفوسهم لاجلنا وطلبا لنا لنهدينهم سبل المعرفة بنا والوصول الينا، ومن عرف الله تعالى عرف كل شيء ومن وصل اليه هان عنده كل شيء، كان عبد الله بن المبارك رحمة الله عليه يقول: من اعتاصت عليه مسألة فليسأل اهل الثغور عنها لقوله تعالى: وَالَّذِيْنَ جَاهَدُوْا فِيْنَا لَنَهْدِيَنَّهُمْ سُبُلَنَا وجهاد النفس هو الجهاد الاكبر نسأل الله تعالى التوفيق لما يحب ويرضى والحفظ التام من كل شر بحرمة حبيبه سيد البشر صلى الله تعالى عليه وسلم.

অর্থ: যাঁরা আমার পথে কোশেশে আত্মনিয়োগ করে, আমি অবশ্যই উনাদেরকে আমাকে পাওয়ার পথ সমূহ প্রদর্শন করি। হযরত ইবনু আত্বা রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন: অর্থাৎ যাঁরা আমার সন্তুষ্টি তালাশের কোশেশ করেন, অবশ্যই আমি তাদেরকে সন্তুষ্টি পাওয়ার উপায় প্রদর্শন করি। … কতক হযরত মুফাসসিরীন কিরাম রহমাতুল্লাহি আলাইহিম বলেন: অর্থাৎ যাঁরা বাহ্যিকভাবে তাদের ওয়াযীফাহ বা আমলে মাশগূল থাকবে, আমরা তাঁদের আভ্যন্তরিনতাকে মা’রিফাতের উচ্চশিখরে পৌঁছে দিব। কেউ বলেন: অর্থাৎ যাঁরা আমাকে পাওয়ার জন্য তাদের নাফসের সাথে যুদ্ধ করে এবং অন্বেষণ করে, আমি তাদেরকে মা’রিফাতের পথ দেখায়ে দিব এবং তখন সে আমার পর্যন্ত পৌঁছতে পারবে। যে ব্যক্তি মহান আল্লাহ তায়ালা উনাকে চিনে, তাকে সবকিছুই চিনে, আর যে ব্যক্তি মহান আল্লাহ তায়ালা উনার নিকট পৌঁছে, তার জন্য সবকিছুই সহজ হয়ে যায়। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মুবারক রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন: যার পক্ষে কোন কিছু জানা কঠিন হয়, সে যেন আহলুছ্ ছুগূর অর্থাৎ গুপ্তভেদ জাননেওয়ালা উনাকে জিজ্ঞাসা করে। কেননা, মহান আল্লাহ তায়ালা তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, ‘ যাঁরা আমার পথে কোশেশে আত্মনিয়োগ করে, আমি অবশ্যই উনাদেরকে আমাকে পাওয়ার পথ সমূহ প্রদর্শন করি’। নাফসের সাথে জিহাদ করা বড় জিহাদ। আমরা মহান আল্লাহ তায়ালা উনার নিকট তাওফীক্ব চাই যে, যাতে উনাকে মুহাব্বত ও সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারি। আর সাইয়্যিদুল মুরসালীন নূরুম মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানার্থে-ওয়াসীলায় সর্বপ্রকার অসৎ কাজ থেকে পরিপূর্ণভাবে হিফাযতে থাকতে পারি। আমীন। (রূহুল মায়ানী ফী তাফসীরিল কুরআনিল আযীম ওয়াস সাবয়িল মাছানী অর্থাৎ তাফসীরুল আলূসী পবিত্র সূরাতুল আনকাবূত শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ নং ৬৯ লেখক: হযরত শিহাবুদ্দীন আবুছ ছানা সাইয়্যিদ মাহমূদ বিন আব্দুল্লাহ আলূসী বাগদাদী শাফিয়ী আশয়ারী রহমাতুল্লাহি আলাইহি ওয়াফাত: ১২৭০ হিজরী)

(৫৮১)

(لَنَهْدِيَنَّهُمْ سُبُلَنَا) يقول: لنوفقنهم لاصابة الطريق المستقيمة، وذلك اصابة دين الله الذى هو الاسلام الذى بعث الله به محمدا صلى الله عليه وسلم.

অর্থ: (আমি অবশ্যই উনাদেরকে আমাকে পাওয়ার পথ সমূহ প্রদর্শন করি) হযরত মুফাসসির জারীর ত্ববারী রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন: অবশ্যই আমি তাদেরকে সরল-সঠিক পথ প্রাপ্তির তাওফীক্ব দান করি। আর তা হচ্ছে মহান আল্লাহ তায়ালা উনার দীন অর্জন, যা সাইয়্যিদুনা মুস্তফা মুজতবা নূরুম মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি মহান আল্লাহ তায়ালা উনার পক্ষ থেকে প্রেরিত সম্মাণিত ইসলাম। (জামিউল বয়ান ফী তা’বীলিল কুরআন অর্থাৎ তাফসীরুল ত্ববারী পবিত্র সূরাতুল আনকাবূত শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ নং ৬৯ লেখক: হযরত মুহাম্মাদ বিন জারীর বিন ইয়াযীদ বিন কাছীর বিন গালিব আমালী আবূ জা’ফর ত্ববারী রহমাতুল্লাহি আলাইহি ওয়াফাত: ৩১০ হিজরী)

(৫৮২)

{وَالَّذِيْنَ جَاهَدُوْا فِيْنَا} وهم الذين هاجروا فى سبيل الله، وجاهدوا اعداءهم، وبذلوا مجهودهم فى اتباع مرضاته، {لَنَهْدِيَنَّهُمْ سُبُلَنَا} اى الطرق الموصلة الينا، وذلك لانهم محسنون.

অর্থ: (যাঁরা আমার পথে কোশেশে আত্মনিয়োগ করে,) যাঁরা মহান আল্লাহ তায়ালা উনার পথে হিজরত করে, তাঁদের শত্রæদের সাথে জিহাদ করে এবং মহান আল্লাহ তায়ালা উনার সন্তুষ্টিমূলক অনুসরনের প্রচেষ্টায় নিয়োজিত থাকে  (আমি অবশ্যই উনাদেরকে আমাকে পাওয়ার পথ সমূহ প্রদর্শন করি।) অর্থাৎ আমার কাছে পৌঁছানোর পথ বলে দেই। আর এ কারণেই উনারা মুহসিনূন বা ওলীআল্লাহ হয়ে যান। (তাইসীরুল কারীমির রহমান ফী তাফসীরি কালামিল মান্নান অর্থাৎ তাফসীরুস্ সা’দী পবিত্র সূরাতুল আনকাবূত শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ নং ৬৯ লেখক: হযরত আব্দুর রহমান বিন নাছির বিন আব্দুল্লাহ সা’দী রহমাতুল্লাহি আলাইহি ওয়াফাত: ১৩৭৬ হিজরী, তাফসীরুত্ ত্ববারানী)

(৫৮৩)

وعن ابن عطاء رحمة الله عليه: جاهدوا فى رضانا لنهدينهم الوصول الى محل الرضوان.

অর্থ: হযরত ইবনু আত্বা রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন: তোমরা আমার সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য মুজাহাদা বা প্রচেষ্টা কর, তাহলে আমি তোমাদেরকে আমার সন্তুষ্টি পাওয়ার পথ দেখিয়ে দিব। (মাদারিকুত তানযীল ওয়া হাক্বায়িকুত তা’বীল অর্থাৎ তাফসীরুন নাসাফী পবিত্র সূরাতুল আনকাবূত শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ নং ৬৯ লেখক: হযরত আবুল বারাকাত আব্দুল্লাহ বিন আহমাদ বিন মাহমূদ নাসাফী হানাফী মাতুরীদী রহমাতুল্লাহি আলাইহি ওয়াফাত: ৭১০ হিজরী)

(৫৮৪)

الذين زَيَّنُوْا ظواهرَهم بالمجاهدات حَسُنَتْ سرائرُهم بالمشاهدات. الذين شغلوا ظواهرهم بالوظائف اوصلنا الى سرائرهم اللطائف.

অর্থ: যাঁরা মুজাহাদা বা প্রচেষ্টার দ্বারা তাঁদের বাহ্যিককে সাজাবে, মুশাহাদার মাধ্যমে তাঁদের আভ্যন্তরিণকে সৌন্দর্যমন্ডিত করা হবে। যাঁরা বাহ্যিকভাবে তাদের ওয়াযীফাহ বা আমলে মাশগূল থাকবে, আমরা তাঁদের আভ্যন্তরিনতাকে মা’রিফাতের উচ্চশিখরে পৌঁছে দিব। (লাত্বায়িফুল ইশারাত অর্থাৎ তাফসীরুল কুশাইরী পবিত্র সূরাতুল আনকাবূত শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ নং ৬৯ লেখক: হযরত আব্দুল করীম বিন হাওয়াযিন বিন আব্দুল মালিক কুশাইরী রহমাতুল্লাহি আলাইহি ওয়াফাত: ৪৬৫ হিজরী)

অত্র আয়াত শরীফ এবং উনার তাফসীর থেকে প্রমাণীত হলো যে, যাঁরা মহান আল্লাহ তায়ালা ও উনার হাবীব নূরুম মুজাস্সাম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সন্তুষ্টি তালাশ করে এবং ইখলাছের সাথে আমল করে, মহান আল্লাহ তায়ালা তিনি উনাদেরকে উনার মা’রিফাত-মুহাব্বত সন্তুষ্টি দান করেন।

পবিত্র আয়াত শরীফ নম্বর- ৪১

وَاتَّبِعْ سَبِيْلَ مَنْ اَنَابَ اِلَىَّ ثُمَّ اِلَىَّ مَرْجِعُكُمْ فَاُنَبِّئُكُمْ بِمَا كُنْتُمْ تَعْمَلُوْنَ. (سورة لقمان شريفة ۱۵ الاية الشريفة(

অর্থ: তুমি উনার পথ অনুসরণ করো, যিনি আমার দিকে রুজূ’ হয়েছেন। অতপর তোমাদের প্রত্যাবর্তন আমারই দিকে। আমি তোমাদেরকে জ্ঞাত করবো সে বিষয়ে, যা তোমরা করতে। (পবিত্র সূরাতু লুক্বমান শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১৫)

অত্র পবিত্র আয়াত উনার বিশুদ্ধ তাফসীর

বা ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ

(৫৮৫)

)وَاتَّبِعْ سَبِيْلَ مَنْ اَنَابَ اِلَىَّ) … وهذه سبيل الانبياء عليهم الصلوة والسلام والصالحين رحمة الله عليهم.

অর্থ: (তুমি উনার পথ অনুসরণ করো, যিনি আমার দিকে রুজূ’ হয়েছেন) … এই পথ হচ্ছে হযরত আম্বিয়া আলাইহিমুছ ছলাতু ওয়াস সালাম ও ছালিহীন তথা নেককার-পরহেযগার উনাদের পথ। (আল-জামিউ লিআহকামিল কুরআন অর্থাৎ তাফসীরুল কুরতুবী পবিত্র সূরাতু লুক্বমান শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১৫ লেখক: আবূ আব্দিল্লাহ মুহাম্মাদ বিন আহমাদ বিন আবূ বকর বিন ফারাহ আনছারী খযরাজী শামসুদ্দীন কুরতুবী রহমাতুল্লাহি আলাইহি ওয়াফাত: ৬৭১ হিজরী, আল-মুহারররুল ওয়াজীয অর্থাৎ তাফসীরু ইবনি আত্বিয়্যাহ, আল-জাওয়াহিরুল হিসান ফী তাফসীরিল কুরআন অর্থাৎ তাফসীরুছ ছায়ালাবী)

(৫৮৬)

)وَاتَّبِعْ سَبِيْلَ مَنْ اَنَابَ اِلَىَّ) يعنى المؤمنين.

অর্থ: (তুমি উনার পথ অনুসরণ করো, যিনি আমার দিকে রুজূ’ হয়েছেন) অর্থাৎ মু’মিন উনাদের পথ। (তাফসীরুল কুরআনিল আযীম অর্থাৎ তাফসীরু ইবনি কাছীর পবিত্র সূরাতু লুক্বমান শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১৫ লেখক: আবুল ফিদা ইসমাঈল বিন উমর বিন কাছীর কুরাশী দামিশক্বী শাফিয়ী আশয়ারী রহমাতুল্লাহি আলাইহি বিলাদত: ৭০০ হিজরী ওয়াফাত: ৭৭৪ হিজরী)

(৫৮৭)

}وَاتَّبِعْ} فى الدين {سَبِيْلَ مَنْ اَنَابَ اِلَىَّ} رجع بالتوحيد والاخلاص فى الطاعة وهم المؤمنون الكاملون.

অর্থ: (তুমি উনার পথ অনুসরণ করো, যিনি আমার দিকে রুজূ’ হয়েছেন) যিনি তাওহীদ ও একনিষ্ঠতার সাথে আনুগত্যের দিকে প্রত্যাবর্তন করেছেন। আর উনারা হলেন মু’মিনে কামিল অর্থাৎ পরিপূর্ণ বিশ্বাসী। (রূহুল বয়ান ফী তাফসীরিল কুরআন অর্থাৎ তাফসীরুল হাক্কী  লেখক: হযরত ইসমাঈল হাক্কী বিন মুছতফা ইস্তাম্বূলী হানাফী খালওয়াতী বারূসাবী রহমাতুল্লাহি আলাইহি ওয়াফাত: ১১২৭ হিজরী)

অত্র আয়াত শরীফ এবং উনার তাফসীর থেকে প্রমাণিত হলো যে, যিনি মহান আল্লাহ তায়ালা উনার দিকে রুজূ’ হয়েছেন উনারই পথ অনুসরণ করতে হবে। উনারা হলেন: সাইয়্যিদুল মুরসালীন ইমামুল মুরসালীন নূরুম মুজ্সাসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি, হযরত ছাহাবাহ কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুম উনারা, হযরত মুহসিনূন তথা আউলিয়া কিরাম রহমাতুল্লাহি আলাইহিম উনারা, ছালিহীন তথা নেককার-পরহেযগার ব্যক্তিত্ব উনারা, মুখলিছীন তথা একনিষ্ঠভাবে ইবাদতকারী বান্দাগণ উনারা। উনাদেরকে অনুসরণ করতে আয়াত শরীফ উনার মধ্যে নির্দেশ করা হয়েছে। আর এ উদ্দেশ্য পূর্ণ হয় মাযহাব উনার অনুসরণ করার মাধ্যমেই। সুবহানাল্লাহ।

পবিত্র আয়াত শরীফ নম্বর- ৪২

وَمِنَ النَّاسِ وَالدَّوَابِّ وَالْأَنْعَامِ مُخْتَلِفٌ أَلْوَانُه كَذلِكَ إِنَّمَا يَخْشَى اللهَ مِنْ عِبَادِهِ الْعُلَمَاءُ إِنَّ اللهَ عَزِيزٌ غَفُورٌ.

অর্থ: অনুরূপভাবে বিভিন্ন বর্ণের মানুষ, সৃষ্টিজীব ও চতুষ্পদ প্রাণী রয়েছে। তবে নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ তায়ালা উনার বান্দাদের মধ্যে আলিম উনারাই মহান আল্লাহ তায়ালা উনাকে ভয় করেন। নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ তায়ালা তিনি পরাক্রমশালী ও ক্ষমাশীল। (পবিত্র সূরাতু ফাতির শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ নং ২৮)

অত্র পবিত্র আয়াত উনার বিশুদ্ধ

তাফসীর বা ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ

(৫৮৮)

}انَّما يخشى اللهَ مِنْ عِباده العُلَماءُ} يعنى العلماء بالله عزَّ وجل. قال ابن عباس رضى الله عنهما: يريد انَّما يخافُنى مِنْ خَلْقى مَنْ عَلِم جبروتى وعِزَّتى وسلطانى. وقال مجاهد رحمة الله عليه والشعبى رحمة الله عليه: العالِم من خاف اللهَ. وقال الربيع بن انس رحمة الله عليه: من لم يَخْش اللهَ فليس بعالِم.

অর্থ: (নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ তায়ালা উনার বান্দাদের মধ্যে আলিম উনারাই মহান আল্লাহ তায়ালা উনাকে ভয় করে) অর্থাৎ মহান আল্লাহ আয্যা ওয়া জাল্লা উনার সন্তুষ্টির জন্য যাঁরা আলিম হন। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা তিনি বলেন: আয়াত শরীফ উনার দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে: যে বা যাঁরা মহান আল্লাহ তায়ালা উনার প্রভাব-প্রতিপত্তি, সম্মান-ইজ্জত ও মালিকানা সম্পর্কে জ্ঞানী তাঁরাই উনার সৃষ্টির মধ্যে উনাকে ভয় করে। হযরত মুজাহিদ রহমাতুল্লাহি আলাইহি ও হযরত শা’বী রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনারা বলেন: আলিম ঐ ব্যক্তি যিনি মহান আল্লাহ তায়ালা উনাকে ভয় করেন। হযরত বরী’ বিন আনাস রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন: যে ব্যক্তি মহান আল্লাহ তায়ালা উনাকে ভয় করে না সে আলিম হিসেবে বিবেচিত নয়। (যাদুল মাসীর ফী ইলমিত তাফসীর অর্থাৎ তাফসীরুল জাওযী পবিত্র সূরাতু ফাতির শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ নং ২৮ লেখক: হযরত জামালুদ্দীন আব্দুর রহমান বিন আলী বিন মুহাম্মাদ জাওযী হাম্বালী রহমাতুল্লাহি আলাইহি ওয়াফাত: ৫৯৭ হিজরী, তাফসীরুল কুরতুবী, তাফসীরুত ত্ববারানী, তাফসীরু ইবনি আতিয়্যাহ)

(৫৮৯)

قال سفيان الثورى رحمة الله عليه عن ابى حيان التميمى رحمة الله عليه عن رجل قال: كان يقال: العلماء ثلاثة: عالم بالله وعالم بامر الله، وعالم بالله ليس بعالم بامر الله، وعالم بامر الله ليس بعالم بالله. فالعالم بالله وبامر الله: الذى يخشى الله ويعلم الحدود والفرائض، والعالم بالله ليس بعالم بامر الله: الذى يخشى الله ولا يعلم الحدود ولا الفرائض، والعالم بامر الله ليس بعالم بالله: الذى يعلم الحدود والفرائض ولا يخشى الله عز وجل.

অর্থ: হযরত সুফইয়ান ছাওরী রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি হযরত আবূ হাইয়ান তামীমী রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে, তিনি একজন বর্ণনাকারী থেকে বর্ণনা করে বলেন, তিনি বলেছেন: হযরত উলামা কিরাম তিন শ্রেণীর: ১. মহান আল্লাহ তায়ালা উনার মা’রিফত সম্পর্কে জ্ঞানী এবং মহান আল্লাহ তায়ালা উনার প্রদত্ত বিধান সম্পর্কেও জ্ঞানী ২. মহান আল্লাহ তায়ালা উনার মা’রিফত সম্পর্কে জ্ঞানী, কিন্তু মহান আল্লাহ তায়ালা উনার প্রদত্ত বিধান সম্পর্কে জ্ঞানী নয় ৩. মহান আল্লাহ তায়ালা উনার প্রদত্ত বিধান সম্পর্কে জ্ঞানী, কিন্তু মহান আল্লাহ তায়ালা উনার মা’রিফত সম্পর্কে জ্ঞানী নয়। ১. মহান আল্লাহ তায়ালা উনার মা’রিফত সম্পর্কে জ্ঞানী এবং মহান আল্লাহ তায়ালা উনার প্রদত্ত বিধান সম্পর্কেও জ্ঞানী ঐ আলিম যিনি মহান আল্লাহ তায়ালা উনাকে ভয় করেন, হদ্দ বা দন্ডবিধি ও যাবতীয় ফরয-ওয়াজিব সম্পর্কে পারদর্শী। ২. মহান আল্লাহ তায়ালা উনার মা’রিফত সম্পর্কে জ্ঞানী, কিন্তু মহান আল্লাহ তায়ালা উনার প্রদত্ত বিধান সম্পর্কে অনভিজ্ঞ ঐ আলিম যিনি মহান আল্লাহ তায়ালা উনাকে ভয় করেন, কিন্তু তিনি হদ্দ বা দন্ডবিধি ও যাবতীয় ফরয-ওয়াজিব সম্পর্কে পারদর্শী নন। ৩. মহান আল্লাহ তায়ালা উনার প্রদত্ত বিধান সম্পর্কে জ্ঞানী, কিন্তু মহান আল্লাহ তায়ালা উনার মা’রিফত সম্পর্কে অনভিজ্ঞ ঐ আলিম যিনি হদ্দ বা দন্ডবিধি ও যাবতীয় ফরয-ওয়াজিব সম্পর্কে জ্ঞানী, কিন্তু তিনি মহান আল্লাহ আয্যা ওয়া জাল্লা উনাকে ভয় করেন না। (তাফসীরুল কুরআনিল আযীম অর্থাৎ তাফসীরু ইবনি কাছীর পবিত্র সূরাতু ফাতির শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ নং ২৮ লেখক: হযরত জামালুদ্দীন আব্দুর রহমান বিন আলী বিন মুহাম্মাদ জাওযী হাম্বালী রহমাতুল্লাহি আলাইহি ওয়াফাত: ৫৯৭ হিজরী লেখক: আবুল ফিদা ইসমাঈল বিন উমর বিন কাছীর কুরাশী দামিশক্বী শাফিয়ী আশয়ারী রহমাতুল্লাহি আলাইহি বিলাদত: ৭০০ হিজরী ওয়াফাত: ৭৭৪ হিজরী)

অত্র আয়াত শরীফ এবং উনার তাফসীর থেকে প্রমাণিত হলো যে, হক্কানী-রব্বানী আউলিয়া কিরাম রহমাতুল্লাহি আলাইহিম উনারাই হচ্ছেন মূলত: উলামা কিরাম রহমাতুল্লাহি আলাইহিম। উনারাই মহান আল্লাহ তায়ালা উনাকে হাক্বীক্বী ভাবে ভয় করেন। আর এমন ব্যক্তিত্ব উনাদেরকেই ইত্তিবা বা অনুসরণ-অনুকরণ করতে মহান আল্লাহা তায়ালা অসংখ্য আয়াত শরীফ উনাদের মধ্যে নির্দেশ মুবারক করেছেন। যা পূর্বে অনেক আয়াত শরীফ উনাদের মধ্যে আলোচনা করা হয়েছে। হাক্বীক্বতান ইমাম-মুজতাহিদ উনারাই এই ছিফাত বা বৈশিষ্ট্য উনাদের অধিকারী। উনাদের ইত্তিবাকেই মাযহাব উনার তাক্বলীদ বা অনুসরণ করা বলা হয়ে থাকে।

পবিত্র আয়াত শরীফ নম্বর- ৪৩

فَاعْتَبِرُوا يَا اولِى الْابْصَارِ

অর্থ: অতএব, হে চক্ষুস্মান (জ্ঞানী) ব্যক্তিগণ আপনারা গবেষণা (ইজতিহাদ, ক্বিয়াস) করুন। (পবিত্র সূরাতুল্ হাশর শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ নং ২)

অত্র পবিত্র আয়াত উনার বিশুদ্ধ

তাফসীর বা ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ

(৫৯০)

وقد استدل بالاية على حجية القياس.

অর্থ: অত্র পবিত্র আয়াত শরীফ দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, পবিত্র ক্বিয়াস শরীয়াত উনার দলীল। (রূহুল বয়ান ফী তাফসীরিল কুরআন অর্থাৎ তাফসীরুল হাক্কী পবিত্র সূরাতুল্ হাশর শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ নং ২ লেখক: হযরত ইসমাঈল হাক্কী বিন মুছতফা ইস্তাম্বূলী হানাফী খালওয়াতী বারূসাবী রহমাতুল্লাহি আলাইহি ওয়াফাত: ১১২৭ হিজরী, ইরশাদুল আক্বলিস সালীম ইলা মাযাইয়াল কিতাবিল কারীম অর্থাৎ তাফসীরু আবিস সাঊদ, মাফাতীহুল গইব অর্থাৎ তাফসীরুল কবীর অর্থাৎ তাফসীরুর রাযী)

(৫৯১)

وهذا دليل على جواز القياس.

অর্থ: অত্র পবিত্র আয়াত শরীফ ক্বিয়াস বা ইজতিহাদ করা জায়িয হওয়ার সপক্ষে দলীল বা প্রমাণ। (মাদারিকুত তানযীর ওয়া হাক্বায়িকুত তা’বীল অর্থাৎ তাফসীরুন নাসাফী পবিত্র সূরাতুল্ হাশর শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ নং ২ লেখক: হযরত আবুল বারাকাত আব্দুল্লাহ বিন আহমাদ বিন মাহমূদ নাসাফী হানাফী মাতুরীদী রহমাতুল্লাহি আলাইহি ওয়াফাত: ৭১০ হিজরী)

(৫৯২)

واشتهر الاستدلال بالاية على مشروعية العمل بالقياس الشرعى.

অর্থ: অত্র পবিত্র আয়াত শরীফ দ্বারা প্রসিদ্ধভাবে প্রমাণিত হয়েছে যে, ক্বিয়াসুশ শারয়ী উনার উপর আমল করা শরীয়াত উনার আদেশ। (রূহুল মায়ানী ফী তাফসীরিল কুরআনিল আযীম ওয়াস সাবইল মাছানী অর্থাৎ তাফসীরুল আলূসী পবিত্র সূরাতুল্ হাশর শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ নং ২ লেখক: হযরত শিহাবুদ্দীন আবুছ ছানা সাইয়্যিদ মাহমূদ বিন আব্দুল্লাহ আলূসী বাগদাদী শাফিয়ী রহমাতুল্লাহি আলাইহি ওয়াফাত: ১২৭০ হিজরী)

(৫৯৩)

استدل الذين اثبتوا القياس فى الفقه بهذه الاية.

অর্থ: অত্র পবিত্র আয়াত শরীফ দ্বারা ফিক্হ শাস্ত্রে পবিত্র ক্বিয়াস উনাকে দলীল হিসেবে সাব্যস্ত করা হয়েছে। (আত-তাসহীল লিউলূমিত তানযীল অর্থাৎ তাফসীরু ইবনি জুযী পবিত্র সূরাতুল্ হাশর শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ নং ২ লেখক: হযরত মুহাম্মাদ বিন আহমাদ বিন মুহাম্মাদ বিন জুযী কালবী গরনাত্বী মালিকী রহমাতুল্লাহি আলাইহি বিলাদত: ৬৯৩ হিজরী ওয়াফাত: ৭৪১ হিজরী)

অত্র আয়াত শরীফ এবং উনার তাফসীর থেকে প্রমাণিত হলো যে, পবিত্র ছহীহ ক্বিয়াস সম্মানিত শরীয়াত উনার অকাট্য দলীল। যার উপর আমল করা প্রমাণিত। পবিত্র ক্বিয়াস যাঁরা করেন উনারাই হচ্ছেন ইমাম-মুজতাহিদ। উনাদেরকে অনুসরণ-অনুকরণ করা ফরয-ওয়াজিব উনার অন্তর্ভুক্ত। আর ইহাই তো মাযহাব মান্য করা।

উল্লেখিত ৪৩ খানা পবিত্র আয়াত শরীফ উনার তাফসীর থেকে প্রমাণিত হয়েছে যে, মাযহাব মান্য করা ফরয উনার অন্তর্ভুক্ত। পবিত্র কুরআন মাজীদ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, ইজমাউল উম্মাহ ও ছহীহ ক্বিয়াস উনাদের দলীল-আদিল্লাহ মোতাবেক ইসলামী শরীয়াত উনার যাবতীয় হুকুম-আহকাম মেনে চলার জন্য কারো অনুসরণ করাকে ‘আত-তাকলীদুশ শারয়ী তথা শরীয়াত সমর্থিত অনুসরণ’ বলে।

উনাকে ‘তাকলীদুল ইসলাম’, ‘তাকলীদুদ্ দীন’ ও ‘তাকলীদুদ্ দালায়িলিল আরবায়াহ’ অর্থাৎ দীন ইসলাম উনার চারখানা দলীল পবিত্র কুরআন মাজীদ, পবিত্র সুন্নাহ শরীফ, পবিত্র ইজমাউল উম্মাহ ও ছহীহ ক্বিয়াস উনাদের অনুসরণও বলা হয়ে থাকে। যা অসংখ্য দলীল-আদিল্লাহ দ্বারা প্রমাণ করা হল।

 

অসমাপ্ত

পরবর্তী সংখ্যার অপেক্ষায় থাকুন

কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে প্রাণীর মূর্তি তৈরি করা ও ছবি আঁকা, তোলা, তোলানো, রাখা, রাখানো, দেখা, দেখানো হারাম নাজায়িয হওয়ার অকাট্য প্রমাণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-২১

কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে প্রাণীর মূর্তি তৈরি করা ও ছবি আঁকা, তোলা, তোলানো, রাখা, রাখানো, দেখা, দেখানো হারাম নাজায়িয হওয়ার অকাট্য প্রমাণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-২২

কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে প্রাণীর মূর্তি তৈরি করা ও ছবি আঁকা, তোলা, তোলানো, রাখা, রাখানো, দেখা, দেখানো হারাম নাজায়িয হওয়ার অকাট্য প্রমাণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-২৩

কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে প্রাণীর মূর্তি তৈরি করা ও ছবি আঁকা, তোলা, তোলানো, রাখা, রাখানো, দেখা, দেখানো হারাম নাজায়িয হওয়ার অকাট্য প্রমাণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-২৪

কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে প্রাণীর মূর্তি তৈরি করা ও ছবি আঁকা, তোলা, তোলানো, রাখা, রাখানো, দেখা, দেখানো হারাম নাজায়িয হওয়ার অকাট্য প্রমাণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-২৫