পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে সম্মানিত ও পবিত্র মাযহাব চতুষ্ঠয় উনাদের মধ্যে যে কোন একটি সম্মানিত ও পবিত্র মাযহাব মানা ও অনুসরণ করা ফরয ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-২১

সংখ্যা: ২৪০তম সংখ্যা | বিভাগ:

[সমস্ত প্রশংসা মহান আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন উনার জন্যে এবং অসংখ্য দুরূদ ও সালাম মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামউনার প্রতি। মহান আল্লাহ পাক উনার অশেষ রহ্মতে “গবেষণা কেন্দ্র মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ” উনার ফতওয়া বিভাগের তরফ থেকে বহুল প্রচারিত, হক্বের অতন্দ্র প্রহরী, বাতিলের আতঙ্ক ও আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত উনাদের আক্বীদায় বিশ্বাসী এবং হানাফী মাযহাব-উনার অনুসরণে প্রকাশিত একমাত্র দলীলভিত্তিক যামানার তাজদীদী মুখপত্র “মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ” পত্রিকায় যথাক্রমে- ১. টুপির ফতওয়া (২য় সংখ্যা) ২. অঙ্গুলী চুম্বনের বিধান (৩য় সংখ্যা) ৩. নিয়ত করে মাজার শরীফ যিয়ারত করা (৪র্থ সংখ্যা) ৪. ছবি ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় হারাম হওয়ার ফতওয়া (৫ম-৭ম সংখ্যা) ৫. জুমুয়ার নামায ফরযে আইন ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ফতওয়া (৮ম-১০ম সংখ্যা) ৬. মহিলাদের মসজিদে গিয়ে জামায়াতে নামায পড়া মাকরূহ্ তাহ্রীমী সম্পর্কে ফতওয়া (১১তম সংখ্যা) ৭. কদমবুছী ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১২তম সংখ্যা) ৮. তাহাজ্জুদ নামায জামায়াতে পড়া মাকরূহ্ তাহ্রীমী ও বিদ্য়াতে সাইয়্যিয়াহ্ এবং তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৩তম সংখ্যা) ৯. ফরয নামাযের পর মুনাজাত ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৪-২০তম সংখ্যা) ১০. ইন্জেকশন নেয়া রোযা ভঙ্গের কারণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২১-২২তম সংখ্যা) ১১. তারাবীহ্-এর নামাযে বা অন্যান্য সময় কুরআন শরীফ খতম করে উজরত বা পারিশ্রমিক গ্রহণ করা জায়িয ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২৩-২৪তম সংখ্যা) ১২. তারাবীহ্ নামায বিশ রাকায়াত ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২৫-২৯তম সংখ্যা) ১৩. দাড়ী ও গোঁফের শরয়ী আহ্কাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৩০-৩৪তম সংখ্যা) ১৪. প্রচলিত তাবলীগ জামায়াত ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৩৫-৪৬তম সংখ্যা) ১৫. আযান ও ছানী আযান মসজিদের ভিতরে দেয়ার আহ্কাম এবং তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৪৭-৫০তম সংখ্যা) ১৬. দোয়াল্লّীন-যোয়াল্লীন উনার শরয়ী ফায়সালা এবং তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৫১-৫২তম সংখ্যা) ১৭. খাছ সুন্নতী টুপি ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৫৩-৫৯তম সংখ্যা) ১৮. নূরে মুহম্মদী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও উনার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৬০-৮২তম সংখ্যা) ১৯. ইমামাহ্ বা পাগড়ী মুবারকের আহ্কাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কিত ফতওয়া (৮৩-৯৬তম সংখ্যা) ২০. শরীয়তের দৃষ্টিতে আখিরী যোহ্র বা ইহ্তিয়াতুয্ যোহ্রের আহ্কাম এবং তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৯৭-১০০তম সংখ্যা) ২১. জানাযা নামাযের পর হাত তুলে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করার শরয়ী ফায়সালা ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১০১-১১১তম সংখ্যা) এবং ২২. হিজাব বা পর্দা ফরযে আইন হওয়ার প্রমাণ ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১১২-১৩১তম সংখ্যা) ২৩. খাছ সুন্নতী ক্বমীছ বা কোর্তা এবং তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৪০তম সংখ্যা) ২৪. হানাফী মাযহাব মতে ফজর নামাযে কুনূত বা কুনূতে নাযেলা পাঠ করা নাজায়িয ও নামায ফাসিদ হওয়ার কারণ এবং তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৩২-১৫২তম সংখ্যা) ২৫. ইসলামের দৃষ্টিতে বিশ্বকাপ ফুটবল বা খেলাধুলা’র শরয়ী আহকাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ফতওয়া (১৫৫তম সংখ্যা) ২৬. হানাফী মাযহাব মতে পুরুষের জন্য লাল রংয়ের পোশাক তথা রুমাল, পাগড়ী, কোর্তা, লুঙ্গি, চাদর ইত্যাদি পরিধান বা ব্যবহার করা হারাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৫৩-১৬০তম সংখ্যা)  ২৭. ইসলামের নামে গণতন্ত্র ও নির্বাচন করা, পদপ্রার্থী হওয়া, ভোট চাওয়া ও দেয়া হারাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৬১-১৭৫তম সংখ্যা) ২৮. কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে প্রাণীর মূর্তি তৈরি করা ও ছবি আঁকা, তোলা, তোলানো, রাখা, রাখানো, দেখা, দেখানো হারাম নাজায়িয হওয়ার অকাট্য প্রমাণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৬৮-চলমান), ২৯. জুমুয়া ও ঈদাইনের খুৎবা আরবী ভাষায় দেয়া ওয়াজিব। আরবী ব্যতীত অন্য কোন ভাষায় খুৎবা দেয়া মাকরূহ তাহরীমী ও বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৯২-১৯৩তম সংখ্যা) ৩০. কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে লাইলাতুন নিছফি মিন শা’বান শবে বরাত-এর আহকাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৯৫-২১৩তম সংখ্যা), ৩১. পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা ও ক্বিয়াস উনাদের দৃষ্টিতে “কুলাঙ্গার, পাপিষ্ঠ ইয়াযীদ লা’নাতুল্লাহি আলাইহি সম্পর্কে শরীয়তের সঠিক ফায়ছালা ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া” পেশ করার পর-

৩২তম ফতওয়া হিসেবে

“পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে সম্মানিত ও পবিত্র মাযহাব চতুষ্ঠয় উনাদের মধ্যে যে কোন একটি সম্মানিত ও পবিত্র মাযহাব মানা ও অনুসরণ করা ফরয ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া”-পেশ করতে পারায় মহান আল্লাহ পাক উনার পবিত্র দরবার শরীফ-এ শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি।

 

সম্মানিত ও পবিত্র মাযহাব চতুষ্ঠয় উনাদের মধ্যে যে কোন একটি সম্মানিত ও পবিত্র মাযহাব

উনার উপর মউত পর্যন্ত ইস্তিক্বামত থাকা ফরয

পূর্ব প্রকাশিতের পর

 

পবিত্র তাফসীর শরীফ উনাদের নির্ভরযোগ্য কিতাব থেকে ‘আত-তাক্বলীদুশ্ শারয়ী তথা শরীয়াত সমর্থিত অনুসরণ’ উনার সমর্থনে পবিত্র আয়াত শরীফ সমূহ উনাদের ছহীহ ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ ও আহকাম

 

পবিত্র কুরআন মাজীদ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, ইজমাউল উম্মাহ ও ছহীহ ক্বিয়াস শরীফ উনাদের দলীল-আদিল্লাহ মোতাবেক সম্মানিত ইসলামী শরীয়াত উনার যাবতীয় হুকুম-আহকাম মেনে চলার জন্য কারো অনুসরণ করাকে ‘আত-তাকলীদুশ শারয়ী তথা শরীয়াত সমর্থিত অনুসরণ’ বলে। উনাকে ‘তাকলীদুল ইসলাম’, ‘তাকলীদুদ্ দীন’ ও ‘তাকলীদুদ্ দালায়িলিল আরবায়াহ’ অর্থাৎ পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার চারখানা দলীল উনাদের অনুসরণও বলা হয়ে থাকে।

নিম্নে পবিত্র তাফসীর শরীফ উনাদের নির্ভরযোগ্য কিতাব থেকে ‘আত-তাক্বলীদুশ্ শারয়ী তথা শরীয়াত সমর্থিত অনুসরণ’ উনার সমর্থনে পবিত্র আয়াত শরীফ সমূহ উল্লেখ করে উনাদের ছহীহ ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ ও আহকাম বা বিধি-বিধান আলোচনা করা হলো-

পবিত্র আয়াত শরীফ নম্বর- ১৩

يا ايها الذين امنوا اطيعوا الله واطيعوا الرسول واولى الامر منكم فان تنازعتم فى شىء فردوه الى الله والرسول ان كنتم تؤمنون بالله واليوم الاخر ذلك خير واحسن تأويلا. (سورة النساء شريف ৫৯ الاية)

অর্থাৎ: হে ঈমানদারগণ! তোমরা মহান আল্লাহ তায়ালা উনার আনুগত্য করো, সাইয়্যিদুনা হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অনুসরন-অনুকরণ করো এবং তোমাদের মধ্যে যাঁরা উলিল আমর (আদেশদাতা) উনাদের অনুসরণ করো। তোমাদের মধ্যে যদি কোন বিষয়ে মতবিরোধ হয়, তাহলে উক্ত বিষয়ে মহান আল্লাহ তায়ালা উনার ও উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দিকে প্রত্যাবর্তন করো অর্থাৎ যেই উলিল আমর উনার পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের দলীল বেশি এবং যিনি পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ মোতাবেক পরিপূর্ণ আমল করেন সেই উলিল আমর উনাকেই অনুসরণ করো। যদি তোমরা মহান আল্লাহ তায়ালা উনার ও শেষ দিবসের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে থাকো। এটাই কল্যানকর ও পরিনতির দিক দিয়ে উত্তম। (পবিত্র সূরাতুন্ নিসা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ নম্বর ৫৯)

অত্র পবিত্র আয়াত শরীফ উনার-

واولى الامر منكم فان تنازعتم فى شىء فردوه الى الله والرسول

অংশ দ্বারা হযরত ইমাম-মুজতাহিদ, উলামা, আউলিয়া কিরাম ও উমারা-খলীফাহ রহমাতুল্লাহি আলাইহিম উনাদেরকে অনুসরণ-অনুকরণ করতে নির্দেশ করা হয়েছে এবং ইজমাউল উম্মাহ ও ছহীহ ক্বিয়াস যে মহা সম্মানিত শরীয়াত উনার দলীল তাও প্রমাণ করা হয়েছে। যেমনটি সর্বজনমান্য ও নির্ভরযোগ্য সকল তাফসীর উনার কিতাব উনাদের মধ্যে উল্লেখ আছে।

অত্র পবিত্র আয়াত শরীফ উনার বিশুদ্ধ তাফসীর বা ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ

(৪২৭)

 فصل في دلالة الاية على أكثر علم الأصول دَلَّت هذه الايةُ على أكْثَرِ أصُولِ الفِقْه، لأن أصُول الشَّريعَة هي الكِتَابُ والسنةُ والإجْماع والقياسُ، فقوله تعالى “اطيعوا الله وأطيعوا الرسول” إشارة للكِتَابِ والسُّنَّةِ، وقوله: “وأولي الأمر منكم” يدل على الإجماع. … فوجَبَ أن يكُونَ المُرَادُ من {اولى الأَمْرِ} أولي الحَلِّ والعَقْدِ من هذِه الأمَّة وهو الإجْمَاعُ. (تفسير اللباب لابن عادل المؤلف: ابو حفص عمر بن على ابن عادل الدمشقى الحنبلى رحمة الله عليه المتوفى سنة ۸۸۰ هجري سورة النساء ۵۹ الاية)

অর্থ: এই পরিচ্ছেদ হচ্ছে অধিকাংশ ইলমুল্ উছূল অত্র পবিত্র আয়াত শরীফ দ্বারা প্রমাণিত হওয়া সম্পর্কে: অত্র পবিত্র আয়াত শরীফ প্রমাণ করেছে যে, অধিকাংশ ক্ষেত্রে উছূলুল্ ফিক্বহ প্রয়োজন। কেননা, পবিত্র শরীয়াত উনার উছূল হলো পবিত্র কিতাবুল্লাহ শরীফ, পবিত্র সুন্নাহ শরীফ, পবিত্র ইজমাউল্ উম্মাহ শরীফ ও পবিত্র ছহীহ ক্বিয়াস শরীফ। যেমনটি মহান আল্লাহ তায়ালা উনার বাণী: ‘তোমরা মহান আল্লাহ তায়ালা উনার আনুগত্য করো ও হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অনুসরণ-অনুকরণ করো।’ এখানে পবিত্র কিতাবুল্লাহ শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের অনুসরণের ইঙ্গিত রয়েছে। অনুরূপ মহান আল্লাহ তায়ালা উনার বাণী মুবারক: ‘তোমাদের মধ্যে উলিল্ আমর উনাদের অনুসরণ করো।’ ইহা পবিত্র ইজমা দলীল হওয়ার পক্ষে একটি প্রমাণ। তাই আবশ্যিকভাবে উলিল্ আমর দ্বারা এটাই উদ্দেশ্য যে, উনারা হচ্ছেন এই উম্মাতের মধ্যে ফায়ছালাকারী ও মিমাংসাকারী। আর ইহাই হলো পবিত্র ইজমাউল্ উম্মাহ। (তাফসীরুল্ লুবাব লিইবনি আদিল লেখক: হযরত আবূ হাফ্ছ উমর বিন আলী ইবনু আদিল দামিশ্কী হাম্বালী রহমাতুল্লাহি আলাইহি ওয়াফাত: ৮৮০ হিজরী পবিত্র সূরাতুন্ নিসা শরীফ-৫৯)

(৪২৮)

فصل: من المعتبر في الإجماع، إذا ثَبَت أن الإجْماع حُجة، فاعلم: أن المُعْتَبَر إجْمَاعُهم هُمُ الذين يُمْكِنُهُم استِنْبَاط الأحْكَام الشرعية من الكِتَابِ والسنة، و هم المُسَمون بأهْلِ الحَلِّ والعَقْدِ، فهم الَّذين يُمْتَثَلُ أمْرُهُم ونَهْيُهُم بِخلاف المُتَكَلِّم والمُقْرِئ والمُحْدِّث والعَوَامّ الذين لا يُمْكِنُهم الاسْتِنْبَاط. (تفسير اللباب لابن عادل المؤلف: ابو حفص عمر بن على ابن عادل الدمشقى الحنبلى رحمة الله عليه المتوفى سنة ۸۸۰ هجري سورة النساء ۵۹ الاية)

অর্থ: পবিত্র ইজমা’ গ্রহণযোগ্য হওয়ার বিষয়ে পরিচ্ছেদ: যখন প্রমাণ হয়েছে যে পবিত্র ইজমাউল্ উম্মাহ সম্মানিত শরীয়াত উনার দলীল তখন জেনে নেয়া উচিৎ যে, উনাদের ইজমাই গ্রহণযোগ্য যে সকল ব্যক্তিত্ব পবিত্র কিতাবুল্লাহ শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের থেকে পবিত্র শরয়ী বিধান সমূহ ইজতিহাদের ভিত্তিতে বের করতে সক্ষম। উনারাই বিচার-বিশ্লেষণকারী হিসেবে স্বীকৃত। উনারাই আদেশ ও নিষেধের ব্যাপারে অনুসরণীয়। তবে যাঁরা মাসয়ালা বের করতে সক্ষম নন যেমন স্বাভাবিক মুতাকাল্লিম (আক্বায়িদ বিশারদ), ক্বারী, মুহাদ্দিছ ও সাধারণ জনতা; তারা অনুসরণীয় নন। (তাফসীরুল্ লুবাব লিইবনি আদিল লেখক: হযরত আবূ হাফ্ছ উমর বিন আলী ইবনু আদিল দামিশ্কী হাম্বালী রহমাতুল্লাহি আলাইহি ওয়াফাত: ৮৮০ হিজরী পবিত্র সূরাতুন্ নিসা শরীফ-৫৯)

(৪২৯)

فصل: في فروع تتعلق بالإجماع دلَّ قوله تعالى: {وَأُولِي الأَمْرِ مِنْكُمْ} على أن الإجْمَاع حُجة. (تفسير اللباب لابن عادل المؤلف: ابو حفص عمر بن على ابن عادل الدمشقى الحنبلى رحمة الله عليه المتوفى سنة ۸۸۰ هجري سورة النساء ۵۹ الاية)

অর্থ: এই পরিচ্ছেদ হচ্ছে শাখামূলক মাসয়ালায় ইজমা’ সম্পর্কে: মহান আল্লাহ তায়ালা উনার বানী মুবারক ‘তোমরা তোমাদের মধ্যে উলিল্ আমর উনাদের অনুসরণ করো’ প্রমাণ করে যে, পবিত্র ইজমাউল উম্মাহ শরীফ সম্মানিত শরীয়াত উনার দলীল বা প্রমাণ। (তাফসীরুল্ লুবাব লিইবনি আদিল লেখক: হযরত আবূ হাফ্ছ উমর বিন আলী ইবনু আদিল দামিশ্কী হাম্বালী রহমাতুল্লাহি আলাইহি ওয়াফাত: ৮৮০ হিজরী পবিত্র সূরাতুন্ নিসা শরীফ-৫৯)

(৪৩০)

وفي أولي الأمر أربعة أقاويل:

أحدها: هم الأمراء وهو قول ابن عباس رضى الله عنه وأبي هريرة رضى الله عنه والسدي وابن زيد رحمة الله عليهما.

والقول الثاني: هم العلماء والفقهاء وهو قول جابر بن عبد الله رضى الله عنه والحسن وعطاء وأبي العالية رحمة الله عليهم.

والثالث: هم اصحاب رسول الله صلى الله عليه وسلم وهو قول مجاهد رحمة الله عليه.

والرابع: هم ابو بكر وعمر عليهما السلام وهو قول عكرمة رحمة الله عليه. (النكت والعيون اى تفسير الماوردي المؤلف: ابو الحسن علي بن محمد بن حبيب الماوردي البصري رحمة الله عليه تاريخ الوفاة ۴۵۰ هجري سورة النساء  ۵۹ الاية)

অর্থ: উলিল্ আমর উনার মধ্যে চারটি মতামত রয়েছে। এক: উলিল্ আমর দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছেন আমীর-উমারা অর্থাৎ ন্যায়পরায়ন খলীফা উনারা। ইহা হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহু, হযরত আবূ হুরাইরাহ রদ্বিয়াল্লাহু আনহু, হযরত সুদ্দী ও হযরত ইবনু যায়েদ রহমাতুল্লাহি আলাইহিমা উনাদের মত।

দ্বিতীয়: উনারা হলেন হযরত উলামা ও ফুক্বাহা কিরাম রহমাতুল্লাহি আলাইহিম। ইহা হযরত জাবির বিন আব্দুল্লাহ রদ্বিয়াল্লাহু আনহু, হযরত হাসান বছরী, আত্বা ও আবুল্ আলিয়া রহমাতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের মত।

তৃতীয়: উনারা হলেন হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুম উনারা। ইহা হযরত মুজাহিদ রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার মত।

চতুর্থ: উনারা হলেন হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস সালাম ও হযরত উমর ফারূক্ব আলাইহিস সালাম। ইহা হযরত ইকরামাহ রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার মত। (আন্ নুকুতু ওয়াল উইউন অর্থাৎ তাফসীরুল মাওয়ারাদী লেখক: হযরত আবুল হাসান আলী বিন মুহাম্মাদ বিন হাবীব মাওয়ারাদী বছরী রহমাতুল্লাহি আলাইহি ওয়াফাত: ৪৫০ হিজরী পবিত্র সূরাতুন্ নিসা শরীফ-৫৯)

(৪৩১)

{وَأُولِي الْأَمْرِ مِنْكُمْ} فِيهَا قَوْلَانِ: الْأَوَّلُ: قَالَ مَيْمُونُ بْنُ مِهْرَانَ رحمة الله عليه: هُمْ أَصْحَابُ السَّرَايَا، وَرُوِيَ فِي ذلِكَ حَدِيثًا، وَهُوَ اخْتِيَارُ الْبُخَارِيِّ، وَرُوِيَ عَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ رضى الله عنه أَنَّهَا نَزَلَتْ فِي عَبْدِ اللهِ بْنِ حُذَافَةَ رضى الله عنه إذْ بَعَثَهُ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي سَرِيَّةٍ.

الثَّانِي: قَالَ جَابِر رضى الله عنه: هُمْ الْعُلَمَاءُ، وَبِه قَالَ أَكْثَرُ التَّابِعِينَ، واخْتَارَه مَالِك رحمة الله عليه، قَالَ مُطَرفٌ وَابْنُ مَسْلَمَةَ رحمة الله عليهما: سَمِعْنَا مَالِكًا رحمة الله عليه يَقُولُ: هُمْ الْعُلَمَاءُ.

وَالصَّحِيحُ عِنْدِي أَنَّهُمْ الْأُمَرَاءُ وَالْعُلَمَاءُ جَمِيعًا. (احكام القران لابن العربي المؤلف: القاضي محمد بن عبد الله ابو بكر بن العربي المعافري الاشبيلي المالكي رحمة الله عليه المتوفى ۵۴۳ هجري سورة النساء ۵۹ الاية)

অর্থ: (তোমরা তোমাদের মধ্যে উলিল্ আমর উনাদেরকে অনুসরণ করো) অত্র পবিত্র আয়াত শরীফ উনার দু’খানা ব্যাখ্যা রয়েছে। এক: হযরত মাইমূন ইবনে মিহরান রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন: উলিল্ আমর হলেন ন্যায়পরায়ন সেনাপতিগণ। এ ব্যাপারে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণনা রয়েছে। ইহা হযরত ইমাম বুখারী রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি পছন্দ করেছেন। হযরত ইবনু আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহু উনার থেকে বর্ণিত যে, অত্র পবিত্র আয়াত শরীফ খানা হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে হুযাফাহ রদ্বিয়াল্লাহু আনহু উনার ব্যাপারে নাযিল হয়েছিলো, যখন উনাকে হযরত নাবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কোন জিহাদে প্রেরণ করেছিলেন।

দ্বিতীয়: হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন: উনারা হলেন হযরত উলামা-আউলিয়ায়ে কিরাম রহমাতুল্লাহি আলাইহিম। ইহা অধিকাংশ তাবিয়ীন রহমাতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের মত। ইহা হযরত ইমাম মালিক রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি পছন্দ করেছেন। হযরত মুর্ত্বারিফ ও মাসলামাহ রহমাতুল্লাহি আলাইহিমা উনারা বলেন: আমরা হযরত ইমাম মালিক রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার কাছ থেকে শুনেছি যে, তিনি বলেছেন: উলিল্ আমর হচ্ছেন হযরত উলামা-আউলিয়ায়ে কিরাম রহমাতুল্লাহি আলাইহিম উনারা।

আমার নিকট এটাই বিশুদ্ধ মত যে, উলিল্ আমর হচ্ছেন উমারা তথা সত্যনিষ্ঠ খলীফাহ ও হযরত উলামা-আউলিয়ায়ে কিরাম রহমাতুল্লাহি আলাইহিম উনারা। (আহকামুল্ কুরআন লিইবনিল্ আরাবী লেখক: ক্বাদ্বী হযরত মুহাম্মাদ বিন আব্দুল্লাহ আবূ বকর বিন আরাবী মুয়াফিরী ইশবীলী মালিকী রহমাতুল্লাহি আলাইহি ওয়াফাত: ৫৪৩ হিজরী পবিত্র সূরাতুন্ নিসা শরীফ-৫৯)

(৪৩২)

قَوْله تَعَالى: {فَإِنْ تَنَازَعْتُمْ فِي شَيْءٍ فَرُدُّوهُ إلَى اللَّهِ وَالرَّسُولِ}: قَالَ عُلَمَاؤُنَا: رُدُّوهُ إلى كِتَابِ اللهِ، فَإِذَا لَمْ تَجِدُوهُ فَإِلى سُنَّةِ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَإِنْ لَمْ تَجِدُوهُ فَكَمَا قَالَ عَلِيٌّ عليه السلام: مَا عِنْدَنَا إلَّا مَا فِي كِتَابِ اللهِ تَعَالى أَوْ مَا فِي هذِهِ الصَّحِيفَةِ أَوْ فَهْم أُوتِيهِ رَجُل مُسْلِم، وَكَمَا “قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لِمُعَاذٍ رضى الله عنه: بِمَ تَحْكُمُ قَالَ بِكِتَابِ الله قَالَ فَإِنْ لَمْ تَجِدْ قَالَ بِسُنَّةِ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ فَإِنْ لَمْ تَجِدْ قَالَ أَجْتَهِدُ رَأْيِي وَلَا آلُو قَالَ الْحَمْدُ لله الَّذِي وَفَّقَ رَسُولَ رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم”. (احكام القران لابن العربي المؤلف: القاضي محمد بن عبد الله ابو بكر بن العربي المعافري الاشبيلي المالكي رحمة الله عليه المتوفى ৫৪৩ هجري سورة النساء ۵۹ الاية)

অর্থ: মহান আল্লাহ তায়ালা উনার পবিত্র বাণী মুবারক: (তোমরা যদি কোন বিষয়ে মতোবিরোধে পতিত হও, তাহলে সে বিষয়ে মহান আল্লাহ তায়ালা ও উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের দিকে প্রত্যাবর্তন করো) আমাদের উলামা কিরাম রহমাতুল্লাহি আলাইহিম উনারা বলেন: তোমরা পবিত্র কিতাবুল্লাহ শরীফ উনার দিকে ফিরে যাও। যদি সেই বিষয়ে পবিত্র কিতাবুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে স্পষ্ট কিছু না পাও তাহলে পবিত্র সুন্নাতু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দিকে প্রত্যাবর্তণ করো। যদি সেখানেও না পাও। যেমনটি হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম তিনি বলেছেন: পবিত্র কিতাবুল্লাহ শরীফ অথবা এই পবিত্র ছহীফাহ শরীফ ব্যতীত আমাদের নিকট যা আছে অথবা একজন মুসলিম ব্যক্তিত্ব উনার কাছে যে নিয়ামত দেয়া হয়েছে, তার দিকে প্রত্যাবর্তন করো। ‘যেমনটি সাইয়্যিদুনা হযরত নাবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত মুয়ায বিন জাবাল রদ্বিয়াল্লাহু আনহু উনাকে বলেছিলেন: আপনি কিসের সাহায্যে বিচার-ফায়ছালা করবেন: তিনি বলেছিলেন, পবিত্র কিতাবুল্লাহ শরীফ দ্বারা। আবারো বললেন: যদি পবিত্র কিতাবুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে না পান তাহলে কি করবেন? জাওয়াবে তিনি বললেন, হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র সুন্নাহ শরীফ দ্বারা ফায়ছালা করবো। তিনি আবারো বললেন: যদি সেখানেও না পান তাহলে কি করবেন? তিনি বললেন, আমি ইজতিহাদ করে ফায়সালা প্রদান করবো। পরিশেষে নূরুম মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, মহান আল্লাহ তায়ালা উনার অসংখ্য শুকরিয়া যে, তিনি উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার রসূল তথা প্রতিনিধিকে এমন তাওফীক্ব দিয়েছেন।’ সুবহানাল্লাহ। (আহকামুল্ কুরআন লিইবনিল্ আরাবী লেখক: ক্বাদ্বী হযরত মুহাম্মাদ বিন আব্দুল্লাহ আবূ বকর বিন আরাবী মুয়াফিরী ইশবীলী মালিকী রহমাতুল্লাহি আলাইহি ওয়াফাত: ৫৪৩ হিজরী পবিত্র সূরাতুন্ নিসা শরীফ-৫৯)

উল্লেখিত ইবারত গুলো থেকে স্পষ্ট বুঝা গেল যে, ‘উলিল আমর’ তথা আদেশদাতা হলেন যথাক্রমে: সাইয়্যিদুনা হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস্ সালাম, হযরত খুলাফার্উ রাশিদীন আলাইহিমুস্ সালাম, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুম, হযরত তাবিয়ীন-তাবে’ তাবেয়ীন রহমাতুল্লাহি আলাইহিম, সাত ক্বারী চৌদ্দ রাবী রহমাতুল্লাহি আলাইহিম, চার মাযহাব উনার সম্মানিত ইমাম-মুজতাহিদ মুতলাক রহমাতুল্লাহি আলাইহিম, আক্বায়িদ উনার সম্মানিত ইমাম রহমাতুল্লাহি আলাইহিম, চার ত্বরীক্বা উনাদের ইমাম মুজতাহিদ রহমাতুল্লাহি আলাইহিম, যার যার মুরশিদ ক্বিবলা বা শায়েখ আলাইহিমুস সালাম, হযরত উলামায়ে কিরাম রহমাতুল্লাহি আলাইহিম, হযরত আউলিয়া কিরাম রহমাতুল্লাহি আলাইহিম ও হযরত ফুক্বাহায়ে কিরাম রহমাতুল্লাহি আলাইহিম উনারা। উনাদেরকে অনুসরণ-অনুকরণ করতে মহান আল্লাহ তায়ালা তিনি ও উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারাই নির্দেশ মুবারক করেছেন। তাই ‘উলিল্ আমর’ উনাদেরকে অনুসরণ-অনুকরণ করা সকল মু’মিন-মুসলমান আলিম ও সর্বসাধারণ সকলের জন্য ফরদ্ব। আর এ অনুসরণকেই মাযহাব মান্য করা বলা হয়ে থাকে। তাই মাযহাব মান্য করাও ফরদ্ব।

পবিত্র আয়াত শরীফ নম্বর- ১৪

وَمَنْ يُطِعِ اللهَ وَالرَّسُولَ فَاولئِكَ مَعَ الَّذِينَ اَنْعَمَ اللهُ عَلَيْهِمْ مِنَ النَّبِيّيْنَ وَالصّدّيْقِيْنَ وَالشُّهَدَاءِ وَالصَّالِحِيْنَ وَحَسُنَ اُولئِكَ رَفِيْقًا. (سورة النساء ۶۹ الاية(

অর্থ: যে কেউ মহান আল্লাহ তায়ালা উনার হুকুম মুবারক এবং উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের হুকুম মুবারক মান্য করবে, তাহলে যাঁদের প্রতি মহান আল্লাহ তায়ালা তিনি নিয়ামত মুবারক হাদিয়া করেছেন, সে উনাদের সঙ্গী হবেন। মহান আল্লাহ তায়ালা তিনি নিয়ামত মুবারক হাদিয়া করেছেন হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুছ ছলাতু ওয়াস সালাম উনাদেরকে, হযরত ছিদ্দীক্বীন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে, হযরত শুহাদা রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদেরকে ও হযরত ছলিহীন রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদেরকে। আর উনারা কতই না উত্তম সঙ্গী। (পবিত্র সূরাতুন নিসা শরীফ: ৬৯)

অত্র পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে হযরত নাবী-রসূল আলাইহিমুছ্ ছলাতু ওয়াস্ সালাম এবং হযরত ছিদ্দীক্বীন, শুহাদা, ছলিহীন তথা হযরত ইমাম-মুজতাহিদ, উলামা ও আউলিয়ায়ে কিরাম রহমাতুল্লাহি আলাইহিম উনাদেরকে মহান আল্লাহ তায়ালা তিনি যে অবারিত নিয়ামত মুবারক দিয়েছেন তা বর্ণনা করা হয়েছে। আর উনাদের পথটিই হচ্ছে আছ্ ছিরাতুল্ মুস্তাক্বীম তথা সরল-সঠিক পথ। যে পথ সম্পর্কে মহান আল্লাহ তায়ালা তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

 اهدنا الصراط المستقيم. صراط الذين انعمت عليهم.

অর্থাৎ: আয় আল্লাহ পাক! আমাদেরকে সরল সঠিক পথ দান করুন। সেই পথ যে পথের পথিক উনাদেরকে আপনি নিয়ামত মুবারক দান করেছেন। (পবিত্র সূরাতুল ফাতিহাহ শরীফ)

অত্র আলোচনা থেকে প্রমাণীত হচ্ছে যে, হযরত নাবী-রসূল আলাইহিমুছ্ ছলাতু ওয়াস্ সালাম এবং হযরত ছিদ্দীক্বীন, শুহাদা, ছলিহীন তথা হযরত ইমাম-মুজতাহিদ, উলামায়ে ও আউলিয়া কিরাম রহমাতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের অনুসরণ-অনুকরণ করা মহান আল্লাহ তায়ালা উনারই নির্দেশ মুবারক।

নিম্নে নিয়ামত প্রাপ্ত বান্দা উনাদের সম্পর্কে তাফসীরের কিতাব থেকে দলীল উল্লেখ করা হলো-

অত্র পবিত্র আয়াত উনার বিশুদ্ধ তাফসীর বা ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ

(৪৩৩)

{وَمَن يُطِعِ الله والرسول} نزلت هذه الاية في ثوبان رضى الله عنه مولى رسول الله صلى الله عليه وسلم لقوله اخاف ان لا القاك فى الاخرة يا رسول الله صلى الله عليه وسلم وراه رسول الله صلى الله عليه وسلم متغيراً لونه وكان يحبه حباً شديداً لا يكاد يصبر عنه فذكر الله كرامته فقال ومن يطع الله فى الفرائض والرسول في السنن {فاولئك} فى الجنة {مَعَ الذين انْعَمَ الله} منَّ الله {عَلَيْهِم مّنَ النبيين} محمد صلى الله عليه وسلم وغيره {والصديقين} افاضل اصحاب محمد صلى الله عليه وسلم {والشهداء} الذين استشهدوا فى سبيل الله {والصالحين} صالحي امة محمد صلى الله عليه وسلم {وَحَسُنَ اولئك رَفِيقاً} مرافقة فى الجنة. (تنوير المقباس من تفسير ابن عباس رضى الله عنهما المتوفى ۶۸ هجري جمعه: محمد بن يعقوب الفيروزآبادى رحمة الله عليه المتوفى ۸۱۷ هجري سورة النساء ۶۹ الاية)

অর্থ: (যে কেউ মহান আল্লাহ তায়ালা উনার হুকুম মুবারক এবং উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের হুকুম মুবারক মান্য করবে,) অত্র পবিত্র আয়াত শরীফ খানা হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আযাদকৃত খাদিম ছাহাবী হযরত ছাওবান রদ্বিয়াল্লাহু আনহু উনার কথার প্রেক্ষিতে নাযিল হয়েছিল। তিনি বলেছিলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমার আশংকা হয় যে, আখিরাতে আপনার সাক্ষাৎ পাবো না। হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার ছাহাবী উনার চেহারার রং পরিবর্তন হতে দেখলেন। তিনি উনাকে খুবই মুহব্বত করতেন তাই তা সহ্য করতে পারছিলেন না। তখন মহান আল্লাহ তায়ালা উনার মর্যাদার কথা উল্লেখ করে নাযিল করলেন যে, যে ব্যক্তি মহান আল্লাহ তায়ালা উনার আনুগত্য করবে ফরদ্বসমূহে এবং হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অনুসরণ-অনুকরণ করবে সুন্নাতসমূহ পালনের ব্যাপারে (উনারা) জান্নাত উনার মধ্যে থাকবেন।

(যাঁদের প্রতি মহান আল্লাহ তায়ালা তিনি নিয়ামত মুবারক হাদিয়া করেছেন, উনাদের সঙ্গী হবেন) যাঁদের প্রতি মহান আল্লাহ তায়ালা তিনি ইহসান করেছেন।

(উনারা হলেন) সাইয়্যিদুল্ মুরসালীন ইমামুল্ মুরসালীন নূরুম্ মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ হযরত মুহাম্মার্দু রসূল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও অন্যান্য সকল নাবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালাম।

(হযরত ছিদ্দীক্বীন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম,) নূরুম্ মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুম।

(হযরত শুহাদা রহমতুল্লাহি আলাইহিম) যাঁরা মহান আল্লাহ তায়ালা উনার রাস্তায় শহীদ হয়েছেন।

(ও হযরত ছালিহীন রহমতুল্লাহি আলাইহিম) নূরুম্ মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সৎকর্মশীল-পরহেযগার উম্মাত উনারা।

(উনারা কতই না উত্তম সঙ্গী) উনারাই জান্নাতে উত্তম সঙ্গী। সুবহানাল্লাহ। (তানবীরুল্ মাক্ববাস মিন তাফসীরি ইবনি আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা ওয়াফাত মুবারক: ৬৮ হিজরী জমাকারী: হযরত মুহাম্মাদ বিন ইয়া’কূব ফীরোযাবাদী রহমাতুল্লাহি আলাইহি ওয়াফাত: ৮১৭ হিজরী পবিত্র সূরাতুন নিসা শরীফ: ৬৯)

(৪৩৪)

{والصديقين والشهداء والصالحين} اى من المسلمين. (بحر العلوم اى تفسير السمرقندي المؤلف: الامام الفقيه المفسر ابو الليث نصر بن محمد بن احمد بن ابراهيم السمرقندي الحنفي رحمة الله عليه المتوفى ۳۷۳ هجري سورة النساء ۶۹ الاية)

অর্থ: (হযরত ছিদ্দীক্বীন, শুহাদা ও ছালিহীন রদ্বিয়াল্লাহু আনহুম ওয়া রহমাতুল্লাহি আলাইহিম) উনারা হলেন মুসলমান উনাদের অন্তর্ভুক্ত। (বাহরুল্ উলূম অর্থাৎ তাফসীরুস্ সামারকান্দী লেখক: ইমাম ফক্বীহ মুফাসসির হযরত আবুল্ লাইছ নাছর বিন মুহাম্মাদ বিন আহমাদ বিন ইবরাহীম সামারকান্দী হানাফী রহমাতুল্লাহি আলাইহি ওয়াফাত: ৩৭৩ হিজরী পবিত্র সূরাতুন নিসা শরীফ: ৬৯)

(৪৩৫)

 (وَالصّدّيقِينَ) اَفَاضِل اَصْحَاب الْاَنْبِيَاء عليهم السلام لِمُبَالَغَتِهِمْ فِى الصّدْق وَالتَّصْدِيق (وَالشُّهَدَاء) الْقَتْلى فِى سَبِيل الله (وَالصَّالِحِينَ) غَيْر مَنْ ذُكِر. (تفسير الجلالين المؤلف: جلال الدين محمد بن احمد المحلي رحمة الله عليه المتوفى ۸۶۴هجري و جلال الدين عبد الرحمن بن ابى بكر السيوطى رحمة الله عليه المتوفى ৯১১ هجري سورة النساء ۶۹ الاية)

অর্থ: (ছিদ্দীক্বীন) হলেন হযরত আম্বিয়ায়ে কিরাম আলাইহিমুছ্ ছলাতু ওয়াস্ সালাম উনাদের সত্যবাদী ও সত্যপরায়ণ ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু আনহুম উনারা। (শুহাদা) হচ্ছেন মহান আল্লাহ তায়ালা উনার পথে শহীদ উনারা। (ছলিহীন) হচ্ছেন উনারা ব্যতীত অন্যান্য নেককার-পরহেযগার ব্যক্তি। সুবহানাল্লাহ। (তাফসীরুল্ জালালাঈন লেখক: হযরত জালালুদ্দীন মুহাম্মাদ বিন আহমাদ মাহাল্লী রহমাতুল্লাহি আলাইহি ওয়াফাত: ৮৬৪ এবং হযরত জালালুদ্দীন আর্ব্দু রহমান বিন আবূ বকর সুয়ূতী রহমাতুল্লাহি আলাইহি ওয়াফাত: ৯১১ হিজরী পবিত্র সূরাতুন নিসা শরীফ: ৬৯)

(৪৩৬)

فقال بعضهم: “الصديقون” تُبَّاع الانبياء عليهم السلام الذين صدّقوهم واتبعوا منهاجهم بعدهم حتى لحقوا بهم.

“والشهداء” وهم جمع”شهيد” وهو المقتول في سبيل الله سمي بذلك لقيامه بشهادة الحق في جَنب الله حتى قتل.

“والصالحين” وهم جمع”صالح” وهو كل من صلحت سريرته وعلانيته. (جامع البيان في تأويل القران اى تفسير الطبري المؤلف: الامام محمد بن جرير بن يزيد بن كثير بن غالب الاملي ابو جعفر الطبري رحمة الله عليه المتوفى ۳۱۰ هجري سورة النساء ۶۹ الاية)

অর্থ: কতক মুফাসসিরীনে কিরাম রহামতুল্লাহি আলাইহিম উনারা বলেন: ছদিকূন হলেন হযরত আম্বিয়ায়ে কিরাম আলাইহিমুস্ সালাম উনাদের এমন ইত্তিবা’কারী যাঁরা উনাদের উপর পবিত্র ঈমান এনেছেন এবং উনাদের প্রদর্শিত সম্মানিত শরীয়াত উনার অনুসরণ-অনুকরণ করেছেন এবং শেষ পর্যন্ত উনাদের সাথে পরপারে মিলিত হয়েছেন।

‘শুহাদা’ শব্দ মুবারক ‘শহীদ’ শব্দের বহুবচন। শুহাদা হচ্ছেন উনারাই যাঁরা মহান আল্লাহ তায়ালা উনার পথে জীবন বিসর্জন করেছেন। উনাদেরকে শহীদ নামে এজন্য নামকরণ করা হয়েছে যে, উনারা মহান আল্লাহ তায়ালা উনার প্রতি অবিচল বিশ্বাস রেখেছেন এবং উনার জন্যই জীবন দিয়েছেন।

আর ‘ছলিহীন’ শব্দটি ‘ছলিহ’ শব্দের বহুবচন। যাঁরা গোপন ও প্রকাশ্য দু’দিকেই নিজেদেরকে সৎ হিসেবে তৈরি করেছেন উনারাই হচ্ছেন ছলিহীন। (জামিউল্ বয়ান ফী তা’বীলিল্ কুরআন অর্থাৎ তাফসীরুত্ ত্ববারী লেখক: ইমাম হযরত মুহাম্মাদ বিন জারীর বিন ইয়াযীদ বিন কাছীর বিন গালিব আমালী আবূ জা’ফর ত্ববারী রহমাতুল্লাহি আলাইহি ওয়াফাত: ৩১০ হিজরী পবিত্র সূরাতুন নিসা শরীফ: ৬৯)

(৪৩৭)

عَنْ حضرة اَبِى ذَرّ رضى الله عنه فِى قوله جَلَّ وَعَزَّ {مَعَ الَّذِينَ اَنْعَمَ اللهُ عَلَيْهِمْ مِنَ النَّبِيّينَ وَالصّدّيقِينَ} الصّدّيقِينَ: الْمُؤْمِنِينَ. (تفسير القران لابن المندر المؤلف: ابو بكر محمد بن ابراهيم بن المنذر النيسابوري رحمة الله عليه المتوفى   ۳۱۹ هجري سورة النساء ۶۹ الاية)

অর্থ: ছাহাবী হযরত আবূ যর রদ্বিয়াল্লাহু আনহু তিনি মহান আল্লাহ আয্যা ওয়া জাল্লা উনার বাণী মুবারক

 مَعَ الَّذِينَ اَنْعَمَ اللهُ عَلَيْهِمْ مِنَ النَّبِيّينَ وَالصّدّيقِينَ

উনার মধ্যে ছিদ্দীক্বীন উনার ব্যাখ্যায় বলেন যে, উনারা হলেন খাঁটি মু’মিন বা ঈমানদার উনারা। (তাফসীরুল্ কুরআন লিইবনিল্ মুনযির লেখক: হযরত আবূ বকর মুহাম্মাদ বিন ইবরাহীম বিন মুনযির নীসাবূরী রহমাতুল্লাহি আলাইহি ওয়াফাত: ৩১৯ হিজরী পবিত্র সূরাতুন নিসা শরীফ: ৬৯)

(৪৩৮)

وهذه الاية تفسير قوله تعالى: اهْدِنَا الصّراطَ الْمُسْتَقِيْمَ صِرَاطَ الَّذِيْنَ اَنْعَمْتَ عَلَيْهِمْ.

والصديق هو الذي يحقق بفعله ما يقول بلسانه. وقيل: هم فضلاء اتباع الانبياء عليهم السلام الذين يسبقونهم الى التصديق كابى بكر الصديق عليه السلام.

ومعنى الشهيد: والمراد هنا بالشهداء عمر عليه السلام وعثمان عليه السلام وعلى عليه السلام. والصالحين سائر الصحابة رضى الله عنهم اجمعين.

وقيل: الشُّهَداء القتلى فى سبيل الله. (الصَّالِحِينَ) صالحي امة محمد رسول الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ. قلت: واللفظ يعم كل صالح وشهيد. (الجامع لاحكام القران اى تفسير القرطبي المؤلف: ابو عبد الله محمد بن احمد بن ابي بكر بن فرح الانصاري الخزرجي شمس الدين القرطبي رحمة الله عليه المتوفى ۶۷۱ هجري سورة النساء ۶۹ الاية)

অর্থ: মহান আল্লাহ আয্যা ওয়া জাল্লা উনার বাণী মুবারক مَعَ الَّذِينَ اَنْعَمَ اللهُ عَلَيْهِمْ مِنَ النَّبِيّينَ وَالصّدّيقِينَ والشهداء والصالحين অত্র পবিত্র আয়াত শরীফ খানা اهْدِنَا الصّراطَ الْمُسْتَقِيْمَ صِرَاطَ الَّذِيْنَ اَنْعَمْتَ عَلَيْهِمْ অর্থাৎ ‘আয় মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে সরল-সঠিক পথ দান করুন, এমন পথ যে পথের পথিক উনাদেরকে আপনি নিয়ামত মুবারক দিয়েছেন।’ পবিত্র আয়াত শরীফ উনারই তাফসীর বা ব্যাখ্যা।

ছিদ্দীক্ব উনাকেই বলা হয় যিনি যবানে যা বলেন, কাজেও যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করেন। কারো মতে: হযরত আম্বিয়া আলাইহিমুস্ সালাম উনাদের অনুসরণকারী ব্যক্তিগণ যারা উনাদেরকে সত্যায়নের ব্যাপারে অগ্রণী ভুমিকা রেখেছেন। যেমন ছিলেন সাইয়্যিদুনা হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস্ সালাম।

শহীদ উনার মর্মার্থ: পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে শুহাদা দ্বারা হযরত উমর ফারূক্ব আলাইহিস্ সালাম, হযরত উছমান গণী আলাইহিস্ সালাম ও হযরত আলী র্কারামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস্ সালাম উনাদেরকে উদ্দেশ্য করা হয়েছে। আর ছলিহীন হলেন সকল হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুম উনারা।

কারো মতে: মহান আল্লাহ তায়ালা উনার পথে নিজেকে উৎসর্গকারী উনারাই হচ্ছেন শুহাদা। আর ছলিহীন হচ্ছেন- উম্মাতে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নেককার ব্যক্তিগণ। সুবহানাল্লাহ।

আমি বলি: শুহাদা ও ছলিহীন শব্দদ্বয় প্রত্যেক নেককার ও শহীদ ব্যক্তি উনাদের ব্যাপারে ব্যাপকার্থে ব্যবহার হয়। (আল্ জামিউ লিআহকামিল্ কুরআন অর্থাৎ তাফসীরুল্ কুরতুবী লেখক: হযরত আবূ আব্দিল্লাহ মুহাম্মাদ বিন আহমাদ বিন আবূ বকর বিন ফারাহ আনছারী খাযরাজী শামসুদ্দীন কুরতুবী রহমাতুল্লাহি আলাইহি ওয়াফাত: ৬৭১ হিজরী পবিত্র সূরাতুন নিসা শরীফ: ৬৯)

(৪৩৯)

{والصديقين} كافاضل صحابة الانبياء عليهم السلام. والصديق: المبالغ فى صدق ظاهره بالمعاملة وباطنه بالمراقبة او الذي يصدق قوله بفعله، {والشهداء} والذين استشهدوا فى سبيل الله {والصالحين} ومن صلحت احوالهم وحسنت اعمالهم. (مدارك التنزيل وحقائق التأويل اى تفسير النسفي المؤلف: الامام الفقيه المتكلم ابو البركات عبد الله بن احمد بن محمود النسفي الحنفي الماتريدي رحمة الله عليه المتوفى ۷۱۰ هجري سورة النساء ۶۹ الاية)

অর্থ: (ছদিক্বীন) হচ্ছেন হযরত আম্বিয়া আলাইহিমুস্ সালাম উনাদের মর্যাদাময় সঙ্গীগণ উনারা। ‘ছিদ্দীক্ব’ শব্দখানা ইসমু ফায়িল মুবালাগাহ। যিনি বাহ্যিক আমলে সত্যবাদী এবং আভ্যন্তরীন ব্যাপারেও সজাগ তিনিই ছিদ্দীক্ব, অথবা যিনি উনার কথাকে স্বীয় কাজ দ্বারা সত্যায়ণ করেন তিনিই ছিদ্দীক্ব।

(শুহাদা) যাঁরা মহান আল্লাহ তায়ালা উনার পথে নিজেদের জীবনকে বিলিয়ে দিয়েছেন উনারাই শুহাদা।

(ছলিহীন) যাঁরা নিজেদের অবস্থা সংসোধন করেছেন এবং আমলগুলোকে সুন্দর করেছেন উনাদেরকে ছলিহীন বা নেককার বলা হয়। (মাদারিকুত্ তানযীল ওয়া হাক্বায়িকুত্ তা’বীল অর্থাৎ তাফসীরুন্ নাসাফী লেখক: ইমাম ফক্বীহ মুতাকাল্লিম-আক্বায়িদ বিশারদ হযরত আবুল্ বারাকাত আব্দুল্লাহ বিন আহমাদ বিন মাহমূদ নাসাফী হানাফী মাতুরীদী রহমাতুল্লাহি আলাইহি ওয়াফাত: ৭১০ হিজরী পবিত্র সূরাতুন নিসা শরীফ: ৬৯)

উল্লেখিত পবিত্র আয়াত শরীফ ও উনার তাফসীর উনার মধ্যে হযরত নাবী-রসূল আলাইহিমুছ্ ছলাতু ওয়াস্ সালাম এবং হযরত ছিদ্দীক্বীন, শুহাদা, ছালিহীন তথা হযরত ইমাম-মুজতাহিদ, উলামা ও আউলিয়ায়ে কিরাম রহমাতুল্লাহি আলাইহিম উনাদেরকে মহান আল্লাহ তায়ালা তিনি যে অবারিত নিয়ামত মুবারক দিয়েছেন তা বর্ণনা করা হয়েছে। আর উনাদের পথটিই হচ্ছে আছ্ ছিরাতুল্ মুস্তাক্বীম তথা সরল-সঠিক পথ। আরো প্রমাণীত হচ্ছে যে, হযরত নাবী-রসূল আলাইহিমুছ্ ছলাতু ওয়াস্ সালাম এবং হযরত ছিদ্দীক্বীন, শুহাদা, ছলিহীন তথা হযরত ইমাম-মুজতাহিদ, উলামা ও আউলিয়ায়ে কিরাম রহমাতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের অনুসরণ-অনুকরণ করা মহান আল্লাহ তায়ালা উনারই নির্দেশ মুবারক।

আর ইহাই পবিত্র দ্বীন ইসলাম তথা মাযহাব উনার অনুসরণ। সুবহানাল্লাহ।

পবিত্র আয়াত শরীফ নম্বর- ১৫

افَلَا يَتَدَبَّرُوْنَ الْقُرْانَ وَلَوْ كَانَ مِنْ عِنْدِ غَيْرِ اللهِ لَوَجَدُوْا فِيْهِ اخْتِلَافًا كَثِيْرًا. (سورة النساء ۸۲ الاية(

অর্থ: তারা কি পবিত্র কুরআন মাজীদ উনাকে নিয়ে গবেষণা করে না? যদি ইহা মহান আল্লাহ তায়ালা ব্যতীত অন্য কারো পক্ষ থেকে হতো, তাহলে তোমরা এতে অনেক বৈপরিত্য দেখতে পেতে।  (পবিত্র সূরাতুন নিসা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৮২)

অত্র পবিত্র আয়াত উনার বিশুদ্ধ তাফসীর বা ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ

(৪৪০)

فيه دليل على صحة القياس. (التفسير المظهري سورة النساء ۸۲ الاية الكريمة التأليف: القاضي محمد ثناء الله العثماني الحنفي الماتريدي المظهري المجددي النقشبندي الفانيفتي رحمة الله عليه المتوفى سنة ۱۲۲۵ هجري)

অর্থ: أَفَلَا يَتَدَبَّرُونَ الْقُرْآنَ  এ পবিত্র আয়াতাংশ থেকে বুঝা যায় যে, পবিত্র শরয়ী কোন বিষয়ে পবিত্র ক্বিয়াস করা তথা গবেষণা করা ছহীহ। (আত্ তাফসীরুল মাযহারী পবিত্র সূরাতুন্ নিসা শরীফ ৮২ নং আয়াত শরীফ লেখক: আল্লামা হযরত ক্বাযী মুহাম্মাদ ছানাউল্লাহ উছমানী হানাফী মাতুরীদী মাযহারী মুজাদ্দিদী নক্বশাবন্দী পানিপথী রহমাতুল্লাহি আলাইহি ওয়াফাত: ১২২৫ হিজরী)

(৪৪১)

قال الامام احمد رحمة الله عليه: حدثنا انس بن عياض حدثنا ابو حازم عن عمرو بن شعيب عن ابيه عن جده قال: لقد جلست انا واخي مجلسا ما احب ان لي به حُمر النَّعم اقبلت انا واخي واذا مشيخة من صحابة رسول الله صلى الله عليه وسلم على باب من ابوابه فكرهنا ان نفرق بينهم فجلسنا حَجْرَة، اذ ذكروا آية من القرآن، فتماروا فيها حتى ارتفعت اصواتهم، فخرج رسولُ الله صلى الله عليه وسلم مُغْضَبًا حتى احمر وجهه، يرميهم بالتراب، ويقول: “مهلا يا قوم، بهذا اهلكت الامم من قبلكم باختلافهم على انبيائهم، وضربهم الكتب بعضها ببعض، ان القرآن لم ينزل يكذب بعضه بعضا بل يصدّق بعضه بعضا، فما عرفتم منه فاعملوا به وما جهلتم منه فردوه الى عالمِه”. (تفسير القران العظيم لابن كثير سورة النساء ۸۲ الاية الكريمة المؤلف: علامة حضرت أبو الفداء إسماعيل بن عمر بن كثير القرشي الدمشقي الشافعي رحمة الله عليه الولادة سنة ۷۰۰ هجري الوفاة سنة ۷۷۴ هجري)

অর্থ: হযরত ইমাম আহমাদ বিন হাম্বাল রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন: আমাদের কাছে বর্ণনা করেছেন হযরত আনাস বিন আয়ায রহমাতুল্লাহি আলাইহি, তিনি বলেন আমাদের কাছে বর্ণনা করেছেন হযরত আবূ হাযিম রহমাতুল্লাহি আলাইহি হযরত আমর বিন শুয়াইব রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে, তিনি উনার পিতা থেকে তিনি উনার দাদা থেকে। হযরত আমর বিন শুয়াইব রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার দাদা বলেন: একদা আমি ও আমার ভাই একটি মাজালিসে বসাার সৌভাগ্য অর্জন করেছিলাম। গৃহপালিত রক্তবর্ণের উষ্ট্রদির চেয়ে উক্ত মাজলিস আমার নিকট অধিকতর প্রিয় ছিলো। উক্ত মাজলিসের ঘটনার বিবরণ এই: একদা আমরা হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দরবারে এসে কিছু সংখ্যক প্রবীণ ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুম উনাদেরকে উনার দারে উপবিষ্ট দেখলাম। আমরা উনাদের থেকে জুদা হওয়া পছন্দ করলামনা তাই উনাদের এক পার্শ্বে বসলাম। উনারা পবিত্র কুরআন মাজীদ উনার একখান পবিত্র আয়াত শরীফ নিয়ে আলোচনায় মশগুল হলেন। এমনকি উনারা তা নিয়ে সূক্ষ্ম ও গভীর আলোচনা শুরু করলেন। একসময় উনাদের কন্ঠস্বর কিছুটা উচ্চ হয়ে উঠল। তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের নিকট আগমণ করলেন। উনার চেহারা মুবারক রক্তিম মুবারক হয়ে গেল। তিনি বলতেছিলেন হে লোক সকল ইখতিলাফী বিষয় সম্পর্কে ধৈর্য্যধারণ করুন এবং ফিকির করুন। কারন এভাবেই আপনাদের পূর্ববর্তী উম্মতগণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে গিয়েছিলো। তারা তাদের নবীগণ  উনাদের সম্পর্কে মতভেদ করতো এবং মহান আল্লাহ তায়ালা উনার পবিত্র কিতাব উনার এক অংশকে অপর অংশের বিরোধী আখ্যায়িত করতো। মূলত: পবিত্র কুরআন কারীম উনার একাংশ অপর অংশকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করে না, বরং উহার একাংশ অপর অংশকে সত্য প্রতিপন্ন করে। উনার যেটুকু আপনারা বুঝতে পারবেন সেটুকুর উপর আমল করুন। আর যেটুকু সম্পর্কে কিছু না বুঝবেন, সেটুকু সম্বন্ধে জানার জন্য হক্কানী আলিম উনাদের নিকট পেশ করুন। (তাফসীরুল কুরআনিল আযীম লিইবনি কাছীর পবিত্র সূরাতুন্ নিসা শরীফ ৮২ নং আয়াত শরীফ লেখক: আল্লামা হযরত আবুল ফিদা ইসমাঈল বিন উমর বিন কাছীর কুরাশী দামিশ্কী শাফিয়ী রহমাতুল্লাহি আলাইহি বিলাদত: ৭০০ ওয়াফাত: ৭৭৪ হিজরী)

উপরোক্ত বর্ণনা দ্বারা মূলত: এ বিষয়টি বুঝানো হয়েছে যে, পরস্পর আলোচনার মধ্যে অনেক খায়ের বরকত ও রহমত রয়েছে। যেমন পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, “তোমরা পরস্পর আলোচনা করো, নিশ্চয়ই তোমাদের পরস্পর আলোচনার মধ্যে জীবনী শক্তি নিহিত আছে। সুবহানাল্লাহ!

আরো প্রমাণিত হয় যে, সম্মানিত শরীয়ত উনার যে বিষয়গুলো সম্পর্কে মানুষ অবগত নয় সে বিষয়গুলো সম্পর্কে অবগত হওয়ার জন্য যাঁরা সে বিষয় সম্পর্কে অবগত উনাদের স্মরণাপন্ন হতে হবে। অর্থাৎ পবিত্র কুরআন শরীফ বুঝতে হলে সম্মানিত হাদীছ শরীফ অর্থাৎ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অনুসরণ করতে হবে। আর পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ বুঝতে হলে সে বিষয়ে ইমাম-মুজতাহিদ হক্কানী-রব্বানী আলিম-উলামা ও আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদেরকে অনুসরণ করতে হবে। মুলকথা হচ্ছে পবিত্র মাযহাব মানতে হবে। কেননা পবিত্র মাযহাব উনার মাধ্যমে সম্মানিত শরীয়ত উনার অস্পষ্ট বিষয়গুলো সর্বসাধারণের অবগতি ও আমলের সুবিধার্থে স্পষ্ট করে দেয়া হয়েছে। সুবহানাল্লাহ!

(৪৪২)

فيه دليل على اثبات القياس. (الجامع لأحكام القرآن للقرطبي سورة النساء ৮২ الاية الكريمة المؤلف: حضرت ابو عبد الله محمد بن أحمد بن أبي بكر بن فرح الأنصاري الخزرجي شمس الدين القرطبي رحمة الله عليه المتوفى سنة ۶۷۱ هجري)

অর্থ: এ পবিত্র আয়াত শরীফ উনার দলীল দ্বারা ক্বিয়াস যে সম্মানিত শরীয়াত উনার দলীল তা প্রমাণ করা হয়েছে। (আল্ জামিউ লিআহকামিল কুরআন লিল্ কুরতুবী পবিত্র সূরাতুন্ নিসা শরীফ ৮২ নং আয়াত শরীফ লেখক: হযরত আবূ আব্দিল্লাহ মুহাম্মাদ বিন আহমাদ বিন আবূ বকর বিন ফারাহ আনছারী খাযরাযী শামসুদ্দীন কুরতুবী রহমাতুল্লাহি আলাইহি ওয়াফাত: ৬৭১ হিজরী)

(৪৪৩)

يتاملون ويتبصرون ما فيه. (تفسير روح البيان سورة النساء ۸۲ الاية الكريمة المؤلف: الشيخ اسماعيل حقى ابن مصطفى الاسلامبولي الحنفي الجلوتى رحمة الله عليه المتوفى سنة ۱۱۳۷ هجري)

অর্থ: কেন তারা পবিত্র কুরআন মাজীদ উনার অর্থকে নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করে না এবং উনার মধ্যে যা আছে তা দূরদৃষ্টি দিয়ে অবলোকন করে না। (তাফসীরে রূহুল বয়ান পবিত্র সূরাতুন্ নিসা শরীফ ৮২ নং আয়াত শরীফ লেখক: হযরত শায়েখ ইসমাঈল হাক্কী বিন মুছ্তফা ইসলামবূলী হানাফী জালূতী রহমাতুল্লাহি আলাইহি ওয়াফাত: ১১৩৭ হিজরী)

(৪৪৪)

عن الضحاك قوله:”افلا يتدبرون القران” قال: “يتدبرون” النظر فيه. (جامع البيان في تأويل القران اى تفسير الطبري سورة النساء ۸۲ الاية الكريمة المؤلف: محمد بن جرير بن يزيد بن كثير بن غالب الاملي ابو جعفر الطبري رحمة الله عليه المتوفى ۳۱۰ هجري، تفسير القران لابن المنذر المؤلف: ابو بكر محمد بن إبراهيم بن المنذر النيسابوري رحمة الله عليه المتوفى ۳۱۹ هجري)

অর্থ: হযরত দ্বহ্হাক রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি মহান আল্লাহ তায়ালা উনার বাণী ‘তারা কি পবিত্র কুরআন মাজীদ উনাকে নিয়ে গবেষণা করে না?’ উনার বলেন: তারা যেন পবিত্র কুরআন মাজীদ তিনি মর্মার্থকে নিয়ে চিন্তা-গবেষণা করে। (জামিউল্ বয়ান ফী তা’বীলিল্ কুরআন অর্থাৎ তাফসীরুত্ ত্ববারী পবিত্র সূরাতুন্ নিসা শরীফ ৮২ নং আয়াত শরীফ লেখক: হযরত মুহাম্মাদ বিন জারীর বিন ইয়াযীদ বিন কাছীর বিন গালিব আমালী আবু জা’ফর ত্ববারী রহমাতুল্লাহি আলাইহি ওয়াফাত: ৩১০ হিজরী, তাফসীরুল্ কুরআন লিইবনিল্ মুনযির লেখক: হযরত আবূ বকর মুহাম্মাদ বিন ইবরাহীম বিন মুনযির নীসাবূরী রহমাতুল্লাহি আলাইহি ওয়াফাত: ৩১৯ হিজরী)

(৪৪৫)

يدل على صحة القياس. (مدارك التنزيل وحقائق التأويل اى تفسير النسفي سورة النساء ۸۲ الاية الكريمة المؤلف: الامام الفقيه المفسر ابو البركات عبد الله بن احمد بن محمود النسفي الحنفي الماتريدي رحمة الله عليه المتوفى۷۱۰هجري)

অর্থ: أَفَلَا يَتَدَبَّرُونَ الْقُرْآنَ  এ পবিত্র আয়াতাংশ থেকে বুঝা যায় যে, সম্মানিত শরয়ী কোন বিষয়ে পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ করা তথা গবেষণা করা ছহীহ। (মাদারিকুত্ তানযীল ওয়া হাক্বায়িকুত্ তা’বীল অর্থাৎ তাফসীরুন্ নাসাফী পবিত্র সূরাতুন্ নিসা শরীফ ৮২ নং আয়াত শরীফ লেখক: ইমাম ফক্বীহ মুফাসসির আবুল্ বারাকাত আব্দুল্লাহ বিন আহমাদ বিন মাহমূদ নাসাফী হানাফী মাতুরীদী রহমাতুল্লাহি আলাইহি ওয়াফাত: ৭১০ হিজরী)

(৪৪৬)

اخباره عن الغيوب وهو ما يطلع الله تعالى نبيه صلّى الله عليه وسلّم على احوال المنافقين وما يخفونه من مكرهم وكيدهم. (لباب التأويل في معاني التنزيل اى تفسير الخازن سورة النساء ۸۲ الاية الكريمة المؤلف: علاء الدين علي بن محمد بن إبراهيم البغدادي الشهير بالخازن رحمة الله عليه)

অর্থ: এখানে নূরুম্ মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কর্তৃক গাইব বা অদৃশ্যের খবর দেয়া প্রমাণীত। যা মহান আল্লাহ তায়ালা তিনি উনার নবী হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে মুনাফিকদের যাবতীয় অবস্থাদী সম্পর্কে জানিয়েছেন যে, মুনাফিকরা গোপনভাবে চক্রান্ত্র-ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছিল। (লুবাবুত্ তা’বীল ফী মায়ানিত্ তানযীল অর্থাৎ তাফসীরুল্ খাযিন পবিত্র সূরাতুন্ নিসা শরীফ ৮২ নং আয়াত শরীফ লেখক: হযরত আলাউদ্দীন আলী বিন মুহাম্মাদ বিন ইবরাহীম বাগদাদী খাযিন রহমাতুল্লাহি আলাইহি)

(৪৪৭)

قال اهل النظر: ان الاجماع حجة. (بحر العلوم اى تفسير السمرقندي سورة النساء ۸۲ الاية الكريمة المؤلف: الامام الفقيه ابو الليث نصر بن محمد بن احمد بن ابراهيم السمرقندي الحنفي رحمة الله عليه المتوفى ۳۷۳ هجري(

অর্থ: বিচক্ষণ উলামা কিরাম রহমাতুল্লাহি আলাইহিম উনারা বলেন: নিশ্চয়ই সম্মানিত ইজমাউল্ উম্মাহ পবিত্র শরীয়াত উনার দলীল। (বাহরুল্ উলূম অর্থাৎ তাফসীরুস্ সামারকান্দী পবিত্র সূরাতুন্ নিসা শরীফ ৮২ নং আয়াত শরীফ লেখক: ইমাম ফক্বীহ হযরত আবুল্ লাইছ নছর বিন মুহাম্মাদ বিন আহমাদ বিন ইবরাহীম সামারকান্দী হানাফী রহমাতুল্লাহি আলাইহি ওয়াফাত: ৩৭৩ হিজরী)

(৪৪৮)

تدبرُ إشارة المعاني بغوص الأفكار واستخراجُ جواهر المعاني بدقائق الاستنباط. (لطائف الاشارات اى تفسير القشيري سورة النساء ৮২ الاية الكريمة المؤلف: عبد الكريم بن هوازن بن عبد الملك القشيري رحمة الله عليه المتوفى ۴۶۵ هجري)

অর্থ: পবিত্র কুরআন মাজীদ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ হতে মর্মার্থ উপলব্ধি করনার্থে ফিক্রে নিমজ্জিত থাকা এবং সুক্ষ্মতম মাসয়ালা উদঘাটন করতে কোশেশ করাই তাদাব্বুর। (লাত্বায়িফুল্ ইশারাত অর্থাৎ তাফসীরুল্ কুশাইরী পবিত্র সূরাতুন্ নিসা শরীফ ৮২ নং আয়াত শরীফ লেখক: হযরত আব্দুল্ করীম বিন হাওয়াযিন বিন আব্দুল মালিক কুশাইরী রহমাতুল্লাহি আলাইহি ওয়াফাত: ৪৬৫ হিজরী)

অত্র আলোচনা থেকে প্রমাণিত হলো যে, সাইয়্যিদুল্ মুরসালীন হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি গাইব তথা অদৃশ্যের সংবাদদাতা, নেককার মুজতাহিদ কর্তৃক ইজতিহাদ এবং পবিত্র ইজমাউল্ উম্মাহ শরীফ ও পবিত্র ছহীহ ক্বিয়াস শরীফ সম্মানিত ইসলাম উনার দলীল। আর সর্ব সাধারণের যে বিষয় জানা নেই তা উলামায়ে কিরাম আলাইহিমুর রহমাহ উনাদের নিকট জেনে নিবে। ইহাই মাযহাব মান্য করা। আর ইহাই পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার অনুসরণ-অনুকরণ। সুবহানাল্লাহ।

 

অসমাপ্ত

পরবর্তী সংখ্যার অপেক্ষায় থাকুন

কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে প্রাণীর মূর্তি তৈরি করা ও ছবি আঁকা, তোলা, তোলানো, রাখা, রাখানো, দেখা, দেখানো হারাম নাজায়িয হওয়ার অকাট্য প্রমাণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-২৪

কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে প্রাণীর মূর্তি তৈরি করা ও ছবি আঁকা, তোলা, তোলানো, রাখা, রাখানো, দেখা, দেখানো হারাম নাজায়িয হওয়ার অকাট্য প্রমাণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-২৫

জুমুয়া ও ঈদাইনের খুৎবা আরবী ভাষায় দেয়া ওয়াজিব। আরবী ব্যতীত অন্য কোন ভাষায় খুৎবা দেয়া মাকরূহ তাহরীমী ও বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া

কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে প্রাণীর মূর্তি তৈরি করা ও ছবি আঁকা, তোলা, তোলানো, রাখা, রাখানো, দেখা, দেখানো হারাম নাজায়িয হওয়ার অকাট্য প্রমাণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-২৬

জুমুয়া ও ঈদাইনের খুৎবা আরবী ভাষায় দেয়া ওয়াজিব। আরবী ব্যতীত অন্য কোন ভাষায় খুৎবা দেয়া মাকরূহ তাহরীমী ও বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-২