পবিত্র “মাক্বামে মাহমূদ” উনার বেমেছাল তাফসীর বিষয়ে খারেজী জাহমিয়া ফিরকার মুখোশ উম্মোচন

সংখ্যা: ২৯০তম সংখ্যা | বিভাগ:

মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,

عَسٰىۤ أَنْ يَّـبْـعَثَكَ رَبُّكَ مَقَامًا مَّـحْمُوْدًا

“নিশ্চয়ই আপনার মহান রব তায়ালা আপনাকে মাকামে মাহমূদ উনার মাঝে অধিষ্ঠিত করবেন।” (সম্মানিত ও পবিত্র সূরা ইসরা শরীফ: সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ ৭৯)

মাকামে মাহমূদ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এমন এক মাকাম মুবারক যা সৃষ্টির কারোই নেই। এই মহাসম্মানিত মাকাম উনার ব্যাখ্যায় তাফসীর এবং পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার বিভিন্ন ব্যাখ্যাগ্রন্থে একাধিক মত রয়েছে। যথা- (১) মাকামে মাহমূদ হলো শাফায়াতে কুবরা। (২) প্রশংসার পতাকা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নূরুল মাগফিরাত মুবারক বা পবিত্র হাত মুবারকে থাকবে। (৩) সর্বপ্রথম জান্নাতে কড়া নাড়বেন। (৪) গুনাহগার উম্মতকে জাহান্নাম থেকে বের করে জান্নাতে দিবেন। ইত্যাদি। এছাড়াও আরেকটি বিশেষ শান মুবারক উনার কথা বলা হয়েছে তা হচ্ছে “কুদরতী মেছালী আরশ মুবারকে মহান আল্লাহ পাক উনার পাশে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে বসানো হবে”। সুবহানাল্লাহ!

উল্লেখ্য যে, আরশ  মুবারকে বসার বিষয়টা অন্য বিষয়গুলোকে নফী করে না বা সাংঘর্ষিক না। বরং এটাই সুন্দর একটা অবস্থান ফুটিয়ে তোলে সেটা হচ্ছে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কুদরতী আরশ মুবারকে বসে সেখানে থেকে সবার জন্য শাফায়াত মুবারক করবেন। এছাড়া এ প্রসঙ্গে ৪ জন ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম এবং একাধিক প্রসিদ্ধ তাফসীরবিদ তাবেয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাদের থেকে এর স্বপক্ষে বক্তব্য পাওয়া যায়।

উপরোক্ত আক্বীদার বিষয়ে ইতিহাসে একজন ছাড়া আর কারো অভিযোগ খুঁজে পাওয়া যায় না। সর্বপ্রথম এ বিষয়ে আপত্তি করেন ইমাম ওয়াহেদী রহমতুল্লাহি আলাইহি। তবে উনার আপত্তিও নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে বসানো নিয়ে নয় বরং উনার আপত্তি ছিলো মহান আল্লাহ পাক তিনি কিভাবে আরশে বা কুরসীতে বসবেন সেটা নিয়ে। এ ব্যাপারে একাধিক ইমাম খণ্ডনমূলক জবাব দিয়েছেন। এখন বুঝার বিষয় হচ্ছে মহান আল্লাহ পাক উনার বসাকে কেউ যদি দেহবাদীদের মত  চিন্তা করে তাহলে তার জন্য বিভ্রান্তি রয়েছে। মহান আল্লাহ পাক উনার এই শান মুবারক প্রকাশ সম্পূর্ণই কুদরতি একটা বিষয় যা মানুষের চিন্তা ও জ্ঞানের বাইরে। এটা কোন সৃষ্টির মত নয় যে তাশাব্বুহ বা সাদৃশ্য হয়ে যাবে। আর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এ বিশেষ আসনে মহান রব তায়ালা উনার পাশে বসা এটা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের প্রাচীন ও প্রসিদ্ধ উলামায়ে কিরাম উনাদের আক্বীদা। এবং এর বিরোধিতা করা বিদয়াতি খারেজী জাহমিয়া ফিরকার আলামত হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে।  বিষয়গুলো ধারাবাহিক আলোচনা করা হবে ইনশাআল্লাহ!

‘মাকামে মাহমুদ’ বিষয়ে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের অভিমত

(১)

عَنْ حَضْرَتَ عَبْدِ اللهِ بْنِ سَلَامٍ رَضِىَ اللهُ تَـعَالٰى عَنْهُ قَالَ اِنَّ مُـحَمَّدًا صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ عَلٰى كُرْسِىِّ الرَّبِّ بَـيْنَ يَدَىِ الرَّبِّ

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে সালাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। “নিশ্চয়ই কিয়ামতের দিনে হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার কুদরতী আসন মুবারক উনার পাশে আসন মুবারকে অবস্থান করবেন । (তাফসীরে তাবারী ১৭/৫৩২, ফতহুল বারী ১১/৪২৭)

(২)

عَنْ حَضْرَتْ اِبْنِ عُمَرَ رَضِىَ اللهُ تَـعَالٰى عَنْهُ عَسٰى أَنْ يَّبْعَثَكَ رَبُّكَ مَقَامًا مَّـحْمُودًا ‌يَجْلِسُنِيْ ‌مَعَهٗ ‌عَلَى ‌السَّرِيْرِ

হযরত ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত, নিশ্চয়ই আপনার রব তায়ালা আপনাকে মাকামে মাহমূদ উনার মাঝে অধিষ্ঠিত করবেন” মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে উনার পাশে কুদরতী আসন মুবারকে বসাবেন। (আল ফিরদাউস : হাদীছ শরীফ ৪১৫৯)

(৩)

عَنْ حَضْرَتْ عَبْدِ اللهِ بْنِ مَسْعُوْدٍ رَضِيَ اللهُ تَـعَالٰى عَنْهُ قَالَ: إِنَّ اللهَ اتَّخَذَ إِبْـرَاهِيْمَ عَلَيْهِ السَّلَامُ خَلِيْلًا لَهٗ، وَإِنَّ صَاحِبَكُمْ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ خَلِيْلُ اللهِ، وَأَكْرَمُ الْخَلْقِ عَلَى اللهِ، ثُمَّ قَـرَأَ: {عَسٰىۤ أَنْ يَّـبْـعَثَكَ رَبُّكَ مَقَامًا مَّحْمُوْدًا} قَالَ: يُـقْعِدُهٗ عَلَى الْعَرْشِ

“হযরত ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, মহান আল্লাহ পাক সাইয়্যিদুনা হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম উনাকে খলীল করেছেন, তেমনিভাবে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনিও মহান আল্লাহ পাক উনার খলীল ও হাবীব এবং উনার সকল সৃষ্টির মধ্যে অধিক সম্মানিত। অতঃপর তিনি পাঠ করলেন, নিশ্চয়ই আপনার রব আপনাকে মাকামে মাহমূদ উনার মাঝে অধিষ্ঠিত করবেন’ অতপর বললেন, মহান আল্লাহ পাক তিনি উনাকে কুদরতী আরশ মুবারক উনার বিশেষ আসন মুবারকে বসাবেন। [কাশফুল বায়ান আন তাফসিরুল কুরআন ১৬/৪৪৮; লেখক- হযরত আবু ইসহাক আহমদ ইবনে ইব্রাহীম ছায়ালাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি (ওফাত ৪২৭), তাফসীরে বাগবী ৩/১৫৬]

‘মাকামে মাহমুদ’ বিষয়ে হযরত তাবেয়ীন রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের অভিমত

(১)

حَدَّثَـنَا أَبُـوْ بَكْرٍ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ، ثَـنَا اِبْنُ فُضَيْلٍ، عَنْ لَيْثٍ، عَنْ مُجَاهِدٍ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ : { عَسٰىۤ أَنْ يَّـبْـعَثَكَ رَبُّكَ مَقَامًا مَّحْمُوْدًا} قَالَ: ‌يُـقْعِدُهُ ‌مَعَهٗ ‌عَلَى ‌الْعَرْشِ

ইমাম মুজাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণিত রয়েছে “নিশ্চয়ই আপনার রব আপনাকে মাকামে মাহমূদ উনার মাঝে অধিষ্ঠিত করবেন” (সম্মানিত ও পবিত্র সূরা ইসরা শরীফ: সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ ৭৯)। উনার ব্যাখ্যায় বলেন, মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে কুদরতী আরশ মুবারক উনার মধ্যে নিজের পাশে বসাবেন। (জামিউল উলুম লি ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল ৪/১১৬, আস সুন্নাহ লি আবি আছেম ১/৩০৫)

এই বর্ণনার সনদের সংখ্যা বিষয়ে হযরত ইমাম যাহাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন,

عَنْ لَيْثٍ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ عَنْ مُجَاهِدٍ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ {عَسٰىۤ أَنْ يَّـبْـعَثَكَ رَبُّكَ مَقَامًا مَّحْمُوْدًا } قَالَ يُجْلِسُهٗ أَوْ ‌يُـقْعِدُهٗ ‌عَلَى ‌الْعَرْشِ لِـهٰذَا الْقَوْلِ طُرُقٌ خَمْسَةٌ

হযরত লাইছ রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত মুজাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে বর্ণনা করেন, ‘নিশ্চয়ই আপনার রব আপনাকে মাকামে মাহমূদ উনার মাঝে অধিষ্ঠিত করবেন’ বর্ণনাকারী বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে কুদরতী আরশ মুবারক উনার মাঝে বিশেষ আসনে বসাবেন। এই বর্ণনাটি ৫টি সনদে বর্ণিত হয়েছে। (আল উলু লিল আলীয়িল গাফফার ১২৪ পৃষ্ঠা, লেখক- ইমাম যাহাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি)

উল্লেখ্য যে, কোন কোন সনদের রাবী বিষয়ে অভিযোগ থাকলেও ৫টি সনদের বর্ণনা শাওয়াহেদ হিসেবে একে অপরকে সমর্থন করে শক্তিশালী করে। তাছাড়া পূর্ববর্তী উলামায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা এই বিষয়টিকে আক্বীদা হিসেবে গ্রহণ করেছেন। এবং যারা এর বিরোধিতা করেছে তাদের দাঁতভাঙ্গা জবাবও উনারা দিয়েছেন।

এখানে একশ্রেণীর লোক আপত্তি করে যে, উক্ত হাদীছ শরীফে  ‌يُـقْعِدُهٗ ‌مَعَهٗ ‌عَلَى ‌الْعَرْشِ দ্বারা মহান আল্লাহ পাক উনাকেও আরশে বসা বলা হচ্ছে। তারা বুঝাতে চায় আল্লাহ পাক তিনি কি তাহলে আরশে স্থান দখল করে বসবেন? নাউযুবিল্লাহ!

এ বিষয়ে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদা হচ্ছে,

اِنَّهٗ تَـعَالٰي فِيْ جِهَةٍ وَلَا فِيْ مَكَانٍ مِّنَ الْاَمْكِنَةِ وَخَالَفَ فِيْهِ الْمُشَبِّهَةُ

নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি কোন দিক এবং কোন স্থানে নন। কিন্তু পথভ্রষ্ট মুশাব্বিহা ফিরকা এ মতটির বিরোধিতা করে।” (শরহে মাওয়াক্বিফ ৫৭১ পৃষ্ঠা)

কিন্তু কিছু পবিত্র আয়াত শরীফ বা পবিত্র হাদীছ শরীফ দিয়ে বাহ্যিক অর্থে মহান আল্লাহ পাক উনার দেহ, আকার ইত্যাদি মনে হতে পারে তাদের জ্ঞাতার্থে বলা যায় এ ধরণের বর্ণনা সমূহকে “মুতাশাবিহাত” বলা হয়। এ ধরণের আরো অনেক “মুতাশাবিহাত” পবিত্র আয়াত শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ বর্ণিত আছে। যার দ্বারা সরাসরি অর্থ গ্রহণ করা যায়না। সরাসরি অর্থ গ্রহণ করলে, মহান আল্লাহ পাক উনার দেহ ও দেহের যাবতীয় গুণাবলী যথা, আকার আকৃতি, অঙ্গ প্রত্যঙ্গ ও স্থান ইত্যাদির কথা চলে আসে যা কুফরী। অথচ আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের সকল ইমাম-মুজতাহিদ, উলামায়ে কিরাম সকলেই একমত যে, যে সব পবিত্র আয়াত শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ দ্বারা মহান আল্লাহ পাক উনার দেহ তথা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ও আকার-আকৃতি থাকার ধারণা সৃষ্টি হয়, সে সকল পবিত্র আয়াত শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফসমূহ মুতাশাবিহাত এর অন্তর্ভুক্ত । সুতরাং এগুলো জাহিরী বা প্রকৃত অর্থ গ্রহণ করা সুস্পষ্ট কুফরী। কারণ এরূপ অর্থ গ্রহণ করা মহান আল্লাহ পাক উনার ‘জাত’ ও ‘পবিত্রতার’ সম্পূর্ণই খিলাফ।

আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদায় বিশ্বাসী ইমাম-মুজতাহিদ তথা উলামায়ে কিরামগণ উল্লেখিত পবিত্র আয়াত শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ সমূহের জাহিরী বা প্রকৃত অর্থ গ্রহণ না করে উনারা তা’বীলী অর্থ গ্রহণ করেছেন।

যেমন পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার “পবিত্র সূরা হাদীদ শরীফ উনার মধ্যে” বর্ণিত আছে,

وَهُوَ مَعَكُمْ اَيْـنَمَا كُنْـتُمْ

আল্লামা ফখরুদ্দীন রাযী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বিখ্যাত তাফসীর গ্রন্থ “তাফসীরে কবীর” ২৯/২১৫ পৃষ্ঠায় লিখেন,

 (وَهُوَ مَعَكُمْ…….) قَالَ الْمُتَكَلِّمُوْنَ هٰذِهِ الْمَعِيَّةَ اَمَّا بِالْعِلْمِ وَاَمَّا بِالْحِفْظِ وَالْحَرَاسَةِ مَا عَلَى التَّـقْدِيْرِيْنَ فَـقَدْ اِنْـعَقَدَ الْاِجْمَاعُ عَلٰى اَنَّهٗ سُبحَانَهٗ لَيْسَ مَعَنَا بِالْمَكَانِ وَالْجِهَةِ وَالْحِيْزِ

অর্থ: “আক্বাইদ তত্ববিদগণ বলেন, “তিনি তোমাদের সাথে রয়েছেন” এখানে সাথে থাকাটা ইলম, হিফাযত ও তত্বাবধান দ্বারা। তিনি নির্দিষ্টভাবে সবার সাথে নন। কেননা এ ব্যাপারে ইজমা বা ঐক্যমত প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যে, মহান আল্লাহ  পাক তিনি স্থান, দিক ও ক্ষেত্র হিসেবে আমাদের সাথে নন।”

সম্মানিত ও পবিত্র কুরআন শরীফ উনার সম্মানিত ও পবিত্র “আর রহমান” শরীফ উনার ২৭ নং আয়াত শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত আছে

وَيَـبْـقٰى وَجْهُ رَبِّكَ

এই পবিত্র আয়াত শরীফ উনার  وَجْهُ শব্দের অর্থ হচ্ছে চেহারা বা মুখমণ্ডল। কিন্তু আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত উনার কোন মুফাসসিরিনে কিরাম এই অর্থে নেন নাই। আল্লামা আবুল ফযল শিহাবুদ্দীন সাইয়্যিদ মাহমুদ আলূসী বাগদাদী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বিখ্যাত তাফসীর গ্রন্থ “তাফসীরে রুহুল মায়ানী”-এর ১৪/১০৮ পৃষ্ঠায় লিখেন

وَيَـبْـقٰى وَجْهُ رَبِّكَ) اَىْ ذَاتُهٗ عَزَّ وَجَلَّ وَالْـمُرَادُ هُوَ سُبْحَانَهٗ وَتَـعَالٰى فَالْاِضَافَةُ بَـيَانِيَةٌ وَحَقِيْـقَةُ الْوَجْهِ فِى الشَّاهِدِ الْجَارِحَةِ وَاِسْتِعْمَالِهٖ فِى الذَّاتِ مَـجَازٌ

অর্থ: এ পবিত্র আয়াত শরীফ উনার সঠিক অর্থ হলো, “শুধুমাত্র আপনার রব উনার “জাত” অবশিষ্ট থাকবে। এযাফতটি এযাফতে বয়ানিয়াহ। আর “وَجْهٌ” শব্দের প্রকৃত অর্থ হচ্ছে অঙ্গ-প্রতঙ্গ, কিন্তু এখানে ব্যাখ্যা অর্থে অর্থাৎ “জাত” অর্থে ব্যবহৃত হবে।”

আল্লামা ইবনুল হুমাম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বিখ্যাত ও মশহুর কিতাব “আল মুসাইয়ারাহ”এর ৩৩-৩৫ পৃষ্ঠায় লিখেন-

وَعَلٰى نَحْوٍ مَاذَكَرْنَا كُلُّ مَاوَرَدَ مِـمَّا ظَاهِرُهُ الْجِسْمِيَةُ كَالْاُصْبُعِ وَالْقَدَمِ وَالْيَدِ فَاِنَّ الْيَدَ وَكَذَا الْاُصْبُعَ وَغَيْـرَهٗ صِفَةٌ لَّهٗ تَـعَالٰى لَاسَمِعَنِى الْجَارِحَةُ بَلْ عَلٰى وَجْهٍ يَلِيْقُ بِهٖ وَهُوَ سُبْحَانَهٗ اَعْلمُ بِهٖ

অর্থ: “বর্ণিত উছূল মুতাবিক পবত্রি কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার যেসব শব্দের জাহিরী বা প্রকৃত অর্থের দ্বারা মহান আল্লাহ পাক উনার দেহ থাকা বুঝায় যেমন- (اُصْبُعٌ) অঙ্গুলী, (قَدَمٌ) পা, (يَدٌ) হাত এগুলোকে মহান আল্লাহ পাক উনার ছিফত বা গুণ অর্থে ব্যবহার করতে হবে। অর্থাৎ এরূপ অর্থ গ্রহণ করতে  হবে, যা মহান আল্লাহ পাক উনার মর্যাদার উপযুক্ত। আর তা মহান আল্লাহ পাক তিনিই ভাল জানেন। উক্ত শব্দগুলো দ্বারা কখনোই অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ অর্থ নেয়া যাবেনা।”

প্রমাণিত হলো যে, যে সকল পবিত্র আয়াত শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ দ্বারা মহান আল্লাহ পাক উনার দেহ আকার-আকৃতি,  অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ইত্যাদি রয়েছে বলে বুঝা যায় এবং মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য স্থান, কাল ও দিক সাব্যস্ত হয় সে সকল পবিত্র আয়াত শরীফ বা পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের প্রকৃত অর্থ কস্মিনকালেও গ্রহণযোগ্য নয় বরং এ ধরণের পবিত্র আয়াত শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের এরূপ তা’বীল বা ব্যাখ্যা করা অপরিহার্য যেরূপ তা’বীল বা ব্যাখ্যা মহান আল্লাহ পাক উনার শানে প্রযোজ্য ও ছহীহ আক্বীদা সম্মত।

সুতরাং আলোচ্য পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে কুদরতী আরশ মুবারক উনার  মাঝে মহান আল্লাহ পাক উনার বসা সাধারণ কোন বসা নয়। এর তাবীলী অর্থ গ্রহণ করতে হবে।  তাবীলের সুযোগ থাকার পরও যারা এটা গায়ের জোরে অস্বীকার করবে তারা নেহায়েত অজ্ঞ।

আর উপরোল্লিখিত পবিত্র হাদীছ শরীফ সম্পর্কে সর্বজন স্বীকৃত হাফিজুল হাদিছ হযরত ইবনে হাজার আসকালানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বর্ণনা করেন-

وَقَالَ لَيْثٌ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ عَنْ مُجَاهِدٍ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ فِيْ قَـوْلِهٖ تَـعَالٰى مقَامًا مَّحْمُوْدًا يُجْلِسُهٗ مَعَهٗ عَلٰى عَرْشِهٖ ثُمَّ أَسْنَدَهٗ وَقَالَ الْأَوَّلُ أَوْلٰى عَلٰى أَنَّ الثَّانِيَ لَيْسَ بِمَدْفُـوْعٍ لَا مِنْ جِهَةِ النَّـقْلِ وَلَا مِنْ جِهَةِ النَّظْرِ وَقَالَ اِبْنُ عَطِيَّةَ هُوَ كَذٰلِكَ إِذَا حُمِلَ عَلَى مَا يَلِيْقُ بِهٖ وَبَالَغَ الْوَاحِدِيُّ فِيْ رَدِّ هٰذَا الْقَوْلِ وَأَمَّا النَّـقَّاشُ فَـنَـقَلَ عَنْ أَبِيْ دَاوٗدَ صَاحِبِ السُّنَنِ أَنَّهٗ قَالَ مَنْ أَنْكَرَ هٰذَا فَـهُوَ مُتَّـهَمٌ وَقَدْ جَاءَ عَنْ اِبْنِ مَسْعُوْدٍ رَضِىَ اللهُ تَـعَالٰى عَنْهُ عِنْدَ الثَّـعْلَبِيِّ وَعَنْ اِبْنِ عَبَّاسٍ رَضِىَ اللهُ تَـعَالٰى عَنْهُ عِنْدَ أَبِي الشَّيْخِ وَعَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ سَلَامٍ رَضِىَ اللهُ تَـعَالٰى عَنْهُ قَالَ إِنَّ مُحَمَّدًا صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَـوْمَ الْقِيَامَةِ عَلٰى كُرْسِيِّ الرَّبِّ بَيْنَ يَدَي

ইমাম হযরত লাইছ রহমতুল্লাহি আলাইহি মুজাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে মাকামে মাহমূদ উনার ব্যাখ্যায় বলেন মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে উনার কুদরতী আরশ মুবারক উনার মাঝে উনার পাশে বসাবেন। আমি বলি (ইবনে হাজার আসকালানী রহমতুল্লাহি আলাইহি) মাকামে মাহূদ উনার মধ্যে বর্ণিত প্রথম মত (যা দ্বারা শাফায়াত উদ্দেশ্য) এটাই আমার মতে সর্বোত্তম। কিন্তু মাকামে মাহমুদ উনার  মধ্রে দ্বিতীয় অর্থ (যেখানে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে আরশে বসানোর কথা বলা হয়েছে) যা কোন নকলী দলীল দিয়ে ও চিন্তাভাবনা বিশ্লেষণ দ্বারা খন্ডন করা সম্ভব না। যদিও ইমাম ওয়াহেদী এই মতটি রদ করতে চেয়েছেন, কিন্তু ইমাম নাক্কাস রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন ইমাম আবু দাউদ যিনি সুনানে আবু দাউদ উনার লেখক তিনি বলেন, যে এই মতকে অস্বীকার করে সে আমাদের মতে তিরস্কৃত। আর এই ধরণের বর্ণনা হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে সালাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাদের মত সম্মানিত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা করেছেন। বর্ণনায় এসেছে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কিয়ামতের দিনে মহান আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন উনার সামনে বিশেষ আসনে উপবিষ্ট হবেন।” (ফতহুল বারী শরহে ছহীহুল বুখারী ১১/৪২৬)

হাফিজুল হাদীছ হযরত বদরুদ্দীন আইনী রহমতুল্লাহি আলাইহি বুখারী শরীফের ব্যাখ্যাগ্রন্থে বলেন

وَقَالَ الطَّبَرِيّ أَيْضًا قَالَ لَيْثٌ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ عَنْ مُجَاهِدٍ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ فِيْ قَوْلِهٖ مقَامًا مَّحْمُوْدًا يُجْلِسُهٗ مَعَهٗ عَلٰى عَرْشِهٖ ثُمَّ أَسْنَدَهٗ وَبَالَغَ الْوَاحِدِي فِيْ رَدِّ هٰذَا الْقَوْلِ وَنَقَلَ النَّقَّاشُ عَنْ أَبِيْ دَاوٗدَ صَاحِبِ السُّنَنِ أَنَّهٗ قَالَ مَنْ أَنْكَرَ هٰذَا فَهُوَ مُتَّهَمٌ وَقَدْ جَاءَ عَنْ حَضْرَتْ اِبْنِ مَسْعُوْدٍ رَضِيَ اللهُ تَعَالَى عَنْهُ عِنْدَ الثَّعْلَبِيِّ وَعَنْ حَضْرَتْ اِبْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ تَعَالَى عَنْهُ عِنْدَ أبِي الشَّيْخِ عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ سَلَامٍ رَضِيَ اللهُ تَعَالَى عَنْهُ أَنَّ مُحَمَّدًا صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَوْمَ ‌الْقِيَامَةِ ‌عَلٰى ‌كُرْسِيِّ ‌الرَّبِّ ‌بَينَ ‌يَدَيِ ‌الرَّبِّ

ইমাম হযরত তাবারী রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত লাইছ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে হযরত মুজাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে বর্ননা করেন মাকামে মাহমূদ উনার মাঝের অর্থ হলো, মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে কুদরতী আরশ মুবারকে নিজের পাশে বসাবেন। ইমাম ওয়াহেদী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি এটা খন্ডন করতে চাইলে আবু দাউদ শরীফ উনার মুছান্নিফ হযরত আবু দাউদ রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, যারা নূরে মুজাসসাম, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে কুদরতী আরশে পাশে বসানো বিষয়টা অস্বীকার করে তারা তিরস্কৃত। হযরত ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে হযরত ছালাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি , হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে সালাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, নিশ্চয়ই কিয়ামতের ময়দানে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে উনার রব তায়ালা উনার সামনে বিশেষ আসনে বসানো হবে। (উমদাতুল ক্বারী শরহে ছহীহ বুখারী ২৩/১২৩)

নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে এ বিশেষ আসনে রব তায়ালা উনার পাশে বসার পক্ষে দলীল এবং এর বিরোধিদের দাঁতভাঙ্গা জবাব অনেক ইমামই দিয়েছেন তেমনি একজন হচ্ছেন হযরত আবু বকর ইবনু খল্লাল রহমতুল্লাহি আলাইহি (ওফাত ৩১১ হিজরী)। তিনি হাম্বলী মাযহাব উনার বড় ফক্বীহ ছিলেন। তিনি উনার কিতাব ‘আস সুন্নাহ’ উনার মধ্যেও এ বিষয়ের উপর বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। এ বিষয়ে অনেক ইমাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের ফতওয়া জমা করেছেন। যেমন তিনি এ বিষয়ে হযরত ইসহাক ইবনে রাহাওয়াই রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মত  উল্লেখ করেন

وَقَالَ إِسْحَاقُ بْنُ رَاهَوَيْهِ: اَلْإِيْمَانُ بِـهٰذَا الْحَدِيْثِ وَالتَّسْلِيْمُ لَهٗ

হযরত ইসহাক ইবনে রাহাওয়াই রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, এই পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার উপরই ঈমান এবং স্বীকৃত বিষয়। (আস সুন্নাহ লি আবি বকর ইবনে খাল্লাল ১/২১৭)

তিনি আরো উল্লেখ করেন

وَقَالَ عَبْدُ الْوَهَّابِ الْوَرَّاقُ لِلَّذِيْ رَدَّ فَضِيْلَةَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ‌يُقْعِدُهٗ ‌عَلَى ‌الْعَرْشِ فَهُوَ مُتَّهَمٌ عَلَى الْإِسْلَامِ، وَقَالَ إِبْرَاهِيْمُ الْأَصْبَهَانِيُّ: هٰذَا الْحَدِيْثُ حَدَّثَ بِهِ الْعُلَمَاءُ مُنْذُ سِتِّيْنَ وَمِائَةِ سَنَةٍ، وَلَا يَرُدُّهٗ إِلَّا أَهْلُ الْبِدَعِ، قَالَ: وَسَأَلْتُ حَمْدَانَ بْنَ عَلِيٍّ عَنْ هٰذَا الْحَدِيْثِ، فَقَالَ: كَتَبْتُهُ مُنْذُ خَمْسِيْنَ سَنَةً، وَمَا رَأَيْتُ أَحَدًا يَرُدُّهُ إِلَّا أَهْلُ الْبِدَعِ، وَقَالَ إِبْرَاهِيْمُ الْحَرْبِيُّ: حَدَّثَنَا هَارُونُ بْنُ مَعْرُوفٍ، وَمَا يُنْكِرُ هَذَا إِلَّا أَهْلُ الْبِدَعِ، قَالَ هَارُونُ بْنُ مَعْرُوفٍ: هَذَا حَدِيْثٌ يُسَخِّنُ اللهُ بِهٖ أَعْيَنَ الزَّنَادِقَةِ، قَالَ: وَسَمِعْتُ مُحَمَّدَ بْنَ إِسْمَاعِيْلَ السُّلَمِيَّ يَقُوْلُ: مَنْ تَوَهَّمَ أَنَّ مُحَمَّدًا صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَمْ يَسْتَوْجِبْ مِنَ اللهِ عَزَّ وَجَلَّ مَا قَالَ مُجَاهِدٌ فَهُوَ كَافِرٌ بِاللهِ الْعَظِيْمِ، قَالَ: وَسَمِعْتُ أَبَا عَبْدِ اللهِ الْخَفَّافَ يَقُوْلُ: سَمِعْتُ مُحَمَّدَ بْنَ مُصْعَبٍ يَعْنِي الْعَابِدَ يَقُوْلُ: نَعَمْ، ‌يُقْعِدُهُ ‌عَلَى ‌الْعَرْشِ لِيَرَى الْخَلَائِقُ مَنْزِلَتَهٗ

হযরত আব্দুল ওয়াহাব ওয়াররাক রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, যারা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ফযীলত কুদরতী আরশে রব তায়ালা উনার পাশে বসবেন এটা অস্বীকার করতে চায় তারা দ্বীন ইসলাম উনার দৃষ্টিতে অভিযুক্ত। হযরত ইব্রাহীম আছবাহানী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, এই হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন একশ ষাট শতকের উলামায়ে কিরামগণ। সেসময় বিদয়াতিরা (বিদয়াতি বলতে সেসময় বাতিল ফিরকাদের বোঝানো হতো)  ছাড়া কেউ এই হাদীছ শরীফ রদ করার চেষ্টা করেনি। হযরত হারূন ইবনে মারূফ থেকে বর্ণিত, বিদয়াতিরা ছাড়া এটা কেউ অস্বীকার করেনি। হযরত হারূন ইবনে মারূফ রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, এই হাদীছ শরীফ দ্বারা আল্লাহ পাক যিন্দীকদের চক্ষুজ্বালার কারণ করে দিয়েছেন।.. মুহম্মদ ইবনে মুসাইয়াব (ওফাত ২২৮) থেকে বর্ণনা এসেছে, তিনি বলেন, হ্যাঁ, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে কুদরতি আরশে বসানো হবে যাতে সমগ্র সৃষ্টি তাদের অবস্থান থেকে এই শান মুবারক দেখতে পারে। (আস সুন্নাহ লি আবি বকর ইবনে খল্লাল ১/২১৭)

আরো বর্ণিত আছে

مَنْ رَدَّ هٰذِهِ الْأَحَادِيْثَ فَهُوَ مُبْتَدِعٌ ضَالٌّ. قَالَ: مَا أَدْرَكْنَا أَحَدًا يَرُدُّهٗ إِلَّا مَنْ فِي قَلْبِهٖ بَلِيَّةٌ، يُهْجَرُ وَلَا يُكَلَّمُ

যারা এই পবিত্র হাদীছ শরীফ সমূহ অস্বীকার করতে চায় তারা বিদয়াতি, পথভ্রষ্ট। আমরা এমন একজনও দেখি নাই যাদের অন্তরে রোগ আছে তারা ছাড়া কাউকে এটা অস্বীকার কিংবা বর্জন করতে। (আস সুন্নাহ লি আবি বকর ইবনে খল্লাল ১/২৫৯)

হযরত আবু বকর ইবনু খল্লাল রহমতুল্লাহি আলাইহি (ওফাত ৩১১ হিজরী) তিনি উনার কিতাবে এত ব্যাপক আলোচনা করেছনে যে অস্বীকারকারীদের তিনি ছিন্নভিন্ন করে দিয়েছেন-

قَالَ: ‌يُقْعِدُهُ ‌مَعَهُ ‌عَلَى ‌الْعَرْشِ ، قَالَ أَبُوْ بَكْرِ بْنُ أَبِيْ طَالِبٍ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ: مَنْ رَدَّهُ فَقَدْ رَدَّ عَلَى اللهِ عَزَّ وَجَلَّ، وَمَنْ كَذَّبَ بِفَضِيْلَةِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَدْ كَفَرَ بِاللهِ الْعَظِيْمِ

হযরত আবু বকর ইবনে আবী ত্বালিব রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, যারা মাহান আল্লাহ পাক উনার সাথে হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কুদরতী আরশ মুবারকে বসা অস্বীকার করতে চায় তারা মূলত মহান আল্লাহ পাক উনাকেই অস্বীকার করে। যারা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ফযীলত মুবারক অস্বীকার করে তারা মূলত আল্লাহ পাক উনার সাথে কুফরী করে। (আস সুন্নাহ লি আবি বকর ইবনে খল্লাল ১/২১৫)

সূতরাং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এই সুমহান শান মুবারক অস্বীকার কারীরা কি পরিমাণ ভ্রান্তিতে নিমজ্জিত সেটা চিন্তা ও ফিকিরের বিষয়।

এ মাসয়ালার উপর উৎকৃষ্ট আলোচনা করেছেন হযরত আবু বকর মুহম্মদ ইবনুল হুসাইন ইবনু আব্দুল্লাহ আজুরী বাগদাদী রহমতুল্লাহি আলাইহি (ওফাত ৩৬০ হিজরী)। উনার লিখিত কিতাব “আশ শারিয়াহ”তে লিখেন-

قَالَ مُحَمَّدُ بْنُ الْحُسَيْنِ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ وَأَمَّا حَدِيْثُ مُـجَاهِدٍ فِي فَضِيْلَةِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَتَفْسِيْرُهٗ لِهَذِهِ الْآيَةِ: أَنَّهُ ‌يُقْعِدُهُ ‌عَلَى ‌الْعَرْشِ، فَقَدْ تَلَقَّاهَا الشُّيُوخُ مِنْ أَهْلِ الْعِلْمِ وَالنَّقْلِ لِحَدِيثِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ، تَلَقَّوْهَا بِأَحْسَنِ تَلَقٍّ ، وَقَبِلُوهَا بِأَحْسَنِ قَبُولٍ، وَلَمْ يُنْكِرُوهَا، وَأَنْكَرُوا عَلَى مَنْ رَدَّ حَدِيثَ مُجَاهِدٍ إِنْكَارًا شَدِيدًا وَقَالُوا: مَنْ رَدَّ حَدِيْثَ مُجَاهِدٍ فَهُوَ رَجُلٌ سُوْءٌ قُلْتُ: فَمَذْهَبُنَا وَالْحَمْدُ لِلّٰهِ قَبُوْلٌ مَا رَسَمْنَاهُ فِي هٰذِهِ الْمَسْأَلَةِ مِمَّا تَقَدَّمَ ذَكَرْنَا لَهٗ، وَقَبُوْلُ حَدِيْثِ مُجَاهِدٍ، وَتَرْكُ الْمُعَارَضَةِ وَالْمُنَاظَرَةِ فِي رَدِّهِ ، وَاللهُ الْمُوَفِّقُ لِكُلِّ رَشَادٍ وَالْمُعِينُ عَلَيْهِ ، وَقَدْ حَدَّثَنَاهُ جَمَاعَةٌ

মুহম্মদ ইবনে হুসাইন রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, (মাকামে মাহমূদ উনার) পবিত্র আয়াত শরীফ উনার তাফসীরে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে আরশে বিশেষ আসনে বসানো হবে, হযরত মুজাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ব্যাখ্যা দ্বারা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ফযীলত প্রমাণ হয়। উলামায়ে কিরাম উনাদের মধ্যে শায়েখগণ এই মতকে গ্রহণ করেছেন এবং পবিত্র হাদীছ শরীফ হিসাবে লিপিবদ্ধও করেছেন। উনারা এটা  সর্বোত্তম স্বীকৃতি দিয়েছেন। উনারা এটা সর্বোত্তম গ্রহণযোগ্যতার সাথে গ্রহণ করেছিলেন। কেউ এটা অস্বীকার করেননি। হযরত মুজাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাকে অস্বীকার করা কঠিন অবজ্ঞা। বলা হয়েছে, যারা হযরত মুজাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাকে অস্বীকার করে তারা মানুষ হিসাবে খুবই নিকৃষ্ট। আলহামদুলিল্লাহ এটাই আমাদের মাযহাব যা আমরা পূর্বে উল্লেখ করেছি যা কবুলযোগ্য। এবং মুজাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার পবিত্র হাদীছ শরীফও গ্রহণ করে নিয়েছি। এবং ত্যাগ করেছি সকল বিরোধিতা ও বির্তক সৃষ্টিকারীদের। মহান আল্লাহ পাক তৌফিক দান করুন সুপথ পেতে সাহয্য করুন। (আশ শারিয়াহ লি আজুরী ৪/১৬১২; বর্ণনা ১০০০)

এ বিষয়ের উপর চমৎকার একটা স্বপ্নের দলীল রয়েছে। হযরত মুহম্মদ বিন আলী সিরাজ রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে স্বপ্নের মাধ্যমে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দীদারে ধন্য হয়ে এ বিষয়টা ফয়সালা এসেছে এভাবে-

أَخْبَرَنِـي الْحَسَنُ بْنُ صَالِحٍ اَلْعَطَّارُ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ عَلِيٍّ السِّرَاجِ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ قَالَ رَأَيْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي النَّوْمِ فَقُلْتُ إِنَّ فُلَانًا التِّرْمِذِيَّ يَقُوْلُ إِنَّ اللهَ لَا يُقْعِدُكَ مَعَهٗ عَلَى الْعَرْشِ وَنَحْنُ نَقُوْلُ بَلْ يُقْعِدُكَ فَأَقْبَلَ عَلٰى شِبْهِ الْمُغْضِبِ وَهُوَ يَقُوْلُ بَلٰى وَاللهِ بَلٰى وَاللهِ يُقْعِدُنِيْ عَلَى الْعَرْشِ فَانْتَبَهْتُ بِحَيْثُ

হযরত হাসান ইবনে ছলেহ আত্তার রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি মুহম্মদ ইবনে আলী সিরাজ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, মুহম্মদ বিন আলী সিরাজ রহমতুল্লাহি আলাইহি একদিন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে স্বপ্নে দেখে জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! অমুক তিরমিযবাসী আপনাকে কুদরতীভাবে আরশে মহান আল্লাহ পাক উনার সাথে বসানোর বিষয়টা অস্বীকার করে, কিন্তু আমরা বলি আপনাকে সম্মানিত আসন মুবারকে বসানো হবে। তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি অনেক জালালী শান মুবারক প্রকাশ করে বললেন, মহান আল্লাহ পাক উনার কসম, অবশ্যই মহান আল্লাহ পাক উনার কসম, অব্যশই মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাকে কুদরতী আরশ মুবারকে বসাবেন। অতঃপর এ অবস্থায় আমি সজাগ হয়ে যাই।” (কিতাবুল আরশ লিয যাহাবী পৃষ্ঠ ২২৪; বর্ণনা ১৯৭, আল উলু লিল আলীয়িল গাফফার ১৭১ পৃষ্ঠা, মাহসিনু তাবিল ৬/৪৯৫)

হাম্বলী মাযহাবের ইমাম হযরত ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং উনার আওলাদ আব্দুল্লাহ ইবনে আহমদ রহমতুল্লাহি আলাইহি এ বিষয়ে ফতোয়া দিয়েছেন-

أَنَّ اِبْنَ الْإِمَامَ أَحْمَدَ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ قَالَ عَقِيْبٌ قَوْلَ مُـجَاهِدٍ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ أَنَا مُنْكِرٌ عَلٰى كُلِّ مَنْ رَدَّ هٰذَا الْحَدِيْثَ وَهُوَ عِنْدِيْ رَجَلٌ سُوْءٌ مُتَّهَمٌ سَـمِعْتُهٗ مِنْ جمَاعَةٍ وَمَا رَأَيْتُ مُحَدِّثًا يُنْكِرُهٗ وَعِنْدَنَا إِنَّمَا تُنْكِرُهُ الْجَهْمِيَةُ وَقَدْ حَدَّثَنَا هَارُوْنُ بْنُ مَعْرُوْفٍ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ فُضَيْلٍ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ عَنْ لَيْثٍ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ عَنْ مُجَاهِدٍ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ فِيْ قَوْلِهٖ {عَسٰى أَنْ يَّبْعَثَكَ رَبُّكَ مَقَامًا مَّـحْمُوْدًا} قَالَ يُقْعِدُهٗ عَنِ الْعَرْشِ فَحَدَّثْتُ بِهٖ أَبِيْ رَحْمَةُ اللهِ فَقَالَ لَمْ يَقْدِرْ لِيْ أَنْ أَسْمَعُهٗ مِنْ اِبْنِ فُضَيْلٍ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ بِحَيْثُ أَنَّ الْمَرْوذِيَّ رَوٰى حِكَايَةً بِنُزُوْلِ عَنْ إِبْرَاهِيْمَ بْنِ عَرَفَةَ سَمِعْتُ اِبْنَ عُمَيْرٍ يَقُوْلُ سَمِعْتُ أَحْمَدَ بْنَ حَنْبَلٍ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ يَقُوْلُ ‌هٰذَا ‌قَدْ ‌تَلَقَّتْهُ ‌الْعُلَمَاءُ ‌بِالْقُبُوْلِ

হযরত ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ছেলে বর্ণনা করেন, যে ব্যক্তি ইমাম মুজাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বর্ণিত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার বিরোধিতা করবে আমি তাকে প্রত্যাখান করি, বিরোধিতাকারীরা আমার মতে তিরষ্কৃত ও নিকৃষ্ট। আমি এই বর্ণনা মুহাদ্দিছিনে কিরাম উনাদের বিরাট এক জামায়াত থেকে শ্রবণ করেছি, হযরত মুজাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বিরোধিতা করেছেন এমনটি কাউকে পাইনি। শুধুমাত্র জাহমিয়া ফিরকার লোকেরা এর বিরোধিতা করেছে।….. হযরত মুজাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে বর্ণনা করেন,  নিশ্চয়ই আপনার রব আপনাকে মাকামে মাহমূদ উনার মাঝে অধিষ্ঠিত করবেন’ এর ব্যাখ্যা করেন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে পবিত্র কুদরতী আরশে বসানো হবে। আর এ হাদীছ শরীফখানা আমার সম্মানিত পিতা (হযরত আহমদ ইবনে হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি) থেকেও শুনেছি। হযরত ইবনে উমায়ের রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, আমি হযরত আহমদ ইবনে হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহিকে বলতে শুনেছি, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে পবিত্র কুদরতী আরশে বসানোর বর্ণনা উলাময়ে কিরাম উনাদের নিকট (তালাক্কতহু উলামাউ বিল কবুল) সর্বজন স্বীকৃতভাবে গৃহীত হয়েছে। (আল উলু লিল আলীয়িল গাফফার ১৭০ পৃষ্ঠা)

সর্বজন স্বীকৃত এই আক্বীদার বিরোধিতাকারীরা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত থেকে খারিজ, পথভ্রষ্ট। যারা বিরোধিতা করবে তাদের অন্তরে খারেজী আক্বীদার ছোঁয়া থাকায় তা তাদের জন্য নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত শান মুবারক মেনে নেয়ার পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়। নাউযুবিল্লাহ।

হযরত কাজী আবু ইয়ালা মুহম্মদ ইবনে হুসাইন ইবনুল ফাররাহ (ওফাত ৪৫৮ হিজরী) রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন-

قَالَ أَبُوْ بَكْرٍ أَحْمَدُ بْنُ سَلْمَانَ الْنَجَّادُ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ ‌لَوْ ‌أَنَّ ‌حَالِفًا ‌حَلَفَ ‌بِالطَّلَاقِ ‌ثَلَاثًا أَنَّ اللهَ تَعَالٰى يُقْعِدُ مُـحَمَّدًا صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَعَهٗ عَلَى الْعَرْشِ وَاسْتَفْتَانِيْ فِيْ يَـمِيْنِهٖ لَقُلْتُ لَه: صَدَقَتْ فِيْ قَوْلِكَ وَبَرَرَتْ فِيْ يَـمِيْنِكَ، وَامْرَأَتُكَ عَلٰى حَالِهَا، فَهٰذَا مَذْهَبُنَا وَدِيْنُنَا وَاِعْتِقَادُنَا، وَعَلَيْهِ نَشَأْنَا، وَنَحْنُ عَلَيْهِ إِلٰى أَنْ نَّمُوْتَ إنْ شَاءَ اللهُ فَلَزِمْنَا الْإِنْكَارُ عَلٰى مَنْ رَدَّ هٰذِهِ الْفَضِيْلَةَ الَّتِيْ قَالَتْهَا الْعُلَمَاءُ وَتَلَقَّوْهَا بِالقْبُوْلِ، فَمَنْ رَدَّهَا فَهُوَ مِنَ الْفِرَقِ الْـهَالِكَةِ

হয়রত কাজী আবু ইয়ালা ফাররা রহমতুল্লাহি আলাইহি বর্ণনা করেন, বিখ্যাত মুহাদ্দিছ হযরত আবু বকর ইবনে সুলাইমান নাজ্জাদ রহমতুল্লাহি আলাইহি (২৫৩-৩৪৮ হিজরী) বর্ণনা করেন, কেউ যদি শপথ করে মহান আল্লাহ পাক উনার সাথে কুদরতী আরশ মুবারকে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে বসানো  অসত্য ও অবাস্তব তাহলে জেনে রেখো তার আহলিয়া (স্ত্রী) তিন তালাক হয়ে যাবে। আমি এটাই বলবো এটাই সত্য কথা এটাই সঠিক। তার স্ত্রী তালাক হয়ে যাবে। এটাই আমাদের মাযহাব, এটাই আমাদের দ্বীন, এটাই আমাদের আক্বীদাহ। এটাই আমাদের পরিচয়। ইংশাআল্লাহ আমরা মৃত্যু পর্যন্ত এ বিশ্বাসের উপরই থাকবো। আর উলামায়ে কিরাম সর্বজন স্বীকৃতির সাথে গ্রহণ করেছেন আর এ সুমহান ফযীলত যারা অস্বীকার করেছে আমরা তাদের নিন্দা করবো। আর যারা অস্বীকৃতি দিয়েছে তারাই ধ্বংসপ্রাপ্ত (খারেজী) ফিরকার অন্তর্ভুক্ত।  [ইবতাল আত তাবীলাত লি আখবারিছ ছফাহাত ৪৮৫ পৃষ্ঠা, লেখক- কাজী আবু ইয়ালা মুহম্মদ ইবনে হুসাইন ইবনুল ফাররাহ (ওফাত ৪৫৮ হিজরী), আল উলু লিল আলীয়িল গাফফার ১৭১ পৃষ্ঠা, লেখক- ইমাম যাহাবী রহমতুল্লাহিআলাইহি)

নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আরশ মুবারকে বসার বিষয়টা যারা অস্বীকার করে তাদের কাফির ফতওয়া দেয়া হয়েছে এবং তাদের মৃত্যুদণ্ড দেয়ার শাস্তিও ঘোষণা করা হয়েছে,

وَأَخْبَرَنِيْ أَحْمَدُ بْنُ أَصْرَمَ الْمُزَنِيُّ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ، بِـهٰذَا الْحَدِيْثِ، وَقَالَ: مَنْ رَدَّ هَذَا فَهُوَ مُتَّهَمٌ عَلَى اللهِ وَرَسُوْلِهٖ، وَهُوَ عِنْدَنَا كَافِرٌ، وَزَعَمَ أَنَّ مَنْ قَالَ بِـهٰـذَا فَهُوَ ثَنَوِيُّ، فَقَدْ زَعَمَ أَنَّ الْعُلَمَاءَ وَالتَّابِعِيْنَ ثَنَوِيَّةٌ، وَمَنْ قَالَ بِهٰذَا فَهُوَ زِنْدِيْقٌ يُقْتَلُ

হযরত আহমদ ইবনে আছরামা মুজান্নি রহমতুল্লাহি আলাইহি (আল্লাহ পাক উনার সাথে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আরশে কুদরতীভাবে বসার) উক্ত বর্ণনা সম্পর্কে বলেন, যে এটা অস্বীকার করবে সে মহান আল্লাহ পাক এবং উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের দ্বারা তিরষ্কৃত। তারা আমাদের নিকট কাফির। যারা রদ করার ধারণা করবে, তারা মূলত দ্বৈতবাদী। তারাই অর্থাৎ দ্বৈতবাদীরাই  ধারণা করে উলামায়ে কিরাম এবং তাবেয়ীনগণ দ্বৈতবাদী। যারা এরূপ বলে তারা যিন্দিক তাদের মৃত্যুদণ্ড দেয়া উচিত। (আস সুন্নাহ লি আবু বকর ইবনে খল্লাল ১/২১৫; বর্ণনা ২৪৭)

যাদের অন্তরে রোগ আছে যেমন খারেজী আক্বীদায় আক্রান্ত তাদের পক্ষে এই বিষয় মেনে নেয়া কষ্টকর। খারেজীরা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এমন সুমহান শান মুবারক মানতে পারে না। যা উলামায়ে কিরাম আলোচনা করেছেন।

বোঝার বিষয় হচ্ছে, মহান আল্লাহ পাক তিনি সৃষ্টিকে সেদিন কিয়ামতের ময়দানে দেখাবেন উনার মহাসম্মানিত হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কি অপরিসীম শান মুবারক, উনার কি সুমহান মর্যাদা মুবারক। মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সাথে বসিয়ে কিয়ামতের দিনে সেটা সবাইকে দেখিয়ে দিবেন। দুনিয়াবাসী উনার হাক্বীকী শান মুবারক বুঝতে ব্যর্থ কিন্তু সেদিন সবার সামনে তা থাকবে উন্মুক্ত। সুবহানাল্লাহ!

সর্বোপরি আমাদের শায়েখ প্রাণের আঁকা সাইয়্যিদুনা মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা হযরত সুলত্বনুন নাছীর আলাইহিস সালাম তিনি সুমহান পবিত্র “সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ” উনার মাক্বাম বিষয়ে বলেন, “সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ উনার মাক্বামটা কঠিন একটা বিষয়। এই মাক্বামটাতো মানুষ হাছিল করতে পারেনি। এটা অনেক বড় মাক্বাম। এটা আমাকে দেখানো হয়েছে এবং হাদিয়া করা হয়েছে অর্থাৎ প্রদান করা হয়েছে এবং এই আসনের উপর উপবেশন করানো হয়েছে অর্থাৎ বসানো হয়েছে অথার্ৎ দেয়া হয়েছে। এটা অনেক বড় মাক্বাম। এটা ভাষা দিয়ে প্রকাশ করা যাবে না। এটা সরাসরি মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অর্থাৎ উনাদের মধ্যে মাক্বামটা। আসন মুবারকগুলো কাছাকাছি।” আসলে এটাই চুড়ান্ত মাক্বাম। বেমেছাল শান। মহান আল্লাহ পাক আমাদের সকলকে নূরে মুজাসসাম, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শান মুবারকে পরিপূর্ণ আদব ও বিশুদ্ধ আক্বীদা পোষণ করার তৌফিক দান করুন। আমীন।

-খাজা মুহম্মদ আবু সালাহুদ্দীন

 

 

আলআছদাকু, আলআত্বহারু, আলআত্বইয়াবু, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নাম মুবারক শেষে সংক্ষেপে (সাঃ, দঃ) দুরূদ শরীফ লিখা প্রসঙ্গে

আওওয়ালু শাফিয়িন, আওওয়ালু মুশাফ্ফায়িন, আওওয়ালু মাঁইইয়ুর্হারিক হালক্বাল জান্নাতি হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে ‘বিশ্বনেতা’, ‘মহামানব’, ‘মহাপুরুষ’, ইত্যাদি শব্দ দ্বারা সম্বোধন করা প্রসঙ্গে

ইমামুল মুরসালীনা, ইমামুন্ নাবিইয়ীনা, ইমামুল উম্মাতি, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিতা আম্মা সাইয়্যিদাতুন্ নিসায়ি আলাল আলামীন হযরত আমিনা আলাইহাস্্ সালাম রচিত সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ না’ত শরীফ প্রমাণ করে যে, তিনি ইলমে গইব-এর অধিকারিণী ছিলেন

আলবাশীরু, আলবালীগু, আলবাদরুল মুনীরু, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আহলিয়াগণ অর্থাৎ উম্মুল মু’মিনীন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুন্না উনাদের ফাযায়িল-ফযীলত ও পবিত্রতা

জালীলুল ক্বদরি, জামীলুয যিকরি, জাওয়ামিউল কালিমি, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উর্ধ্বতন পূর্বপুরুষ উনারা ছিলেন পবিত্র থেকে পবিত্রতম