পবিত্র মাহে শাওওয়াল-যিলক্বদ শরীফ এবং উনাদের প্রাসঙ্গিক আলোচনা -আল্লামা মুফতী সাইয়্যিদ শুয়াইব আহমদ

সংখ্যা: ২৫৪তম সংখ্যা | বিভাগ:

মাহে রমাদ্বান শরীফ উনার পরবর্তী মাসটিই মাহে শাওওয়াল শরীফ। রমাদ্বান শরীফ মাস উনার মধ্যে কি নেক কাজ করা হয়েছে, শাওওয়াল শরীফ মাসে সে সম্পর্কে চিন্তা করা উচিত। হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, আমি একবার ঈদুল ফিতরের দিন আমীরুল মু’মিনীন, খলীফাতুল মুসলিমীন সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার নিকট গিয়ে দেখতে পেলাম তিনি ঘরের দরজা বন্ধ করে ক্রন্দন করছেন। আমি জিজ্ঞেস করলাম, হে আমীরুল মু’মিনীন! মানুষ আজ আনন্দ করছে আর আপনি কাঁদছেন এর কারণ কি? তিনি বললেন, যারা আনন্দ করছে তারা যদি জানতো তবে আনন্দ করতো না। এ বলে তিনি আবার ক্রন্দন শুরু করলেন আর বললেন, তাদের আমল যদি কবুল হয়ে থাকে তবে তারা আনন্দিত হতে পারে আর যদি তাদের আমল কবুল না হয়ে থাকে তাহলে তাদের কাঁদা উচিত। আর আমার জানা নেই, আমি কবুলযোগ্যদের অন্তর্ভুক্ত না কি প্রত্যাখ্যাতদের অন্তর্ভুক্ত।

স্মরণীয় যে, দিবা রাত্র সকাল সন্ধ্যার আবর্তনের সাথে মানুষের হায়াতও হ্রাস পাচ্ছে অথচ তারা নিশ্চিন্ত মনে বসে আছে। মাহে রমাদ্বান শরীফ আমাদের মাঝ থেকে চলে গেছে, শাওওয়াল শরীফ মাস এসেছে। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেছেন, “যে ব্যক্তি মাহে রমাদ্বান শরীফ উনার রোযা রাখার পর শাওওয়াল শরীফ মাস উনার মধ্যে ৬টি রোযা রাখে সে যেন পুরো বছর রোযা রাখলো। সুবহানাল্লাহ! উক্ত প্রতিটি রোযা উনার বিনিময়ে মহান আল্লাহ পাক তিনি তাকে চল্লিশ দিনের রোযার ছাওয়াব দান করবেন, তাকে কবরের আযাব থেকে মুক্তি দিবেন এবং ক্বিয়ামতের কষ্ট ও বিভীষিকা থেকে পরিত্রাণ দিবেন। সুবহানাল্লাহ!

মাহে শাওওয়াল শরীফ উনার পরবর্তী মাস মাহে যিলক্বদ শরীফ। চারটি হারাম বা সম্মানিত মাস উনাদের মধ্যে মাহে যিলক্বদ শরীফ একটি। এ সম্মানিত মাস উনার মধ্যেও তিনটি রোযা রাখা খাছ সুন্নত মুবারক উনার অন্তর্ভুক্ত। এ মাসে রোযা রাখার ফযীলত সম্পর্কে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, যে ব্যক্তি যিলক্বদ মাসে একদিন রোযা রাখবে মহান আল্লাহ পাক তিনি তার আমলনামায় একটি মকবুল হজ্জের ছাওয়াব লিখে দিবেন। সুবহানাল্লাহ!

মূলত মাহে যিলক্বদ শরীফ বিশেষভাবে হজ্জ ও উমরাহ পালন করার মাস। যেমন পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে যে, শাওওয়াল, যিলক্বদ ও যিলহজ্জ এ তিনটিই হচ্ছে সম্মানিত হজ্জ উনার মাস।

বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ কিতাবদ্বয়ে ছাহাবী হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত রয়েছে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি চারবার উমরাহ করেছেন। তিনটিই করেছেন সম্মানিত যিলক্বদ শরীফ মাসে। আর শেষোক্ত উমরাহটি করেছেন সম্মানিত যিলহজ্জ শরীফ মাসে পবিত্র হজ্জ উনার সাথে।

উল্লেখ্য, বছরের যে কোন সময়ে উমরাহ করা যায়। তবে ৯ই যিলহজ্জ শরীফ হতে ১৩ই যিলহজ্জ শরীফ পর্যন্ত এই পাঁচদিন উমরাহ করা মাকরূহ। কেননা এ কয়দিন পবিত্র হজ্জ উনার জন্য নির্দিষ্ট।

পবিত্র হজ্জ ও উমরাহ উনাদের ফযীলত সম্পর্কে অনেক হাদীছ শরীফ বর্ণিত রয়েছে। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, হজ্জ ও উমরাহ সম্পাদনকারীগণ উনারা হচ্ছেন মহান আল্লাহ পাক উনার দাওয়াতী মেহমান। উনারা দুআ করা মাত্রই মহান আল্লাহ পাক তিনি তা কবুল করেন এবং ক্ষমাপ্রার্থনা করা মাত্রই তিনি তাদেরকে ক্ষমা করে দেন। সুবহানাল্লাহ! (ইবনে মাজাহ শরীফ)

বস্তুত বাইতুল্লাহ শরীফ বা কা’বা শরীফ হচ্ছেন যমীনের বুকে প্রথম ঘর। এ সম্মানিত ঘর উনাকে সর্বপ্রথম মহান আল্লাহ পাক তিনি মুসলমান উনাদের ইবাদতের উদ্দেশ্যে হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদের দ্বারা নির্মাণ করে দেন। এ সম্মানিত ঘর এবং উনার আশপাশ সবকিছুই পবিত্র এবং মহান আল্লাহ পাক উনার নিদর্শনাবলী দ্বারা বেষ্টিত। সুবহানাল্লাহ!

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে, যতদিন মানুষ এ সম্মানিত ঘর উনার প্রতি যথাযোগ্য সম্মান প্রদর্শন করবে ততদিন তারা সুখÑশান্তি ও নিরাপদে থাকবে। আর যখন উনার সম্মান নষ্ট করবে তখন তাদের উপর ধ্বংস নেমে আসবে। (ইবনে মাজাহ শরীফ, মিশকাত শরীফ)

এ পবিত্র হাদীছ শরীফ উনারই বাস্তবতা আজ পুরোপুরিভাবে পরিলক্ষিত হচ্ছে, ছবি ও বেপর্দা হারাম ও জাহান্নামী হওয়ার কারণ। যখন সেখানে ক্যামেরা, সিসিটিভি ও মোবাইল ফোনের মাধ্যমে হরদম ছবি তুলে এবং মহিলারা হাত, মুখ-চেহারা খুলে বেপর্দাভাবে চলাচল করে পবিত্র কা’বা শরীফ উনার সম্মান নষ্ট করছে। তাই বর্তমানে মুসলমানদের এই কঠিন অবস্থা। নাউযুবিল্লাহ!

অর্থাৎ, সেখানকার ইহুদী মদদপুষ্ট ওহাবী সরকার হারামাইন শারীফাইন উনাদের সম্মান নষ্ট করার পাশাপাশি সম্মানিত যিলহজ্জ শরীফ মাসসহ অন্যান্য আরবী মাসের তারিখ পরিবর্তন করে মুসলমান উনাদের পবিত্র হজ্জ, ঈদ, কুরবানী, রোযা, নামায এবং ফযীলতপুর্ণ দিন ও রাত্রীর ইবাদত নষ্ট করে দিচ্ছে।

অতএব, এ বিষয়ে অবিলম্বে সারাবিশ্বের সমস্ত মুসলমান সরকার ও জনগণকে সজাগ ও সোচ্চার হতে হবে এবং প্রতিবাদ জানাতে হবে।

মাহে রজব ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

মাহে রমাদ্বান শরীফ ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

মাহে শাওওয়াল ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

মাহে রবীউল আউয়াল শরীফ ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

মাহে যিলক্বদ এবং তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা