পহেলা বৈশাখ বাংলা সনের প্রথম দিন। দিনটি পালিত হচ্ছে বাঙালীর ঐতিহ্য ধরে রাখার চেতনা হিসেবে। মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ইত্যাদি পরিচয়ের বাইরে আলাদাভাবে এ বাঙালী পরিচয়ের দাবী। কিন্তু পহেলা বৈশাখ উদযাপনকারীরা একদিকে যেমন জানেনা যে, বাংলা সনের ‘সন’ কথাটি আরবী। ‘পহেলা’ শব্দটি ফারসী। আর হালখাতা শব্দতো প্রকাশ্য মুসলমানী।

সংখ্যা: ১৭৬তম সংখ্যা | বিভাগ:

তারা আরো মালুম করতে চাননা যে, চৈত্র সংক্রান্তি পালনের পর পহেলা বৈশাখ ঘটপূজা, গণেশপূজাসহ হিন্দুদের নিখাদ কিছু আচার পর্ব পালনের দিন। পাশাপাশি তা বৌদ্ধদেরও পূজা অর্পণের দিন। বার্মার বারো শতকের দি গ্লাস প্যালেন এনিকলে এ সংক্রান্ত ও বৈশাখী অনুষ্ঠানের উল্লেখ দেখতে পাওয়া যায়।

পহেলা বৈশাখ প্রাচীন বৌদ্ধ ক্যালেন্ডারে এক বিশেষ স্থান করে আছে। বার্মা, থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার নথিপত্রে তার উল্লেখ রয়েছে।

সুতরাং পহেলা বৈশাখকে যারা সার্বজনীন বাঙালী উৎসব বলে, ধর্মীয় প্রেক্ষিতের থেকে আলাদা করে বর্ণনা করতে চায় তারা আসলে বোকার স্বর্গে বাস করে।

এ মহলটি অজ্ঞতার সীমাহীন আরেক স্পর্ধা এই যে, এক্ষেত্রে তারা অন্যসব ধর্মের সাথে ইসলামকেও গুলিয়ে ফেলে। মুসলমানকেও একই মাপে মূল্যায়ণ করে। তাতে অবশ্য মুসলমান নামধারীও অনেকে আছে। সুযোগ পেলে এরাই আবার ওংষধস রং ঃযব পড়সঢ়ষবঃপ পড়ফব ড়ভ ষরভব  উক্তি করতে ভুলে না।

এক্ষেত্রে একটি বিষয় স্পষ্ট হয় যে, কোন বিষয়ই ও কোন কিছুই এবং কোন সময় বা সংস্কৃতিই ইসলামী পরিম-লের পর্যবেক্ষণের বাইরে নয়। ইসলামের প্রেক্ষিত পর্যালোচনার ঊর্ধ্বে নয়। যদি তাই হয়ে থাকে তাহলে পহেলা বৈশাখের সংস্কৃতিকে মুসলমানের জন্য ইসলামের দৃষ্টিতে অত্যাবশ্যকতা ও তা মূল্যায়ণ ব্যতীত গত্যান্তর কোথায়?

মুসলমান হিসেবে কোন সংস্কৃতি বিচার্যের ক্ষেত্রে তার উৎস অনুসন্ধান তার স্বকীয়তা এবং মূল্যায়ন বজায় রাখাটা ইসলামের দৃষ্টিতে অনিবার্য।

পহেলা বৈশাখের উৎস অনুসন্ধানে হিন্দু আচার-সংস্কার বিশ্বাস ও লৌকিকতার বিশাল সম্ভারই কেবল নয় বরং তা হিন্দু সংস্কৃতির নিবিড় বন্ধন ও গভীর সম্পৃক্ত হিসেবেই উদঘাটিত, প্রতিভাত তথা প্রমাণিত হয়।

এ সম্পর্কিত তথ্য-প্রমাণ বিস্তর। প্রসঙ্গত: জনৈক হিন্দু লেখিকার নিম্নোক্ত স্বীকারোক্তিতেও তার অনেক কিছু ফুটে উঠে।

“পহেলা বৈশাখ দোর গোড়ায়। আরও একটি বৎসর শেষ হলো। মনে পড়ে ছোট বেলায় চৈত্র মাসের সংক্রান্তিতে কী ঘটা করে উৎসব চলত! পুরনো বৎসরের সমস্ত আবর্জনা দূর করার জন্যে সেদিন গ্রামের ঘরে ঘরে, বিশেষত হিন্দু সম্প্রদায়ের ভেতর, বাড়িঘর হাঁড়িপাতিল কাপড়জামা ধোয়ার ধুম পড়ে যেত। ব্যবহৃত সব মাটির হাঁড়িপাতিল ফেলে দেয়া হতো সেদিন। প্রতিটি ঘর ঝাড় মোছ করে ঝুল ঝেড়ে, বিছানা চাদর কাপড় জামা সব সাবান সোডা দিয়ে পরিস্কার করে রোদে শুকাতে হতো। লেপ তোষক কাঁথাও সূর্যসেঁকা করতে হতো। মাটির ঘর হলে ভাল করে মেঝে, রোয়াক ও উঠোন লেপে নিতে হতো। সেদিন বাড়ির মেয়েরা ঘরবাড়ি পরিস্কারের এতটা ব্যস্ত থাকত যে, রান্না হতো খুব সংক্ষিপ্ত। দিনের বেলা বেশির ভাগ বাড়িতে দই, চিড়া, মুড়ি খেয়েই কাটাত। রাতে নিরামিষ, বিশেষ করে তেতো ডাল, টক ডাল রান্না হতো। সেদিন স্নানের আগে দু’পায়ের ভেতর দিয়ে পেছন দিকে ছাতু ছিটিয়ে প্রতীকী শত্রু নিধন হতো অর্থাৎ শত্রুর মুখে ছাই দেয়া হতো।

          চৈত্র মাস মহাদেবের বন্দনার মাস। এ মাস জুড়ে সারা বাঙলায় একসময় গাজন নাচ চলত। আমাদের বিক্রমপুরে আমরা বলতাম ‘কালীকাছ’। জব্দতা যথার্থ কি না আমার এখনো সন্দেহ রয়েছে। অর্থও হয়না কিছু। তবু গভীর রাতে শিব ও কালী সেজে নৃত্যরত দল বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে উঠনো হ্যাজাক লাইটে তাদের প্রদর্শনী চালাত যে নামে, তাকে আমরা ছেলেবেলায় ‘কালীকাছ’ বলেই জানতাম। সারা চৈত্রমাস জুড়ে তারা আসত বাড়ি বাড়ি। গ্রাম থেকে বিভিন্ন দল আসত অন্য গ্রামে ও শহরে। চৈত্র মাসের  যে কোন রাতে তারা আসতে পারে। পূর্ব ঘোষনা নিয়ে ঢোল করতালসহ তাদের নৃত্য পরিবেশিত হতো। মনে আছে, ছোটবেলা ঘুমন্ত আমাদের কখনো তুলে দিত মা কখনো বা ঠাকুরমা। কখনো আবার নিজ থেকেই ঘুম ভেঙ্গে যেত হারমনিয়াম আর ঢোলের বাজনায়।

          চৈত্র মাসের দিনের বেলায় নীল পূজা হতো ঘটা করে। নীল পূজা মানে মহাদেবেরই পূজা। কোন কোন জায়গায় একে চড়ক পূজাও বলে। সেদিন সকালে ‘হারবিশু’ বলে পরিচিত শিব ও গৌরী সেজে জোড়ায় জোড়ায় দম্পতি আসত লোকের বাসায়। গৃহকত্রী তাদের পা ধুইয়ে দিয়ে, খাবার দিয়ে পরম যত্মআদর শেষ পড়শির বাড়ি পাঠিয়ে দিত। যাবার আগে সাথে দিয়ে দিত চাল, ডাল, আল্ ুগৌরীর সাথে গৃহকর্ত্রী সিন্দুর আদান প্রদান করত চিরত্রয়োতী হবার আশায়্

চৈত্র মাসে হিন্দু সম্প্রদায়ের ভেতর বিয়ে হয় না। নিষিদ্ধ মাস। ফলে বিবাহোচ্ছুক ছেলেমেয়েরা বৈশাখের আশায় বসে থাকে। বর্ষাশেষে খরা শেষে বৈশাখ আসত নবজীবন নিয়ে নতুন আশা আকাঙ্খা নিয়ে। বৃষ্টির ধারায়, নতুনের জোয়ারে ভেসে যেত পুরনো জীর্ণ ও তপ্ত চৈত্রের বাসি দিনগুলো।

চৈত্রের শেষে বৈশাখের প্রথমে নতুন বছরকে বরণ করতে তখনো তো বাড়িতে বাড়িতে আনন্দ উৎসব হতো। সাধ্যমত ভাল খাওয়া দাওয়া অর্থাৎ পোলাও গোশত, দই, মিষ্টি, পায়েস বছরের অন্তত এই দিনে চেষ্টা করত সকলেই যোগাড় করতে। সবার ধারণা বছরের অন্তত এই একটা দিনে চেষ্টা করত সকলেই যোগাড় করতে। সবার ধারণা বছরের শুরুতে যা করা হবে, সারাবছর সেই সৌভাগ্যই ফিরে ফিরে আসবে। সেদিন তাই আমরা ছোট ছেলেমেয়েরা নতুন জামা কাপড় পরতাম।” (সূত্র: পুরবী বসূ, পহেলা বৈশাখ বাঙালী ঐতিহ্যের বাহক)

আর শুধু এক পূরবী বসু নয় পহেলা বৈশাখ উদযাপনকারী অনেক মুসলমান নামধারী তথাকথিত প্রগতিবাদীদের রচনায়ও তাদের অজান্তেই স্বীকৃত হয়েছে যে, “পহেলা বৈশাখ হিন্দুদের পূজা আর আচার পালনের দিন সে প্রসঙ্গ। এমনকি পহেলা বৈশাখ সংস্কৃতির সাথে যে মুসলমানের সংঘাত রয়েছে সে সত্যও।” এখানে তার উল্লেখ করা গেল:

“আমাদের অর্থাৎ বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানদের নববর্ষ তো শুরু হওয়ার কথা ছিলো আশুরার বিষাদ (আশুরার বিষাদ কথাটি ঠিক নয়) নিয়ে। মুসলমানরা এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের ও জাতির নববর্ষের মূল বৈশিষ্ট্য স্বতঃস্ফূর্ত আনন্দ। পাশ্চার্তের খ্রিস্টানরা নববর্ষের দিন গির্জায় প্রার্থনা করেন বটে, কিন্তু ৩১ ডিসেম্বর রাত বারোটার পর থেকে মেতে উঠেন আনন্দে। প্রাচ্যে চীনা, জাপানী, ভিয়েতনামীদের নববর্ষও আনন্দের। ইরানো তো নওরোজ পালিত হয় এক সপ্তাহ ধরে। সেজন্য বলেছিলাম, মুসলমানদের নববর্ষই ব্যতিক্রম। এর একটি কারণ হতে পারে, নিয়তিবাদের প্রভাব। এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করা যেতে পারে, মক্কা শরীফ, মদীনা শরীফ যখন পারস্যের প্রদেশ হিসেবে গণ্য, তখন সেখানেও পালিত হতো নববর্ষ। আখিরী রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মদীনা শরীফে হিজরতের দু’বছর পর নওরোজ বাদ দিয়ে প্রবর্তন করেন ঈদ উৎসব।” (সূত্র: অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন, পহেলা বৈশাখ বাঙালী ঐতিহ্যের বাহক)  (ইনশাআল্লাহ চলবে)

আকবরের আমলের উলামায়ে ‘ছূ’দের উত্তরাধিকারী মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে দ্বীন-ই-ইলাহীর আদলে দ্বীন-ই-জুমহুরী প্রচলনে তারা এক হয়েছে-৩

আকবরের আমলের উলামায়ে ‘ছূ’দের উত্তরাধিকারী মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে দ্বীন-ই-ইলাহীর আদলে দ্বীন-ই-জুমহুরী প্রচলনে তারা এক হয়েছে-৩

প্রসঙ্গঃ গণতন্ত্র; এখনই চরম সময়, বিষয়টি ভাবিবার- ৯

“ভারতে মুসলমানদের উপর হিন্দুদের বর্বরতা ও পৈশাচিক আক্রমণ; প্রাচীন কাল হতেই হিন্দুদের এই নির্মম প্রবণতা” ঐতিহাসিক দলীল সম্বলিত একটি অনুসন্ধানী রচনা-৫

শুধু আজকের প্রেক্ষাপটে নয়, অতীত ইতিহাস হতেই ইহুদী-খ্রীষ্টানরা মুসলমানদের সবচেয়ে বড় শত্রু মুসলিম সন্ত্রাসবাদ নয়, মার্কিন হামলার পিছনে কি ইহুদী-খ্রীষ্টানরাই দায়ী নয়? -১৩